#তাসনিম_তামান্না
#ভালোবাসি_প্রিয়তম
#পর্ব_১১
🍁🍁🍁
কলেজে এসে তুষারের ফেন্ডদের সাথে দেখা হতে ওরা কেমন অদ্ভুত দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিলো কুয়াশাদের দিকে। শুধু কেমন আছে আর কাল কেনো আসেনি এইটুকু কথা হয়েছে ওদের মধ্যে। ওরা উত্তরে ভালো আছি আর এমনি আসেনি ছাড়া কিছু বললো না। ওরাও বুঝতে পারছে ওরা কথাটা বলতে চাইছে না তাই আর কথা বাড়াই নি।
কুয়াশার আজ ক্লাস করতে একটুও ভালো লাগছে না মনোযোগ দিতে পারছে না ক্লাসে তাই ক্লাস থেকে বের হয়ে ফাঁকা করিডোর দিয়ে হাঁট ছিলো এদিকটাই তেমন কেউ-ই নেই। এদিকের ক্লাস রুমে ক্লাস হয় না ভাঙা বেঞ্চে ধুলা জমে আছে। কুয়াশা আনমনে হাট ছিলো। তখন কোথা থেকে তুষার ওর সামনে এসে বলল
-সরি (তুষার)
কুয়াশা ভুত দেখার মতো চমকে তাকিয়ে রইলো তুষারের দিকে।
-হোয়াট? এভাবে তাকিয়ে আছো কেনো? (তুষার)
-আব সরি কেনো? (কুয়াশা)
-আসলে আমি সেদিন ওভাবে বলতে চাইনি রাগের মাথায় কি কি বলেছি আমার নিজের ই খেয়াল নাই (তুষার)
-ওহ! ইট’স ওকে। আমিও আপনাকে অনেক কিছু বলছি আমি সরি হ্যাঁ (কুয়াশা)
তুষার কুয়াশা কথায় অবাক হলো ও ভেবেছিলো আজ কুয়াশা হয়তো ওকে অপমান করবে, রেগে যাবে। তুষার তার জন্য প্রস্তুতি নিয়ে এসেছিলো। কুয়াশা যদি রেগেও যায় তাহলে ও কিছু বলবে না সব মুখ বুজে শুনবে। কিন্তু হলো তার উল্টোটা কুয়াশাও ওকে সরি বলল। এমেয়ে কি দিয়ে তৈরি সেটা ভাবছে তুষার। তুষার কুয়াশার পাশে দাঁড়িয়ে বলল
-চলো হাঁটি (তুষার)
কুয়াশা অবাক হয়ে বলল
-আমার সাথে আপনি? (কুয়াশা)
-হুম। এনি প্রোবলেম? (তুষার)
-রিমা আপু রাগ করবে তো আপনার ওপর? (কুয়াশা)
তুষার কুয়াশা মুখে রিমাকে আপু ডাকতে শুনে আরো অবাক হলো। অন্য মেয়ে হলে রিমার নাম শুনলে তিন/চারটা গালি দিতো আর এ মেয়ে সম্মান দিয়ে আপু ডাকছে।
-রাগ করবে কেনো? (তুষার)
-রাগ করারই কথা ভালোবাসার মানুষকে কেউ অন্য কারোর সাথে সহ্য করতে পারে না!! (কুয়াশা)
তুষার কুয়াশার কথায় চমকালো তুষারেরও তো কুয়াশার পাশে অন্য কাউকে সহ্য হয় না তাহলে কি ও….. না না এসব কি ভাবছে ও। নিজেকে সামলিয়ে বলল
-ও আমার বোন হয় নো ভালোবাসার মানুষ (তুষার)
কুয়াশা দাঁত দিয়ে জ্বী কাটে বলল
-সরি সরি ভাইয়া আমি জানতাম না (কুয়াশা)
তুষার কুয়াশার দিকে শান্ত চোখে তাকিয়ে বলল
-ইট’স ওকে চল হাঁটি (তুষার)
দুজনে চুপচাপ হাটতে লাগলো কেউ কোনো কথা বলছে না। তুষার বলল
-তুমি ক্লাস না করে বাইরে কি করছো (তুষার)
-আসলে ক্লাস করতে ভালো লাগছে না তাই হাঁটছিলাম (কুয়াশা)
আরো কিছুক্ষণ চুপ থেকে তুষার বলল
-মন খারাপ? (তুষার)
কুয়াশা চমকালো তুষার কেমন করে বুঝলো
-কই না তো (কুয়াশা)
-তুমি খুব চাপা (তুষার)
কুয়াশা তুষারকে দেখে আজ চমকাছে তুষার নিজে এসে সরি বলছে, তার সাথে হাটছে, আবার সেধে সেধে কথাও বলছে। যে কি না এটিটিউডের বস্তা সে এসে সরি বলছে। এটা সত্যি অবাক করার বিষয়।
কুয়াশা কিছু বললো না আরো কিছুক্ষণ হাটলো। ব্রেকটাইমে কুয়াশা কলেজ থেকে চলে গেলো আজ ক্লাস করতে কারোই মন বসছে না তাই ওরা বাসায় চলে গেলো।
.
