#তুমি_আমার_প্রেয়সী
#পর্ব_২২
#তাসনিম_জাহান_রিয়া
আমি আর অহি ড্রয়িংরুমে বসে টিভি দেখছি। দুজন রিমোট নিয়ে কাড়াকাড়ি করছি। আমি হর হর মুভি দেখবো। কিন্তু অহি দেখবে না কারণ সে ভয়। হঠাৎ একটা নিউস দেখে আমি আর অহি থামকে যাই। আমার হাত থেকে রিমোট পড়ে যায়। অহি চিৎকার দিয়ে সেন্সলেস হয়ে যায়।
অহির চিৎকার শুনে ইতিমধ্যে সবাই ড্রয়িংরুমে এসে উপস্থিত হয়েছে। টিভিতে চলা নিউসটা দেখে সবাই থমকে যায়। মহুয়া জাহান চিৎকার দিয়ে নিচে বসে পড়ে। সব চ্যানেলেই একই নিউস।
ডক্টর হেলাল রহমানের ছেলে অমিত রহমানের ডেড বডি পাওয়া গেছে রাস্তার পাশে। কে বা কারা যেনো অমিত রহমানকে নিঃসংশ ভাবে হত্যা করে রাস্তার পাশে ফেলে দিয়ে গেছে। গোপন সূত্রে জানা গেছে যে অমিত রহমানকে নিজের ফুফাতো বোনকে রেপ করার চেষ্টা করাই পুলিশ এরেস্ট করে। ঐদিন রাতেই জেল থেকে পালিয়ে যায় অমিত রহমান। আরো জানা গেছে যে অমিত রহমান এর আগে ৬ টা মেয়েকে রেপ করেছে আর ৫ টা মেয়েকে রেপ করার চেষ্টা করেছিল। উপযুক্ত প্রমানের অভাবে আর ক্ষমতার জুড়ে সব কেইস ধামা চাপা দিয়ে দিয়েছিলেন অমিত রহমান।
অমিত ভাইয়ার বডির অবস্থা ভয়ংকর। খুব কাছের মানুষ ছাড়া বলতে পারবে না যে এটা অমিত ভাইয়া। সারা শরীর এসিড দিয়ে পুড়িয়ে দিয়েছে। কপালের ওপর বড় বড় করে লিখা আমি অমিত রহমান। আমি একজন ধর্ষক।
আমি নিজেকে সামলে নেই। এখন অহির সেন্স ফিরিয়ে এখান থেকে নিয়ে যেতে হবে। এসবে অহির ফোবিয়া আছে। আমি আভিয়ান ভাইয়াকে বললাম অহিকে নিয়ে অহির রুমে যেতে। আভিয়ান ভাইয়া অহিকে কোলে নিয়ে অহির রুমে চলে যায়। আম্মু নিচে বসে চিৎকার করে কাঁদছে।
আমি মারা গেলেও কী আম্মু এভাবে কাঁদবে? নিজের ভাবনায় নিজেরই হাসি পাচ্ছে। আম্মু তো আমাকে সহ্যই করতে পারে না। আমি মারা গেলে কাঁদার পরিবর্তে খুশি হবে।
৫০
বিছানায় আধ শোয়া হয়ে হুমায়ুন আহম্মেদের বৃষ্টি বিলাস উপন্যাসটি পড়ছিলাম। হুট করে বৃষ্টি পড়তে লাগলো। বৃষ্টি দেখে খুশিতে আমার মন নেচে ওঠলো। আজকে নিজেকে হার্টলেস মানুষ মনে হচ্ছে। এতো বড় একটা দুর্ঘটনা ঘটে গেলো আমাদের বাসায় তার কোনো প্রভাবই পড়লো না আমার ওপর। বরং অন্যদিনের তুলনায় আজকে আমার মনটা বেশি ফুরফুরে। যারা অমিত ভাইয়াকে এভাবে মেরেছে তাদের অসংখ্য ধন্যবাদ দিতে ইচ্ছে করছে। অমিতের মতো একটা জানোয়ারকে উপযুক্ত শাস্তি দিয়েছে বলে।
আমার অনেকদিনের ইচ্ছে ছিল সাদা শাড়ি পড়ে বৃষ্টিতে ভিজার। ইচ্ছেটা আর পুরণ করা হয়নি। আমি ডিসাইড করেছি এখন থেকে আমার মন যা চায় আমি তাই করবো। কাবার্ড থেকে একটা সাদা শাড়ি বের করে পড়ে নিলাম। দুই হাত ভর্তি নীল রঙের কাচের চুড়ি পড়ে নিলাম। খোপা করা চুলগুলো খোলে দিলাম। পায়ে আলতা পড়লাম।
