অবশেষে ভালোবেসে পর্ব-০৯

0
939

#অবশেষে_ভালোবেসে
পর্বঃ ০৯
লেখিকাঃ মেহেরুন নেসা
.
সানভি কিচেনে যাওয়ার জন্য বের হতে নিলেই নির্ভানের সাথে ধাক্কা খেতেই নিচ্ছিলো কি নির্ভান ও থেমে গেলো কিন্তু সানভি একদম অনেক দূরে সরে গেলো। আর ওকে এভাবে সরে যেতে দেখে নির্ভান হতভম্ব হয়ে তাকিয়েই রইলো….
.
– কি হয়েছে মিস.সান?
সানভি কি বলবে বুঝে পাচ্ছিলো না এভাবে তো অনেক awkward হয়ে যেতে পারে তাই নিজেকে সামলে নিয়ে বললো

– হটাৎ ভেবেছি কে না কে তাই ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম।

– ওহ। কোথায় যাচ্ছিলে?

– আপনাকে খুজতে।
কিচেনে যাচ্ছিলো বললো না।

– ওকে তো চলো লাস্ট টাইম সব আপডেট আমাকে দাও।

– জি মি.কে। বলেই ডেস্ক এ গিয়ে ল্যাপটপ নিয়ে কিভাবে কি হবে সব বলতে লাগলো। কিন্তু নির্ভানের সেদিকে খেয়াল নেই ও সানভির ব্যবহার টা লক্ষ্য করছে। তারপর ওকে থামিয়ে দিয়ে বললো

– মিস. সান ব্রেকফাস্ট করেছো??

– জি?? আহ হ্যাঁ স্যার আই মিন মি.কে। বলেই আবার বুঝাতে লাগলো

– মিস.সান।

– জি স্যার।

– যাও ব্রেকফাস্ট করে আসো।

– বাট মি.কে….

– আমি জানি আমাকে বুঝাতে হবে না এবার ও লেট হয়েছে উঠতে ব্রেকফাস্ট স্কিপ করে এসেছো। কিভাবে বুঝলাম! সিম্পল তোমার ক্ষুধা লাগলে তোমার কথা গুলো জরিয়ে যায় আর তুমি তখন বারবার ভুল করতে থাকো।
সানভি একটু হাসি দিলো।

– এতো বছরে তুমি আমার অভ্যাস মনে রেখেছো আর আমি তো দুই একটা খেয়াল করতেই পারি। এখন যাও তারাতারি কিচেনে যাও গিয়ে দেখো খাবার আছে গরম করে খেয়ে আসো।

– কিন্তু মি.কে….

– মিস.সান।

– ঠিকাছে। আপনি ব্রেকফাস্ট করেছেন?

– হ্যাঁ আমি করেই এসেছি।
.
সানভি ফিরে এসে দেখে নির্ভান স্ক্রিনে কি একটা দেখে যেন মুচকি মুচকি হাসছে সানভি ও কালকের সেই ঘটনার পর থেকে তেমন কথা বলেনি তাই বললো

– কি ব্যাপার মি. কে এভাবে হাসছেন যে আবার প্রেমে পরলেন নাকি লাভ এট ফার্স্ট সাইট!!
সানভির এটা বলার কারন ও আজ পর্যন্ত যাদের নিজের গার্লফ্রেন্ড বানিয়েছে সবাই কেই ও নিজের লাভ এট ফার্স্ট সাইট বলেছে। সানভির এই কথা শুনে তাকাতেই সানভি বললো,,, দেখি কাকে দেখে এমন হাসছেন। বলেই এগিয়ে যাচ্ছিলো নির্ভান এই কথা শুনে তারাতারি ওর ল্যাপটপ টা অফ করে দিয়ে

– এসব বাদ দাও, give me the updates.
.
নির্ভানের শো শেষে বাসায় ফিরে আসছিলো ওরা রোজকার মতো আজও সানভি কে আগে ওর বাড়িতে পৌছে দিবে।গাড়িতে নির্ভানের পাশে বসে সানভি ট্যাব এ নির্ভানের সোশ্যাল সাইট গুলো তে ওর শো এর একটা পোস্ট আপডেট দিচ্ছিলো তখনই নির্ভান ওকে না বলেই সানভির কাজের মাঝেই ওর সাথে একটা সেলফি তুলে সানভি কে বললো ওই পিক টা পোস্ট করতে কিন্তু পরে বললো ও ই করবে বলেই সানভির হাত থেকে ট্যাব টা নিয়ে নিলো।। সাথে একটা ক্যাপসন ও দিলো “Behind my success she and her hard work has a big amount of credit so thanks Ms. Sun. ”

– মি.কে এটা?

