শেষ পাতার তুমি পর্ব-২৭

0
690

#শেষ_পাতার_তুমি
#ফারিয়া_আফরিন_ঐশী
#পর্বঃ২৭

জুবায়ের পানির বোতল হাতে পাশে দাঁড়িয়ে বলল–একটা কথা বলি।

রায়ান–জি স্যার,বলুন।

জুবায়ের –বিদেশ যাওয়ার চিন্তা ছিলো নাকি কখনো?

রায়ান–ভার্সিটি লাইফের শুরুর দিকে প্লান ছিলো বাট মধ্যবিত্ত বুঝতেই পারছেন স্যার।

জুবায়ের –হুমম।

রায়ান–হঠ্যাৎ এমন প্রশ্ন স্যার?

জুবায়ের –দেখো,শান্ত কে বিদেশ যাওয়া বা কিছু করা থেকে আমরা আটকাতে পারি বাট দেশে যে ওর কতো লিঙ্ক তা আমরা জানি না।তোমরা দেশে থাকলে ও বারবার এ্যাটাক করবে।

রায়ান–বাট,বিদেশ যেতে অনেক খরচ স্যার তারওপর কাগজপত্র ও লাগবে অনেক যা আমার নাই।

জুবায়ের –সে সব আমি দেখে নিবো।তুমি শুধু বলো কোন দেশে যাবে?

রায়ান–বাট স্যার,আমার তো পাসপোর্ট ও নাই।

জুবায়ের –সব হয়ে যাবে রায়ান।আয়ানা নিয়ে দূরে পাড়ি দেও নয়তো বাঁচাতে পারবে না ওকে।

রায়ান–স্যার,আপনি যেখানে ভালো বুঝেন।আমার কোনো পরিচিতি ও নাই এসব ব্যাপারে।

জুবায়ের –আমার বোন কানাডাতে থাকে।তাহলে ওখানে সেটেল করো।এছাড়া উপায় নেই।আমি ব্যবস্হা করছি।

রায়ান শুধু কাঁধ দোলালো।

জুবায়ের কানে ফোন নিয়ে প্রস্হান করলো।

রায়ান চায়ের কাপটা ফেলে তাবুতে গিয়ে কিছু মেডিসিন সাথে নিয়ে আবারও রওনা হলো।

আয়ানা ঘরে পৌঁছে দেখলো আয়ানা মাত্র গোসল সেরে বেরিয়েছে।

ভেজা চুল থেকে টপটপ করে পানি পরছে।

আয়ানা চুল মুছতে মুছতে –আপনি এসেছেন।

রায়ান–জ্বর ছিলো,আবার রাতে গোসলের কি দরকার ছিলো?

আয়ানা–কাল থেকে গায়ে পানি দেই নি।কেমন জানি লাগছিলো!এখন ভালো লাগছে।

রায়ান আয়ানার কাছে এসে জ্বর চেক করে বলল–মেডিসিন খাও দ্রুত,যাতে জ্বর না আসে।

আয়ানা ওষুধের পাতা থেকে ওষুধ খেয়ে নিলো দ্রুত।

ওষুধ খেয়ে ঘুরতেই রায়ান জাপটে ধরলো।

আয়ানা–এতো কষ্ট করে কি এসব করতে আসেন?

রায়ান আয়ানার কাধে ঠোঁট ছুয়ে দিয়ে বলল–হুমম।

আয়ানা হেসে রায়ানকে জড়িয়ে ধরলো।

রায়ান–একটা কথা বলার ছিলো।

আয়ানা–বলুন।

রায়ান বিদেশে যাওয়ার ব্যাপারটা আয়ুকে খুলে বলল।

আয়ানা–আমি মা কে ছাড়া যাবো না।

রায়ান আয়ানা চোখে চুমু দিয়ে বলল–আমরা মা কে ছাড়া যাবো ও না।

আয়ানা–তাহলে আমরা কানাডাতে যাচ্ছি।

রায়ান–হুমম।

আয়ানা–ওকে।আমাকে দ্রুত নিয়ে যাবেন তো এখান থেকে?

