তিক্ততার সম্পর্ক পর্ব-৪৩+৪৪

0
1952

#তিক্ততার_সম্পর্ক
লেখনীতেঃ তাহমিনা তমা
পর্বঃ ৪৩

রেহান ইয়ানার হাত ধরে হেঁচকা টানে বেড থেকে নামিয়ে ফেললে ইয়ানা অবাক চোখে তাকালো রেহানের দিকে। হঠাৎ হেঁচকা টান দেওয়ায় মাথার ঘোমটা সরে গেছে। ইয়ানা স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছে রেহানের রাগী চেহারা।

ইয়ানা ভয়ে ভয়ে বললো, কী হয়েছে, আপনি এমন করছেন কেনো ?

রেহান ইয়ানাকে আরো অবাক করে দিয়ে হুট করে জড়িয়ে ধরলো। এমনভাবে জড়িয়ে ধরেছে ইয়ানার মনে হচ্ছে সে রেহানের বুকের ভেতর ঢুকে যাচ্ছে।

রেহান ইয়ানার কানের কাছে ফিসফিস করে বললো, কী হয়েছে সেটা তুমি বুঝতে পারবে না। এখন বলো ভয় পেয়েছো ?

রেহানের কথার উত্তর কী দেবে ইয়ানা। সে বরফের মতো জমে গেছে হঠাৎ এভাবে জড়িয়ে ধরায়।

রেহানও আর কিছু বললো না চুপচাপ ইয়ানাকে জড়িয়ে ধরে দাঁড়িয়ে রইলো। বেশ অনেকটা সময় পর রেহান ইয়ানাকে ছেড়ে দুগাল ধরে মুখটা উঁচু করে বললো, ভয় পেয়েছো ?

ইয়ানা কোনোমতে মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ বুঝালো আর তাতে রেহান মুচকি হেঁসে বললো, ভয় দেখানোর জন্যই এমনটা করেছি। এতো বছর অপেক্ষা করানো আর ভয় পাওয়ানোর শাস্তি এটা। একটা দুটো দিন না, পুরো দশ থেকে বারোটা বছর অপেক্ষা করিয়েছো। আর এই বছরগুলোতে প্রতিটা মুহূর্ত আমি তোমাকে হারানোর ভয়ে ভয়ে থাকতাম। এতোগুলো বছর অপেক্ষা করার পর পেয়েছি তাই জড়িয়ে না ধরে থাকতে পারলাম না। তার জন্য কিছু মনে করো না। এর পর তোমার অনুমতি ছাড়া কখনো কাছে যাবো না।

রেহান হুট করে ইয়ানার কপালে কিস করে বললো, তবে ভেবো না কাছে যাবো না বলে একটু আকটু জড়িয়ে ধরা বা কিসও করবো না। এগুলোর জন্য তোমার অনুমতি নিবো না বলে দিলাম। যখন ইচ্ছে হবে শক্ত করে জড়িয়ে ধরবো আর কিসও করবো।

ইয়ানা ভ্যাবলার মতো তাকিয়ে রেহানের কান্ড কারখানা দেখছে। লোকটা অতি খুশীতে পাগল হয়ে গেলো নাকি বুঝতে পারছে না।

রেহান ইয়ানার অবস্থা বুঝতে পেরে মুচকি হাঁসলো। সে নিজেও বুঝতে পারছে অতি খুশীতে সে অদ্ভুত আচরণ করছে কিন্তু নিজেকে স্বাভাবিক করতেও পারছে না। রেহান ইয়ানাকে ছেড়ে এক হাত পরিমাণ দূরে গিয়ে, কোমরে হাত দিয়ে পা থেকে মাথা পর্যন্ত দেখতে লাগলো ইয়ানার। রেহানের এমন কান্ডে ইয়ানা লজ্জা আর ভয়ে মাথা নিচু করে ফেললো। রেহান কোমরে হাত দিয়ে ইয়ানার চারপাশে ঘুরে তাকে দেখতে লাগলো। হুট করে ইয়ানাকে কোলে তুলে নিলো পেছন থেকে, ইয়ানা ভয়ে রেহানের শেরওয়ানি খামচে ধরলো।

ভয়ে কাচুমাচু হয়ে বললো, আরে আরে করছেন টা কী ? নামান আমাকে ফেলে দিলে কোমর ভেঙে যাবে তো।

ইয়ানা মোটেও হ্যাংলা পাতলা নয় আবার খুব বেশি মোটা তাও নয়। ইয়ানা তার হাইট অনুযায়ী পার্ফেক্ট ওজনের অধীকারিনী। তাই রেহানের কষ্ট হওয়ার কথা ইয়ানাকে কোলে তুলে।

কিন্তু রেহান বললো, চুপচাপ দেখো কী করি, নাহলে এমনি না ফেললেও ইচ্ছে করে আছাড় দিবো বলে দিলাম।

ইয়ানা ভয়ে কথা না বাড়িয়ে চুপচাপ থাকলো আর রেহান তাকে ড্রেসিং টেবিলের সামনে নিয়ে নামিয়ে দিলো আর নিজে গিয়ে ইয়ানার পেছনে দাঁড়ালো। পেছন থেকে আলতো করে জড়িয়ে ধরে ইয়ানার পেটের উপর হাত রাখলো। ইয়ানা কেঁপে উঠলো রেহানের এমন স্পর্শে। কিন্তু রেহানের কথায় তা বেশি সময় স্থায়ী হলো না।

