তুমিই আমার প্রিয় নেশা পর্ব-৪৯

0
983

#তুমিই_আমার_প্রিয়_নেশা
#পর্ব49
#Suraiya_Aayat

আজ এক সপ্তাহ হয়ে গেল আরাফাত সাহেব হসপিটালে রয়েছেন আজকে তিনি রিলিজ পাবেন৷ এই কদিনে অনেকজন হসপিটালে তার সাথে দেখা করতে গিয়েছিলেন৷ নূরের মা তিনি সবসময় ওনার খেয়াল রাখতেন, উনি হার্ট অ্যাটাক করেছিলেন তাই ডক্টর বলেছেন যেন তার ঠিকমতো খেয়াল রাখা হয় এবং সময়মতো ওষুধ নিতে এবং দুশ্চিন্তা না করতে৷
অতীতে আরাফাত সাহেবের সমস্ত কর্মকাণ্ড তাছাড়া আয়াশের মায়ের নিখোঁজ হওয়ার পিছনে আসল কারন এই সবকিছুই নূরের কাছে অজানা কারন আয়াশ নূরকে কিছু বলেনি আর কখনো বলতেও চায়না তার কারণ আয়াশ চায়না যে নূরের চোখে তার বাবা নিচে নেমে যায় তাহলে নুর তার বাবাকে কাছে পেয়েও তার থেকে অনেকটা দূরে সরে যাবে৷
মায়া আর রেদোয়ান ও এসেছেন ওদের মাঝে আপতত সব ভুল বোঝাবুঝি দূর হয়েছে৷
নূর আজকে আর হসপিটালে আসেনি,আয়াশ ওকে আসতে দেইনি কারন এতোটা রাস্তা জার্নি করলে নূর অসুস্থ হয়ে পড়বে৷
আরাফাত সাহেব কথা বলছেন না, ডক্টর ওনাকে বেশি কথা বলতে বারন করেছেন৷
বিছানায় বসে নূর ছটফট করছে,মনের মাঝে অসস্তি কাজ করছে না পেরে আয়াশকে কল করলো৷
“হ্যালো বাবার ছুটি হয়েছে?”

আয়াশ মৃদু কন্ঠে বলল
” হমম ছুটি হয়েছে”

“এখন কেমন আছে?”

“আপাদত সুস্থ আছে কিন্তু কথা বলছেন না ডক্টর বারন করেছে ওনাকে বেশি কথা না বলতে৷”

“সাবধানে ফিরবেন৷”

“হমম৷”

কথাটা বলে নূর কলটা কাটতেই যাবে তখন আয়াশ বলে উঠলো
“আফু সোনা৷”

নূর মুচকি হেসে বলল
“হমম বলুন৷”

আয়াশ বেশ কিছুখন থেমে বলল
“কিছু খাবে?”

নূর ফিক করে হেসে বলল
“আপনি কি করে বুঝলেন৷”

“বুঝতে হয়৷ কি খাবে বলো৷”

“আসার সময় একটু আইসক্রিম আর চকলেট নিয়ে আসবেন৷”

আয়াশ কিছু না বলে মুচকি হেসে কলটা কেটে দিলো৷

নূর বালিশে মাথা দিয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেললো, সময় পরিবর্তেনর সাথে সাথে আয়াশের স্বভাব আর ব্যাবহার গুলোও যেন ভীষনভাবে পাল্টে গেছে৷ আয়াশ এখন অর আগের মতো ডেভিলগিরি করে না আর না নূরের ওপর কোন জুলুম করে বরং নূরের প্রতি কেয়ারনেসটা দ্বিগুন হয়েছে এই কদিনে৷
কতো কিছু ভাবতে ভাবতে নূর ঘুমিয়ে পড়লো কখন খেয়াল ই নেই৷

……..

ইফার মা ওরফে আয়াশের খালমনি খানিকটা চাপা স্বরে প্রশ্ন করে উঠলেন
“আয়াশ বাবা নূর কি সব কিছু জানে?”

আয়াশ ফোনের দিকে তাকিয়ে বলল
” ঠিক কোন কথাটা খালামনি?”

“এই যে কি কারনে এত সব কিছু হয়েছে আর তাতে ওর বাবার ভূমিকা ঠিক কতোটা এই সব বিষয় ৷”

আয়াশ ফোনটা পকেটে রেখে বলল
“নাহ আমি ওকে এসব কিছুই জানায়নি কারন এসব ওকে জানালে ও কষ্ট পাবে তাছাড়া আমি মনে করি মানুষকে শোধরানোর একটা সুযোগ দেওয়া উচিত তাই আরাফাত আঙ্কেলের ও একটা সুযোগ পাওয়া উচিত আর আমার যতদূর মনে হয় যে উনি শিক্ষা পেয়েছেন আর শুধরেও গেছেন৷”

উনি একটু স্বস্তির নিশ্বাস ফেলে বলল
“হ্যাঁ রে নূরকে তোর ল্যাবের কথা বলেছিস এখনো?”