কুয়াশা আর মেঘা কলেজ থেকে বাসায় গিয়ে দেখলো পাখির মা আসছে ওরা কুশল বিনিময় করে রুমে গেলো। পাখির মা মটেও সুবিধার না সুযোগ পেলেই অপমান করে কিন্তু পাখির বাবা অনেক সহজ-সরল। পাখির ভাই ইন্টার ১ম বর্ষে পড়ে। তারা দু’ভাই-বোন-ই ওদের বাবার মতো হয়েছে মনে কোনো প্যাচ নাই। কুয়াশা আর মেঘা ফ্রেশ হয়ে একটু রেস্ট নিয়ে নিচে আসলো একসাথে। পাখির মা তখন সোফায় বসে কুশ আর শানের খেলা দেখছিলো।
-আন্টি আপনি একা আসছেন আঙ্কেল আর সোহান (পাখির ভাই) আসেনি? (মেঘা)
-কেনো আমি একা আসতে পারি না, নাকি একা চলতে পারি না? তোমাদের তো এখনো দিয়ে আসা নিয়ে আসা করতে হয় বলে কি আমাকেও তাই করতে হবে?(পাখির মা)
কুয়াশা আর মেঘা থতমত খেয়ে গেলো কি বললো আর কিসের উত্তর দিলো।
-না না আন্টি আসলে ওটা বলতে চাই নি বলতে…. (কুয়াশা)
-থাক থাক বুঝি আমি আসছি আমার মেয়ের বাড়ি তাই তোমাদের সহ্য হচ্ছে না তাই না (পাখির মা)
কুয়াশা আর মেঘা পাখির মার কথায় কষ্ট পেলো কিন্তু কিছু বললো না চুপ করে রইলো। পাখি রান্না ঘরে থাকায় এসব কিছুই জানলো না।
বিকালে ওরা চারজন গার্ডেনে খেলে বাসায় আসলো। তখনের পর পাখির মায়ের সাথে আর তেমন কথা বলে নি প্রয়োজন ছাড়া। রাতে কুশ আর শান ঘুমিয়ে পড়ছে।
★★★
রাতে সবাই মিলে ডিনার করছে। তখন পাখির মা বলল
-কুশান বাবা বলছিলাম কি কুয়াশা আর মেঘা তো বড় হয়ে গেছে ওদের বিয়ে শাদি নিয়ে কিছু ভাবছো না? (পাখির মা)
কুয়াশা, মেঘা,মেঘের খাবা থেমে গেলো। পাখি অবাক হয়ে বলল
-এসব কি বলছো মা ওরা এখনো ছোট আ… (পাখি)
পাখির মা পাখিকে বলতে না দিয়ে বলল
-কোথায় ছোট ১৯ চলছে ওদের আমার তো ১৭ বছরে বিয়ে হয়ে ছিলো চারিদিকে যা শুনছি বিয়ের আগেই পোয়াতি হয়ে যাচ্ছে ছিঃ ছিঃ (পাখির মা)
কুশান কিছু বলছে না দেখে পাখির মার সাহস পেয়ে বলল
-আমার কাছে অনেক ছেলে আছে যদি বলো তাহলে…. (পাখির মা)
কুশান এবার মুখ খুললো
-আমার বোনদের আমি এতো তাড়াতাড়ি বিয়ে দিবো না ওরা নিজেরা কিছু করবে নিজের পায়ে দাড়াবে। আমার বোনেদের প্রতি আমার বিশ্বাস আছে তারা এমন কিছুই করবে না যাতে তার ভাইদের অসম্মান হবে। আর যদি ওরা কাউকে ভালোবাসে থাকে তাহলে ছেলে যদি ভালো হয় সেখানে যদি ওরা সুখে থাকে। আমার কোনো সমস্যা নাই। আমি আমার বোনদের জন্য বেষ্টটা এনে দিবো। আর মেঘ ওদের বড় মেঘের বিয়ে না দিয়ে ওদের বিয়ে কথা কেনো উঠছে আর আপনাকে এসব নিয়ে এতো না ভাবলেও চলবে ওদের ভাবার জন্য আমরা আছি। (কুশান)
কুশান আর কিছু না খেয়ে উঠে গেলো। কুশান খেলো না বলে আর কেউই খেতে পারলো না ওরা ও উঠে গেলো। পাখির মায়ের মুখটা চুপসে গেলো।পাখি রেগে ওর মাকে বলল
-এটা কি করলে মা ওরা এখনো ছোট আর তুমি ওদের বিয়ে দেওয়ার কথা কেনোই বা তুললে?(পাখি)
-আমি তো তোর ভালোর জন্যই বললাম (পাখির মা)
-মা তোমার আমার আর ভালো করতে হবে না আমি জানি আমার কিসে ভালো হবে তাই এসব আর উল্টো পাল্টা বলো না(পাখি)
কথাটা বলে পাখিও রুমে চলে গেলো। রুমে গিয়ে দেখলো কুশান বেডে মাথা নিচু করে চুপ করে বসে আছে। পাখি কুশানের কাঁধে হাত দিয়ে বলল
