#ওহে_প্রিয়
#জান্নাতুল_নাঈমা
#পর্ব_৪৭
___________________
-‘ নাতবউ তোর মুখটা দেখলে পরান আমার জুরাই যায়৷ আমার হাভু জীবনে ভালো কাজ,মন্দ কাজ যাই করুক না কে তোরে বিয়া করার মতো ভালো কাজ একটাও করেনাই। কিন্তু তোরে বিয়া করার উপায়’ডা একবারে মন্দ হইছে।’
আহির দু’হাত নিজের দু’হাতের মুঠোয় নিয়ে নানুমনি কথাটি বলতেই ঈষৎ হাসলো আহি৷ বললো,
-‘ নাতির প্রশংসা করছেন সে না হয় বুঝলাম আপনার শরীর কেমন আছে হাঁটা, চলা করতে কি অনেক বেশী সমস্যা হচ্ছে? ‘
-‘ তা একটু হয়ই রে বুবু তগোর মতোন কি আর এখন চলতে ফিরতে পারমু?’
কিছু বললো না আহি শুধু ভাবলো মানব জীবনের চির ধারিত পরিবর্তন গুলোর কথা। সামনের এই বৃদ্ধাও এক সময় তারই মতোন অনায়াসগম্যে চলাফেরা করতে পারতো অথচ আজ তার চলাচলের জন্য নির্ভর করতে হয় কোন মানুষ অথবা লাঠির ওপর। মানুষ এক অদ্ভুত প্রাণীই বটে। যাদের জীবনের শুরুতেও সাপোর্ট সিস্টেমের প্রয়োজন হয় এবং শেষেও। অথচ মাঝের সময়টা তারা কতোই না দাম্ভিকতাকে বরণ করে জীবন কাটায়। মনেই রাখেনা তাদের জীবনের শুরুটা কিভাবে হয়েছে এবং শেষ জীবনের পরিণতিটা কি হবে। দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে নানুমনির দিকে তাকালো আহি জিগ্যেস করলো,
-‘ একটু পরই বোধহয় আমাদের সকলকে বের হতে হবে।’
আহির কথাটি শুনে নানুমনি তার হাত ছেড়ে বালিশে পিঠ ঠেকিয়ে বসলো। আহি তার পাশেই বসে আছে৷ নানুমনি ইশারা করতেই আবারো এক হাত বাড়িয়ে দিলো আহি৷ নানুমনি মুচকি মুচকি হেসে আহির সে হাতটি আবারো মুঠোবন্দি করে নিলো। নানুমনির হাসিটা দারুণ লাগে আহির৷ কোথাও যেনো হ্যাভেনের সঙ্গে এই হাসিটার বড্ড মিল পায় সে। হাসির সাথে যেনো একগাদা দুষ্টুমি মিশে থাকে৷ সাদা সোনালী পাড়ের পাতলা সূতি কাপড় পরিহিত নানুমনিকে দেখলেই ভিতর থেকে স্নিগ্ধ, শুভ্র এক অনুভূতি আসে। লালচে ফর্সা শরীরটা ঝুলে ঝুলে কেমন ভাঁজ পরেছে। মাথার সবগুলো চুলই সাদা তীক্ষ্ণ দৃষ্টি তে তাকিয়ে একটি কাঁচা চুলও পাওয়া যাবে না। বয়স হয়েছে মানুষ’টার বাহ্যিক সকল পরিবর্তনই বৃদ্ধার খাতায় নাম লিখিয়েছে। তবে এ মূহর্তে মানব জাতির আশ্চর্য এক সৌন্দর্য আবিষ্কার করলো আহি৷ যেটি কেবল বৃদ্ধদের এবং শিশুদের মাঝেই পরিলক্ষিত হয়৷ একটি শিশু বাচ্চার হাসির সৌন্দর্য যেমন অদৃষ্টপূর্ব হয়ে থাকে ঠিক তেমনি একজন বৃদ্ধর হাসিও অদৃষ্টপূর্ব হয়। তাদের মুখে যখন হাসি ফুটে তখন শুধু তারা হাসে না৷ তাদের আশেপাশের সমস্ত কিছুই যেনো হেসে ওঠে৷ প্রকৃতি’তে বয়ে যায় হাস্যজ্জ্বল আবহাওয়া। শিশু এবং বৃদ্ধদের মাঝে এক অপরূপ সৌন্দর্যকে আবিষ্কার করে ফেললো আহি৷ না জানি এমন আরো কতশত সৌন্দর্য আবিষ্কার করা যাবে শিশু এবং বৃদ্ধদের সান্নিধ্য পেলে৷