আয়াশ হো হো করে হাসতে হাসতে বলল
” আমকে কিছু বলতে হয়নি সে নিজেই ঠিক খুঁজে নিয়েছে৷”

উনিও বেশ কৌতুহল নিয়ে বললেন
“কিভাবে?”

আয়াশ বলতে শুরু করলো
” সেদিন কোনভাবে আয়াশ ওয়াশরুমের ট্যাপ কলটা ও টানতেই খুলে পড়ে গিয়েছিলো আর ওখানেই তো আমি চাবি রাখার জায়গা করেছিলাম তা তুমি জানো৷ আফুসোনা ঠিক কোনভাবে সেটা দিয়ে লক খুলে আমার ল্যাব অবধি চলে আসে‌৷ আমি তখন ল্যাবেই ছিলাম আর নূরের মা মানে আমার খালামনি তিনিও সেখানেই ছিলেন কারন আমি একটা এক্সপেরিমেন্ট করছিলাম আর তাতে তিনি আমাকে সহায্য করছিলেন৷”

উনি আগ্রহ নিয়ে বললেন
” আপু তোকে আবার কি সাহায্য করছিলো?”

“তুমি তো জানো যে একবার ইফা আর নূর পার্কে গিয়েছিলো আমার সাথে তখন কেও ওকে দোলনা থেকে ধাক্কা মেরে ফেলে মেরে ফেলার চেষ্টা করে তাকেই চেনার চেষ্টা করছিলাম৷”

উনি অবাক হয়ে বললেন
“কে সে? কে এতো বড়ো ক্ষতি করার চেষ্টা করেছিলো?”

আয়াশ বেশ গম্ভীর স্বরে বলল
“মামা,মামা ওর ক্ষতি করার চেষ্টা করেছিলো আর তার জন্য উনি একজনকে পাঠিয়েছিলেন যিনি জমিদার বাড়ির ই একজন তবে বেশ দূর সম্পর্কের৷ওনাকে আমি ধরতে পেরেছিলাম আর উনি অমাকে মারতে চেষ্টা করেছিলেন তাও আমার ল্যাবেই তাই আমিই তার আগে ওনাকে মারি তারপর ওনার বডি থেকে কিছু নমুনা কালেক্ট করি আর সেটা পরে খালামনির বডির ডি এন এর সাথে মেলানোর চেষ্টা করি,আর সৌভাগ্য বশত মিলেও যাও যার থেকে প্রমানিত হয় তারা একই বংশের৷”

“কে সে? আর তার ই বা স্বার্থ কি?”

“আমি এই কথাটা এখনো খালামনিকে বলিনি,কথাটা নিজের মাঝেই রেখেছি, মামার প্রতিবেশি জেলার এই সুন্দরী মেয়ের সাথে অবৈধ সম্পর্ক ছিলো আর তার দরুন সেই সন্তান তবে যে সন্তানের মর্জাদা পাইনি কারন মামা তাকে সেই মর্জাদা দেইনি আর ব্যাপারটাকে ধামাচাপা দেওয়ার জন্য তিনি তাদের মা আর ছেলেকে মোটা অঙ্কের টাকা দিতেন৷”

“তুই এসব কি করে জানলি আয়াশ?”

আয়াশ এবার উঠে দাঁড়িয়ে বলল
“যেদিন আমি নাটোর যাই সেদিন সন্ধ্যায় মামা আমাকে ডাকেন সবকিছুর ভাগিদারী নেওয়ার জন্য ,আমি তাকে খুব স্পষ্ট জানিয়েছিলাম যে আমার কিছুর প্রয়োজন নেই৷ কথাটা বলে আমি সেখান থেকে বেরিয়ে গিয়েছিলাম তারপর জমিদার বাড়ির বাইরে এসেছিলাম কারন মামা ওপর রাগ হচ্ছিলো ভীষন,অন্ধকারের মাঝে দাঁড়িয়ে ছিলাম তখনই এক মহিলা কন্ঠের কান্নার আওয়াজ পেতেই প্রথমে চমকে গিয়েছিলাম,তারপর একটু ভড়কে গেলেই কান্ঠটার উৎস খোঁজার চেষ্টা করতেই ফিসফিসিয়ে গলার আওয়াজ পেলাম৷”

