#শেষ_পাতার_তুমি
#ফারিয়া_আফরিন_ঐশী
#পর্বঃ২৫
রায়ান আয়ানার কোমড় টেনে আরো এনে আয়ানাকে জড়িয়ে ধরলো।
আয়ানাও আলতো হাতে জড়িয়ে ধরে আছে।
রায়ান এক হাতে মুভি পজ করে দেয় তারপর বলে–আয়ু,তুমি আমাকে তোমার জীবনে আরও একটা সুযোগ দিয়েছো।এখন আমি চাই আমাদের সম্পর্ককে আরও একধাপ এগিয়ে নিতে,,তুমি কি রাজি??
আয়ানা কেঁপে উঠলো।
রায়ান–তোমার নীরবতা কি সম্মতি বলে মেনে নেবো আয়ু?
আয়ানা বেশ জোড়ে রায়ানকে জড়িয়ে ধরলো।
রায়ান আয়ানাকে ছাড়িয়ে কপালে ঠোঁট ছুয়ে দিয়ে উঠে দাঁড়িয়ে আয়ানাকে কোলে তুলে নিলো।।
নতুন করে সবটা শুরু করার জন্য পা বাড়ালো।
রাত বোধহয় ৩.১৩,,
আয়ানা আধশোয়া অবস্থায় ঘুমন্ত রায়ানকে দেখছে।
রায়ান বা হাতে আয়ানাকে জড়িয়ে রেখেছে আর অন্য হাত নিজের মাথার নিচে।
একটা পাতলা সবুজ নকশীকাঁথায় আবৃত তারা।
আয়ানা বেশ নিপুণ চাহনীতে রায়ানকে দেখছে।
রায়ানের ডানগালে যে কালো ছোট্ট একটা তিল আছে তা কখনো আয়ানার নজরেই আসেনি।
আয়ানার এতোশতো ভাবনার মাঝেই রায়ান আরো কাছে টেনে নেয় আয়ানাকে,চোখটা পিটপিট করে খুলে দেখে তার প্রিয়তমা তার পানে নিপুণ চাহনীতে চেয়ে আছে।
রায়ান আয়ানার দিকে ঘুরে বলল–কি দেখছো আমায়?
আয়ানা হাসিভাব রেখে বলে–দেখছিলাম কি পঁচা লোক আপনি।
রায়ানও হালকা হেসে বলে–তা এই পঁচা লোককে এতো ভালো করে কেনো দেখা হচ্ছে?
আয়ানা রায়ানের নাক টেনে বলে –আমার ইচ্ছে।
রায়ান একটু হেসে আয়ানার গলাতে মুখ ডুবিয়ে দিলো।
সকালে,
আয়ানা রান্নাঘরে শাশুড়ীকে সাহায্য করছে খাবার বানাতে।
রায়ান আর রেদোয়ান যাবতীয় সমস্যা নিয়ে আলোচনা করছে।
রায়ান চাকরি ছেড়ে দিয়েছে কারণ চাকরি করতে হলে এতো ঝামেলা মাথায় রাখা যায় না। এখন তার মূল কাজ আয়ুকে প্রটেক্ট করা।
রায়ান চাকরি ছাড়ার আগে থেকেই ফ্রিল্যান্সিং এর কাজ করতো।
এখন একটা ব্যবসা করার জন্য চেষ্টা করছে।
রেদোয়ান –আমি বলি সব ঝামেলা শেষ করে তবেই নতুন কাজে হাত দে বাবু।নয়তো সব ঘেটে যাবে।
রায়ান–হুমম বাবা।আমি ভাবছি রেস্টুরেন্ট রিলেটেড যদি কিছু করা যায়।
রেদোয়ান –ঠান্ডা মাথায় ভেবে তারপর সিদ্ধান্ত নিবি বাবা।সেই কাজই করবি যে কাজে তোর জ্ঞান আছে।
রায়ান–জি বাবা।
সকালের নাস্তা শেষে রেদোয়ান বাজারে চলে গেলো কিছু মাসিক জিনিস কিনতে।