-‘ একটা কথা রাখবি নাতবউ। ‘
আচমকাই পুরো ঘরজুড়ে থমথমে এক পরিবেশের সৃষ্টি হলো। থতমত খেয়ে যাওয়া কন্ঠে আহি বললো,
-‘ এভাবে বলছেন কেন নানু আপনি বলুন না কি বলবেন আমি অবশ্যই রাখার চেষ্টা করবো।’
-‘ বুবু তুই বউ মানুষ হাভুর জন্যই এইখানে সবার সাথে তোর সম্পর্ক তৈরি হইছে৷ আজ রিদির শ্বশুর ঘরে যাইতাছোস। হাভু তোরে ওর সাথে যাবার কয়। ওর গাড়িতে যাবি একসাথে থাকবি আবার একসাথেই আইসা পড়বি।’
-‘ আপনার নাতি এসব বলতে শিখিয়ে দিয়েছে আপনাকে তাইনা নানু।’
-‘ হুঁ হাভুই কইয়া গেছে। কিন্তু আমারও কথা আছে যেইখানে যাবি ঐখানে মানুষে গিজগিজ করবো। তুই হিয়া’গোর সাথে থাকবি কিন্তু যাবি হাভুর সাথে আসবিও হাভুর সাথে। ‘
-‘ হুম আমার সমস্যা নেই। কিন্তু হিয়াদের সঙ্গেও সমস্যা হতো না। ‘
-‘ হাভু চায় তোর কোন সমস্যা না হোক। ‘
-‘ এতো বিশিষ্টতার প্রয়োজন ছিলো না নানু।’
-‘ শোন মেয়ে এতো ঢং ধরিস না৷ কেউ যদি তোরে বিশেষ কইরা রাখবার চায় কারো কাছে যদি তুই বিশেষত মানুষ হয়ে থাকিস তাইলে এইডা তোর জন্যই ভালারে।’
-‘ আমি সাধারণ ভাবেই থাকতে চাই, স্বাচ্ছন্দ বোধ করি।’
-‘ তোর কপালে সাধারণ নাই বুবু তোর অধিপতিই যে অসাধারণ। ‘
কিছু বললো না আহি মাথা নিচু করে বসে রইলো৷ নানুমনি আহির নিশ্চুপ থাকাকে পছন্দ করলেন না। তাই আবারো বললেন,
-‘ ভাবছিলাম কথাগুলা বিয়ের ঝামেলা চুইকা গেলেই কমু। তোরে আলাদা ডাইকা কথাও বলবার চাইছি আর সুযোগই পাইনা। আমারে একটা কথা বলবি? ‘
উদবিগ্ন চোখে তাকিয়ে রইলো আহি নানুমনি এক ঢোক গিলে কাঁপা কন্ঠে জিগ্যেস করলো,
-‘ তুই আমার হাভুরে ছাইড়া যাওয়ার মতলব করছিলি শুনছি। কিন্তু হেই মতলব কি এখনো অটল রইছে? সত্যি কইরা কবি বুবু এই বুড়ি’রে মিথ্যা কইসনা।’
নানুমনির মুঠোবন্দি থেকে একটি হাত ওঠিয়ে নানুমনির হাতের ওপর রেখে আশ্বস্ত করলো আহি। বললো,
-‘ চিন্তা করবেন না নানু। বিচ্ছেদ যদি ঘটারই হতো তাহলে হয়তো আজ আমি এখানে এভাবে থাকতাম না।’
-‘ তাইলে তোরা আলাদা থাকোস ক্যা বুবু। স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে এতো দূরত্ব যে ভালা না। ‘
-‘ কাছে যাওয়ার জন্য কখনো কখনো দূরে যেতে হয় নানু। ‘
-‘ এই রঙ্গ লীলা আমারে কইয়া লাভ নাই আমি অতো কিছু বুঝিনা। তাই বইলা আবার ভাবিস না জামাই বউয়ের সম্পর্কও বুঝিনা৷ তাই যদি হইতো তিন তিনটা পোলাপানের মা হইতাম না৷ এতো গুলা নাতি নাতনির মুখ ও দেখবার পাইতাম না। ‘
মিটিমিটি হাসতে লাগলো আহি বললো,
-‘ হ্যাঁ বুঝেছিতো নানুমনি আমাদের নানাসাহেব কে খুব ভালো বুঝতো খুব ভালো সেবা শুশ্রূষাও দিতো। ‘
