#অবশেষে_ভালোবেসে
পর্বঃ ২১
লেখিকাঃ মেহেরুন নেসা
.
পাশে সিকিউরিটি আর মাঝে ও সানভি ও সিকিউরিটির মধ্যেই দাঁড়িয়ে ছিলো কিন্তু নির্ভান ওকে টেনে ভেতরে ওর জন্য বানানো সার্কেল টার মধ্যে নিয়ে নিলো
– এখানে দাড়াও আমার পাশে এটাই তোমার প্লেস। তুমি আমার সিকিউরিটি মেম্বার না তুমি আমার…. আমার পার্সোনাল সেক্রেটারি তুমি আমার পাশেই থাকবে।
.
কিছুক্ষন দাঁড়িয়ে নির্ভান হোটেলে ঢুকে গেলো অফিসিয়ালি এখন সবাই জানে যে এই হোটেলে একজন ফেমাস গায়ক আছে হোটেলের স্টাফ ও এখন ওর রুমের আসে পাসেই থাকে বেশি বেশি।
ওইদিন রাতে সানভির ফোনে অর্নব এর একটা মেসেজ আসে যেটা দেখেই ওর আবার সেই খুবই গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেয়ার কথা মনে পরে। রাত গভীর হলেও ঘুম আসছিলো না এটার চিন্তায় আর মাত্র কালকের দিন টা পরেরদিন শনিবার অর্নব এর সাথে দেখা করে ওকে জানাতে হবে সানভি বুঝতে পারছে না এতো রাত তাই ইলা কেও কল করতে পারছে না। এভাবেই এখানে কাজের চাপ তার মধ্যে এটা ওর খুব অস্থির করছিলো তাই ভাবলো একটু এই রুম টার ব্যালকনিতে গিয়ে দাড়াবে অবশ্যই এই খানের ভিউ ঢাকার বারান্দার ভিউ থেকে আলাদা ই হবে।।।
বারান্দায় এসে দাড়ালো কিন্তু গাছ ঠান্ডা নিরব পরিবেশ এ বেশিক্ষন থাকতে পারলো না ভয় পেলো আর কি। রুমে এসে সোজা বিছানায় গিয়ে কাথা দিয়ে গা ঢেকে শুয়ে রইলো। নিজের পরিচিত স্থানে একা থাকা আর অপরিচিত স্থানে একা থাকা দুইটা ই আলাদা পরিস্থিতি।।
.
রাতের ঘুম ভালো হয়নি সানভির সকালে উঠেও খুব ক্লান্ত লাগছে যদিও আজ ক্লান্ত হওয়ার সময় নেই অনেক কাজ আছে পুরোই ব্যাস্ত একটা দিন। ফ্রেশ হয়ে গেলো নির্ভানের রুমে নক করার কিছুক্ষন পর নির্ভান গেইট খুললো মাত্রই ঘুম থেকে উঠেছে, গুড মর্নিং বলে সরে গেলো সানভি ও উত্তর দিয়ে রুমের গেইট লক করে এসে জিজ্ঞেস করলো ব্রেকফাস্ট এর জন্য কি অর্ডার করবে।
– সান আমরা বাহিরে গিয়ে ব্রেকফাস্ট করতে পারি না?
