#তুমিই_আমার_প্রিয়_নেশা
#পর্ব:34
#Suraiya_Aayat
” আচ্ছা আপনাকে একটা কথা জিজ্ঞাসা করবো? না মানে আমি বলতে চাইনি বাট জানার কৌতুহল জাগছে প্রচুর ৷ বলি ?”
নূরের মাথায় আকিবুকি করতে করতে বলে উঠলো আয়াশ ” হমম বলো ৷”
নূর এটু ইতস্তত বোধ করে বলল
” না মানে আমি যতদূর জানি বা যতদূর শুনেছি যে আপনার মামা মাত্র 1টা , তাহলে এতগুলো মামী হয়ে গেল কি করে ? 4 টে মামি আর তাদের এতগুলো বউ ৷ কীভাবে?”
আয়াশ এবার একটু জোরে খিলখিলিয়ে হেসে বলল
” তোমাকে বলেছিলাম না আফু সোনা যে বংশ পরম্পরা বজায় রাখার কথা, আমার মামা ও তাই করেছেন, তিনিও চার চারটে বিয়ে করেছেন আর তাদের এতগুলো বংশধর ৷”
আয়াশের কথাটা শুনে নূর চমকে উঠলো, ভেবে অবাক হলো খুব ৷ মানুষকে দুটো বিয়ে করতে শুনেছে কিন্তু এই পরিবারে চার চারটে বিয়ে !
নূর আয়াশের দিকে তাকিয়ে বলল
” আমি তো তার 4 টে বিয়ে করার প্রয়োজনীয়তা দেখছি না ৷ তার প্রথম স্ত্রী নিশ্চয়ই খুব সুন্দর ছিলেন নাহলে তিনি বিয়ে করতেন না এটা তো শিওর অথবা সম্পত্তির জন্য করেছেন বা তাই যদি হয়ে থাকে তাই বলে 4 টে বিয়ে করবেন ?”
আয়াশ এবার উঠে নূরের দিকে ঝুকে গিয়ে পেটে হাত দিয়ে স্লাইড করতে করতে বলল
” একটা জিনিস বোঝায় তোমাকে, মন দিয়ে শুনবে কেমন?”
নূর বোকার মতো মাথা নাড়িয়ে বলল
” হমম৷”
আয়াশ এবার বুদ্ধিমত্তার সাথে বোঝাতে লাগলো
” যদি তোমার কথার সূত্র ধরে আমি এগোয় যে তিনি টাকার জন্য বিয়ে করেছেন 1টা তাহলে এমনটা কি হতে পারে না যে তার মাঝে অর্থের লোভটা নেহাতই বেশি তাই এমন কাজ করেছেন, কি মনে হয় না?”
নূর মাথা নাড়িয়ে আয়াশের কথাতে সম্মতি জানালো, তারপর আয়াশ আবার বলল
” শোনো তারপর, তো একবার যে টাকার প্রতি ভালোবাসা পেয়ে যাবে সে আরো টাকা পেতে চাইবে , আর তা খুব সহজে হাসিল করার উপায় কি?”
” কি ?”
” আবার বিয়ে করা , মানে এটা বোঝায় যে উনি সেই কারনেই এতগুলো বিয়ে করেছেন ৷ আমি তো ভাবলাম যে আরো কয়েকটা করবে কিন্তু তাও করেনি এটাই ভালো ৷”
কথাটা শুনে নূর জিভ কামড়ে বললো
” নাউজুবিল্লাহ ৷ আমার জামাই এমন করলে আমি তো এক কোপে ফালাফালা করে দিতাম…”
কথাটা বলতে বলতে নূর মারার মতো করে হাত ওঠালো ৷
আয়াশ এবার নুরের গায়ে গা ঘেষে বলল
” তোমার এতো সাহস আছে আমাকে মারার আফু সোনা ৷”
নূর অবাক হয়ে বলল
” তারমানে আপনিও 4 টে বিয়ে করবেন?”
আয়াশ নূরের গলায় নাক ঘষে বলল
” হমমমম……”
নূর বিছানা ছেড়ে উঠে শাড়ি ঠিক করতে করতে বলল
” তাহলে জেনে রাখুন সেদিন আমিও আপনাকে ছেড়ে চলে যাবো ৷”
আয়াশ ভ্রু নাচিয়ে বলল
” এত সাহস তোমার আছে আফু সোনা ?”
