অবশেষে ভালোবেসে পর্ব-০৮

0
878

#অবশেষে_ভালোবেসে
পর্বঃ ০৮
লেখিকাঃ মেহেরুন নেসা
.
আন্টি চলে যাচ্ছিলেন তখনই সানভির মনে এলো ও তো সালাদ কতোটুকু করে কাটবে তা জিজ্ঞেস ই করেনি তাই ঘুরে জিজ্ঞেস করতে পেছনে ঘুরতেই, একটু ঝুকে সালাদের টুকরি থেকে গাজর নিতে আসা নির্ভানের ঠোঁটে ঠোঁট লেগে গেলো এক্সিডেন্টালি…..
.
হটাৎ এরকম একটা কিছু হয়ে যাওয়ায় দুইজনই চমকে গেলো নির্ভান তো সাথে সাথেই সরে গিয়ে যেভাবে এসেছিলো সেভাবেই সোজা হয়ে আর দাড়ালো না একদম কিচেন থেকে বের হয়ে গেলো। আর সানভি তো এখনো সেভাবেই দাড়িয়ে আছে কি হলো ব্যাপার টা ও তো বিলিভ ই হচ্ছেনা।

ও ওইভাবেই দাড়িয়ে ব্যাপারটা হজম করতে চাচ্ছিলো তখনই নির্ভানের মা কিচেনে এসে ডাকলেন

– সানভি। আর তখনই ও ঘাবড়ে হাতে থাকা knife টা ফেলে দিলো।,,,,আরে আরে ভয় পাইয়ে দিলাম নাকি!

– হ্যাঁ??? না না আন্টি হাত থেকে স্লিপ করে পরে গেছে। কিছু বলতে এসেছিলেন?

– হ্যাঁ সালাদ টা কুচি কুচি করে কেটো।

– আমিও এটাই জিজ্ঞেস করতে চেয়েছিলাম আর কি হয়ে গেলো….শেষের কথা টুকু ধীরেই বললো যেন আন্টি না শুনে ফেলে।
.
সালাদ কাটার পুরো টা সময় সানভি মনোযোগ ই দিতে পারলো না বারবার চোখে সেই আচমকা কিস এর কথাই মনে পরতে লাগলো। এইরকম একটা কিছু হওয়ার পর কিভাবে ফেস করবে নির্ভান কে ও!! তার মধ্যে সবচেয়ে ভয়ংকর ব্যাপার তো এটা যে আজো যেই ছেলে ওর কোনো গার্লফ্রেন্ড কে ও নিজেকে কিস করতে দেয়নি বা নিজেও কিস করেনি তার সাথেই নাকি আজ…!!!

– আহহহহহ… কি হলো এটা! বলেই আবার নিজেকে শান্ত করে নিয়ে বের হয়ে ডাইনিং টেবিলের সামনে গেলো,,,, যাক বাবা মি. কে নেই এখানে। বলেই পানি নিয়ে খেতে খেতে ঘুরে তাকাতেই নির্ভান কে আসতে দেখেই পানি যেন ওর গলায় আটকে গেলো। আজ এতোগুলো বছর কাজ এর মধ্যে এই প্রথম ওর নির্ভান কে দেখে হাত পা ঠান্ডা হয়ে আসছে। নির্ভান ও কেমন এদিক ওদিক তাকিয়ে আসছিলো ওর সামনেই কিন্তু তখনই আবার নির্ভানের বাবা অফিস থেকে এসে সানভি কে দেখে বলে

– আরে সানভি তুমি?? অনেক দিন পর দেখা হলো কেমন আছো?

– হ্যাঁ স্যার ভালো আছি। আপনি?

– হ্যাঁ আমিও ভালো আছি।
সানভি আর মি.খন্দকার কথা বলতে বলতে মিসেস খন্দকার ও চলে এলেন। মি.খন্দকার ফ্রেশ হয়ে আসার পর সবাই মিলে ডাইনিং টেবিলে বসলো ওরা সবাই কথা বললেও নির্ভান তেমন কিছু বললো না।
.
খাওয়া শেষে ও ওরা কিছুক্ষন কথা বললো তারপর নির্ভান বললো

– মিস. সান যাওয়ার আগে একটু স্টুডিও তে এসো তো কথা আছে।

– জি স্যার?

– এখন কেনো? ওর না আজকে ছুটি ও কাজ কেনো করবে?