– পারি কিন্তু ফেমাস পার্সন এর জন্য তা একটু প্রবেলম এর হবে। যেহেতু অনেক ফ্যান এসে…
– হু আর বলতে হবে না বুঝতে পেরেছি। সিম্পল কিছু অর্ডার করো হেভি কিছু না।
সানভি ও হেসে অর্ডার করায় মন দিলো।
দুইজনের সম্পর্ক টা এখন একটু বেশিই নোকঝোক এর হয়ে গেছে। সারাদিন অনেক কাজ ছিলো সন্ধ্যার পরেই নির্ভানের কনসার্ট তাই দুপুরের খাবার ও এখনো খেতে পারেনি সানভি নির্ভান ও ওর প্র্যাকটিস এ ব্যাস্ত।
কনসার্ট এর আগে সানভি লাস্ট টাইম চেক করে নিলো সব নির্ভান এর ও মুড টা এখন অনেক বেশি ভালো আর ফ্রেশ আছে বারবার নিজের গানের লিরিক্স গুলো গুন গুন করছে, কিন্তু সমস্যা হলো এখানে যে ওর জন্য স্টাইলার এসেছে মেয়েটা খুব বেশি নার্ভাস হয়ে আছে খুব বড় ফ্যান তো তাই। বারবার মেয়েটা ভুল করছে তাই নির্ভান সানভি কে ডাকে পরে ও এখানে নির্ভান কে একটু মেকাপের টাচ দিয়ে দেয় চুল এর স্টাইল ও যেটাতে বেস্ট লাগে সেটাও করে দিলো। নির্ভান আবার ও গর্বিত ফিল করলো এমন একটা সেক্রেটারি পাওয়ায়।
নির্ভানের পারফরম্যান্স শুরু হলো ধীরে ধীরে জনগন আরো এক্টিভ হয়ে উঠলো সানভি নির্ভান কে ব্যাক স্টেজ এই আড়াল থেকে দেখছে ও ওর ফ্যান দের সাথে খুব ভালো ইন্টারেক্ট করতে পারে। অন্য সাধারণ মানুষ গুলোর মতো শেষ গান টায় ও নিজেও তাল মেলাচ্ছিলো কি তখনই ওইখানের এক স্টাফ এসে বললো কে যেনো ওর সাথে দেখা করতে এসেছে।
– এখানে আবার কে আসবে দেখা করতে! নিজে নিজেই বলে না চাইতে ও ওই স্টাফ এর পিছে গেলো এই গান ছেড়ে আসতে ওর মোটেও ইচ্ছে করছিলো না তবুও। নির্ভান গানের মাঝেই দেখলো সানভি কোথাও যাচ্ছে মনোযোগ একটু ওইদিকে চলে গেলেও গান কন্টিনিউ করলো।
এদিকে সানভি ওর সাথে দেখা করতে আসা লোক কে দেখে অবাক হয়ে গেলো!
– আপনি এখানে??
– হ্যাঁ তুমি বুঝি আমার টানে এখানে এসে পরেছো।
যদিও অর্নব খুব ভালো মুডে আছে কিন্তু সানভির এখন ভালো লাগছে না।
– নাহ মি.কে এর কনসার্ট ছিলো।
– হ্যাঁ আমি মজা করছিলাম। আসলে আমিও অফিসের কাজে এখানে এসেছিলাম। আজ বিকেলে কাজ শেষ হয়েছে রাতে ফিরে যাওয়ার কথা ছিলো কিন্তু শুনলাম নির্ভানের কনসার্ট এখানে আর তুমিও এখানেই হবে তাই ফিরে গেলাম না।
– ওহ।
– ভাবলাম যেটা কালকে হতো সেটা নাহয় আজকেই এখানেই হয়ে যাক। আই থিংক প্রপোজ করার জন্য এটাও একটা ভালো প্লেস। কি বলো এখানে করবো আবার?
– না না কি করছেন!?
– তো অন্য কোথাও যাবে? তোমার কাজ শেষ হলে চলো যাই কোথাও?
– নাহ আমি কোথাও যেতে পারবো না ।
– কি?
– না মানে আমার কাজ শেষ হয়নি।।
– তোমার অনেক কাজের চাপ তাই না? তুমি চাইলেই এই কাজ ছেড়ে দিতো পারো তোমার নিজের প্রতি ও তো কেয়ার করা উচিৎ যা দেখছি তোমাকে দিন দিন রোগা দেখাচ্ছে।
.
