ছদ্মবেশে লুকানো ভালোবাসা পর্ব-২১

0
1139

#ছদ্মবেশে_লুকানো_ভালোবাসা
#মৌমি_দত্ত
#পর্ব_২১

স্পন্দন উঠে দাঁড়ালো। কামালও বসকে দেখে উঠে দাঁড়ালো।
– জানিনা আমার সবটা জানার পর আপনারা আমাকে নিজের মেয়ের জন্য যোগ্য মনে করবেন কিনা। তবে আফরাকে আমি ভালোবাসি। আর ওকে পেতেও চাই। তবে আমার যেহেতু পরিবার নেই সেহেতু ওকে ওর পরিবার সহ পেতে চাই। এমনিই না।
স্পন্দনের কথা শুনে মৃদু হাসলো লাবিবা আর জোসেফ। তারা উঠে দাঁড়ালো।
– আমাদের বিয়ে নিয়ে অমত নেই কোনো।
লাবিবার মিষ্টি হেসে বললো। জোসেফও হেসে তাল মিলিয়ে বললো,,
– ইনায়াতকে নিজের সত্য জানিয়ে সবটা ঠিক করে নাও। এরপর ভালো সময় দেখে ধুমধাম করে আমার মেয়ের বিয়ে দেবো।
স্পন্দন মাথা ঝাঁকিয়ে হাসলো। আর আফরা লজ্জায় মাথা নিচু করে আছে। ভেবেছিলো কেলেংকারি হবে। এখন তো বিয়েই পাঁকা হয়ে গেলো। দীপ মিষ্টি সার্ভ করলো। সবাই মিষ্টি মুখ করলো। এরপরে স্পন্দন বের হয়ে এলো বাসা থেকে। কামালও ফলো করলো তার বসকে। লাবিবা আর জোসেফ কথা বলছিলো। আফরা নিজের রুমে চলে গেছে। তাই সুযোগ বুঝে আফিমও বের হয়ে আসলো স্পন্দনের পিছু পিছু। স্পন্দন গাড়ির কাছে এসে দরজায় হাত লাগিয়েছে মাত্র খুলবার জন্য। তখনই ডাক দিলো আফিম,,
– মিস্টার স্পন্দন !!
পিছু ফিরে ভ্রু কুঁচকে তাকালো স্পন্দন আফিমের দিকে। আফিম এসে জড়িয়ে ধরলো স্পন্দনকে।
– এখন তো আপনি আমার বোন জামাই হবেন
আর তাছাড়াও আমরা অন্য আরো একটা সম্পর্কেও আবদ্ধ হতে চলেছি। দুজনেই দুজনের বোনজামাই,,,
আফিমের কথা পুরো বলতে না দিয়ে তুড়ি বাজালো স্পন্দন আফিমের মুখের সামনে।
– এক্সকিউজ মি!! স্বপ্ন দেখা ভালো। কিন্তু সীমার বাইরে না।
আফিমের ভ্রু কুঁচকে এলো।
– মানে??
আফিমের প্রশ্নে বাঁকা হাসলো স্পন্দন। আফিমের শার্টের কলার খুলে নিজেই ঠিক করতে করতে বলতে লাগলো।
– আফিম!! তোমার বোনের সাথে আমার বিয়ে পাকাপাকি হয়েছে। কিন্তু আমি আমার বোনের সাথে তোমাকে কখনোই মেনে নিবো না। মাই সিস্টার ডিজার্ভস সামথিং বেস্ট!!
আফিম স্পন্দনের কথা শুনে হো হো করে হেসে উঠলো। স্পন্দন ভ্রু কুঁচকে তাকালো। আফিম স্পন্দনের কাঁধে একটা হাত রেখে বললো,,
– ডিয়ার বোন জামাই!! তেরা বেহেন মেরা হে,,, অর মেরা বেহেন তেরা। ওকে?? আফরা তোমার তখনই হবে। যখন ইনায়াত আমার হবে। আমাদের বিয়ে একই দিনে হবে,, একই জায়গায়,, একই কাজীর কাছে হবে।
স্পন্দন আফিমের কলার খামচে ধরলো। তখনই আফিম বাঁকা হেসে উপরের দিকে তাকালো যেখানে আফরার ব্যালকনিতে আফরাকে দেখা যাচ্ছিলো। স্পন্দনও উপরে তাকাতেই আফরাকে দেখে অবাক হলো। দ্রুত আফিমের কলার ছেড়ে দিলো। গিয়ে গাড়ির দরজা খুলে উঠে বসলো গাড়িতে। স্পন্দন গাড়ির দরজা লাগাতে যাবে,, তখনই আফিম আটকে দিলো। ঝুঁকে স্পন্দনের চোখে চোখ রেখে বললো,,
– তোমার পাস্ট লাইফ ছিলো আর আমারও। তোমারটা শুনে যেমন ভুল ধারণা শেষ হয়েছে,, আমারটাও জেনে নিও। আমি কালকে দেখা কর‍তে চাই তোমার সাথে। ব্ল্যাক ডে ক্যাফেটেরিয়া,,, ১০ টায়।
