গোধূলী বেলার স্মৃতি পর্ব-৪৮

0
1520

#গোধূলী_বেলার_স্মৃতি (Unexpected story)
#পর্ব- ৪৮
#Jannatul_ferdosi_rimi (লেখিকা)

নিজের বেবীকে দেখতে না পেয়ে আমি কেঁদে উঠি। আমার কান্না শুনে রুদ্রিক দৌড়ে ছুটে এসে আমার হাত ধরে বলে,
—“কাজল, কি হয়েছে আমাকে বল? কাঁদছিস কেনো তুই এইভাবে? ”
রুদ্রিককে আকড়ে ধরে আমি কাঁদতে কাঁদতে বললাম,

—“রুদ্রিক আমাদের মেয়েকে পাওয়া যাচ্ছে নাহ। ”

কথাটি শুনে রুদ্রিকের মাথাও কাজ করা যেনো বন্ধ হয়ে যায়। রুদ্রিক বেডের দিকে তাঁকিয়ে দেখে তাদের মেয়ে নেই।
কিছুক্ষন আগেও তাদের ছোট্ট মেয়ে বিছানায় কি সুন্দর ঘুমাচ্ছিলো। কোথায় গেলো তাদের ছোট্ট মেয়ে? রুদ্রিক নার্সদের কাছে গিয়ে চিৎকার করে বলে,

—-“আমার মেয়েকে আপনাদের কাছে রেখে গিয়েছিলাম? কোথায় আমার মেয়ে? ”

নার্সরা ভয়ে ভয়ে উত্তর দিয়ে বলে,

—“স্যার আমরা শুধু পাঁচ মিনিটের জন্যে বাইরে গিয়েছিলাম। এসে দেখি বেবী নেই। ”

রুদ্রিক দ্বিগুন চিৎকার করে বলে,

—“জাস্ট স্টপ ইট! এইসব লেম এক্সকিউজ দেওয়া বন্ধ করুন। এতোটা ইররেস্পন্সেবল আপনারা কীভাবে হন? ছোট বাচ্ছাকে রেখে কীভাবে চলে গেলেন? ”

রুদ্রিকের চিৎকার শুনে ডক্টররা চলে এসে বলে,

—-“কি হয়েছে মিঃ শেখ আপনি হঠাৎ এতো উত্তেজিত হয়ে যাচ্ছেন কেন? ”

রুদ্রিক রক্তচক্ষু দিয়ে তাঁকিয়ে বলে,

—“আমার একদিনের শিশু আমার বেবীকে পাওয়া যাচ্ছে নাহ আর আপনি আমাকে জিজ্ঞাসা করছেন আমি কেন উত্তেজিত হয়ে যাচ্ছি? আমি জাস্ট আপনাদের ওয়ার্ন করে দিলাম। আমার বেবীকে না পেলে আমি কিন্তু সত্যি এই হসপিটালটাকেই বন্ধ করে দিবো। এই রাফসিন শেখ রুদ্রিকের এক মিনিটও লাগবে নাহ। ”

কথাটি বলে রুদ্রিক যেতে নিলে, আমি রুদ্রিকের হাত ধরে ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠে বললাম,

—–“রুদ্রিক আমাদের বেবীর কিছু হবে নাহ তো? ”

রুদ্রিক আমার কাছে এসে আমার গালে হাত দিয়ে বলে,

—-“আমি আমাদের পরীকে ঠিক ফিরিয়ে আনবো। আমাদের পরীর কিচ্ছু হবেনা। ”

রুদ্রিক কাউকে ফোন করতে করতে বেড়িয়ে যায়।

রুদ্রিক বেড়িয়ে যেতেই আমি মাথা ধরে বসে পড়ি। আমার ছোট্ট মেয়েটা কোথায় গেলো?

