স্পর্শ
#পর্ব_২৬(অন্তিম পর্ব)
#writer_nahida_islam
পেসেন্ট এর অবস্থা মোটামুটি ভালো ই কিন্তু সাথের মহিলটা আপনার কে হয় উনার অবস্থা ভালো নয়। মহিলাটার অবস্থা খুব খাবার।
ইফাজ অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করে কোন মহিলা।
-আপনার ছেলের সাথে একজন মহিলা ও ছিলো চলুন আপনাকে দেখাচ্ছি চিন্তে পারেন কী না। পেসেন্টের অভিভাবক আমাদের প্রয়োজন..
ইফাজকে নিয়ে ইমার্জেন্সি কক্ষে ডুকে, ইফাজ অতসীর দিকে তাকিয়ে কয়েক মুহুর্তের জন্য থেমে যায়। এটা কী করে হতে পারে। এতো বছর পর অতসীকে দেখে চিনতে ভুল করেনি। হয়তো মুখের অনেকটা পরিবর্তন হয়েছে কিন্তু চিনতে ভুল হয়নি।
কিন্তু মরে যাওয়া মানুষ কীভাবে জীবিত হতে পারে নাকি মরে যায়নি কেউ মিথ্যে নাটক বানিয়ে বোকা বানিয়েছে।
-আপনি এভাবে চুপ করে আছেন কেনো। আপনি কী উনাকে চিনেন।
-জ্বি, উনি আমার স্ত্রী হয়।
ইফাজ বের হয়ে ওয়েটিং রুমে বসে আছে। কিছুতে ই হিসবা মেলাতে পারছে না। অতসীর পাশে যাওয়ার জন্য নার্সকে অনেক রিকুয়েষ্ট করে ও কেনো লাভ হয়নি। এতো বছর পর কাছে পেয়ে ও কথা তো দূরে থাক ভালো করে একটা কথা ও বলতে পারেনি।
-ভাইয়া কী হয়েছে? আপু কোথায়। ভাইয়া বলেন না কেনো। আমার বোন কোথায়?
নীলু দৌড়ে এসে ইফাজে সামনে বসে কান্না করছে আর কথাগুলো বলে যাচ্ছে।
ইফাজ চোখের পানি মুছে বললো,
-নীলু আমি কিছুতে ই হিসাব মেলাতে পারছি না এ কী করে হতে পারে।
-হয়তে পারে ভাইয়া, হয়তো কেউ চায়নি আপনারা সুখে থাকেন।
অতসীকে যখন কবর দেওয়া হয় তখন মা ছাড়া কেউ ই ছিলো না, তুমি আর মা তো স্পর্শকে নিয় হসপিটালের ছিলে। তাহলে মা এরকম টা করেছে।
রিসিপশনের দৌড়ে এসে একটা মেয়ে জিজ্ঞেস করলো,
-কোনো এক্সিডেন কী একটা ছেলে আর একটা মহিলা এ হসপিটাল ভর্তি হয়েছে।
রিসিপশনের মেয়েটা দাড়িয়ে উওর দিলো,
-ম্যাম এভাবে বললে আমি কোনো তথ্য দিতে পারবো না।
-আপনাদের হসপিটাল থেকে ই তো কল দিলো, স্পর্শ নামের কোনো পেসেন্ট আছে আপনাদের।
-ওহ্ হে, স্পর্শ নামের একটা পেসেন্ট ভর্তি হয়েছে বাইক এক্সিডেন্টের।
-জ্বি, উনার সাথের মাহিলাটি কেমন আছে, আর আপনারা কল দিলেন কীভাবে আমাদের।
–ভালো নয়,স্পর্শ ছেলেটার আইডি কার্ড দেখে উনার নাম ঠিকামা পেয়েছি এবং স্টুডেন্ট আইডি পেয়েছি যেটা থেকে উনার বাবার ফোনে কল করেছি। আর মহিলার কাছে একটা বাটন ফোন ছিলো। ফার্স্ট যার নম্বর ছিলো সেটিতে কল দিয়েছি।
অতসী সুমাকে নিয়ে ইমার্জেন্সি কক্ষে দিকে যেতে নিলে ই ইফাজ পিছন থেকে ডাকে।
স্পর্শিয়া কিছুটা অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলো,
-আমাকে ডাকছেন।
-হে অতসীর জন্য এসেছো।
-আপনি ভালো আন্টির নাম জানলেন কী করে। আর আপনি কে।
-রিসিপশনে যখন কথা বলছিলে তখন আমি সব শুনেছি। অতসীকে তোমরা কোথা থেকে পেয়েছো।
-মানে,
-অতসীকে কোথা থেকে পেয়েছো?তোমাদের সাথে ওর পরিচয় কী করে।
-উনি আমাদের আশ্রমে থাকেন।
-উনি কী ইচ্ছে করে তোমাদের আশ্রমে গিয়েছে।
এবার সুমা মুখ খুললো,
-আগে বলুন তো অতসীর ব্যাপারে আপনার এতো আগ্রহ কেনো।
-অতসী আমার স্ত্রী।
-স্ত্রী যখন তো স্টেশনে ফেলে গিয়েছিলেন কেনো?