এদিকে নির্ভান এর পারফরম্যান্স শেষে সানভি কে খুজতে লাগলো কিন্তু পেলো না দেখে কয়েকজন কে জিজ্ঞেস করেই জানলো সানভি পেছনের গেইট এর ওইখানে গিয়েছে। তাই নির্ভান ও ওইখানে গেলো কিন্তু গিয়ে সানভি কে অর্নব এর সাথে দেখে আর অর্নবের শেষ কথা শুনে চলে এলো।।
– ভাবে কি ওই ছেলে নিজেকে! আমার কাজ ছেড়ে দিতে বলছে আর সান ও নিজেও কিছু বলছে না। ও কি আসলেও অনেক টায়ার্ড আমার এই কাজ করতে করতে? ওর উপর কি অনেক কাজের চাপ পরছে! ধ্যাৎ মুড টাই নষ্ট হয়ে গেলো। বলেই কাউকে কিছু না বলেই ওই খান থেকে বের হয়ে এসে ফোন দিয়ে কাকে যেন বললো রিজার্ভেশন ক্যান্সাল করে দিতে। কল কেটে দিয়ে আসেপাশে দেখতেই খেয়াল হলো ও বাহিরে এসে পরেছে তাও একা ওকে চিনতে পেরে ধীরে ধীরে লোক জন বাড়তে থাকলেই ও ভিড়ে পরে গেলো বের হয়েও আসতে পারছিলো না একেকজন ছবি তোলা কেউ ওকে কাছ থেকে দেখতে চাচ্ছিলো। কিভাবে বাচবে ভাবতে ভাবতেই দেখে ওকে বাচাতে ওর সিকিউরিটি এসে পরেছে সাথে সানভি তো আছেই। সানভি কে সিকিউরিটি দের সাথে আসতে দেখে ওর নিজেকে নায়িকা আর সানভি কে নায়ক মনে হচ্ছিলো। ওকে যখন সানভি ধরে ওই ভিড়ের মধ্যে থেকে নিয়ে আসছিলো।
ওইখান থেকে সোজা ওকে গাড়িতে বসিয়ে হোটেলে নিয়ে আসা হলো।
নির্ভান নিজের রুমে গিয়েও বারবার অর্নব এর বলা কথা গুলোই ভাবছিলো রাগ হচ্ছিলো ওর সানভি কে নিয়ে ওই অর্নব এর এতো চিন্তা কেনো আর সানভি ও কেনো বললো না যে ওকে দিয়ে আমি বেশি কাজ করাই না! নাকি ওর কাছেও আমার কাজ গুলো যন্ত্রনার মনে হয়? তারপর আর না পেরে সানভির রুমে গিয়ে নক করলো সাথে সাথেই সানভি গেইট খুললো
– আরে মি.কে!
– হ্যাঁ, একটু আসতে পারি?
– হ্যাঁ হ্যাঁ। বলেই সাইড হতেই নির্ভান ভেতরে ঢুকলো
– রেস্ট নিচ্ছিলে না?
– নাহ আর কয়েক ঘন্টার মধ্যেই বের হতে হবে তাই ব্যাগ টা গুছিয়ে নিচ্ছি।।
– কিন্তু তোমার তো রেস্ট ও নেয়া উচিৎ নাহলে সবাই ভাববে আমি তোমাকে অনেক খাটাই তোমাকে দিয়ে অনেক বেশি কাজ করাই।
– নাহ মি.কে কেউ তা কেনো জানবে??
– কিছু না। বলেই আবার হুট করে বের হয়ে গেলো।
– আরে মি.কে…. আজব কি হলো হটাৎ!
.
গাড়িতে বসে আছে ঢাকায় ফিরে যাচ্ছে ওরা সফর শেষ। নির্ভান আবার গোমড়া মুখো হয়ে আছে দেখে মনে মনে বলছে,,, এই লোক টার ইদানীং হয়েছে টা কি? এই ভালো এই খারাপ! আজব.. আজব কথা টা ও একটু জোরেই বলেছে যার জন্য নির্ভান ও শুনতে পেলো
– কিছু বলেছো মিস সান?
– আমি বলেছি? কই না না তো। কিছু বলিনি।
– ওহ।
– বাই দা ওয়ে মি.কে আজকের কনসার্ট টা কিন্তু খুব হিট ছিলো।
– হুম।
– শুধু হুম আর কিছু না?