ড্রেসিংটেবিলের ওপর থেকে নুপুর জোড়া হাতে নিলাম। ভাবছি এখানে পড়বো নাকি ছাদে গিয়ে নুপুড় পড়বো । নুপুড়ের শব্দ শুনলে বড় আম্মু বুজে যাবে আমি বৃষ্টিতে ভিজতে যাচ্ছি। তাহলে আর আমাকে বৃষ্টিতে ভিজতে দিবে না। কারণ বৃষ্টিতে ভিজলেই আমার কান ব্যথা শুরু হয়ে যায়। নুপুড় জোড়া হাতে নিয়ে পা টিপে টিপে ছাদে চলে গেলাম। রেলিংয়ের ওপর বসে নুপুড় পায়ে পড়ে নিলাম।
আমাদের ছাদে অনেক ধরনের ফুল গাছ আছে। আমি সাদা রঙের গোলাপ ফুল নিয়ে কানে গুজে নিলাম। তারপর চোখ বন্ধ করে দুই হাত প্রসারিত করে বৃষ্টিতে ভিজতে লাগলাম। কিছুক্ষণ পড়ে কাধে কারো হাত স্পর্শ পেয়ে ভয় পেয়ে যায়। চোখ খুলে তাড়াতাড়ি পিছন ঘুরে তাকাই। আমার পিছনে অহি দাঁড়িয়ে আছে। আমাকে ভয় পেতে দেখে অহি খিলখিলিয়ে হাসতে থাকে।
ঐ মাইয়া তোরে আমি কতদিন না করছি হুট হাট করে আমাকে পিছন থেকে ধরবি না।
তুই না করলেই আমাকে শুনতে হবে। আমি এখন থেকে প্রত্যেকদিন হুট হাট করে পিছন থেকে তোকে জড়িয়ে ধরবো। তোকে চিমটি কাটবো।
অহি কথা বলছে আর আমি এক দৃষ্টিতে অহির দিকে তাকিয়ে আছি। আমি ভ্রু কুচকে অহির দিকে তাকিয়ে অহিকে প্রশ্ন করি।
তুই এমন সাদা পেত্নী সেজে ছাদে আসছিস কেনো?
তুই যে কারণে আসছিস আমিও সেই কারণে আসছি।
আসবি ভালো কথা। তাহলে আমি যেভাবে সেজেছি তুই সেম টু সেম এমন করে সেজেছিস কেনো?
আমার ইচ্ছে করছে তাই।
তোর ইচ্ছে করলেই হবে। আমি তোর নামে মামলা করবো।
মামলা পড়ে করিস এখন বৃষ্টি উপভোগ কর। বৃষ্টি থেমে গেলে পড়ে আবার আফসোস করতে হবে।
আমিও আর কিছু না বলে অহির সাথে তাল মিলিয়ে বৃষ্টিতে ভিজতে লাগলাম।
কিছুক্ষণ পরে,
বৃষ্টিতে ভিজতে ভিজতে আমার চোখ যায় ছাদের দরজার দিকে। সাফাত ভাইয়া ছাদের দরজার। প্রথমে সাফাত ভাইয়াকে দেখে অবাক হয়ে গেলেও। পরক্ষণেই মনে পড়ে সাফাত ভাইয়া হয়তো আভিয়ান ভাইয়ার সাথে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান নিয়ে ডিসকাস করতে আসছে।
সাফাত ভাইয়া একদৃষ্টিতে অহির দিকে তাকিয়ে এক পা এক পা করে ছাদের ভিতরে প্রবেশ করছে। সাফাত ভাইয়া এখনো আমাকে খেয়াল করেনি। আমি চুপি চুপি ছাদ থেকে নিচে নেমে গেলাম।
সাফাত একেবারে অহির পিছনে এসে দাঁড়ায়। এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে তার প্রেয়সীর দিকে। অহির সাদা শাড়িতে বৃষ্টির পানিতে ভিজে শরীরের সাথে লেপ্টে গেছে। সাফাত পিছন থেকে অহিকে জড়িয়ে ধরে। অহি চমকে চোখ খুলে ফেলে।
কণা এটা কিন্তু ঠিক না। একটু আগে তুই আমাকে এতগুলো কথা শুনিয়ে দিলি তোকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরছি বলে। এখন তুই নিজেও এরই কাজ করলি।
সাফাত কিছু না বলে এক হাত দিয়ে অহির কাধ থেকে চুল সরিয়ে নিজের ঠোঁট ছোঁয়ায় অহির কাধে। নিজের কাধে পুরুষালি ঠোঁটের ছোঁয়া পেয়ে কেঁপে ওঠে অহি। অহি বুঝতে পারে এটা কণা না বরং তার ভালোবালা। অহি নিজের পেটের ওপর থাকা সাফাতের হাতটা খামছে ধরে।
