প্রেমজাল পর্ব-৩৩

0
1101

#প্রেমজাল
#পর্ব ৩৩ [ ধামাকা পর্ব ]
জান্নাতুল মাওয়া মাহিমুন

-‘ আপনি এতোটা নিষ্ঠুর হলেন কীভাবে, আদ্র ভাই? আমার আর আমার মায়ের সাথে কি এমন শত্রুতা আপনার যে আপনি তাকে প্রাণে মেরে ফেললেন? কেনো করলেন এমন?’

-‘ হয়তো এর উত্তরের কিছুটা আমি জানি’

দরজার দিক থেকে আচমকা কন্ঠ স্বর ভেসে আসতেই আমরা সকলে সেই পানে দৃষ্টিপাত করি। আমি বিস্মিত!! সেই যে আর কেও না বড় কাকিমণি। বড় কাকিমণি এখানে কেনো? তাহলে কি বড় কাকিমণি জানতো আমার মায়ের খুন হয়েছে তাও আদ্র ভাই এর হাতে? বড় কাকিমণি কি আদ্র ভাই এর সাথে জড়িত? প্রাণ নাশের মতো অধম খেলায় মেতেছে তারা?

আমি ক্ষিপ্ত স্বরে বললাম,

-‘ বড় কাকিমণি!! তুমি?? তুমি জানতে আমার মায়ের খুন হয়েছে? কেনো বলো নি আমাকে? কেনো আমাকে এই দুনিয়াতে আসার আগেই মাতৃহারা করে দিলে? কেনো জ্ঞান হওয়ার পর থেকে মায়ের অপমৃত্যুর খুনির ট্যাগ পেলাম? বলো!! উত্তর দাও আমাকে। আদৌ উত্তর আছে তোমার কাছে?’

বড় কাকিমণি তাচ্ছিল্যের হাসি হেসে উঠলো। তার হাসির ধ্বনি আমার হৃদয়ে মাঝে ঘৃণা বীজ বপন করছে। ঘৃণার তীব্রতা যেনো তীর তীর করে বৃদ্ধি পাচ্ছে।

আয়ান মাঝখানে ফোড়ন কেটে বলে উঠলো,

-‘ ছিঃ মামীমা!! তাহলে তুমিও বিশ্বাসঘাতকতা করলে। তাহলে তোমার আর মিস্টার আহনাফ আহমেদের মধ্যে পার্থক্য রইলো কোথায়? আমি তখন এতোও ছোট ছিলাম না যে কিছুই মনে থাকবেন না। সে সাজানো গোছানো সংসারকে ভেঙে চুরমার করে একজনকে জীবন্ত লাশ বানিয়ে দিয়ে গিয়েছিল আর তুমি সেই জীবন্ত লাশকে মেরে ফেললে?’

আমি চমকে উঠলাম আহনাফ আহমেদ নামটা শুনে। আহনাফ আহমেদ যে আমার জন্মের পর থেকেই আমার সাথে জুড়ে আছে। তবুও তাকে দু’দন্ড দেখার মতো ভাগ্য আমার ছিলো না। আমি এতোটাই হতভাগি যে নিজের বাবার ছবি টুকুও দেখি নি। পরিবারের কেও কেনো আমার তার ছবি দেখাতে চায়নি কে জানে। সারাজীবন শুধু নামটাই শুনে গেছি। যদি পড়ালেখা না করতাম হয়তো সেটাও জানতাম না।

আমি কাপা কাপা কণ্ঠে বলে উঠলাম,

-‘ আ..আ..আহনাফ আহমেদ? বাবা? তার সাথে বড় কাকিমণি সম্পর্ক কি? তাদের মধ্যে কীসের পার্থক্য?’

-‘ তা না হয় মামীমা নিজেই বলুক’ বলতে বলতে আয়ান আমার দিকে এগিয়ে এসে আমার হাতের বাধন খুলে ফেলে। বড় কাকিমণি আদ্র ভাই এর দিকে ক্রোধিত ভঙ্গিতে তাকিয়ে আছে। আমি বড় কাকিমণির সামনে গিয়ে দাড়ালাম।

আমি আহত গলায় জিজ্ঞেস করলাম,

-‘ কি এমন ক্ষতি করে ছিলাম আমি তোমার? কেনো কেড়ে নিলো আমার মা কে?’

