#নেশাক্ত_ভালোবাসা
#লেখিকাঃ Tamanna Islam
#পর্বঃ ৩৪
আইরাত তার রুমে চুল আচড়াচ্ছিলো তখন দরজাতে কারো নক পরে। দরজা কিছুটা খুলে দিলে আইরাত তাকিয়ে দেখে তার চাচা ইকবাল। আইরাত হেসে তাকে ভেতরে আসতে বলে। ইকবাল সাহেব এসে আইরাতের বিছানার ওপর বসে পরে। আইরাতের দিকে তাকিয়ে আছে।
আইরাত;; চাচ্চু ওমন করে তাকিয়ে কি দেখছো? চাচি কি কিছু বলেছে তোমায়?
ইকবাল;; না রে মা এটাই দেখছি যে তুই কত্তো বড়ো হয়ে গেছিস।
আইরাত;; হাহাহাহা 😅।
ইকবাল;; মেয়েরা তাড়াতাড়ি বড়ো হয়।
আইরাত;; হুমম।
ইকবাল;; আচ্ছা কোথাও যাচ্ছিস মা?
আইরাত;; ওমা অফিসে যেতে হবে না। অফিস যাচ্ছি।
ইকবাল;; আজ না গেলে হয় না মা?!
আইরাত;; চাচ্চু আসলে অনেক কাজ পরে আছে তো না গেলে অফিসের ওনার অনেক বকাঝকা করবে। তাই যেতেই হবে।
ইকবাল;; ওহহ আচ্ছা আচ্ছা,, যা তাহলে কিন্তু দ্রুত বাড়ি ফেরার চেষ্টা করিস আজ।
আইরাত;; কেনো বলোত চাচ্চু। আজ কি কিছু আছে নাকি?
ইকবাল;; সেটা বাড়ি ফিরে এলেই বুঝবি। এবার যা তোর দেরি হয়ে যাচ্ছে তো।
আইরাত;; আচ্ছা।
আইরাত তার ব্যাগ টা হাতে করে নিয়ে বের হয়ে পরে। তবে ইকবাল সাহেব এখনো জানে না যে আইরাত আব্রাহামের পিএ। আইরাত পিএ তা জানে, অনেক বড়ো একটা কোম্পানিতে কাজ করে এটাও জানে তবে তার বস যে আব্রাহাম সেটা জানে না। জনলে আইরাত কে সেখানে কাজই করতে দিতোই না।
আইরাত প্রায় বিশ মিনিট পর অফিসের সামনে এসে দাঁড়ায়। তারপর ভেতরে চলে যায়। আব্রাহামের কেবিনে যেই না ঢুকতে যাবে তখনই দেখে আব্রাহাম একটা লোকের সাথে কথা বলছে হাতে ২-৩ টা গান আর এত্তো গুলা বুলেট”স্। আইরাত ভেতরে যেতে ধরেও আবার এসে পরে। কিন্তু এটা আব্রাহামের চোখ এড়ায় না।
আব্রাহাম;; স্টপ রাইট দ্যায়ার বেবিগার্ল!!
আইরাত থেমে যায়।
আব্রাহাম সেই লোকটিকে চলে যেতে বললে লোকটা চলে যায়। তারপর আইরাত ভেতরে আসে।
আইরাত;; এইসব??
আব্রাহাম;; আমি আমার হ্যান্ড গান কয়েকদিন পর পরই চেঞ্জ করি তাই।
আইরাত তার পেছন ফিরে একবার দেখে আবার আব্রাহামের দিকে তাকায়।
আব্রাহাম;; ব্রেন্ডেড ছিলো সেগুলো।
আইরাত;; হুমম।
আব্রাহাম;; কিছু ফাইল আছে চেক করে দাও না।
আইরাত;; জ্বি দিন আমাকে।
আব্রাহাম দুইটা ফাইল আইরাতকে দিয়ে দেয়। আইরাত ফাইল গুলোতে চোখ গুড়িয়ে আবার আব্রাহামের দিকে তাকায়।
আইরাত;; এগুলো তো দুই মিনিটের কাজও না।
আইরাতকে ঘুড়িয়ে তাকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে আব্রাহাম।
আব্রাহাম;; হ্যাঁ আর এর জন্যই তো দিয়েছি তোমাকে। যেন তুমি এটা বলতে না পারো যে কাজ করতে দেই না সারাক্ষণ শুধু বসিয়ে রাখি। তাই কাজও হলো আর আমার সাথে থাকাও।
আইরাত;; 😐
আব্রাহাম;; হুমম।
আইরাত;; আচ্ছা আমার কাজ শেষ। মানে ফাইল দেখা শেষ আরকি, ঠিকই আছে।
আব্রাহাম;; হুমম। চলো কিছু করি।
আইরাত;; কি করবো?
আব্রাহাম;; শুট।
আইরাত;; শুট মানে?
আব্রাহাম;; গুলি করতে হবে বেবি।
আইরাত;; কিহহ? গুলি মানে কাকে করবো কেন করবো?
আব্রাহাম;; আরে বাবা চলো তো।
আব্রাহাম আইরাতের হাত ধরে টেনে সোজা অফিসের ট্যারেসে নিয়ে যায়। অনেক বড়ো ট্যারেস টা। প্রচুর বাতাস। আর অনেক সুন্দরও। আইরাত দেখলো কয়েকজন গার্ড হাতে করে বেশ কিছু গান আনলো। আইরাতের তো এগুলো দেখেই অবস্থা খারাপ। আব্রাহাম মিটিমিটি হাসছে আইরাতের এমন অবস্থা দেখে। তারপর দুটো গার্ড মিলে আরেক টা লোককে ধরে বেধেই এক প্রকার নিয়ে আসে। লোকটি যে ভয়ে একদম জমে রয়েছে তা তাকে দেখেই বোঝা যাচ্ছে। আইরাত কিছু বুঝতে না পেরে একবার আব্রাহামের দিকে আরেক বার ওই লোকটির দিকে তাকায়। গার্ড রা লোকটিকে ছাদের একদম মাঝ বরাবর রেখে দিলো। লোকটি রীতিমতো ভয়ে থরথর করে কাপছে। আব্রাহাম এগিয়ে গিয়ে একটা রিভলবার হাতে তুলে নেয়। তাতে বুলেট সব লোড করা আছে নাকি দেখতে থাকে। তারপর আবার আইরাতের পাশে এসে দাঁড়ায়।
আইরাত;; আব্রাহাম কি হচ্ছে এইসব? আর এই লোকটি কে? উনি তো বেশ ভয় পেয়ে আছেন? উনাকে এভাবে ধরেই বা রেখেছেন কেন?
আব্রাহাম;; ওর দোষ ও অফিসের কাজ না করে ঘুমোচ্ছিলো।
আইরাত;; হ্যাঁ তো কি? একটা মানুষ মনের ভুলে ঘুমিয়ে পরতেই পারে।
আব্রাহাম;; ওহ তাই না। মানুষ মনের ভুল বুঝি বারবার প্রতিদিন করে?!
আইরাত;; তো এখন একে কি করবেন?
আব্রাহাম;; গুলি করবো আর কি!
আইরাত;; কিইই? এই আপনি কি পাগল। সামান্য ঘুমের জন্য গুলি?
আব্রাহাম;; হ্যাঁ আমি পাগল। কেনো জানো না তুমি!?