রেহান ইয়ানার কাঁধে নিজের থুতনি রেখে বললো, দেখো তো আমাদের কেমন মানিয়েছে।

রেহানের কথা শুনে ইয়ানা অবাক চোখে মাথা ঘুরিয়ে রেহানের দিকে তাকালো। কিন্তু রেহান একহাতে ইয়ানার গাল ধরে আয়নার দিকে মুখ করিয়ে বললো, এদিকে না আয়নায় তাকিয়ে দেখো তো।

ইয়ানা রেহানের কথা শুনে আয়নায় দুজনকে দেখতে লাগলো। সত্যি খুব সুন্দর মানিয়েছে দুজনকে একসাথে। আজ প্রথম ইয়ানা রেহানকে ভালো করে পরখ করতে লাগলো আয়নায়। রেহান আর ইয়াদের উচ্চতা প্রায় সমান সমান, গায়ের রং ফরেনারের মতো, মাথায় ব্রাউন কালার সিল্কি চুল, চোখ দু’টো অনেকটা ব্রাউন কালার, ডান পাশে ভ্রুঁ তে একটা কাটা দাগ যেটা ইয়ানার দেওয়া বলা চলে। ইয়ানাকে বাঁচাতে গিয়ে একদিন গাছের গুঁড়ির উপর পরে গিয়েছিলো আর কেটে গিয়ে দাগটা রয়ে গেছে। রেহানের ঠোঁট দুটো অনেক চিকন আর লাল রঙের। খয়েরী রঙের শেরওয়ানিতে রেহানকে কোনো প্রিন্সের থেকে কম লাগছে না। ইয়ানার কেনো জানি মনে হচ্ছে রেহানের সাথে তাকে যতটা মানাচ্ছে আরমানের সাথে ততটা মানাতো না।

হঠাৎ রেহান ইয়ানার কানের কাছে ফিসফিস করে বললো, এভাবে তাকিয়ে থেকো না, বুকের ভেতরটা কেমন যেনো করে।

রেহানের এমন ফিসফিস কথায় ইয়ানার গায়ের লোম কাটা দিয়ে উঠলো আর লজ্জায় চোখ নামিয়ে ফেললো। রেহান টুপ করে ইয়ানার গালে একটা কিস করলে ইয়ানা আবার বড় বড় চোখ করে আয়নায় রেহানের দিকে তাকালো আর রেহান তা দেখে হা হা করে হাঁসতে লাগলো। ইয়ানা আবার চোখ নামিয়ে নিলো লজ্জায়।

রেহান হাসি থামিয়ে বললো, ফ্রেশ হয়ে ওযু করে এসো, একসাথে দু’রাকাআত নফল নামাজ আদায় করতে হবে।

ইয়ানা এবারও বেশ অবাক হলো রেহানের কথায় তবে সেটা প্রকাশ করলো না। দু’হাতে বেনারসি উঁচু করে ধরে ওয়াশরুমের দিকে যেতে গেলে রেহান হাত টেনে ধরলো পেছন থেকে।

ইয়ানা প্রশ্নবোধক দৃষ্টিতে রেহানের দিকে ঘুরে তাকালে রেহান বললো, আরে এভাবে ওয়াশরুমে যাবে নাকি ? আগে জুয়েলারি খুলে হালকা হয়ে তারপর যাও।

ইয়ানাও বাধ্য মেয়ের মতো ড্রেসিং টেবিলের সামনে টুলে বসে জুয়েলারি খুলতে লাগলো। ইয়ানা হিমসিম খাচ্ছে দেখে রেহান হেল্প করতে লাগলো। ইয়ানা রেহানের দিকে শান্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে নিজের কাজে মনোযোগ দিলো। শুধু বেনারসিটা পরে একটা সবুজ রঙের জামদানী শাড়ি আর প্রয়োজনীয় জিনিস নিয়ে ইয়ানা ওয়াশরুমে চলে গেলো। বেনারসিটা খোলে শাওয়ারে দাঁড়িয়ে গেলো। এতোক্ষণে বুকের ভিতরের যন্ত্রণাটা আবার উপলব্ধি করতে লাগলো ইয়ানা। বারবার চোখের সামনে আরমানের তখনকার সেই হাসি মুখটা ভাসতে লাগলো।

না না এসব আমি কী ভাবছি ? এখন আমি অন্যকারো স্ত্রী, উনার কথা ভাবাও এখন আমার জন্য পাপ। আমার জীবনে এখন শুধু একজনই আছে আর সে হচ্ছে রেহান।

ইয়ানা নিজের মনকে যতোই বুঝাক চোখ দিয়ে তার নোনাজল গড়িয়েই চলেছে। ইয়ানা চুপচাপ ভিজতে লাগলো। অনেকসময় পরেও যখন ইয়ানা বের হচ্ছে না তখন রেহান ওয়াশরুমের দরজার সামনে দাঁড়িয়ে ডাকতে লাগলো। কিন্তু ইয়ানার কোনো সাড়াশব্দ পেলো না। রেহান সাড়া না পেয়ে ওয়াশরুমের দরজায় জোরে ধাক্কা দিতেই দরজা খোলে গেলো আর রেহান টাল সামলাতে না পেরে ভেতরে চলে গেলো। ইয়ানাকে দেখে রেহানের চোখ ছানাবড়া হয়ে গেছে। ইয়ানা হঠাৎ রেহানকে দেখে প্রথমে বরফের মতো জমে গিয়েছিলো পরক্ষণে নিজের দিকে তাকিয়ে দু’হাত ক্রস আকারে বুকের উপর রেখে চিৎকার দিলো। ইয়ানার চিৎকার রেহানের হুঁশ ফিরলো, দু’হাতের তর্জনী আঙ্গুল কানে গুঁজে দ্রুত বের হয়ে আসলো। ইয়ানাও এবার দ্রুত শাওয়ার শেষ করে ড্রেস চেঞ্জ করে রাগী ফেস নিয়ে ওয়াশরুম থেকে বের হলো।

রেহান বেডে শুয়ে ছিলো, ইয়ানা কোমরে হাত দিয়ে সামনে দাঁড়িয়ে বললো, আপনি এভাবে ভেতরে চলে গিয়েছিলেন কেনো ?

