আসক্তি২ পর্ব-৩৪+৩৫

0
2569

#আসক্তি২
পর্বঃ৩৪
লেখায় আফিয়া আজাদ নিঝুম

ড্রয়িংরুমে পিনপতন নীরবতা।কিছুক্ষন পূর্বেও কতো মুখোরিত ছিলো চারিপাশ।তারপর কান্নার শব্দ আর খানিক পর সবটা শান্ত।কেউ কোন কথা বলছে না, কেউ কাউকে কিছু জিজ্ঞেসাও করছে না।শুধু কানে ভাসছে বাহিরের জনজীবনের শাব্দিক রূপ।শর্মিলা সোফার হাতলে ডান কনুই ঠিকেয়ে কপালে হাত দিয়ে মেঝের দিকে চেয়ে আছে।যেন কতো বছরের দায়িত্ব তার মাথা থেকে নেমে গেলো
শান একটু ঝুঁকে দুহাতে ঘাড়টা চেপে মাথাটা জড়িয়ে দুই হাঁটুর দিকে নিয়ে বসে আছে।

পাখি সবদিকটা দেখে রাহেলাকে ইশারা করলেন।রাহেলা উঠে একগ্লাস পানি এনে শর্মিলার সামনে ধরলেন।শান্তস্বরে ডাকলেন,”ম্যাডাম”
শর্মিলা চকিতে কপাল থেকে হাত সরিয়ে রাহেলার দিকে তাকালেন।হাত বাড়িয়ে গ্লাসটা নিয়ে সবটুকু পানিই নিমিশেই শেষ করলেন।দেখে যে কেউই বুঝতে পারবে এই পানির জন্যেই তিনি অপেক্ষা করছিলেন এতোক্ষন।

পাখি শানের দিকে তাকিয়ে বোঝার চেষ্টা করছে এতো বড় ধাক্কাটা তিনি কিভাবে নেবেন।আজ তার শানকে বড্ডো চূর্ণ মনে হচ্ছে। কেমন যেন কলিজা ফেটে যাচ্ছে শানকে দেখে।শানের দিকে তাকিয়ে থাকতেই হঠাৎ শান নড়ে ওঠে।আস্তে করে মাথাটা তুলে সামনে তাকায়।সেদিকে তাকিয়ে বুকে মোচড় দিয়ে ওঠে পাখির।চোখদুটো রক্তবর্ণ ধারন করেছে,চোখের পাপড়ি গুলো ভারী লাগছে যেন কতো শত বছরের ক্লান্ত পথিক সে।চোখের নিচে ফুলে উঠেছে।সেদিকে করূন চোখে তাকায় পাখি। কান্না সংবরন করা দায় যে তার!

শান পুরোপুরিভাবে মাথাটা তুলে কয়েকবার মাথাটা এদিক ওদিক ঘুরিয়ে স্বাভাবিক করে নেয়।এরপর দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে ঘাড় ঘুরিয়ে পাখির দিকে তাকায়।টুপ করে দুফোটা জল গড়িয়ে পরে পাখির গাল বেয়ে।শান পরপর কয়েকবার নাকে ছিচকে শব্দ করে উঠে দাঁড়ায়।পাখিও পরপর কতোগুলো শুকনো ঢোক গিলে উঠে দাঁড়ায়।রাহেলা বসে আছে শর্মিলার পাশে।শান খুব ধীরে এমন ভাবে পা ফেলে পাখির দিকে আসছে যেন সারা রাস্তায় কাঁটা বিছানো,এদিক সেদিক হলেই কাঁটা ফুটবে পায়ে।পাখি হাত কচলাতে কচলাতে শানের দিকে পা বারায়।পাখির সামনে এসে দাঁড়ায় শান।দুহাতে চোখের পানি মুছিয়ে দেয় পাখির।আবার চোখ থেকে খসে পরে কয়েকফোটা অশ্রু।এরপর নিজের দুহাত রাখে পাখির দুই গালে।অপলক কিছুক্ষন চেয়ে থাকে।পাখি শুধু শানের চোখের ভাষা বোঝার চেষ্টা করছে।শান কি করতে চলেছে সেটাই বুঝতে চাইছে সে।

“আমরা অনেক দূরে চলে যাবো।এই তিনকুলে তোমারও কেউ নাই।আমারও কেউ নাই।আমরা দুজনে মিলে অনেক সুখের সংসার শুরু করব। যাবে আমার সাথে?আমি যেখানেই নিয়ে যাই!”,খুব শান্তভাবে কথাগুলো বলছে শান।তবুও পাখির বড্ডো ভয় করছে।ঝড়ের পূর্বাভাস পাচ্ছে সে।গালে রাখা শানের হাতদুটো দু’হাতে ধরে নেয় পাখি।ছলছলে চোখে কিছু বলতে যাবে তার আগে শান বলে,”এই পৃথিবীটা খুব নিষ্ঠুর পাখি।মিথ্যের কাঁটায় পরিপূর্ণ।আমি চাইনা তুমি এখানে থেকে মিথ্যে শিখো।তুমি তো সত্য। তুমি তো আমার জীবনের চিরন্তন ধ্রুবতারা।”

শর্মিলা আর রাহেলা অবাক হয়ে দেখছে শান কি করতে চলছে।

“আমার জীবন টা কেন এমন হলো বলো তো?”,বলেই শান চোখ মুখ খিঁচে নেয়।কয়েকবার কান্না সংবরনের বৃথা চেষ্টা করে শান।তাতে খুব একটা লাভ হয় না।কান্নারা যেন আজ উগড়ে আসতে চাচ্ছে।বার বার জোড় করে ভিতরে পাঠাচ্ছে শান।কারণ সে চায় না পাখির সামনে কেঁদে ফেলুক।মেয়েটা বড্ডো কষ্ট পাবে।শানের ওরকম অবস্থা দেখে নিজেকে আটকাতে পারে না পাখি। ঠোঁট টিপে চোখের পানি ছেড়ে দেয় করূনভাবে।

শান আবার মুছে দিয়ে বলে,”পাগলি, কষ্ট তো আমার হচ্ছে তুমি কেন কাঁদছো?জান আমার কলিজাটা পুরে যাচ্ছে জান।কলিজাটা পুরে যাচ্ছে আমার।”
শেষের কথাটা বেশ চিৎকার করে বলে শান।আব্দুল্লাহ্ এতোক্ষন বাড়ির বাহিরে ইনায়াহ্’কে খেলার ছলে আগলে রেখেছিলো।শানের চিৎকারে দৌঁড়ে ভিতরে আসতে বাধ্য হয় সে।এসেই হতভম্ব হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে।

শান দুচোখ বন্ধ করে কয়েক ফোটা জল ছেড়ে দেয়।কাঁপা কাঁপা হাতে পাখি সেটা মুছিয়ে দেয়।
“আআপনি শাশান্ত হহোন প্লিজ”,কান্না জড়িয়ে আসা কন্ঠে বলে পাখি।

হঠাৎ শান সবাইকে অবাক করে দিয়ে পাখিকে জড়িয়ে ধরে শক্ত করে।

“আমার জীবন এতো মিথ্যেয় ঘেরা কেন পাখি?আমার জন্ম টা কেন হলো পাখি?আমার নিজের বাবা কেন আমায় মানলেন না?কেন বিগত ষোলটা বছর আমার অনুভূতি গুলো ডুকরে উঠলো?কেন বাবা নামোক পিশাচ লোকটা আমায় মিথ্যে বললো?কেন আমার মা আরো আগে সত্যিগুলো জানাল না?কেন এতো ভালোবাসার পরেও সে অভিনয় করলো?
জান আমার এতো কেন’র উত্তর আমি কোথায় পাবো?”