-কি হয়েছে মায়ের কথায় কষ্ট পাইছো জানোই তো মা কেমন প্লিজ রাগ করো না (পাখি)
কুশান কিছু বললো না ওভাবেই বসে রইলো। পাখি আবার বললো
-তুমি খাওনি বলে ওরাও কেউ খাইনি (পাখি)
কুশান এবার একটু নড়েচড়ে বসলো। তখন দরজায় নক করলো কুয়াশা আর মেঘা। ওরা ওখান থেকে উঠে দুবোন কান্না করছে।
-ভাইয়া (কুয়াশা+মেঘা)
-বাইরে দাড়িয়ে আছিস কেনো ভিতরে আই (পাখি)
ওরা দুজন ভিতরে এসে কুশানের সামনে মেঝেতে আসন পেতে বসে একসাথে বলল
-ভাইয়া আমরা বিয়ে করবো না কখনো তোমাদের ছাড়া থাকতে পারবো না আমাদের খুব কষ্ট হবে তোমাদের খুব মিস করবো প্লিজ আমাদের বিয়ে দিবা না বলো (বলতে বলতে কেঁদে দিলো ওরা দুজন)
কুশান ওদের দুজনকে জড়িয়ে ধরে বলল
-কাঁদছিস কেনো আমার বাবুইপাখিরা (কুশান)
-ভাইয়া আমরা তোমাদের ছেড়ে কোথাও যাবো না বিয়ে করবো না (মেঘা)
-খুব কষ্ট হবে তোমাদের ছাড়া থাকতে পারবো না মরে যাবো (কুয়াশা)
-মারবো টেনে এক চড় একদম মরার কথা বলবি না (কুশান)
ওরা কিছু বলল না চুপ করে বসে রইলো
-তোদের কি বিয়ে হচ্ছে নাকি এভাবে কাঁদছিস কেনো? তোদের বিয়ে দিয়ে এখানেই রেখে দিবো? চল খাবি… খাসনি কেনো?(কুশান)
-ভালো লাগছে না খাবো না (মেঘা)
-সর আমি খাবো আমার ক্ষুদা লাগছে (কুশান)
ওরা সরলো না ওভাবেই বসে রইলো কুশান পাখিকে ইশারা করলো পাখি ইশারা বুঝতে পেরে চলে গেলো। কিছুক্ষণ পর খাবার নিয়ে আসলো পাখি।খাবার রেখে আবার চলে গেলো। কুশান ওদের সোফায় বসিয়ে বলল
-আরেকটা ছাগল কই (কুশান)
তখন দরজার সামনে পাখি আর মেঘ দাড়িয়ে বলল
-তুই আমাকে ছাগল বললি (মেঘ)
-কই? কখন? কোথায়? কিভাবে? (কুশান)
কুশানের কথায় ওরা ফিক করে হেসে দিলো।কুশান ওদের হাসিমাখা মুখ দেখে শান্তি খুঁজে পেলো। ওদেরকে খাইয়ে দিতে লাগলো।
-আমাকে দিবা না? (পাখি)
-তুমিই বাকি ছিলা আসো তাইলে (কুশান)
-এমনে বললা কেন যাও খাবো না (পাখি)
-তুমি রাগ করলা (কুশান)
-না আ…..(পাখি)
পাখি আর কিছু বলতে পারল না তার আগে কুশান গালে ভাত দিয়ে দিলো। পাখির চোখ বড়বড় হয়ে গেলো। ওরা তিনজন হেসে গড়াগড়ি খেতে লাগলো।
★★★
চারিদিকে কৃত্রিম আলোই ভরপুর রাতেও বেলাতেও রাস্তায় গাড়ির ভির। আজ আকাশটাতে চাঁদ তাঁরা নেই মেঘর কারণে ঢেকে আছে। তুষার এগুলা বারান্দায় দাঁড়িয়ে দেখছে স্মোক করছে। তখনি ওর ফোনে কল আসলো হাতে নিয়ে দেখলো ফোনের স্কিনে ‘♥Kolixa♥’ নামটা জল জল করছে মুখে এক চিলতে হাসি ফুটলো। সিগারেটটা ফেলে দিয়ে ফোন রিসিভ করে কানে দিলো।তুষারকে কিছু বলতে না দিয়ে ওপাশ থেকে বলতে শুরু করলো
-……
-আমার এতোক্ষণই লাগে ফোন রিসিভ করতে তোর কি (তুষার)
-……..
-হ্যাঁ তুই কোন দেশের প্রসিডেন্ট যে তোকে মনে রাখতে হবে (তুষার)
-……..
-আমি আবার কি বললাম (তুষার)
-…….
-ফোন লাউডস্পিকার দিয়ে কথা বলছিস জানিস না এটা আমার অপছন্দ (তুষার)
-……….
-আর যদি এমন করিস তাহলে আমি তোকে আর ফোন দিবো না তুই ফোন দিলে ধরবো না(তুষার)
বলে রেগে ফোন কেটে দিলো।
#চলবে
#tasnim_tamanna
[আসালামু আলাইকুম। ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। গঠনমূলক কমেন্ট করবেন।]