-আমি স্টেশনে ফেলে দিবো কেনো?
-বিশ বছর আগে আমি অতসীকে স্টেশন থেকে খুজে পেয়ছিলাম আধমরা অবস্থায়।
ইফাজ আর কোনো কথা বললো না, চুপচাপ বসে রইলো।
তানিয়া বেগম ভয়ে থরথর করে কাঁপছে, কী শোনছে এসব। অতসী ফিরে এসেছে। আর মনে হয় রক্ষে নেই। সে সময় আপতটা বাচিয়ে রেখে ই ভুল করেছে। এখন যদি সব বলে দেয়।
তানিয়া বেগম আর দেরি করলো না, বাসায় যেখানে যা টাকা পয়সা আছে সেখান থেকে সব নিজের ব্যাগে ডুকিয়ে নিয়েছে। পালাতে হবে নয়তো মরতে হবে।
ইফাজ ব্যাপারটা ভালো ভাবে ই বুঝতে পারলো সব তানিয়া বেগম করেছে। তাই আর দেরি করলে না। পুলিশ নিয়ে বাসায় ডুকলো।
ইফাজ ও বাসায় ডুকেছে তানিয়া বেগম ও টাকা আর কাপড়ের ব্যাগ নিয়ে বের হয়েছে,
-পালাচ্ছেন কোথায়।
ভয় পেয়ে পেয়ে উওর দিলো
-পালাচ্ছি কই।
-ভালোই ভালোই সব শিকার করুন নয়তো অন্য ব্যবস্থা করবো।
-কী শিকার করবো।
-অতসীর সাথে কী করেছিলেন।
-কই কিছু করেনি আমি।
-তাহলে পুলিশকে বলি আপনাকে নিয়ে যেতে।
কথাটা বলতে ই তানিয়া বেগম কান্না ভেঙ্গে পড়েন, ইফাজের সামনে গিয়ে বলে,
-আমি সব বলছি বাবা তুমি আমাকে থানায় দিয়ো না।
তানিয়া বেগম আস্তে আস্তে সব খুলে বলতে শুরু করে, কথাগুলো শুনে ইফাজের দুচোখের পানি সনা চাইতে ও গড়িয়ে পড়ছে।
-এতোটা কষ্ট না দিলে ও পারতেন, আপনাকে আমার বাসায় এজন্য রেখেছিলাম বুঝি।
পুলিশ কে ইফাজ বলে তানিয়া বেগমকে নিয়ে যেতে, তানিয়া বেগম অনেক কান্না করে কিন্তু ইফাজের কান অব্দি পৌছয়নি।
ইফাজ আবার দ্রত হসপিটাল যায়। অতসী কিছুটা ভালো হয়েছে তাই ইফাজকে ডুকতে দেয় কেবিনে,
ইফাজকে দেখে অতসী দুচোখ পানি ছেড়ে দেয়। সব মনে পড়েছে অতসীর মুখ থেকে অক্সিজেন মাক্সটা খুলে প্রথমে জিজ্ঞেস করে আমার ছেলে কোথায় ইফাজ।
ইফাজ বেডের সাইডে চেয়ার টেনে বসেছিলো। অতসীর হাতদুটো চেপে ধরে কান্না করছে। জীবনে আবার অতসীকে পাবে তা কখনে ভাবেনি। আকস্মিক ভাবে আল্লাহ আমার বেচে থাকার সুখ টুকু ফিরেয়ে দিয়েছে।
-ইফাজ আমার ছেলে কই। ওকে আমার কাছে নিয়ে আসেন। আমি দেখবো। আমার জীবনে আর কিছু চাইনা।
ইফাজ স্পর্শকে নিয়ে আসলো। স্পর্শকে পেয়ে অতসী শতখানেক চুমু খেয়েছে। স্পর্শ ও নিজের মাকে পেয়ে খুব খুশি। এতো আদর অনুভূতি থেকল এতো বছর বঞ্চিত ছিলো।