– নাহ আমার ঘুম পাচ্ছে।
– ওহ ওকে ওকে। নির্ভান চোখ বুজতেই সানভি মনে মনে বললো,,, ইনাকে যতোই ভাবি বুঝতে পারছি ততই তিনি জিলাপির প্যাচ হয়ে যান। একে তো এতো বড় একটা ডিসিশন নিয়ে এলাম আর উনি আমার সাথে এমন করলেন।।
রাত শেষে ভোর হয়ে এলো সানভি ও ঘুমিয়ে গেছে কিন্তু নির্ভান ঘুমায়নি কেনো সানভি কে নিয়ে ওর এতো চিন্তা! কেন সানভি কে ওর এতো প্রয়োজন কেন অন্য কারো কথা ওকে এতো ভাবায়! এসবই ওকে ভাবাচ্ছে এখন যার কারনে ঘুম টা ও আসছে না ম্যাক্স এর সাথে কথা বলা খুব প্রয়োজন।।
.
সানভির ঘুম ভাঙে ড্রাইভার এর ডাকে উঠেই দেখে নির্ভান নেই ড্রাইভার কে জিজ্ঞেস করলে জানায় যে উনি ম্যাক্স এর অফিসের সামনে নেমে গেছে আর বলেছে ওকে ওর বাসার সামনে নামিয়ে দিতে আর বলেছে আজকে আর আসতে হবে না সবাইকে রেস্ট দিয়েছেন।। সানভি ও বাসায় এসে ফ্রেশ হয়ে আবার ঘুম দিলো আগের রাতে ও ঘুম ভালো হয়নি আর আজ রাতে তো একটু ই ঘুমাতে পেরেছে। কিন্তু হটাৎ ফোনের রিংটোন এ ঘুম ভাঙলো ইলা ফোন করেছে
– হু বল।
– তুই এটা কি করলি??
– ঘুমাচ্ছি এতে দোষের কি আছে?
– তুই ঘুমাচ্ছিস! আমার ঘুম উরিয়ে দিয়ে তুই ঘুমাচ্ছিস।
– হুম। বলেই আবার ঘুমিয়ে যাচ্ছিলো কিন্তু ইলার কথায় উঠে বসলো,,,, হ্যাঁ বল এবার, আচ্ছা না আমিই বলি তুই অর্নব এর কাছে সবই তো শুনেছিস আর আমি যা বলেছি তাই বলেছি এটা মেনে নিতে পারলে নিবে। এখন সিদ্ধান্ত ওর ইলি আর আমি চাই তুই আমার এই সিদ্ধান্ত কে মেনে নিবি।
– না আমি সব শুনিনি তুই বস আমি আসছি এখনই।
– ওকে।
.
.
.
চলবে।।।
#অবশেষে_ভালোবেসে
পর্বঃ ২২
লেখিকাঃ মেহেরুন নেসা
.
– না আমি সব শুনিনি তুই বস আমি আসছি এখনই।
– ওকে।
.
ইলা আসছে বাসায় তাই আর ঘুমাতে পারলো না সানভি। ও এসেই অনেক প্রশ্ন জুড়ে বসবে তা স্বাভাবিক তা ভেবেই দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো।
বেশি সময় লাগলো না ইলার আসতে সানভি গেইট খুলে দিতেই হাজার প্রশ্ন কি হয়েছে ও কি বলেছে অর্নব কে…
– উফফ একটা একটা করে।
– তুই অর্নব কে কি বলেছিস যে ওর মন এতো খারাপ? জিজ্ঞেস করলাম না করে দিয়েছিস কি না তা ও বললো না তো হয়েছে টা কি?
– হয়েছে এই যে আমি ওকে না করিনি। বিয়েতে রাজি ও আছি কিন্তু শর্ত হচ্ছে আমি যতো পর্যন্ত মি. কে কে যোগ্য সেক্রেটারি না খুজে দেই ততো পর্যন্ত আমি জব ছাড়বো না আর ততো পর্যন্ত ও আমার জন্য অপেক্ষা করলে করবে। আর যদি সেক্রেটারি না পাই আমি তাকে এভাবেই ছেড়ে দিয়ে আসতে পারবো না। এভাবে তাকে ছেড়ে দেয়া না আমার পক্ষে সম্ভব না তার পক্ষে। তাই এখন সিদ্ধান্ত তার উপর সে অপেক্ষা করতে পারলে করবে আর নাহলে নাই।
– তুই তো এভাবে বলছিস যেন ও তোর প্রেমিক আর আমি তোর বাবা যে তোকে জোর করে বিয়ে দিতে চাচ্ছি। যাতে এতো ইমোশনাল কথা বলছিস।
– তার মানে তুই রাগ করিস নাই?