“উনি আমাকে সেই প্রথম থেকেই ধোকা দিয়ে আসছেন আমি বুঝতে পারিনি,প্রথমে তো আমার সন্তান আর আমার কোন পরিচয় দেইনি তার ওপর এই কয়েকমাস হলো সব যোগাযোগ একেবারের জন্য বাচ্ছিন্ন করেছেন৷ কাকে যেন খুন করার জন্য আমার ছেলেটাকে পাঠিয়েছিলো এখন আমার ছেলেও ফেরেনি,ছেলেটা বেঁচে আছে কি মরে গেছে তাও জানিনা৷ আমার ছেলের কিছু হলে আমি ওনাকে ছাড়বো না এটা ওনাকে বলে দেবেন৷”

“আঁচলে মুখ টিপে উনি কাঁদছিলেন,কাকে কথা গুলো বলছিলেন প্রথমে বুঝতে না পারলেও পরে বুঝলাম যে বাড়ির দারোয়ানের সাথে কথা বলছেন,দারোয়ান ও তাকে বেশ তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করে তাড়িয়ে দিতেই আমি ওনার পিছু নিলাম আর ওনার থেকে সব কথা জানলাম৷”

ইফার মা অবাক হয়ে বললেন
“উনি এতো সহজে রাজি হয়ে গেলেন বলতে?”

“নাহ,এতো সহজে বলেননি,সব জানার জন্য যে বললাম যে ওনার ছেলেকে মামু মেরে ফেলেছে সে নাকি মামুর পথের কাটা,যদিও ছেলেটাকে আমিই মেরেছিলাম কারন ও আমার আফুসোনার ক্ষতি করার চেষ্টা করেছিলাম,আর মামু ওদেরকে পথের কাটায় মনে রতো,সব কুকির্তি ফাস হওয়ার ভয়ে এতোদিন যোগাযোগ রেখেছিলেন৷”

কথাটা শেষ হতেই ইফার মা বলে উঠলেন
“ছিহ! একটা মানুষ এতোটা যঘন্য কীভাবে হয়! উনি আসলেই কি মানুষ ?”

আয়াশ মুচকি হাসলো আর কিছু বললো না৷ কিছুখন পর আয়াশ আবার বলতে শুরু করলো
“এই ভাবেই জানলাম৷ আর কি হয়েছিলো শোনো তারপর৷”

“হমম বল৷”

“আফুসোনা লিফট থেকে নামলো,আমি আর খালমনি দেখতে বুঝতে পেরেছিলাম যে কেউ আসছে আর তা আফুসোনা ছাড়া আর কেও হবে না তাও জানতাম,আমি তো ঠিক রেখেছিলাম সেদিনই নূরকে সব সত্যি বলে দেবো কিন্তু খালামনি সামান্য নূরের নাম ধরে ডাকতেই ও অঞ্জান হয়ে পড়ে গেল,এত অল্পতেই যে ভয়ে ঞ্জান হারায় আমার মনে হয়না সে সবটুকু শোনার অবস্থায় থাকবে৷”

“তাও ঠিক, বলার দরকার নেই ওকে ৷ এমনিতেই মেয়েটার শরীর ভালো যাই না তার ওপর এসব বললে‌৷”

আয়াশ যাওয়ার প্রস্তুতি নিয়ে বলল
” আচ্ছা খালা মনি আমি আসি,আফু সোনা একা আছে‌৷ আর তোমরা কালকে শপিং এ যাচ্ছো তো?”

” আমি তো যাবো না,ইফা-আহান,রেদোয়ান আর মায়া যাবে বোধহয়৷ তুই আর নূর যাবি?”

“নাহ,আফুসোনার এই সময় কোথাও যাওয়াটা ঠিক হবে না, ওরা যাক৷”

আয়াশ বেরিয়ে গেল, রুমে গিয়ে দেখলো নূর গাল ফুলিয়ে রাগ করে বসে আছে আর তা দেখে আয়াশ নূরের কাছে গিয়ে বসে নূরের গালটা টেনে দিয়ে বলল
” কি হয়েছে আফু সোনা, মন খারাপ?”
নূর অন্য দিকে মুখ ঘুরিয়ে নিলো৷ আয়াশ নূরকে কাছে টেনে জড়িয়ে ধরে বলল
” রগ করে আফু সোনা, খালমনির সাথে কথা বলছিলাম তাই দেরি হয়ে গেল৷”

নূর আয়াশের দিকে গম্ভীর ভাবে তাকিয়ে বলল
” আপনার বেবিও যে আপনার জন্য অপেক্ষা করে তার খেয়াল কি আপনার থাকে?”

আয়াশ হো হো করে হেসে বলল
” শুধু কি বাবু নাকি বাবুর আম্মুও অপেক্ষা করে কোনটা?”

” সবকিছু কি মুখে বলতে হয়?কিছু কথা বুঝে নিতে হয়৷”

আয়াশ নূরকে জড়িয়ে হেসে ফেলল৷

#চলবে,,,,