রায়ান–খুব দ্রুত।

এরপর আয়ানাকে কোলে নিয়ে বিছানাতে হেলান দিয়ে বসে পরলো রায়ান।

আয়ানাকে বুকে জড়িয়ে নিলো,

কিছুক্ষণের মধ্যেই আয়ানা ঘুমিয়ে পড়লো।

রায়ান আয়ানাকে বিছানাতে শুয়িয়ে দিয়ে চলে গেলো।

তাবুতে ফিরতেই আকিফ বলল–শান্ত মেবি কাল ফিরবে এখানে,ওর কল রেকর্ড ট্রেস করে যা বুঝলাম।

জুবায়ের –রায়ান কাজ কম্পিলিট তো?

রায়ান–ইয়েস স্যার।

জুবায়ের –তাহলে এখন অপেক্ষা কাল রাতের।

রায়ান–হুমম।

আকিফ–ভাবি ঠিক আছে তো?

রায়ান–কিছুটা।

আকিফ–কাল ভাবিকে নিয়ে ঢাকা পৌছুতে পারলে একটু নিশ্চন্ত হই।

রায়ান–হু।

রায়ান আর আকিফ তাবু থেকে বেরিয়ে একটু দূরে গাছতলাতে এসে দাঁড়ালো।

দুজনে দুটো সিগারেট ধরিয়ে টানতে শুরু করলো।

রায়ান–তা তুই বিয়ে থা করছিস কবে?

আকিফ–নাতাশার বাড়িতে টুকটাক ঝামেলা আছে।মিটলেই বিয়ে।

রায়ান–বেস্ট অফ লাক।

আকিফ–আমি খুব হ্যাপি,যে তুই আবার সবটা শুরু করেছিস।

রায়ান–আয়ু মানুষটাই এমন,ও আমাকে বাধ্য করেছে ওকে ভালোবাসতে।

আকিফ–হুমম।নাবিলার মতো কেউ তোর জন্য আছে এটাই বড়।

রায়ান–আয়ু আর নাবিলা টোটালি আলাদা।আয়ু নিজের মতো,চুপচাপ কিন্তুু ওর আপন হতে পারলে তার কাছে সবচেয়ে চঞ্চল সে।আর নাবিলা সদা চঞ্চল,সবার কাছে।

আকিফ–হুমম।নতুন জায়গায় নতুন করে শুরু কর।

রায়ান– ইনশাআল্লাহ

অপরদিকে,,

শান্ত–একে একে সব কানেকশন ফেইল হয়ে যাচ্ছে।

শান্তর সহকারী –জি স্যার,আমাদের দেশের বাইরের গ্যাং গুলোর ইনফরমেশন কেউ পাবলিশ করে দিয়েছে তারা এখন কাস্টাডিতে আছে।

শান্ত–আমাদের নাম বাইচান্স মেনশন করলে ইন্টারন্যাশনালি কেস খাবো আমরা।(বেশ রেগে)

সহকারী –স্যার,আমরা ট্রাই করেও বুঝতে পারছি না।

শান্ত রেগে চেয়ারে লাথি দিয়ে বলল–ইউজলেস।এখন তো আয়ুকে নিয়ে দেশের বাইরেও যেতে পারবো না।

শান্ত বেশ রেগে গটগট করে বেরিয়ে গেলো।

রাত শেষে,একটু একটু করে ভোরের আলো ফুটেছে,চারিদিকে নিস্তব্ধ, ব্যস্ত নগরীর মানুষজন এখনো ঘুমের রাজ্য এ।

দু একটা কুকুর রাস্তা দিয়ে হেঁটে বেড়াচ্ছে।

ঠিক এমনই সময়, ঢাকার বিলাশবহুল ফ্লাটের একটা বেশ বড় কামরাতে বসে আছে আফজাল আর আয়ানার মা।

আয়ানার মা–আয়ু তোমার নিজের সন্তান নয় কিন্তুু আফজাল বলোতো জন্ম না দিলে কি পিতা হওয়া যায় না?পৃথিবীতে অনেক মানুষ আছে যারা রক্তের সম্পর্ক ছাড়াই ভালোবাসার সম্পর্ক গড়ে তুলেছে।আমার আয়ু তো জন্মের আগেই তোমার কাছে এসেছে,আহাদ কে তা সে জানেই না।তাহলে তুমি কেন পারলে না তার বাবা হয়ে উঠতে?

