#তোমাতে বিলীন
#লেখিকা—আমায়া নাফশিয়াত
#পর্ব—|| ২৩ ||
সবাই ড্রয়িং রুমে ঢুকে সোফায় বসলো।আশিয়ান ঊদিতার হাত জড়িয়ে ধরে নিয়ে একটা সোফায় গিয়ে বসলো।আশিয়ান ঊদিতার হাত শক্ত করে ধরে আছে।আশিয়ান কর্নারে বসেছে তাই আশা আশিয়ানের পাশে বসার চান্স পায় নি।মুখটা গোমড়া করে আলেয়া এবং তারিনের পাশে গিয়ে বসলো সে।
আলো ফরহাদ ওনারা মেহমানদারী করতে ব্যস্ত।সার্ভেন্টরা হরেক রকমের নাশতা নিয়ে এসে বড় টি টেবিলটি ভর্তি করে ফেলেছে।ফরহাদের ভাই ফয়েজ ও তার স্ত্রী বিনু এসেছেন তাদের সবার সাথে আলাপ করতে।ওনারা এতবছর ধরে লন্ডনে ছিলেন।একসপ্তাহ আগে দেশে ব্যাক করেছেন।সাথে তাদের একমাত্র ছেলে ইরফানও এসেছে।
আলো আর আশা বাদে বাকিরা সবাই ঊদিতার সাথে কুশল বিনিময় করলো।আশিয়ানও সবার সাথে কথা বলছে খুবই সাবলীলভাবে।তবে আশিয়ান খেয়াল করলো যে ইরফান বারবার ঊদিতার দিকে তাকাচ্ছে।যেটা তার মোটেও ভালো লাগছে না।ঊদিতা কারও মুখের দিকে তাকাচ্ছে না তাই সে বুঝতেও পারছে না যে কেউ তার দিকে অন্য নজরে তাকিয়ে আছে।
জুম্মার আযান দিচ্ছে।আযান শেষ হতেই খুৎবা শুরু হলো।ঊদিতা আশিয়ানকে আলতো ভাবে ডেকে ফিসফিস করে বললো;
ঊদিতা:-শুনুন,,আশেপাশে মনে হয় মসজিদ আছে।
আশিয়ান:-হ্যা,,তো!
ঊদিতা:-তো মানে! ভুলে গেলেন নাকি যে আজ শুক্রবার?জলদি জুম্মার নামাজ পড়তে মসজিদে যান।সাথে ওনাদেরকেও নিয়ে যাবেন।
আশিয়ান:-ঠিক আছে যাচ্ছি।তবে তুমি এনার সাথে সাথে থাকবে আমি আসার আগ অবধি।একা কোথাও যাওয়ার কোনো দরকার নেই।নামাজ পড়তে হলেও এনাকে সাথে রাখবে।মনে থাকবে তো?
ঊদিতা মুচকি হেসে তাকে আশ্বস্ত করে বললো;
ঊদিতা:-জ্বী মনে থাকবে।আমি এনা আপুর সাথে থাকবো সবসময়।
আশিয়ান:-ওকে,,।
আশিয়ান বাসার সকল পুরুষদের সাথে নিয়ে জুম্মার নামাজ পড়তে মসজিদে চলে গেল।যাওয়ার আগে ঊদিতার হাতে নিজের ব্লেজারটা খুলে রেখে গেল সে।আর আশিয়ান যাওয়ার পর ঊদিতা এনাকে সাথে নিয়ে একটা গেস্ট রুমে এলো নামাজ পড়ার জন্য।
এনা অনেক মেকআপ করেছে সাথে সে নামাজ পড়ার মতো ড্রেস আপ করে আসে নি।তাই ঊদিতা একাই ওযু করে এসে নামাজ আদায় করে নেয়।নামাজ শেষে আবারও এনার সাথে ড্রয়িংয়ে ফিরে এলো সে।
ঊদিতাকে দেখে আশা জ্বলেপুড়ে শেষ।কেন জানি সে ঊদিতাকে একটুও সহ্য করতে পারছে না।ঊদিতাকে দেখে মিসেস ইয়াসমিনকে উদ্দেশ্য করে আলো পিন্চ মেরে বলে উঠেন;
আলো:-আমি তোমাকে বলেছিলাম ভাবী আশিয়ানের সাথে আমার আশাকে বিয়ে দিতে।আমার আশা মামণি কোন অংশে কম ছিলো বলতে পারো?কেন যে তুমি নিজের কাছেই এত সুন্দরী,স্মার্ট আর পরিচিত মেয়ে রেখে অপরিচিত কারও সাথে আশিয়ানের বিয়ে দিলে।আশাকে তো তুমি ছোট থেকেই চেনো!সে কেমন মেয়ে তা তো তুমি খুব ভালো করেই জানো ভাবী।তবে আমার মেয়েটাকে কেন রিজেক্ট করলে?
মিসেস ইয়াসমিন মনে মনে খুবই বিরক্ত হলেন আলোর কথা শুনে।যেমন মা তেমন তার মেয়ে।এক ক্যাটাগরির।ঊদিতা নিরব দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আলোর দিকে।এখানে বড়রা কথা বলছেন তাই সে চুপ করে আছে।আশিয়ান মসজিদ থেকে আসে নি এখনো নয়তো সেই জবাব দিয়ে দিতো।মিসেস ইয়াসমিন একমুহূর্ত নিরব থেকে বললেন;
মিসেস ইয়াসমিন:-আশিয়ান কখনো আশাকে ওরকম নজরে দেখে নি আলো।আমি একবার বলেছিলাম অবশ্য যে সে চাইলে আশাকে নিজের লাইফ পার্টনার হিসেবে চুজ করতে পারে।কিন্তু সে এককথায় মানা করে দিয়েছে।কারণ আশাকে তার পছন্দ না।তুমি তো জানো আমি আমার সন্তানদের মতের বিরুদ্ধে কখনো যাই না।ওদের পছন্দেই আমার পছন্দ।আরও অনেক বিয়ের প্রস্তাব নাকচ করেছে সে।আমিও জোর করি নি।তবে ঊদিতার বেলায় ও মানা করে নি।বরং তার সম্মতি ছিলো এ বিয়েতে।তাই ধুমধাম করে তাদের দুজনের বিয়ে দিয়ে দিলাম।ওরা দুজন অনেক সুখে আছে এখন।আমার ছেলে ঊদিতাকে ভালোবাসে।সব মা-ই নিজের সন্তানের ভালো চায়।আমিও চাই তাই তো ঊদিতার মতো এত অমায়িক পুত্রবধূ পেয়েছি।আমি আমার কেয়ার মতো আরেকজন মেয়ে পেয়েছি ভাগ্যগুণে।আমি অনেক খুশি আলো।
ঊদিতাকে নিজের ছেলের বৌ হিসেবে পেয়ে আমি ধন্য।
মিসেস ইয়াসমিনের কথায় মিসেস তারানা সায় জানালেন।আলো মুখ বাঁকিয়ে ফেললেন ওনার কথা শুনে।আশা তো ভেতরে ভেতরে ফুঁসছে।কারণ সে আশিয়ানের বউ হতে পারে নি।বিনুর অনেক পছন্দ হয়েছে ঊদিতাকে।নিজের ছেলের জন্য ঠিক এরকমই একটা পুত্রবধূ খুঁজছেন তিনি।ঊদিতার চৌদ্দগুষ্টির কথা ও সবার নাড়ি নক্ষত্র জেনে গেছেন ওনি এতক্ষণে।
ঊদিতার ছোট মামার একমাত্র মেয়ের কথা শুনে তিনি মিসেস ইয়াসমিনের কাছে ইচ্ছা প্রকাশ করলেন তাকে দেখতে যাওয়ার।পছন্দ হলেই বিয়ের কথাবার্তা পাকাপোক্ত করে ফেলবেন।কারণ ঊদিতার মামাতো বোনটা কিছুটা তার মতোই।যদিও মুখের গড়ন আলাদা।তবে ঊদিতার সমবয়সী আর ঊদিতার মতো শান্তশিষ্ট স্বভাবের মেয়ে সে।পড়ালেখায়ও ভালো।মিসেস ইয়াসমিনের কাছ থেকে পারমিশন নিয়ে ঊদিতার থেকে তার মামা ও মি.আনিসুলের নাম্বার কালেক্ট করলেন বিনু।ওনাদের সাথে কথা বলবেন বলে।
মিনিট দশেক পর আশিয়ানরা সবাই চলে এলো মসজিদ থেকে।ড্রয়িং রুমে প্রবেশ করেই আশিয়ান সবার প্রথম ঊদিতার নুরানি চেহারার পানে তাকালো।ঊদিতা আশিয়ানের দিকে একপলক তাকিয়ে মাথা নিচু করে বসে রইলো।আশিয়ান এসে ঊদিতার পাশে বসলো।বাকিরাও হেসে হেসে কথা বলে জায়গা দখল করে বসে পড়লো।আবারও সারা ড্রয়িং রুম জুড়ে হাসিঠাট্টার জোয়ার বয়ে গেল।
