তুই তারারে ভিনদেশী ২ পর্ব-১২

0
732

গল্পের নামঃ- #তুই_তারারে_ভিনদেশী(সিজন-২)

লেখিকাঃ- #konika_islam (sanju)

part:12

মানুষের আনাগোনা বেরে গিয়েছে। কিছু মেয়েরা ডান্স করছে আর গান বাজনাতো আছেই। কৌশাল অন্যাকে হাতের ইশারায় ছাঁদের অন্য পাশে ডাকে সেখানটা চুপচাপ মানে কারো আনাগোনা নেই সবাই অহনা আর আহানকে নিয়ে ব্যস্ত। অন্যা কৌশালের কাছে যেতেই কৌশাল অন্যাকে হেঁচকা টান দিয়ে নিজের কাছে নিয়ে আসে, আর গালে হলুদ লাগিয়ে দেয়। আর বলে

” এক দিন তুমিও সাজবে কাঁচ ফুলের সাজে, লাল টুকটুকে বেনারসীর সাজে। হাতে রবে আমার নামের মেহেদী, হ্যা ভালোবাসী তোমায়।

অন্যা কৌশালের গলা জড়িয়ে হালকা উঁচু হয়ে অন্যার গালের সাথে কৌশালের গাল লাগিয়ে বলে

” একদিন আপনিও ঘর মুছবেন, ঘেমে একাকার হয়ে রান্না করবেন। রাতের আকাশে তারা দেখার বদলে সেখানে রাত জেগে আমাদের বেইবির ডাইপার চেন্ঞ্জ করবেন। তাহলে তখন আমিও বলবো ভালোবাসি।

কৌশাল অন্যাকে নিজের থেকে ছাড়িয়ে নিয়ে বলে

” তুমি একটা, তুমি একটা পুরাই ফালতু। রোমান্টিক মুডটা দিলেতো খারাপ করে।

অন্যা কৌশালের গাল টেনে বলে

” আহালে আমাল বাবুতাল মুড খারাপ হয়েগেছে। কৌশাল কিছু বলতে যাবে তার আগেই আদিত্য এসে হালকা কাশি দিয়ে বলে

” তোদের রোমান্স শেষ হলে আয় একটু। গেস্টদের তো দেখতে হবে। কৌশাল বলে

” তুই যা আমি আসছি। আদিত্য বলে

” যাবো মানে! তুই আসবি নাকি সিসিটিভি ক্যামেরা হয়ে সব রেকর্ড করব?

অন্যা কৌশালকে ছেড়ে চলে যায়। আদিত্য কৌশালকে দেখে বত্রিশ পাটি দাঁত বের করে হাসি দিয়ে বলে

” চলো বন্ধু রোমান্স পরে কইর। কৌশাল বলে

” সালা তোকে দেখে নিব।

______________

রাতে আদিত্যকে ফোন দিয়ে ফারিন বলে যেন আফরিনকে আদিত্য সাথে করে নিয়ে আসে। এর মানে আদিত্যদের বাসাতেই থাকবে আফরিন ভাবতেই খুশি খুশি লাগছে। রাতে অনুষ্ঠান শেষে আফরিন আদিত্যের বাইকে উঠে, না চাওয়া সত্ত্বেও। আদিত্য আফরিনকে হেলমেট পরিয়ে দেয় আর বলে

” আই এম সরি আফরিন আমাকে কি ক্ষমা করা যায় না? দেখ আমি নিজের রাগকে কন্ট্রোল করতে পারি এখন।