রেহান ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বললো, তোমাকে এখন শাওয়ার নিতে কে বলেছে, যদি ঠান্ডা লেগে যায়, আর তুমি দরজা আটকাওনি কেনো ?

ইয়ানা রাগী গলায় বললো, আমি আটকাইনি বলে আপনি ভেতরে ঢুকে যাবেন ?

রেহান উঠে ইয়ানার সামনে দাঁড়িয়ে বললো, এমন ভাব করছো, যেনো তোমাকে বিনা বস্ত্রে দেখে নিয়েছি।

ইয়ানা চোখ বড় বড় করে বললো, ছিহ্ আপনি তো দেখছি ভারী অসভ্য।

রেহান ইয়ানার কোমর জড়িয়ে কাছে টেনে বললো, অসভ্যর কিছু নেই তোমাকে সবভাবে দেখার রাইট আমার আছে বুঝলে ?

রেহান কথাটা শেষ করে একটা চোখ টিপ মারলো আর ইয়ানা রেগে রেহানকে মারতে শুরু করলো। রেহান ইয়ানাকে ছেড়ে এক দৌড়ে ওয়াশরুমে ঢুকে গেলো। একটু পরই আবার উঁকি দিয়ে নিজের ড্রেস চাইলো। রেগে বকবক করে ইয়ানাও দিয়ে দিলো। রেহান শাওয়ার নিয়ে বের হলো আর দু’জনে একসাথে নামাজ পরে নিলো। তখনকার জন্য ইয়ানার বেশ লজ্জা লাগছে এখন। ইয়ানা বেডে বসে ছিলো রেহান একটা টাওয়েল এনে যত্ন করে ইয়ানার চুল মুছে দিতে লাগলো আর এই অসময়ে শাওয়ার নেওয়ায় বকতে লাগলে। ইয়ানা যখন বললো নিজে কেনো তাহলে শাওয়ার নিয়েছে, তখন রেহান ফাটা বেলুনের মতো চুপসে গেলো।

চুল মুছা হয়ে গেছে এখন লক্ষী মেয়ের মতো গিয়ে শুয়ে পড়ো।

ইয়ানা আমতা আমতা করে বললো, আমার আপনার সাথে কিছু কথা ছিলো।

রেহান খুশি হয়ে বললো, কথা আছে না ? আমারও অনেক কথা আছে কিন্তু তোমার ক্লান্ত লাগছে ভেবে ঘুমাতে বলছিলাম, ওয়েট।

রেহান হুট করে ইয়ানাকে কোলে তুলে বেলকনিতে নিয়ে দোলনায় বসালো। ইয়ানা কিছু বুঝে উঠার আগেই সে দোলনায় বসে আছে। দোলনাটাও ফুল দিয়ে সাজানো হয়েছে সুন্দর করে।

রেহান ইয়ানার পাশে বসে বললো, নাও এবার বলতে থাকো।

ইয়ানা একটা লম্বা শ্বাস নিয়ে রেহানকে প্রথম থেকে সবকিছু খোলে বললো। প্রথমে যে হাসি মুখটা নিয়ে এসেছিলো সেই হাসি মুখটা এখন আর নেই রেহানের।

ইয়ানা মাথা নিচু করে বললো, মিথ্যা দিয়ে সম্পর্কটা শুরু করতে চাইনি।

রেহান ইয়ানাকে অবাক করে দিয়ে ইয়ানার মুখটা দু’হাতে তুলে ধরে কপালে কিস করে বললো, ভালোবাসা যদি অন্যায় হতো তাহলে সে অন্যায় আমিও করেছি তোমাকে ভালোবেসে। তবে অন্যায়টা তখন হতো যদি আমার থেকে সত্যিটা লুকিয়ে মিথ্যা অভিনয় করতে। কিন্তু একটা কথা মনে রেখো আমি এতোটাও মহান না, নিজের বউয়ের মনে অন্যকারো বসবাস মেনে নিবো।

ইয়ানা এবার অসহায় দৃষ্টিতে তাকালো রেহানের দিকে আর রেহানও অনুরোধের স্বরে বললো, বেশি না ইয়ানা, একটু ভালোবাসলেই হবে,বাকিটা আমার ভালোবাসা দিয়ে পুষিয়ে দেবো। তোমার মনে একটু জায়গা দেওয়ার চেষ্টা করো।

ইয়ানা কিছু না বলে রেহানের কাঁধে নিজের মাথা এলিয়ে দিলো৷ রেহান নিজের উত্তর পেয়ে গেছে। আলতো করে ইয়ানার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে লাগলো। কেউ আর কোনো কথা বলছে না আকাশের অর্ধচন্দ্রটা আজ একটু বেশি আলো দিচ্ছে সেটাই দেখতে ব্যস্ত দুটো চোখ আর বাকি চোখ দুটো দেখছে সেই ব্যস্ত চোখদুটোকে। ইয়ানা একসময় রেহানের কাঁধে মাথা রেখে ঘুমিয়ে গেলে রেহান আলতো করে কোলে তুলে নিলো তাকে। বেডে শুয়ে দিয়ে কপালে আর চোখের পাতায় কিস করলো। নিজেও পাশে শুইয়ে ইয়ানাকে নিজের বুকে টেনে নিয়ে শুয়ে পড়লো। আজ প্রাপ্তির মাঝেও রেহানের মনের কোণে দাউদাউ করে আগুন জ্বলছে, কারণটা হয়তো আজ আর কারো অজানা নয়।