বলতে বলতে কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে শান।এভাবে কখনোই কেউ শানকে কাঁদতে দেখেনি।রাহেলা মুখে আঁচল চেপে কাঁদছে।আব্দুল্লাহ্ এগিয়ে আসতে শর্মিলা হাত উচিয়ে তাকে আটকে দেয়।শানের করা প্রতিটা কেন’র উত্তর তার কাছে জানা।তবুও ছেলের চোখের একেক ফোটা পানি যেন বিষাক্ত তীরের মতো বিঁধছে তাকে।
শানের কান্নায় পাখিও হাউমাউ করে কেঁদে ফেলে।শানকে শান্তনা দেবার মতো কোন ভাষা তার জানা নেই।শুধু এটুকু বুঝেছে এই মানুষটাকে শক্ত করে জড়িয়ে রাখা তার কর্তব্য। তার উপর অর্পিত ফরজ দায়িত্ব।শানের পিঠে আলতো করে হাত বুলাতে শর্মিলা বাজখাঁই কন্ঠে বলে ওঠেন,”বউ মা কাঁদতে দাও ওকে।এতোদিনের জমানো কষ্ট গুলো উগড়াতে দাও।থামিয়ে দিও না”

শানের কান্নার শব্দে মুখোরিত চারিপাশ।দেয়ালের প্রতিটা ইট যেন ডুকরে ডুকরে কাঁদছে আজ।এ কোন নতুন সত্যের মুখোমুখি সে?যে সত্যকে সামনে আসতে ষোলটা বছর খোয়াতে হলো?এমন সত্য মিথ্যের আড়ালে চাপা থাকাই বোধহয় ভালো ছিলো।

পাখির কাঁধ ভিজে গেছে শানের চোখের মুখের পানিতে।সেদিকে একটুও খেয়াল নেই কারোরই।পাখির বুকের ভিতরে হওয়া চিনচিনে ব্যথাটা এবার প্রবল আকাড় ধারন করলো।মনে হচ্ছে যেন শানের কান্নাগুলো বিশাল বড় হাতুড়ির মতো পেটাচ্ছে তার বুকে।নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে পাখির।নিজেকে ধাতস্থ করে শানের কানের কাছে মুখটা এনে বলে,”এভাবে কাঁদবেন না ডাক্তার সাহেব, আমার কলিজা ফেটে যাচ্ছে”

পাখির কথায় যেন কান্নার বেগ আরো বেড়ে যায় শানের।কিছুক্ষন পরে চট করে পাখিকে ছেড়ে দেয় শান।অবাক হয় পাখি।দৌঁড়ে চলে যায় শান উপরতলার দিকে। ভয়ার্ত চোখে পাখি পিছন পিছন গেলে শর্মিলা কান্নামিশ্রিত কন্ঠে বলেন,”ভয় পেও না বউ মা।আমার ছেলে তোমাকে ভীষণ ভালোবাসে।আর যারা ভালোবাসতে জানে তারা কখনো আত্মহনন করতে পারে না”

শর্মিলার কথা শেষ হতে না হতেই শান একটা প্যাকেটে করে কিছু নিয়ে আসে।প্যাকেট টা হাতে নিয়ে খুব ধীরপায়ে শর্মিলার পায়ের কাছে এসে মেঝেতে হাঁটু মুড়ে বসে পরে।সবাই অবাক হয়ে চেয়ে দেখছে শানের কর্মকান্ড। ইনায়াহ্ আব্দুল্লাহর কোলে ঠোঁট টিপে কেঁদে চলেছে নিঃশব্দে।

কাঁপা কাঁপা হাতে প্যাকেট থেকে একটা স্বর্ণের চিকোন চুড়ি বের করে সামনে ধরে শান।
“এএটার ককথা মনে আছে আপনার?”

শর্মিলা মরিয়া হয়ে চুড়িটা হাতে নিয়ে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে দেখে।চকচক করে ওঠে চোখদুটো।চোখে এক সমুদ্র অশ্রু নিয়ে মাথা উপর নিচ করে বলে,”হ্যাএএ”
“বাবা আমার হাত খরচের যে টাকা দিতো সেটা থেকে বাঁচিয়ে আপনার জন্যে রতন কাকার দোকান থেকে গড়িয়ে দিয়েছিলাম।অবশ্য কিছুদিন পর জানতে পারি জোড়ার একটা নাকি হারিয়ে ফেলেছেন”
তৎক্ষনাৎ শর্মিলা নিজের হাত দুটো শাড়ির আঁচল থেকে উন্মুক্ত করে শানকে দেখায়।বাঁ হাতে একটা চুড়ি ঠিক সেরকমই যেরকম শানের হাতে।মুচকি হেসে শান বলে,”হারিয়ে যাওয়ার পর শত খুঁজেও পান নি।আর আপনার চলে যাওয়ার পর আমরা যখন ঢাকা আসব তখন ব্যাগ গুছানোর সময় এটা পাই। এতোগুলো দিন এটা আমার কাছে ছিলো”

শর্মিলা ঠোঁট টিপে কান্না সামলিয়ে বলে,”আর আমি এই একটা চুড়িতে ষোলটা বছর কাটিয়ে এলাম বাপ”
শান চোখের কোণা দুটো দুই আঙ্গুলে চেপে নাকে ছিচকে শব্দ করে আবার লাল প্যাকেটটার ভিতরে হাত রাখে।হাতে করে নিয়ে আসে একটা কাঁজলের কৌটা।হাতের তালুতে নিয়ে শান শর্মিলার সামনে ধরে।
“রোজ রোজ আপনার চোখে কাঁজল দেখতাম।জানি না কেন কাঁজল পরতেন মোটা করে।তাই আপনার চলে আসার দিন রহিম কাকার দোকান থেকে এই কৌটাটা কিনে নিয়েছিলাম।বাড়ি এসে জানকে পারি আপনি নেই”

সে সময় কৌটার কাঁজল মানে অনেক বেশি কিছু।

শর্মিলা গন্ডো বেয়ে নেমে আসা চোখের ধারাটা দুহাতের তালুতে মুছে বলেন,”রোজ রাতে কাঁদতাম।রাজ জেগে থাকতাম। তোমার বাবা নেশা করে এসে একটু চুন থেকে পান খসলেই সারারাত আমায় দিয়ে বডি ম্যাসাজ করে নিতো,অন্ধকার রাতে উঠানে দাঁড় করিয়ে রাখত রাতে ঘুমাতে পারতাম না, দিনেও সেটার উসুল হতো না;তোমাদের যত্ন নিতে,সংসারের ঘানি টানতে। চোখের নিচে মোটা কালি পরেছিলো। তাই কাঁজলের আবরনে ঢেকে চলতাম”

শান একধ্যানে চেয়ে কথাগুলো শুনছিলো।কথা শেষে প্যাকেটটায় আবার হাত দেয়। এবার একটা পুরোনো দিনের খসখসে সুতি শাড়ি বের করে আনে।

