#গোধূলী_বেলার_স্মৃতি (Unexpected Story)
#পর্ব-৩০
#Jannatul_ferdosi_rimi (লেখিকা)
—“কাজল আই নিড ইউ। তোকে এখন আমার খুব করে প্রয়োজন। এখুনি দেখা করতে চাই। আমি গাড়ি নিয়ে ওয়েট করছি। তাড়াতাড়ি চলে আয়। ”
আমি মৃদ্যু হাঁসলাম ছোট সাহেবের
মেসেজ দেখে। সত্যি ছোটসাহেব ও পারেন। এখনোও সন্ধ্যে হয়নি। সাড়ে পাঁচটা হয়নি এখনো। বাবা চলে আসার আগে, আমাকে তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরে আসতে হবে। মাথায় ওড়না পেঁচিয়ে নিলাম। যাতে কেউ না দেখে। লুকিয়ে লুকিয়ে প্রেমের সত্যি আলাদা একটা মজা আছে। কথাটা ভেবে-ই’
আমি বাড়ির বাইরে বের হতে-ই’ ছোট সাহেবের দিকে আমার নজর যায়। ব্লাক কটন শার্ট পড়ে আছেন।
দেখে বুঝা-ই’ যাচ্ছে অফিস করে-ই’ সরাসরি এখানে চলে এসেছেন। আমি উনার দিকে আরেকটু এগিয়ে গেলাম। ঘেমে একাকার হয়ে গিয়েছেন। বরাবরের মতো চুলগুলো কপালে লেপ্টে রয়েছে। উনার দিকে নজর সরছে-ই’ নাহ।
ছোটসাহেব আমাকে দেখে ক্লান্তমাখা হাঁসি দিলেন।
আমি বলে উঠলাম,
—“আপনাকে দেখে ক্লান্ত মনে হচ্ছে ছোটসাহেব। ”
উনি চুলগুলো সাইডে সরিয়ে বললেন,
—“অফিসে কাজের যা প্রেশার পড়েছে। তোকে ঠিক বলে বুঝাতে পারবো নাহ। কালকে-ই’ তো আমাকে বেড়িয়ে পড়তে হবে প্রযেক্টের উদ্দেশ্যে। ”
আমি নিজের ওড়না বের করে উনার ঘামটুকু মুছিয়ে দিয়ে, উনার গাড়ি থেকে বোতল বের করে উনার হাত ধরিয়ে দিলাম।
—-“পানি টুকু খাওয়ার সময় নেই। অথচ আমার সাথে দেখা করার ঠিক সময় আছে আপনার। ”
ছোটসাহেব আমার কথা শুনে হেঁসে বললো,
—-“জানেমান কি করবো বল? তোকে দেখার জন্যে আমার মনটা যে সবসময় উতলা হয়ে উঠে। তোর মায়াবী মুখখানায় একটিবার তাঁকালে-ই’ আমার সকল ক্লান্তি দূর হয়ে যায়। ”
—–“আহা রাফসিন শেখ রুদ্রিকের কবি কবি ভাব। ”
উনি কিছুটা ঠাট্টার ছলে বললেন,
—-“প্রেমের জন্যে মানুষ কত কি হয় বলতো? কেউ হয় দেবদাস আবার কেউ হয়ে উঠে আমার মতো কবি। ”
—-“তা কবি সাহেব আমাকে যদি কৃতার্থ হয়ে বলিবেন হঠাৎ আমাকে ডেকে পাঠালেন যে? ”
—“অবশ্য-ই’ আপনাকে বলিবো। তার আগে চলুন সামনের দিকটায়। ”
কথাটি বলে-ই’ ছোট সাহেব আমার হাত ধরে সামনের দিকে হাটতে লাগলেন। রাস্তায় তেমন লোক নেই। আমাদের বাড়িটা কিছুটা নির্জন হওয়ায়,লোক এখানে তেমন দেখা যায়না। বাড়ির পিছনে ছোট্ট একটি নদী বয়ে যায়।
আমি একেঅপরের হাত ধরে পুকুরের পাশে বেঞ্চে তে বসে পড়লাম।
সে এক বিদায়বেলা সূর্য ডোবার পালা দিনের সব কিছু শেষে সবচেয়ে ভাল মুহূর্ত হল পুকুরের পাড়ে সূর্যাস্ত দেখা। যাকে বলে গোধূলীর বেলা। নদীর সেই মন ভোলানো দৃশ্য সহজে কোন মানুষ কে দুর্বল করতে পারে।
