তুমি আমার প্রেয়সী পর্ব-১৫

0
1814

#তুমি_আমার_প্রেয়সী
#পর্ব_১৫
#তাসনিম_জাহান_রিয়া

আমি জানি কণা আমি অনেক ভুল করেছি। প্লিজ আমাকে ক্ষমা করে দে। মানুষ মাত্রই ভুল। কেউ ভুল করলে তাকে শুধরানোর সুযোগ দেওয়া উচিত। আমার ভুল শুধরানোর একটা সুযোগ আমাকে দিবি না কণা?

আমি ফোন থেকে দৃষ্টি সরিয়ে আভিয়ান ভাইয়ার পাশ কাটিয়ে চলে আসতে নিলে ভাইয়া আমার হাত ধরে ফেলে। আমি ঘাড় ঘুরিয়ে একবার উনার দিকে আরেকবার আমার ধরে থাকা হাতের দিকে তাকাই।

প্লিজ কণা আমাকে ক্ষমা করে দে। আমি ভুল করেছি আমি মানছি।

আমি এবার উনার চোখের দিকে তাকালাম। উনার চোখে স্পষ্ট অপরাধবোধ কাজ করছে। কিন্তু তাতে আমার কিছু আসে যায় না। উনি আমার সাথে যা করেছেন তার জন্য আমি উনাকে ক্ষমা করতে পারবো না।

ভাইয়া আপনি ভুল করলে আমি অবশ্যই আপনাকে ক্ষমা করে দিতাম। কিন্তু আপনি ভুল না অন্যায় করেছেন। ভুলের জন্য ক্ষমা করা যায় কিন্তু অন্যায়ের জন্য না। আপনি দিনের পর দিন আমাকে শারীরিকভাবে, মানসিকভাবে অত্যাচার করেছেন। আপনি ভার্সিটির সবার সামনে আমাকে অপমান করেছেন। ক্যাম্পাসের সবার সামনে কানে ধরিয়ে দাঁড় করিয়ে রেখেছেন। আপনার জন্য ভার্সিটিতে নিজের পরিচয় দিতে পারি নাই। প্লিজ আমার কাছে ক্ষমা চাইবেন নাহ আমি আপনাকে কোনো দিন ক্ষমা করতে পারবো না।

৩৫

বেলকনিতে ঐ চিঠি প্রেরকের দেওয়া পাখিটার সামনে দাঁড়িয়ে আছি।

মিদু

ধূলিকণা,, ধূলিকণা,, ধূলিকণা।

তুই আমাকে চিনলি কী করে? বুঝলি কী করে যে আমি ধূলিকণা? আমি তো ধূলিকণা না হয়ে অন্য কেউ হতে পারতাম।

ধূলিকণা,, ধূলিকণা,, ধূলিকণা।

তোকে যে এখানে পাঠিয়েছে তাকে তুই চিনিস? সে কে?

আয়না,, আয়না,, আয়না।

নামটা শুনেই আমার বুকের ভিতর ধক করে ওঠে। চোখের সামনে ভেসে ওঠছে কিছু পুরোনো স্মৃতি। পুরোনো কিছু কথা কানে বাজছে।

আমরা দুজন বিয়া করলে অনেক ভালো হবে।

কেনো?

আমাদের দুজনের একসাথে নিক নেইম হবে আয়না। কী সুন্দর না?

আমি কান চেপে ধরে নিচে বসে পড়লাম। চিৎকার করে কাঁদতে ইচ্ছে করছে। কেনো পুরোনো স্মৃতি আমার পিছু ছাড়ে না।

____________

সুর্যের আলো চোখে পড়তেই আমার ঘুম ভেঙে যায়। চোখ ঢলে নিজের অবস্থান বুঝার চেষ্টা করি। নিজের অবস্থান বুঝতে পেরে আমি থ। কালকে রাতে তো আমি বেলকনিতে ছিলাম তাহলে বিছানায় আসলাম কী করে? কে নিয়ে আসলো? আমার তো ঘুমের মাঝে হাঁটার অভ্যাস নাই তাহলে এখানে আসলাম কী করে? আর ভাবতে পারছি না মাথা ব্যথায় ছিড়ে যাচ্ছে। আজকে শুক্রবার তাই ভার্সিটি যাওয়ার তাড়া নেই। কতক্ষণ চুপ করে বিছানার ওপর বসে থাকি। কিন্তু মাথা ব্যথা কমছে না। রাতে ঠিক করে ঘুম হয়নি তাই মাথা ব্যথা করছে।