নূর মুখ ভাঙচি দিয়ে ঘোমটা টেনে ঘরের বাইরে বার হলো, কারন এই ঘরে ঢুকতে যাওয়ার সময় বউগুলো ওকে বলেছিলো যে সবসময় ঘোমটা টেনে অন্দরমহলে ঘোরাঘুরি করতে ৷নূর ঘরের বাইরে বার হলো কোন বউকে দেখলো না তবে কিছু পুরুষকে দেখলো বারান্দাগুলো সাজাতে কারন কালকে অনুষ্ঠান আছে ৷ নূর তাদের দেখে ঘোমটাটা আর একটু টেনে নিলো যদি এটা দেখে কেউ আবার কোন মন্তব্য করে তখন ৷ হয়তো সবাই এখন রান্নার কাজে ব্যাস্ত তাই কারোর দেখা মিলছেনা ৷ নূর হাটতে লাগলো , বারান্দা টা অনেক বড়ো আসলে বলতে গেলে পুরো বড়িটাই অনেক বড়ো, কিছু কিছু জায়গায় নতুন ভাবে মেরামতির কাজ করা আছে ৷বাড়িটার এক একটা দেওয়ালে এক এক রকম নকশা কারুকার্যে ভরপুর যা দেখার মতো ৷ হঠাৎ দেখলো একটা বউ ঘোমটা টেনে আর থালা ভর্তি খাবার নিয়ে একটা ঘরে ঢুকে গেল, বাসাতে ঢোকার সময় নূর তাকে দেখেনি তাই প্রথম দেখাতেই তাকে অচেনা হিসাবে মেনে নিতে বিশেষ কোন অসুবিধা হয়নি ৷ নুর তাকে ভালো ভাবে দেখার জন্য পা চালাতেই সে ঘরের ভিতর ঢুকে দরজা দিয়ে দিলো,,দরজার বিরাট খট করে আওয়াজে নূর দূর থেকেই কেঁপে উঠলো ৷ তার পোকাশ আশাক এই বাড়ির বউ গুলোর মতো অতোটাও সুন্দর না হলেও সাধারন , তাহলে মেয়েটা কি বাসার কাজের লোক ! কথাটা ভেবে নূর সেখানেই কিছুখন দাঁড়িয়ে রইলো ৷ নূর পা বড়িয়ে অন্য দিকে যেতে যাবে তখনই সেই ঘর থেকে তীব্র আওয়াজ ভেসে এলো এক মহিলা কন্ঠের , একপ্রকার পাগল পাগল স্বভাবের মানুষের গলা যা থেকে বোজা যাচ্ছে সেই ঘরে এমন কাউকে রাখা হয়েছে যে মানসিক ভারসাম্যহীন ৷ নুর তাই খুব সহজেই ভেবে ফেলল যে মেয়েটা নেহাতই তার দেখা শোনার কাজ করে ৷ নূরের কেন জানি না খুব আগ্রহ জাগলো বিষয়টা নিয়ে যে কে এমন থাকতে পারে এই জমিদার বাড়িতে যে মানসিক ভারসাম্যহীন ৷ ভাবলো বেশ কিছু দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করবে আর মেয়েটাকে জিজ্ঞাসা করবে যে কে আছে সেই ঘরে ৷ কথাটা ভেবে সেখাধেই ঠাই দঁড়িয়ে রইলো তারপর দরজার খট করে আওয়াজ হওয়ার সাথে সাথে সেজো মমির বড় বউ হুঠ করে এসে বললেন
” কি গো তুমি এই ঘরের সামনে কি করছো? চলো চলো এখানে থেকো না, খাওয়ার সময় হয়ে এসেছে ৷”
ওনার কথা বলার সাথে সাথে সেই ঘরের দরজাটা খট করে আওয়াজ হয়ে কেউ যেন বন্ধ করে দিলো যার অর্থ সেঝো মামীর বড় বউকে আসতে দেখে দরজাটা বন্ধ করে দিয়েছেন সেই মেয়েটা ৷ নূর সেদিকে একবার তাকালো,,নূর তাকাতেই বড়ো বউ ও তাকালো তারপর বেশ ভ্রু কুঁচকে বলল
” এদিকে আর আসবে না,,চলো খাওয়ার সময় হয়েছে আর সব জিনিসে বেশি কৌতুহল ভালো না ৷”
নূর ওনার ব্যাবহারে অবাক হলেন তবুও কিছু বললো না কারন মানুষ গুলোকে একেবার প্রথম দেখাতে বুঝে ওঠা সম্ভব নয় ৷ নূর একটু অবাক হয়ে বলল
” এখনই খাবো? এখন তো সবে 12.45 বাজে, এখনই দুপুরের খাবার ?”
