#সন্ধ্যায়_সন্ধি
#মম_সাহা
পর্বঃ১২
রাত বারোটা ত্রিশ প্রায়। শপিং মল থেকে সবে মাত্র বের হলো তেজের পরিবার,চাঁদের পরিবার,তুহার শ্বশুর বাড়ির লোকজন।তিন পরিবারের শপিং একটু তো দেড়ি হবেই আর তেজও বেশ দেড়ি করে এসেছিলো তাই আরও দেড়ি হলো।
সবাই বের হয়ে যার যার মতন গাড়িতে বসে পড়েছে।আর সব মেয়েদের নিয়ে তেজ ওর গাড়িতে উঠেছে।গাড়িতে উঠার পর থেকেই হৃদি,প্রহু,তুহা আর ড্রইভিং সিটে বসে থাকা তেজ হেসে লুটোপুটি খাচ্ছে। আর চাঁদ ঠোঁট ফুলিয়ে মাথা নিচু করে হাত মোচড়াচ্ছে। লজ্জা পেয়েছে বেশ।কারণ একটু আগে শপিংমলে যা হয়েছে,,
ফ্লাশব্যাক,
কেনাকাটির মাঝামাঝি সময় তখন।চাঁদের বিয়ের শাড়ি কেনার সময় চাঁদ শাড়ি পছন্দ করছে সাথে তেজও ছিলো কারণ চাঁদ নিজের পছন্দের উপর ভরসা করতে পারছিলো না তাই সবাইকেই বলেছে তাকে পছন্দ করে দিতে কিন্তু সবাই তেজকে দেখিয়ে দিয়েছে তাই তেজকে বলছিলো,
–“ভাইয়া চলুন না আমাকে শাড়ি পছন্দ করে দিবেন। সবাইকে বলেছি কিন্তু সবাই আপনাকে দেখিয়ে দিয়েছে।সবাই বলছে আপনার পছন্দ ভালো।”
–“ওহ্ আচ্ছা আমার পছন্দ ভালো সবাই বলে! তুই কী বলিস?” তেজ ভ্রু কুচকে বলল।
–“আমিও বলি আপনার পছন্দ ভালো, আমাকে দেখলেই বোঝা যায়।”
–“তোরে দেখলে বোঝা যায় মানে?আমার পছন্দ ভালো সেটা তোরে দেখলে কীভাবে বুঝা যায়! ” বেশ অবাকের সুরেই বলল তেজ।
–“কেনো আপনার পছন্দ ভালো দেখেই তো আমাকে বউ বানাচ্ছেন না হয় তো রাহা শাঁকচুন্নি বউ হতো।” ভেংচি মেরে বলল চাঁদ।
তেজ চাঁদের এমন চালাকি যুক্তি শুনে হতবাক।কি চালাক মেয়ে।তেজ কিছু একটা ভেবে আবার প্রশ্ন করলো,,
–“আচ্ছা তাহলে তো তুই নিজেও পছন্দ করতে পারিস,আফ্টার – অল তোর পছন্দও তাহলে ভালো”। বেশ ভাব নিয়ে কলার টেনে বলল তেজ।
চাঁদের হাসি মুখটা চুপসে গেলো।তেজ ভ্রু উঁচু করে জিজ্ঞেস করলো কী হয়েছে। চাঁদ আমসির মতন মুখ করে বলল,
–“জানেন আগে আমিও মানতাম আমার পছন্দ ভালো কিন্তু যখন থেকে আপনাকে আমার সামনে দেখছি নিজের হাসবেন্ড হিসেবে তরপর থেকেই নিজের পছন্দের উপর থেকে কেমন বিশ্বাস টা উঠে গেলো।”
চাঁদের এমন কথা শুনে উপস্থিত সবাই হেসে উঠলো। তেজ কতক্ষণ মুখ ফুলিয়ে চাঁদের দিকে চোখ রাঙ্গিয়ে নিজেও হেসে দিলো।এক দফা হাসাহাসির পর অবশেষে তেজ শাড়ি পছন্দ করতে গেলো। শাড়ি দেখছে একটার পর একটা হঠাৎ করেই চাঁদের চোখ দোকানের বাহিরে দাড়িয়ে থাকা মানুষটার দিকে যায় আর চোখ ছানাবড়া হয়ে যায় অবাকে।