আফিম এটুকু বলেই ট্রাউজারের পকেটে হাত গুঁজে সড়ে এলো গাড়ি থেকে। কামাল এতোক্ষন সবটাই শুনেছে।
– স্যার?? গাড়ি স্টার্ট করবো??
স্পন্দনকে আনমনা হয়ে বসে থাকতে দেখে জিজ্ঞেস করলো কামাল। স্পন্দন হুশে ফিরলো। ” হুম ” বলে সম্মতি জানিয়ে আবারও ভাবনায় ডুবে গেলো। সারা রাস্তা আনমনা ছিলো স্পন্দন। শুধু একবার ছোট্ট করে কামালকে বলেছে,, ” কামাল!! আফিমের ফুল লাইফ হিস্টোরি আমার চাই “। কামালও মাথা নাড়িয়ে সায় দিয়েছে।
.
.
তাহজিব বাসায় ফিরেছে একপ্রকার আসিফের সাথে ঝগড়ায় হেরে৷ তাহজিবের উন্মাদ অবস্থা দেখে সহ্য হচ্ছিলো না আসিফের। তাই ধরে বেঁধে বাসায় এনেছে। তাহজিব নিজের রুমে খাটে বসে আছে। রুমটা এখনো গোছানো। আজকে সকালেই তো রুহি গুছিয়েছিলো। তাহজিব চোখ বন্ধ করে ফেললো। রুহিকে ছাড়া এই ঘরে শ্বাস বন্ধ লাগছে তার। আসিফ ট্রেতে করে খাবার নিয়ে আসলো। তাহজিবকে এভাবে দেখে ছোট্ট একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে রুমে প্রবেশ করলো।
– স্যার!! খেয়ে নিন প্লিজ।
আসিফের কথায় চোখ খুললো তাহজিব। তাহজিবকে এই একদিনেই খুব ক্লান্ত আর অসহায় লাগছে।
– জানো আসিফ!! মানুষ হাতের কাছে সৌভাগ্য পেয়েও চিনেনা। বোকামি করে অনেক।
– আর যখন হারিয়ে যায় তখন হা হুতাশ করে স্যার।
আসিফের কথা শুনে মৃদু হাসলো তাহজিব।
– আমি সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছি আসিফ।
আসিফ ভ্রু কুঁচকে তাকালো তাহজিবের দিকে। তাহজিব হাসিমুখে বললো,,
– রুহির সাথে বিদেশে আমি যাবো। আফটার অল,, বৌয়ের সেবা করে স্বামীর ধর্ম।
আসিফ চমকে তাকালো তাহজিবের দিকে। নেহায়েত হাতের ট্রে সে রেখে দিয়েছে। নাহয় এই চমক সহ্য করতে না পেরে তা মাটিতেই গড়াগড়ি খেতো। তাহজিব মুচকি হেসে বললো,,
– রুহি আমাকে পাগলের মতো ভালোবাসে। আমার ইনায়াতের পিছনে ছুটা একদম বেমানান। ইনায়াত আমাকে ভালোবাসতে পারবে কিনা তা আমি জানিনা। তাহলে কিসের ভরসায় আমি রুহির ভালোবাসা হারাবো??
তাহজিবের কথা শুনে খুব খুশী হলো আসিফ। তাহজিব বললো,,
– আমার এই ঘর,, আমার ডেইলি লাইফ,, আমার সবকিছু রুহিতে আটকে গেছে। ইনায়াতের দায়িত্ব আমি যখন নিয়েছি তাকে ইরশাদের থেকে বাঁচানোর,, আমি বাঁচাবোই। তবে এরপর আমি রুহিকে নিয়ে এখান থেকে দূরে চলে যাবো। একটা হাসিখুশী জীবন চাই আমি রুহিকে নিয়ে।
আসিফ খুশীমনে বের হয়ে এলো তাহজিবের রুম থেকে। আল্লাহ যা করে তার মধ্যে ভালো লুকানোই থাকে। রুহির হারিয়ে যাওয়াতে তাহজিব বুঝলো রুহির মূল্য৷ এখন আল্লাহ যেন রুহিকে ও ইনায়াতকে সেফ রাখে সেই দোয়া করছে আসিফ মনে মনে।
.
.
জনাথন নিজের সব ফোর্স এক জায়গায় করছে। কেননা এস.একে নিয়ে তার ভালোই ধারনা আছে। ছেলেটা সব ভন্ডুল করে দেয় বারবার। এবার দেখা হলে এস.একে মাত দিতে চায় জনাথন। তবে ভবিষ্যত কেই বা জানে?? আফসোস যেই জানুক না কেন!! জনাথন জানেনা। তাই তো এতো বৃথা চেষ্টা সে করছে। ইরশাদ বন্ধুর সব আয়োজন দেখে খুব খুশী। একটু বাদেই হুশ ফিরবে রুহির। তারও অনেকটা সময় বাদে হুশ ফিরবে ইনায়াতের। আর ইনায়াতের হুশ ফিরবার জন্যই অপেক্ষা করছে ইরশাদ অধীর আগ্রহে।