আফজাল মাথা নিচু করে বসে আছে।

মাথা নিচু রেখেই বলল–আমি টাকার লোভে পরে করেছি সবটা,,কিন্তুু বিশ্বাস করো গতদিন যখন শান্ত আয়ুকে মেরেছে কথাটা শুনেছি আমার বুক ফেটে যাচ্ছে। আমি সহ্য করতে পারছি না।

আয়ানার মা আফসোসের হাসি দিয়ে বলল–এখন রায়ানই পারবে আমার আয়ুকে বাঁচাতে।আল্লাহ ভরসা।

আফজাল–তুমি আয়ু আর রায়ানকে নিয়ে দূরে কোথাও চলে যাও।এদিকটা আমি সামলে নিবো।গুলশানের বাড়িতে যাও তুমি,আয়ু আর রায়ানকে ওখানে পাঠানোর ব্যবস্হা করছি।

আয়ানার মা–আবার কি ক্ষতি করবে আমার বাচ্চার??

আফজাল–আর ক্ষতি হবে না।আমার মা এর আর ক্ষতি আমি হতে দেবো না।

কথাটা বলেই আফজাল গুলশানের ফ্লাটের চাবি দিয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে গেল।

আয়ানার মা চাবিগোছা নিয়ে প্রয়োজনীয় কাগজ সহ জিনিসপত্র নিয়ে বেরিয়ে গেল।

আফজাল রওনা হয়েছে নন্দনবাজারের দিকে,

উদ্দেশ্য শান্তর বাগান বাড়ি।

আজ আর রায়ান আয়ুর সাথে দেখা করতে গেলো না,সারাদিন বিভিন্ন কাজে ব্যস্ত ছিলো সে আর শান্ত ও বাড়িতে আছে।

আয়ানা দরজা দিয়ে বসে আছে, শান্ত দরজা বেশ কয়েকবার নক করেছে শেষে বেশ হুমকি দিয়ে চলে গিয়েছে।

আফজালের পৌঁছাতে রাত পরে গিয়েছে, রাস্তায় গাড়ি নষ্ট হয়ে গিয়েছিলো, মেকানিক খুঁজে গাড়ি ঠিক করিয়ে আসতে দেরি হলো।

আফজাল এসে দাঁড়াতেই শান্তর বাগানে ধুম আওয়াজে আগুন জ্বলে উঠলো।

ঘটনা বুঝে ওঠার আগেই বাড়ির আর ৪/৫ জায়গায় একই ঘটনা ঘটে গেলো।

আফজাল ঘাবড়ে গেলো,আয়ানার কিছু হলো না তো।

ধীর পায়ে ভেতরে যেতে দেখলো রায়ান আয়ানাকে কোলে নিয়ে বেরিয়ে যেতে দেখে দৌড়ে কাছে যেতে নিলো,

কিন্তুু শান্তকে বন্দুক তাক করে সামনে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে থেমে গেলো।

শান্ত বারবার আয়ানাকে তার কাছে দিতে বলছে,রায়ানও নাকোজ করছে।

একপর্যায়ে শান্ত গুলি করতে গেলে,আফজাল দৌড়ে শান্তর হাত ধরে উল্টোদিকে মুড়ে ধরলো।

রায়ান ভ্রু কুচকে তাকিয়ে রইলো।

আফজাল ধস্তাধস্তি করে বলল–রায়ান আয়ুকে নিয়ে যাও।।এদিকটা আমি দেখছি।

রায়ান দৌড়ে বেরিয়ে গিয়ে জুবায়ের এর গাড়িতে উঠলো।।

দরজা বন্ধ করার সময় দেখতে পেলো শান্তর গুলিতে ঝাঝড়া আফজাল মাটিতে লুটিয়ে পরছে।

রায়ান অপেক্ষা না করে চলে গেলো।

শান্তর লোকেরা তেমন কেউ নেই বলে শান্ত নিজে গাড়ি চালাচ্ছে, রায়ানদের গাড়ি ইতিমধ্যে অন্য রাস্তায় চলে গিয়েছে।

আওয়াজের দরুণ আয়ানা সেন্সলেস।

রায়ানরা গুলশান রওনা দিয়েছে অন্য রাস্তা দিয়ে,

যেখানকার ঠিকানা শান্ত জানে না।

জুবায়ের ৭ দিনের মধ্যে তাদের চলে যাওয়ার ব্যবস্হা করছে ততদিন লুকিয়ে থাকবে।

শান্ত গাড়ি নিয়ে রায়ানদের বাড়ির সামনে এসে থামলো।

বাড়ি এসে বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দিয়ে গাড়ি নিয়ে আবারও চলে গেলো।

#চলবে।