সাদি ভাইয়া, সিথি, দিয়া ও লাজুক হসপিটালে চলে আসে।
রুদ্রিককে বেড়েতে দেখে লাজুক আংকেল রুদ্রিককে উদ্দেশ্য করে বলে,

—-“রুদ্রিক পুলিশ স্টেশন থেকে তোমার কাছে ফোন এসেছিলো?”

—“হুম ইশানি শেখ আজকে পালিয়েছে। সবথেকে বড় কথা মাহির আহমেদ বেঁচে নেই। আমার ইশানি শেখের উপরেই সন্দেহ হচ্ছে। ”

দিয়া সবকিছু শুনে বলে,

—-“আপাই যদি এই বাচ্ছা অপরহনের কাজটা সত্যি করেই থাকে তাহলে আমরা তাকে কিছুতেই ক্ষমা করবো নাহ। ”

দিয়ার কথা শুনে রুদ্রিজ হাত মুষ্ঠিবদ্ধ করে তপ্ত নিঃশ্বাস ছেড়ে বলে,

—“আমি জানি এই কাজ ইশানি শেখের ছাড়া আর কারো হতে পারেনা। উনি নিজের স্বামীর মৃত্যুর জন্যে আমাদের দায়ী করছে। তাই তো প্রতিশোধ নিতে চাইছেন। উনি কি ভেবেছে এইসব করে আমার বেবীকে অপহরন করে আমাদের থেকে প্রতিশোধ নিতে পারবে? আমি আমার সন্তানের কিচ্ছু হতে দিতে দিবো নাহ।
আমার বাচ্ছার গাঁয়ে একটুও আঁচ লাগলেও আই জাস্ট কিল হার। ”

কেবিনে বসে থেকে রুদ্রিক ও বাকি সকলের কথাই আমার কানে আসলো। তার মানে ইশানি শেখ প্রতিশোধপরায়নতা হয়ে আমার মেয়েকে তুলে নিয়ে গেছে। এখন যদি আমার মেয়ের যদি কোনো ক্ষতি করে ফেলে তখন?
আমার কান্নাগুলো যেনো গলায় দলা পাঁকিয়ে আসছে। শ্বাস নিতেও কষ্ট হচ্ছে। আমি হাতড়ে পানির বোতলটা হাতে নিয়ে ঢগঢগ করে পানি খেয়ে ফেলি। আমার মেয়েটা নিশ্চই বিপদে আছে। আমি এখানে কীভাবে বসে থাকবো? নাহ তা কিছুতেই হতে পারেনা আমি জানি আমার মেয়েটা নিশ্চই কাঁদছে। আমার বুকে কষ্ট হচ্ছে। তখনি আমার ফোনে একটি ছোট্ট মেসেজ আসে। আমি মোবাইলটা হাতে নিয়ে দেখি ইশানি শেখের মেসেজ। মেসেজ লেখা,

—-“কাজল, তোমার মেয়ে এখন আমার কাছে। চিন্তা করোনা তোমার মেয়ে আমার কাছেই সেফ আছে। আর এই হসপিটালেই আছে। তুমি শুধু একটা কাজ করো। নিজের মেয়েকে পেতে কষ্ট করে হসপিটালে টপে অর্থাৎ ছাদে চলে এসো। ”

মেসেজ টা দেখে আমি তৎক্ষনাৎ উঠে দাঁড়ালাম। ইশানি শেখ ছাদেই আছেন। নাহ আমি দেরী করলে চলবে নাহ। আমার এখুনি যেতে হবে।

কথাটি ভেবে আমি আমি উঠতে নার্স এসে বলে,

—-“ম্যাম আপনার সবে সিজারি করা হয়েছে। এই অবস্হায় আপনার হাঁটাচলা করা ঠিক হবে নাহ।”

আমি ক্ষিপ্ত গলায় বললাম,

—“আমার সদ্যজাত দুধের শিশু কি অবস্হায় আছে কে জানে? তাকে পাওয়া যাচ্ছে আর আমি মা হয়ে এখানে বসে থাকবো? ওয়াট দ্যাল হেল? সরুন আপনি আমার সামনে থেকে। ”

