#তোমাকে_নিয়েই_গল্প
#পর্ব:৩৭
#জুনাইনাহ_তাসনিম
অভ্র ভাইয়ের পোড়া হাতে মলম লাগাচ্ছি আর বকা দিচ্ছি যে তাড়াহুড়া করে খালি হাতে কেন গরম কড়াই ধরতে গেলো?হাতের অনেকটা জায়গা পুড়েছে।ভালো যে সাথে সাথে পানিতে ভিজিয়ে রেখেছিলাম ওনার হাতটা।এখন হাতে ওষুধ দিচ্ছি।উনি মুখে না বললেও ওনার যে খুব কষ্ট হচ্ছে তা মুখ দেখে আন্দাজ করতে পারছি।আমার বেশ খারাপ লাগছে ওনার হাত পুড়ে যাওয়াতে কিন্তু আমি তা বুঝতে দিলাম না ওনাকে উল্টা বকা দিলাম।হাতে মলম লাগানো শেষে উনি মাথা নিচু করে মুখ গোমড়া করে বলেন,
–সরি।
–কেন?
–তোমার ক্ষুদা পায়ছে।আমি কিছুই করতে পারলাম না।
–ইট’স ওকে।বাসায় কি পাস্তা আছে?
–উম সেটা তো জানি না।খুজতে হবে।কিন্তু পাস্তা কি হবে?
–পাস্তা মানুষ কি করে?রান্না করে খাবো।
–আচ্ছা তুমি বসো আমি দেখছি(উনি উঠতে গেলেন)
–থাক।আমিই দেখে নিচ্ছি।আপনি এখানে চুপ করে বসুন।
–কিন্তু…
–আমি পারবো বললাম তো,ডোন্ট ওয়ারি।
ওনাকে ডাইনিং এ অন্ধকারে রেখে আমি মোমবাতিটা নিয়ে রান্নাঘরে এলাম।খুজতে খুজতে পাস্তা পেয়ে গেলাম।রান্নার জন্যে সব জোগাড়যন্ত শেষ করে রান্না শুরু করলাম।পাস্তা রান্না হচ্ছে এর মাঝেই মনে হলো এটুকু পাস্তাতে যদি দুজনের না হয় তখন?ফ্রিজে খুজতে শুরু করলাম আর কিছু পাওয়া যায় কিনা।ফ্রিজে দেখি পাউরুটি রাখা।পাউরুটি দিয়ে তাই চট করে ডিমপাউরুটি বানিয়ে ফেলি।সব রান্না শেষে সুন্দর দুটো প্লেটে সাজিয়ে নিলাম।আর ফ্রিজে আগেই খেয়াল করেছিলাম কোল্ড ড্রিংক্স রাখা।দুটো ওয়াইন রাখা ওই গ্লাসে কোল্ড ড্রিংকস ঢেলে নিলাম।বাইরে খাবার গুলো আনার সময় দেখি অভ্র ভাই নেই।আমি একটু ওদিক খুজছিলাম হটাত কে যেন পিছন থেকে আমার কাধে হাত দিলো।এভাবে আচমকা কাধে হাত রাখাতে আমি ভয় পেয়ে যাই,আমার বুক কেঁপে ওঠে।আমি পিছু ঘুরতেই দেখি অভ্র ভাই।আমি বুকে হাত দিয়ে স্বস্তির নিশ্বাস ফেলে বলি,
–ওহ আপনি!
–কেন কি ভেবেছিলে অন্য কেউ??
–এরকম হটাত কাধে হাত রাখলে যে কেউই ভয় পাবে।
–হুম তা ঠিক।
–তা কোথায় যাওয়া হয়েছিলো শুনি?
–ওয়াশরুমে গেছিলাম।
–এই অন্ধকারে?
–পেটে চাপ পড়লে আলো কি আর অন্ধকার কি(উনি একটু লজ্জা পেয়ে বলেন।ওনার কথা শুনে আমারো বেশ লজ্জা লাগলো।সত্যিই তো এরকম প্রশ্ন না করাই ভালো ছিলো।খুবই সিলি প্রশ্নটা)
–আচ্ছা খেয়ে নিন।খাবার ঠান্ডা হয়ে যাবে।
–ইয়েস ইয়েস।চলো…
অভ্র টেবিলে চেয়ার টেনে বসে।তারপর খাবারগুলো দেখে আমার দিকে তাকায়।
–পাখি তুমি এতো রান্না পারো?(উনি অবাক হয়ে বলেন)
–কেন পারা যাবা না বুঝি?(আমিও চেয়ারে বসতে বসতে বলি)
–না মানে দেখে বোঝা যায় না।আচ্ছা খাওয়া যাবে তো?