——“কি সুন্দর দৃশ্য কাজল। মনটা-ই’ ভালো হয়ে উঠে। ”
—-“সুবর্ণরেখাতে সূর্যাস্ত দেখার এই অনুভূতির সাথে অন্যকিছুর সত্যিই কোন তুলনা হয়না। ”
ছোট সাহেব কিছুটা হতাশার সুরে বললেন,
—-“এই এক সপ্তাহ আমার কীভাবে কাটবে জানিনা। যেখানে তোকে নিজের চোখের আড়াল করে-ই’ মনে হয় তোকে হারিয়ে ফেলেছি। তোকে হারিয়ে ফেলার তীব্র ভয় আমার ভিতরে সবসময় কাজ করে। হয়তো ভালোবাসি বলে। ”
আমি উনার কাঁধে মাথা দিয়ে বললাম,
—-“আমাকে ভালোবাসেন বলে-ই নিজের ভালোবাসার উপর ভরসা রাখুন। ভালোবাসায় ভরসার জায়গাটা সব থেকে বড় গুরুত্বপূর্ণ। আপনার কাজল শুধুমাত্র আপনার হয়ে-ই’ থাকবে। এইটুকু ভরসা রাখুন ছোটসাহেব। ”
ছোটসাহেব আমার নিজের থেকে ছাড়িয়ে,কিছুটা
বিরক্তি হয়ে বললেন,
—–“সবকিছু-ই’ ঠিক আছে,কিন্তু এখন যেহুতু আমরা প্রেম করছি সো এখন আমি তোর কোনো ছোটসাহেব নাহ বুঝেছিস? আমাকে রুদ্রিক বলে ডাকবি। ”
–‘না ‘ বলে আমি উঠে দাঁড়ালাম।
ছোট সাহেব ও উঠে দাঁড়িয়ে বললেন,
—-“কি হলো? ”
আমি মুখটা বেঁকিয়ে বললাম,
—“আপনি আমার ছোটসাহেব। তাই আপনাকে ছোটসাহেব বলে-ই’ ডাকবো হুহ। ”
উনি ধমকে বললেন,
—-“আমার মুখের উপর কথা বলিস তুই? এই রাফসিন শেখ রুদ্রিকের মুখের উপর কথা বলার সাহস কোথা থেকে পাস তুই? ”
আমি অবাক হয়ে বললেন,
—“ছোটসাহেব আপনি আবার আগের মতো থ্রেট দিচ্ছেন? ”
উনি বাঁকা হেঁসে বলে,
—-“জানেমান তুমি যদি সোজা পথে না হাটো তাহলে আমাকে তো আগের রুদ্রিক হয়ে-ই’ যেতে-ই’ হবে।”
আমিও নাছরবান্দা হয়ে বললাম,
—“বলবো নাহ। ”
—–“আমিও রাফসিন শেখ রুদ্রিক তোর মুখ থেকে রুদ্রিক ডাক বের করে-ই’ ছাড়বো। ”
কথাটি উনি আমার কোমড় চেপে ধরে আমার ঠোট ছোট্ট করে কামড় বসিয়ে দেন। আমি ‘আহ ‘ করে উঠি।
উনি বাঁকা হেঁসে বললেন,
—“আরো কয়েকটা লাভ বাইট লাগবে জান? ”
আমি ঠোটে হাত বুলিয়ে কিছুটা রাগান্বিত সুরে বললাম,
—-“আমার ঠোটের বারোটা বাজিয়ে বলছে লাভ বাইট হুহ। ”
—-“যদি নিজের ঠোটের তোরেটা না বাজাতে চাস,তাহলে তাড়াতাড়ি রুদ্রিক বলে ডেকে ফেল। ”
—-” অসভ্য লোক। বলবো নাহ হুহ। ”
কথাটি বলে-ই’ আমি দৌড় দিলাম। নাহলে উনি কি করতেন আল্লাহ-ই’ জানে। রুদ্রিক হেঁসে উঠে।
আমি পিছনে তাঁকিয়ে ছোটসাহেব বাঁকা দাঁতের হাঁসিখানা দেখে নিলাম। কি অসাধারন প্রানবন্ত হাঁসি তার। এই লোকটা আমাকে ভালোবাসে ভাবতে-ই’ শরীরে আলাদা শিহরন বয়ে যায়।
________
রুদ্রিক আজকে শেখ অফিসে এসেছে। তার পিপির সাথে দেখা করতে। আফজাল শেখ নিজের ছেলেকে দেখে কিছুটা খুশি হয়ে এগিয়ে গিয়ে বললেন,
—-“রুদ্রিক হঠাৎ তুমি অফিসে এসেছো যে….