-‘ তা তো দিতামই রে বইন বিয়ের পর তিন বাচ্চার জন্মের সময় দুই একদিন বাদে মানুষটারে ছাড়া একদিনও কাটাই নাই। সারাদিন সগ্গল ছুটাছুটি শেষ কইরা রাইতের আঁধারে ঠিক জড়াজড়ি কইরা ঘুমাইছি। পুরান দিনের মানুষ আমরা তগোর থিকা রঙ ঢং বেশীই করছি। ‘
খিলখিল করে হাসতে লাগলো আহি। নানুমনিও হাসলো। হাসির পাল্লা শেষে আহি প্রশ্ন করলো,
-‘ খুব মনে পরে নানাকে তাইনা। ‘
-‘ তা তো পরবোই আমি কি তোর মতো পাষাণ নাকি। ‘
মনটা খারাপ হয়ে গেলো আহির পরোক্ষণেই থমথমে গলায় বললো,
-‘ আপনি কি জানেন না ওনি আমার সাথে কি কি করেছে? তবুও তো আমি ওনাকে একেবারে ছেড়ে যাইনি শুধু দূরে থেকে বুঝাচ্ছি হারানোর যন্ত্রণা টা কি? বুঝাচ্ছি ভালোবাসা কাকে বলে, সম্পর্ক কাকে বলে? ভালোবাসায় সম্মানবোধ কতোটা জরুরি। বিয়ে মানে কি, একটা বিয়ের সম্পর্ক কেমন হওয়া উচিত এটা ওনার কাছে থেকে বোঝাতে অক্ষম হলেও দূরে গিয়ে কিছুটা হলেও হয়তো সক্ষম হয়েছি। সেই সাথে ওনার মনের অসুখটাকেও দূর করতে সহায়তা করছি। যাতে আর কোন অসুখ আমাদের স্পর্শ করতে না পারে। যে মানুষ টা রূপসাকে এক সমুদ্র ভালোবাসা দিয়ে ছলনার স্বীকার হয়েছে সেই মানুষটা এক আকাশ ভালোবাসা দিয়ে ভালোবাসা অবশ্যই গ্রহণ করতে পারবে। ‘
মাথা দুলিয়ে হাসলো নানুমনি৷ আহিও আশ্চর্য হয়ে হেসে ফেললো। সত্যি হ্যাভেনের সঙ্গে নানুমনির অনেক কিছুরই মিল রয়েছে। নানুমনি এক পর্যায়ে হাসি থামিয়ে বললো,
-‘ বিয়ের সম্পর্কডা আল্লাহর তরফ থিকাই কবুল হয় বুঝছো বুবু। আজ যদি হাভুর সাথে বিয়ে না হইয়া অন্য পোলার সাথে বিয়ে হইতো সেই পোলা যদি মদখুর,গাঞ্জাখুর,মাইয়াখুর হইতো তুই সইবার না পাইয়া তালাক নামা পাঠাইতি এইডাতে কোন ভুল হইতো না৷ আমার হাভু যখন তোরে জোর কইরা বিয়ে করলো।বিয়ের পর নাকি মারধরও করছে কয়দিন তখন যদি তুই ওরে ছাড়তি। শুনছিলাম গেছিলিগা তখনি যদি যাইতি এতে তোর দোষ হইতো না। কিন্তু এমন এক সময় তুই যাবার চাইলি ওর থিকা যা খুব খারাপ দেখাইছে। পুরানো যুগ থিকাই শুনছি মেয়ে মানুষের একটু নত হইয়া থাকোন লাগে। সেইখানে যদি কোন নারীর কাছে পুরুষ নত হয় তখন সেইটা তো সেই নারীর সৌভাগ্য। এমন সৌভাগ্য কয়জনের হয়? এমন সৌভাগ্য তুই পায়ে ঠেইলা দিস না। আমার হাভুর মনটা মেলা ভালা৷ রাগ সামাল দিতে পারে না জিদ টা একটু বেশী তাই বইলা হাভুর মনটা কিন্তু খুবই ভালা। যা পাগলামি তোর সাথেই করছে এর কারণ টাও তুই জানোস অনুচিত করছে তোর সাথে শেষে অনুতপ্ত হইয়া নিজেরে কষ্টও দিছে। নিজেরে নিজের থিকা বেশী কষ্ট কেউ দিতে পারেনা বুবু। ‘
মাথা নাড়ালো আহি নানুমনি আরো বললো,
-‘ বিয়ের মেলা ফজিলত আছে। কিন্তু তালাকের কোন ফজিলত নাই৷ আমাদের ধর্মে বিয়ের জন্য নারী-পুরুষ কে উৎসাহিত করা হইছে কিন্তু কোনোভাবেই তালাককে বিন্দুমাত্র উৎসাহিত করা হয়নাই। তালাকের বিধান জানোস?’