ইয়ানার মাথায় কিস করে রেহান বিড়বিড় করে বললো, আজ তোমার মনের কোথাও হয়তো আমি নেই তবে একদিন ঠিক আসবে। যেদিন তোমার পুরো মন জুড়েই শুধু আমি থাকবো।

৪৭.
ইয়াদ ঘুমিয়ে পরেছে ইমাকে জড়িয়ে ধরে নিঃশব্দে কাঁদতে কাঁদতে। সত্যি ইয়ানাকে সে কতটা ভালোবাসে হয়তো কাউকে কোনোদিন বুঝাতে পারবে না। ইয়ানার মুখে একটু আঁধার নামলে ইয়াদের দুনিয়া অন্ধকার হয়ে যায়। ভাইদের ভালোবাসা বুঝি এমনই হয়। ইমা তাকিয়ে আছে ইয়াদের শুকনো মুখটার দিকে। বোনের বিয়েতে সে পুরো ব্ল্যাক প্রিন্সেস সেজেছিলো আজ। কালো পাঞ্জাবি, কালো জিন্স প্যান্ট, কালো কটি, কালো শো তবে সেইসব সাজের কিছুই এখন অবশিষ্ট নেই তবে ইমার গায়ে কালো শাড়িটা এখনো রয়ে গেছে। ইয়াদ ইমার কোলে মাথা রেখে ঘুমাচ্ছে আর ইমা ইয়াদের মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে। ইমার মনে হঠাৎ একটা ইচ্ছে জাগলো। সেটা পূরণ করতে টুপ করে ইয়াদের কপালে গভীর একটা কিস করলো। ইমা ভেবেছিলো ইয়াদ গভীর ঘুমে আছে কিন্তু তাকে অবাক করে দিয়ে বাম গালে ইশারা করলো ইয়াদ। ইমা ভয়ে আর লজ্জায় বড় বড় চোখে তাকালো ইয়াদের দিকে কিন্তু ইয়াদ চোখ খুললো না। ইমা তা দেখে স্বস্তির নিঃশ্বাস ছাড়লো। তবে সেটা বেশি সময় স্থায়ী হলো না ইয়াদ আবার নিজের বাম গালে কিস করার ইশারা করলো। ইমা অনেকটা সময় নিয়ে আস্তে করে ইয়াদের বাম গালেও কিস করলো। ইয়াদ এবার ডান গালে ইশারা করলো ইমাও এবার খুব একটা সময় না নিয়ে টুপ করে কিস করে দিলো। ইয়াদ এবার একে একে চোখের পাতা, থুতনি আর মুখের আশেপাশে আঙুল দিয়ে দেখাতে লাগলো আর ইমা জোশে পরে কিস দিয়ে যাচ্ছে। ইয়াদ এবার হুট করে ঠোঁটে ইশারা করতেই ইমা কিছু না ভেবে ইয়াদের ঠোঁটে কিস করে দিলো। দেওয়ার পর ইমার খেয়াল হলো সে কী করেছে ? ইয়াদ ফট করে চোখ খুলে বড় বড় চোখে ইমার দিকে তাকালো। ইমা লজ্জায় দু’হাতে নিজের মুখ ঢেকে ফেললো।

ইয়াদ মুচকি হেঁসে একটু উঁচু হয়ে ইমার কানের কাছে ফিসফিস করে বললো, তোমাকে লজ্জা পেলে পুরো লাল মরিচের মতো লাগে। লাল মরিচ যেমন খাওয়ার আগে দেখেই ঝালে জিবে পানি চলে আসে তোমার বেলায়ও তেমনি হয়।

ইমা বড় বড় চোখ করে ইয়াদের দিকে তাকালো আর বললো, জীবনে অনেক শুনেছি লজ্জা পেলে নাকি টমেটোর মতো লাগে আর খেয়ে ফেলতে ইচ্ছে করে। কিন্তু আজ প্রথমবার আপনার কাছে শুনলাম কাউকে লাল মরিচের মতোও লাগে।

ইয়াদ আবার ইমার কোলে শুয়ে বললো, সবার পছন্দ কী আর এক হয় ? সবার হয়তো টমেটো ভালো লাগে তাই টমেটো বলে কিন্তু আমার কাছে ঝাল ঝাল লাল মরিচই ভালো লাগে। দেখো দেখো তোমার ঠোঁট দুটো এখন একদম দুটো মরিচের মতো লাগছে।

ইয়াদের এমন কথায় ইমা নিজের দু’হাতে ঠোঁট ঢেকে ফেললো আর সেভাবেই বললো, আপনি তো ভারী অসভ্য হয়ে গেছেন।

ইয়াদ দুষ্টু হেঁসে বললো, অতি ভদ্রলোক হয়ে লাভ নেই, এতোদিন সেটা ছিলাম বাট কোনো লাভ হয়নি এবার থেকে একটু অভদ্র হবো ভেবেছি।

ইমা হাত সরিয়ে অবাক হয়ে বললো, আপনি না একটু আগে কাঁদছিলেন ? এখনই আবার অসভ্যতামি শুরু করেছেন ?