আইরাত;; আব্রাহাম Don”t be crazy…
আব্রাহাম;; জানপাখি এদিকে এসো।
আব্রাহাম আইরাতের হাত ধরে তার সামনে আনে। তারপর আইরাতের হাতে রিভলবার টা দিয়ে দেয়। আইরাতও নেয়। তারপর আইরাতের পেছন দিক থেকে আব্রাহাম তাকে এক প্রকার জড়িয়ে ধরার মতো করে ধরে। আইরাতের হাতের ওপর দিয়ে আব্রাহাম তার হাত টা আলতো করে নেয়। আইরাতের হাতে রিভলবার টা থামিয়ে দিয়ে সামনে শুট করার মতো করে ধরে। তখন একটা গার্ড এসে যেই লোকটিকে জোর করে ধরে এনেছিলো তার মাথায় একটা রেড কালারের আপেল রেখে দিয়ে চলে যায়। আইরাতের বুঝতে আর বাকি রইলো না যে আব্রাহাম কি করবে। তবে আব্রাহামের ঠিক নেই সে আপেলেই গুলি করবে নাকি সেই লোকটিকেই গুলি করবে সে জানে না। সামনে থাকা লোকটি ভয়ে চোখ মুখ সব খিচে বন্ধ করে দিয়ে আছে।
আব্রাহাম;; সো জানপাখি এটাকে এভাবে ধরে।
আইরাত;; আমি শুট করা শিখবো না।
আব্রাহাম;; আরে না না আমি তোমাকে নিজ হাতে একদম ধরে ধরে শিখাবো তো।
আইরাত;; আব্রাহাম প্লিজ লোকটাকে ছেড়ে দিন না প্লিজ।
আব্রাহাম;; দেখো জানপাখি এটাকে এভাবে ধরতে হয় বুঝলে। তারপর এটার একদম মাঝ বরাবর একটা কিছু আছে, এটাকে ট্রিগার বলে। মূলত এখানেই মানুষের জীবন-মরণ লিখা থাকে। ট্রিগারে চাপ দিলেই কেল্লা ফতে।
আইরাত;; এই টুকু আমি জানি। কিন্তু প্লিজ লোকটিকে ছাড়ুন না।
আব্রাহাম;; আমরা এখন গুলি করবো ওকে।
আব্রাহাম যেন আইরাতের কোন কথা কেই পাত্তা দিচ্ছে না। সে আইরাতের হাতে রিভলবার রেখে তাকে পেছন দিক থেকে ধরে আছে। আইরাতের দুই হাতে রিভলবার আর আইরাতের দুই হাত আব্রাহামের দুই হাতের ভাজে।
আব্রাহাম;; সো রেডি ওয়ান টু & থ্রি
এই কথা বলার সাথে সাথে আব্রাহাম ট্রিগারে চাপ দিলো। আর বাতাসের গতিতে রিভলবার থেকে গুলি বের হয়ে যায়। মূহুর্তেই সেই লোকটির মাথার ওপরে থাকা আপেল টি গুলিবিদ্ধ হলো। আপেল টা আসলে ফুটেই গিয়েছে। একদম আলু ভর্তা হয়ে গিয়েছে। আইরাত চোখ খিচে বন্ধ করে ফেলেছিলো। আস্তে আস্তে চোখ মেলে তাকায়। দেখে যে লোকটি পাথরের মতো করে দাঁড়িয়ে আছে। আর তার মাথার ওপরে আপেল নেই। আইরাত আব্রাহামের দিকে তাকায় দেখে আব্রাহাম উলটো তার দিকে তাকিয়ে আছে। আইরাত আব্রাহাম কে হাল্কা ধাক্কা দিয়ে সরে আসে।
আইরাত;; আপনাকে আর কি বলি ধুর ছাই।
আব্রাহাম;; কি ভালো লাগে নি। ওকে ফাইন তাহলে ওকেও শুট করছি ওয়েট।
আব্রাহাম রিভলবার টা আবার সেই লোকটির দিকে তাক করে। যেই না আব্রাহাম গুলি করতে যাবে তখনই আইরাত এসে আব্রাহামের হাত টা ওপরের দিকে তুলে ধরে। যার ফলে ওপরে শূন্যে ফায়ার হয়। তাতে আশে পাশে যতোগুলো পাখি ছিলো সব উড়ে চলে যায়। আর সেই লোকটি ভয়ে অজ্ঞান হয় মাটিতে লুটিয়ে পরে। আইরাত তার দিকে তাকায়। আব্রাহাম তার ঠোঁটগুলো দাত দিয়ে চেপে ধরে ভাবলেশহীন ভাবে আইরাতের দিকে তাকায়।
আইরাত;; লোকটাকে যে কি পরিমাণ ভয় দেখিয়েছেন আপনি। আপনি কবে ঠিক হবেন?
আব্রাহাম;; আব… ঠিক হওয়া যায় কিনা ভেবে দেখবো।
আইরাত;; You are just impossible..
আব্রাহাম;; Thank”s Babygirl..
আব্রাহাম গার্ড গুলোকে ইশারা দিতেই তারা লোকটিকে নিয়ে চলে যায় তার কিছুক্ষন পর আব্রাহাম আইরাতকে নিয়ে আবার কেবিনে এসে পরে। তবে এবার হুট করেই আব্রাহাম আইরাতকে একদম দেওয়ালের সাথে চেপে ধরে। আইরাত তো এমন কান্ডে অবাক।
আব্রাহাম কতক্ষন আইরাতের দিকে তীক্ষ্ণ নজরে তাকিয়ে থেকে বলে ওঠে….
আব্রাহাম;; Honesty এখন আমার কি করতে ইচ্ছে করছে জানো?
আইরাত;; __________________
আব্রাহাম;; একদম নিজের করে নেই তোমাকে। একদম। কোন দূরত্ব যেন না থাকে। কিন্তু না আমি এখন এমন টা করবো না, ভালোবাসি তোমায়। সবকিছু সেভাবেই করবো আর অবশ্যই তা বৈধ।
আইরাত;; হুমম।
আব্রাহাম কিছু না বলেই আইরাতের কপালে চুমু একে দেয়। তারপর আইরাতকে ছেড়ে দেয়। হঠাৎ করেই তখন আইরাতের ফোনে ফোন আসে। আইরাত দেখে তার চাচ্চুর ফোন। আইরাত রিসিভ করে।
আইরাত;; হ্যালো চাচ্চু!
ইকবাল;; মা কোথায় রে তুই। দেখ না জলদি বাড়ি আসা যায় কিনা।
আইরাত;; আচ্ছা আমি বুঝতে পারছি না যে হচ্ছে কি। আচ্ছা বাড়িতে কি কোন কাজ আছে?
ইকবাল;; আরে সেগুলো না হয় তুই পরেই জানবি। আগে এখন বাসায় আয়।
আইরাত;; আচ্ছা রাখো আমি আসছি।
আইরাত ফোন কেটে দেয়। আব্রাহামের দিকে তাকিয়ে দেখে সে ল্যাপটপে চোখ মুখ সব একদম ডুবিয়ে দিয়ে বসে আছে। আইরাত জানে না যে তাকে এখন এখান থেকে আব্রাহাম যেতে দিবে নাকি না। আইরাত তবুও কাচুমাচু করতে করতে বলে ওঠে….
আইরাত;; আব…..
আব্রাহাম;; হুম আমি জানি কিছু বলবে তুমি। তো কি বলবে বলে ফেলো।
আইরাত;; আসলে চাচ্চু ফোন করেছিলো আমাকে দ্রুত বাসায় যেতে বললো।
আব্রাহাম;; কেন?
আইরাত;; তা তো আমি নিজেও জানি না। চাচ্চুও ক্লিয়ারলি বললো না কিছুই। গেলেই বুঝতে পারবো।
আব্রাহাম ল্যাপটপ ছেড়ে আইরাতের দিকে তাকালো। এক হাত মুখের কাছে দিয়ে রেখেছে।
আব্রাহাম;; আচ্ছা তোমার এই চাচাজান সবসময় এমন হুতুমপেঁচার মতো মুখ করে থাকেন কেনো বলোত??
আইরাত;; কিইই 😠?
আব্রাহাম;; হ্যাঁ সত্যিই তো।
আইরাত;; আব্রাহাম…! 😠
আব্রাহাম;; আজকাল সত্য কথা বলতে নেই। আচ্ছা যাই হোক বাড়ি যাও।
আইরাত;; হ্যাঁ সত্যি 🙄?
আব্রাহাম;; Any doubt?
আইরাত;; না মানে আপনি এতো তাড়াতাড়ি রাজি হয়ে গেলেন আমার যাওয়ার জন্য?
আব্রাহাম;; হ্যাঁ হয়ে গেলাম। এবার বাড়ি যাও।
আইরাত;; আচ্ছা।
আব্রাহাম;; দাড়াও!
আইরাত;; আবার কি?
আব্রাহাম;; আমার ড্রাইভার দিয়ে আসবে। ওর সাথে যাও।
আইরাত;; থাক না আমি এ…..