আভিয়ান সাফাতকে খুঁজতে খুঁজতে ছাদের দরজার কাছে চলে আসে। ছাদে এসে অহিকে আর সাফাতকে এভাবে দেখে নিচে চলে যায়। যতই হোক বড় ভাই বলে কথা। নিজের বোনের রোমান্স টাইমে গিয়ে পড়ে নিজেরই লজ্জায় পড়তে হবে।
সাফাত অহিকে নিজের দিকে ঘুরায়। অহিকে কিছু বলতে না দিয়ে মুহুর্তের মাঝেই দুজনের অধর জোড়া এক করে দেয়।
৫১
আভিয়ান আমার ……. হাচ্চু …… আমার ক …. হাচ্চু।
ভাই আমার তুই আর কথা বলিস না। তোর কথা শুনে আমি হাসতে হাসতে এবার শহিদ হয়ে যাবো। তোকে কে বলেছিলো বৃষ্টিতে ভিজে আমার বোনের সাথে রোমান্স করতে। তুই জানিস না বৃষ্টির ফোটা গায়ে পড়লেই তোর ঠান্ডা লেগে যায়। আর আজকে তো তুই পাক্কা আধ ঘন্টা ভিজছিস। নে বুঝ এবার আমার বোনের সাথে রোমান্স করার মজা।
তুই কী করে জানলি আমি তোর বোনের সাথে রোমান্স করছিলাম? তার মানে তুই লুকিয়ে লুকিয়ে দেখছিলি? ছিঃ ছিঃ আভিয়ান তোর লজ্জা করার দরকার। লুকিয়ে লুকিয়ে ছোট বোনের সাথে তার হবু জামাইয়ের রোমান্স দেখিস।
খোলা আকাশের নিচে দাঁড়িয়ে রোমান্স করলো লুকিয়ে লুকিয়ে রোমান্স দেখার প্রয়োজন পড়ে না। তোরা হয়তো ছাদটাকে নিজেদের বেডরুম ভাবছিলি। ভাগ্যিস বড়রা কেউ ছাদে যায়নি।
নিচ থেকে চিৎকার চেঁচামেচির আওয়াজ আসছে না।
হুম।
নিচে আবার কী হলো?
আমি কী করে বলবো? তুইও যেখানে আমিও সেখানে। চল নিচে গিয়ে দেখি।
হুম চল।
______________
সাফাত আর আভিয়ান নিচে এসে দেখে। ড্রয়িংরুমের সোফায় বসে ছোঁয়া, মহুয়া জাহান, রেশমি রহমান বিলাপ করছে। হেলাল রহমান কপালে হাত দিয়ে সোফায় বসে আছেনা । আর তার পাশে গম্ভীর মুখে বসে আছেন তিশান আহম্মেদ। হেলাল রহমান ছোঁয়া, মহুয়া জাহান আর রেশমি রহমানকে ধমক দিয়ে বলেন,
থামবে তোমরা। তোমাদের কান্নার আওয়াজে এখন আমি হার্ট এ্যাটাক করবো। মরছে তো মরছে সাথে আমার সব মান সম্মান ডুবিয়ে দিয়ে গেছে।
হেলাল রহমানের কথায় রেশমি রহমান তেঁতে ওঠে বলেন,
সবাই তো আর তোমার মতো পাষাণ নাহ। তোমার ছেলেকে যে কেউ খুন করেছে সেদিকে তোমার কোনো হেলদুল আছে তুমি পড়ে আছো মান সম্মান নিয়ে।
হেলাল রহমান চিৎকার করে বলে,
তোমার ঐ বদমাইস ছেলের জন্য তোমাদের মতো কেঁদে কেঁদে বন্যা বানাবো। যে হেলাল রহমান সবার কাছে ন্যায়ের প্রতীক ছিল। সেই হেলাল রহমানকে দেখে মানুষ থুতু মারে। চিন্তা করতে পারছো তোমার ছেলে আমার পজিশন কোথায় নামিয়েছে।
মেইন ডোর দিয়ে বাসায় প্রবেশ করতে করতে একটা ছেলে বলে,
এখন চিন্তা করে কী করবে? যখন চিন্তা করার দরকার ছিল তখন তোমরা চিন্তা করো নাই। আমার কথাটা তোমরা কানে তুলো নাই। অমিতের এই অবস্থা আর তোমাদের এই অবস্থার জন্য শুধু মাত্র তোমরা দায়ি।
চলবে……