– হ্যাঁ আমার পেছনে কে কে পরিশ্রম করে তাদের ও তো দেখুক সবাই।

– কিন্তু আমার নাম তো Sanvi তাই San হবে Sun না।

– আরে ওই Sun আমি এজন্য লিখেছি কারন তুমি আমার ক্যারিয়ারে সূর্যের মতো রশ্মি ছড়াচ্ছো তাই মিস.সান।

সানভি নিজের নামে এতো ভালো ভালো কথা শুনে একটু হাসি দিলো সামনে কিছু না বললেও মনে মনে বললো,,,, বাস কার পাগলে আব রুলায়েগা কেয়া!?

– আহ দেখো দেখো কতো লাভ রিয়েক্ট এসেছে কমেন্ট ও আসছে দেখেছো আমার করা পোস্ট নির্ভান দা রকস্টার এর করা পোস্ট। বলেই কমেন্ট এ গিয়ে দেখে মেয়েরা সব ওর কথা বলছে কিন্তু কিছু কিছু মেয়ে সানভি কে নিয়ে jealous feel করছে এমন স্টিকার দিলো কিছু কিছু মেয়ে বলছে ও এতো কাছে কেন ওই সান এর জায়গায় ওদের থাকার কথা। আর ছেলে রা তো বলছে মিস. সান কিউট, গুড লুকিং সেক্রেটারি, কেউ বলছে মিস. সান এর আইডি কেন ট্যাগ দেয়া হলো না ইত্যাদি। মানে এই ফার্স্ট ওর পোস্ট এ ওর পাশাপাশি অন্য কেউ প্রাধান্য পেলো তার মধ্যে আবার ছেলে গুলো একটু বেশিই সানভি কে নিয়ে কথা বলছে।

– মিস. সান তুমিও ফেমাস হয়ে গেলে।

– কিন্তু আমি তো ফেমাস হতে চাইনি।

– না আমি এভাবেই ফেমাস করে দিলাম। তুমিও কি মনে রাখবে কেমন বড় মনের মানুষ আমি। বলেই ডান হাতে নিজের চুল গুলো সরিয়ে বললো,,, Nirvan has a great heart he ha…..

– এখানেই থামুন…

– কি?

– না মানে ড্রাইভার কে বললাম, ভাইয়া এখানেই রেখে দিন।

– কিন্তু তোমার বাসা তো আসেনি।

– নাহ আমার এখানে একটু কাজ আছে তাই।

– ওহ আচ্ছা। রনি এখানেই রাখো সাইড করে।
গাড়ি থামাতেই সানভি বের হয়ে গেলো। নির্ভান এবার ওর ফোন দিয়ে পোস্ট এর কমেন্ট গুলো চেক কর‍তে লাগলো। একটা কমেন্ট এ চোখ পরলো আর যেখানে লিখা ” My bestie Sanvi and my rock star Nirvaan ” দিয়ে কিস ইমোজি দেয়া।। বুঝতে বাকি রইলো না এটা সানভির ফ্রেন্ড নির্ভান জানে। কিন্তু মেয়েটার বোকামি দেখো সানভি এভাবে লিখেছে যে ওকে কমেন্ট এ ট্যাগ করে দিয়েছে যার কারনে ওর কমেন্ট এই সবচেয়ে বেশি লাইক এন্ড লাভ এসেছে। আসবেই তো সানভির আইডি যে পেয়ে যাচ্ছে ওরা অবশেষে আর না পেরে ও পোস্ট টা ডিলিট ই করে দিলো
.
পরেরদিন সকালে সানভি যথা সময়ে এসে পৌছাতে পেরেছে। নরমালি কাজ করছিলো আর সময় পেয়ে নেক্সট সব প্লান গুলো ঠিক করে রাখলো। নির্ভান ও ওর স্টুডিও তে নতুন গান এর টিউন ঠিক করছে আর সানভি স্টুডিওর অফিসে বসে কাজ করছে ল্যাপটপ এ তখনই ইলার কল করে ওকে আবার শুক্রবার এর কথা মনে করিয়ে দিলো। সানভি ও বলে দিয়েছে ওর ওইদিন কাজ থাকলে ও যাবে না।
তখনই নির্ভানের ডাক শুনে ফোন টা রেখে নির্ভানের রুমে গেলো।

– জি মি.কে।

– হ্যাঁ মিস.সান আমার ফেভারিট রেস্টুরেন্ট এ একটা টেবিল বুক করো।

– কোন তারিখের জন্য?

– তারিখ এই তো এই ফ্রাইডে এর জন্য।

– এই ফ্রাইডের জন্য?