বড় কাকিমণি চোয়াল শক্ত করে আদ্র ভাই এর দিকে তাকানারত অবস্থাই বলতে শুরু করলো,

-‘ তুই না করলেও তোর মা আমার অনেক বড় ক্ষতি করেছে। আমার সংসার, আমার অধিকার এমনকি আমার স্বামীকে কেড়ে নিয়েছে। বল তুই মেনে নিতে পারবি তোর আর আয়ানের মাঝে যদি কোনো তৃতীয় ব্যাক্তি আসে? সেটাও যদি সে ৩ মাসের গর্ভবতী হয়ে?’ বলে বড় কাকিমণি আমার দিকে তাকালো।

আমি নিস্তব্ধ!! প্রতিনিয়ত যেনো নতুন রহস্যের উদঘটন হচ্ছে। আমার মা বড় কাকিমণির সংসার, অধিকার, স্বামী কেড়ে নিবেই বা কেনো? একজন স্ত্রী কখনো তার স্বামীকে পর-নারীর সাথে ভাগ করতে পারে না। আমিও পারবো না কখনো।

বড় কাকিমণি আমাকে নিশ্চুপ থাকতে দেখে আবার বলতে শুরু করলো,

-‘ হ্যা তোর মা আনফিহাই আমার সাথে এমন করছে। আমার সংসার ভেঙ্গেছে। আমার স্ত্রীর অধিকার কেড়ে নিয়েছে। আমার স্বামী আহনাফকে নিজের করেছে। কি অবাক হচ্ছিস আহানা? হ্যা তোর জন্মদাতা পিতাই আমার স্বামী। আর ছেলে আদ্রিয়ান আহমেদের বাবা আহনাফ আহমেদ। এই সমাজের তথাকথিত সম্পর্ক অনুসারে আমি তোর সৎ মা। যাকে তুই ছোট থেকে বড় কাকিমণি বলিস সেই হলো তোর বাবার ১ম স্ত্রী।……(একটু থেমে) বিশ্বাস কর আহানা আমি জানতাম না যে আনফিহার মৃত্যুর জন্য আমারি সন্তান আদ্র দায়ী। কিছুক্ষণ আগ পর্যন্ত জানতাম তোর ভুমিষ্ঠ হওয়ার দিন তোকে জন্ম দেওয়ার সময় প্রেসার নিচে নেমে যাওয়ায় শ্বাসকষ্টে মারা যায়। তবে সেদিন আমার থেকে বেশি খুশি আর কেও হয়নি রে। ভেবেছিলাম আপদ বিদেয় হয়েছে। দীর্ঘ ১০ বছর সংসার করার পর ৭/৮ বছরের ছেলে থাকতেও তোর বাবা তোর মাকে ঘরে তুলেছিলো। চালিয়ে ছিলো আমার অপর অমানবিক মানসিক ও শারীরিক অত্যাচার। আমার ছোট্ট সন্তানের অপর কিরূপ প্রভাব ফেলেছিলো তুই ভাবতে পারছিস? তোর মার কারণে আমার সাজানো গোছানো সংসার চুরমার হয়ে যায়। যেসময় আমার সন্তানের বাবার আদর-স্নেহ পাওয়ার কথা ছিলো সে তখন তার মায়ের অপর তারই বাবার মারধর দেখেছে। হয়তো এসবি ফলশ্রুত আদ্র সেদিন এমন ভয়ংকর পদক্ষেপ নিয়েছিলো। ঠেলে দিয়েছিলো আনফিহাকে মৃত্যুর কোলে।…….(একটু থেমে ককর্শ গলায়) আহনাফ বিশ্বাসঘাতক!! আমার বিশ্বাস ভেঙ্গেছে। এই পরিবারের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করছে। এতো সম্পত্তি থাকার পরও আহনাফকে আমার বাপের বাড়ির থেকে আনা সব পুজিপাত এনে দিয়েছিলাম ব্যবসা করার জন্য। নিজের পায়ে ধার হওয়ার জন্য। নিজস্ব ভিত্তি তৈরি করার জন্য। কিন্তু সে কি করেছে জানিস? সব কিছুর প্রতিদান হিসেবে আমাকে কষ্ট দিয়েছে। সে ব্যবসায় উন্নতি করবে বলে আমার থেকে গোটা ৩ টা বছর দূরে রেখেছি। নিজের শখ-আহ্লাদ সুখ বিসর্জন দিয়েছিলাম। সে ৩ বছর ফিরে আসে আমার কাছে। তবে একা নয়, সাথে ছিলো তোর মা। তোর মায়ের পেটে তখন তুই একটু একটু করে বেড়ে উঠছিলি। পারিনি সেদিন তোর মাকে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে দরজা বন্ধ করে দিতে। সেই আমাকে তুই নিষ্ঠুর তকমা দিচ্ছিস? তোর বাবা-মা বেচে থেকেও মেরে ফেলেছিলো রে। জীবন্ত লাশ বানিয়ে দিয়েছিলো। বুকের মাঝে হাহাকার নিয়ে দিন পার করছি। এমনো রাত গেছে কান্না করতে করতে ঘুমিয়েছি। সবকিছুর সাক্ষী এই জাহানের মালিক মহান আল্লাহ তায়ালা এবং এই আদ্র।…… (একটু থেমে আহত গলায়) তবে সে আমার সন্তান বলে ছাড় পাবে সেটা হবে না। অপরাধের উপযুক্ত শাস্তি সে পাবেই। শাস্তি পাবে তার বাবার মতো ধ্বংসের পথে চলার পরিণাম। তিন তিনটা মেয়ের জীবন নিয়ে ঘৃণ্য খেলায় মেতে উঠার পরিণাম’ বলে বড় কাকিমণি স্বজোরে আদ্র ভাইকে থাপ্পড় মারলো।