মাথা নাড়িয়ে না জানালো আহি। সে তালাকের বিধান জানেনা৷ নানুমনি বললো,
-‘ তালাকের বিধান হচ্ছে নিরূপায়ের উপায় মাত্র। যদি একটি মাত্র উপায়ও থাকে সম্পর্কে অসমাপ্তি না ঘটানোর তবে তালাক দেওয়া যাবে না। ইসলামে সবচেয়ে ঘৃণিত কাজ হইলো তালাক। জীবনে যে পরিস্থিতিই আসুক না কেন কোনদিন তালাকের চিন্তা করবি না৷ তোর চিন্তা একটাই সংসার,স্বামী, সন্তান।’
সন্তানের কথা বলতেই আহির মুখশ্রী তে মেঘ এসে ভর করলো। নানুমনি বললো,
-‘ সুন্দর একটা ভবিষ্যৎ দেখতাছি তগোর আমি। মন খারাপ করিস না দুঃখ কেন আসে জানোস? সুখের বার্তা নিয়েই দুঃখ আসে। ‘
মাথা নিচু করে রইলো আহি৷ নানুমনি কি যেনো ভেবে বললো,
-‘ আরেকটা গুরুত্বপূর্ণ কথা তোরে বলা হয়নাই৷ এই কথাটা তুই না সব নারী পুরুষেরই জানা দরকার। হাভুরে আমি অনেক বুঝাইছি আজ তোরেও বলি। কাল তুইও অন্যকাউরে এই দামী কথা গুলা বলতে পারবি। ‘
চোখ তুলে তাকালো আহি। সত্যি দাদা,দাদি,নানা,নানি আমাদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ এবং মূল্যবান সম্পদ। অন্যদের দশ কথা তাদের এক কথার সমান৷ নানুমনির কথাগুলো খুবই মূল্যবান তাই মনোযোগ দিয়ে সবটা শুনছে সে। নানুমনিও পরম যত্নসহকারে বোঝাচ্ছে আহিকে। যাতে তার হাভু আর তার বউয়ের সম্পর্কটা অনেক বেশী মজবুত হয়৷ নানুমনি বললো,
-‘ আমাদের নবী কি বলছে জানোস, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘আল্লাহ তাআলা তালাকের চেয়ে অধিক ঘৃণ্য কোনো জিনিস হালাল করেননি।’ (আবু দাউদ)তালাকের ভয়াবহতা সম্পর্কে হজরত আলি রাদিয়াল্লাহু আনহ’র বর্ণনায় এসেছে, প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘তোমরা বিয়ে কর কিন্তু তালাক দিয়ো না। কেননা তালাক দিলে তার দরুণ আল্লাহর আরশ কেঁপে ওঠে।’ (তাফসিরে কুরতুবি)
একটু থেমে আবারো বললো,
-‘ দাম্পত্য জীবনের ভারসাম্যতা বজায় রাখতে প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ঘোষণা করেন, ‘তোমরা বিয়ে কর কিন্তু তালাক দিয়ো না। কেননা আল্লাহ তাআলা সে সব স্বামী-স্ত্রীকে পসন্দ করেন না; যারা নিত্য নতুন বিয়ে করে স্বাদ গ্রহণ করতে অভ্যস্ত।’ (আহকামুল কুরআন)
নানুমনিকে শক্ত করে জরিয়ে ধরলো আহি৷ বললো,
-‘ আপনি অনেক বেশী চিন্তা করছেন আপনার হাভুকে যে অল্পখানি দুঃখ আমি দিচ্ছি এর চেয়ে হাজারগুণ বেশী সুখ সে পাবে। ‘
-‘ শেষ আরেকটা কথা শোন বুবু আমার হাভুর মনটা খুব ভালা। আমার হাভুর ওপর তুই আর কোন ক্ষোভ রাখিস না৷ আমার হাভু তোরে অনেক ভালোবাসে। ‘
.