রেশমির কেসের ডেট পরাতে দাদির সাথে কোর্টে গিয়েছে।
আয়ানা আছে বলে এ তারিখ রায়ান আর কোর্টে যায়নি।
রায়ানা ল্যাপটপে কাজ করছে,
রেশমি দুপুরের রান্না করেই বেরিয়েছে, আয়ানা শুধু সবজিটা নামিয়ে বাটিতে রেখে ঘরে এলো।।
রায়ানের কাধে ঠেস দিয়ে বসে বলল–আপনি মামনির সাথে গেলে পারতেন।
রায়ান ল্যাপটপে চোখ রেখেই বলল–তোমার ব্যাপারে রিস্ক নিতে চাইছি না।
আয়ানা দীর্ঘশ্বাস নিয়ে বলল–আমি একটা বিষয় বুঝতে পারছি না,,বাবা তো আমার নিজের বাবা।তাহলে বাবা কেনো আমার ক্ষতি চাইছে?বলুন তো।
রায়ান ব্যস্ত হাতে টাইপ করতে থাকা আঙ্গুল থামিয়ে মনে মনে বলল–তার মানে আয়ু জানে না আফজাল সাহেব ওর নিজের বাবা না।
রায়ান ভাবনা রেখে আয়ানা টেনে নিজের কোলে বসিয়ে বলল–ওসব ভাবার জন্য আপনার স্বামী রয়েছে আপনাকে ভাবতে হবে না।আপনি শুধু আপনার অধম স্বামীর খেয়াল রাখুন।
আয়ানা মুখটা কুঁচকে বলল–একদম আমার স্বামীকে অধম বলবেন না।
রায়ান কান ধরে বলল– সরি সরি।
আয়ানা হেসে দিলো সাথে রায়ানও।
আয়ানা হাসি থামিয়ে বলল–শান্তর ব্যাপারে কি করবেন আপনি? এভাবে ঘরে থাকা যায় বলুন।
রায়ান–শান্ত এখনো কোনো স্টেপ নিচ্ছে না।এটাই সমস্যা। আমি বেশ ইনফরমেশন গেদার করেছি।
আয়ানা–হুমম।
রায়ান আয়ানাকে ওভাবে কোলে নিয়েই কিছু কাজ করতে শুরু করে দিলো।
আয়ানা বসে থেকে একপর্যায়ে রায়ানের কাধে মাথা রেখে ঘুমিয়ে গেলো।
কাজ শেষে রায়ান তাকাতেই বুঝলো আয়ানা ঘুমিয়ে পরেছে।
খুব সাবধানে তাকে বিছানাতে শুয়ে দিয়ে রায়ান ফ্রেস হওয়ার জন্য বাথরুমে চলে গেলো।
ঝামেলা ছাড়া ১ সপ্তাহ বেশ ভালোই কাটালো রায়ান ও পরিবারের সবাই।
তবুও রায়ানের মনের মধ্যে খচখচ করছে শান্তর চুপ থাকা ব্যাপারটা নিয়ে।
সব দিক থেকে রায়ান বেশ চাপ দিচ্ছে শান্ত কে তবুও রায়ান চিন্তামুক্ত হতে পারছে না।
বুকের ওপর ঘুমন্ত আয়ানাকে নিয়ে সিলিং এর দিকে তাকিয়ে এসবই ভাবছিলো রায়ান।
পানির পিপাসা তে আয়ানার ঘুম ভেঙে যায়।
উঠতে নিলেই রায়ান তড়িঘড়ি করে বলে–কি হয়েছে?
আয়ানা হাতের ইশারাতে বোঝায় পানি খাবে।
রায়ান খাটের পাশে রাখা পানির বোতল থেকে আয়ানাকে পানি খায়িয়ে দেয়।
আয়ানা –একটা কথা বলতে চাই আপনাকে।
রায়ান পুনরায় আয়ানাকে বুকে টেনে বলল–পারমিশন নেওয়ার কি আছে,বলো কি বলবে?