পাখি ভ্রুকুচকে চেয়ে থাকে শাড়িটার দিকে।চেনা চেনা মনে হচ্ছে তার।

শাড়িটা শর্মিলার সামনে ধরে বলে,”আপনার কাপড়ের মাঝে এটা আমার পছন্দের ছিলো।যেটা আপনি প্রতি শুক্রবার করে পড়তেন”

এতোক্ষনে চিনতে পেরেছে পাখি।এটা তো সেই শাড়ি যেটা এ বাড়িতে আসার প্রথম দিন শান ওকে পরতে দিয়েছিলো।

শর্মিলা শাড়িটাকে বুকে জড়িয়ে নেয়। নিঃশব্দে কেঁদে চেলেছে অনবরত।তাকে দেখে বুঝাই যাচ্ছে ভদ্র মহিলা গত ষোল বছরে কতোটা শক্ত হয়ে গিয়েছে।

“আজ তো শুক্রবার, একটি বারের জন্যে কাপড় টা পড়বেন?”,অনুনয়মাখা কন্ঠে বলে শান।
রাহেলা বিনা বাক্য ব্যয়ে শর্মিলার হাত টেনে নিয়ে যায় নিজের ঘরে।থতমত খেয়ে শর্মিলা রাহেলার দিকে চলে যায়।পাখি সেদিকে চেয়ে শানের পাশে এসে বসে।কাঁধে হাত রাখতেই চমকে পাশ ফেরে শান।হাত টা টেনে এনে হাতের উল্টোপিঠে চুমু এঁকে দেয়।পাখির চোখ মুছিয়ে বলে,”এভাবে কাঁদবে না।আমি নিজের টা সামলে নিতে পারব। তোমার টা পারব না”

আব্দুল্লাহ্’র কোল থেকে ইনায়াহ্ নেমে আসে শান পাখির কাছে।শান ঘুরে কোলে বসায় ওকে।দুই গালে চুমু খেয়ে বলে,”কাঁদে না মা। আমার মেয়ে কতো স্ট্রং তাই না”
বলতেই শানের গলা জড়িয়ে ধরে ইনায়াহ্।কেঁদে কেঁদে বলে,”তুমি কাঁদবে না সান সাইন।আমার খুব কষ্ট হয়”
শান চোখ বন্ধ করে ইনায়াহ্’র মাথা বুলিয়ে দেয়।

কিছুক্ষণ পর ঘর থেকে বেরিয়ে আসে শর্মিলা।পাখি সেদিকে তাকাতেই তার নজর অনুসরন করে শানও সেদিকে তাকায়।থমকে যায় চোখ দুটো।

চোখের সামনে ভেসে ওঠে সেদিনের সে দিনগুলো।মা শাড়িটা পড়ে বাড়ির এটা ওটা করছে।আর শান বার বার বলছে,”এই শাড়িতে তোমায় অনেক সুন্দর লাগছে আম্মা।একদম ঐশ্বরিয়া রায়”
মাথায় গাট্টা মেরে কান চেপে শর্মিলা বললো,”খুব পেকে গেছিস না”
“আউচচ আম্মা ব্যথা লাগে”

“বাবু”

হঠাৎ নিজের পুরোনো নাম টা কানে ভেসে আসে শানের।ভাবনার জগত তাকে যেন ধাক্কা মেরে বের করে দিলো কেউ।সম্বিৎ ফিরে পা থেকে মাথা অবধি দেখে নিলো তার জীবনের প্রথম নারী ;তার মাকে।

অজান্তেই ঠোঁটের ডগায় ফুটে উঠলো,”আম্মা”
শর্মিলার উৎসুক চোখ মুখে ভারী বর্ষন নেমে এলো।যেন পানিতে থৈথৈ করে উঠলো চারিপাশে।মূহুর্তেই কান্নায় ভেঙ্গে পড়লেন শর্মিলা।সাথে সাথে ভেঙ্গে গুঁড়ো হয়ে গেলো তার চারপাশের মিথ্যে শক্ত খোলসটা।বেরিয়ে এলো সিন্ধুকে তালাবদ্ধ সেই মাতৃসত্ত্বা।আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে নিলো নিজের ছেলেকে।আকাশ বাতাস আরেক দফা ভারী হয়ে উঠলো যেন।
মায়ের গায়ের গন্ধটা প্রাণ ভরে শুষে নিলো শান।ছোট বাচ্চাদের কাঁধে মাথা শুয়ে বলে,”তোমায় একদম ঐশ্বরিয়া রায়ের মতো লাগছে আম্মা”

শর্মিলা ছেলেকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বুকের সাথে।কারণ তিনি বুঝেছেন ঝড়টা দরজায় এসে গেছে।ছেলেকে এবার সামলানোর পালা।

“আম্মা,ও আম্মা।আম্মা গো….এমন কেন হলো আম্মা।আমরা তো সুখে ছিলাম আম্মা”

“আব্বা, আমরা সুখের অভিনয় করেছিলাম”

“আম্মা আমি প্রত্যেকটা রাত কেঁদেছি আম্মা।তুমি জানবে না আম্মা আমি আঁধারের রাতগুলো কিভাবে কাটিয়েছে।বাবা বাসায় ফিরত না।চাচিও চলে যেত সন্ধ্যায়।আমি ডুকরে ডুকরে কেঁদেছি আম্মা।আম্মা ষোলটা বছর কেন এমন করে তোমায় ছাড়া কেটে গেলো?আম্মা আরো আগে কি সবটা জানানো যেত না।বলো না আম্মা।আম্মা আমার কলিজাটা ছিড়ে যাচ্ছে।
তোমার শাড়ি চুড়ি কাজল হাতে নিয়ে রাতের পর রাত ঘুমিয়েছি আম্মা।ভাবতাম ভোর হলে সবটা আগের মতো হবে, হয় নি আম্মা।ধীরে ধীরে বিগড়ে গেছিলো সবটা।আম্মা আমার পড়া মাথায় ঢুকত না।বোর্ড এক্সাম দিতে খুব কষ্ট হইছে আম্মা।সবাই কেন আমায় এভাবে ঠকালে আম্মা।সত্যিটা না জানলে জীবন কি চলত না আম্মা।শেষমেশ এই বয়সে এসে কেন জানলাম সবটা।মানুষটা মরার আগে কেন জানলাম না?”

শানের ঐ অবস্থা দেখে ভয়ে আতঙ্কে মেঝেতে পা দাপিয়ে কাঁদছে ইনায়াহ্।পাখি দৌঁড়ে গিয়ে বুকে পিষে নেয়।

শর্মিলা বুঝতে পেরেছেন এই মূহূর্তে তিনি কিছুতেই ছেলেকে শান্ত করতে পারবে না ।তাই কাঁদতে দিলেন প্রাণ ভরে।

“আম্মা মানুষটা সে বার প্রথম যখন হ্যাটাক করলো, তখনো মূমূর্ষ অবস্থায় বলেছিলো যাতে তোমার সাথে সকল সম্পর্ক ত্যাগ করি।এতো নিখুঁত অভিনয় মানুষ কেমনে করে আম্মা?”

দীর্ঘসময় ধরে কাঁদছে শান।এবার শ্বাসের গতি ভারী হয়ে আসে শানে।নিমিশেই বন্ধ হয় শানের প্রলাপ। শর্মিলার গায়ের লোম দাঁড়িয়ে যায়।আতঙ্কিত চোখে মুখে পাখি, রাহেলা আর আব্দুল্লাহর দিকে তাকায়।
“মা কি হয়েছে,উনি চুপ কেন। মা?