আফজালের কথা শেষ হওয়ার আগে-ই’ রুদ্রিক তাকে এভোয়েড করে চলে যায়। এতে আফজাল শেখ কিছুটা ব্যাথিত হয়।
রুদ্রিক ইশানি শেখের রুমে গিয়ে বললেন,
—“পিপি আসবো? ”
রুদ্রিককে দেখে ইশানি শেখে হেঁসে বললেন,
—“রুদ্রিক আমার বাচ্ছাটা হঠাৎ কি মনে করে? ”
ইশানি শেখের কথায় রুদ্রিক বলল,
—“পিপি আসলে আজকে আমি এক সপ্তাহের জন্যে জন্যে ভার্সিটির একটা ট্রিপে যাচ্ছি। ”
(রুদ্রিক ভাই মিথ্যে কথা বলো কেন পিপিকে 😤)
রুদ্রিকের কথায় ইশানি খুশি হলো। এই তো সুযোগ। রুদ্রিক নেই এই সুযোগে ইশানি নিজের কাজটা করে নিবে।
—-“ওকে আমার বাচ্ছাটা টাকা লাগবে তাইতো ওকে আমি দিচ্ছি।”
—“নাহ পিপি আমার টাকা লাগবে নাহ। আমি জাস্ট তোমাকে জানাতে এসেছিলাম। আমি তো থাকবো নাহ। তুমি যদি কাজলের বাবার সাথে আমাদের বিয়ের কথা বলে নিতে তাহলে ভালো হতো। ”
ইশানি শেখ রুদ্রিকের কাছে এগিয়ে গিয়ে বলল,
—“রুদ্রিক আমার বাচ্ছাটা তুমি নিশ্চিন্তে নিজের ট্রিপে যাও। আমি ভেবেছিলাম আজকে-ই’ কাজলের বাবার সাথে কথা বলবো। ”
রুদ্রিক ইশানিকে জড়িয়ে ধরে বলে,
—“তোমাকে কি বলে থ্যাংকস জানাবো আমি জানিনা,বাট ইউ আর দ্যা বেস্ট পিপি। লাভ ইউ। ”
—-“লাভ ইউ টু। ”
—-“ওকে আমার এখন গাড়িতে উঠে যাওয়ার সময় হয়ে যাচ্ছে। আই হেভ টু গো। ওকে বায় পিপি। ”
ইশানি শেখ মিষ্ট হেঁসে বললেন,
—-“টেক কেয়ার মাই চাইল্ড।”
রুদ্রিক বেড়িয়ে যায়।
আফজাল শেখ বের হয়ে মতিউর রাহমানের কাছে গিয়ে বলে উঠে,
—-“মতিউর তোমার নাকি কয়দিনের জন্যে ছুটি লাগবে?”
মতিউর রাহমান (কাজলের বাবা) বলে উঠেন,
—“বড় সাহেব আসলে আমি আমার কাজলের জন্যে বিয়ে ঠিক করেছি। ছেলে ভালো একটা কম্পানিতে চাকরী করে। ফ্যামেলিও অনেক ভালো। আমি চাইছি খুব তাড়াতাড়ি আমার মেয়েটার বিয়ে দিতে। তাই আর কি কয়েকটা ব্যস্ত থাকবো আসতে পারবো নাহ। এইরকম একটা ভালো ছেলে আমার মতো ড্রাইভারের মেয়েকে বিয়ে করতে চেয়েছে এর থেকে ভালো আর কি হতে পারে বলুন ছোটসাহেব?”