বিনু ও আলো সবাইকে দুপুরের খাবার খেতে ডাইনিং রুমে আসার জন্য আহ্বান জানালেন।আশিয়ান ঊদিতার হাত ধরে সবার সাথে ডাইনিং রুমে এসে দুজন পাশাপাশি দুটো চেয়ারে বসে পড়লো।আশিয়ানের অপরপাশে আশা বসলো।বাকিরা সবাই চেয়ার টেনে বসে পড়লেন দুপুরের খাবার খেতে।সারা ডাইনিং টেবিল জুড়ে হরেক রকমের তরকারি।কী যে নেই সেটা বলা মুশকিল।সবরকমের মাছ,মাংস,ডিম,তরকারি,পোলাও,বিরিয়ানি যার যেটা খেতে ভালো লাগবে সব আছে।আশা আশিয়ানের পাতে খাবার বেড়ে দেয়ার জন্য চামচ নিয়ে একচামচ পোলাও তুললো তার পাতে দেয়ার জন্য।ঊদিতা শান্ত চোখে সেটা দেখে আশার হাত থেকে চামচ কেঁড়ে নিয়ে মার্জিত ভাবে বললো;
ঊদিতা:-আপনি বরং নিজেরটা বেড়ে খান।ওনার জন্য আমি আছি আপনার এত চিন্তা করতে হবে না।(হাসিমুখে)
ঊদিতার সাহস দেখে আর কথা শুনে আশার ইচ্ছে করছে ঊদিতাকে এখানেই খুন করে ফেলতে।তাদের কাজকর্ম কেউ খেয়াল করে নি একমাত্র তারিন,এনা,আলেয়া আর কেয়া ব্যতিত।এনা আর কেয়া মিটমিট করে হাসছে।বাকিসবাই তাদের থেকে দূরে বসেছে তাই ঊদিতার কথা অন্য কেউ শুনে নি।আশিয়ান মুচকি হাসলো শুধু কিছু বললো না।ঊদিতা সুন্দর ভাবে আশিয়ানের পাতে তার পছন্দের খাবার বেড়ে দিলো।তারপর নিজের পাতে বেড়ে নিয়ে মার্জিত ভাবে খেতে লাগলো।
খাওয়া দাওয়া সেড়ে বড়রা একরুমে বসে আড্ডা দিতে লাগলেন আর বাকিরা অন্য একটা রুমে বসে গল্প করতে লাগে।সবাই কথা বলছে,, আশিয়ান এতসব কথা শুনতে শুনতে বোরড হয়ে ঊদিতার কোলে মাথা রেখে শুয়ে পড়ে।বাকিরা সবাই মুখ টিপে হাসছে আশিয়ানের কান্ড দেখে।ঊদিতা এতে হাসির কিছু খুঁজে পেল না।সে আশিয়ানের মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে।আশার ভেতরে খালি ফাটছে এসব দেখে।ঊদিতার এরকম হাত বুলিয়ে দেয়াতে আশিয়ান ঘুমের অতলে তলিয়ে গেল।আর কারও কথা বলা ও হাসাহাসি এসব ওর কানে বাজছে না।কারণ সে এখন গভীর ঘুমে মগ্ন।
ইরফানের বুক চিনচিন করছে ঊদিতার কোলে আশিয়ানকে মাথা রেখে ঘুমাতে দেখে।কেন তা সে জানে না!সবাই গল্প করায় মশগুল।ঊদিতা মাঝে মধ্যে তাদের কথার সাথে তাল মিলিয়ে হু হা করছে কিন্তু তার মন পড়ে রয়েছে আশিয়ানের কাছে।ঊদিতা এ কদিনে খুব ভালো করে আশিয়ানের মায়াজালে বাঁধা পড়ে গেছে।সে উপলব্ধি করতে পারছে যে আশিয়ানের সাথে সে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে গেছে।চাইলেই এই লোকটার থেকে সে কখনো দূরে যেতে পারবে না।ভালোবাসার সংঙ্গা জানে না ঊদিতা।তবে বুঝতে পারছে আশিয়ানের প্রতি তার এত পসেসিভনেসটাই হলো গিয়ে ভালোবাসা।
সবাই উরাধুরা আড্ডা দিচ্ছে রুমে বসে।গল্প করতে করতে কখন যে সন্ধ্যা হয়ে গেছে বলতে পারবে না কেউ।আসরের আযান যখন হয় তখন আশিয়ানকে জাগিয়ে তোলে ঊদিতা নামাজ পড়তে গেস্ট রুমে চলে গেল।আশিয়ান মসজিদে না গিয়ে ঊদিতার সামনে দাঁড়িয়ে নামাজ আদায় করলো।
সন্ধ্যার দিকে মাগরিবের নামাজ আদায় করে সবার সাথে সন্ধ্যার নাশতা করে নিলো ওরা দুজন।তারপর রাত ৭ টা ১৫ মিনিটে সবার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে আশিয়ান আর ঊদিতা পার্টিতে এটেন্ড করার জন্য রওনা দিলো।আশা বেচারি কিছুই করতে পারলো না।তার চোখের সামনে আশিয়ান ড্যাংড্যাং করে ঊদিতাকে সাথে নিয়ে চলে গেল।আগেভাগে দুজন এশার নামাজও আদায় করে নিয়েছে কারণ পার্টি থেকে আসতে কতরাত হবে কে জানে!
প্রায় আধাঘন্টা পর আশিয়ান অনেক বড় একটা ফাইভ স্টার হোটেলে প্রবেশ করলো ঊদিতাকে সাথে নিয়ে।বাইরে আশিয়ানের বিজনেসের খাতিরে পরিচিত এক লোক সাথে আরও বেশ কয়েকজন নামীদামী লোকেরা তাদেরকে অভ্যর্থনা জানালেন।তাদের দুজনের ওপর পার্টি স্প্রে ঝরলো বরফের মতো।হোটেলের অনেক বড় একটা হল বুক করা হয়েছে পার্টির জন্য।কয়েকজন মন্ত্রী ও নামি-দামি এমপি চেয়ারম্যানও উপস্থিত এই পার্টিতে।আশিয়ানকে সবাই অনেক সমীহ করে।ওনারা সবাইও ওনাদের বউ নিয়ে এটেন্ড করেছেন পার্টিতে।আশিয়ানের সাথে ওনারা সবাই কোলাকুলি করলেন।কয়েকজন মেয়েও এসে আশিয়ানকে হাগ করলো,যা ঊদিতার মোটেও পছন্দ হলো না।
আশিয়ান ঊদিতার সাথে সবাইকে পরিচয় করিয়ে দিলো।ঊদিতা বিনীতভাবে সবার সাথে সালাম দিয়ে কুশল বিনিময় করলো।আশিয়ানের বন্ধুরা সবাই উপস্থিত ছিলো সেই পার্টিতে।আশিয়ানের কলেজ ও ভার্সিটি লাইফের সব ফ্রেন্ডরা আছে।আজ ইলিয়ানা আর আসাদও এসেছে এই পার্টিতে।ঊদিতার হাত ধরে দাঁড়িয়ে সবার সাথে হাসিমুখে কথা বলছে আশিয়ান।চারপাশে সফট মিউজিক বাজছে।বেলুন টেলুন দিয়ে অনেক সুন্দর করে হল সাজানো হয়েছে।ঊদিতা চোখ ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে চারপাশ দেখছে।ইলিয়ানা আর আসাদ আশিয়ানদের কাছে এসে দাঁড়ালো।আসাদ হাসিমুখে আশিয়ানের সাথে কথা বলছে।আশিয়ানের সাথে ঊদিতাকে দেখে ইলিয়ানা তেলেবেগুনে জ্বলছে।আশিয়ান ইলিয়ানার জেলাসি দেখে পৈশাচিক আনন্দ পাচ্ছে।
ঊদিতাকে আশিয়ানের মেয়ে ফ্রেন্ড ও ছেলে ফ্রেন্ডের ওয়াইফরা নিয়ে গেল।একটা জায়গায় বসে ওরা ঊদিতার সাথে গল্প করতে লাগলো।নেকাব সরিয়ে ঊদিতার চেহারা দেখে সবাই মাশাআল্লাহ বলে উঠে।আশিয়ানের কাছের এক মেয়ে বন্ধু চিত্রা বলে উঠলো;
চিত্রা:-আরে বাহ,,আমাদের আশিয়ানের বউ তো অনেক সুন্দরী!বলতে হবে আশিয়ানের চয়েস খুব ভালো।
অন্য একটা মেয়ে ফ্রেন্ড অর্পা বললো;
অর্পা:-তোমাকে বিয়ে করায় আশিয়ানের ওপর আমরা খুশি।যদি ইলিয়ানাকে বিয়ে করতো তাহলে তার লাইফটাই ধ্বংস হয়ে যেত।তোমাকে দেখেই মনে হচ্ছে একমাত্র তুমিই তার জন্য পারফেক্ট।
আশিয়ানের ফ্রেন্ড তৌহিদের বউ মারিয়া দুষ্টু হেসে বলে উঠে;
মারিয়া:-তুমি তো পিচ্চি একটা মেয়ে!আমাদের আশিয়ান তোমাকে জ্বালায় না তো ঊদিতা?রাতে মনে হয় তার জন্য ঠিকমতো ঘুমাতে পারো না তুমি!তাই না?