ইমার কথা শুনে ইয়াদের মুখ কালো হয়ে গেলো। আসলে ইয়াদের চোখ লেগে গিয়েছিলো ইমার কোলে শুয়ে থেকে। হঠাৎ ইমার ঠোঁটের উষ্ণ স্পর্শে ঘুম ছুটে যায়। ইয়ানার ব্যাপারটা ভুলেই গিয়েছিলো, ইমার কথায় আবার মনে পড়ে গেলো। ইমা নিজেও ব্যাপারটা বুঝতে পারলো আর এটাও বুঝলো ভুল সময়ে ভুল কথা বলে ফেলেছে। ইয়াদ শান্ত হয়ে আবার চোখ বন্ধ করে নিলো।

ইমা মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বললো, বেডে গিয়ে ঘুমাবেন চলুন। এভাবে সারারাত ফ্লোরে শুয়ে থাকলে শরীর ব্যাথা হয়ে যাবে আর ঠান্ডাও লাগবে।

ইয়াদ কথা না বাড়িয়ে বেডে গিয়ে শুয়ে পড়লো আর ইমা দীর্ঘ শ্বাস ছেড়ে উঠে একটা সুতি শাড়ী নিয়ে ওয়াশরুমে চলে গেলো চেঞ্জ করতে। ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে দেখে ইয়াদ কপালে হাত দিয়ে শুয়ে আছে। ইমা সব কাজ শেষে ইয়াদের পাশে শুয়ে পড়তেই ইয়াদ তাকে টান দিয়ে কাছে নিয়ে ইমার বুকে মাথা রেখে শুয়ে পরলো।

মলিন গলায় বললো, আমার ঘুম প্রয়োজন তাই নড়াচড়া না করে চুপচাপ এভাবেই শুয়ে থাকো।

ইমা কিছুই বললো না ওভাবেই শুয়ে রইলো চুপটি করে। ইমার মাঝে মাঝে মনে হয় ইয়াদের একটু ভালোবাসাই তাকে উতলা করে তুলে, তার একটু স্পর্শ ইমার হুঁশ উড়িয়ে দেয়। যেদিন ইয়াদ পুরোপুরি তার হয়ে হয়ে যাবে সেদিন কীভাবে নিজেকে সামলে উঠবে। কথাটা ভাবতেই ইমা লজ্জায় মুচকি হেঁসে চোখ বন্ধ করে ফেললো।

৪৮.
নিজের ফোনে আরমান ইমার কিছু ছবি দেখছে, প্রত্যেকটা ছবি ইমাকে লুকিয়ে তোলা। আরমান তখন নিজেও বুঝতে পারেনি সে কেনো এই ছবিগুলো লুকিয়ে তুলেছিলো। আজ নিজের মনের কথা বুঝতে পেরেছে তবে সেটা অনেক বেশি লেট করে।

আরমান বিড়বিড় করে বললো, ইমা তোর মুখের হাসিটা দেখার পর আমার আর কোনো কষ্ট নেই। তুই ততটা ভালো আছিস যতটা হয়তো আমি রাখতে পারতাম না। তবে নিজের সাথে যুদ্ধ করতে করতে আমি যে ক্লান্ত হয়ে গেছি। এবার তোর মুখোমুখি আমাকে যে হতে হবে রে ইমা।

চলবে,,,,,

#তিক্ততার_সম্পর্ক
লেখনীতেঃ তাহমিনা তমা
পর্বঃ ৪৪

আজ সাতদিন ধরে টানা বৃষ্টি হচ্ছে। কখনো মুশল ধারে আবার কখনো গুড়ি গুড়ি। আরমান ভার্সিটি যাওয়ার জন্য রেডি হচ্ছে তখনই ছাহেরা বেগম দরজায় নক করলো।

আরমান রুমে আছিস ?

আরমান দরজার দিকে তাকিয়ে বললো, হ্যাঁ।

ছাহেরা রুমে এসে দেখে আরমান রেডি হচ্ছে। এখন কথাটা বলা ঠিক হবে কিনা বুঝতে পারছে না সে।

আরমান হাতে ঘড়ি পরতে পরতে বললো, কিছু বলবে ?

ছাহেরা আমতা আমতা করে বললো, একটা কথা বলার ছিলো কিন্তু।

কিন্তুর কী আছে, যা বলার তাড়াতাড়ি বলো।

তোর জন্য একটা মেয়ে দেখেছিলাম, আজ তারা যেতে বলেছে।

আরমান পারফিউম দিচ্ছিলো মায়ের কথা শুনে তার হাত থেমে গেলো।

ছাহেরা আবার বললো, দেখ তোর বয়স তো আর কম হলো না। পড়াশোনা শেষ করে ভালো চাকরিও করছিস এবার বিয়েটাও সেরে ফেলা উচিত।

আরমান কাঠ কাঠ গলায় বললো, আমাকে নিয়ে তোমার না ভাবলেও চলবে।

ছাহেরা অবাক হয়ে বললো, আমি তোর মা, তোকে নিয়ে আমি না ভাবলে কে ভাববে ?

আরমান শান্ত দৃষ্টিতে মায়ের দিকে তাকিয়ে বললো, আমার জীবন থেকে খুশির কারণটা সরিয়ে দেওয়ার আগে তোমার মনে ছিলো না তুমি আমার মা। আমি বুঝতে লেট করলেও তুমি ঠিক বুঝতে পেরেছিলে আমি কী চাই ? আর সেটা বুঝতে পেরেই আমার অনুপস্থিতির সুযোগ নিয়েছিলে তুমি। তখন মনে পড়েনি মা, আমি তোমার ছেলে ?