উনি একটু ঝাঁঝিয়ে বললেন
” হ্যাঁ, আমরা এখনই খায় এই বাড়ির নিয়ম আর অতিথি আসলে একটু আগেই খাওয়া দাওয়ার কাজ সেরে ওঠা হয়, আর রাতেও আমরা 9টার মধ্যে খাওয়া দাওয়া করে ঘুমিয়ে পড়ি , বুঝলে !”
নূর তাদের এই চিরাচরিত রিতীনিতী শুনে শুকনো ঢোক গিললো ৷ বুঝে উঠতে পারছে না মানুষগুলো এভাবে থাকে কি করে যেখানে এটুও আধুনিকতার ছোঁয়া নেই ৷
তবুও বাধ্য মেয়ের মতো মাথা নাড়ালো ৷
কোন কথা না বাড়িয়ে ওনার পিছু পিছু হাটলো নূর ৷ আয়াশ কোথায় খাবে সেই কথাটা ভয়ে জিজ্ঞাসাও করতে পারেনি কারন তাতেও যদি আবার একটু কথা শুনতে হয় তখন? তাই মুখ বুজিয়ে চুপচাপ হাটলো ৷
খাবার ঘরে গিয়ে খাবারের রমরমা আয়োজন দেখে নূরের মাথা ঘুরে আসার উপক্রম,এতো খাবার একটা মানুষ কিভাবে খাবে ? নূর খাবারের সামনে বসে বললো
” এটা আমার একার খাবার নাকি সবার খাবার ৷”
নূরের এমন কথা শুনে সবাই হো হো করে হেসে উঠলো ৷ আয়াশ এখানে নেই তাই সাহস জোগনোর মতো কেউ নেই ৷ নূর চুপচাপ রইলো, পাশ থেকে সবাই বলছে ” নাও নাও খাওয়া শুরু করো ৷”
নূর হাতে গোনা 3 থেকে 4 টে পদ খাওয়ার পর আর খেতে পারলো না ৷ খেয়ে হাঁপিয়ে উঠেছে আর পারছে না নূর, কোনরকমে সময় কাটিয়ে রুমে এলো ৷
রুমে এসে দেখলো আয়াশ ঘুমাচ্ছে তা দেখে নূরও পাশে শুয়ে পড়লো, পাশে শুতেই আয়াশ ঝাপটি মেরে ধরে বলল
” কেমন খেলে আফু সোনা ?”
নূর অসস্তি বোধ করে বলল
” ছাড়ুন আমাকে নাহলে যা খেয়েছি তাও উল্টি হয়ে যাবে ৷”
আয়াশ মজা করে বলল
” খুশির খবর নাকি আফু সোনা, কই আগে বলোনি তো ৷”
নূর বড়ো বড়ো চোখ করে বলল
” আচ্ছা আপনি কি হাতুড়ে ডাক্তর নাকি যে যা খুশি বলবেন?”
আয়াশ হো হো করে হেসে বলল
” নাহ তার থেকেও বেশি কিছু ৷”
নূর ভাবলো আয়াশ এখন ভলো মুডে আছে তাই জিজ্ঞাসা করবে যে আয়াশ কি করে যদি বলে
” আচ্ছা আপনি কি কাজ করেন?”
নূরের আচমকা এমন কথাতে আয়াশ খাবড়ালো না, খুব স্বাভাবিক ভাবে বললো
” কিছু না , ওনলি ভবঘুরে ৷”
নূর মুখ ঘুরিয়ে পাশ ফিরে শুয়ে বলল
” থাক বলতে হবে না,বারবার আপনার মুখ থেকে মিথ্যা কথা বলিয়ে আপনার গুনাহ বাড়াতে চাইনা ৷”
আয়াশ হাতের ওপর মাথা রেখে বলল
” আচ্ছা এটা হিন্টস দিচ্ছি ওকে?”