আব্রাহাম;; ওও মিস. বকবক চুপ করো।
আইরাত;; 🤐।
আইরাত আব্রাহামের অফিস থেকে এসে পরে। আইরাত তার বাড়ির সামনে নেমে পরতেই ড্রাইভার চলে যার সেখান থেকে। আর ওদিকে আব্রাহাম তার গার্ড গুলোকে আরো বেশি নজরদারি করতে বলে। মানে আব্রাহাম তো রাত-দিন চব্বিশ ঘন্টাই আইরাতের ওপর নজর রাখে। এমন কি আব্রাহামের কিছু কিছু গার্ড সবসময় আইরাতের বাড়ির আশে পাশেই থাকে। সেগুলো কে আব্রাহাম এখন আরো একটু বেশি নজর রাখতে বললো।
আর আইরাত বাড়ির ভেতরে যেতেই কলি এগিয়ে আসে।
কলি;; এসেছিস তুই?
আইরাত;; হ্যাঁ এলাম।
কলি;; চল।
আইরাত;; কিন্তু চাচি বলো তো হয়েছে কি, চাচ্চু ফোন দিয়ে এভাবে ডাকলো কেনো??
কলি;; সেটা পরেই জানতে পারবি, আগে চল।
আইরাত;; কিন্তু…
আইরাত আর কিছু বলতে পারলো না তার আগেই তার চাচি তাকে টেনে রুমে নিয়ে গেলো। আইরাত তার রুমে যেতেই দেখে বেডের ওপর বেশ কিছু অর্নামেন্টস রাখা। আর একটা মেয়ে বসে আছে রুমে।
আইরাত;; চাচি?
কলি;; শোন নাকের ডগা তো মোটা হয়ে যাচ্ছে। নাক টা ফুটিয়ে নে এবার।
আইরাত;; কিইই না ও চাচি না না। আমি মরেই যাবো।
কলি;; আরে মেয়ে,, ওইযে ও পার্লার থেকে এসেছে বেশি ব্যাথা লাগবে না টুস করে ফুটিয়ে দিবে।
আইরাত;; কিন্তু নাক কেনো। মানে এই নাক ফুটানোর জন্য চাচ্চু আমাকে অফিস থেকে ডেকে এনেছে। হায়রে
কলি;; তুই আগে এখানে বোস।
কলি আইরাতকে বসিয়ে দেয়। আর সেই মেয়েটি আইরাতের নাক ফুটিয়ে দেয়। একদম ব্যাথা পাওয়া যায় নি। কখন যে নাক ফুটানো শেষ হয়ে গেছে আইরাত তা টের অব্দি পায় নি। সাদা স্টোনের চিকচিক করা একটা নাকফুল আইরাতের নাকে। প্ল্যাটিনামের এটা। আইরাত উঠে আয়নার সামনে গিয়ে দেখে। তাকে কেমন জানি অন্য রকম লাগছে।
মেয়ে;; আপু আপনাকে অনেক সুন্দর লাগছে নাকফুলে। সত্যি দারুন মানিয়েছে আপনাকে।
আইরাত;; থ্যাংক্স।
মেয়েটি তার কিছুক্ষন পর চলে যায়। কলি এসে আইরাতকে দেখে একবার কিন্তু কিছু বলে না।
কলি;; এই নে এটা জলদি পরে ফেল।
কলি আইরাতের দিকে একটা লাল কালারের শাড়ি এগিয়ে দেয়। শাড়ি টা কিছুটা নেটের কাপড়ের মতো। তাতে ছোপ ছোপ ফুল-পাতা এইসবের কাজ করা।
আইরাত;; শাড়ি?
কলি;; হ্যাঁ, আর এই নে সাথে সিম্পলের মধ্যে কিছু অর্নামেন্টস।
কলি আইরাতের দিকে সাদা কালারের একটা স্টোনের নেকল্যাস আর ঝুমকো দেয়। সাথে কিছু চুড়ি।
আইরাত;; এগুলো কেনো??
কলি;; যা বলছি তাই কর।
আইরাত কিছু বলতে যাবে তার আগেই কলি রুম থেকে চলে যায়। এখন কি আর করার আইরাত পরে নেয় সেগুলো। শাড়ি টা আজ পরা ভালোই হয়েছে। চুড়ি, ঝুমকো, কপালে একটা ছোট্ট লাল টিপ এগুলো পরেই রেডি হয়ে যায়। নিজের চুল গুলো ঠিক ঠাক করে নেয়। তখনই আবার আইরাতের রুমে কলি আসে। এসেই আইরাতকে একবার আপাদমস্তক সব দেখে নেয়। আইরাত ভেবেছে তাকে হয়তো দেখতে ভালো লাগছে না তাই শাড়ি ঠিক করতে লাগে। কলি আইরাতের দিকে এগিয়ে যায়।
কলি;; অনেক সুন্দর লাগছে তোকে।
আইরাত;; সত্যি?
কলি;; আরে হ্যাঁ, আসলেই অনেক সুন্দর লাগছে।
আইরাত;; হিহিহি থাংকু।
কলি আর আইরাতের কথা বলার মাঝেই ইকবাল আসেন। আইরাত কে তো সে চিনতেই পারে নি।
ইকবাল;; মাশআল্লাহ, মাশআল্লাহ!
আইরাত;; ☺️😁।
ইকবাল;; আচ্ছা চল নিচে যাই। সবাই এসে পরেছে।
‘সবাই এসে পরেছে’ এটা শুনেই তো আইরাতের কপাল কুচকে এলো। মানে কি? তবুও আইরাত সবটা বুঝার চেষ্টা করছে। কলি তাকে নিয়ে হলরুমে চলে যায়। হলরুমে যেতেই আইরাত দেখে রায়হান বসে আছে। আইরাত তো রায়হান কে এখানে দেখে অবাক। আর রায়হান যেন এখানেই পরে যাবে আইরাতকে দেখে এমন অবস্থা। চোখের পলক অব্দি ফেলছে না। আইরাত সিড়ি বেয়ে নিচে নামছে আর সবকিছু অবাক হয়ে দেখছে। কলি আইরাতকে নিয়ে সবার মাঝে বসিয়ে দেয়। আইরাত কিছু বলতে যাবে কিন্তু বড়োদের কথার মাঝে সে কিছুই বলতে পারছে না। আইরাত অবাক হয়ে রায়হানের দিকে তাকায়। দেখে রায়হান যেন তার দিক থেকে অন্য দিকে তাকাচ্ছে না পর্যন্ত। আইরাতের রাগ লাগছে এখন বেশ। আইরাত তার চাচ্চুর দিকে তাকায় দেখে তার চাচ্চু বেশ খুশি। আইরাতের মাথায় এটা আসছে না যে তার চাচ্চু কি করে রাজি হলো। কিছুক্ষন পর একটা বয়স্ক লোক আসে। আইরাতের এবার অজ্ঞান হবার উপক্রম। কেননা সে লোকটি কাজি আর তা তার পোশাক দেখেই বোঝা যাচ্ছে। সবাই হাসি হাসি মুখে পাশে বসে পরে। কাজি এসে রায়হান আর আইরাতের মাঝে বসে পরে। কাজি যেই না আইরাতকে কবুল বলতে বলে তখনই আইরাত সবকিছু ছুড়ে ঠাস করে বসা থেকে উঠে পরে। চোখের কোণে কেনো যেন পানি জমে গিয়েছে তার। জোরে জোরে দম ছাড়ছে। সবাই অবাক হয়ে আইরাতের দিকে তাকিয়ে আছে। কলি গিয়ে আইরাতের হাত ধরে ফেলে।
কলি;; কি করছিস এইসব? সব ওলট-পালট করছিস কেন। চুপচাপ বোস।
আইরাত;; কি হচ্ছে কি এইসব? (অনেক চিল্লিয়ে)
এবার ইকবাল সাহেব উঠে পরেন।
আইরাত;; চাচি কি হচ্ছে এগুলো?
কলি;; কি হচ্ছে বুঝিস না তোর বিয়ে হচ্ছে।
আইরাত;; রায়হানের সাথে আমার বিয়ে? এটা অসম্ভব। পাগল তোমরা সবাই। এগুলো কি করছো কি? মাথা ঠিক আছে তোমাদের?
ইকবাল;; মা শান্ত হো কি হয়েছে বল!
আইরাত;; এখনো বোঝার বাকি আছে তোমার চাচ্চু। তুমি কি করে করতে পারলে এটা আমার সাথে?
ইকবাল;; কিন্তু?