ঊদিতার কান দিয়ে ধোঁয়া বের হচ্ছে মনে হয়।আগে ঠিকই জানতো না সে স্বামী স্ত্রীর মধ্যকার সম্পর্কের কথা।কিন্তু সেদিন কেয়া ঊদিতাকে সবকিছু ভেঙে খুলে বলেছে।এখন সে খুব ভালো করেই বুঝতে পারছে ওরা আসলে কী মিন করতে চাচ্ছে!লজ্জায় গালদুটো আর নাকের ডগা রক্তিম বর্ণ ধারণ করলো তার।ছি,, এরা কত অসভ্য!মুখে লাগাম নেই।ঊদিতার লজ্জা পাওয়া দেখে সবাই হাসছে।আসিফের বউ তূর্ণা বললো;
তূর্ণা:-আহারে,,ঊদিতা লজ্জায় লাল হয়ে গেছে পুরো।এই তোমরা আর তাকে লজ্জা দিয়ো না তো।আশিয়ান তো মনে হয় তোমার লজ্জারাঙা মুখ দেখে পুরো ফিদা হয়ে যায় তাই না ঊদিতা?
ওদের আড্ডার মাঝখানে ইলিয়ানা এলো।তাদের আসরে বসে ঊদিতাকে তীক্ষ্ণ নজরে পর্যবেক্ষণ করলো সে কিছুক্ষণ।ইলিয়ানাকে দেখে সবাই কেমন জানি একটু চুপ হয়ে গেল।কারণ এখানে বসা কেউ তাকে পছন্দ করে না।মৃদুস্বরে খোঁচা মেরে বললো;
ইলিয়ানা:-তুমিই তো আশিয়ানের ওয়াইফ?এম আই রাইট?(জানার পরও আবার জানতে চেয়ে)
ঊদিতা শান্ত নজরে ইলিয়ানার দিকে তাকালো।ইলিয়ানাকে সে ঠিকই চিনতে পেরেছে।ঠোঁটে কুটিল হাসি ফুটিয়ে তুলে বললো;
ঊদিতা:-কোনো সন্দেহ আছে?না মানে আমাদের বিয়েতে তো আপনি উপস্থিত ছিলেন।সেই সুবাদে তো আপনার আমাকে চেনার কথা যে আমি বাংলাদেশের বিরাট বড় বিজনেসম্যান আশিয়ান তায়েফ চৌধুরীর ওয়াইফ!
ইলিয়ানা কিছুটা বিব্রত হয়ে পড়লো।সে আসলে ঊদিতাকে হেয় করে জিজ্ঞেস করেছিলো কথাটা।এবার আবারও তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বললো;
ইলিয়ানা:-বাহ,,আশিয়ানের বউ তো দেখছি আশিয়ানের মতোন স্বভাবের।ভালো।তা আশিয়ান বুঝি তোমার রূপ লাবন্য দেখে মুগ্ধ হয়েছে?তো তুমি আশিয়ানের কী দেখে মুগ্ধ হয়ে বিয়ে করলে?টাকা দেখে?(খোঁচা মেরে)
ঊদিতা একটুও বিচলিত হলো না।বরং ইলিয়ানার মুখের ওপর জবাব দিয়ে বললো;
ঊদিতা:-নিজের পাল্লায় সবাইকে মাপতে যাবেন না প্লিজ!আমি আপনার মতো নই যে টাকার জন্য নিজের ভালোবাসার মানুষকে ছেড়ে একটা বয়স্ক লোককে বিয়ে করতে যাবো।কী জানেন তো!আমার বাবা-ভাইয়ের আমাকে খাওয়ানোর মতো যথেষ্ট টাকা পয়সা আছে।তার জন্য আমার টাকাওয়ালা দেখে বিয়ে করতে হবে না।আমি কারও মতো অনাহারী না যে টাকার লোভে যা-তার সাথে বিয়ের পিড়িতে বসে যাবো।দ্যা মেইন ফ্যাক্ট ইজ আই এম অলয়েজ সেল্ফ রেসপেক্টেবল পারসন।কারও টাকার লোভে নিজের আত্মসম্মান নষ্ট করি না।
ইলিয়ানা খেপে গিয়ে বললো;
ইলিয়ানা:-হেই,,ইউ লো ক্লাস গার্ল!সাহস কী করে হলো তোমার আমাকে ইন্ডাইরেক্টলি অপমান করো!একে তো রূপ দিয়ে আশিয়ানকে নিজের জালে ফাঁসিয়েছো আবার বড় বড় কথা!তুমি নিজেও তো আশিয়ানকে কনভিন্স করে কাবিন হিসেবে একটা ডুপ্লেক্স বাসা ও এককোটি টাকা নিয়েছো।কী!আমাকে বোকা মনে করেছো?এমনি এমনি আশিয়ান তোমায় এসব দিয়েছে তাই না।নিজেও তো লোভীর কাতারে আছো!আবার আমাকে অপমান করে!তোমাদের মতো থার্ডক্লাস ফ্যামিলির মেয়েকে আমার অনেক ভালো করে চেনা আছে।
ঊদিতা চারদিকে চোখ বোলালো একবার।ইলিয়ানার দিকে আসরের মেয়েরা বিরক্তি নিয়ে তাকিয়ে আছে।তবে সবাই ঊদিতার জবাব শোনার অপেক্ষা করছে।ঊদিতা আবারও শান্ত কন্ঠে বললো;
ঊদিতা:-নিজেকে অনেক বড় মাপের কেউকেটা গোছের ভাবার কিছু হয়নি এখানে।এত হম্বিতম্বি না দেখালেও চলবে।আপনার চরিত্র সম্পর্কে এখানে বসা সবার ধারণা আছে।আপনার ব্যাপারে আমিও অনেক কিছু শুনেছি কিন্তু বিশ্বাস করতে চাই নি।কারণ আমি জানতাম না কেউ এতটা খারাপ হতে পারে!এখন নিজের চোখে দেখে বিশ্বাস করলাম।সে যাকগে,তো আমার স্বামীকে নিয়ে হঠাৎ এত পসেসিভ হচ্ছেন কেন আপনি?এর পেছনে কী কোনো উদ্দেশ্য আছে আপনার?এত জেলাস হচ্ছেন কেন?আর কী যেন বললেন,লো ক্লাস গার্ল!তো সেটা আসলে কে তা আমরা জানি।আমাকে পিন্চ মেরে নিজের দিকে নিতে হবে না।আর আমি রূপ দিয়ে ওনাকে ফাঁসিয়েছি!তাও ভালো,আমার রূপ আছে, কিন্তু আপনার তো তাও নেই!আর রইলো কাবিন,সেটা ওনি আমাকে খুশি হয়ে দিয়েছেন।আপনার মতো আমি এসব মুখ ফুটে নির্লজ্জের মতো চাই নি।ঐ যে বললাম না সেল্ফ রেসপেক্ট বলে একটা কথা আছে।আপনার তো তাও নেই,,আন্টিইই,,!(খোঁচা দিয়ে)
ইলিয়ানা ধমক দিয়ে বললো;
ইলিয়ানা:-ওহহ,শাটআপ।আমাকে একদম আন্টি বলে ডাকবে না।
ঊদিতা:-আমার স্বামীর পরিচিত আসাদ আঙ্কেলের ওয়াইফ আপনি!তো সেই হিসেবে তো আপনি আমাদের আন্টি হন।ভুল কী বললাম?আপনি কী এখনও নিজেকে কচি মেয়ে ভাবেন নাকি আন্টিই?নিজেকে এত কচি ভাইবেন না প্লিজ,কারণ আপনি একজন বুইড়া আঙ্কেলের বউ।এরবেশি কিছু না।আমি নিজেকে কচি ভাবলে খাটে,কারণ আমি সবেমাত্র ১৬ তে পা রেখেছি।
ইলিয়ানা:-ইউউ,,স্টুপিড গার্ল!তোমায় আমি দেখে নেবো।তোমার সাহস কতবড় আমার সাথে পাঙ্গা নিয়ে কথা বলো!