“ওকে বলুন”
কথাটা বলে আয়াশ বলতে শুরু করলো
“Aayash(5)395m-next-t9r-next-t”
এটা আমার পেশা…..
নূর শুনে অবাক হয়ে কিছুখন আয়াশের দিকে তাকিয়ে রইলো তারপর কিছু বুঝতে না পেরে বিরক্ত হয়ূ ওর মাথার বালিশ টা আয়াশের দিকে ছুড়ে বলল
” আমিই স্টুপিড যে আপনাকে জিজ্ঞাসা করেছি ৷”
আয়াশ মুচকি হেসে নূরকে জড়িয়ে বলল
” রাগ করে না, তুমি আমার আফু সোনা ৷”
❤
” তুমি কি মেয়েটার কথা একেবারেই ভুলে গেছো রেদোয়ান? না মানে মেয়েটা একটা ভুল করেই ফেলেছে তাই বলে এমন ব্যাবহার ও তার প্রাপ্য নয় ৷”
রেদোয়ান ওর ডায়েরিতে কিছু একটা লিখতে লিখতে বললো
” আমি তো বলেছি বাবা যে মায়া যেদিন নিজের ভুল বুঝতে পারবে সেদিন না হয় ওর কাছে ফিরে যাবো আমি ৷ আর তাড়া দেখলেই তো ওকে সেদিনের পর না একবার ও ফোন করে সরি বলেছে না একটাবার ও খোঁজ নিয়েছে ৷ ”
উনি চিন্তিত মুখ করে চুপ করে রইলেন কি ই বা বলার আছে ওনার যেখানে ওরা নিজেরাই নিজেদের মধ্যে সমস্যা গুলো মেটাতে নারাজ সেখানে উনি কি করবেন আর ৷
রেদোয়ান বেশ কিছুখন পর বললো
” আমি আর এখন এই বিষয়ে কোন কথা বলতে চাইছি না আর না কিছু ভাবতে চাইছি, আমরা বরং আম্মুকে খুঁজতে মনোযোগ দিই সেটাই ভালো হবে ৷”
কথাটা শোনার পর ও আরাফাত সাহেবের মাঝে কোন হেলদোল নেই দেখে রেদোয়ান বললো
” কি হলো চুপ করে আছো কেন? আম্মুকে খুঁজবে না নাকি সে এতো বছর আমাদের মাঝে ছিলো না বলে তার প্রয়োজনীয়তা ফুরিয়েছে কোনটা ? নাকি তুমি তার ব্যাপারে একেবারেই উদাসীন?”
রেদোয়ানের এমন খোঁচা দেওয়া কথা শুনে উনি উঠে দাঁড়ালেন তারপর বললেন
” সে নিজে থেকেই হারিয়ে গেছে , আমরা তাকে হারিয়ে যেতে বলিনি অতঃপর সে যখন এতদিনেও নিজের ইচ্ছাতে ফেরেনি তাই আমার মনে হয় তার প্রতি এতো ভাবনা ভেবে নিজেদের রাতের ঘুম নষ্ট করা নেহাতই বোকামোর কাজ রেদোয়ান তাই তোমাকেও বলছি তার ফিরে আসার আশা ছেড়ে দাও, যে নিজের ইচ্ছাতে হারিয়ে যাই সে কখনো ফিরে আসে না ৷”
কথাটা বলে উনি চলে যেতে নিলেই রেদোয়ান বললো
” তুমি যখন আম্মুর আর কোন খোঁজ খবর রাখতে ভ
চাইছো না তখন আমার আর মায়ার ব্যাপারেও কোন কথা বলবেনা এটাই আশা রাখবো কারন তুমি নিজের জীবনের সিদ্বান্ত নিয়েই অনিশ্চিয়তার মাঝে ৷ ”
কথাটা হয়তো বড্ড বেশি আত্মসম্মানে লাগলো ওনার তাই আর বেশি কথা না বাড়িয়ে সেখান থেকে চলে গেলেন, কথায় কথা বাড়ে !
#চলবে,,,,