“বাবু,এ বাবু।আব্দুল্লাহ্ ডাক্তারকে কল করো”

দিগ্বিদিক চিন্তা না করে আব্দুল্লাহ্ ডাক্তারের কাছে কল করে।সবাই মিলে ধরে পাশের সোফায় শুয়ে দেয় শানকে।পাখি বুঝতেছে না কি থেকে কি হয়ে গেলো।শানের হাত পা ঠান্ডায় জমে গিয়েছে যেন।দ্রুত উঠে রান্নাঘরের দিকে চলে যায় পাখি।একটা রসুন থেঁতলে বাটিতে সরিষার তেল ঢেলে চুলার আঁচে থেঁতলানো রসুন টা সমেত তেলটা গরম করে নেয়।এরপর দ্রুত ছুটে এসে শানের হাতে পায়ের তালুতে ম্যাসাজ করা শুরু করে।ওর দেখাদেখি রাহেলাও আরেক হাতে একই কাজ করে।শর্মিলা কি দেখে বিষম খাবে বুঝতে পারছে না।নিজের প্রতি ছেলের এতোদিনের জমানো কষ্টের প্রতিক্রিয়া দেখে নাকি ছেলের প্রতি পাখির অগাধ ভালোবাসা দেখে।

মূহূর্তেই ডাক্তার নাদিম চলে আসে বাড়িতে।শানকে দেখে খুব গম্ভীর মুখে তিনি বলেন, “কোন ব্যপারে খুব শক্ড তিনি।আর শক্ড থেকেই এই প্রতিক্রিয়া। দূঃচিন্তা করবেন না।তেমন মেজর কিছু না।…..এই ইঞ্জেকশন টা নিয়ে আসুন।সামনের দোকানেও পাবেন”
বলেই প্রেসক্রিপশন টা এগিয়ে দেয় আব্দুল্লাহ্’র দিকে।

আব্দুল্লাহ্ কোন সময় নষ্ট ছাড়া দ্রুত দৌঁড়ে চলে যায় গেইটের বাইরে।দুই কদম হাঁটলে সামনেই ফার্মাসি।প্রেসক্রিপশন এগিয়ে ইঞ্জেকশন টা নিয়ে আসে।হাফাতে হাফাতে ডাক্তারকে দেয়।

“আপনারা ঘাবড়াবেন না।আমি ঘুমের ইঞ্জেকশন টা দিলাম।এর মাঝে কেউ উনাকে ডাকবেন না।বা জাগানোর চেষ্টা করবেন না। উনার শরীরও অনেকটা দূর্বল।আর বাকিটা আমি শানের সাথে কথা বলে নেবো। “,শানের শরীরে ইঞ্জেকশন পুষ করতে করতে বলে ডাক্তার নাদিম।পাখি চোখ ঘুরিয়ে চোখমুখ খিঁচে ফেলে।

শর্মিলা সেদিকে দেখে আনমনে হেসে ওঠে।এই সময় কি হাসা উচিত?মনে তো হচ্ছে, না।তবে সে কেন হাসছে?ছেলের প্রতি কোন মেয়ের এমন ভালোবাসা দেখেই হয়ত অনুভূতিটা হাসি হয়ে বের হলো

আব্দুল্লাহ্’র সহযোগীতায় শানকে ঘরে নিয়ে আসে পাখি।

🌸🌸

সেই যে বিকেলে ঘুমিয়েছে শান এখন রাত হয়ে এলো তবুও উঠতে পারে নি।ডাক্তারের কথামতো কেউ তাকে ডাকে নি।বার কয়েক শর্মিলা এসে দেখে গেছে, মাথায় হাত বুলিয়েছে,কপালে অজস্র চুমুর যেন শেষ নেই।রাহেলা সেসব দেখে চক্ষুশীতল করে নেয়।এ দৃশ্য আজ কতোটা বছর দেখছে সে।

রাতের রান্নায় ব্যস্ত রাহেলা আর শর্মিলা।শান ঘুমাচ্ছে পাখি একা একা ঘরে হাফিয়ে উঠেছে।নিচে এসে একবার সুধালো,”মা আমি একটু হেল্প করি?”

“উহু, আজ আমি নিজে হাতে আমার ছেলের জন্যে রাঁধব।আর সাহায্য করবে রাহেলা”,কাঠখোট্টা ভাবে জবাব দিলো শর্মিলা।থমথমে মুখে ফস করে পাখি বলেও ফেলল,”ওহহহ বুঝেছি,অতীতে ফিরতে চান তো।মানে তখন তো আমি ছিলাম না তাই এখনও আমায় রাখতে চাচ্ছেন না”

শর্মিলা কাজ থামিয়ে পাখির সামনে এসে দাঁড়ায়।টেনে এনে বসায় কিচেন ডেস্কের উপর। ঝুঁকে গিয়ে বলে,”আমার অতীত, আমার অনেক বড় শিক্ষা।সে অতীতে তুমি নেই আমি এতেই খুশি।তখন থাকলে হয়ত সময়ের স্রোতে তোমাকেও হারাতাম।”

নিজের কাজে আবার মনোযোগ দিয়ে শর্মিলা বলে,”শোন মেয়ে,তোমার ওয়ান এন্ড অনলি কাজই হলো আমার ছেলেকে অনেকটা ভালোবাসা।তাকে আগলে রাখা।এখন ঘরে যাও। রাত যেহেতু হয়েছে বাবুর কখন ঘুম ভাঙ্গে বলা যায় না।চোখ খুলে যেন তোমাকেই দেখতে পায়”

পাখি মুচকি হেসে রাহেলার দিকে তাকায়।রাহেলা হেসে জবাব দেয়,”কি বলেছিলাম বউ মা, আমার ম্যাডামের মতো মানুষ হাজারেও পাবে না”
“হ্যাহহ, হইছে দজ্জাল শ্বাশুরি”,বলেই পাখি এক দন্ড সেখানে দাঁড়ালো না।
এদিকে শর্মিলা থ হয়ে পাখির যাওয়ার দিকে চেয়ে আছে।

“রাহেলা এই মেয়ে মজা করতেও জানে?”
“কি বলেন ম্যাডাম,ও তো অলরাউন্ডার ”

বলেই শব্দ করে হেসে ওঠে দুজনেই।

🌸🌸

“দিদা তোমার ফোন বাজছে”,ফোন হাতে হাফাতে হাফাতে বলে ইনায়াহ্।
“কে ফোন করেছে? ”
“দাদুভাই ও বাড়ির থেকে ফোন করেছে”

শর্মিলা জিহ্ব কেটে আঁচলে হাত মুছতে মুছতে ফোনটা হাতে নিলেন।
“হ্যালো”
“ও বাড়ি গিয়ে ভুলে গেলে বুঝি”
“মাফ করবেন, বাবু অসুস্থ্য হওয়ায়…….”
“কি হয়েছে শানের?”
“এতোদিনের জমানো বিশ্বাস টা ভেঙ্গে গুড়িয়ে গেছে, বাবু আমার নিতে পারে নি”,দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলে শর্মিলা।
“সব মিটে গেছে তাহলে!এখন কি তবে ছেলের কাছেই থাকবে?”
“আমার ছেলেকে আমার থেকেও বেশি আগলে রাখার, যত্নে রাখার মানুষ পেয়েছে আমার বাবু।কিন্তু আমার বুড়া রিটায়ার্ড খান সাহেবের জন্যে এরকম কাউকে পাই নি এখনো।পাইলে তখন না হয়……”