– মা জাস্ট কালকের শো টা নিয়ে একটু কথা ছিলো।

– ওহ আচ্ছা ঠিকাছে।
.
সানভির যেন আজ যেতেই ইচ্ছে করছিলো না কারণ যাওয়ার আগে যে মি.কে এর স্টুডিও তে যেতে হবে। এই প্রথম আজ মি. কে এর স্টুডিও তে যেতেই ইচ্ছে করছিলো না ওর। তবুও যেতে তো হবেই মেইন বাড়ি থেকে বের হয়ে স্টুডিও তে যেতে যেতে কতোবার যে পিছিয়ে গেলো।
ফাইনালি স্টুডিও তে গিয়ে নির্ভান কে ডাকতেই নির্ভান বেরিয়ে এলো

– ওহ মিস. সান এসেছো।

– জি মি.কে। বলেই থামলো সানভি তারপর দুজন একসাথেই বলতে নিলো, আবার একসাথে দুইজন ই থেমে গেলো।

– মিস. সান তুমি বলো।

– না না মি. কে আপনি বলুন।

– নো লেডিস ফার্স্ট জানোই তো।

– কিন্তু স্যার আপনি তো শো নিয়ে কি যেনো বলবেন তাই আপনি ই বলুন।

– ঠিকাছে আমিই বলছি। যাই হোক আসলে আমি শো এর কথা বলতে নয়। বলতে চাইছিলাম যে তখন যে আই মিন তখন….

– কি তখন?

– আসলে ওইটা একটা জাস্ট,,, তুমি তো জানোই আমি আসলে…..

– ওই তখন মি.কে ইটস ওকে আমি জানি ওইটা জাস্ট দুইজনের ভুল টাইমিং এর কারনে হয়েছিলো।

– ভুল টাইমিং! হ্যাঁ হ্যাঁ ভুল টাইমিং এর কারনেই হয়েছিলো এটাই তো হয়েছিল। উফফফ তুমি বুঝতে পেরেছো ব্যাপার টা, থ্যাংকস মিস.সান।

– এটা না বুঝার কি আছে আমি তো জানি আপনাকে। বলেই হেসে দিলো, সাথে নির্ভান ও হাসছিলো,,,, তাহলে তো মি.কে আর কিছু বলার নেই? আমি তাহলে আসি আজকে??

– এখন চলে যাবে? হ্যাঁ ঠিকাছে যাও কাল তো বিকেলে তোমার সময় অনুযায়ী চলে এসো। আর হ্যাঁ রাত হয়ে গেছে আমি দিয়ে আসবো তোমাকে?

– না না মি. কে আমি একাই যেতে পারবো।

– রাত হয়েছে তো অনেক আমি দিয়ে আসি।

– না মি. কে।

– সিওর???

– হ্যাঁ।
..
নির্ভানের স্টুডিও থেকে বের হয়েই যেন হাফ ছেড়ে বাচলো সানভি ওর সামনে যতোই বলুক ব্যাপার টা ও নরমালি নিতে পারছে না আর নাই ভুলতে পারবে।৷
বাসায় পৌছে ড্রেস চেঞ্জ করে ফ্রেশ হয়ে বসতেই ইলার কল এলো কি নাকি বলবে তারপর সানভি ই বললো পারলে যেন ওর বাসায় আসে একটু। রাত প্রায় এগারো টা কিন্তু তবুও ইলা আসবে কারন ওর বাসা এখান থেকে ১০ মিনিট এর দূরত্বতেই আর যেহেতু সানভি এভাবে ডেকেছে তার মানে অবশ্যই ইম্পর্ট্যান্ট কিছু হবে।
.
– হ্যাঁ কি হয়েছে বল এভাবে ডাকলি কেনো??

তারপরই সানভি ইলা কে সব শুরু থেকে বললো আর সানভি শুনে তো প্রথমে নকল কাদার ঢং করে বললো

– তুই ওকে কিস করলি? কি করলি এটা! বলেই জোরে কাদতে লাগলো তারপর আবার হাসতে হাসতে বললো,,,, এতে নিশ্চয়ই নির্ভান এর কিছুই যায় আসেনি! এসব তো ওর কাছে দুধ ভাত।

– কে বলেছে! এটাই তার প্রথম….

– হোয়াট কি বলছিস তুই? এক সাডেন কিসেই তুই পাগল হয়ে গেলি সানু??