আরমান কথাগুলো বলে এক মুহূর্ত না দাঁড়িয়ে গোটা গোটা পা ফেলে বের হয়ে গেলো। ছাহেরা বেগম ধপ করে বসে পড়লো বেডে। আজ কতগুলো দিন হলো ছেলে মেয়েরা তার সাথে ভালো করে কথা বলে না। আমিনুল মাহমুদের চাকরিটাও এখন নেই। দিসারের আর কোনো পাপের সাথী না হলেও তার সাথে মিলে কোম্পানির অনেক টাকা গন্ডগোল করেছিলো। ইমার খালু বলে ইয়াদ কোনো ঝামেলা না করে শুধু কোম্পানি থেকে বের করে দিয়েছে। চাকরি চলে যাওয়ার পর সে এখন কী করে না করে তার কোনো খোঁজ খবর পায় না ছাহেরা। বলতে গেলে মাঝ সমুদ্রে পরে গেছে ছাহেরা। আরমান সত্যি বলেছে, মায়ের মন তো তাই আরমানের রাগের মাঝেই ইমার প্রতি দুর্বলতা ধরে ফেলেছিলো ছাহেরা। ইমাকে দূরে সরাতে গিয়ে নিজের ছেলে দূরে সরে যাবে বুঝতে পারেনি। তবে এখন কপাল চাপড়ানো ছাড়া কিছুই করার নেই তার।

নিজের বাইক নিয়ে এখন ভার্সিটি যায় আরমান। নিজের বাবার কুকীর্তির কথা জানার পর তার গাড়ি আর ছুঁয়েও দেখেনি। বাইকটা তার নিজের টাকায় কেনা তাই সেটাই ইউজ করে এখন। বাইরে গুড়ি গুড়ি বৃষ্টির জন্য অনেকটাই ভিজে গেছে ভার্সিটি পৌঁছাতে পৌঁছাতে। বাইক পার্ক করে নিজের কেবিনের দিকে চলে গেলো। এই ভার্সিটিতে তার দিন একটা একটা করে ফুরিয়ে আসছে। ইয়ানার ফাইনাল এক্সাম শেষ হয়ে গেছে কিছুদিন হলো। রেহান তাকে নিয়ে আসতো আবার নিয়ে যেতো। ইয়ানা আরমানের সাথে এমন ভাব করেছে যেনো আরমানকে শুধু নিজের টিচার হিসাবেই চেনে। ইয়ানার পরিবর্তনে আরমান প্রথমে অবাক হলেও পরে তেমন মাথায় ঘামায়নি। আরমান ইমার সাথে কিছু কথা বলতে চেয়েছিলো কিন্তু এতদিন ইমার এক্সাম চলছিলো তাই কিছু বলেনি, যদি পড়াশোনার উপর প্রভাব পড়ে তাই। আজ ইমার লাস্ট এক্সাম তাই আরমান ঠিক করেছে যা বলার আজই বলবে। আরমানের হাতেও খুব বেশি সময় নেই। শুধু ইমার এক্সাম শেষ হওয়ার অপেক্ষায় ছিলো।

৪৯.
ইয়াদ ড্রাইভ করছে আর ইমা পাশে বসে বাইরের দিকে তাকিয়ে আছে, তবে মাঝে মাঝে ইয়াদের দিকেও তাকাচ্ছে।

হঠাৎ ইয়াদ বললো, তো আজ তো তোমার এক্সাম শেষ, সামনের কী প্ল্যান ?

ইয়াদের দিকে তাকিয়ে ইমা বললো, মানে বুঝতে পারলাম না।

মানে ফাইনাল এক্সাম শেষ হলে, রেজাল্ট বের হতে আর মাস্টার্সে ভর্তি হতে অনেক সময় পাবে মাঝে। এই সময়টা কীভাবে কাটাতে চাও ?

ইমা মন খারাপ করে বললো, আমার এই ফ্রী টাইম গুলো আগে কোথা দিয়ে চলে যেতো টেরই পেতাম না। ভার্সিটি না গেলে সকাল থেকে রাত দশটা পর্যন্ত বাসার কাজ করেই পার হয়ে যেতো। তবে এবার সময়টা কীভাবে যাবে সেটা আমিও বুঝতে পারছি না। আপনি সারাদিন অফিসে থাকেন, ইয়ানা আপুও এখন চলে গেছে আর ইশান ভাইয়ের তো দেখাই মিলে না।

ইয়াদ সামনের দিকে তাকিয়ে বললো, তুমি বাসায় একা একা খুব বোর হও তাই না ?

খুব বেশি বোর হই, কথা বলার মতো মানুষও নেই। আর এতগুলো সার্ভেন্ট রেখে দিয়েছেন কাজও খুঁজে পাই না।

ইয়াদ গলার স্বর পাল্টে বললো, ইমা তোমার মনে হয় না, এবার আমাদের একজন ফ্যামিলি মেম্বার বাড়ানো উচিত। যাকে নিয়ে তোমার সারাদিন কেটে যাবে।

ইমা বড় বড় চোখে ইয়াদের দিকে তাকিয়ে বললো, ফ্যামিলি মেম্বার বাড়াবেন মানে ? আপনি কী আর একটা বিয়ে করার মতলব করছেন ?