নার্সকে একপ্রকার সরিয়ে দিয়েই আমি কেবিন থেকে সোজা দৌড়ে ছাদের দিকে চলে যেতে থাকি।

কাজলকে এইভাবে দৌড়াতে দেখে রুদ্রিক, সাদি, সিথি ও দিয়া অবাক। তারাও কাজলের পিছনে পিছনে ছাদে চলে যায়।

কাজল ও রুদ্রিকের বাচ্ছা নিয়ে ছাদের একেবারে কিনারে দাঁড়িয়ে আছেন ইশানি শেখ। আজ সকলেই সে পালিয়ে এসেছে হসপিটালে। বরখা পড়ে সে লুকিয়েই বাচ্ছাটাকে একপ্রকার চুরি করে ছাদে নিয়ে এসেছে।

কারো পায়ের শব্দ পেতেই ইশানি শেখ পিছনে তাঁকিয়ে দেখে কাজল। কাজলকে দেখে ইশানি শেখ বিদঘুটে হেঁসে দিয়ে বললেন,

—-“অবশেষে তুমি এলে কাজল? ”

আমি তাঁকিয়ে দেখি আমার বাচ্ছাটাকে নিয়ে ইশানি শেখ একেবারেই ছাদের কিনারে দাঁড়িয়ে আছে। এইভাবে চলতে নিলে তো আমার বাচ্ছাটার ক্ষতি হয়ে যাবে।

আমি এগোতে নিলে আমাকে থামিয়ে দিয়ে ইশানি শেখ বললেন,

—“একদম এগোবে নাহ নাহলে আমি কিন্তু তোমার বাচ্চাকে ফেলে দিবো। ”

কথাটি শুনে আমি থেমে গেলাম। আমার সদ্যজাত সন্তান কেঁদে যাচ্ছে। আমি মা হয়ে কীকরে সহ্য করি?

ইশানি শেখ আবারো বলতে লাগলেন,

—“আমার স্বামী মাহির নাহ মারা গেছে জানো? আমাকে রেখে সেই দূরে চলে গেছে আমাকে একা করে। শুধুমাত্র তোমাদের জন্যে। আমি তোমাদের কীকরে সুখে থাকতে দেই বলো? আমি তোমার এবং রুদ্রিকের মেয়েকে এই ছাদ থেকে ফেলে দিবো হু আমি ফেলে দিবো।তাও তোমারই চোখের সামনে।”

কথাটি বলে ইশানি শেখ খিলখিল করে হেঁসে উঠে। ইশানি শেখকে দেখেই মনে হচ্ছে উনার মাথা ঠিক নেই। এই অবস্হায় আমাকে কিছু করতেই হবে নাহলে আমার মেয়ের ক্ষতি হয়ে যাবে। কথাটি ভেবে আমি দৌড়ে ছাদের কিনারে গিয়ে ইশানি শেখের থেকে আমি আমার বাচ্ছাকে কেড়ে নিতে চাইলে, ইশানি শেখ আমার সার্জারি করা জায়গাতে ধাক্কা দেয় এতে আমি ব্যাথা সহ্য না করে পড়ে যেতে নিলে,
ইশানি শেখ আমাকে ধরে ফেলেন। আমি একেবারে রেলিং ঘেষে দাঁড়িয়ে আছি। ইশানি শেখ হাত টা ছেড়ে দিলেই আমি পড়ে যাবে।

ততক্ষনে রুদ্রিক ও বাকি সবাই চলে আসে। কাজলকে এই অবস্হায় দেখে রুদ্রিক চিৎকার করে বলে,

—“ইশানি শেখ কি করছেন? আমার কাজল আর আমার বেবীকে ছেড়ে দিন বলছি। ”