পরিপ্রেক্ষিতে গালে হাত দিয়ে আদ্র ভাই বলে উঠলো,

-‘ মায়ায়ায়া…’

বড় কাকিমণি চোয়াল শক্ত করে বলে উঠলো,

-‘ একদম আমাকে মা ডাকবি না। আমি তোর মতো কুলাং’গার সন্তান পেটে ধরতে পারি না। বল তোর আর তোর বাবার মধ্যে তফাৎ কই? কথায় আছে পাপে বাপেরে ছাড়ে না। কিভাবে পারলি তোর বাবার ঘৃণিত পথে চলতে? হাহ!! একবারো ভেবেছিস আমি কীভাবে জানলাম এখানকার হদিস? কে দিয়েছে জানিস? রিয়া!! মনে রেখেছিস তো? নাকি প্রয়োজন নেই বলে ফেলনা জিনিসের মতো ছুড়ে দিয়েছিস? রিয়া!! এই রিয়া। সবাইকে নিয়ে ভেতরে আসো’

রিয়াসহ আরো কয়েকজন হুড়মুড়িয়ে ভিতরে ঢুকলো। একজনকে হাতে হ্যান্ডকাপ পড়িয়ে ধরে রেখেছে দুই পুলিশ কন্সটেবল। তিনজন এসেই আয়ানকে স্যালুট করলো। সবার মধ্যে আমি তিন জনকে চিনতে সক্ষম হলাম। রিয়া আপু, তিথি আপু আর দূর্ঘটনা আঘাতপ্রাপ্ত শুভ্ররাঙা জামায় রক্তের দাগ সহিত রুহি নামের মেয়েটা। মাথায় এখনো তার ব্যান্ডেজ। হাতে তার একটা প্যাকেট।

আমি উত্তেজিত বশে বলে ফেললাম,

-‘ তিথি আপু তুমি?’