নানুমনির রুম থেকে বের হওয়া মাত্রই অকস্মাৎ আহির হাত টেনে সদর দরজার দিকে যেতে থাকলো হ্যাভেন। আহি চেঁচিয়ে ওঠলো,
-‘ আরে করছেন কি আমি আপনার সঙ্গেই যাবো তার আগে আমার ফোন আর পার্স তো আনতে দিন। অদ্ভুত! ভালো লাগে না সব সময় এই গাজুরি। ‘
হ্যাভেন চোখেমুখে গম্ভীরতা ফুটিয়ে তুলে আহিকে টেনে নিয়ে সোজা গাড়ির পিছন সাইটে বসিয়ে দিলো আহিকে। ডোর লক করে অপরপাশের ডোর খুলে নিজেও বসে পড়লো৷ এবং সঙ্গে সঙ্গেই তমাল গাড়ি স্টার্ট দিলো। হতবাক আহি হ্যাভেনের দিকে চোখ কটমট করে তাকালো। বিনিময়ে হ্যাভেন স্থির দৃষ্টিতে কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইলো৷ ক্ষণকাল সময় নিয়ে নম্র গলায় বললো,
-‘ আমরা ঢাকা ব্যাক করছি। ‘
-‘ মানে? আপনার কি মাথা খারাপ… আমার জামাকাপড়, প্রয়োজনীয় কতো জিনিস রয়েছে জানেন? এভাবে বলা নেই কওয়া নেই টেনে হিঁচড়ে ঢাকা নিয়ে যাওয়ার মানে কি? ‘
প্রচন্ড চেঁচিয়ে কথাগুলো বলতেই এক আঙুলে আহির ওষ্ঠজোড়া চেপে ধরলো হ্যাভেন। গভীর দৃষ্টিতে তাকিয়ে গভীর এক নিঃশ্বাস ছেড়ে মলিন কন্ঠে বললো,
-‘ সাবা ম্যাম আর নেই। আমার মনে হলো এটা জানতে পারলে তুমি অবশ্যই ঢাকা ব্যাক করতে চাইবে। নির্ঝর জানালো মাগরিবের পরই জানাজা। ম্যামের গ্রামের বাড়ি থেকে সবাই ঢাকা যাবে তারপর জানাজা হবে। কারণ ম্যাম এর কবরটা নির্মল ভাইয়ের কবরের পাশেই দেওয়া হবে।’
একদমে কথাগুলো বলেই আহির ওষ্ঠ থেকে আঙুল সরিয়ে সিটে হেলান দিয়ে বসলো হ্যাভেন৷ পা থেকে মাথা অবদি কেঁপে ওঠলো আহির৷ সেই সাথে বুকের ভিতর ছটফট করতে থাকলো খুব। দু’হাতে মুখ চেপে ধরে শব্দ করে ফুঁপিয়ে ওঠলো সে। সে শব্দ কানে আসতেই এক হাত বাড়িয়ে আহির কাঁধ জড়িয়ে কাছে টেনে নিলো হ্যাভেন। হ্যাভেনের সান্নিধ্য পেয়ে ডুকরে কাঁদতে থাকলো আহি৷ বললো,
-‘ মানুষটাতো অনেক আগেই মরে গেছে হ্যাভেন৷ অথচ সে খবর কিনা সবাই আজ পেলো।’
একহাতে আহিকে শক্ত করে জড়িয়ে অন্যহাতে মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে থাকলো হ্যাভেন। বললো,
-‘ বাসায় কেউ ছিলোনা মারা গেছে রাতেই। নির্ঝর দুপুরের দিকে বাসায় গিয়ে অচেতন পেয়েছিলো৷ তখনি হসপিটাল নিয়ে যায় এবং জানতে পারে ঘুমের ঘোরে স্ট্রোক করে প্রায় নয় ঘন্টা আগে মৃত্যু ঘটেছে। ‘
পুরো শরীর শিউরে ওঠলো আহির। খামচে ধরলো হ্যাভেনকে। ক্রন্দনরত গলায় বলতে থাকলো,
-‘ নির্মলের মৃত্যুটাও এমন ছিলো, নির্মলের মৃত্যুটাও এমন ছিলো। ভালোবাসা না পাওয়ার যন্ত্রণাগুলো এভাবে দু’টো মানুষ’কে শেষ করে দিতে পারে হ্যাভেন?’
-‘ হুম পারে আহি। তবে উপরওয়ালা চাইলে ওদের শেষ থেকেই হয়তো আবার শুরু হবে। ‘
চলবে…
রিচেক দেওয়া হয়নি।