তেজ কতক্ষণ যাবত চাঁদকে একটা শাড়ি দেখাচ্ছে কিন্তু চাঁদের সেদিকে কোনো হুঁশ নেই।তেজ এবার চাঁদের দৃষ্টি অনুসরণ করে তাকায় এবং দেখে চাঁদ একটা ছেলের দিকে তাকিয়ে আছে।তেজ এবার চাঁদকে হাত দিয়ে ঠেলা দিলো।চাঁদ এতক্ষনে হুঁশ ফিরলো।সাথে যে তেজ বসে ছিলো সে বেমালুম ভুলে গিয়ে ছিলো।
তেজ এবার সন্দিহান দৃষ্টিতে চাঁদের তাকিয়ে বলল,
–“কে রে ছেলেটা? তুই এমন হা করে চেয়ে আছিস?”
–“না না কেউ না আসলে আমি চিনি না।”ভয়ে ভয়ে বলল চাঁদ।
–“তুই চিনিস না তো তাকিয়ে ছিলিস কেনো?”
–“কই ভাইয়া আমি ছেলেটার দিকে তাকিয়ে ছিলাম না তো আমি তো আসলে,,”
–“তুই আসলে ঐ ছেলেকেই দেখছিলি।এবার বল কাহিনী কি?”
–“আসলে, ও ভাইয়া আমি ভুলেই গেছিলাম এ ছেলেটা আমাদের ভার্সিটির পিয়ন।”
–“না তোর ভার্সিটির পিয়নকে আমার ভালো করেই চেনা আছে। বল এটা কে?”
চাঁদ এবার থতমত খেয়ে গেলো।কিন্তু আসল পরিচয় কিছুতেই দিতে পারবে না।তাই আমতা আমতা করে বলল,
–“আরে আপনি কানে কম শুনেন নাকি ভাইয়া?আমি বলেছি এই ছেলে আমার ভার্সিটির পিয়নের বন্ধু। ”
–“মশকরা করছিস আমার সাথে? পিয়নের বন্ধু এত হ্যান্ডসাম হয় নাকি। আর তোদের পিয়ন তো চাচা টাইপ এমন লোকের বন্ধু এত সুন্দর হবে।একটা থাপ্পড় দিবো।” তেজ ধমকে বলল।
–“তাহলে বোধহয় পিয়নের ছেলে হবে
আমি চিনি না ভাইয়া।” চাঁদ ভয়ে ভয়ে বলল।
তেজ এবার ছেলেটাকে হাত দিয়ে ইশারা করল সামনে আসতে আর চাঁদের তো কলিজা যায় যায়। কারণ এই ছেলেটাই তার পিছে পিছে বাড়ি অব্দি এসেছিলো।তেজ জানলে সর্বনাশ। এদিকে সবাই মুটামুটি অবাক।চাঁদ তো জমে যাচ্ছে।
ছেলেটা ওদের সামনে এসে দাঁড়াতেই তেজ চাঁদকে বলল,,
–“চাঁদ এটাই সেই ছেলে যে তোর পিছে পিছে আমাদের বাড়ি অব্দি এসেছিলো তাই না? ”
এবার তো চাঁদের জ্ঞান হারানোর উপক্রম।যা ভয় পেয়েছে সেটাই হলো।তার মানে তেজ ভাইয়া আগে থেকেই সব জানতো আর যেহেতু এতদিন কথা লুকিয়েছে আর আজ এত মিথ্যা বলেছে তার জন্য হয়তো তেজ ভাইয়া তোর গর্দান নেবে কিন্তু চাঁদে অবাক করে দিয়ে তেজ গিয়ে ছেলেটার গলা জড়িয়ে ধরলো।চাঁদ বিস্মিত, হতবাক। কি হচ্ছে? যেখানে মারপিঠ করার কথা সেখানে কোলাকুলি হচ্ছে।
পিছন থেকে তুহা বলল,,
–“কেমন আছেন আদিব ভাই?”দেশে আসলেন কবে?