আইরাত;; একটাবার আমাকে জিজ্ঞেস করার প্রয়োজন মনে করলে না। আমার বিয়ে আর আমি জানি না ওয়াহহহ। বিয়েতে রাজি আমি কি রাজি না তা জানলে না।
ইকবাল;; কি বলছিস এগুলো? আমি তোর চাচি কে বলেছিলাম তোর কথা তোর চাচি আমাকে বললো যে তোর এই বিয়েতে কোন রকম কোন আপত্তি নেই। তুই এই বিয়েতে রাজি।
আইরাত;; হ্যাঁ আর তুমি চাচির কথা ধরে নিলে তাই না।
ইকবাল সাহেব রাগি চোখে কলির দিকে তাকায়। কলি আর কি বলবে মাথা নিচু করে ফেলে।
আইরাত;; রায়হান আপনি, আপনি কি বুঝেন না। বাংলা কথা বুঝেন না আপনি। আমি কবে বলেছি আপনাকে যে আমি আপনাকে বিয়ে করতে চাই। আরে আপনি কবে বিয়ের কথা নিয়ে আমার বাড়ি এসেছেন আমি তো তাই জানিনা। আমাকে কি পুতুল মনে হয় যে যেভাবে নাচাবে সবাই সেভাবেই নাচবো আমি।
রায়হান;; আইরাত তুম……
আইরাত;; এই বিয়ে করবো না আমি করবো না। শুনেছেন আপনি করবো না আমি বিয়ে মরে গেলেও না। আমি বিয়ে করবো না (চিল্লিয়ে)
কাজি;; নায়ুজুবিল্লাহ, নায়ুজুবিল্লাহ।
এই কথা বলেই কাজি উঠে সেখান থেকে চলে যায়। আইরাত তো রাগে ফেটে যাচ্ছে। আইরাতের সামনে একটা ফলের ঝুড়ি ছিলো তা আইরাত তুলে আছাড় মারে। আইরাতের রাগের ফলে কান্না পাচ্ছে এখন।
রায়হান;; আইরাত প্লিজ শান্ত হও প্লিজ। তুমি কেন বিয়ে করবে না আমায়। আমি ত……..
আইরাত;; কারণ আমি আব্রাহাম কে ভালোবাসি। অনেক বেশি ভালোবাসি। আমি আব্রাহাম ছাড়া অন্য কাউকে ভাবতেও পারি না নিজের সাথে। আপনি আব্রাহামের সৎ ভাই। আব্রাহাম আপনাকে আর আপনিও আব্রাহামকে যে কি পরিমান ঘৃণার চোখে দেখেন তা আমি জানি। আপনি ভাবতেও পারেন না যে আব্রাহাম যদি জানে আপনি আমাকে বিয়ে করার জন্য এখানে এসেছেন তাহলে আপনাকে কি করবে। তা আল্লাহ জানেন। আপনি ভাবলেন কি করে যে আমি আপনার মতো একটা ক্যারেক্টার ঢিলার সাথে বিয়ে করবো। চাচ্চু তুমি, অন্তত তুমি খোজ নিতে যে যার সাথে আমার বিয়ে হচ্ছে সে কেমন প্রকৃতির।
ইকবাল;; মা রে আমি তো জানি তুই রাজি। কলি সব বলেছে তোকে।
আইরাত;; হ্যাঁ আর আমি সবেমাত্র জানতে পারলাম। রায়হান আমি আপনাকে বিয়ে করবো না জীবনেও না বুঝেছেন আপনি। আমি ঘৃণা করি আপনাকে। আমি বিয়ে করলে আব্রাহাম কেই করবো নয়তো মরে যাবো। আমি আব্রাহাম কে ভালোবাসি আর কাউকে না।
এই বলেই আইরাত সেখানে থেকে রাগে সব ওলট-পালট করে দিয়ে এসে পরে। ইকবাল সাহেব নিজেও চলে যান মাথা নিচু করে। রায়হান কলির দিকে একটা রাগি লুক দিয়ে রাগে সেখান থেকে এসে পরে। আর কলি যেন রাগে ফুসছে। আইরাত তার রুমে গিয়ে ঠাসসস করে দরজা লাগিয়ে দেয়। তারপর দুই হাত দিয়ে মুখ চেপে ধরে কান্না করে দেয়।
।
।
অন্যদিকে আকাশে কিছুটা কালো কালো মেঘ জমেছে। পরিস্থিতি টা কেমন যেন ভারি ভারি। আব্রাহাম বাইরের দিকে তাকিয়ে ছিলো কাচের গ্লাস দিয়ে আর কফি খাচ্ছিলো। তখনই তার ফোনে ফোন আসে। দেখে অয়নের ফোন, আব্রাহাম রিসিভ করে
রিসিভ করতেই অয়ন তড়িঘড়ি করে বলে ওঠে…
অয়ন;; আব্রাহাম
আব্রাহাম;; আরে হয়েছে কি?
অয়ন;; ভাই, আমার কিছু ভালো ঠেকছে না।
আব্রাহাম;; কেনো কি হয়েছে?
অয়ন;; আমি এই মাত্র রায়হানের গাড়ি আইরাতদের বাড়ির সামনে দেখেছি। এমনকি রায়হানের বেশ কিছু লোকজনকেও দেখেছি।
আব্রাহাম;; কি?
অয়ন;; হ্যাঁ
আব্রাহাম তার হাত থেকে কফির মগ টা জোরে ঢিল মারে। তা ভেংে টুকরো টুকরো হয়ে যায়।
আব্রাহাম;; কি বলছিস এইসব। মাথা ঠিক আছে তোর?
অয়ন;; আব্রাহাম ভাই বিশ্বাস কর আমি সত্যি রায়হান কে দেখেছি।
আব্রাহাম ফোন রেখে দেয়। রাগে মাথা ফেটে যাচ্ছে তার। তার কিছুক্ষন পরেই আব্রাহামের ফোনে আবার ফোন আসে। এবার আব্রাহামের একজন গার্ড ফোন করেছে….
আব্রাহাম;; হ্যালো
গার্ড;; স্যার, আইরাত ম্যামের বিয়ে।
আব্রাহাম;; কি আইরাতের বিয়ে মানে? কি বলছিস এইসব?
গার্ড;; জ্বি স্যার। আমরা আইরাত ম্যামের বাড়ির পাশে রায়হানের ড্রাইভার কে দেখতে পেয়েছি। শালাকে ধরে আচ্ছা মতো কিছু দিয়েছিলাম আর সে গরগর করে সব বলে দিয়েছে।
আব্রাহাম;; বিয়ে মানে কোথা থেকে কি হচ্ছে সব। বিয়ে কীভাবে কি?
গার্ড;; জ্বি স্যার ম্যামের বিয়ে। আর বিয়ে টা অনেক গোপনে হচ্ছে। হয়তো ম্যামের প্রতিবেশী রাও জানে না। অনেক লুকিয়ে চুড়িয়ে হচ্ছে বিয়ে টা।
আব্রাহাম;; কিন্তু এটা কি করে সম্ভব??
গার্ড;; স্যার আমরা এই মাত্রই রায়হানের ড্রাইভার কে ধরেছি। মনে হয় বিয়ে হয়ে গেছে অনেক আগেই। এখন তো সময়ও শেষ। ড্রাইভার বললো রায়হান আইরাত ম্যামের বাসায় গিয়েছে অনেক আগেই। তাই মনে হয় ম্যামের বিয়ে হয়েও গিয়েছে।
আব্রাহাম রাগে তার ফোন টা আছাড় মেরে ভেংে ফেলে। রাগে দুই হাত দিয়ে মাথা চেপে ধরে। চোখ বন্ধ করে দিয়ে আছে। হাত পা কাপছে রাগে তার। চোখ গুলো দিয়ে যেন আগুনের ফুলকা বের হবে এমন। আব্রাহাম আর থাকতে না পেরে পাশ থেকে ফুলের ব্যাস টা তুলে সামনে বিশাল বড়ো একটা কাচের দেওয়ালে দেয় ঢিল। সাথেসাথেই কাচের দেওয়াল টা ভেঙে চুরমার হয়ে যায়। ঝরঝর করে সব কাচ গুলো ফ্লোরে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পরে।
আব্রাহাম;;আইরায়ায়ায়ায়ায়ায়ায়ায়ায়ায়ায়ায়ায়ায়ায়ায়ায়ায়ায়ায়ায়ায়ায়ায়ায়ায়ায়ায়ায়ায়ায়ায়ায়াত….!!
আব্রাহাম নিজের গলা ছেড়ে দিয়ে আইরাতের নামে চিৎকার দিয়ে ওঠে। আব্রাহামকে দেখতে প্রচন্ড রকমের হিংস্র লাগছে। তবে পরমুহূর্তেই আব্রাহাম একটা খোলা উন্মাদের মতো করে হাসতে লাগে।
আব্রাহাম;; হাহাহা,,হাহাহাহাহাহা। বিয়ে তাই না বিয়ে? বিয়ে করবি তুই। আমাকে রেখে তুই রায়হান কে বিয়ে করবি? রায়হান তোর যে আমি ঠিক কয়টা টুকরো করবো আমি নিজেও জানি না। সব কটা কে খুন করে ফেলবো আমি। আইরাতের চাচা চাচি কেও। ভেবেছিলাম তোকে ভালোবেসে নিজের করে নিবো। বিয়ে করে নিজের সাথে একদম আজীবনের জন্য বেধে নিবো। কিন্তু না তুই আর তা হতে দিলি না। আইরাত আমি তোকে মেরে ফেলবো। এই ন্যাহ ন্যাহ, মেরে আমি তোকে এখনই দিবো না। তুই রায়হান কে বিয়ে করেছিস তাই না। আমার থেকে, আমার থেকে লুকিয়ে তুই রায়হান কে বিয়ে করেছিস। তবে শোনে রাখ বিয়ে একটা কেন তোর বিয়ে যদি হাজার টাও হয় তবুও তুই আমার। আজ তোর বিয়ে হয়েছে মানে আজ তোর বাসর রাত তাই না। রায়হান তোকে দেখেছে, তোকে ছুয়েছে তাই না। আজ ছুয়েছে, কাল ছুবে, পরশুও। আমি তোকে ভালোবেসেছিলাম তোর শরীর কে না। তোকে ধরা-ছোয়ার অধিকার শুধু আমার ছিলো শুধু আমার। কিন্তু না তা তুই হতে দিস নি। বউ তো তুই রায়হানের হয়েছিস কিন্তু তুই আমার ই থাকবি। তুই যদি রায়হানের বাচ্চার মাও হয়ে যাস তবুও তুই আমার থাকবি। এখন থেকে তোর শরীর কে ভালোবাসবো তোকে না। তোকে তোর নিজেকে প্রতিদিন এই আমার কাছেই সপে দিতে হবে। তোর বিয়ে হয়ে গেলেও তুই আমার ছিলি, আছিস আর থাকবি। তুই আমার আইরাত, তুই শুধু আমার।
আব্রাহাম রাগে তার অফিস ত্যাগ করে। তারপর সোজা চলে যায় বারে। বাইরে মেঘ অনেক জমেছে আগে থেকে বেশি। আব্রাহাম বারে বসে আছে। সামনে পুরো এক জার এলকোহল। একটার পর একটা খেয়েই যাচ্ছে তো যাচ্ছে। কারণ এরপর সে যে কাজটা করতে যাচ্ছে তা করার জন্য তাকে এগুলোর দরকার। নিজের হিতাহিত জ্ঞান সে স্বইচ্ছায় হারাতে চায়। নিজের পুরো সেন্সে থাকলে হয়তো সে কাজটা করতেই পারবে না। হবে না তার দ্বারা। তাই নিজেকে মাতাল করে তোলার জন্য উঠে পরে লেগেছে সে। তবে আজ এই মদ অব্দি তার সাথে বেইমানি করছে। নেশাই হচ্ছে না তার। কীভাবে হবে তার মাঝে তো আইরাতের নেশাই রয়েছে শুধুই আইরাতের নেশা। আব্রাহাম চোখ বন্ধ করে মাথা আঙুল চাপ দিয়ে বসে ছিলো। তখনই নিজের কাধে কারো স্পর্শ টের পায়। আব্রাহাম মাথা ঘুড়িয়ে দেখে প্রিতি। ওইযে ওই মেয়ে টা যার সাথে আব্রাহামের প্রথমদিন দেখা হয়েছিলো। মেয়েটা আব্রাহাম কে সত্যি পছন্দ করে কিন্তু আব্রাহাম পাত্তাই দেয় না। প্রিতি এসে আব্রাহামের পাশে বসে, তারও হাতে একটা মদের গ্লাস….
প্রিতি;; হেই আব্রাহাম ডার্লিং কি করছো এখানে বসে বসে একা। দেখো কতো সুন্দর সুন্দর হট মেয়ে বসে আছে। এদিকে একবার তাকিয়ে দেখো। এভাবে বসে থাকলে হয়।
আব্রাহামের মাথা এমনেই গরম তার ওপর এই প্রিতির কথা শুনে আগুনে যেন ঘি পরে গেলো। আব্রাহাম প্রিতির বাহু জোরে শক্ত করে চেপে ধরে দাতে দাত চেপে বলে ওঠে….
আব্রাহাম;; My love is more hotter then you Bloody Bitch…
আব্রাহামের চোখ আর মুখ দেখে প্রিতি ভয় পেয়ে গেলো। আব্রাহাম প্রিতির বাহু ধরে একটা ধাক্কা দেয়। এতে প্রিতি কিছুটা দূরে সরে আসে। আব্রাহাম তার হাতে একটা হুইস্কির বোতল নিয়ে খেতে খেতে বাইরে বের হয়ে পরে। গাড়ির ড্রাইভার ছিলো তার কাছ থেকে চাবি নিয়ে নেয়।
ড্রাইভার;; স্যার, স্যার আপনি তো ড্রাংক। গাড়ি চালাতে পারবেন না। আমি নিয়ে যাই।
আব্রাহাম;; জীবনের মায়া কি আছে নাকি নেই। Do you want to die?
ড্রাইভার আর কিছু বলে না। মাথা নিচে নামিয়ে ফেলে। আব্রাহাম গাড়িতে ওঠে ড্রাইভ করতে করতে চলে যায়। এক হাতে হুইস্কির বোতলে চুমুক দিচ্ছে আরেক হাতে গাড়ি ড্রাইভ করছে।
।
।
আইরাত কিছুটা কান্না করেছে তবে এখন চুপ। আইরাত বসে ছিলো তখন দরজায় কড়া নাড়ে। দরজা খুলে দাঁড়ায় সে। দেখে ইকবাল…
ইকবাল;; মারে আমায় মাফ করে দিস আমি বুঝতে পারিনি এমন কিছু একটা হবে। আর তুই আগে কেনো বলিস নি যে তুই আব্রাহাম কে ভালোবাসিস।
আইরাত;; আমি ওকেই বলি নি যে আমি ওকে আলোবাসি।
ইকবাল;;তুই যাকে ভালোবাসিস তার সাথে বিয়ে হবে। আমি আসলে জানতাম না যে তুই বিয়েতে রাজি না।
আইরাত;; বাদ দাও সব।
আইরাত হেসে দেয়। এবার যেন তার মুড টা একটু ঠিক হয়। তখনই কলি নিচ থেকে ছুটে আসে।
কলি;; ওগো শুনছো? (কেদে কেদে)
ইকবাল;; আরে হয়েছে কি?
আইরাত;; চাচি সব ঠিক আছে তো?
কলি;; না রে, আমার মা, মা অনেক অসুস্থ হস্পিটালে নেওয়া হয়েছে। রনিতের বাবা জলদি করো। আমাদের এখনই যেতে হবে।
ইকবাল;; কিন্তু আইরাত!