(আমি অভ্রর কথা শুনে চোখ বড়বড় করে তাকাই ওনার দিকে)
–না মানে…
(অভ্র একটু ভয় পেয়ে গেলো।ওর এরকম ভয় পাওয়া মুখ দেখলে আমার বেশ হাসি লাগে।এবার পেলো।আমি জোরে জোরে হেসে দিলাম)
–হাহহাহাহহহহহহহ।আমি ওতোটাই বাজে রাঁধুনি না।
–বাজে রাঁধুনি হলেও আমার কোন সমস্যা ছিলো না।(উনি আমার দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে কথাটা বলেন)
–জি এইবার ট্রাই করে দেখুন আপনার হবু বউ কিরকম রান্না করে।
–হুম তা তো করবোই।কিন্তু একটা ব্যাপার খেয়াল করেছো?
–কি ব্যাপার?
–এই যে আমরা ক্যান্ডেল নাইট ডিনার করছি!
–রিয়েলি।আমি তো এভাবে ভেবেই দেখিনি।
–তা ভাববা কেন?তুমি তো একটা পিচ্চি মেয়ে(অভ্র আমার কপালে চাটি দিয়ে বলে)
–এই আবার পিচ্চি বললেন কেন আবার?বলেছি না আমাকে পিচ্চি বলবেন না।
–১০০ বার বলবো।
–পিচ্চিই যখন আমি তখন বিয়ে কেন করছেন হ্যা?(আমি মুখ ঘুরিয়ে বলি)
–এই রে আমার বউ যে রেগে গেলো।
–বউ না হবু বউ(আমি মুখ ঘুরানো অবস্থাতেই বললাম)
–বউ হতে কতোক্ষন?ও বউ মানে ও হবু বউ তাকাও না।এতো রাগ শরীরের জন্যে ভালো না।
–………….
উনি আমার ঠিক কানের কাছে চলে আসেন আমি খেয়ালও করিনি।উনি বিড়বিড় করে বলেন,
–আরে এখন না হয় পিচ্চি আছো বিয়ের পর তোমাকে বড় বানিয়ে নিয়ার দায়িত্ব তো আমার(উনি দুষ্টু হাসি দিয়ে বলেন)
(ওনার কথা শুনে আমি চোখ বড়বড় করে তাকাই উনি এখনো সেই দুষ্টু হাসি দিয়ে যাচ্ছেন।)
–আপনি না একটা একটা..
–একটা কি?
–ফাজিল(চিল্লিয়ে উঠি)
–হাহাহহাহহহহহ…..
–একদম হাসবেন না।ঘুষি দিয়ে দাত ভেঙে দেবো কিন্তু।
–আচ্ছা বাবা সরি।অনেক হাসি তামাশা হয়েছে চলো এবার খাওয়া যাক।
উনি ওনার চেয়ারে বসে চামচে পাস্তা তুলে আমার মুখের সামনে ধরে খাওয়ার ইশারা করেন।উনি ওনার প্রথম খাবারটা আমার সাথে শেয়ার করা দেখে আমার খুব ভালো লাগলো।আমি না খেয়ে ওনার মুখের দিকে তাকিয়ে রইলাম।উনি মুচকি হেসে বলেন,
–কি হলো পাখি?খাও..
আমি হা করে পাস্তা টা মুখে নিলাম।মোটামুটি ভালোই রেঁধেছি।অভ্র ভাই আমার দিকে মুখ শুকনো করে বলেন,
–আমাকে খাইয়ে দেবে না?
ওনার এই কথা শুনে আমি কেন জানি না হেসে ফেলি।হয়তো ওনার অভিমান ভরা মুখ দেখে।আমিও চামচে পাস্তা তুলে ওনাকে খাইয়ে দিলাম।আমার রান্না খেয়ে জনাব বেশ প্রসংশা করলেন আমার।দুজন পেট ভরে খেলাম।খাওয়া শেষে অভ্র প্লেটগুলো রান্নাঘরে রেখে আসলো আমি এখনও চেয়ারে বসে আছি।উনি আমার কাছে এসে বলেন,
–কি হলো এখনো বসে আছো যে?