শর্মিলার কথায় শব্দ করে হেসে ওঠে আমজাদ খান।এতোক্ষন ধরে বুকের কোথাও চিনচিনে ব্যথাটা একটু কমে গেলো মনে হয় শর্মিলার রসিকতায়।
রাত হওয়ায় খান সাহেব ধরেই নিয়েছিলেন শর্মিলা বোধহয় আর ফিরবে না তার কাছে।অনেক অভিমান জমা হয় মনে।অভিমানগুলোকে দূরে রেখে তাই কল করে শর্মিলাকে।

“এতো জোড়ে হাসবেন না খান সাহেব”
“আসছো কবে?”
“আগামিকালই”

🌸🌸

পাখি তখন থেকে ঘরে পায়চারী করছে আর মাথা উচিয়ে দেখছে শানের ঘুম ভাঙ্গে কিনা।একটু পর জানলার কাছে গিয়ে দাঁড়ায়।দুপুরে গোসলের পর চুলগুলো বেঁধেছে; শুকানো হয়নি আর।তাই চুল ছেড়ে দাঁড়িয়ে দেখছে নিচের দিকে।

পিটপিট করে চোখ খোলে শানের।মাথাটা খুব ভার লাগছে।মাথার ভেতর কি যেন সব কিলবিল করছে।মাথা চেপে ধরে চারিদিকে তাকাতেই বুঝতে পারে রাত হয়েছে।জানলার দিকে চোখ পড়তেই মুগ্ধ চোখে তাকিয়ে থাকে সেদিকে।পিছনের সমস্ত কষ্ট,যন্ত্রনা সব যেন স্মৃতি থেকে মুছে গেছে একটা ঘুমের বিনিময়ে।খুব সাবধানে পা ফেলে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে পাখিকে।কাঁধের কাছে নাকটা রেখে জোড়ে শ্বাস নেয়।হকচকিয়ে ওঠে পাখি।

“কখন উঠলেন?”
“এইত”

পাখি আর কিছু বলতে পারে না। কারন ডাক্তার বলে গেছে তাকে যেন বেশি মানসিক চাপ দেয়া না হয়।কিন্তু পাখির মনে ভাবনার অন্ত নেই।
“তিনি কি আবার কষ্ট পাবেন?

“মা কোথায়?”
শানের কথায় চমকে ওঠে পাখি।সাবলিল ভাবে বলে “আচ্ছা মা নাকি আম্মা! কোনটা?”
“দুটোই।কারণ আমি দুটোই ডাকতাম”
“ছেলের জন্যে রান্না করছেন।আমায় তো রান্নাঘরে ঢুকতেই দিলো না।একদিনেই আমার সংসার দখল করে নিলো।”
“তুমি কি কান ভাঙ্গাচ্ছো আমার?”,সরুচোখে প্রশ্ন করে শান।

সেদিকে ভ্রুক্ষেপ না করে পাখি বলে,”বলে কিনা তোমার দায়িত্ব আমার ছেলেকে সামলানো।আরে বাবা তার ছেলে কি ছোট নাকি যে তাকে সামলাতে হবে!”

শান পাখির কথায় শব্দ করে হেসে আরো জোড়ে শক্ত করে চেপে ধরে।চোখ মুখ খিচে পাখি বলে,”আপনি একটা, আপনি একটা অসভ্য…..”

একটু পরে ওকে ছেড়ে দেয় শান।জানলার গ্রিল ধরে বলে,”আমি সন্তান হিসেবে অযোগ্য পাখি ”

চলবে…….

#আসক্তি২
পর্বঃ৩৫
লেখায়ঃআফিয়া আজাদ নিঝুম

সকালে মায়ের সাথে কথা বলে শান ঘরে এসে হাতের কাজগুলো শেষ করে নেয়।ল্যাপটপের খুঁটখাট ক্ষীণ শব্দটা ফাঁকা ঘরে বেশ আওয়াজ তুলছে।পাখি গোসল সেড়ে বের হয়।শানের দিকে একবার তাকিয়ে তোয়ালেতে মাথা টা মুছে নেয়।সব কাজে আজ খুব তাড়া পাখির।কারণ আজ শনিবার।স্কুল খোলা সাথে স্কুলে এক্সামেরও সময় ঘনিয়ে এসেছে।পাখির দিকে একবার তাকাতেই শান বুঝতে পারে বীষণ তাড়ার মাঝে আছে।কোলের উপর থেকে ল্যাপটপ সড়িয়ে বিছানায় রাখল।ধীরপায়ে হেয়ার ড্রায়ার হাতে নিয়ে পাখির চুল গুলো শুকাতে সাহায্য করে।

পিছন ফিরে মুচকি হেসে ওঠে পাখি।কিন্তু ব্যপার টা মন্দ লাগছে না। বরং খুবই ভালো লাগছে।হঠাৎ ডেকে ওঠে শান
“পাখি”
“হুমমম”
“জবটা ছেড়ে দাও”

অবাক হয়ে পাখি শানের দিকে ফেরে।চোখেমুখে অনেক প্রশ্ন জমলো যেন।শান বুঝতে পেরে স্বাভাবিক ভাবে আবারও পাখিকে ঘুরিয়ে দেয়।চুলে বিলি কেটে বলে,”আমি চাই তুমি মাস্টার্সে এডমিশন হও।আপাতত জব ছাড়ো।জব আর পড়াশুনা আবার সংসার সামলানো কোন অংশেই যুদ্ধের থেকে কম কিছু না।আগে পড়াশুনাটা শেষ করো।তারপর যদি ইচ্ছে হয় জব করবে, তাহলে করবে । না ইচ্ছে হলে করো না।আমার তরফ থেকে কোন প্রেসার থাকবে না।তোমার সব ডিসিশনেই আমায় পাশে পাবে”

মূহূর্তেই পাখির মুখটা কালো হয়ে যায়।কারণ সে আর চায় না পড়াশুনা করতে।সে চায় সংসার আর চাকরি টা করতে।

“আমি আর পড়ব না ডাক্তার সাহেব।আমার পড়তে ভালো লাগে না আর।কতো পড়ে আর!
আমি জবটা কন্টিনিউ করতে চাই”,অনুরোধের সুরে বলে পাখি।
শান ওকে টেনে এনে বিছানায় বাসায়।মুখোমুখি নিজেও বসে।
“লিসেন পাখি।আমার এমন কোন অভাব ধরে নি যে জবটা তোমার লাগবেই লাগবে।তাই আমি বলি আগে যোগ্যতা অর্জন করো তারপর তোমার চয়েজ তুমি কি করবে।তবে যাই করো তোমায় জব করতে দেবো না।আমি দেখেছি কয়েক রাতে তোমার মাথা যন্ত্রনা করছিলো”

পাখি আর কিছু বলতে পারে না।সত্যি কিছুদিন থেকে রাত হলে প্রচুর মাথা যন্ত্রনা করে পাখির।যদিও শানকে মুখ ফুটে কিছু বলে না।তবুও শান বুঝে যায়।

“আচ্ছা করবো না।তাহলে ম্যামকে জানিয়ে দেই”
“আমি জানিয়েছি গত পরশু”
“কিহহহহ”

🌸🌸

রান্নাঘরে সকাল থেকে এটা ওটা রাঁধছেন শর্মিলা।এতোদিন পর ছেলেকে কাছে পেয়ে দিশেহারা তিনি।কোনটা কখন রাঁধবেন সব যেন তার নখদর্পণে।

“মা, আজকেই চলে যাবেন?”