তিথি আপু প্রতিত্তোরে মুচকি হাসি দিয়ে বললো,

-‘ হ্যা গো সতিন আমি’

অন্যসময় হলে হয়তো আমার গা জ্বলে যেতো কিন্তু আপাতত কিছুই হলো না। সেইদিনের গাইয়া মেয়েটাকে আজ চিনার কোনো জোয়ার নেই। একদম পরিপাটি অবস্থায় পুলিশ ইউনিফর্ম পরিহিত অবস্থায়। রুহি নামের মেয়েটা এগিয়ে আসলো আমাদের দিকে। হাতে থাকে প্যাকেট আয়ানের হাতে তুলে দিয়ে বললো,

-‘ নিউ এস. সি. আই. রুহি স্যার। আপনার আমানত’

বলে আড়চোখে আদ্র ভাই এর দিকে ঘৃণার দৃষ্টিতে তাচ্ছিল্য হাসি টেনে তার দিকে এগিয়ে বললো,

-‘ কি আদ্র অবাক হচ্ছো? কি ভেবেছিলে আমি আমার স্বপ্ন পূরণ করতে পারি নি? তাই তো আমাকে এতোটা কাছে নিয়েও দূরে ঠেলে দিয়েছো, তাই না? আমি সবসময় তোমাকে আমার প্রিয়জন ভেবেছি কিন্তু তুমি আমাকে? শুধু প্রয়োজন তাই না? কেনো এমন করলে? এতো নাটকের এতো মিথ্যার আশ্রয় নিয়ে কি পেলে? তুমি ভালো করেই জানতে আমি তোমার করা ড্রা-গস সাপ্লাই এর মতো ক্রাইম এর অনুসন্ধান চালাচ্ছি। তাই তো তুমি আমাকে তোমার প্রেমে তোমার জালে তোমার #প্রেমজাল এ ফাসালে, তাই নয় কি? যাতে তুমি সুযোগ বুঝে তোমার বিরুদ্ধে সব প্রমাণ হাতিয়ে নিতে পারো কিংবা আমাকে ব্ল্যাকমেইল করতে পারো। সব তোমার প্ল্যান মোতাবেক হলেও সেদিনের কিছু ভুল বোঝাবুঝির জন্য সব পালটে যায়। ভুলবশত আমার নামের সাথে অন্য একজনের নাম গুলিয়ে ভুল মেইল আমাকে পাঠানো হয়। যেটা দেখে তুমি অবগত হও আমি এস. সি. আই. পদ লাভ করিনি। যার সাপেক্ষে আমি তোমার কাছে ফেলনা হয়ে গেলাম। আমার সাথে সব সম্পর্ক ছিন্ন করে চলে আসলে আমাকে একা করে। তোমাকে হারানোর ধাক্কা না সইতে পেরে অজ্ঞান হয়ে যাই। পরে ডাক্তার কিছু টেস্ট করাতে দেয়। পরবর্তীতে ভাগ্যের নির্মম পরিহাসে জানতে পারি আমি তোমার সন্তানের মা হতে চলেছি। আশার আলো ফুটে আমার মাঝে। কিন্তু আমি তোমার সাথে যোগাযোগ করতে চেয়েও সক্ষম হতে পারিনি। আর যেদিন পারলাম, সেদিন তো আমার সাথে সাথে আমাদের সন্তান.. নাহ আমার সন্তানকে অস্বীকার করলে। এককথায় প্রত্যাখান করলে আমাদেরকে। কিন্তু কথায় আছে না যে, রাখে আল্লাহ মারে কে? আমি সবকিছু হারিয়েও হারায়নি। আজ আমি এস. সি. আই. এর একজন এজেন্ট। সাথে করে কি নিয়ে এসেছি জানো? তোমাকে এরেস্ট করার চার্জশিট!! অতি সুরক্ষার সাথে পরোক্ষভাবে বিশস্ত মানুষ দ্বারা ধাপে ধাপে পাঠানো হয়েছে। যাতে তোমার মতো ক্রিমিনালরা সন্ধান পেয়ে গুম না করে ফেলে।……..(একটু থেমে) হাহ!! এবার তুমি পাবে তোমার অপ’কর্মের ফল। এতোগুলো মানুষের জীবন নিয়ে ড্রা’গস এর মতো বিষাক্ত নেশায় জড়ানোর শাস্তি। শুধু তুমি না সাথে তোমার বর্তমান প্রেমিকা মাধুরী। যে তোমাকে এইসব অসৎ কাজে সহায়তা করেছে’