আয়ানা মাথা তুলে রায়ানের দিকে তাকিয়ে বলে–আমার মনে হয় আমাদের একটা বেবি হলে সব ঝামেলা মিটে যাবে।আমি বেবি নিবো।
রায়ান–এতো ঝামেলার মাঝে মোটেই না।।আর তোমার শরীরের যে অবস্থা।
আয়ানা চড়া গলাতে–ঠিকই তো আছি আমি।
রায়ান–উপর উপর ঠিক আছো।ব্লাড কম শরীরে,বিপি অলওয়েজ লো, হিমোগ্লোবিনের সমস্যা তারওপর গত কতগুলো মাস অসুস্থ ছিলে যা এখনো রিকভার হয়নি।এতো সমস্যার মাঝে এখনি বেবি নেওয়া রিস্কি।
আর আমি চাইছি ও না।
আয়ানা মুখটা কালো করে চোখ বুজে নিলো।
সে ভেবেছিলো রায়ান হয়তো রাজি হবে তাই দাদির কথা মতো সে রায়ানকে বাচ্চার কথা বলল কিন্তুু রায়ান তো মুখের ওপর না করে দিলো।
আয়ানার মন খারাপ বুঝে রায়ান আয়ানার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলল–সময় আছে আয়ু।আর বেবি মানে অনেক দায়িত্ব, হুটহাট করে ডিসিশন না নেওয়া বেটার।
আয়ানা–ওকে।
রায়ানের কথাতেও আয়ানার মন তেমন ভালো হলো না।
সকালে উঠে আয়ানা গোসল সেরে শাড়ি পড়ছে।
আর রায়ানা বিছানাতে উল্টো হয়ে শুয়ে আছে।
শাড়ির আঁচল ঠিক করার সময় ড্রইং এ কারো চেচামেচি শুনে ভ্রু কুঁচকে এলো আয়ানার।
রায়ান উঠে দাঁড়িয়ে –কুল ডাউন,আমি দেখছি।শাড়ি ঠিক করো আর না বলা অবধি ঘর থেকে বেরোবে না।
রায়ান কোনোমতে টি শার্ট গায়ে দিয়ে হন্তদন্ত হয়ে বেরিয়ে গেলো।
আয়ানা শাড়ি ঠিক করে দরজার কাছে কান পেতে দাঁড়িয়ে রইলো।
কারণ রায়ান দরজা পেছন থেকে বন্ধ করে দিয়েছে।
বাইরে বেশ চেচামেচি চলছে।
বাইরে,
রায়ান–দেখ বারবার আমার বাড়ি এসে তুই ঝামেলা করতে পারিস না।
শান্ত–তুই বারবার আমার লাইফে ঝামেলা করছিস কেন?আয়ু কোথায় বল?
রায়ান–আয়ু কোথায় আমি কিভাবে বলবো?তোর হবু বউ তুই জানিস।
শান্ত-বিয়ের দিন তুই তুলে এনেছিস ওকে।
রায়ান–ও ওতো বাচ্চা খুকি।তুললাম আর আমার কোলে উঠে এলো।ফালতু না বকে বের হ।
শান্ত–তুই আমাকে চেক করতে দে,আয়ু কে না পেলে চলে যাবো।
রায়ান–নাহ।তুই কিন্তুু হ্যারাজ করছিস।
শান্ত এবার তার লোকজন বাইরে থেকে রায়ানের বাবার মাথায় বন্দুক ধরে শান্ত বলল–আমি জানি আয়ু তোর কাছে আছে।নিয়ে আয় ওকে নয়তো তোর পুরো পরিবারের আজ ওপরে যাওয়ার ব্যবস্হা করে দিবো।
রায়ান–নো।ওয়েট।
বলে রায়ান নিজের ঘরে চলে গেলো সাথে শান্তর ২ জন লোক।
দরজা খুলতেই রায়ানের পেছনে বন্দুক ধারী ২ জনকে দেখে ঘাবড়ে গেলো আয়ানা।
আয়ানা–এরা?
রায়ান আয়ানার কাছে এসে দাঁড়ালো, ইতিমধ্যে চোখে পানি ভর্তি হয়ে গলা আটকে আসছে রায়ানের।
রায়ান আয়ানাকে কাছে টেনে কপালে বেশ লম্বা চুমু দিল, ততক্ষণে দুজনের চোখের পানি গড়িয়ে পড়লো।
রায়ান লোক ২ জনকে উদ্দেশ্য করে–আমার কিছু পারসোনাল কাজ আছে আমার স্ত্রীর সাথে।
একজন লোক–আমরা ঘরের বাইরে যেতে পারবো না।
রায়ান–যেতে হবে না।
কথাটা বলেই আয়ানার ঠোঁটে নিজের ঠোঁট ডুবিয়ে দিলো।
লোক ২ টো মুখ চেয়ে আবারও নির্বিকার ভাবে দাঁড়িয়ে রইলো।
রায়ান আয়ানার কপালে আবারও চুমু দিয়ে ফিসফিস করে বলল–চিন্তা করো না।আমি তোমায় আমার কাছে নিয়ে আসবো আবার।তুমি একটু নিজের খেয়াল রেখো।
আয়ানা সাথে সাথে দুকদম পিছিয়ে চেচিয়ে বলল–নাহ যাবো না।
আয়ানার চিৎকার শুনে শান্ত রায়ানের ঘরে এসে জোর হাতে আয়ানার বা হাত ধরে বলল–চলো আয়ু।
আয়ানাকে জোড় করে নিয়ে যেতে লাগলো।
আসন্ন ভয়ে আয়ানা কাঁদছে আর বারবার বলছে–আমি যাবো না রায়ান প্লিজ।
এখনো বাড়ির সবার মাথায় বন্দুক ঠেকানো।রায়ান নিরুপায়,পরিবারকে বাঁচাতে তাকে তার স্ত্রী কে বিপদের মুখে ফেলে দিতে হলো।
#চলবে
১১৪২ শব্দ😊