হঠাৎ পাখির কথায় মাথা তুলে তাকায় শর্মিলা।আবার কাজে মনোযোগ দিয়ে বলে, “হ্যা মা আজই যাবো।”
“আমাদের সাথে থাকুন না মা”,বেশ দরদমাখা স্বরে অনুরোধ করে পাখি।
“উুহু, ও বাড়িতে একজন বয়স্ক লোক।তাকে রেখে এভাবে থাকা উচিত হবে না”,দরজা দিয়ে রান্নাঘরে ঢুকতে ঢুকতে কথাটা বলে শান।পাখি কিছুক্ষন নজর ঘুরিয়ে বোঝার চেষ্টা করলো
“সত্যিই তো তিনি তো ভুল কিছু বলেন নি।”

শানের কথায় শর্মিলা ভিতরে ভিতরে একটু খুশি হোন।শান মায়ের পাশ ঘেঁষে দাঁড়ায়।
“কি রান্না করছো আম্মা?”,
“তোর পছন্দের তরকারি কুচো চিংড়ি মাছ দিয়ে লাউ ভাজি।”
“আহহহ,ভাবতেই জিহ্বে পানি চলে এসছে”
সবাই নিঃশব্দে হেসে ফেলে।কোথা থেকে ইনায়াহ্ এসে পাখির কাছে দাঁড়ায়

“একটা কথা বলবে, মা?”
“কি কথা বল না”,আশ্বস্ত করে শর্মিলা।
“আমি তোমার সন্তান হওয়ার মতো কোন যোগ্যতা রাখি না তাই না?”
খুন্তি ছেড়ে দেয় শর্মিলা।সটান হয়ে দাঁড়িয়ে পরে।পাশ ফেরে শানের দিকে চেয়ে বলে,”এসব আবার কি ভাবো বাবু?”
“মনে হচ্ছে ”
“সেরকম টা নয়।এখানে তোমার কোন দোষ নেই।নিয়তি আমাদের আলাদা করেছিলো আর আজ নিয়তিই এক করেছে।এসব ভেবে মন ছোট করিস না।”,ছেলের মাথায় হাত বুলিয়ে বলে শর্মিলা।
শান দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে সবজির জালি থেকে দুটো পাকা টমেটো হাতে নিয়ে পাখির দিকে তাকিয়ে শর্মিলাকে বলে,”আম্মা ধুয়ে দেও।জানো তো এ বাড়িতে কেউ আমার হাতের কাজ করে দেয় না”

সরুচোখে পাখি শানের দিকে তাকায়।বেশ অবাক হয় পাখি।শর্মিলা টমেটোগুলো ধুয়ে শানের হাতে দিতে দিতে বলে,”ওসব তুই না বললেও আমি জানি বউ মা তোর কতো খেয়াল রাখে”
পাখি এবার বাম ভ্রু টা উচিয়ে বুকের কাছে দুহাত গুঁজে শানের দিকে তাকায়। শান উপায়ন্তর না পেয়ে পাখিকে পাশ কাটিয়ে চলে আসে ড্রয়িং রুমে।পাখি বিড়বিড় করে বলে,”দাঁড়াও মজা দেখাই”

“মা, ও মা “,মুখ ভরে শর্মিলাকে ডাকে পাখি।পাখির ডাকে কান খাড়া করে দেয় শান।কারণ ডাকেই বুঝা যাচ্ছে ঘাপলা আছে।
“হ্যাহ, বলো”
“বলছি যে মা,আমি ইনায়াহ্ সহ আপনার সাথে যাই?মানে ওখানে কয়েকটা দিন থাকি?”
শর্মিলা সন্দিহান চোখে পাখির আগা-গোড়া দেখে নেয়।পাখি সেদিকে তোয়াক্কা না করে ন্যাকামির স্বরে আবার বলে,”আপনাদের মা ছেলের পূনর্মিলন দেখে মাকে আজ খুব মনে পড়ছে।ওখানে আপনার সাথে কয়েকদিন থাকি”

শর্মিলা আর কিছু বলতে পারে না।অনুভব করতে পারেন তার ছেলে যেভাবে বড় হয়েছে এই মেয়েটাও তো সেরকম কষ্ট করেই বড় হয়েছে।
“কিন্তু বাবু কি যেতে দেবে?”
“কেন দেবে না মা,আপনি বললে ঠিকই দেবে।আর আমরা কাল বা পরশু না হয় চলে আসব”,বলেই আড়চোখে শর্মিলার দিকে তাকায় পাখি। বোঝার চেষ্টা করে ট্রিকস টা কতোটা কাজে লাগলো।

“আচ্ছা আমি কথা বলে দেখি কি বলে ও”,বলে ড্রয়িংরুমে শানের কাছে আসে শর্মিলা।

“অসম্ভব”
চমকে ওঠে শান।চিল্লিয়ে বলে কথাটা। একবার রান্নাঘরের দিকে নজর ফেলে বুঝতে পারে পাখি চোখ ছোট ছোট করে মুচকি হাসছে। শানের মুখের অবস্থাটা দেখার মতো।
নজর সরিয়ে বলে, “আম্মা ওর কোথাও যাওয়া হবে না।সসামনে ওকে মাস্টার্সে ভর্তি হতে হবে।পপড়াশুনার চাপ”,থতমত হয়ে বলে শান
“মেয়েটা দুটোদিন থাকতে চাইছে আমার সাথে। যাক না।”
“না আম্মা।তুমি বুঝতেছ না”,চোখ মুখ কুচকে বলে শান।

পাখি দ্রুত এগিয়ে এসে শর্মিলার পাশে বসে বলে,”আমি যাবো মা।মনটা কেমন করছে আমার।কয়দিন থাকলে ভালো লাগবে”
শানের দিকে তাকাতেই শান যেন চোখ দিয়ে গিলে ফেলবে ওকে।কটমটে দৃষ্টিতে চেয়ে দাঁতে দাঁত পিষে বলে,”যাওয়া হবে না বলেছি তো ”
শর্মিলা বাঁকা হেসে বলে,”আচ্ছা তুইও চল তবে”
“যাবো না আমি, ওরে নিয়ে যাও”,ঠান্ডা কন্ঠে বলে শান উপরে চলে যায়।পাখি হেসে ফেলে শব্দ করে।শান সিঁড়ি থেকে দেখে আবার উঠে যায়

🌸🌸

সকাল বেলা রাফি ইনায়াহ্’কে স্কুলে দিয়ে আসে।রাখিকে বলে দেয় জব ছাড়ার কথা।একটু মন খারাপ করলেও পরোক্ষণে শানের সিদ্ধান্তে একমত হয় রাখিও।
শর্মিলা পাখিকে সাথে করে চলে যায় ও বাড়ি।শান মুখ গোমড়া করে হসপিটালে যায়।