ইয়াদ বিড়বিড় করে বললো, এক বউকেই এখনো ছুঁয়ে দেখার সৌভাগ্য হলো না আবার আরেকটা।

ইমা রেগে বললো, এই এই কী বললেন আপনি ? দেখুন আমি এক্সাম দিতে যাচ্ছি মাথা একদম গরম করবেন না বলে দিলাম।

ইয়াদ দীর্ঘ শ্বাস ছেড়ে বললো, কী কপাল আমার, বউকে বুঝাতে চাই ‘ক’ আর বউ আমার বুঝে ‘ব’।

কী বুঝি না আমি হ্যাঁ ? সব বুঝি আর খুব ভালো করেই বুঝি। তাই আমাকে কখনো বোকা বানানোর চেষ্টা করবেন না।

ইয়াদ হাত জোর করে বললো, ভুল হয়ে গেছে আমার জ্ঞানী বিবি সাহেবা। আমাকে ক্ষমা করে, আপনার যদি মর্জি হয় এবার হলে জান দয়া করে।

ইয়াদের কান্ডে ইমার হাসি পেলেও চেপে গেলো, এখন হাসিটা মানাবে না ভেবে। ইমা টুপ করে ইয়াদের গালে একটা কিস করে গাড়ি থেকে নেমে গেলো। ইয়াদ অবাক হয়ে তাকাতে তাকাতে ইমা হলের ভিতরের দিকে পা বাড়ালো। ইয়াদ সেদিকে তাকিয়ে মুচকি হেঁসে নিজের গন্তব্যে রওনা হয়ে গেলো। ইমা ইয়াদের কথা ভেবে মুচকি হাসতে লাগলো। ইমা বুঝতে পেরেছে ইয়াদ কোন ফ্যামিলি মেম্বার বাড়ানোর কথা বলেছে তবু ইমা এমন উল্টোপাল্টা বলে ব্যাপারটা কাটিয়ে গেছে। ইয়াদের কথায় সে লজ্জায় পরতে চায়নি। এই কয়েক মাসে ইয়াদ তাকে খুব বেশি হেল্প করেছে। মনোযোগ নষ্ট হবে ভেবে সম্পর্কটাকে নতুন মোড় দেয়নি। ইমাকে সাহায্য করেছে পড়াশোনায় মনোযোগ দিতে আর পড়ার ব্যাপারেও অনেক হেল্প করেছে। ইয়াদ ভেবে রেখেছে ইমার এক্সাম শেষ হলে ওকে নিয়ে কোথায় ঘুরতে যাবে। বিয়ের কতগুলো মাস পেড়িয়ে গেছে এখনো কোথাও নিয়ে যায়নি ইমাকে। সামনে ইয়াদ আর ইমার ফাস্ট ম্যারেজ অ্যানিভার্সারি। ইমার জন্য অনেক বড় সারপ্রাইজ রেখেছে সেদিনের জন্য। ইয়াদ অফিসে বসে নিজের কাজে মনোযোগ দিলো তখনই নক করলো রনিত। রনিত এখন আর আগের মতো ভয় পায় না ইয়াদকে, তবু আগের মতোই আচরণ করে মাঝে মাঝে।

May i come in, sir ?

হ্যাঁ রনিত এসো।

রনিত দরজা ঠেলে ভেতরে এসে দাঁড়ালো। কিছু বলছে না দেখে ইয়াদ সামনে তাকিয়ে অবাক হয়ে গেলো, রনিতের হাতে ট্রে আর হাতে মিষ্টি।

ইয়াদ অবাক হয়ে বলল, কী ব্যাপার রনিত, তুমি আবার বিয়ে করেছো নাকি ?

রনিত দাঁতে জিহ্বা কেটে বললো, ছি ছি স্যার, কী বলেন এটা ? মানুষ বিয়ে কয়বার করে ?

ইয়াদ আবার ফাইলের দিকে তাকিয়ে বললো, মানুষ বিয়ে কয়বার করে সেটা ডিপেন্ড করে মানুষটা কেমন তার উপর। আগের বার তো হুট করে বিয়ে করে মিষ্টি নিয়ে হাজির হয়েছিলে এবার মিষ্টি আনার কারণ কী তাহলে ?

কয়েকমাস আগেই রনিত হুট করে তার গার্লফেন্ডকে বিয়ে করে ফেলেছে। গার্লফেন্ডের বাবা নাকি জোর করে অন্য কোথাও বিয়ে দিচ্ছিলো রনিতকে সেটা জানাতে আসলে রনিত তাকে গিয়ে কোর্টে গিয়ে বিয়ে করে ফেলেছে। পরদিন মিষ্টি নিয়ে সোজা ইয়াদের সামনে হাজির।

ইয়াদ পুরোনো কথা ভাবতে ভাবতে রনিতের গলা শুনতে পেলো আবার।

লজ্জা মাখা গলায় রনিত বললো, স্যার এবার বিয়ে না অন্য সুখবর আছে।

ইয়াদ ফাইল দেখতে দেখতেই বললো, তো কী তোমার সুখবর ?

স্যার আমি বাবা হতে চলেছি।

হোয়াট ?

ইয়াদ বড় বড় চোখে তাকিয়ে আছে রনিতের দিকে। ইয়াদের পরে বিয়ে করে সে বাবা ডাক শুনতে চলেছে আর ইয়াদ এখনো নিজের বউয়ের কাছেই যেতে পারেনি, ভাবা যায় ?