.
.
আফরার বাসা থেকে আসার পর চিন্তিত হয়ে আছে স্পন্দন। ইনায়াতকে সে বেশ অনেকটা বার কল করেছে। কিন্তু ইনায়াত একটা কলও রিসিভ করেনি। ইনায়াত আগে কখনো স্পন্দনের কল রিসিভ না করে থাকেনি। তাই চিন্তায় আছে স্পন্দন। কামাল যদিও স্পন্দনকে বলেছে যে ইনায়াত ঘুমিয়ে পড়েছে। তবে কেন যেন স্পন্দনের মন মানছে না। নেহায়েত রাত হয়েছে। নাহয় সে নিজেই গিয়ে টপকাতো ইনায়াতের কাছে।
তবে আফিম স্পন্দনের থেকে দুই ধাপ এগিয়ে। স্পন্দনকে বিদায় দিয়েই কল দিয়েছিলো ইনায়াতকে। প্রায় ২১২ টা কল করবার পরেও যখন ইনায়াত ধরেনি তখন নিজেকে আটকে রাখতে পারলো না আফিম। আফিম ভেবেই নিলো ইনায়াত রেগে আছে তার উপর ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ করাতে। তাই আফিম প্রেমিক সেজে ইনায়াতের বাসায় পৌছে গেলো রাতের ১২ টায়। সিড়ি বেয়ে ছাদে উঠে কাঁচের বাসাটায় গেলো। দরজা খোলা দেখে বুক কেঁপে উঠলো আফিমের। এতো রাতে দরজা খোলা কেন?? দরজা ঠেলে ঘরের ভেতর ঢুকলো আফিম। সবটাই কেমন যেন অস্বাভাবিক। আফিম জোড়ে জোড়ে ইনায়াতের নাম ধরে ডাকলো। কিন্তু কোন সাড়া পেলো না। সবগুলো রুম,, ওয়াসরুম চেক করেও যখন ইনায়াতকে পেলো না। তখন বুক কেঁপে উঠলো আফিমের। ধুপ করে বসে পড়লো সোফায়। নিজের পাশেই চোখে পড়লো সোফায় পড়ে থাকা ইনায়াতের ফোন। আফিম তা তুলে নিলো হাতে। আফিম আর স্পন্দনের কল স্পষ্ট দেখাচ্ছে মোবাইলে। মোবাইল হাতে থাকা অবস্থাতেই কল এলো স্পন্দনের। আফিম দ্রুততার সঙ্গে রিসিভ করলো। এতোক্ষনে তার বুঝতে নাকি নেই যে ইনায়াত কোন বিপদে পড়েছে।
– হ্যালো??
অপরপাশ থেকে স্পন্দনের অস্থির গলার আওয়াজ পেলো আফিম। কিন্তু আফিমের মাথা কাজ করছে না এখন। কেমন যেন ফাঁকা ফাঁকা লাগছে খুব। কোনপ্রকার ভণিতা ছাড়াই কাঁপা গলায় বলে ফেললো,,
– স্পন্দন!! ইনায়াত ঘরের কোথাও নেই। দরজা খোলা,,, পুরো ঘর খালি। আমি শিউর ওর কোন বিপদ হয়েছে। প্লিজ জলদি এসো।
আফিমের আওয়াজ শুনে প্রথমে অবাক হলেও পরের কথাগুলো মস্তিষ্কে আঘাত করতে সময় নিলো স্পন্দনের। কিছু সেকেন্ড মোবাইল কানে ধরেই বসে রইলো খাটে। পরমূহুর্তে ফোনের অপরপাশ থেকে সবটা বুঝতে পেরে আফিম চিৎকার করে উঠলো,,
– স্পন্দন?? শুনতে পাচ্ছো?? নিজেকে সামলাও আর জলদি আসো ইনায়াতের বাসায়।
স্পন্দন দ্রুত খাট থেকে নেমে আসলো। ইনায়াতের কথাটা শুনে সব ফাঁকা লাগছে স্পন্দনের। জোড় গলায় যে কামালকে ডাকবে তাও পারছে না। নিজের মাথা খালি করতে নিজের হাত কামড়ে ধরলো স্পন্দন শক্ত করে। হাতে দাঁত গাঢ়ো ভাবে বসে যেতেই হুশ হলো স্পন্দনের। কাঁপা স্বরে ডেকে উঠলো স্পন্দন চিৎকার করে ,,,
– কামাল?? কামাল গাড়ি বের করো। কামাল??

সামনে যা হবে দেখা যাবে। আর কিছুই কমু না!! রাগ কচ্চি আমি 😒
হুহহ😏😏😏

চলবে,,,