–আনইন্টেনশনালি ক্যান্ডেল নাইট ডিনার হলো সাথে যদি একটু মিউজিক থাকতো মন্দ হতো না।(আমি গালে হাত দিয়ে বলি)
–এই ব্যাপার?আগে বলতে।দাড়াও একটুখানি(উনি ছুটে চলে গেলেন)
–আরে কোথায় যাচ্ছেন?
–আসছি ২ মিনিট…
কিছুক্ষন পর উনি আসলেন।ওনাকে দেখে জিজ্ঞেস করলাম,
–কোথায় গেছিলেন?
–ওসব বাদ দাও।উঠে এসো তো..
–কেন?
–আহ!এসোই না..(উনি আমার হাত ধরে টান দেন)
অভ্র আমার কোমরে বাম হাত রেখে অন্য হাত দিয়ে আমার বাম হাতটা নিজের বুকের ওপর রাখে।তারপর আমার অন্যহাতটা ধরে গুন গুন করে Laag ja gale গানটা গাইতে থাকে আর দুজন স্লো ডান্স করি।অভ্রর গলাই গানটা যে এত্তো মিষ্টি লাগছে তা আমি বলে বুঝাতে পারবো না।আর ডান্স তো আছেই।সব মিলিয়ে খুবই রোমান্টিক একটা মোমেন্ট।ডান্সের শেষের দিকে অভ্র আমার হাতটা ছেড়ে হাটু গেড়ে মাটীটে বসে পড়ে।আমি অবাক হয়ে তাকাই অভ্র নিজের ট্রাওজারের পকেটটা থেকে একটা ঘড়ি বের করে।তারপর আমার দিকে তাকিয়ে বলে,
–জানি রিং দিয়ে প্রোপোজ করতে হয় কিন্তু এই মুহুর্তে আমার কাছে সেটা নেই তাই নিজের একটা ঘড়ি এনেছি।হোয়েটেভার,উইল ইউ ম্যারি মি মিস তাসনুভা আমিন সূচী?তোমাকে যে বড্ড ভালোবেসে ফেলেছি,আর এক মুহুর্তের জন্যেও ছেড়ে থাকতে চাই না।
(অভ্রর এরকম সাডেন প্রোপোজালে আমি বেশ শকড হয় প্রথমত কিন্তু এত্তো সুন্দর একটা মোমেন্ট যে হতে পারে আমি ভাবতেও পারিনি।আমি প্রায় কেঁদে ফেলি)
–কি হলো পাখি?তুমি কি এখন বিয়ে করতে চাও না?আমি কি তাহলে বাসার সবাইকে মানা করে দেবো এই বিয়ে নিয়ে আর না আগানোর জন্যে।
(অভ্রর কথা শুনে আমার খুব মেজাজ খারাপ হয়ে গেলো)
–আপনি না বড্ড বেশি বোঝেন।আমি কি একবারো না বলেছি?
–মানে?তুমি..
–করবো আমি বিয়ে।যখন খুশি,যেখানে খুশি বলবেন আমি সেখানেই বিয়ে করবো।এইবার হা করে তাকিয়ে না থেকে ঘড়িটা পরান গাধা।
–ওহ সরি..
অভ্র আমার হাতে ঘড়িটা পরিয়ে দেয়।সারা রাত আমরা দুজন গল্প করেই কাটিয়ে দিলাম।
*–পাখি,পাখি ওঠো সকাল হয়ে গেছে।
(অভ্র ভাইয়ের ডাকে আমার ঘুম ভাংলো।আমি জানালার বাইরে তাকিয়ে দেখলাম সকাল হয়ে গেছে।রোদ এসে পড়েছে রুমের মধ্যে।তবে আমি নিজেকে অভ্রর বিছানায় পেলাম।আমার যতোদূর মনে পড়ে আমরা মেঝেতে বসে গল্প করছিলাম।তারমানে উনি পরে আমাকে বিছানায় শুইয়ে দিয়েছেন।)
–গুড মর্নিং(অভ্র মিষ্টি হেসে বলে)
–গুড মর্নিং
–এই যে ম্যাডাম আপনার কফি।চা তো আপনি খুব বেশি পছন্দ করেন না।সো কফি।টেস্ট করে বলুন কেমন হয়েছে..