রনিত মাথা নিচু করে বললো, জী স্যার, গতকাল ডক্টর রিপোর্ট দিয়েছে। এক মাস চলছে কেবল। অন্য অসুস্থতার জন্য টেস্ট করাতে গিয়ে প্রেগনেন্সির কথা জানতে পেরেছি।

ইয়াদ ছোট করে বললো, ওহ্ কনগ্রাচুলেশন।

স্যার মিষ্টি মুখ করুন, অফিসের সবাইকে করিয়েছি শুধু আপনি বাকি আছেন।

ইয়াদ হাসি মুখে বললো, তুমি তো জানো আমি মিষ্টি পছন্দ করি না।

রনিত ইয়াদের মানা শুনলো না, তাই জোর করায় ইয়াদ একটু মিষ্টি মুখে দিলো। রনিতকে নিজের কাজে যেতে বলে ইয়াদ গালে হাত দিয়ে কিছু একটা ভাবতে লাগলো।

বিড়বিড় করে বললো, আমার বউটা যে কবে বুঝবে কে জানে।

৫০.
ইমা এক্সাম শেষ করে হল থেকে বের হলো। এবারের সব এক্সাম ইমার অনেক ভালো হয়েছে, তার ক্রেডিট অবশ্য ইয়াদের পাওনা। ইমা রিকুর সাথে ফুচকা খাচ্ছে আজ অনেক সময় আড্ডা দিয়ে তারপর বাসায় যাবে ঠিক করেছে। ইয়াদকে বলে দিয়েছে আসার প্রয়োজন নেই সে নিজেই বাসায় চলে যাবে। আবার কবে রিকুর সাথে দেখা হবে ঠিক নেই তাই আজ ইচ্ছে মতো মজা করবে দুজনে ঠিক করেছে।

রিকু ফুচকা মুখে পুরে বললো, কী রে ইমা, ভাইয়া রাগ করবে না তে আবার ?

ইমা মুচকি হেঁসে বললো, আমি উনাকে বলেই এসেছি তাই রাগ করবে না।

হঠাৎ রিকু গম্ভীর হয়ে বললো, ইমা তুই ভালো আছিস তো ?

ইমা থেমে গেলো রিকুর কথায় আর ঠোঁটের কোণে তৃপ্তির হাসি ফুটিয়ে বললো, এতটা ভালো থাকবো জীবনে কোনোদিন হয়তো কল্পনাও করেছিলাম না রে রিকু। এতটা সুখ ছিলো বলেই হয়তো আল্লাহ এতটা কষ্ট আগে দিয়েছিলো। নাহলে এই সুখের মর্যাদা হয়তো দিতে পারতাম না।

রিকু প্রশান্তির হাসি দিয়ে বললো, ভাইয়া তোকে খুব ভালোবাসে না ?

ইমা হাসিটা বজায় রেখে বললো, কোনোদিন মুখ ফোটে বলেনি ভালোবাসি। তবে আমার প্রতি তার প্রত্যেকটা আচরণ বলে দেয় সে কতটা ভালোবাসে আমায়। আর যদি ভালো নাও বাসতো তাতেও আমার আফসোস ছিলো না। একটু ভালো ব্যবহার আমার মতো মেয়ে খুশি থাকার জন্য হয়তো যথেষ্ট ছিলো তখন। তবে এখন আমি তার ভালোবাসা চাই একটু না অনেকটা।

তুই কতটা ভালোবাসিস তাকে ?

সেটা পরিমাণ করার যন্ত্র যদি থাকতো তাহলে হয়তো বলতে পারতাম। তবে এতোটা ভালোবাসি তার জন্য হাসতে হাসতে জীবনটাও দিয়ে দেবো৷ আবার ভাবিস না আবেগের বশে কথাগুলো বলছি। না রে আবেগ না তাকে নিজের মন প্রাণ উজার করে ভালোবেসেছি। শুধু চাই কখনো যাতে আমার দ্বারা কোনো আঘাত সে না পায়। ছোটবেলা থেকে মানুষটা আঘাত পেতে পেতে পাথর হয়ে গিয়েছিলো। সেই পাথরে একটু একটু করে প্রাণের সঞ্চার হচ্ছে কেবল। আমার থেকে আঘাত পেলে সে সহ্য করতে পারবে না কোনোদিন।

রিকু মুচকি হেঁসে বললো, আল্লাহ তোদের সবসময় হ্যাপি রাখুক এই দোয়া করি।

ইমা,,,,

ওদের কথার মাঝে পুরুষালী কণ্ঠে কেউ ইমা ডাকলে দু’জনেই চমকে উঠে পাশে তাকায়। ঘুরে তাকিয়ে দেখে আরমান দাঁড়িয়ে আছে। ইমা বেশ অবাক হলো আরমানকে দেখে। আজ কতগুলো মাস পর সামনাসামনি কথা বললো ইমার সাথে। ভার্সিটিতে ক্লাস নেওয়ার সময়ও ইমাকে এড়িয়ে যেতো সবসময়। ইমার মনে হাজারটা প্রশ্ন উঁকি দিচ্ছে আরমান আজ হঠাৎ কী বলতে এসেছে।

তোর সাথে কিছু কথা ছিলো, প্লিজ না করিস না আজই শেষবারের মতো কথাগুলো শোন আর কখনো কিছু বলতে আসবো না।

ইমা কী করবে দোটানায় পড়ে গেলো। আরমানকে দেখে সেই আগের আরমান মনে হচ্ছে না ইমার। এ যেনো কোনো নতুন মানুষ দাঁড়িয়ে আছে তার সামনে। চোখেমুখে সেই অহংকারী ভাব আর অ্যাটিটিউড লক্ষ্যে আসছে না আজ।

চলবে,,,,