– হ্যাঁ। কোনো সমস্যা?

– নাহ মি. কে।

– ওকে তো যাও বুকিং দিয়ে দাও। আর হ্যাঁ ওইদিন তোমার অফ ডে নিয়ে নিয়ো।

– অফ ডে নিবো?

– হ্যাঁ একটা পার্সোনাল মিটিং তোমার যেতে হবে না।
জি মি.কে বলে চলে এলেও মনে মনে ঠিক ই ভাবছে এমন কি পার্সোনাল যে ওকে ছাড়া যাচ্ছে এই গত তিন বছরে এই প্রথম নির্ভান ওকে ওর সাথে যেতে না করেছে।
.
রাতে বাসায় ফিরতে সময় সানভি দেখতে পেলো ইলা ওর বাড়ির নিচে দাঁড়িয়ে আছে

– কিরে এখানে তুই? কখন এসেছিস?

– এই কিছুক্ষন হয়েছে তোরই অপেক্ষায় ছিলাম।

– আচ্ছা চল ভেতরে চল।
.
ঘরে এসেই ইলা বলতে লাগলো আবার ওই ছেলের কথা, যে ছেলে ব্যাংক এ চাকরি করে বাবা মায়ের এক মাত্র ছেলে। মা মেয়ে দেখছে আর ছেলে ও তাই আমাকে তোর সাথে কথা বলতে বলেছে। সানভি ও বলে দিয়েছে ওর অফ ডে তাই ও যেতে পারবে। শুনে ইলা তো খুব খুসি আর এই খুশি তেই ইলা ওকে ওই ছেলের কিছু জরুরি তথ্য জানিয়ে দিয়ে চলে গেলো। ইলা কে আসোলেই অনেক খুশি,,, মেয়ে টাও না।
সানভি ফ্রেশ হয়ে এসে রাতের খাবার তৈরি করছিলো তখন আবার ওর মাথায় নির্ভানের কথা টা চলে এলো যে কিনা প্রতিটা বড় ছোট ইভেন্ট, মিটিং, ডিনার এমন কি ফ্যামিলি গেট টুগেদার এ সব কিছু তে ওকে নিয়ে যায় সে নাকি ওকে ছাড়া মিটিং এ যাচ্ছে তাও আবার পুরো দিনের অফ দিয়ে দিলো।

– উফফ এতো ভাবার কি আছে সে তার লাইফে কি করে না করে তা নিয়ে আমি কেনো এতো ভাবছি!
.
এদিকে নির্ভান ম্যাক্স কে ফোনে বলছে

– হ্যাঁ রেস্টুরেন্ট এ টেবিল বুক হয়ে গেছে।
-……
– হ্যাঁ আমার ফেভারিট টাতেই করিয়েছি।
-…..

– না না তোর চিন্তা করতে হবে না, যেভাবে বলেছিস সেভাবেই করবো। আই এম সো এক্সাইটেড ইয়ার।।
-….
– আমি জানি ওকে আচ্ছা রাখি। bye and see uuuu after tomorrow.
পরেরদিন নির্ভান বারবার রেস্টুরেন্ট কনফার্ম হয়েছে কিনা জিজ্ঞেস করেছে একটা গোলাপ ফুলের তোড়া ও বুক করতে বলেছে কালকে মানে শুক্রবার বিকেলের জন্য। এতো সব এরেঞ্জমেন্ট দেখে এখন সানভির কৌতুহল যেন আরো দ্বিগুন বেড়ে গেলো। তার মধ্যে আবার সন্ধ্যায় ম্যাক্স ও এসেছে দুইজন কি নিয়ে যেন অনেকক্ষন কথা বলছিলো।।
অবশেষে সেই বহুল আলোচিত শুক্রবার দিন টা চলেই এলো,,, ভোরে সানভির ঘুম ভেঙে গেলো ভেতরে কেমন একটা এক্সাইটমেন্ট কাজ করছে ফার্স্ট টাইম কারো সাথে এভাবে যাচ্ছে সানভি এবং ও পজিটিভ ই একটা নতুন পথে পা বাড়ানো নিয়ে হয়তো বিয়ে সংসার এর স্বপ্ন টা পুরন হতেই পারে।
এসব ভেবে ভেবেই উঠে গিয়ে কফি নিয়ে ওর ছোট্ট বারান্দা টায় গিয়ে বসলো তারপর মোবাইল টা নিয়ে কিছু সিম্পল মেকাপ আইডিয়া দেখলো ঘরে বসেই কিছু রুপচর্চার আইডিয়া ও নিলো এসব করছে ভেবেই ওর হাসি পাচ্ছে।
.
.
.
চলবে।।