– আমি মজার মুডে নেই ইলা। তিনি এমন possessive মানুষ যে আজ পর্যন্ত তার কোনো সো কল্ড গার্লফ্রেন্ড দের কিস তো দূরের কথা নিজেকে টাচ পর্যন্ত করতে দেয়না ভুলক্রমে ধরে ফেললে ও কতো তার সমস্যা আর কাউকে কিস! আর সে ই কিনা আমাকে…..

– উফফফ সানু তুই যতই এটা নিয়ে ভাববি ততই জরাবি। যতোই ও কিস না করে থাকুক তবুও তোর সাথে এমন টা হওয়া ওর জন্য তেমন ব্যাপার না। আর তোর প্রবলেম হলে তুই তো রিজাইন করে দিতে পারবি এতে তোর ই ভালো এটাই সময় এখন নিজের লাইফ এনজয় করার।

– আহহ তুই আবার সেই কথায় চলে গেলি? ওইটা নিয়ে কথা তো দুপুরেই শেষ করেছি তাই না?

– হ্যাঁ আবার করছি কারন নেক্সট ফ্রাইডে আমি একটা ডেট ফিক্সড করেছি তোর। তাই আমি আবার সেই কথায় যাচ্ছি।

– আমাকে না বলে কেন ঠিক করলি?

– ফ্রাইডে তে কি প্রবলেম আর আমি ও তো নির্ভান ফ্যান তাই জানি এই ফ্রাইডে তে ওর কোনো গানের রেকর্ডিং বা শো নেই। তাই ওইদিন পারফেক্ট।

– না আছে। বলেই উঠে চলে গেলো সানভি। ওকে আবার টেনে এনে বসালো ইলা

– নেই আমি জানি। এখন তুই যদি এই ডেট এ না যাস তাহলে আমি ভাববো….আমি ভাববো তুই নির্ভান কে ভালোবাসিস যার কারনে তুই কাউকে ডেট করতে চাস না।

– ইলাআআ… কি বলছিস এসব?

– ঠিকই বলছি আর এটাই সত্যি। নাহলে রাজি হো ডেট এ।

-………

– বল যাবি ডেট এ আর নাহলে তুই নির…

– হ্যাঁ যাবো যাবো। এখন আজকে যা আমার ভিষণ টায়ার্ড লাগছে যা।

– তারিয়ে দিচ্ছিস??

– হ্যাঁ যা।
ইলা হেসে বললো,,,,, ওকে ডার্লিং আই এম সো হ্যাপি। যাই তাহলে গিড নাইট।।।
.
অর্ধেক রাত হয়ে গেছে সানভি এদিক ওদিক ঘুরলো কারন ঘুম তেমন আসেনি। এই ঘুমাচ্ছে আবার ই ঘুম ভেঙে যাচ্ছে বারবার সেই কিস, নেক্সট ডেট, ইলার কথা গুলো সব মাথায় ঘুরছে বারবার তারপর ভাবনার এক পর্যায়ে কখন যে ঘুম এসে পরলো খেয়াল নেই ঘুম ভাঙতেই আড়মোড়া দিয়ে ঘড়ির দিকে তাকিয়েই ধাপ করে উঠে বসে। কারন দশ টা অলরেডি বেজে গেছে এগারোটার মধ্যে স্টুডিও তে পৌছাতে হবে ওকে তাই সব কিছু তারাহুরো করে করতে লাগলো আর এই কারনে নাস্তা টা স্কিপ করতে হলো তানাহলে লেইট হয়ে যেতো।
.
রেডি হয়ে স্টুডিও তে এসে দেখে নির্ভান নেই মেইন বাড়িতে নাকি গিয়েছে। এদিকে ক্ষুদা ও লেগেছে আবার নির্ভান নেই যে বলে একটু বের হবে। তাই অনেক ভেবে ভাবলো স্টুডিওর কিচেন থেকেই কিছু একটা ফল নিয়ে খেয়ে নিবে তাই কিচেনে যাওয়ার জন্য বের হতে নিলেই নির্ভানের সাথে ধাক্কা খেতেই নিচ্ছিলো কি নির্ভান ও থেমে গেলো কিন্তু সানভি একদম অনেক দূরে সরে গেলো। আর ওকে এভাবে সরে যেতে দেখে নির্ভান হতভম্ব হয়ে তাকিয়েই রইলো….
.
.
.
চলবে।