এ বাড়িতে আসার ঘন্টা খানিক হয়েছে এর মাঝে একটি বারও শান কল করে নি।পাখি কল করলেও রিসিভ করে নি।কেমন যেন চাপা অভিমান জমা হয় মনে।মনকে বোঝায় আর কল দেবে না সে শানের কাছে।পুরো বাড়িটা ঘুরে ঘুরে দেখছে সে।তবুও মন ভালো লাগছে না তার।শানকে একটু মজা বুঝাতে নিজেই সে মজা হারে হারে টের পাচ্ছে যেন।

উপরের বেলকোনি ওয়ালা ছোট ঘরটায় পাখির থাকার বন্দোবস্ত করেন শর্মিলা।কতোবার নিজের সাথে রাখতে চেয়েছিলো শর্মিলা। কিন্তু পাখি থাকে নি।কারণ তার বিশ্বাস শান তাকে সারাদিন ভুলে থাকলেও ঘরে ফিরে অবশ্যই তাকে কল করবে।আর রাতে শ্বাশুরির ঘরে থাকাটা কেমন সমীচীন লাগল না তার।তাই এই ঘরেই থাকার সিদ্ধান্ত নেয়।

“উনি কি করছে এখন?একটি বারও কি কল টা রিসিভ করা যায় না?এতো রাগ? দুপুরে খেয়েছে কিনা তাও তো জানতে পারছি না”

“বউ মা খেতে আসো”
শর্মিলার ডাকে ভাবনার সুতো ছেড়ে পাখির।মুখটা পাংশুটে করে আপন মনে বলে, “খেতেই তো ইচ্ছে করছে না”

“ভাবি, বড় মা খেতে ডাকছে।খাবেন না?”,বলতে বলতে ঘরে ঢোকে রানু।
মুখে মিছে হাসি টেনে পাখি বলে,”হ্যা খাবো।কিন্তু আমার তো এখন ইচ্ছে করছে না।”
“বড় মা আপনাকে টেনে নিয়ে যেতে বলেছে। চলুন।নয়ত আমাকেই বকবে”,হরবরিয়ে কথাগুলো বললো রানু।
“আচ্ছা, চলো”,বলে অভিমানে বিছানার উপর ফোনটা ছুড়ে ফেলে চলে যায় পাখি।

ডায়নিং টেবিলে হরেকরকমের খাবারের আয়োজন করেছে সবাই।পাখির চোখ কপালে উঠে যায়।খান সাহেব একে একে সার্ভ করছে দেখে পাখির ঠোঁটে আপনাআপনি হাসি ফুটে ওঠে।শর্মিলা চেয়ার টেনে বসতে বসতে পাখিকে ইশারা করে বসতে।চোখের ইশারায় খান সাহেবকে দেখিয়ে বলে,”এতোসব কিছু উনিই যোগাড় করেছে।আমাকে কিছুই করতে দেয় নি”
পাখি অবাক হয়ে তাকায় খান সাহেবের দিকে।মুচকি একটা হাসি উপহার দিয়ে বলে,”এ বাড়িতে যদিও এটা দ্বিতীয় বার আসা তবুও এটাই প্রথম।আর একমাত্র ছেলের বউকে ভালো মন্দ খাওয়াবো না তা কি হয়”

খান সাহেবের কথায় সবাই হেসে ওঠে।প্লেটে খাবার নিয়ে একের পর এক নাড়াচাড়া করছে পাখি।
“বউ মা, রান্না ভালো হয় নি”
চমকে পাখি মাথা তুলে তাকায়।জোড় করে হাসি টেনে বলে,”সেরকমটা নয় মা”
“তাহলে?”
“কিছু না মা”,বলে জোড় করে খাবারে মনোযোগ দেয় পাখি।
শর্মিলা বেশ বুঝতে পেরেছে শানের সাথে এখনো কথা হয় নি পাখির যার জন্যেই মন খারাপ।মুচকি হেসে খেতে খেতে বলে,”দেখি তো ছেলেটা কি করছে”

খাওয়ার ফাঁকে ফোন দেয় শানের কাছে।মাথা তুলে অধীর আগ্রহে শর্মিলার দিকে তাকিয়ে থাকে পাখি।

কিছুক্ষন কথা বলার পর শর্মিলা ফোন রেখে দেয়।পাংশুটে মুখে পাখি ভাবতে থাকে,”আমি এতোগুলো ফোন দিলাম…..!”
“বাবুর নাকি খাওয়ার মতো সময় হয় নি। একটু পরেই খেয়ে নিবে”,
পাখির এতোসব খাবার একদমই আর ভালো লাগছিলো না।কোনমতে কিছু মুখে দিয়ে দ্রুতই উঠে যায় উপরে।হতভম্ব হয়ে সেদিকে চেয়ে থাকে খান সাহেব।

শর্মিলা হেসে বলে,”ওদের দুজনের মাঝে একটু মনোমালিন্য হয়েছে।চাপ নিয়েন না।আমার বিশ্বাস বাবু আসবে এ বাড়িতে”
“আচ্ছা আচ্ছা “,বলেই আবারও খাওয়ায় মন দেয় খান সাহেব।

🌸🌸

দুপুর গড়িয়ে সন্ধ্যা হয় তবুও শানের কোন খবর মেলে না। এদিকে ঠিকই মায়ের সাথে সারাক্ষন কথা বলেই চলেছে।পাখি বেশ বুঝতে পেরেছে এভাবে আসাটা উচিত হয় নি তার।নিজে নিজেই বিড়বিড় করে, “মাত্র কয়েকটা ঘন্টা তাকে ছেড়ে এসেছি তাতেই এতো অস্থির লাগছে কেন।মনে হচ্ছে কতো বছর তার সাথে দেখা হয় না,কথা হয় না।আমার কি এভাবে আসাটা ভুল হলো?”

শানের চিন্তায় চিন্তায় কেটে যায় পুরো সন্ধ্যা।দুপুরের পর ইনায়াহ্’ও এ বাড়ি চলে আসে।বার বার চেষ্টা করছে সবার মাঝে, সবার সাথে হাসিখুশি থাকতে কিন্তু পারে নি।শানের কথা মনে পড়েছে খুব।মনটা বিষিয়ে উঠেছে যেন।সকলের জোড়াজুড়িতে রাতের খাবারটা কোনমতে খেয়ে নিয়েছে পাখি।এরপর গোমড়া মুখে ঘরে চলে আসে।

বার বার ঘুমানোর চেষ্টা করেও কোন লাভ হচ্ছে না আজ।শানের চিন্তা আর শানের মুখটা কিছুতেই ভুলতে পারছে না সে।কল করে শানের কাছে।দুই বার রিং হয়ে কেটে যায়।তৃতীয় বার কল করতেই রিসিভ করে শান।পাখির মুখের সমস্ত বুলি যেন ফুরিয়ে গেছে।
“হ্যা কিছু বলবা? “,কাটকাট কন্ঠে প্রশ্ন করে শান।
পাখি কিছু বলতে পারে না।বালিশে মুখ গুঁজে চুপ করে থাকে।
“তোমার নিঃশ্বাসের শব্দ শোনাতে কল করেছো বুঝি?”,পাখির জবাব না পেয়ে আবার বলে শান।

পাখি মাথা তুলে বিছানার উপর বসে পরে। ঠোঁট উল্টে বলে,”সারাদিন কল ধরলেন না যে? ”
“এমনিই, আমার ইচ্ছে”
পাখি আর কোন কথা খুঁজে পায় না।কেমন যেন গায়ে পড়া লাগছে তার নিজেকে।খট করে ফোন টা কেটে বালিশের কাছে রেখে দেয় সাইলেন্ট করে।