আফরিন বলে

” আপনাকে একটা গল্প শুনাই।

অনেক দিন আগের কথা। খুব রাগী একটা ছেলে ছিলো। একদিন তার বাবা তাকে পেরেক ভর্তি একটা থলে দিয়ে বললো, যখনই তার রাগ বা মেজাজ গরম হবে তখনই যেন সে তাদের কাঠের বেড়ায় একটা করে পেরেক মারে।
.
প্রথম দিন সেই ছেলেটা বেড়ায় ৩৭টা পেরেক মারলো। ঐদিন তার পাগলের মতো অবস্থা ছিলো। কিন্তু সময়ের সাথে সাথে সে নিজের রাগ নিয়ন্ত্রণ করতে শিখলো। ফলে বেড়ায় তার পেরেক মারার সংখ্যাও কমতে লাগলো। তারপর একদিন এলো, যেদিন ছেলেটাকে বেড়ায় আর একটা পেরেকও মারতে হলো না।
.
সে তার বাবাকে গিয়ে এই খবর জানালো।
তার বাবা শুনে খুশি হলো। এবং বললো, এখন থেকে যেদিন তার মেজাজ আর একবারও খারাপ হবে না, সেদিন যেন সে বেড়া থেকে একটা করে পেরেক তুলে ফেলে।
.
কয়েক সপ্তাহ পার হলো। ছেলেটা একসময় বেড়ার শেষ পেরেকটাও তুলে ফেললো। তারপর তার বাবাকে গিয়ে জানালো, বেড়ার সব পেরেক তার তোলা হয়ে গেছে।
তার বাবা ছেলেকে নিয়ে বেড়ার কাছে গেলো। মুচকি হেসে বললো, তুমি খুব ভালো করেছ। কিন্তু বেড়াটার দিকে একবার তাকিয়ে দেখো, এটার কী অবস্থা?
ছেলেটা বললো, হ্যাঁ, অনেক ছিদ্র।
.
তার বাবা বললো, এটা আর কখনো আগের মতো হবে না। তুমি যখন রাগের মাথায় কাউকে কিছু বলবে, সেটা তার মনে একটা স্থায়ী ক্ষত তৈরি করবে। তারপর তুমি তার কাছে যতই দুঃখ প্রকাশ করো, সেই ক্ষত আর কখনো সারবে না।আপনার অবস্থাও সেম।
রাত অনেক হয়েছে বাসায় যাবো।
আদিত্য একটা দীর্ঘ নিশ্বাস ফেলে বাইক ইস্টার্ট করলো।

______________

আজ অহনা আর আহানের বিয়ে। অহনাকে খুব সুন্দর করে সাজানো হয়েছে লাল টুকটুকে লেহেঙ্গা হেভি মেকাপ আর জুয়েলারি। অন্যাও কমনা সে পড়েছে একটা ডার্ক ব্লু কালারের লেহেঙ্গায় সাদা ছোট ছোট পাথরের কাজ। জুয়েলেরি আর মেকাপ। অন্যা বলে

” আজকে এমন সাজ সাজবো সবাই কনফিউজড হয়ে যাবে বউ কে তুই!! না আমি। আফরিন চোখে মাসকারা দিচ্ছিল অন্যার কথা শুনে হেসে দেয়। অন্যা আফরিনের দিকে তাকিয়ে বলে

“দোস্ত,, তোকে যা লাগছে না। আফরিনের সাজ বড়াবড়ই মেডিয়াম। মুখে হালকা মেকাপ। ডার্ক রেড মেরুন কালারের লেহেঙ্গা। ঠোঁটে ডার্ক রেড কালারের লিপস্টিক। চুলগুলো সাইডে সিঁথি করা হালকা নিচের দিকে বিগ কার্ল করা। গলায় একটা চেন আর কানে ঝুমকা।

আফরিন বলে

” তোকে যা লাগছে না কৌশাল ভাইয়া না বলে আজকেই অহনার সাথে তোরও বিয়ে আজকে। একটু পরই দরজায় টোকা পরে সবাই বলছে বর চলে এসেছে বর চলে এসেছে। আফরিন অহনাকে পিন্ঞ্চ মেরে বলে

” এসে পরেছে। অন্যা ভাব নিয়ে বলে

” গাড়ি ওয়ালা আয়া ঘারছে কাচরা নিকাল। আর আফরিন হেসে দেয়। অহনাকে রুমে তার কিছু কাজিনদের সাথে রেখে অন্যা আর আফরিন বেড়িয়ে পরে গেট ধরতে। আহান কে আফরিন বলে

” দুলাভাই এতশত বুঝিনা না আপনার না আমার আমরা মোট বিশ জনের মতো আছি ৪০ হাজার টাকা দেন নয়তো গেট ছাড়বো না।