– না রাগ করবো কেনো আমার বেস্ট ফ্রেন্ড তুই অর্নব না ও তো আমার ইফায এর ফ্রেন্ড তাই আমার কাছে অবশ্যই তুই আমার প্রায়োরিটি ।।
– ও… বান্ধবী বলেই ওকে জড়িয়ে ধরলো
– কিন্তু তুই নির্ভান এর জন্য এতো কেনো ভাবছিস?
– স্বাভাবিক আমি উনার সাথে তিন বছর ধরে কাজ করছি সবাই শুধু বাহিরের নির্ভান টা কে চিনে ভেতরের নির্ভান টা কে আমি চিনি উনি যে আমার উপর নির্ভর হয়ে গেছেন তাও আমি জানি। আর এতো কিছু জেনেও তাকে কোনো নির্ভরশীল হাতে না দিয়ে আমি কাজ ছেড়ে আসতে পারিনা।
– সানভি….
– কি?
– সত্যি করে বল তো তুই নির্ভানের প্রেমে তো পরে যাস নাই?
– আরে ধুরর তুই কি বলছিস।
– নাহ আমার মনে হয়…
– নাহ কিছুই মনে হয়না। তুই ভুল ভাবছিস আচ্ছা ভালো কথা বস তোর জন্য একটা গিফট এনেছি।
– তুই কথা ঘুরাতে পারিস ভালো।
সানভি আর এই কথায় কিছু বললো না ওর ওর ব্যাগ থেকে থেকে দুইটা প্যাকেট বের করে আনলো প্রথমে একটা প্যাকেট দিলে ইলা খুলে দেখে সিলেটের চায়ের পাতার প্যাকেট।
– এইটা!!
– হ্যাঁ এটাই তো ফেমাস সিলেটের। ওইটা দিয়ে চা করে খাবি আর এইটা পরে,,,, বলেই আরো একটা প্যাকেট এগিয়ে দিলো,,,, আমার সাথে ঘুরতে যাবি।।
ওই প্যাকেট খুলেই দেখে একটা শাড়ি।
– ওয়াও!
– হ্যাঁ আমার জন্য ও সেইম একটা এনেছি দুইজন একদিন এই শাড়ি পরে ঘুরতে যাবো।
– ওকে ওকে। বলেই সানভি কে জরিয়ে ধরলো।
এরপর দুই বান্ধবী মিলে অনেক গল্প করলো আজ সানভি আর কাজে যাবে না আর তাই ইলা ও ওর কাজ ম্যানেজ করে নিয়েছে আজ দুইজন অনেক আড্ডা দিবে।।
.
নির্ভান এসে অনেক লম্বা একটা ঘুম দিয়ে উঠে ফ্রেশ হয়ে এসে খাবার চাইলো। খেতে সময় অমিও কে না দেখে মা কে জিজ্ঞেস করলো ওর কথা ওর মা জানালো অমিও ওর ফ্রেন্ড দের সাথে ঘুরতে গিয়েছে।,,,, দরকার এর সময় তেই পাওয়া যায় না।
– কি রে কিছু বললি?
– না মা।
খাওয়া শেষ করে রুমে গিয়ে ম্যাক্স এর সাথে কথা বলে নিয়ে রেডি হয়ে বের হয়ে গেলো ওর সব সময়ের সঙ্গী ক্যাপ আর একটা মাস্ক নিয়ে।
ম্যাক্স এর একটা ক্লায়েন্ট এর সাথে থাকায় নির্ভান ওর অফিসে কিছুক্ষন বসার পর ফাইনালি কথা বলার সু্যোগ পেলো।। কথায় কথায় ও ম্যাক্স এর কাছে জিজ্ঞেস করলো
– আচ্ছা দোস্ত একটা সিচুয়েশন দেই তোকে যে ওইরকম সিচুয়েশনে তুই কি করতি!