বিছানা থেকে নেমে খোলা চুলগুলো হাত দিয়ে খোপা করে ওয়াশরুমে চলে গেলাম। ফ্রেশ হয়ে এসে ফোনটা হাতে নিয়ে দেখি। সাড়ে সাতটা বাজে। ৫ মিনিট আগে ঐ চিঠি প্রেরক একটা মেসেজ পাঠিয়েছে। হয়তো আমি যখন ওয়াশরুমে ছিলাম তখনি পাঠিয়েছে।

ধূলিকণা
তুমি আর চুল খুলে ঘুমাবা না। তুমি জানো তোমার এলোমেলো খোলা চুল, ঘুম ঘুম চোখ দেখলে আমার ভিতরে ঝড় বয়ে যায়। ইচ্ছে করে তোমাকে একটু ছুঁয়ে দেই। তোমাকে ছুঁয়ে দিলে কী খুব বেশি অন্যায় হয়ে যাবে? খোলা চুলগুলো নিজের হাতে ঠিক করে দেই। তোমার চুলের মাতাল করা ঘ্রাণ আছে যেটা আমায় খুব করে তোমার কাছে টানে। ইচ্ছে করে তোমার খুব কাছে চলে যায়। পিছন থেকে তোমায় আলতো হাতে জড়িয়ে ধরে চুলে নাক ডুবিয়ে দেই। তুমি লজ্জা পাচ্ছো। একটু বেশিই লজ্জা পাচ্ছো। থাক আজকে আর বললাম নাহ। কারণ আমি চাই না তোমার লজ্জা রাঙা মুখ আমি ছাড়া অন্য কেউ দেখুক। সেটা দেখার অধিকার শুধুই আমার আর কারো নয়।

ইতি
তোমার অপ্রত্যাশিত কেউ

আচ্ছা আমি কী সত্যিই লজ্জা পাচ্ছি? আয়নার সামনে গিয়ে দাঁড়ালাম। আমার গালের লাল আভাই বলে দিচ্ছে আমি লজ্জা পাচ্ছি। উনার কথায় যদি আমি লজ্জায় লাল হয়ে যায়। উনি এই কাজগুলো করলে আমি কী করবো? আমি এসব কী ভাবছি? লোকটা বলেছে আমার অপ্রত্যাশিত কেউ। তার মানে আমি আশা করি না এমন কেউ। কে হতে পারে? আমাকে জানতেই হবে?

কী করে জানবো? মনে হয়ে না বোম মারলেও উনার পেট থেকে কোনো কথা বের হবে। কী করা যায়? হুম পেয়েছি। আমি উনাকে মেসেজ দিলাম।

আপনি যদি আজকের মাঝে আপনার পরিচয় না দেন তাহলে আপনার নাম্বার ব্লক করে দিব। আপনি যে কাজগুলো পছন্দ করেন নাহ সেই কাজগুলো বেশি বেশি করে করবো। বলেছিলেন নাহ অমি ভাইয়ার থেকে দূরে থাকতে। আপনি পরিচয় না দিলে আমি অমি ভাইয়ার কোলে ওঠে বসে থাকব।

মেসেজটা পাঠিয়ে ব্রেকফাস্ট করতে চলে গেলাম। কিচেনে গিয়ে একটা স্যান্ডউইস খেয়ে। এক মগ কফি নিয়ে রুমে চলে এলাম। বেলকনিতে গিয়ে মিদুর সাথে কথা বলতে বলতে কফিটা শেষ করলাম। তারপর রুমে এসে ফোনটা চেক করলাম নাহ লোকটা কোনো মেসেজ দেয়নি। ফোনটা সাইলেন্ট করে শুয়ে পড়লাম। উদ্দেশ্য একটা লম্বা ঘুম দেওয়ার।

৩৬

ঘুম ভাঙলো ১২ টা ৫৭ মিনিটে। কোনো মতে বিছানা থেকে ওঠে ফ্রেশ হয়ে দৌড় দিলাম লাঞ্চ করার জন্য। ফোন চেক করার কথা বেমালুম ভুলে গেলাম। লাঞ্চ করার সময় অমিত ভাইয়া অনেক ভাবে জ্বালিয়েছে। কিন্তু কাউকে কিছু বলতে পারি নাই। জানি কেউ আমার কথা বিশ্বাস করবে না। কোনো মতে লাঞ্চ শেষ করে রুমে চলে এলাম। ফোনটা হাতে নিতেই আমার চোখ ছানাবড়া। ৭৬ টা মিসডকল আর অসংখ্য মেসেজ ঐ চিঠি প্রেরকের নাম্বার থেকে।

হেই ইডিয়েট মেয়ে তোমার সাহস কী করে হয়? ঐ ছেলের কোলে ওঠার কথা বলার।

কী হলো মেসেজের আন্সার দেও না কেনো?