ঊদিতা:-সাহসের কী দেখলেন?এখনো তো কিছুই দেখাই নি আন্টিই!আমাকে অবলা নারী ভেবে থাকলে মারাত্মক ভুল করেছেন আপনি।আমাকে দেখতে যতটা হেদাই টাইপের মনে হয় আমি মোটেও ততটা হেদাই নই।আমার পরিবারের লোকজন থেকে শুরু করে সবাই জানে আমি নিরীহ কিন্তু আমি কী তা আমি ভালো করেই জানি।নিজের ভয়ঙ্কর রূপ প্রকাশ করতে পছন্দ করি না তাই আপনাকে বেশি কিছু বলি নি।তাই বলে মনে করবেন না আমি সহজ সরল।যাইহোক,আমার স্বামীর থেকে দূরে থাকবেন।নয়তো আমি চাইলে ঠিক কতোটা খারাপ হতে পারি তা চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিবো।আর আমাকে এতই যখন দেখতে ইচ্ছে করবে তখন আমার বাসায় চলে আসবেন,ভালো করে মনের মতোন অভ্যর্থনা দিয়ে মেহমান বিদায় করতে আমার জুড়ি নেই।আশা করি তা আপনারও পছন্দ হবে আন্টিই!
ঊদিতার এত গা জ্বালানো কথা শুনে ও ঠোঁটের কোণে কুটিল হাসি দেখে ইলিয়ানার রাগে সারা শরীর জ্বলছে দাউদাউ করে।এত অপমানিত জীবনেও হয়নি সে।কিন্তু আজ এই এতটুকুন মেয়ের কাছে এত এত খোঁচা কথা শুনে ইলিয়ানার রাগে গলা ছেড়ে কাঁদতে ইচ্ছে করছে।ঊদিতার সাথে কথায় না পেরে ইলিয়ানা গটগট শব্দে এখান থেকে চলে গেল।আশিয়ান এখান থেকে দূরে বসে কয়েকজন গন্যমান্য ব্যক্তিবর্গদের সাথে কথা বলছে তাই এখানে কী হয়েছে না হয়েছে তা সে জানে না।ইলিয়ানা চলে যাওয়ার পর সব মেয়েরা ঊদিতাকে বাহবা দিতে ব্যস্ত হয়ে গেল।সবাই ঊদিতার প্রশংসায় পঞ্চমুখ।শরম থাকলে আর কখনো ইলিয়ানা ঊদিতার সাথে লাগতে আসবে না।ঊদিতা মুচকি হেসে আবার স্বাভাবিক কন্ঠে সবার সাথে আলাপ করতে লাগলো।
এদিকে ইলিয়ানা একটা হুইস্কির গ্লাস হাতে নিয়ে খেতে খেতে ভাবতে থাকলো কীভাবে এই বিচ্ছু মেয়েটার ক্ষতি করা যায়।রাগের জ্বালায় ৩ গ্লাস হুইস্কি সাবাড় করে ফেললো সে।কিছু একটা চিন্তা করে মুখে কুটিল হাসি ফুটে ওঠলো তার।
রাতের ডিনার করছে সবাই একসাথে।বিশাল বড় এক ডাইনিং হলে খাবার খাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে।আশিয়ানের পাশে বসে ঊদিতা খাবার খাচ্ছে।ঊদিতা আর আশিয়ানের সামনাসামনি আসাদ আর ইলিয়ানা বসে খাবার খাচ্ছে।ইলিয়ানা বারবার আশিয়ানের দিকে তাকাচ্ছে।ঊদিতা খেয়াল করলো সেটা।ইলিয়ানা ঊদিতার দিকে ত্যাড়া দৃষ্টিতে তাকাতেই ঊদিতা সবার অলক্ষ্যে ইলিয়ানাকে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে দিয়ে ত্যাছড়া ভাবে হাসলো।ইলিয়ানার শরীর জ্বলতে লাগলো ঊদিতার খোঁচায়।
খাওয়া শেষে সবাই আবারও হলে ফিরে এলো।আর একঘন্টা পর পার্টি শেষ হয়ে যাবে।আশিয়ান অন্য একটা জায়গায় দাঁড়িয়ে বন্ধুবান্ধবদের সাথে কথা বলছে।ঊদিতা হেঁটে হেঁটে একটা টেবিলের কাছে এসে দাঁড়ালো।আশিয়ান খেয়াল করছে না ঊদিতাকে।এমন সময় একটা ওয়েটার এসে ঊদিতার সামনে দাঁড়িয়ে ট্রে বাড়িয়ে ধরে বললো একটা জুসের গ্লাস নিতে।ঊদিতাও কোনোকিছু চিন্তা ভাবনা না করেই একটা গ্লাস হাতে নিয়ে ওয়েটারকে থ্যাংকস বললো।ঊদিতা গ্লাসে এক চুমুক দিতেই স্বাদটা তার কাছে কেমন জানি লাগলো।তারপরও খেলো সে।সে ভেবেছে এটা নতুন কোনো ফ্লেভারের জুস হবে হয়তো।
ঊদিতাকে জুসটা দূর থেকে খেতে দেখে ইলিয়ানা একটা পৈশাচিক হাসি দিলো।কারণ এটা জুস নয়, হাই পাওয়ার্ড বিয়ার যেটা একগ্লাস খেলেই নেশা ধরে যাবে।
ঊদিতা জুসটা খেয়ে থম মেরে দাঁড়িয়ে আছে।চারিদিকে ঝাপসা দেখছে সে।ঊদিতার কাছে মনে হচ্ছে সব মানুষগুলো যেন চরকার মতো ঘুরছে।মানুষ ঘুরছে না তার মাথা ঘুরছে বুঝতে পারছে না সে।তবে চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে সে একজায়গায়।হঠাৎ আশিয়ানের চোখ গেল একটু দূরে দাঁড়ানো ঊদিতার দিকে।ঊদিতা কেমন জানি চুপচাপ দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ঢুলছে সেটা দেখে আশিয়ান পায়ে পায়ে এগিয়ে এলো তার কাছে।এসে জিজ্ঞেস করলো;
আশিয়ান:-ঊদিতা,,আর ইউ ওকে?
ঊদিতা ফ্যালফ্যাল করে আশিয়ানের দিকে তাকিয়ে আছে।যেন বুঝতে পারছে না আশিয়ান কী বলছে।ঊদিতার হাতের গ্লাসটার দিকে নজর পড়লো আশিয়ানের।ঊদিতা বেক্কলের মতো দাঁত কেলিয়ে হাসলো আশিয়ানের দিকে তাকিয়ে।আশিয়ান ঊদিতার কর্মকাণ্ড দেখে যারপরনাই বিস্মিত হলো।কারণ ঊদিতাকে সে কখনো দাঁত কেলিয়ে হাসতে দেখে নি।আজই প্রথম।
আশিয়ানের এবার সন্দেহ হলো ঊদিতার ওপর।এরকম অদ্ভুত বিহেভিয়ারের কারণ খুঁজে পাচ্ছে না সে।কিছু একটা মনে হতে গ্লাসের কাছে নাক নিয়ে শুঁকলো সে।শুঁকতেই অবাক হয়ে গেল।কারণ ঊদিতা বেশি পাওয়ারফুল মদ খেয়েছে।আশিয়ান মদ খাওয়ার সুবাদে প্রায় সবরকমের মদই চেনে।সব মদের মধ্যে এইটা অনেক ডেঞ্জারাস।একবার একগ্লাস খেয়ে আশিয়ান টাইট হয়ে গেছিলো।লেবুর শরবত তেঁতুল গোলা পানি খাওয়ার পরও তার মদের নেশা পুরোপুরি কাটে নি।কী পাগলামিটাই না করেছে সে এটা খেয়ে।এসব কথা ভাবতেই আশিয়ানের গা কাটা দিয়ে উঠছে।সে জায়গায় ঊদিতা এটা খেয়েছে।না জানি সে কী পাগলামি করে।
আশিয়ান:-ওহহ,,মাই,,গড,,।ঊদিতা এটা কী করলে তুমি?এটা কে দিয়েছে তোমায়?