শান বাড়ি ফিরেছে অনেকক্ষন হলো।পুরো ঘরে পাখির শরীরে গন্ধ এখনো রয়ে গেছে।দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে ওয়াশরমে চলে যায়।ফ্রেশ হয়ে ফ্রিজ খুলে খাবার গরম করে নেয়।একা একা খেতে মোটেই ইচ্ছে করছে না তার।ফোনের গ্যালারিতে নিজেদের নানা খুঁনসুটির ছবি বের করে দেখতে শুরু করে শান।খাওয়া শেষে পুরো বাড়িটা ভালো করে দেখে নিয়ে নিজের ঘরে চলে যায়।বিছানায় গা এলিয়ে দিতেই ঘুম এসে জড়ো হয় চোখের পাতায়।

মাত্র কয়েক মিনিট পরেই সে ঘুম উবে যায় কর্পুরের মতো।পাশ ফিরে পাখির শোবার জায়গার দিকে তাকায় নিষ্পলক।কেমন যেন শূন্য শূন্য লাগে তার।

🌸🌸

মন খারাপের কাছে ব্যর্থ হয়ে পাখি বেলকোনিতে এসে দাঁড়ায়।ছোট ছোট ফুলের টব সেখানে টাঙ্গানো।চাঁদের আলোয় চিকচিক করছে পাতাগুলো।এমনি সময় এ সামান্য সৌন্দর্যটুকুই পাখির মন ভালো করার জন্যে যথেষ্ঠ ছিলো কিন্তু আজ হচ্ছে না।

সময় তখন ১ বেজে ২০ মিনিট।বাড়ির সামনে একটা গাড়ি এসে দাঁড় হয়।চাঁদের আলোয় চারপাশ পরিষ্কার বোঝা গেলেও গাড়ির মানুষ টা কে বুঝতে পারছে না পাখি। কারণ এ বাড়ির গেইটের সাথে বড় কৃষ্ণচূড়া গাছটার ছায়া ঢেকে দিয়েছে মানুষটার পুরো শরীর।ভ্রুকুচকে সেদিকে তাকিয়ে থাকে পাখি।

লোকটা ফোন বের করে কাউকে কল করছে যেন।একবার কেটে যেতেই আবার কল করে। তাতেও কেটে যায়। এবার বিরক্ত হয়ে গাড়ির শেডে একটা কিল বসায়।চাঁদের আলোয় মুখের বাম পাশ বুঝতে পারে পাখি। এবার ভাবনার উদায় হয় দৌঁড়ে ঘরে গিয়ে দেখে অনেকগুলো মিসড্ কল।লক খুলে চোখ ছানাবড়া তার।
“এতোবার উনি কল করেছে”
তড়িঘড়ি করে ব্যাক করতেই চাপাস্বরে ধমকিয়ে ওঠে শান।

“কতোক্ষন ধরে কল করছি আমি।গাধি কোথাকার।ফোন কোথায় তোমার?”
পাখি কিছু বলতে পারে না।মুখে অজানা ভালো লাগায় হাসি ফুটে ওঠে।ফোন কানে নিয়েই বেলকোনিতে চলে আসে নিশ্চিত হওয়ার জন্যে।

এদিকে শান হ্যালো হ্যালো করে বিরক্ত হয়ে কেটে দিয়ে আবার কল দেয়।সবটাই উপর থেকে পরোখ করে পাখি।এবার কল রিসিভ না করেই খুব সাবধানে সিঁড়ি বেয়ে নিচে নেমে আসে। সদর দরজা খুলতেই ভিতর থেকে কেউ শব্দ করে
“উহুম উহুম”
চমকে তাকায় পাখি।কাচুমাচু করে ঠাঁয় দাঁড়িয়ে থাকে।

“এতো রাতে কোথায় যাচ্ছো বউ মা?আর তুমি তো এ জায়গার কিছু চেনো না তাহলে?”
শর্মিলা সবটাই দেখেছে তার ঘরের জানালা দিয়ে।

খান সাহেব বেশ রাত অবধি জেগে জেগে বই পড়েন।আজও তার ব্যতিক্রম নয়।জানলা দিয়ে তিনি বেশ বুঝতে পারলেন গেইটের সামনে কেউ গাড়ি নিয়ে দাঁড়িয়ে।শর্মিলাকে ডেকে বলেন,”দেখো তো চেনা যায়?”
“আরে এটা তো বাবু।এতো রাতে এখানে কেন”,ধড়ফড়িয়ে বিছানা ছেড়ে উঠে বলে শর্মিলা।গা ঝাঁকিয়ে হেসে খান সাহেব বলেন, “যাও বউ মা গেলে, দরজা লাগিয়ে এসো”

“কি হলো বউ মা কিছু বলছ না যে”,বলে মিটিমিটি হেসে ওঠে শর্মিলা।
আমতাআমতা করে পাখি বলে,”মা উনি এসেছে”
এবার আর হাসি আটকে রাখতে পারে না শর্মিলা।হেসে কুটিকুটি হয়ে কাছে এসে বলে,”এরকম আর কখনো করবে না।আমার ছেলেকে ছেড়ে কোনদিন কোথাও যাবে না।”
মাথায় গাট্টা মেরে বলে,”নিজেও থাকতে পারো না আর আমার ছেলেটাও তো পারে না দেখছি।যাও আমি কাল বা পরশু ইনায়াহ্’কে নিয়ে যাবো”

পাখি মাথা তুলে লজ্জা পেয়ে বলে, “আসি মা”
“পাগলি ”

🌸🌸

গাড়িতে বসে আছে পাখি।শান কোন কথা ছাড়াই ড্রাইভ করে চলছে।বাড়ি পৌঁছিয়েও একটা কথা বলে নি সে।পাখি পা টিপে টিপে ঘরে ঢোকে।ঘড়ের অবস্থা দেখে আপনাআপনি হা হয়ে যায় পাখির মুখ। সারাঘরের সব জিনিস লণ্ডভণ্ড।সিগরেটের শেষ মাথা,সাথে সিগারেটের ছাঁই তো ফ্রি। কাবার্ডের একটা কাপড়ও ঠিক জায়গায় নেই।

খানিক পরেই শান ঘরে ঢোকে।
“এসব কি?”,অাহতস্বরে প্রশ্ন করে পাখি।
শান কোন উত্তর না দিয়ে পাখিতে টেনে আনে বিছানায়।জোড় করতেই পাখি হকচকিয়ে ওঠে।
“কি হচ্ছে কি? আগে বলুন এসবের মানে কি? ”
শান তাতেও কিছু না বলে পাখিকে বুকের সাথে চেপে ধরে শুয়ে থাকে।ঘনঘন শ্বাস ফেলে কাঁধে। পাখি ছোট্ট ছানার ন্যায় চুপচাপ শুয়ে থাকে।নীরবতা ভেঙ্গে শান কাঁধে চুমু দিয়ে বলে, “ফের যদি কোন আমায় ছেড়ে থাকার কথা ভাবো এর থেকেও ভয়ানক ঝড় তুলব বাড়িতে”

শানের কন্ঠের প্রগাঢ় কথা যেন অন্তরকে ভরিয়ে তোলে।মিষ্টি হেসে বলে,”যাবো না”
“ঘুমাও এবার। আর আমাকেও ঘুমাতে দাও”

চলবে……