আজফাল শেখ বললেন,
—“এইভাবে বলো না মতিউর। আমাদের কাজল যথেষ্ট গুনবতী এবং লক্ষী মেয়ে। তাকে যে কেউ নিজের বাড়ির বউ করতে চাইবে। তুমি বরং ছুটি নাও কয়েকদিন এর জন্যে।
আফজাল শেখের কথার মাঝে-ই’ ইশানি শেখ এসে বললেন,
।—-“মতিউর তোমার সাথে আমার কিছু গুরুত্বপূর্ণ কথা আছে। আমার কেবিনের ভিতরে এসো। ”
মতিউর শেখ মাথা নাড়িয়ে ইশানির শেখের কেবিনে চলে গেলেন।
মনটা আজ ভিষন খারাপ। ছোটসাহেব আজকে চলে যাবেন ঢাকার বাইরে। সদর দরজার পাশে দাঁড়িয়ে আছি। উদ্দেশ্য একটিবার ছোটসাহেবকে চোখের দেখা দেখতে পাওয়া। আমার প্রতিক্ষার অবশান ঘটিয়ে চলে এলেন। উনি গাড়ি থেকে বেড়িয়ে এলেন। সাদা শার্টে ফরমাল ড্রেসাপে ধারুন মানিয়েছে। আমার ছলছলে চোখে উনার দিকে তাঁকিয়ে রইলাম।
(লেখিকা -রিমি)
রুদ্রিক কাজলের দিকে তাঁকালো। মনে হচ্ছে এখুনি কেঁদে দিবে। রুদ্রিক কিছু না ভেবে কাজলের দিকে এগিয়ে গিয়ে, কাজলের হাতজোড়া ধরে বলে উঠলো,
—“আমি খুব তাড়াতাড়ি ফিরে আসবো ততদিন নিজের খেয়াল রাখবি ওকে? ”
আমি কোনোরকম মাথা নাড়ালাম। ছোট সাহেব আমার চোখের জল মুছে দিয়ে বললেন,
—“একদম কাঁদবি না। তোর কান্না আমার সহ্য হয়না
বুঝিস না কেন? ”
–“আমি একদম কাঁদছি না। “(কান্নার সুরে বললাম)
ছোট সাহেব কিছুটা থেমে মিহি কন্ঠে বললেন,
—” কাজল তুই কালকে বলছিলি না? সম্পর্কে ভরসার জায়গাটা সবথেকে বেশি গুরুত্বপূর্ণ? একটা কথায় সবসময় মনে রাখবি, যেকোনো কঠিন পরিস্হিতিতে সবসময় স্ট্রং থাকবি। সবসময় মনে রাখবি তোর রুদ্রিক সবসময় তোর সাথে আছে। আমাদের ভালোবাসাকে আগলে রাখার জন্যে সবকিছু করতে পারে তোর রুদ্রিক। শুধু তুই ভেঙে পড়বি না। আমার উপর শুধু ভরসা রাখবি। ভালোবাসি। ”
কথাটি বলে-ই’ রুদ্রিক কাজলের কপালে গভীর ভালোবাসার স্পর্শ একেঁ দিয়ে, গাড়ির দিকে এগিয়ে গেলো।
ছোটসাহেবের কথাগুলো শুনে কেমন যেনো লাগছিলো। উনি কী কিছু বুঝাতে চাইছিলেন। আপাতত সেসব বিষয় মাথা না ঘামিয়ে আমি আলতো সুরে বলে উঠলাম,
—“নিজের খেয়াল রাখবেন। ভালোবাসি রুদ্রিক। ”
কাজলের মুখে ‘রুদ্রিক ‘ নাম শুনে রুদ্রিকের মুখে হাঁসি ফুটে উঠলো।
রুদ্রিক গাড়িতে বসে গাড়ি স্টার্ট দিলো। অনেক কাজ আছে তার। কিছু একটা ভেবে সে রহস্যময় হাঁসি দিলো।
ছোটসাহেবের গাড়ি চোখের আড়াল হতে-ই’ আমার চোখ বেয়ে নোনাজল গড়িয়ে পড়লো।
চলবে।
(রিচেক দিতে পারেনি)