ঊদিতা হুশে নেই।সে কী বলছে নিজেও জানে না।
ঊদিতা:-আমার শ্বশুর আব্বা দিয়ে গেছে।বলেছে এটা তোমার গিফট।তুমি এটা খাও।
আশিয়ান ঊদিতার কথা শুনে হাসবে না কাঁদবে বুঝতে পারছে না।তবে জলদি বাসায় যাওয়ার তাগিদ অনুভব করলো সে।এই মুহূর্তেই বাসায় যেতে হবে।নয়তো ঊদিতা কোনো গন্ডগোল পাকিয়ে ফেলবে।
আশিয়ান:-তুমি এখানেই থাকো আমি আসছি।কোত্থাও যাবে না কিন্তু।
ঊদিতা:-আচ্ছা।আমি চান্দের দেশে চলে যাবো।আপনি প্লেন নিয়ে আসেন।
আশিয়ান ঊদিতার কথায় পাত্তা না দিয়ে জলদি গিয়ে যে লোকটা পার্টি এরেন্জ করেছে তার কাছে গিয়ে বিদায় নিয়ে তারপর সবার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে ঊদিতাকে কোনো কথা বলতে না দিয়ে তার হাত শক্ত করে ধরে বাইরে বেরিয়ে এলো।গাড়ির সামনে যেতেই ঊদিতা বাচ্চাদের মতো বায়না ধরে বললো;
ঊদিতা:-আমি এই কাইল্লা মার্কা গাড়িতে যাব না।আমি প্লেন দিয়ে যাবো।
আশিয়ান বুঝলো যে ঊদিতা হুঁশে নেই তাই সে ঊদিতাকে জোর করে কোলে নিয়ে গাড়িতে বসিয়ে দিয়ে সিটবেল্ট বেঁধে দিলো।ঊদিতা একবার বিরবির করছে,একবার জোরে হাসছে,একবার ঠোঁট উল্টাচ্ছে তো একবার পাগলের মতো বিলাপ করছে।
আশিয়ান দ্রুত গাড়ি চালাচ্ছে।জলদি বাসায় গিয়ে লেবু জল,তেঁতুল গোলা পানি এসব খাওয়াতে হবে।নয়তো সর্বনাশ হয়ে যাবে।আশিয়ান খুব ভালো করে বুঝতে পারছে এই কাজের পিছনে ইলিয়ানার হাত আছে।নয়তো ঊদিতা মদ কী তা চেনেই না সেখানে এসব খেতে যাওয়া স্বপ্ন ব্যতিত আর কিছু নয়।আশিয়ান আক্ষেপ করছে বারবার।সে নিজেকে দোষারুপ করছে যদি ঊদিতাকে নিজের কাছে কাছে রাখতো তাহলে এমনটা হতো না।
চলবে…🍃
#তোমাতে বিলীন
#লেখিকা—আমায়া নাফশিয়াত
#পর্ব—|| ২৪ ||
গাড়িতে সারা রাস্তা পাগলামি করলো ঊদিতা।তার নেশা পুরোপুরি চড়ে গেছে।আশিয়ান টেনশনে শেষ।প্রায় উড়ে উড়ে যেন ঊদিতাকে নিয়ে বাসায় আসলো আশিয়ান।সবাই সবার রুমে আছে।নিচে সার্ভেন্ট ব্যতিত আর কেউ নেই তাই ঊদিতাকে নিয়ে খুব সহজেই নিজের রুমে চলে এলো সে।রুমে এসে ঊদিতাকে বিছানায় বসিয়ে দিয়ে নিজের কোট ওয়াচ সব খুলে টেবিলের ওপর ফোন রেখে একটা ওড়না দিয়ে ঊদিতার দুহাত বেঁধে দিলো যাতে সে পাগলামি না করে।ঊদিতাকে চুপচাপ বসতে দেখে সে নিচে রান্নাঘরে গেল ঊদিতার জন্য তেতুল গোলা পানি বানিয়ে আনতে।
ঊদিতা এমনিতেই পাগলের মতো হাসতে হাসতে লুটোপুটি খাচ্ছে।জোরে এক উল্টো টান মারতেই ওড়না ঢিলা হয়ে গেল।ঊদিতা ওড়না খুলে নিচে ফেলে দিয়ে আশিয়ানের কাবার্ড খুললো।তারপর সেখান থেকে সব শার্ট প্যান্ট এখানে সেখানে ছুড়ে ফেলতে ফেলতে সবশেষে আশিয়ানের ব্যবহৃত একটা পাতলা একদম হালকা ঘি কালার শার্ট তার পছন্দ হলো।শার্টটা নিয়ে সে রুমের ভেতরই নিজের গা থেকে কাপড় চোপড় সব খুলে ছুড়ে ফেলে দিয়ে শার্টটা পড়ে নিলো।শার্টের বোতাম উল্টা পাল্টা করে লাগিয়েছে সে।
জোশের ঠেলায় আশিয়ানের রুমের গান শোনার স্পিকার বক্স অন করে ফেললো সে।রুমে বেশ উচ্চস্বরে গান বাজছে।যদিও রুম সাউন্ড প্রুফ হওয়ায় বাইরে অন্য কারও কানে সাউন্ড যাবে না গানের।
আশিয়ান খুব দ্রুত তেঁতুলের জুস বানিয়ে জলদি রুমে ফিরে এলো।রুমে ঢুকে রুমের এ অবস্থা দেখে হতবাক হয়ে গেছে সে।কিছু বলার মতো নেই তার।এটাকে দেখে রুম মনে হচ্ছে না মনে হচ্ছে কোনো মাছ বাজারে ভুল করে ঢুকে পড়েছে সে।সেন্টার টেবিলের ওপর গ্লাসটা রেখে ঊদিতাকে খুঁজতে লাগলো তার চোখ জোড়া।রুমের কোথাও দেখা যাচ্ছে না তাকে।
‘কোথায় গেল মেয়েটা?উফফ,,,মাথাটা নষ্ট করে দিলো পুরো!কোন আক্কেলে যে একা ছেড়েছিলাম তাকে!এখন নিজের মাথা নিজেই ফাটাতে ইচ্ছে করছে আমার!’বিরবির করে বলে আশিয়ান।
জোরে জোরে গান বাজছে,, “মেইন লারকি সিধি সাধি সি,,, বোটল পি লি হে আধি সি”
এমন সময় হেলেদুলে বারান্দার ভারী পর্দার আড়াল থেকে বেরিয়ে এলো ঊদিতা।আশিয়ান ঊদিতার দিকে তাকিয়ে থমকে গেল।অজান্তেই একটা ফাঁকা ঢোক গিললো সে।ঊদিতাকে এমন রূপে কখনো দেখে নি সে এর আগে।
নরমালি চুল ছাড়া অবস্থাতেই ওকে দেখলে নেশা লেগে যেত আশিয়ানের,,সেখানে আজ ঊদিতার পরনে আশিয়ানের ফিনফিনে পাতলা একটা শার্ট যার ভেতর থেকে ডার্ক এশ কালারের অন্তর্বাসগুলো স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে।এর মধ্যে আবার তার কোমড় অবধি চুলসব ছেড়ে দেয়া।শার্টের ওপরের দুটো বোতাম খোলা বিধায় শার্টের হাতা কাঁধ বেয়ে নিচে পড়ে আছে।ঊদিতা এমনিতেই চিকনা চাকনা মেয়ে তার মাঝে আশিয়ানের মতোন বডিবিল্ডার একটার শার্ট পড়েছে।ঢিলাঢালা তো হবেই।
শার্টটা ঊদিতার হাঁটু অবধি ঝুলে আছে।এর নিচে ধবধবে ফর্সা পা দেখা যাচ্ছে তার।আশিয়ানের মাথা ঘুরে উঠে ঊদিতার এমন অবস্থা দেখে।নিজেকে অনেক কষ্টে কন্ট্রোল করে ঊদিতার কাছে যেতে লাগলো সে।ঊদিতা গানের তালে তালে পাগলের মতো হাসছে আর লাফাচ্ছে।সে মোটেও নিজের হুঁশে নেই।আশিয়ান কাছে আসার আগেই ঊদিতা আশিয়ানের কাছে এসে আশিয়ানের শার্টের কলার খামচে ধরে মাতাল কন্ঠে বললো;
ঊদিতা:-শালা,,এত সুন্দরী বউ রেখে এক্সের সাথে পিরিত করোস!এত্ত কিসের প্রেম রে তোর এক্সের জন্য?আমাকে কী চোখে লাগে না?হে?এখনও এক্স ছাইড়া গেছে দেইখা শোক দিবস পালন করোস?তোর সাতজন্মের কপাল আমার মতো মেয়ে তোর বউ হইছে,,নইলে তোর মতো ছ্যাঁকাখোরকে কে বিয়ে করতো!বল!খবিশ পোলা!(পাগলের মতো বিরবির করে)
ঊদিতার বলা কথা শুনে আশিয়ান রাগে দাঁত কিড়মিড়িয়ে হাত মুষ্টি বদ্ধ করে নিজেকে শান্ত করলো।মনকে শান্তনা দিয়ে বললো;
আশিয়ান:-ওহহ,,আশিয়ান কন্ট্রোল ইউরসেল্ফ!ও এসব নেশার ঘোরে বলছে!নইলে ঊদিতা এমন না।ও খুব ভালো মেয়ে।
ঊদিতা আশিয়ানের গলা জড়িয়ে ধরে ঢুলে ঢুলে আশিয়ানের গালে চুমু খেয়ে বললো;
ঊদিতা:-কোনো মেয়ের দিকে চোখ তুলে খালি তাকিয়ে দেখিস!তোর চোখ দুইটা খুলে নিয়ে জাদুঘরে রাখমু!চিনিস না তো তুই আমারে আমি কে?আমি,,হিক,,,ঊদি,,,হিক,,,(হেঁচকি দিয়ে)
আশিয়ান ঊদিতাকে জোর করে নিজের বুকের সাথে জড়িয়ে ধরে শান্ত কন্ঠে বললো;
আশিয়ান:-ঊদিতা!এরকম পাগলামি করে না তো!তুমি না এত ভালো মেয়ে!তাহলে আজ এরকম করছো কেন?আসো একটা মজা খাওয়াবো তোমাকে!
ঊদিতা:-কীসের,,হিক,,মজা,,?(ঢুলতে ঢুলতে)
আশিয়ান:-খেয়ে দেখোই না কীসের মজা?
এই বলে আশিয়ান ঊদিতাকে দুহাত দিয়ে আগলে ধরে ধরে সেন্টার টেবিলের কাছে নিয়ে এলো।তারপর গ্লাসটা হাতে নিয়ে ঊদিতাকে ছলেবলে কৌশলে শরবতটা জোর করে খায়িয়ে দিলো।এটা খাওয়ার পর হড়হড় করে ঊদিতা আশিয়ানের গায়ে বমি করে ভাসিয়ে দিলো।আশিয়ান হতভম্ব হয়ে গেছে পুরো।ইয়াক কী বিশ্রী গন্ধ করছে শরীরে।আশিয়ান জলদি ঊদিতাকে বিছানায় বসিয়ে একদৌড়ে ওয়াশরুমে চলে গেল।আশিয়ান কখনোই এমন বাজে পরিস্থিতিতে পড়ে নি।আজ এভাবে হেনস্তা হতে হবে ভাবতে পারে নি সে।
ঊদিতা বমি করে দূর্বল শরীর বিছানায় এলিয়ে দিলো।তারপরও নেশা কাটছে না তার।কী একটা অবস্থা।ঊদিতা এখনও পাগলের মতো বিরবির করছে।একবার আশাকে গালি দিচ্ছে,একবার আলেয়াকে বকছে,একবার আশিয়ানের চৌদগুষ্টি উদ্ধার করছে তো একবার ইলিয়ানার পিন্ডি চটকাচ্ছে।শান্তি পাচ্ছে না যেন সে।
আশিয়ান শাওয়ার সেড়ে ওয়াশরুম থেকে খালি গায়ে কোমড়ে একটা টাওয়েল জড়িয়ে বেরিয়ে এলো।ঊদিতা বিছানায় চিৎ হয়ে শুয়ে শুয়ে পা দোলাচ্ছে।ভালো নেশায় পেয়েছে তাকে।কখন যে এই নেশা ছুটবে জানা নেই আশিয়ানের।আশিয়ান একটা শর্ট টাউজার পড়ে নিচ থেকে একজন সার্ভেন্টকে নিয়ে এলো।সার্ভেন্ট এসে রুম পরিষ্কার করে দিয়ে গেল।আশিয়ান এবার ঊদিতার দিকে নজর দিলো।ঊদিতা হেসেই যাচ্ছে।কোনো থামাথামি নেই।আশিয়ান এবার ঊদিতার কাপড় পাল্টানোর তাগিদ অনুভব করলো কারণ ওর পরনের শার্টটাও বমিতে ভরে গেছে।
আশিয়ান আলমারি থেকে একটা নাইটি নিয়ে এলো।এখন সেলোয়ার-কামিজ পড়াতে গেলে আরও ঝামেলা পোহাতে হবে তাই শর্টকাট বুদ্ধি করে নাইটি পড়ানোর চিন্তা করলো সে।
ঊদিতার পাশে বসে দুরুদুরু বুকে ঊদিতার শার্টের বোতামে হাত দিলো আশিয়ান।কেমন জানি একটা সংকোচ অনুভব হচ্ছে তার।নিজেকে কেন যেন পাগল পাগল মনে হচ্ছে।এত চিন্তা ভাবনা না করে লম্বা একটা শ্বাস নিয়ে দ্রুত ঊদিতার পরনের শার্টটা খুলে ফেললো সে।তারপর আরও দ্রুত নাইটিটা পড়িয়ে দিলো।ঊদিতা বুঝতেই পারছে না যে কেউ তার পরনের জামা চেঞ্জ করে দিয়েছে।আশিয়ান ঊদিতাকে একটা বালিশে শোয়ানোর চেষ্টা করলো কিন্তু তার আগেই ঊদিতা শোয়া থেকে ওঠে বসে গেছে।
আশিয়ান জোর করে ঊদিতাকে নিজের কাছে টেনে নিলো।কিন্তু ঊদিতা আশিয়ানের হাতে নিজের ছোট ছোট ইদুরে দাঁত দিয়ে কুট্টুস করে কামড় বসিয়ে দিয়ে ততক্ষণে আশিয়ানের ধরাছোঁয়ার বাইরে চলে গেছে।আশিয়ান দাঁতে দাঁত চেপে কামড়টা সহ্য করলো।মেয়েটা এত বিচ্চু জানা ছিলো না তার।মদ খাওয়ার পর যেন আসল চেহারা বেরিয়ে আসছে তার।
ঊদিতা পুরো রুম জুড়ে চরকার মতো লা লা লা লা বলে ঘুরছে।ঘুরতে ঘুরতে ঠাস করে মাটিতে পড়ে গেল সে।ঊদিতা বাচ্চাদের মতো ইনোসেন্ট চেহারা করে ঠোঁট উল্টে বললো;
ঊদিতা:-যাহ,,,পড়ে গেলাম!
আশিয়ান রাগের ঠেলায় গমগমে গলায় বললো;
আশিয়ান:-খুব ভালো হয়েছে।আমি খুশি হয়েছি।
ঊদিতা চোখ ছোট ছোট করে আশিয়ানের দিকে তাকিয়ে বললো;
ঊদিতা:-গম্ভীরমুখো বলদ একটা!জীবনে তো হাসতে পারোস না,,,এখন আসছিস আমার মতো বাচ্চাকে খোঁচা দিতে তাই না?এক থাবড় মাইরা আন্ধাইর কইরা দিমু!চিনোস আমারে?
আশিয়ান:-শাটআপ,,,তোমার সাহস তো কম নয় আমার সাথে গলাবাজি করে কথা বলো আবার আমাকে ইনসাল্ট করো!এক আছাড় মারবো তুলে বেয়াদব মেয়ে!(ধমক দিয়ে)
ঊদিতা ভেঙচি কেটে ঢুলুঢুলু কন্ঠে বললো;
ঊদিতা:-সাহস থাকলে মেরে দেখা।তোর হাড্ডি যদি গুঁড়া না করছি আমি!আমাকে আইসা ধমক মারে!এত সাহস কে দিসে তোরে?হে?চাকর চাকরের মতো থাকবি,,মনে রাখিস আমি তোর মালকিন!(চুল দুহাত দিয়ে মুঠ করে ধরে)
আশিয়ান:-হোয়াটট?এসব কী বলছে পাগল মেয়ে?মাথা খারাপ নাকি!দূর যা আমিও আরেক পাগল,,মাতালের সাথে আমিও কীসব কথা বলছি।ও নিজের হুঁশে এসব বলছে না।মদ খেয়ে ওর এই অবস্থা।
আশিয়ান নিজেকে বুঝ দিয়ে বসা থেকে ওঠে স্পিকার বক্স অফ করে দিলো।তারপর এগিয়ে এসে ঊদিতার পাশে নরম কন্ঠে বললো;
আশিয়ান:-ঊদিতা!তুমি না অনেক ভালো মেয়ে!