আমি কফির মগটা হাতে নিয়ে চুমুক দিলাম।কফিতে চুমুক দিয়েই আমি শকড।কফিটা খুবি মজা হয়েছে।অভ্র খুব আগ্রহ নিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছে,
–কেমন হলো??
–উম।আসলে(আমি মাথা নাড়িয়ে বুঝাতে চাইলাম যে ভালো হয়নি)
–ভালো হয়নি তাই তো??(অভ্রর মুখটা শুকিয়ে গেলো)
–হাহহাহাহহহহ..অনেক মজা হয়েছে।
–সত্যি??(অভ্রর মুখে হাসিতে ভরে গেলো)
–৩ সত্যি..
–ওকে ওকে এবার ফ্রেশ হয়ে নাও।আবার ওই বাসাতেও যেতে হবে।আর শোন সূমনা ভাবির সাথে আমার কথা হয়েছে।তোমাকে ওনার আলমারি থেকে জামা নিয়ে পরতে বললো।
–কারেন্ট এসেছে?
–হ্যা।তোমার মোবাইল আমি চার্জ দিয়ে রেখেছি।যাও ফ্রেশ হও।
আমি ফ্রেশ হয়ে আপুর একটা ড্রেস পরে নিই।তারপর দুজন আমার বাসার দিকে রওনা দিলাম।বাসায় পৌছে গেছি।আমি গাড়ি থেকে নামতে যাবো অভ্র আমার হাত ধরে নেই।
–কি হলো?
–আমি কাল রাতের কথা সারাজীবন মনে রাখবো।তুমি মনে রাখবে তো??
আমি কোন কথা বললাম না।মুচকি হাসি দিয়ে হাত ছাড়িয়ে ভিতরে চলে গেলাম।অভ্রও আমার পিছন পিছন এলো।দুই বাড়ির সবাই ড্রয়িংরুমেই ছিলো।আমাদের দেখে নাস্তা করতে বললো।সবাই মিলে নাস্তা করতে বসলাম।অভ্র খাওয়া বাদ দিয়ে বললো,
–বাবা,মা,দাদি,ফুপি,ফুপা সবাইকে বলছি আমি আর দেরি করতে চাই না।আজকেই বিয়ে করতে চাচ্ছি।
–হোয়াট?(সবাই তো অবাক হয়ে যায় সাথে আমিও)
–হ্যা।ফুপি,ফুপা দেখো আমি তো ডাক্তার তাই না।এখন তো অফিসিয়ালি স্বনামধন্য হাসপাতালে প্রাক্টিসও করছি।আর কি চাই?আমি রান্নাবান্না,কাপড় কাচা,থালাবাটি মাজা সব করে নেবো।আর আমার বয়স ও বিয়ে করার মতো।তোমাদের কি কোন সমস্যা আছে?
–কিন্তু বাবা এতো তাড়াহুড়া করার কি আছে?(মা বলে)
–আমি কোন কিছু জানি না ফুপি।আজকে বিয়ে করব মানে আজকেই।
–আচ্ছা আচ্ছা অভ্র থামো।আজকে বললেই তো হয়।বিয়ের কিছু নিয়মকানুন আছে।হাজারটা কাজ থাকে।আমি বলি কি দুই ফ্যামিলি যদি রাজি থাকে তাহলে আগামী পরশু হলুদ আর তারপরের দিন মানে শুক্রবারে বিয়ে।কি বলেন সবাই(স্নিগ্ধা ভাবি বলে)
–ওকে তাই হবে।আমরাও কেনাকেটা করে ফেলতে পারবো(মা বলে)
–কাকুর বিয়ে হবে কার সাথে?(আয়ান জিজ্ঞেস করে)
–হ্যা দাদুভাই কাকুর বিয়ে হবে(মামা বলে)
–ইয়েএএএএএএ(আয়ান আনন্দে নেচে ওঠে)
বাসার সবাই ব্যস্ত হয়ে যায় আমাদের বিয়ে নিয়ে।কেনাকাটা,ডেকোরেশন সবকিছু নিয়ে ব্যস্ত।আমি আর অভ্র তো সবাইকে দেখে অবাক।আমরা ভাহতেও পারিনি যে সবাই এতোটা ব্যস্ত হয়ে পড়বে।
চলবে……
(গল্পটা কেমন হচ্ছে জানাবেন…কোন ভূলত্রুটি হলে ক্ষমা করবেন..
ধন্যবাদ)