তিথি আপু কথার মাঝে ফোড়ন কেটে বলে উঠলো,

-‘ সাথে পাবে এক বার নয় দু’দুই বার একটা মেয়েকে মলেস্ট করার শাস্তি। কতোটা লজ্জাজনক বিষয়। ছিঃ নিজের বোনকে কীভাবে নিজেই ধর্ষণ করার এবং করাতে চাওয়ার চেষ্টা করেন আপনি, মিস্টার আদ্রিয়ান আহমেদ?’

আদ্র ভাই হুংকার দিয়ে বলে উঠে,

-‘ না!!! আহানা আমার নিজের বোন না। আমার সৎ বোন। ওর জন্য ঘৃণা ছাড়া আর কিছুই নেই আমার কাছে। ওর মায়ের জন্য আমি আমার মাকে কষ্ট পেতে দেখেছি। যদি আহানা পেটে না থাকতো তাহলে মা কখনো অই মহিলা আনফিহাকে ঘরে তুলতো না। আনফিহা এতোটাই ছলনাময়ী ছিলো যে সে বাবা দাদাকে ভুলিয়ে ভালিয়ে উইল করায়। যেখানে বাবা-দাদার সব স্থাবর অস্থাবর সব সম্পত্তি মালিকানা নির্দিষ্ট একজন পাবে। তাহলে আমার মা এতো কষ্টের খেসারতে কি পাবে? আমি কি পাবো? হ্যা সত্যি যে আহানার সাথে আমার কোনো শত্রুতা নেই। কিন্তু ওযে আমার শত্রুর প্রাণ ভোমরা। আয়ান চৌধুরীর প্রাণ ভোমরা। আমি আয়ানের পিঠাপিঠি থাকলেও সবাই সবসময় আয়ানকে দেখিয়ে বলতো ওর মতো হো, ওর মতো কাজ কর, ওর থেকে শিখ!! সবসময় ওর সাথে আমাকে কেনো তুলনা করা হবে? ওর মূল্যবোধ আমি কেনো চলতে যাবো? হুয়াইইইই?? আগে থেকেই আয়ানের সাথে আমার ভালো বনতো না। আমার দু’চোখের বি’ষ হলো আয়ান। সময় অতিবাহিত হতে লাগলো। আস্তে আস্তে আমার মাথায় যেনো জেদ চেপে বসলো। আয়ান এবরোড থেকে দেশে ফিরলো। গ্রামের বাড়ি স্বপ্নকুঞ্জ গেলো বেড়াতে। সেদিন মন চেয়েছিলো শা’লা কে মেরে পুতে দেই। আমি সুবর্ণ সুযোগ খুজতে লাগলাম। উঠে পরে লাগলাম আঘা’ত হানার জন্য। তবে মেরে ফেলে নয়। মারার হলে আগেই মারতাম। তিলে তিলে কষ্ট দিয়ে আমার ক্ষোভ মিটাতে চেয়েছিলাম। ভাগ্যক্রমে পেয়েও যাই। একরাতে একটা অনুষ্ঠানে আমরা পুরো পরিবার গিয়েছিলাম। সেরাতে অনুষ্ঠানে কিছু আচরণে বুঝতে পারি আয়ান এখনো ছোটবেলার মতো আহানার অপর দুর্বল আছে। আমার কাজ সহজ হয়ে যায়। আয়ানের ক্ষতি না করে ওর কলিজার ক্ষতি হলে আয়ান তা কখনোই মেনে নিতে পারবে না। অপরিচিত বাড়ি, অপরিচিত পরিবেশ, অপরিচিত মানুষের ভীড়ে কে এমন করলো কেও বুঝতো না। আমার প্রতিশোধ নেওয়াও হতো ধরাও খেতাম না। তাই যখন আহানাকে একা একটা রুমে যেতে দেখলাম তখনি ঝাপিয়ে পরলাম। কিন্তু সফল হলাম না। তাই আবার মাধুরীকে ব্যবহার করতে বাধ্য হলাম’