আদিত্য বলে

” তাহলে চলে যাই আমরা বিয়ের দরকার নেই। তখনই পিছন থেকে কেউ বলে

” হ্যা যেই রাস্তা দিয়ে আপনার বন্ধুকে নিয়ে এসেছেন ঐ রাস্তা দিয়ে আপনার বন্ধুকে নিয়ে চলে জান এতো কিপ্টামি করলে বিয়ে করতে হবে না।

সবাই পিছনে তাকিয়ে দেখে অহনা দাড়িয়ে। সবাই তো অবকা। কিন্তু পরে আহান বাধ্য হয়ে আফরিনের হাতে টাকা দিয়ে দেয়। অহনাকে নিয়ে ওর কিছু কাজিন চলে গেলে আফরিন গেট ছেড়ে দেয়। আর আদিত্যকে উদ্দেশ্য করে বলে

” যার বিয়ে করার সে ৪০ হাজার কি ১ লক্ষ টাকা দিয়ে করবে। সবার মতো হার কিপ্টে না আমাদের আহান ভাইয়া। বলেই ভেংচি কেটে। আদিত্য ঠোঁট কামড়ে হাসি দিয়ে আফরিনের হাত ধরে বলে

” তুমি বিয়ের জন্য রাজি হয়ে যাও তাহলে আমিও দিয়ে দিব ৪০ হাজার কি ৫০ হাজারও দিব। আফরিন ভেংচি কেটে আদিত্যর হাত থেকে নিজের হাত ছাড়িয়ে চলে যায়।

_____________

কৌশাল অন্যাকে বলছে

” আজকে তোমাকে না দেখে প্রশংসা না করে আর পারলাম না। তোমাকে না আজ সম্পূর্ণ সাদা চিকার মতো লাগছে।

অন্যা রেগে গিয়ে বলে

” আপনার সাথে ব্রেকআপ। কৌশাল বলে

” কি ব্রেকফাস্ট? তোমাকে না বললাম আমি খেয়েছি। অন্যা বলে

” আপনি একটা ফালতু। কৌশাল বলে

” হ্যা আমি জানি তুমি একটা ফালতু। বেচারি অন্যা রেগে যেই না যেতে চলে যেতে চাইবে কৌশাল পথ আটকে বলে

“রাগিণী তুমি জানো? তোমার রাগ হচ্ছে বনফুল।
যা কাঁটায় ভরপুর কিন্তু সুগন্ধে সমাকুল।
আচ্ছা তুমি কী সন্ধ্যা? নাকি এক মুঠো রোদ?
যাতে হারিয়েছি আমর চেতনাবোধ?”

অন্যা বলে

” কোথায় থেকে কপি করেছেন? কৌশাল বলে

“ধূর…. আর চলে যায়।

_____________

তিন কবুল আর সকল বিধিবিধান মেনে অহনা আর আহানের বিয়ে সম্পূর্ণ হয়। রাত বেশি হওয়াতে আজ অহনাদের গেস্ট হাউসে সব আয়োজন করা হয়েছে। অহনার সাথে এসেছে আফরিন আর অন্যা।

অনেক কষ্টে আহান তার রুমে ঢুকে। তাকিয়ে দেখে চারদিকে ফুল দিয়ে সাজানো। আর তার মাঝে বসে আছে অহনা। লম্বা একটা ঘোমটা দিয়ে। আহান ধীর পায়ে গিয়ে যেই না অহনার ঘুমটা খুলতে যাবে তখনই ফোনের রিংটোন বেজে উঠে।

আহান চমকে উঠে। অনেক খোঁজার পরও ফোন আর খোঁজে পায় না। যাইহোক তার মিনিট ২ একপর আবারও সেই ফোন। আহান এবার বিরক্ত। অহনা মিট মিট করে হাসছে। একটু পর আহান অহনার হাত ধরে চুমু খেতে যাবে ওমনি আবার রিংটোন বেজে উঠে। বেচারা আহান কাঁদো কাঁদো ভাব করে বলে

” এই দিন দিন না আমারও দিন আসবে। দেখে নিব তোদের।

চলবে