দুই সপ্তাহ হসপিটালে থাকার পর অতসীকে আজ বাসায় নিয়ে এসেছে। এই দুসপ্তাহ বাবা ছেলে দুজন ই সেবা যত্ন করেছে অতসীকে। ইফাজ একদিন রাতেও দুচোখ এক করে দেখেনি। ইফাজ সারারাত অতসীর পাশে বসে অতসীর দিকে তাকিয়ে ছিলো যদি আবার হারিয়ে যায়।দিনের বেলা একটু আধটু ঘুমিয়েছিলো।
তানিয়া বেগমকে একটা পরিবারকে এভাবে কষ্ট দেওয়ায়। এবং পরিবারের মানুষগুলেকে মানুষিক কষ্ট দেওয়া, অতসীর উপর নির্যাতনের জন্য যাবতজীবন কারাদণ্ড দিয়েছে আদালত।
এখন থেকে আশ্রমের সব দায়িত্ব এবং খরচ অতসী আর ইফাজ নিয়েছে।
স্পর্শ ইফাজ অতসী রওনা হয়েছে আশ্রমের উদ্দেশ্য। অতসী স্পর্শের সাথে কথা বলছে। স্পর্শকে পেলে দুনিয়ায় সব ভুলে যায়। মা ছেলে মিলে নানা কথা জুড়ে দেয়।
-আশ্রমের এসে পড়েছি, নামুন রানী আর রাজপুত্র।
ইফাজের কথায় স্পর্শ অতসী দুজন ই হেসে দিয়েছে। আশ্রমের ভেতরে গিয়ে সব বাচ্চাদের সাথে অতসী কথা বললো, আজকে আশ্রমে খিচুড়ি আর গরুর মাংস রান্না করে সবাইকে খাওয়াবে অতসী। আশ্রমের সব বাচ্চাদের জন্য জামা কাপড় ও নিয়ে এসেছে।
ইফাজ সুমার কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করলো। সুমা অনেক আন্তরিক। কয়েকদিনে খুব মিশে গেছে।
-অতসী ভুলে গিয়েছিস আমাকে।
অতসী বাচ্চাদের সাথে কথা বলছিলো সুমার কন্ঠ শুনে পিছনে ঘুরে তাকালো,
-পাগল হয়ে গিয়েছিস। তোকে আমার স্পর্শিয়া মামুনিকে ভুলা সম্ভব নয়।
-দোয়া করি তুই সব ভালো থাক। আর কখনে যেনো মৃত্যু ছাড়া তোরা আলাদা না হয়েযাস।
স্পর্শ স্পর্শিয়াকে দেখে ওর দিকে এগিয়ে গিয়ে বললো,
-তোমার প্রতি আমি অনেক কৃতজ্ঞ।
স্পর্শিয়া ভ্রু কুচকে জিজ্ঞেস করলো,
-কেনো।
-তোমার মাধ্যমে আমার মাকে পেলাম যে।
স্পর্শিয়া হেসে বললো, পৃথিবীর সব মা ই যেনো সন্তানকে আগলে ধরে বাচতে পারে। সন্তানকে আদর স্নেহ দিয়ে বড় করতে পারে। আর প্রত্যেকটা সন্তান যেনো তার মাকে সব সময় পাশে পায়। কারণ মা না থাকলে জীবনটা অন্ধকার। মা বাবা আল্লাহর সব চেয়ে বড় উপহার। মা বাবার শূন্যতা পৃথিবীর কোনো কিছু দিয়ে পূর্ন করা সম্ভব নয়।
(রব্বির হামহুমা কামা রব্বা ইয়ানী ছগিরা।) পৃথিবীর সকল বাবা মাকে আল্লাহ জান্নাতবাসী করুক।
সমাপ্ত
[ভুলক্রুটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন ]