তোমাতেই রহিব বিলীন পর্ব-১২

0
887

#তোমাতেই_রহিব_বিলীন
#পর্ব_১২
#নিশাত_জাহান_নিশি

“কি দরকার ছিলো ঐ দিন আমাকে সেইফ করার? সমস্ত দোষ নিজের কাঁধে তুলে নেওয়ার? খুব মহান হতে চাইছিলে? আমাকে তোমার বিবেকের কাছে ছোট করে?”

নিষ্ক্রিয় দৃষ্টিতে অল্প সময় আমি আহনাফকে পর্যবেক্ষন করছিলাম৷ প্রেমময় দৃষ্টিতে পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে উনাকে অবলোকন করছিলাম। কি অদ্ভুত সুন্দর লাগে লোকটাকে, যখন লোকটা প্রেমময়ী দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকায়! চোখে উনার অজস্র ভালোবাসার রংধনু ফুটে উঠছিলো খুব গাঢ় ভাবে। বিপরীত পাশের লোকটার প্রতি যদি আপনার তীব্র ভালোবাসা কাজ করে, তবেই আপনি তার চোখে ভালোবাসার সাত রং উপলব্ধি করতে পারবেন। লোকটা মুখ ফুটে কিছু প্রকাশ না করলে ও আমি বেশ বুঝতে পারছি, চোখে উনার তীব্র প্রেমের আবেদন। তবে আমি যে চাই, উনি মনের কথাটা চিবুক দ্বারা প্রকাশ করুক। অনুভূতি মিশ্রিত কয়েক গুচ্ছ শব্দযুগলে আমায় প্রেম নিবেদন করুক!

আপাতত ভাবনা চিন্তা গুলোকে দমিয়ে রেখে আমি তব্ধ কন্ঠে নিষ্পলক দৃষ্টিতে আহনাফের দিকে চেয়ে বললাম,,

“ঐ দিন তো মহান আপনি ও সেজেছিলেন। আমার সামান্য সুখ, শান্তির জন্য আমাকে ছেড়ে অনেক ক্রোশ দূরে হারিয়ে গিয়েছিলেন! আপনার চলে যাওয়াতে আমি মোটে ও কষ্ট পাই নি আহনাফ। বিলিভ মি, আমি খুব হ্যাপি। আপনাকে ছাড়া আমি ভালোই আছি!”

আমার পুরো আপাদমস্তকে উদ্বিগ্ন দৃষ্টি নিক্ষেপ করে আহনাফ পরিশেষে আমার মুখের আদলে অস্থির দৃষ্টি নিক্ষেপ করে আহত কন্ঠে বললেন,,

“কতোটা ভালো আছো, তা তো শুকনো মুখের আদল দেখেই বুঝা যাচ্ছে। আমায় ছেড়ে তুমি মোটে ও ভালো ছিলে না প্রভা। সেই বিষয়ে আমার কোনো সন্দেহ নেই!”

অট্ট হাসলাম আমি। দু সেকেন্ডের মাথায় হাসি থামিয়ে বিদ্রুপসূচক কন্ঠে বললাম,,

“কে রাখে কার খোঁজ? আপনার শহরে তো আমি নিঁখোজ প্রায়। শুকিয়ে যাওয়া কিছু ক্ষত আপনার হাস্যকর কথায় পুনরায় তরতাজা হয়ে উঠছে। কেনো এলেন আবার বলুন তো? জখম তাজা করতে? কিছু কিছু মানুষ এমন হয় জানেন? অপর পাশের মানুষকে আঁচড়ে ক্ষত বিক্ষত করার পরে ও সেই ক্ষতটায় মলম লাগাবে না মোটে ও। তবে ক্ষতটা যখন তার পাওয়া অযত্নে প্রখর যন্ত্রণা সহ্য করতে করতে শুকিয়ে কাঠ হয়ে উঠবে। ঠিক তখনই আবার সেই ব্যক্তিটা কাঠ হয়ে যাওয়া ক্ষতটায় অগ্নিশিখা জ্বালাতে একদম সাইক্লোনের বেগে ছুটে আসবে। আপনি ও তাদের কাতারে পড়ছেন! মনের কথা বুঝতেই চাইবেন না।”

আহনাফ স্তম্ভিত ভঙ্গিতে কিছু সময় মৌণ রইলেন। অতঃপর দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে আমার থেকে দৃষ্টি ফেরাতে বাধ্য হলেন। প্যান্টের পকেটে দু হাত গুজে আহনাফ আমার সম্মুখ থেকে খানিকটা দূরে দাঁড়িয়ে মিহি কন্ঠে আধো অন্ধকার আকাশের দিকে চেয়ে বললেন,,

“কিছু সত্যি এমন হয় জানো প্রভা? যার সম্মুখীন হতে অধিক ধৈর্য্যের প্রয়োজন হয়। দেহ থেকে প্রাণবায়ু বেরিয়ে গেলে ও হয়তো অতোটা কষ্ট হবে না যতোটা কষ্ট তুমি তোমার খুব কাছের বা প্রিয় মানুষ থেকে পাবে! আর সেই প্রিয় মানুষটা যদি তোমার রক্তের সম্পর্কের কেউ হয়, তবে তো আর কোনো কথাই নেই! ফ্রি তে তুমি নিঃস্ব হয়ে যাওয়ার সার্টিফিকেট পেয়ে যাবে। তখন মনে হবে, ছেড়ে চলে যাচ্ছিনা কেনো এই সবকিছু? কি হবে এই ঠুনকো সম্পর্কের টান রেখে? এর’চে তো নিঃসঙ্গতা ভালো। নিজেকে গুটিয়ে নেওয়া অত্যধিক শ্রেয়।”

ফুসফুসে দম সঞ্চার করে আহনাফ পিছু ঘুড়ে আহত দৃষ্টিতে আমার দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করলেন। তব্ধিত শ্বাস নির্গত করে আহনাফ পুনরায় বললেন,,

“এমন কিছুই ঘটেছিলো আমার সাথে। আমার অগোচড়ে সেই প্রিয় মানুষটাই আমার সাথে বেইমানি করছিলো। প্রতিনিয়ত আমাকে ঠকাচ্ছিলো। আমার উইক পয়েন্ট বুঝে আমার সাথেই প্রতারনা করছিলো। বিষ খেয়ে বিষ হজম করার শক্তিটা আর জোগাতে পারছিলাম না সত্যি। যদি ও তাকে কখনো প্রকাশ্যে আনতে চাই নি আমি। তবে এবার মনে হচ্ছে তাকে প্রকাশ্যে আনাটা ভীষণ জরুরী। অন্তত নিজেকে ভালো রাখার জন্য। হারানো সুখকে পুনরায় ফিরে পাওয়ার জন্য! অনেক তো হলো মানিয়ে নেওয়া৷ বিশ্বাস করো, আমি পারছিলাম না। তাকে দূরে রেখে স্বাভাবিকভাবে সবকিছু মানিয়ে নিতে। এই কয়েক বছরে তোমার বুকের ক্ষতটা শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেলে ও আমার বুকে যে ক্ষতটা জমাট বেঁধেছিলো না? তা আজ ও পর্যন্ত শুকোয় নি। রোজ নিয়ম করে একটু একটু করে তাজা হচ্ছিলো। সঠিক যত্নের অভাবে দুরারোগ্য রোগে পরিণত হচ্ছিলো!”

স্মিত দৃষ্টিতে আমি চোখে হাজারো প্রশ্ন নিয়ে আহনাফের দিকে তাকালাম। নিঁখুতভাবে উনার নেএ যুগল পর্যবেক্ষণ করছিলাম। অজানা সেসব প্রশ্নের উত্তর খোঁজার চেষ্টা করছিলাম। তবে হায়! উনার নেএ যুগল দেখে মনে হচ্ছে না আদৌ সেই প্রশ্নের উত্তর গুলো ঐ রহস্যময়ী দুচোখে খুঁজে পাওয়া যাবে। বৃথা চেষ্টা আমার এখনই ছাড়তে হবে। আমার আঁখি জোড়ায় নির্বিকার সব প্রশ্নের ছড়াছড়ি দেখে আহনাফ মৃদ্যু হাসলেন। দ্রুত গতিতে আমার সম্মুখে দাঁড়িয়ে উনি সন্দিহান কন্ঠে বললেন,,

“কি? প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে উঠে পড়ে লেগছ? তবে ছেড়ে দাও এই আশা। আমার রহস্যময়ী এই দুচোখে তোমার সব প্রশ্নের উত্তর মিলবে না এই জন্মে!”

ইতোমধ্যেই নীল, সাদা, কমলা রঙ্গের বাহারী আকাশটা ঘোর অমানিশায় ঢেকে গেলো। গোধূলী লগ্ন পেরিয়ে ধরায় জাগতিক নিয়মে সন্ধ্যে নেমে এলো। ছাদ জুড়ে পিনপতন নীরবতা বিরাজ করছিলো খুব মিহিভাবে। পাখিদের কিচির মিচির আওয়াজ যদি ও অনেক পূর্বেই থেমে গেছে। তবে রোড সাইটের যাহবাহনের অসহ্য আওয়াজ ও আসছিলো না কানে। তবে কি কোনো কারণে হঠাৎ করেই যানবহনের চলাচল থেমে গেছে? কি জানি, বুঝতে পারছি না কিছু। তবে নিস্তব্ধ আকাশে চাঁদ উঠি উঠি করছে। এই বুঝি তাঁরা রা ও দল পাঁকিয়ে চাঁদের পাশে তাদের আবির্ভাব ঘটাবে। দমকা হাওয়ায় বাগান বিলাসের প্রতিটা ফুলের মিষ্টি ঘ্রান হুড়মুড়িয়ে ভেসে আসছিলো নাকে। মাতাল করা এই ঘ্রাণ। পরম আবেশে চোখ বুজতে আপনি বাধ্য হবেন। প্রকৃতি বোধ হয় আজ অত্যধিক রোমাঞ্চে ছেঁয়ে আছে।

আমার সম্মুখে যে ব্যক্তিটা দাঁড়িয়ে আছে তার চোখে প্রখর রোমাঞ্চের আবাস পাচ্ছি আমি। প্রেমভরা নেশাক্ত উত্তাল দুচোখে আমি ভালোবাসার অতলে ডুবে যাচ্ছি। নির্ঘাত কিছু ভুল হওয়ার সম্ভাবনা আছে। প্রেমে ভুল করতে চাই না আমি! তাই এই মুহূর্তে এই রোমাঞ্চকর পরিবেশ থেকে পালিয়ে যাওয়াটা আমার ভীষণ জরুরী। ভাবনা অনুযায়ী মাথা নিচু করে আমি যেই না আহনাফের সম্মুখ থেকে প্রস্থান নিবো অমনি মনে হলো উত্তেজিত দুটো হাত আমার হিম হয়ে আসা ডান হাতটাকে আঁকড়ে ধরল। শ্বাস যেনো পাল্লা দিয়ে ভারী হচ্ছিলো। উনার তপ্ত হাতের স্পর্শে আমার হিম হাতটা মুহূর্তের মধ্যেই তপ্ত হয়ে উঠল। ঘোর উত্তেজনা কাজ করছিলো শরীরের সর্বাঙ্গে। তবে কি আমি ও উনার মতো অত্যধিক রোমাঞ্চে উত্তেজিত হয়ে উঠছি? না। এই ভুলটা এখনি করা যাবে না। কিছুতেই উনাকে প্রশ্রয় দেওয়া যাবে না। উনার উপর যে আমার পাহাড়-সম অভিমান জমা আছে! পাহাড় তো কখনো মাথা নিচু করতে পারে না। চূড়ান্ত কঠিন আর দাম্ভিক সে। খুব সহজ হবে কি? এই কয়েকটা সুন্দর, রোমাঞ্চকর মুহূর্তের জন্য দীর্ঘ দেড় বছরের পাহাড়-সম অভিমানকে চূর্ণ বিচূর্ণ করে তার সামনে মাথা নত করা? আর, ঐ যে তনিমা মেয়েটা। আহনাফ কি ঐ তনিমাকেই বিয়ে করবেন? এর জন্যই কি উনি মেয়েটাকে নিয়ে দেশে ফিরে এসেছেন? যদি ও প্রশ্নটা অজানা। তবে মন বলছে, আহনাফ হয়তো তনিমাকেই বিয়ে করবেন! দেড় বছরে হয়তো উনাদের মধ্যে ভালোবাসার সম্পর্ক তৈরী হয়েছিলো। হাহহহহ্! তবে যাই হোক, আহনাফ ভালো থাকুক। যার সাথেই থাকুক, উনি ভালো থাকুক। প্রেমিকা হিসেবে ব্যাস এতটুকুই আমার উপর ওয়ালার কাছে চাওয়া! তবে তনিমা মেয়েটা এখন আমার কাছে “ঘোর আতঙ্ক।” এর সম্মুখীন হওয়া যাবে না মোটেও!

এসব ভাবতে ভাবতেই কখন যেনো আনমনেই আমার ঠাঁই মিলল আহনাফের বুকের পাজরে! হার্টবিটের অত্যধিক আওয়াজ আমার কর্নকুহরকে অস্থির, অসহ্য, তিক্ত করে তুলছিলো। মনে হচ্ছিলো যেনো কান দুটো এখনই ফেঁটে যাবে। বুকের ছাতি ফেটে রক্তক্ষরণ হবে নির্ঘাত। নিমিষেই চোখ জোড়া বুজে আমি না চাইতে ও আহনাফকে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে ধরলাম। আমার সায় পাওয়া মাএই আহনাফ শরীরের সমস্ত জোর কাজে লাগিয়ে আমাকে ঝাপটে ধরে করুন আকুতি ভরা কন্ঠে বললেন,,

“ভীষন প্রয়োজন তোমাকে। অন্তত বুকের এই গভীর ক্ষতটা সারানোর জন্য তোমার একটুখানি যত্নের ভীষন প্রয়োজন। আমাকে এই অসহনীয় অবস্থায় রেখে প্লিজ তুমি চলে যেও না এভাবে। আর একটু একাত্ন ভাবে মিশে থাকো আমার মাঝে! প্রেমের আকুতি বুঝতে চেষ্টা করো। এবার ভুল হবে না ঘুনাক্ষরে ও। তোমার অবস্থানটা আজীবন আমার এই সমুদ্রসম উত্তাল বুকেই থাকবে।”

খাঁপ ছাড়া কন্ঠে আমি নির্লিপ্ত ভঙ্গিতে বললাম,,

“তনিমার কি হবে তবে? তনিমা কি এই দেড় বছরে ও আপনার বুকের ক্ষতটা সারাতে পারেন নি? আমাকেই কেনো এই যত্নের দায়ভার নিতে হবে?”

আচমকা আচমকা শক্ত কন্ঠে বললেন,,

“আঘাতটা তুমিই দিয়েছ। তনিমা নয়। সেই অসহ্য আঘাতটা তোমাকেই সারিয়ে তুলতে হবে! কথা না বাড়িয়ে যতোটা সম্ভব আমাকে শক্ত করে জড়িয়ে রাখো। যতোটা জড়ালে এই বিশ্ব ভ্রমান্ডের কেউ আমাদের আলাদা করতে পারবে না।”

লোকটা কিছুতেই শিকার করবেন না, উনি ঠিক কাকে ভালোবাসেন! খামখেয়ালিপনা রেখেই যাবেন। আমি ও কম যাই না। কোনো রকম যত্নের দায়িত্ব আমি নিতে পারব না। শরীরের সমস্ত জোর খাটিয়ে আমি চেষ্টা করছিলাম আহনাফ থেকে নিজেকে ছাড়ানোর। কিন্তু হায়! আমি যতোই ধস্তাধস্তি করছি, আহনাফ যেনো ততোই আমাকে ঝাপটে ধরছেন। এক পর্যায়ে বিরক্ত হয়ে, ক্লান্ত শরীর নিয়ে আমি শরীরের সর্ব শক্তি আহনাফের উপর ছেড়ে দিতেই আহনাফ অট্ট হেসে বললেন,,

“সো স্যাড ফর ইউ মিসেস প্রভা! এতো চেষ্টার পরে ও ব্যর্থ হলে। কি দরকার ছিলো বলো? জেঁচে শরীরের এনার্জি লস করার? আহনাফের থেকে তোমার ছুটি মিলবে না এই জন্মে। আহনাফ তোমাকে অন্ততকালের জন্য নিজের করে নিতে এসেছে!”

কপালের ভাঁজে যেনো আমার শত প্রশ্নের আবির্ভাব ঘটল। মাথা উঁচিয়ে আমি প্রশ্নবিদ্ধ দুচোখে আহনাফের শান্ত দুচোখে তাকিয়ে বললাম,,

“মানে কি? মিসেস প্রভা বলছেন কেনো আমায়? আবার বলছেন আমাকে অনন্তকালের জন্য নিজের করে নিতে এসেছেন। তাহলে তনিমা কে? তনিমার কি হবে?”

আহনাফ পুনরায় রহস্যময়ী হাসি হেসে বললেন,,

“তনিমা ও থাকবে। তনিমা ও কারো মিসেস হতে এসেছে!”

পুনরায় প্রশ্ন ছুড়ার পূর্বেই আহনাফ মুহূর্তের মধ্যে আমাকে ছেড়ে প্যান্টের পকেট থেকে খুব ব্যস্ত ভঙ্গিতে কিছু একটা বের করলেন। আমার দিকে তাকিয়ে মৃদ্যু হেসে আহনাফ আমার বাঁ হাতটা খপ করে ধরে হাতের ঠিক তর্জনী আঙ্গুলটাতে ঐ দিনের খুলে রাখা সেই রিংটা পুনরায় আঙ্গুলে পড়িয়ে দিলেন। আমি অবিশ্বাস্য দৃষ্টিতে আহনাফের দিকে তাকাতেই আহনাফ বাঁকা হেসে একটু ঝুঁকে আমার বাঁ হাতটায় দীর্ঘ একটা চুমো এঁকে দিলেন! হতভম্ব, নিশ্চুপ, নির্বিকার, সম্পূর্ণ নির্জীব ভঙ্গিতে আমি দাঁড়িয়ে আছে। আহনাফের দেওয়া প্রথম চুমোটায় আমি আশ্চর্যের চরম সীমায় পৌঁছে গেছি। এই প্রথম আহনাফের ঠোঁটের উষ্ণ স্পর্শ আমার শরীর পেলো! এ যেনো এক অন্যরকম প্রেমানুভূতি। শরীরের লোপকূপকে সূঁচালোভাবে জাগিয়ে তোলার জন্য যথেষ্ট। মুহূর্তের মধ্যেই মনে হলো আহনাফ আমার কপালে ও দীর্ঘ শব্দে একটা চুমো এঁকে দিলেন। আমি সম্মোহিত দৃষ্টিতে আহনাফের দিকে তাকাতেই আহনাফ পুনরায় আমার দুচোখে চুমো এঁকে দিলেন! ভ্রু যুগল উঁচিয়ে আমি মুখশ্রীতে বিরক্তির ছাপ ফুটিয়ে আহনাফকে কিছু বলার পূর্বেই আহনাফ আকস্মিক ভাবে আমার ঠোঁটে ও দীর্ঘ এক চুমো এঁকে দিলেন। চরম আশ্চর্যিত চোখে আমি ঠোঁটে হাত চেঁপে আহনাফের দিকে চেয়ে আছি। শরীরটা ঢকঢক করে কাঁপছে আমার৷ শরীর জুড়ে মিহি ঘামের আবির্ভাব হচ্ছে৷ আহনাফ বুকে দুহাত বেঁধে এক পায়ে ভর করে দাঁড়িয়ে মাথাটা বাঁ দিকে বাঁকা করে রেখেছেন। দাঁতে দাঁত চেঁপে আমি আহনাফের দিকে তাকাতেই বাঁকা হেসে আহনাফ আমায় পুনরায় ঝাপটে ধরে আদুরে কন্ঠে বললেন,,

“ফিলিং ব্যাটার নাও। কোনো অভিযোগ শুনতে চাইছি না কিন্তু আমি। আমার শতভাগ অধিকার আছে তোমাকে চুমো খাওয়ার।”

“আমাদের এনগেজমেন্টটা কিন্তু ভেঙ্গে গিয়েছিলো আহনাফ৷ তারপরে ও কেনো আপনি এসব চুমো টুমো খেতে গেলেন? কোন অধিকারের কথা বলছেন আপনি হুম? কোন অধিকার? আমার উপর আপনার কিসের এতো অধিকার?”

নিরুত্তর থেকে আহনাফ মুহূর্তের মধ্যে আমায় ছেড়ে মুচকি হেসে আমার দিকে তাকালেন। আমার ডান হাতটা শক্ত করে আঁকড়ে ধরে আহনাফ আমার সমগ্র মুখমন্ডলে একবার তীক্ষ্ণ দৃষ্টি নিক্ষেপ করে আমাকে নিয়ে সোজা ছাঁদের দরজার দিকে পা বাড়ালেন। ভ্রু যুগল কুঁচকে আমি জিগ্যাসু কন্ঠে আহনাফকে উদ্দেশ্যে করে বললাম,,

“কোথায় যাচ্ছেন?”

আহনাফ ব্যতিব্যস্ত কন্ঠে বললেন,,

“পার্লারে!”

“মানে? আপনার পার্লারে কি কাজ?”

“আমার না! কাজটা তোমার।”

“আমার আবার কি কাজ?”

“তোমার ফেইসের ট্রিটমেন্ট করাতে হবে! অযত্নে, অবহেলায় ফেইসের ১২ টা বাজিয়েছ। আমি আবারো সেই দেড় বছর পূর্বের প্রভাকে দেখতে চাই। যে নিজের ত্বকের খুব যত্ন নিতো, চুলের যত্ন নিতে ও খুব পছন্দ করত। তার ফেইসের সেই জৌলুসতা, আকর্ষণীয়তা, চাকচিক্যতা আমি আবারো দেখতে চাই। আমি জানি, গত দেড় বছরে পার্লারের ধারে কাছে ও যাও নি তুমি। বিমূর্ষ অবস্থায় ছিলে। যেহেতু আহনাফ এবার এসেই পড়েছে তবে এবার তোমার কোনো রূপ অযত্ন আহনাফ হতে দিবে না!”

“হাসালেন। পারবেন? ঘন্টার পর ঘন্টা পার্লারের সামনে দাঁড়িয়ে ওয়েট করতে? সেই অসাধ্য ধৈর্য্য আছে আপনার?”

“ধৈর্য্যটাকে অভ্যেসে পরিণত করতে হবে। কোনো ব্যাপার নাহ্। তুমি চলো!”

ড্রইং রুমে পা রাখতেই ড্রইং রুম ভর্তি বাড়ির সব মেহমানরা এমনকি পরিবারের সবাই আমাদের দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি নিক্ষেপ করলেন। সবার চোখেই ঘোর কৌতুহল এবং প্রশ্নবোধক চিহ্ন। জিগ্যাসু দৃষ্টিতে আপু আমাদের সম্মুখস্ত হয়ে বললেন,,

“কোথায় যাচ্ছ তোমরা?”

এর মধ্যে কোথা থেকে যেনো জিজু আমাদের মুখোমুখি এসে দাঁড়ালেন। আপুকে উপেক্ষা করে জিজু উগ্র কন্ঠে আহনাফকে উদ্দেশ্য করে বললেন,,

“দেড় বছর আগে তোদের বিয়েটা ভেঙ্গে গিয়েছিলো আহনাফ। সবার সামনে এভাবে বেহায়ার মতো প্রভার হাত ধরে আছিস কেনো? বুঝতে পারছিস না? বিষয়টা সবার চোখে দৃষ্টিকটু লাগছে!”

আহনাফ প্রচন্ড রেগে জিজুকে উদ্দেশ্য করে তীক্ষ্ণ কন্ঠে বললেন,,

“কারণ আছে, তাই ধরেছি। কিছুদিন পরেই কারনটা বুঝতে পারবে। কে আমাকে কি ভাবল, কে কোন চোখে দেখল আই জাস্ট ডোন্ট কেয়ার। তুমি ও বিষয়টা ভালো করে মাথায় ঢুকিয়ে নাও। আর আপাতত আমার সামনে থেকে সরো। আমরা একটা জরুরী কাজে বাইরে যাচ্ছি।”

জিজুর দেওয়া বাঁধাকে প্রত্যাখান করে আহনাফ পরিবারের সবার সামনে আমার হাত ধরে সদর দরজা ক্রস করতেই পেছন থেকে নেহাল ভাই আহনাফকে উদ্দেশ্য করে উচ্চ শব্দে চেঁচিয়ে বললেন,,

“এই আহনাফ দাঁড়া। আমি এবং তনিমা ও তোদের সাথে যাবো!”

আহনাফ এবং আমি পিছু ফিরে তাকালাম। তনিমা মেয়েটার দিকে দৃষ্টিলোকন করতেই আমি খেয়াল করলাম মেয়েটা জিজুর দিকে কেমন যেনো ঘৃনা এবং রাগ মিশ্রিত দৃষ্টিতে তাকাচ্ছেন। জিজু শুকনো মুখে অস্থির দৃষ্টিতে তনিমার দিকে তাকাতেই আহনাফ অট্ট হেসে জিজুকে উদ্দেশ্য করে বললেন,,

“কি ভাইয়া? চিনতে পারছ তো তনিমাকে?”

জিজু ঘর্মাক্ত মুখমন্ডলে জিহ্বা দ্বারা ঠোঁট যুগল ভিজিয়ে কম্পিত কন্ঠে আহনাফের দিকে চেয়ে বললেন,,

“আআআমি চিনব কিকিকিভাবে? হুহুহু ইজ তনিমা?”

নেহাল ভাই কটমট দৃষ্টিতে জিজুর সম্মুখে দাঁড়িয়ে বললেন,,

“না চেনাই ভালো ভাইয়া। চিনলে তো হাজারটা সমস্যা!”

জিজু আর একটা মুহূর্ত ও ব্যয় করলেন না। ছটফটে ভঙ্গিতে সিঁড়ির দিকে পা বাড়ালেন। আপু উদ্বেগি কন্ঠে পেছন থেকে জিজুকে ডেকে বললেন,,

“আরিফ। কোথায় যাচ্ছ? আজ তো আমাদের ডক্টরের এপয়ন্টমেন্ট আছে। আমি তো রেডি হয়ে বসে আছি। তুমি যাবে না?”

#চলবে…?