আইরাত;; না না আমি থাকতে পারবো, যাও তোমরা চিন্তা করো না। সাবধানে যেও।
ইকবাল;; আচ্ছা।
বাইরের অবস্থাও বেশি ভালো না। অনেক মেঘ করেছে হয়তো অনেক জোরে বৃষ্টি নামবে। কিন্তু কি আর করার তবুও আইরাতের চাচা আর চাচি চলে গেলো। বাড়িতে আইরাত একা। আইরাত তার রুমে ছিলো…
আইরাত;; আহা শীত শীত লাগছে। হুট করেই এতো মেঘ করলো কেনো, বাতাস ঠান্ডা। এই রে যাহহহ কারেন্ট চলে গেলো। আমার ফোন টা কোথায়। আরে রে ফোনের ব্যাটারি শেষ, এর মরার ফোনের ব্যাটারি কেও কি এখনোই শেষ হতে হলো ছাতা। আইপিএস টাও তো নষ্ট। চার্জার লাইট কোথায়। ওহ হো রুমের জানালা টা খোলা বৃষ্টির পানিতে সব ভিজে যাবে। কি মেঘ করেছে রে বাবা সন্ধ্যা বেলাতেই রাত নেমে এসেছে।
আইরাত রুমের জানালা লাগাচ্ছিলো তখনই ঠাস করে একটা বিদ্যুৎ চমক দেয়। আইরাত কিছুটা চমকে উঠে।
আইরাত;; কি মার্কা মারা বৃষ্টি রে ভাই ভিজিয়ে দিলো।
আইরাত আধো আধো ভিজে গেছে, সে তার শাড়িটা ঝাড়ছে আর এগুলো বকবক করছে। তখনই দরজাতে জোরে জোরে নক পরে। আইরাত গিয়ে দরজা খুলে দেয়। একদম ঘুটঘুটে অন্ধকার তাই ভালো ভাবে কিছুই দেখা যাচ্ছে না। তবুও মাঝে মাঝে বিদুৎ চমকানোর আলোতে হাল্কা অবয়ব দেখা যাচ্ছে। আইরাত তাতে বুঝলো যে সে আব্রাহাম। আইরাত আব্রাহাম কে দেখে খুশি হয়ে গেলো। তবে আব্রাহামের মুখ টা দেখতেই আইরাতের বুক টা ধক করে ওঠে ভয়ে। আব্রাহাম আইরাতকে দেখছে আর হুইস্কির বোতলে চুমুক দিচ্ছে। ভিজে লেপ্টে থাকা শাড়ি, খোলা লম্বা চুল, স্নিগ্ধ মুখমণ্ডল, হাতে চুড়ি, কানে ঝুমকো আইরাত কে পুরো একটা নতুন বউ লাগছে দেখতে। আব্রাহাম তো বারবার এইরাতের এই রুপে ঘায়েল। আইরাত কিছু বলতে যাবে তার আগেই আব্রাহাম আইরাতের গলা শক্ত ভাবে চেপে ধরে। চাপ দিয়ে ধরেই একদম দেওয়ালের সাথে মিশিয়ে নেয় তাকে।
আব্রাহাম;; কি ভেবেছিলি আমাকে লুকিয়ে বিয়ে করবি আর আমি জানবো না। তুই আমার আইরাত। তুই বিয়ে হবার আগেও আমার আর পরেও আমার। তোর ওপর অধিকার শুধু আমার। তুই কীভাবে করতে পারলি এটা?
আইরাত কিছু বলতে পারছে না। আব্রাহাম অনেক শক্ত করে তার গলা চাপ দিয়ে রেখেছে। মাঝে মাঝে কিছুটা ছেড়ে দিলেও পরে আবার চেপে ধরছে।
আব্রাহাম;; আজ তুই আমার সবচেয়ে বাজে আর ভয়ানক রুপ দেখবি।
এই বলেই আব্রাহাম হুইস্কির বোতল টা নিচে আছাড় মেরে ভেঙে ফেলে। আর আইরাতকে বিছানার ওপর ছুড়ে ফেলে দেয়। আইরাত কোন রকমে পেছাতে পেছাতে বলে ওঠে।
আইরাত;; আব্রা.. আব্রাহাম প্ল প্লিজ আমার ক কথা টা একবার শুনুন।
আব্রাহাম এগিয়ে গিয়ে খপ করে আইরাতের চুলের মুঠি ধরে ফেলে। আইরাতের মুখ টা নিজের মুখে কাছে এনে বলে
আব্রাহাম;; তুই কিছু বলা বা শোনার বাকি রাখিস নি। সবাইকে মেরে ফেলবো আমি সবাইকে। তোকেও, তোর রায়হানকেও আর তোর চাচা চাচি কেও।
আব্রাহাম আইরাতকে ধাক্কা মেরে ফেলে দেয়। শাড়ির আচল টা টেনে আইরাতের ওপর থেকে সরিয়ে দেয়। আইরাত আটকাতে চেয়ে পারছে না। আব্রাহাম আইরাতের দুই হাত নিজের এক হাত দিয়ে চেপে ধরে। আইরাত কিছু বলতে যাবে তার আগে সে আইরাতের ঠোঁটে নিজের ঠোঁটগুলো মিশিয়ে দেয়। আইরাতের ব্লাউজের হাতা দুই পাশে ছিড়ে ফেলে। বুকের সাইডেও ছিড়ে ফেলে। আইরাতের এখন মনে হচ্ছে এর থেকে ভালো সে মরে যেতো। সে অনেক চিল্লায় কিন্তু লাভ হয় না। আব্রাহাম নিজের সব রাগ আইরাতের ওপর ঝাড়ে। তার কাজে হিংস্রতা স্পষ্ট। আইরাত এগুলো আর সহ্য করতে না পেরে অজ্ঞান হয়ে পরে। তবে আব্রাহাম তার কাজ থেকে পিছপা হয় না। অবশেষে আইরাতের কাছ থেকে আব্রাহাম উঠে পরে। নিজের রিভলবার টা বের করে আইরাতের দিকে কিছুক্ষন তাক করে থাকে কিন্তু এটা তার পক্ষে সম্ভব না। রিভলবার ছুড়ে ফেলে দেয়। আইরাতকে খুন করা সম্ভব না। কখনোই না। অজ্ঞানরত আইরাতের দিকে আব্রাহাম কিছুক্ষন তাকিয়ে থেকে এসে পরে। একটা ঝড় এসে এক নিমিষেই সব লণ্ডভণ্ড হয়ে গেলো।
।
।
চলবে~~
#নেশাক্ত_ভালোবাসা
#লেখিকাঃ Tamanna Islam
#পর্বঃ ৩৫ {বোনাস পার্ট 🥀}
“বিশ্বাস” কথা টা কিন্তু অতি ক্ষুদ্র তবে এর বিশালতা বিশাল। যা মুখে বা শব্দে ব্যাক্ত করা ভারি মুশকিল। এই বিশ্বাস টা আব্রাহাম আইরাতের ওপর রাখে নি। আব্রাহাম এমন টা করবে তা আইরাতের কল্পনা থেকে একশ হাত দূর দূর ছিলো। আব্রাহাম এমনটা করেছে, যেই আব্রাহাম কিনা আইরাতের চোখে এক ফোটা পানি দেখলে দুনিয়া এইদিক থেকে ওইদিক করে ফেলতো। আইরাতকে হাসানোর জন্য নিজেই উদ্ভট উদ্ভট আচরণ করে বসতো। সে আব্রাহাম কিনা আজ আইরাতের সাথে….।
আব্রাহামের চলে যাওয়ার বেশ কিছুক্ষন পর আইরাতের জ্ঞান ফিরে। নিজেকে নিজের কাছেই খুব ভারি ভারি লাগছে। মাথা টা চিন্তার বোঝা হয়ে আছে। নিজের মাঝে এক ফোটা শক্তিও বাকি নেই উঠে বসার। আইরাতের চোখের পানি তে বালিশ সম্পূর্ণ ভিজে একদম চুবুচুবু হয়ে গেছে। বাইরে মুষুলধারে বৃষ্টি হচ্ছে। মাঝে মাঝে বিকট শব্দে বিদুৎ চমক দিচ্ছে। আইরাত চাদর টা নিজের বুক অব্দি টেনে নেয়। হাত আর গলার পাশে খুব জ্বালাপোড়া করছে। আইরাত তার হাতে তাকিয়ে দেখে লালা লাল অনেক আচড় কাটা রয়েছে। আইরাত ঢুকরে কেদে ওঠে।
আব্রাহাম;; আমি মরে যাবো কিন্তু আমার থেকে তোমাকে আলাদা হতে দিবো না। আইরাত তুমি না আমার। হেই বেবিগার্ল,, দি কুইন অফ মাই হার্ট। আমি খুন করে ফেলবো যেই হারামি তোমার দিকে চোখ তুলে তাকাবে। প্রথমে তোমাকে মারবো আর তারপর নিজে মরবো। আমি ভালোবাসি তোমায় প্লিজ আমায় ছেড়ে যেও না। জানপাখি আমার৷
আব্রাহামের বলার প্রতিটা কথা, প্রতিটা কথা আইরাতের কানে বাজছে। আব্রাহামের সেই হাসি, সেই চেহারা চোখে ভেসে বেড়াচ্ছে। আর তার আজকের সেই ভয়ংকর চেহারা টা আবার মনে পরতেই আইরাত আরেক দফা কেপে ওঠে ভয়ে।
আইরাত;; আম আম..আমি তোহ এ এমন চা চায় নি। আম আমি ভেবেছিলাম স সব ব বলে দিবো আ আপনাকে। কি কিন্তু আপনি তো আম আমকে বলার সুযোগ টা টাই দিলেন না। আম আমি তো…..