ঊদিতা আশিয়ানের মুখের কথা কেঁড়ে নিয়ে বললো;
ঊদিতা:-আমি জানি আমি ভালো মেয়ে!তোর বলতে হবে না!তুই যা তোর এক্সের কাছে।তোর এক্স তোর জন্য কুত্তার মতো ভেউভেউ করে কাঁদছে।(ঢুলে ঢুলে)
আশিয়ান নিজের কপালে চাপড়াচ্ছে ঊদিতার কথা শুনে।কী এক্স এক্স লাগিয়ে রাখছে।আশিয়ানের মেজাজ খারাপ হয়ে যাচ্ছে প্রায়।নাহ সোজা আঙ্গুলে ঘি উঠবে না।ঊদিতা এত ইজিলি ঘুমাবে না।তাই আশিয়ান নিজের চেস্ট অফ ড্রয়ার খুলে সেখান থেকে ফার্স্ট এইড বক্সটা নিয়ে খুলে কাঙ্ক্ষিত জিনিসটা খুঁজতে লাগলো।অবশেষে পেয়ে গেল একটা ঘুমের ইনজেকশন।
ইনজেকশন প্যাকেট থেকে বের করে আশিয়ান আস্তে ধীরে এগিয়ে এলো ঊদিতার দিকে।ঘুমের ইনজেকশন না দিয়ে উপায় নেই নয়তো সারারাত পাগলামি করে নিজেও ঘুমাবে না আশিয়ানকেও ঘুমাতে দেবে না।কালকে সকালে তার অফিসে যেতে হবে।জরুরি একটা মিটিং আছে।আশিয়ান ঊদিতার কাছে গিয়ে বসে ঊদিতাকে নিজের দিকে টেনে নিয়ে চালাকি করে ঊদিতার বামহাতের বাহুতে ইনজেকশনটা পুশ করে দিলো।
ঊদিতা আশিয়ানের বুকে জোরে জোরে কিল মারছে।আশিয়ান ইনজেকশনটা দূরে ফেলে দিয়ে ঊদিতার দুহাত নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে নিলো।ঊদিতা পাগলা ষাঁড়ের মতো ছটফট করতে করতে একসময় নিস্তেজ হয়ে পড়লো।চোখ দুটো ঘুমে ঢুলছে তার।আশিয়ান বুঝলো ইনজেকশনে কাজ করতে শুরু করে দিয়েছে।
একটু পর ঊদিতা আশিয়ানের বুকে ঢলে পড়ে।আশিয়ান দুহাত দিয়ে আগলে নিলো তাকে নিজের বুকে।তারপর কোলে নিয়ে বিছানায় ঠিক মতোন শুয়িয়ে দিলো তাকে।দরজা, জানালা সব ভালো মতোন লক করে ঊদিতার পাশে এসে নিজেও শুয়ে পড়লো সে।ঊদিতার নিষ্পাপ মুখখানার দিকে তাকিয়ে রইলো সে পলকহীন ভাবে।সে বিশ্বাসই করতে পারছে না যে এই ঊদিতা এরকম পাগলামি করেছে।আশিয়ান খুব ভালো করে বুঝতে পারছে যে ইলিয়ানা এরকম করেছে ঊদিতার সাথে।চিত্রার কাছে শুনেছে ঊদিতা কীভাবে শান্ত কন্ঠে ইলিয়ানাকে অপমান করেছে।সব তার কানে এসেছে।আশিয়ান ঠোঁটের কোণে বাঁকা হাসি ফুটিয়ে মাহবুবকে ফোন করে একটা কাজ করে দিতে বললো।
ফোনে কথা বলা শেষে আশিয়ান ঊদিতার বুকে মাথা রেখে শান্তিতে চোখ বন্ধ করে ঘুমিয়ে গেল।
💭💭💭
সকালে ঘুম থেকে ওঠে গেল আশিয়ান।মসজিদে গিয়ে ফজরের নামাজটা আদায় করে নিলো।ইনজেকশনের প্রভাবে ঊদিতা এখনও মরার মতো ঘুমাচ্ছে।তাই আশিয়ান জাগালো না ঊদিতাকে।নিত্যদিনকার মতো ব্যায়াম করে গোসল সেড়ে নিচে নাশতা করতে চলে এলো।সবাই ডাইনিং রুমে উপস্থিত একমাত্র ঊদিতা বাদে।
মিসেস ইয়াসমিন ঊদিতার কথা জিজ্ঞেস করতেই আশিয়ান বললো যে তার শরীর খারাপ।এখনও ঘুমিয়ে আছে তাই সে জাগায় নি।কেয়া আর এনা তৎক্ষনাৎ ঊদিতাকে গিয়ে দেখে আসলো।মিসেস ইয়াসমিন এবং মিসেস তারানাও গিয়ে দেখে আসলেন তাকে।তাও ঊদিতা ঘুম থেকে জাগে নি।সবাই বেশ চিন্তায় পড়ে গেল।আশিয়ান তাদেরকে আশ্বস্ত করে বললো তেমন কিছু হয়নি।জাস্ট ওর শরীরটা দুর্বল।ঘুমালেই ঠিক হয়ে যাবে।আশিয়ানের কথায় সবাই আশ্বস্ত হয়ে ব্রেকফাস্ট করে নিলো।
আশিয়ান নাশতা করা শেষে রুমে গিয়ে রেডি হয়ে গেল অফিসে যাওয়ার জন্য।পুরোপুরি তৈরি হয়ে গাড়ির চাবি ও ফোন হাতে নিয়ে ঊদিতার কাছে গিয়ে উবু হয়ে ঊদিতার কপালে আলতো ভাবে একটা চুমু খেয়ে নিচে চলে এলো।তারপর দ্রুত বাসা থেকে বেরিয়ে গাড়ি নিয়ে অফিসের উদ্দেশ্যে রওনা দিলো।
প্রায় এগারোটার দিকে ঘুম ভাঙলো ঊদিতার।চোখ পিটপিট করে চারপাশে তাকালো সে।ঘড়ির দিকে চোখ পড়তেই দ্রুত শোয়া থেকে ওঠে বসলো ঊদিতা।বুঝতে পারলো না এত বেলা হলো কখন!কেউ তাকে ডাকলোও না।নামাজটাও মিস গেল।আর আশিয়ানই বা কোথায়?মাথাটাও কেমন জানি তার ভার ভার লাগছে।শরীরটা বেশি দুর্বল লাগছে কেন জানি!কিছুই বুঝতে পারছে না ঊদিতা।
চিন্তিত ভঙ্গিতে বিছানা ছেড়ে ওঠে নিজের দিকে তাকিয়েই চমকে গেল সে।তার পরনে একটা শর্ট নাইট ড্রেস।আর কিছুই নেই।ছি,,,এই অবস্থায় সে আশিয়ানের সামনে ছিলো!ভাবতেই পারছে না ঊদিতা।লজ্জায় তার মাথা কাটা যাচ্ছে।কাপড় চোপড় সাথে নিয়ে জলদি ওয়াশরুমে গিয়ে একদম গোসল করে বের হলো ঊদিতা।শরীরটা এখন কিছুটা ঝরঝরে মনে হচ্ছে।সারা রুম অগোছালো হয়ে আছে দেখে ঊদিতা একটু অবাকই হয়েছে।সে বুঝতে পারছে না রুমের এমন অবস্থা কী করে হলো?অতশত চিন্তা না করে সারা রুম গোছালো সে।
সবকিছু পরিপাটি করে মাথায় ওড়না প্যাঁচিয়ে নিচে চলে এলো সে।বাসায় ছেলেমানুষ একজনও নেই।সবাই কাজে নয়তো ক্লাসে চলে গেছে।এনারও আজকে ক্লাস আছে।তাই সকালেই চলে গেছে সে।বাচ্চা দুটো স্কুলে।বাসায় শুধু আলেয়া,তারিন,কেয়া,মিসেস ইয়াসমিন,মিসেস তারানা আর সে-ই আছে।
ঊদিতা রান্নাঘরে গিয়ে মিসেস ইয়াসমিনকে পেল।মিসেস ইয়াসমিন ঊদিতাকে দেখে দ্রুত এগিয়ে এসে ব্যাকুল হয়ে ঊদিতার কপাল ও গলায় হাত দিয়ে চেক করে দেখলেন জ্বর এসেছে কিনা।
মিসেস ইয়াসমিন:-মা তোর বুঝি শরীর খারাপ?কী হয়েছে তোর?কালকে তো ভালো অবস্থায়ই পার্টিতে গেলি!