– হ্যাঁ বিন্দাস দে।
– তো ব্যাপার টা হচ্ছে ধর একটা মানুষ সারাক্ষণ তোর আশেপাশে থাকে তোর কেয়ার করে তোকে প্রবলেম এর হাত থেকে বাচিয়ে রাখে বাট সে তোর ফ্যামিলি মেম্বার ও না কোনো রিলেটিভ বা ফ্রেন্ড ও না। সাডেনলি যদি তোর মনে হয় যে তোর ওকে ছাড়া চলছে না বা সে যদি তোকে ছেড়ে চলে যাওয়ার কথা বলে তখন তুই কি করবি??
– হু!! তার আগে তুই বল ওইটা মেয়ে না ছেলে?
– হ্যাঁ অবশ্যই মেয়ে।
– তখন আমি আমার বেস্ট টাই দিবো ওকে রেখে দেয়ার আই মিন আমার লাইফে এমন কেউ আসলে তাকে যেতে দিতে পারিনা।।
– সত্যিই তো তাই এটাই নরমাল তাই না!
– হ্যাঁ।
– আচ্ছা ওকে রেখে দেয়ার জন্য তুই কি করতে পারবি?
– আচ্ছা তুই কি কোনো ভাবে মিস সান! না মানে সানভির কথা বলছিস?
– হ্য… নাহ কি বলছিস ওর কথা কেন বলবো? কি যে বলিস না।
– নাহ হটাৎ এটাই মনে হলো।
– এখন তুই আমার প্রশ্নের উত্তর দে।
– জানিনা এটা আমার লাইফে কখনো এমন কেউ আসেনি তাকে আমি রাখার জন্য মরিয়া ও হইনি।
– ওহ আচ্ছা!,,,, আর আরেকটা কথা তুই যদি অন্য কারো সাথে দেখে তোর খারাপ লাগে সেটা কি জেলাসি?
– জেলাসি! জেলাসি না রে জেলাসি না।
– তো?
– সেটা তো লাভ ধরেই নেয়া যায়। হ্যাঁ সেটাই প্রেম।
– আরে প্রেম আর আমি কি যে বলিস না…
– কি তুই? দেখেছিস তুই তোর আর সানভির সিচুয়েশন ই আমাকে দিচ্ছিলি।
– আরে না না এমন কিছুই না।
– তুই মেনে নে আমি তোকে জানি তুই অন্য কারো সিচুয়েশন নিয়ে কথা বলার মানুষ না আর নাই তুই রোমান্টিক গান লিখিস যে তার জন্য তোর ভিডিও প্লট লাগবে।
– তুই ভুল…
– ওকে। আচ্ছা তো এখন বল সানভি কি জব ছেড়ে দিতে চাইছে?
নির্ভান মন খারাপ করে বললো,,,নাহ বাট বলবে মনে হচ্ছে।
– এই তো বলসিলাম না তুই তোর আর সানভির কথাই বলছিস। এখন বল কি হয়েছে সানভি কে কার সাথে দেখেছিস? এক মিনিট এক মিনিট সিলেটে কিছু হয়েছে?
– নাহ কিছু হয়নি আবার হয়েছে।
– মানে কি। সব শুরু থেকে বল।
তারপর নির্ভান শুরু থেকেই বলা শুরু করলো সেই কয়েক দিন আগের সানভির ভবিষ্যতে ওর কাজ না করার কথা থেকে অর্নবের বলা সেই কাজ ছেড়ে দেয়ার সময় পর্যন্ত ও যা যা ভেবেছে ওর যা যা মনের মধ্যে ছিলো ও সব বললো ম্যাক্স কে। কেন জানি ওর এখন খুব শান্তি লাগছে।
– দোস্ত তুই মানিস আর নাই মানিস তুই কিন্তু সানভির প্রতি আকর্ষিত হচ্ছিস পুরো পুরি বলতে গেলে আমার মনে হয় তুই ওকে…..
– না এর থেকে বেশী কিছু আর বলিস না। আমি নিতে পারবো না।।
– আমার মনে হয় এটাই।
নির্ভান আর কিছু বলতে পারলো না চুপ হয়ে গেলো।
.