হেই স্টুপিড গার্ল ফোন ধরো না কেনো?

একবার তোমাকে সামনে পায় জীবনের মতো অন্য ছেলের কোলে ওঠার সখ গুছিয়ে দেবো।

এরকম অসংখ্য মেসেজ। এতো মেসেজ দেখার সময় নাই।

আপনি কে? আপনার ছবি না দিলে আমি সত্যি সত্যি অমি ভাইয়ার কোলে ওঠে বসে থাকবো।

মেসেজ দিতে দেরি হলেও মেসেজের রিপলাই আসতে দেরি হয়নি। মনে হয় উনি আমার মেসেজ এরই অপেক্ষা করছিলেন।

কী তখন থেকে অমি ভাইয়া অমি ভাইয়া করছো? আরেকবার অমি ভাইয়া ডাকলে থাপড়ায়া তোমার দাঁত ফেলে দিবো।

সামান্য নাম সংক্ষিপ্ত করে বলছি বলে উনি এতো রেগে যাচ্ছেন। আহা কী জেলাসি? উনার জেলাসি দেখে আমি মিটিমিটি হাসছি। উনাকে আরেকটু জেলাস ফিল করানো যাক।

অমি ভাইয়া ডাকি বা অমি জানু ডাকি তাতে আপনার কী?

দেখো ধুলিকণা আমি কিন্তু রেগে যাচ্ছি।

আপনি রেগে গেল আমার কী? আমি অপরিচিত মানুষদের রাগকে পাত্তা দেই না। পরিচিত হলে একটা কথা ছিল। আমি অপিরিচদের সাথে কথা বলি না। আর আপনাকে তো কোনোদিন দেখি নাই। তাই আপনার সাথে কথা বলার কোনো প্রশ্নই আসে না। টাটা।

তুমি আমাকে রাগানোর জন্য এসব বলছো তাই না? যাতে আমি প্রচণ্ড রেগে গিয়ে আমার পরিচয় বলে দেই। তোমাকে আর কষ্ট করতে হবে না। আমি তোমাকে পরিচয় দিবো না। তোমার সাথে সরাসরি দেখা করবো।

উনি এতো সহজে রাজি হয়ে যাবেন আমি সেটা কল্পনাও করি নাই। উনি আমার সাথে দেখা করবেন। উফ খুশিতে আমার নাগিন ডান্স দিতে ইচ্ছে করছে।

কিন্তু আমার একটা শর্ত আছে।

উনার মেসেজ দেখে আমার ভ্রু আপনা আপনি কুচকে যায়। উনি আবার কী শর্ত দিবেন?

কী শর্ত?

তোমাকে শাড়ি পড়ে আসতে হবে। আমার দেওয়া শাড়িটা পড়ে আসতে হবে। চুলগুলো খোলে আসবে। আমি তোমার খোলা চুলে শিউলি ফুলের মালা পড়িয়ে দিবো।

ওকে ডান।

আমি খুশি মনে রেডি হতে লাগলাম। লালা শাড়ি পড়ে হাতে লাল কাঁচের চুড়ি পড়ি। ঠোঁটে লাল লিপস্টিক দেই। চোখে কাজল দেই। এক জোর ইয়ার রিং পড়ে চুলগুলো খোলে দেই। ব্যাস আমি রেডি। আমার কোথাও যেতে কারো পারমিশন লাগে না। আমি নিজের ইচ্ছে মতো চলাফেরা করি। আমি পার্সটা হাতে নিয়ে যখনি রুম থেকে বের হতে যাবো তখনি অমিত ভাইয়া রুমে প্রবেশ করে দরজা লক করে দেয়।

কী হলো আপনি দরজা বন্ধ করছেন কেনো?

তুমি বুঝো না একটা রুমে একা একটা মেয়ে থাকলে একটা ছেলে এসে কেনো দরজা বন্ধ করে দেয়।

আপনি আমার রুম থেকে বের হয়ে যান। নাহলে আমি কিন্তু চিৎকার করবো।

উনি খপ করে আমার শাড়ির আঁচল ধরে ফেলেন।

যত ইচ্ছা চিৎকার করো। তোমার চিৎকার কেউ শুনবে না। সবাই লাঞ্চ করে যে যার রুমে রেস্ট নিচ্ছে। আর এ বাড়ির প্রত্যেকটা রুম সাউন্ড প্রুব তুমি তো জানোই।

চলবে……