ঊদিতা অনিশ্চিত ভঙ্গিতে কাঁধ ঝাঁকিয়ে বললো;
ঊদিতা:-কী জানি মা বুঝতে পারছি না কিছু।কালকে কি করে বাসায় এলাম কিছুই জানি না।ওনাকে জিজ্ঞেস করলে তবে জানতে পারবো আসলে কী হয়েছে!তবে শরীরটা ভীষণ ম্যাজম্যাজ করছে মা!আর মাথাটাও ভার ভার লাগছে।
মিসেস ইয়াসমিন ব্যস্ত হয়ে ঊদিতাকে ডাইনিং টেবিলে নিয়ে এসে একটা চেয়ারে বসালেন তাকে।ঊদিতাও বাধ্য মেয়ের মতো চুপচাপ বসে পড়লো।
মিসেস ইয়াসমিন:-তুই এখানে বসে থাক তো মা,,আমি তোর জন্য এককাপ কড়া লিকারের চা আর কিছু ভারী খাবার নিয়ে আসি।
মিসেস ইয়াসমিন রান্নাঘরে চলে গেলেন ঊদিতার জন্য খাবার আনতে।ঊদিতা চুপচাপ বসে রইলো।কিছুসময় পর মিসেস ইয়াসমিন একটা ট্রে হাতে নিয়ে রান্নাঘর থেকে বেরিয়ে এলেন।ট্রেতে রাখা কাপ ও বাটি থেকে গরম ধোঁয়া বেরোচ্ছে।ট্রে টা টেবিলের ওপর রেখে মিসেস ইয়াসমিন ঊদিতার সামনে একটা চেয়ার টেনে বসলেন।তারপর গরুর মাংসের বিরিয়ানির প্লেট হাতে নিয়ে ঊদিতাকে মুখে তুলে খায়িয়ে দিতে লাগলেন।ঊদিতাও বিনাবাক্যব্যয়ে গপগপ করে খেয়ে যাচ্ছে।আসলেই তার প্রচুর খিদে পেয়েছে।জানে না সেটা কী করে বুঝলেন তিনি।
বিরিয়ানি খাওয়া শেষে গরম গরম চা খেল সে।এবার শরীরটা একটু ভালো লাগছে তার।শরীরে শক্তি ফিরে এসেছে।ঊদিতা মিসেস ইয়াসমিনকে জড়িয়ে ধরে গালে চুমু খেলো।মিসেস ইয়াসমিন ঊদিতার মাথায় হাত বুলিয়ে দিলেন মুচকি হেসে।
ঊদিতা ছাদে চলে এলো কবুতরদের দেখার জন্য।কবুতরদেরকে দানা ও গম খেতে দিলো সে।তারপর ছাদে একটু ঘুরাঘুরি করে নিচে তার সবজি বাগানে চলে গেল।হোসপাইপ দিয়ে সারা বাগানে পানি ছিটিয়ে আবারও রুমে ফিরে এলো সে।তারপর মিসেস তারানাকে ডেকে নিয়ে এলো নিজের রুমে সেলাই শিখবে বলে।মিসেস তারানা খুশিমনে ঊদিতাকে সেলাইয়ের ধাপগুলো দেখিয়ে দিতে লাগলেন।আজকে ঊদিতা মিসেস তারানার কাছ থেকে কাপড় কাটা শিখলো।দু ঘন্টা টানা কাজ করে কাপড় কাটা শিখতে সক্ষম হয়েছে সে।
যোহরের নামাজ আদায় করে তারপর পুঁথি দিয়ে আরও একঘন্টা লাগিয়ে একঝুটা স্ট্রবেরি বানালো সে।পুঁথি দিয়ে অনেক কিছু তৈরি করতে পারে ঊদিতা।এগুলো সে তার মায়ের কাছ থেকে শিখেছে।আলেয়া আর তারিন বাদে বাকিরা ঊদিতার প্রচুর প্রশংসা করলো।ঊদিতা কেয়াকে সেটা গিফট করে দিলো।কেয়া তো পুঁথি দিয়ে বানানো স্ট্রবেরি পেয়ে দারুণ খুশি।সে তার রুমের দরজার সামনে সেটা ঝুলিয়ে রেখে দিলো।সৌন্দর্য বর্ধন করছে এটি।
আসরের নামাজ পড়ে ঊদিতা ঘুমিয়ে গেল।মাথাটা ঘুরছে খালি তার।তাই আজ আর রান্নাঘরে যায় নি।সন্ধ্যার নাশতাও খায়নি সে।কেয়া একবার এসে ডেকে গেছিলো।কিন্তু ঊদিতার এতই অলস লাগছে যে উঠতে ইচ্ছে করছে না।আশিয়ান মায়ের ফোনে কল দিয়ে ঊদিতার খোঁজ খবর নিলো।
ঊদিতা বাধ্য হয়ে ঘুম থেকে ওঠে মাগরিবের নামাজটা আদায় করে আবারও শুয়ে পড়লো।মাথাটা শুধু ভনভন করছে তার।কাল কী এমন হলো যে তার এত শরীর খারাপ লাগছে!হিসাব মিলাতে পারলো না ঊদিতা।
রাত প্রায় দশটার সময় আশিয়ান বাসায় ফিরলো।ঊদিতা বিছানায় চুপচাপ বসে আছে।আশিয়ান রুমে ঢুকতেই সে দ্রুত বসা থেকে ওঠে দাঁড়িয়ে আশিয়ানকে সালাম দিলো।আশিয়ান সালামের জবাব দিয়ে গমগমে গলায় ঊদিতাকে জিজ্ঞেস করলো;
আশিয়ান:-তোমার শরীর কেমন এখন?
ঊদিতা:-জ্বী,, ভালো।
আশিয়ান:-ঠিক আছে।
আশিয়ান গোসল করতে ওয়াশরুমে চলে গেল একটা টাওজার হাতে নিয়ে।ঊদিতা একটা গেঞ্জি আর একটা টাওয়েল কাভার্ড থেকে বের করে বিছানার ওপর রেখে নিচে চলে গেল।রান্নাঘরে গিয়ে আশিয়ানের জন্য একমগ কফি বানালো সে।তারপর কফির মগ হাতে নিয়ে রুমে ফিরে এলো সে।ঊদিতা রুমে আসার মিনিট খানেক পর গোসল সেড়ে বেরোলো আশিয়ান।বিছানা থেকে গেঞ্জি নিয়ে সেটা পড়ে ফেলে বিছানায় বসলো।ঊদিতা সবসময়কার মতো টাওয়েল দিয়ে আশিয়ানের চুল ভালো করে মুছে দিয়ে কফির মগ এগিয়ে দিলো।আশিয়ান কফির মগ হাতে নিয়ে বললো;
আশিয়ান:-অসুস্থ অবস্থায় রান্নাঘরে গেলে কেন?শুয়েবসে রেস্ট নিতে পারতে!
ঊদিতা:-জ্বী না,,আমি এখন ঠিক আছি।আচ্ছা রাতে আমরা পার্টি থেকে ফিরলাম কখন?আমারই বা কী হয়েছিলো?আমার মনে আছে আমি জুস খাওয়ায় ছিলাম।তারপর কী হয়েছে আর বলতে পারি না।
আশিয়ান গলা খাঁকারি দিয়ে শান্ত কন্ঠে বললো;
আশিয়ান:-তোমার মাথা ঘুরে গেছিলো।হয়তো শরীর দুর্বল এজন্য।আমি তোমায় বাসায় নিয়ে চলে এসেছিলাম।তুমি সেন্সলেস ছিলে বিধায় তোমায় বলতে পারো না কী হয়েছে!বাসায় এসে তোমাকে বিছানায় শুয়িয়ে দিয়েছিলাম।তুমি ঘুমিয়ে পড়েছিলে।(মিথ্যা বলে)
সত্যি বললে ঊদিতা অনেক কষ্ট পেত।যে মেয়ে মদ চেনে না সে মদ খেয়ে রাতে যা বেয়াদবি করেছে এসব শুনলে সে নিজেই হার্টফেল করবে।তাই আশিয়ান বিষয়টা খুব সুক্ষ্ম ভাবে এড়িয়ে গেল।ঊদিতা বুঝতে পারলো না যে আশিয়ান মিথ্যা বলছে।সে নিচুস্বরে বলে উঠে;
ঊদিতা:-ওহহ!আচ্ছা তাহলে আমার ড্রেস কে চেঞ্জ করে দিয়েছে?(জানতে চেয়ে)
আশিয়ান নির্বিকার ভাবে জবাব দিলো;
আশিয়ান:-আমি চেঞ্জ করে দিয়েছি।
ঊদিতা অবাক হয়ে বলে উঠে;
ঊদিতা:-কীই?আপনি ড্রেস চেঞ্জ করেছেন মানে?
আশিয়ান:-সো হোয়াট?আমিই তো!অন্যকোনো পরপুরুষ তো আর নই!তোমারই স্বামী!আর তোমাকে সবরকম ভাবে দেখার অধিকার আমার আছে।আশা করি বুঝতে পেরেছো!
ঊদিতা লজ্জায় রাঙা হয়ে গেছে।সে ভাবতেই পারছে না যে আশিয়ান তাকে এরকম অবস্থায় দেখেছে।
আশিয়ান:-এত লজ্জায় লাল নীল হতে হবে না।আমি তোমার সাথে উল্টো পাল্টা কিছু করি নি।তবে খুব শীঘ্রই করবো।সো বি প্রিপেয়ার্ড!নিজেকে আমার জন্য প্রস্তুত রেখো।
আশিয়ান নিচে চলে গেল।আশিয়ানের কথা শুনে ঊদিতার কান ঝাঁ ঝাঁ করছে।কী লজ্জা,,,কী লজ্জা!ইশশ!এত লজ্জা এ জীবনে পায় নি ঊদিতা।
একসাথে সবাই মিলে ডিনার করলো।ঊদিতা আরচোখে বারবার আশিয়ানের দিকে তাকাচ্ছে।চোখে চোখ পড়ে গেলে আবার দ্রুত চোখ সরিয়ে নিচ্ছে।তাসকিন ইচ্ছে পোষণ করে বললো সে আলেয়াকে নিয়ে হানিমুনে যেতে চায়।তবে এখন না এইমাস পর।সবাই সায় দিলো এতে।আশিয়ানকে যাওয়ার কথা জিজ্ঞেস করলে আশিয়ান বললো এখন সে কোথাও যেতে পারবে না।আশিয়ানের কথায় তাল মিলিয়ে ঊদিতাও মানা করে দিলো।
ডিনার শেষে কিছুক্ষণ আড্ডা দিয়ে যে যার রুমে চলে গেল।আশিয়ান আর ঊদিতাও রুমে চলে এলো।ঊদিতা বিছানায় এসে শুতেই আশিয়ান তাকে নিজের কাছে টেনে নিয়ে গলায় মুখ ডুবিয়ে দিলো।ঊদিতা শক্ত করে আশিয়ানকে জড়িয়ে ধরে রাখলো।আশিয়ান পাগলের মতো চুমু খেয়ে খেয়ে একপর্যায়ে ঘুমিয়ে গেল।আশিয়ানের সাথে ঊদিতাও ঘুমিয়ে পড়ে।
চলবে…🍃