এদিকে ইলা সানভি কে বললো কালকেই ওরা বের হবে অনেক দিন হয়েছে না অনেক মাস হয়েছে ওরা একা বের হতে পারেনা। তাই ওরা কালকেই নিজেদের কাজ থেকে ছুটি নিবে। সানভি বলছিলো শুক্রবার এর কথা কিন্তু ইলা অনেক বলে রিকুয়েষ্ট করেই সানভি কে রাজি করালো। তারপর নির্ভান কে ফোন দিয়ে বলতে বললো সানভি বললো পরে জানাবে কিন্তু ইলা!! তাই না পেরে কল করলো নির্ভান কে।
আর এদিকে সানভির কল দেখে নির্ভান পুরো লাফিয়ে উঠলো
– হ্যালো সান।
– মি.কে।
– হ্যাঁ বলো। তুমি কি আমাকে মিস করছিলে?
– জি?
– মিস করছিলে?
– না না আমি প্রশ্ন…. আচ্ছা যাই হোক মি.কে কালকে আপনার সিডিউল এ তেমন কিছু নেই।
– হ্যাঁ তো?
– আসলে আমি আমি…
– বলো।
– আমি কালকে আসতে পারবোনা। একটু কাজ আছে তাই ভাবছিলাম কালকে যদি না আসতাম…
– আবার ছুটি নিচ্ছো! তুমি এতো কেন ছুটি নিচ্ছো এই বছর আগে তো তুমি এমন ছিলেনা?
– মি.কে প্লিজ এটাই লাস্ট। প্লিজ প্লিজ।
– আচ্ছা ঠিকাছে। যা ভালো লাগে করো। বলেই নির্ভান কল টা কেটে দিলো।
সানভি ফোন রাখতেই একদিনে ইলা জানতে উৎসুক যে নির্ভান কি বলেছে আর অন্যদিকে ম্যাক্স বলছে
– তুই কথা বলার সময় খেয়াল করেছিস তুই সানভির সাথে কিভাবে কথা বলছিলি?? তোকে পুরো ফ্যান বয় লাগছিলো মনে হচ্ছিলো সানভি তোর ক্রাস আর ও না আসার কথায় হটাৎ মন খারাপ হয়ে গেলো!!
– এমন লাগছিলো??
– হ্যাঁ। আমার কাছেও সানভি কে ভালো লাগে…
– কি বলছিস তুই???
– আরে আরে পুরো টা তো শোন।আমার কাছে ওকে ভাবি হিসেবে ভালো লাগে, আংকেল আন্টির ও প্রিয় সানভি। তুই ওর কাছে কনফেস করলে ভালোই হবে আর আমি এটা এজন্য বলছি কারণ এই প্রথম তুই আমার কাছে এমন কিছু জানতে চেয়েছিস আর অন্য কোনো মেয়েকে পাত্তাই দিস না আর ভালো সম্পর্ক তো দূরেই থাক রিলেশন ও তুই এভাবেই করিস সেই খানে সানভির জন্য এই ফিলিং! আই থিংক ইটস পজেটিভ।
– ঠিক বলেছিস আমার ও মনে হয় আমি সান কে… সান কে ভালোবাসি যতো তারাতারি সম্ভব ওকে নিজের করে নেয়াই ভালো।
.
রাতে ইলার চলে যাওয়ার পর রুম টা পরিষ্কার করে ফ্রেশ হয়ে ঘুমাতে গিয়েছিলো কিন্তু কলিং বেল এর আওয়াজ এ ঘুম টা ভেঙে গেলো। ঘরের বাতি জালিয়ে নিয়ে গেইটের সামনে গিয়ে জিজ্ঞেস করলো,,, কে??
– সান আমি।
– মি.কে??
– হ্যাঁ সান গেইট খুলো।।
সানভি গেইট খুলতে খুলতে নিজেই বলছে,,, এ সময়!
সানভি গেইট খোলার সাথে সাথেই নির্ভান ওকে দেখে জড়িয়ে ধরলো,,, সান।
– কি করছেন মি.কে! কি হয়েছে আপনার? ছাড়ুন আমাকে কেউ দেখে ফেলবে। আপনি কি ড্রিংক করেছেন আবার??
– কেউ দেখবে না। বলেই ওকে আরো শক্ত করে ধরলো সানভি অনেক বার ছাড়তে বললেও না ছাড়লে। সানভি এবার অনেক শক্তি দিয়ে নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে নির্ভান কে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিলো
.
.
.
চলবে।