আইরাত হিচকি পেরে কাদছে। মুখ দিয়ে আর কিছু বের হচ্ছে না। আইরাত কোন রকমে উঠে সোজা ওয়াসরুমে চলে যায়। এবার আইরাতের রাগ হচ্ছে অনেক বেশি অনেক। আইরাত ধপ করে শাওয়ারের নিচে বসে পরে। দুই হাত দিয়ে মাথা চেপে ধরে কেদে ওঠে…
আইরাত;; আমি আপনাকে ঘৃণা করি আব্রাহাম,, আমি আপনাকে ঘৃণা করি। (চিল্লিয়ে)
।
।
বাইরে বৃষ্টির এতো টাই বেগ যে মনে হচ্ছে চারিদিকে কুয়াশা তৈরি হয়েছে। সামনে ঠিক ঠাক ভাবে কিছুই দেখা যাচ্ছে না। আর এদিকে আব্রাহাম প্রচুর ড্রাংক। কিন্তু নিজের সেন্স হারায় নি। কোন দিশা খুজে পাচ্ছে না আব্রাহাম যে আসলে কোথায় গাড়ি নিয়ে থামাবে। হঠাৎ আব্রাহাম একটা খোলা জায়গায় এসে গাড়ির ব্রেক কষে। আব্রাহাম গাড়ি থামিয়ে দিয়ে নিজের সব শক্তি দিয়ে স্টেয়ারিং এ বারি দেয়। তার পক্ষে আর সম্ভব না। আব্রাহাম বাইরে বের হয়ে পরে। এই বৃষ্টি তে ভিজতে থাকে। হাটু গেড়ে মাটিতে বসে পরে। আব্রাহাম এবার কেদে দেয়। কথায় বলে ছেলেদের কাদতে নেই কিন্তু মানুষ তো মাটিতে গড়া কোন পুতুল তো না।
আব্রাহাম;; আমি এই কাজ টা করতে চাই নি। আমি এমন কিচ্ছু করতে চাই নি। কিচ্ছু না আইরাত। আমি সত্যি এমন কিছুই করতে চাই নি। আমি জানি একটা মেয়ের কাছে নিজের মান-সম্মান কি পরিমান ইম্পর্ট্যান্ট। কিন্তু আমি পারবো না। আমি আমার নিজের চোখের সামনে তোমাকে ওই রায়হানের হতে দেখতে পারবো না। তুমি ওই রায়হানের সাথে খুশি থাকবে তা আমি দেখতে পারবো না। যা আমার তা আমার। একে তুমি আমার জেদ বলো আর যাই কিছু। তুমি এখনো আমার। তুমি আমার ছিলো, আছো। আর যদি না হও তাহলে সব বরবাদ করে দিবো আমি জ্বালিয়ে পুড়িয়ে ছাই করে দিবো। জানি এখন আমি তিক্ততায় ভরে যাবো তোমার চোখে কিন্তু এই আমিই থাকবো তোমার জীবনে আর কেউ না।
আব্রাহাম মাটিতে বসেই বৃষ্টি তে ভিজতে লাগলো। ঘন্টা খানিক ওভাবেই বসে থেকে আব্রাহাম চলে আসে। গাড়ি নিয়ে সোজা নিজের বাসায় আসে। মাথা থেকে শুরু করে একদম পা পর্যন্ত সব ভেজা। আব্রাহাম এসে নিজের রুমে চলে যায়। পুরো পাগল হয়ে আছে সে। নিজের সামনে আইরাতের ওই শাড়ি পড়া লুক টা ছাড়া আর কিছুই আসছে না। আব্রাহাম তার রুমে যেতেই সবার আগে চোখে পরে আইরাতের হাসি হাসি বড়ো সেই ছবি টা। আব্রাহামের চোখে পানি গুলো মুক্তোর ন্যায় কেমন চিকচিক করছে। সে আলতো হাতে আইরাতের ছবি টা ছুইয়ে দেয়। ঘুমের মেডিসিন হাতে নিয়ে নেয়। হাতে যে কয়টা ট্যাব্লেট এটেছিলো সেই সব গুলো মুখে পুরে নেয়। আইরাতের সেই ছবির নিচেই আব্রাহাম নিজের গা এলিয়ে দেয়। সেভাবেই শুয়ে থাকতে থাকতে আব্রাহামের চোখ লেগে যায়। মনে হচ্ছে সে মরে যাচ্ছে । আর এছাড়াও বেচে থেকে কি লাভ এখন।
আইরাত এসে তার রুমের জানালার কাছে বসে পরে। জানালা দিয়ে খোলা বাতাস এসে আইরাতের চুল গুলো উড়িয়ে নিয়ে যাচ্ছে। নাক মুখ সব ফুলে রয়েছে। আইরাত শূন্য দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিলো। হঠাৎ টুপ করেই তার চোখ দিয়ে কয়েক বিন্দু পানি গড়িয়ে পরে। এই পানি বিন্দু গুলো মুছে ফেলার বিন্দুমাত্র আগ্রহ তার নেই। ভালোই তো ছিলো সবকিছু তাই না। তাহলে দমকা এক ঝড় এসে কেমন এমন এলোমেলো হলো। কেন ভালোবাসায় সাজানো জীবন টা এভাবে কালো অন্ধকারের মন্দবাসা হয়ে গেলো। আব্রাহাম কেন করলো এমন। একটা বার শুনে নিতো আইরাতের কথা জাস্ট একটা বার। আব্রাহামের করা পাগলামো গুলো যে কখন আইরাতের মনের কোণে জায়গা করে নিয়েছিলো তা আইরাত জানে না। ভয় গুলো সব ভালোবাসার বিজে রুপ নিচ্ছিলো তবে কেন সেগুলো পরিপক্ক হবার আগেই নষ্ট হয়ে গেলো। আব্রাহামের ওপর অভিমান যেন পাহাড় সমান জন্ম নিলো আইরাতের মনে।
।
।
পরেরদিন সকালে~~~
আব্রাহামের দাদি এসে এই যে আব্রাহামের রুমের দরজা ধাক্কায় কিন্তু খোলার কোন নাম গন্ধ নেই। এবার যেন কিছুটা চিন্তা হতে লগে ইলার। ইলা আর না পেরে অয়ন কে ফোন দেয়। অয়ন এলে ইলা অয়ন কে সব বলে। অয়ন বুঝে যে কি হয়েছে,, সে আব্রাহামের রুমে গিয়ে ধাক্কা দিয়ে দরজা খুলে। দেখে আব্রাহাম আইরাতের ছবির নিচে পরে রয়েছে। অয়ন দ্রুত গিয়ে আব্রাহামের মাথা তুলে নিজের কোলে নেয়।
অয়ন;; আব্রাহাম, আব্রাহাম। এই আব্রাহাম…
আব্রাহাম নিভু নিভু ভাবে নিজের চোখ মেলে তাকায়।
আব্রাহাম;; চিন্তা করিস না। মরি নি আমি। (তাচ্ছিল্যের হাসি হেসে)
অয়ন;; কি যাতা বলছিস আর তোর এই অবস্থা কেন। গায়ে ভেজা কাপড় চেঞ্জ করিস নি কেনো।
আব্রাহাম;; অয়ন আমি খুন করেছি।
অয়ন;; কি?
আব্রাহাম;; আমি খুন করেছি একটা মেয়ের। জ্যান্ত লাশ বানিয়ে দিয়েছি আমি।
অয়ন;; কি বলছিস তুই?
আব্রাহাম;; আইরাত, আইরাতের খুন করেছি আমি। একটা মেয়ের কাছে তার স্বতিত্ব সবথেকে বেশি হয়। আমি তা কেড়ে নিয়েছি।
অয়ন;; কি? আব্রাহাম কি বলছিস তুই?