–“এই তো ভালো আছি তুহা।একমাস হলো আসলাম।তুই কেমন আছিস?” আদিব হাসি মুখে উত্তর দিলো।
–“আমিও ভালো আছি।”
এভাবেই সবার সাথে কুশলাদি বিনিময় হলো।সবশেষে আদিব চাঁদের দিকে এগিয়ে তেজকে প্রশ্ন করলো,
–“কিরে ভাবি তো এই নারীটা তাই না?”
তেজ হাহা করে হেসে বলল,–“হ্যাঁ এই মহিলাই,এমন ভাব করছিস জেনো চিনিসই না।”
–“চিনবো না কেনো,ওনাদের ভার্সিটি থেকে পিছে পিছে তোদের বাসা অব্দি এসেছিলাম কারণ টা অবশ্য তুই জানিস। তো না চেনার কী আছে।”
তেজ ও মাথা নাড়িয়ে সায় দিলো।আর চাঁদের মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে সব।আদিব চাঁদকে জিজ্ঞেস করল,,
–“ভাবি কেমন আছেন?চিনতে পারেন নি আমায় তাই না? না চেনারই কথা। আমি আর তেজ ফ্রেন্ড আর খুব ঘনিষ্ঠ ফ্রেন্ড। একসাথেই পড়াশোনা করেছি স্কুলে তারপর কলেজ উঠার পর বিদেশ চলে যাই।তাই চেনেন নি।”
চাঁদ এবার আসল কাহিনী বুঝলো।আর সেদিন পিছে পিছে যে তার জন্য আসে নি সেটাও বুঝলো।এর মাঝেই তেজ বলে উঠল,,
–“আরে তুই ভাবির সাথে এত মিষ্টি কথা বলছিস আর তোর ভাবি তোকে পিয়ন,পিয়নের বন্ধু, পিয়নের ছেলে আরো কি কি না বানিয়ে দিচ্ছিলো।”তারপর পুরো ঘটনাটা বলল চাঁদ কি কি বলেছে.।
সবাই আবার আরেক দফা হাসলো।শুধু হৃদি বাদে।সে রাগী দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আদিবের দিকে।
সেই থেকে এক একজন পঁচানো শুরু করলো এই গাড়িতে উঠেও হেসেই যাচ্ছে।চাঁদের এবার নিজের উপরই রাগ উঠছে।কেনো যে পাঁকামি করতে গেছিলো।
গাড়ি চলছে আপন গতিতে। সবাই আলোচনা করছে বিভিন্ন বিষয়ে অবশ্যই সবই বিয়ের বিষয়ে। আবার মাঝে মাঝে চাঁদকে লজ্জা দিয়ে হাহা করে হেসে উঠছে।
___________
কেটে গেছে দুটো দিন না না ব্যস্ততায়। বাসা মেহমানে গিজ গিজ।সবাই দুই বিয়ে খাওয়ার জন্য এক্সাইটেড। তুহার বিয়ের দিনেই বিয়ে হবে।আর চাঁদকে ও বাসায় ই নিয়ে যাওয়া হবে সেদিন আলোচনার ফলাফল বের হয়েছিলো এটা। এজন্য বিয়ে আমেজ টা জমে উঠেছে।একই দিনে দুইটা বিয়ে।বিয়ে অবশ্য সেন্টারে হবে।গায়ে হলুদ এক সাথে ছাদে হবে।কালই গায়ে হলুদ।সবাই খেটে মরছে।।
চলবে,,