ইশানি শেখ বললেন,

—“নাহ আমি তো ছেড়ে দিবো নাহ কাজলকে। রাফসিন শেখ রুদ্রিক তুমি আমার মাহিরকে জেলে পাঠিয়েছিলে তাইনা?আমার মাহিরকে? আমার মাহির অনেক অভিমান নিয়ে এই পৃথিবী ছেড়ে চলে গেছে। এখন তুমি দেখবে নিজের ভালোবাসার মানুষটি ছেড়ে গেলে কেমন লাগে।

দিয়া ও সিথি কেঁদে উঠে। সিথি কাঁদতে কাঁদতে বলে,

—-“পিপি? তুমি এতোটা খারাপ হয়ে গেলে কীভাবে?”

—“তোরাই আমাকে বাধ্য করেছিস আর শুন রুদ্রিক
আর ভূলেও এগোনের চেষ্টা করিস নাহ। তোর বউ একি কাজ করতে গিয়ে এখন পস্তাচ্ছে। ”

রুদ্রিক এগোতে নিচ্ছিলো ইশানির কথা শুনে থেমে যায়।

রুদ্রিক অসহায় দৃষ্টিতে কাজলের দিকে তাঁকায়। কাজল কেঁদে উঠে। ছোট্ট বেবীটাও ফুপিয়ে কেঁদে উঠে।
রুদ্রিক কাঁদতে কাঁদতে বলে,

—“আমার কাজলকে কিংবা আমার বেবীকে কিছু করোনা। তোমার সব শ্রত্রুতা তো আমার সাথে ইশানি শেখ। তাহলে ওদের কেনো এর মধ্যে টানছো? ”

রুদ্রিকের অসহয়তা দেখে ইশানি শেখ পৌচাশিক আনন্দ পায়।
ইশানি শেখ হেঁসে বললেন,

।—” এইতো এই কান্নাই তো আমি চেয়েছিলাম। তোমাদের এইবার আমার কষ্টটা উপলব্ধি করাবো। আমি তো নিজের সময় কাঁদতেও পারেনি। এতোটা পাথর হয়ে গিয়েছিলাম আমি।
আমি সো সরি রুদ্রিক। তোমরাই আমাকে এই কাজ করতে বাধ্য করলে। ”

কথাটি বলে ইশানি শেখ হাতটা আলগা করতেই, রুদ্রিক কিছু না ভেবে নিচে নেমে যায়। উদ্দেশ্য নিজের প্রেয়সীকে প্রানে বাঁচানোর চেস্টা,কিন্তু ততক্ষনে ইশানি শেখ কাজলের হাত ছেড়ে দেয়।
কাজল দুতলা ছাদ থেকে পড়ে যায়। সবাই স্তব্ধ হয়ে যায়! ছোট্ট বাচ্ছাটা কী বুঝে কে জানে? সে আরো জোড়ে চিৎকার করে কেঁদে দেয়।

রুদ্রিক নিচে এসে দেখে কাজলের মাথা থেকে তাজা রক্ত বেয়ে চারদিকে ছিটিয়ে গেছে। কাজল নিজের রক্তাক্ত হাত দিয়ে রুদ্রিকের দিকে নিজের হাতটা কোনোরকম বাড়িয়ে দেয়। রুদ্রিকের পুরো পৃথিবী যেনো থমকে গেছে নিজের ভালোবাসার মানুষটিকে এই অবস্হায় দেখে। পা ও যেনো চলছে নাহ।

[নীচের কথাগুলো পড়বেন]
_______
ওহে হারাই-হারাই সদা হয় ভয়

হারাই-হারাই সদা হয় ভয়

হারাইয়া ফেলি চকিতে

আঁশ না মিটিতে হারাইয়া

পলক না পড়িতে হারাইয়া

হৃদয় না জুড়াতে

হারাইয়া ফেলি চকিতে

মাঝে মাঝে দেখা পাই

চিরদিন কেন পাইনা?

বাকীটা আগামী পর্বে…

চলবে।