আব্রাহাম;; আমি মরে যাবো সত্যি আমি মরে যাবো আইরাত কে ছাড়া। আর নিজের সামনে ওকে আমি অন্য কারো হতে দেখবো তার থেকে ভালো আমি মেরেই ফেলি তাকে।
অয়ন;; তুই ওঠ আগে।
আব্রাহাম;; তুই চলে যা।
অয়ন;; কিন্তু
আব্রাহাম;; অয়ন যা প্লিজ।
অয়ন সিচুয়েশন টা বুঝতে পেরে আব্রাহামের কাছ থেকে চলে আসে। আব্রাহাম অফিসে যায় না। নিজের কাপড় গুলো চেঞ্জ করে হাতে সিগারেট নিয়ে করিডরে চলে যায়। মূলত আব্রাহাম রায়হান কে খুজছে। রায়হান কে পেলে সে জ্যান্ত কবর দিবে ওকে। অন্যদিকে আইরাত হাত-পা গুটিয়ে কাচুমাচু হয়ে বসে আছে। না চাইতেও কাল রাতের কথা গুলো বার বার মনে পরছে।
আইরাত;; ঘৃণা করতে পারবো না আমি আপনাকে। সেই ভাবে ঘৃণা করতে পারবো না। অনেক ভালোবেসে ফেলেছি আপনাকে। কিন্তু আপনার কাছেও আর যাবো না। দূরে চলে আসবো আপনার কাছ থেকে। আমি জানি সবকিছু একটা ভুল বুঝাবুঝিতে হয়েছে। কিন্তু এই ভুল বুঝাবুঝি আমি ভাংাবো না। আপনি নিজে থেকে যখন আপনার ভূল বুঝবেন তখন আপনি নিজেই আমার কাছে আসবেন।
।
।
আব্রাহাম;; রায়হান কোথায়?
মানিক;; আমি জানি নাহ, আমি জানি নাহ। আমাকে ছেড়ে দিন।
মানিকের কথা শুনে আব্রাহাম হুংকার দিয়ে ওঠে। দেয় মুখ বরাবর এক ঘুষি মেরে। সাথে সাথে মানিকের নাক মুখ কেটে যায়।
আব্রাহাম;; এবার বল রায়হান কোথায়?
মানিক;; আহ, রায়হান রায়হান…
মানিক রায়হানের সাথে কাজ করে আব্রাহাম তার গার্ড দের দিয়ে তুলে এনেছে তাকে। আর এবার তাকে নিজের সামনে একটা চেয়ারে বেধে রাখা হয়েছে। অনেক মেরেছে আব্রাহাম ওকে। আর মানিক গরগর করে সব এবার বলেও দিয়েছে। হঠাৎ রকটা গার্ড এসে মানিকের গলার ঠিক ডান সাইডে একটা ইঞ্জেকশন পুশ করে। মানিক অজ্ঞান হয়ে পরে। তারপর তাকে নিয়ে চলে যায়। আব্রাহাম সিগারেটের এক পাফ নিয়ে উঠে দাঁড়ায়। সে এখন একটা সাদা গেঞ্জি পরে আছে। গেঞ্জির হাতা একদম চিকন। তার হাত গুলো, মাসালস গুলো ফুলে ফেপে ওঠেছে। আব্রাহাম সিগারেট খেতে খেতে আয়নার সামনে গিয়ে দাঁড়ায়। নিজেকে দেখছে। নিজের বুকে, হাতে, কিছুটা ঘাড়ে বেশ গাঢ আচরের দাগ রয়েছে। এগুলো সব আইরাতের হাতের নখের আচড় তা আব্রাহাম বুঝতে পেরেছে। আব্রাহাম আলতো হাতে আচড়ের ওপর ছুইয়ে দেয়। তারপর রেডি হয়ে চলে যায় এই রায়হানের খোজে।
আব্রাহাম আজ তার বাইক নিয়ে বের হয়েছে। কোন গার্ড নেয় না, কোন গান ওর পিস্তল কিচ্ছু নেই নি সাথে। রায়হানের বাড়ি গিয়ে নিজের মন মর্জি মতো ভেতরে ঢুকে পরে। আর রায়হানের বাড়ির গার্ড দের এখনো এতো বড়ো কলিজা হয় নি যে আব্রাহাম কে আটকাবে। আব্রাহাম রায়হানের বাড়ি যেতেই রায়হান কে পেয়ে যায়। ওহহ আসলে এটা রায়হানের দুই নাম্বার বাড়ি তার আসল না। রায়হান আব্রাহাম কে দেখে এগিয়ে যায়।
রায়হান;; স্বপ্ন দেখছি না তো। তুই আমার বাড়িতে?
আব্রাহাম;; হ্যাঁ এলাম। আসতে বাধ্য করলি।
রায়হান;; কি হয়েছে?
আব্রাহাম;; হবে তো তোর। আগে বল বিয়ে কেমন করলি?
রায়হান;; বিয়ে মানে?
আব্রাহাম;; ওমা কাল বিয়ে করলি আর আজ ভূলেও গেলি।
রায়হান;; কি বলছিস এইসব?
আব্রাহাম;; জানিস তো বিয়ে করেছিস তুই কিন্তু ফুলশয্যা করেছি আমি।
রায়হান;; ক্লিয়ার বল।
আব্রাহাম;; আরে আইরাত কে। মানে দুনিয়া তে তো মেয়ে নেই আর কোন। তোকে দেখে দেখে ওর পেছনেই পরতে হলো। বিয়েও করে নিলি অগোচরেই।
রায়হান;; আব্রাহাম ভাগ্য ভালো বিয়ে টা হয় নি।
আব্রাহামের টনক নড়ে এবার।
আব্রাহাম;; হুয়াট রাবিশ। কাল তোদের বিয়ে হয়েছে রাইট?
রায়হান;; না হয় নি। আইরাত আমাকে ভালোবাসে না। তোকে বাসে। ফলে বিয়ে করে নি।
আব্রাহামের পায়ের নিচ থেকে মাটি সরে গেলো। মানে কি বিয়ে হয় নি। তাহলে কাল আব্রাহাম। ওহহ শিট।
আব্রাহাম;; দূরে থাক তুই।
আব্রাহাম এই বলে ছুটে রায়হানের বাড়ি থেকে বের হয়ে পরে। হাওয়ার বেগে আইরাতের বাড়ি যায়। চোখের পানি গুলো কোন রকমে মুছে নিচ্ছে হাতের উল্টো পাশ দিয়ে। কিন্তু আইরাতের বাড়িতে তালা দেওয়া কেউ নেই। আব্রাহাম নিজের মাথার পেছনে হাত দিয়ে দেয়। আইরাত তাহলে গেলো কোথায়? পাগলের মতো করে আইরাতকে খুঁজে চলেছে আব্রাহাম। আব্রাহামের কেনো যেনো মনে হতে লাগলো আইরাত তার ভার্সিটিতে। কেননা আজ তো আইরাত জীবনেও অফিসে আসবে না। আজ কেনো আর কখনো আসবে কিনা সন্দেহ। আব্রাহাম ছুটে আইরাতের ভার্সিটি তে গেলো। আর যেতেই ভাগ্যক্রমে আইরাতকে দেখে। আব্রাহাম বাইক থেকে নেমে আইরাতের সামনে গিয়ে দাঁড়ায়।
আইরাত দিয়ার সাথে কথা বলছিলো। দিয়া কে এখনো সে কিছুই বলে নি। তবে বলতে চাইছে। এরই মাঝে আব্রাহাম হাপাতে হাপাতে আইরাতের কাছে এসে দাঁড়ায়। আইরাত সোজা আব্রাহামের চোখের দিকে তাকায়। দেখে আব্রাহামের চোখ গুলো লাল বর্ণ। চোখের কার্নিশ বেয়ে পানি পরছে আব্রাহামের। তবে আব্রাহাম কে এখন এই মূহুর্তে নিজের সামনে দেখে আইরাতের কাল রাতের ঘটনা গুলো মনের দেওয়ালে ভেসে ওঠলো। আইরাত আর থাকতে না পেরে ঠাস করে আব্রাহামের গালে একটা থাপ্পড় বসিয়ে দেয়। দিয়া তার মুখে হাত দিয়ে দেয় এটা দেখে। আইরাত বেশ জোরেই আব্রাহাম কে থাপ্পড় টা মেরেছে। এই থাপ্পড়ের শব্দ যেন চারিদিকে বাজছে। আইরাত আব্রাহামের দিকে তাকিয়ে আছে।
।
।
।
চলবে~~