আয়ান বাকা হাসি দিয়ে বললো,

-‘ ব্রো তোর আইডিয়া কিন্তু সলিড ছিলো। কিন্তু চোর যতই চালাক হোক না কেনো ভুল তো করেই। তুই আহানার সাথে ধস্তাধস্তি করার সময় তোর ঘড়ি খুলে নিচে পরে যায়। তোর ধরা পরে যাওয়ার মূল ও অন্যতম কারণ হলো এটাই। আমি সবার অগোচরে ঘড়িটা তুলে নেই এবং পরে তিথিকে হস্তান্তর করি। তিথি অই গ্রামের মেয়ে তাই কার হতে পারে তা বের করার দায়িত্ব তাকেই দেই। যেদিন সুহাকে দেখতে আসে স্বপ্নকুঞ্জে, সেদিনের রাতে তিথি আমাকে সব প্রমাণসহ দেয় যে এই ঘড়ির আসল মালিক তুই আদ্র। আর বাকি রইলো মাধুরী? তুই আমার এলাকায় এসে আমাকেই বাজিমাত দিতি?’

আমি এদের কথায় বিমূঢ় হয়ে দাড়িয়ে আছি। মাথায় আমার আকাশ ভেঙ্গে পরার উপক্রম। মানুষ কতোটা পথভ্রষ্ট হলে এসব করতে পারে। হায় ইয়া আল্লাহ মাবুদ সবাইকে হেদায়েত দান করো। আর কতো রহস্য এরা এদের বুকের পাজরে লুকিয়ে রেখেছে কে জানে?

রিয়া আপু সিক্ত কন্ঠে আদ্র ভাই এর দিকে তাকিয়ে বললো,

-‘ সবার উত্তর যখন দিলে তখন আমার উত্তর টাও দাও। আমি তোমার কি এমন করেছি বলো? আমার জীবনটা ছারখার করে কেনো দিলে?’

আদ্র ভাই রিয়া আপুর থেকে মুখ পাশ ফিরিয়ে নিলো। রিয়া আপুর চোখ পানিতে টলমল করছে। রিয়া আপু চোখ মুছে আদ্র ভাই এর কলার চেপে ধরে জিজ্ঞেস করলো,

-‘ বলো আদ্র? কেনো করলে এমন? উত্তর দিচ্ছো না কেন? আমাকে কেনো ঠকালে তুমি? আমি তো তোমার সব কিছু মেনে নিয়েছিলাম। আমি তো তোমার বিয়ে করা বউ তাই না? আমাকে রেখে তুমি পর-নারী আসক্ত হলে? রুহিকে নয় তুমি তোমার বিরুদ্ধে প্রমাণ নষ্ট করতে ব্যবহার করেছো। কিন্তু মাধুরী? আমাকে কীসের শাস্তি দিলে তুমি?……(একটু থেমে) তুমি শুধু রূপের প্রেমে পরে কাওকে কাছে টানো নি, সাথে মন থেকে ভালোবাসার একজন কে হারিয়েছো চিরতরে’ বলে রিয়া আপু কলার ছেড়ে ধাক্কা দিলো।

আদ্র ভাই চোখ মুখ শক্ত করে বলে উঠলো,

-‘ এনাফ ইজ এনাফ!! কি মাধুরী? হ্যা? মাধুরী কে? মাধুরী আর আমি জাস্ট বিজনেস পার্টনার। আমি মাধুরীকে ড্রা’গস এনে দিতাম। সেটা মাধুরী ভার্সিটির ছেলে মেয়েদের কাছে সাপ্লাই দিতো। দেটস ইট!! আমি তোমাকে ঠকাতে চাইলে কখনো বিয়ে করতাম না,রিয়া। আর এতোক্ষণ আমার সামনে দাঁড়িয়ে থাকতেও না। আর রুহি? কে বলেছে রুহি আমার সন্তানের মা? আমার সন্তানের মা হওয়ার যোগ্যতা শুধু তুমি রাখো। কারণ আমি তোমাকে ছাড়া আর কাওকে কখনো আপন করে কাছে টানিনি!….

#চলবে…