এক বৃষ্টিস্নাত সন্ধ্যা পর্ব-৩৮+৩৯

0
1304

#এক_বৃষ্টিস্নাত_সন্ধ্যা
৩৮.
#WriterঃMousumi_Akter

সকাল দশ টা বাজে সূর্যমামা তার পূর্ণ উত্তাপ ছড়িয়ে দিয়েছে পৃথিবীতে।ক্রমশ প্রকৃতি উত্তপ্ত হয়ে উঠছে।আরো এক ঘন্টা আগে গোসল করে চুল ফ্যানের নিচে দিয়ে সুয়ে আছি।চুলের পানি ঝরলে চুল বেঁধে রেডি হয়ে নিলাম।এই গরমে কি পোশাক পরবো সেটা ভেবে দিশেহারা।আবার খারাপ পোশাক পরেও যাওয়া যাবে না।কাল সারারাত উত্তেজনাতে ঘুম হয় নি।আমার রাগ হয় ভয়ানক রাগ হয় যখন দেখি কোনো সুন্দর মেয়ে বা ভালো হাইট এর মেয়ে বিহান ভাই এর সাথে ভাব করার চেষ্টা করছে।এমনিতেই মাত্র ৫ ফিট ২ হাইট আমার সাদা ফকফকে চেহারা না যার ফলে অতিরিক্ত মেকাপ করলে আরো বাজে দেখায় আমাকে।মেকাপ করলে বাজে দেখায় এটা আমি বা মেকাপ কারোর দোষ না আসলে আমি মেকাপ করতেই পারি না।ঠিক ঠাক মেকাপ পারলে আমাকেও গরজিয়াস লাগতো সিওর।ন্যাচারাল লুকে না থাকলে আসলেই পেত্নি লাগে আমাকে। এই পেত্নিকে যে অত সুন্দর হ্যান্ডসাম ছেলে গ্রহন করেছে সেটাই ভাগ্যর ব্যাপার।কাজিন দের মাঝে সব থেকে পিচ্চি আর নাদুস নুদুস আমি।বুঝি না এই পেত্নি মেয়েকে কিউট ওভারলোড উপাধি কিভাবে দেয় ছেলেরা।আসলেই কি তারা আমাকে পাম দেয় বুঝি না।ইদানিং বেশীরভাগ সময় আমার ডিপ্রেশন এ কাটছে।তার একটাই কারণ সুন্দর কোনো মেয়ে বিহান ভাই এর আশে পাশে দেখলেই জেলাস হয় আমার।বাই এনি চান্স যদি উনার মন অন্য দিকে ঘুরে যায়। মনে মনে আফসোস করি হে আল্লাহ সবাই কে তুমি এত পারফেক্ট হাইট এত সুন্দরী বানিয়েছো ওদের অত সুন্দর না দিয়ে আমাকেও একটু দিতে।আমাকে যদি অনেক সুন্দরী বানাতে তাহলে আজ এত ডিপ্রেশন এ ভোগা লাগতো না আমার।সারাক্ষণ নিজেই নিজের সাথে কথা বলে চলেছি।যাক বাবা বিহান ভাই মেয়েটাকে বকে দিলে বুঝে যাবে আর চান্স পাওয়া যাবে না।আহা শান্তি শুধু শান্তি।

রিয়া ও রেডি হয়ে গিয়েছে।আমরা চারজন সুলতান এর বাড়ি যাবো সানজি নামের মেয়েটা ওখানেই আসবে।আমরা দুজন রেডি হয়ে রাস্তায় দাঁড়িয়েছি অথচ বিহান ভাই আর বিভোর ভাই এর খোজ নেই।শুনেছি উনার নাকি ভীষণ রাগ হয়েছে কিন্তু কি নিয়ে সেটা জানিনা।

কিছুক্ষণ অপেক্ষার পর দেখি রাগিমশাই হাজির।মুখে কোনো কথা নেই প্যাচার মতো করে আছে।

আমি ইচ্ছা করেই বললাম,কি ব্যাপার বিহান ভাই হবু প্রেমিকার সাথে ব্রেকাপ করতে যাচ্ছেন বলে মুড অফ।

কথাটা শুনে উনি রাগি দৃষ্টি নিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে বললেন বাজে কথা বললে একটা থাপ্পড় মারবো।মেজাজ অনেক খারাপ আজ।আমার বয়সে এত রাগ হয় নি আমার।

রিয়া বললো কেনো বিহান ভাই আপনি এত রাগ করেছেন।

আর বলো না রিয়া আমার এই টুকু বয়সে এত লজ্জা আমি পাই নি।সিরিয়াসলি এত লজ্জা পেয়েছি আমার মান সম্মান যা ছিলো সব শেষ।আমার ইজ্জত মানের কিছু অবশিষ্ট নেই।আমার সাথেই এটা হওয়ার ছিলো।এত সচেতন থাকার পরেও যে লজ্জা টা পেয়েছি বলার মতো নয়।

রিয়া আবার বললো কেনো বিহান ভাই কিছু হয়েছে?

কিছু হয়েছে বললে ভুল।যা হয়েছে সেটা ভুলতে পারছিনা।আজ আমার মেডিকেল কলেজের স্যার ভিডিও কল দিছিলেন।একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে কথা বলার জন্য।মেডিকেল এর টিচার দের সাথে কথা বলতে গেলেও ভেবে চিন্তে বলতে হয়।অত্যান্ত ভদ্রতার সাথে তাদের সাথে কথা বলতে হয়।স্যার আমাকে আগেই বলে নিয়েছিলেন কোলাহলহীন একটা পরিবেশ এ গিয়ে যেনো উনাকে কল করি।স্যার কল দিছেন আমি রুমের মাঝে গিয়ে কল রিসিভ করে কথা বলছি।পাশের বাসায় বিয়ে বক্সের মাইক আমাদের বাসার দিকে দিয়েছে এত জোরে পানি পানি সং প্লে করেছে মানে কি বলবো মেজাজ টা এত খারাপ হচ্ছিলো।এমনিতেই স্যার আগেই বলে রেখেছিলেন যেনো কোলাহলপূর্ণ পরিবেশ এ গিয়ে কল দেয়।বক্স বাজাতে মিউট করে বাড়ির পেছনে নদীর পাড়ে গিয়ে কল করেছি।স্যার আমাকে বলছেন কি প্রব্লেম বিহান এইভাবে ছোটাছুটি করছো কেনো তাছাড়া তুমি গাছের নিচে কেনো?আর এসব গানের সাউন্ড আসছে কেনো?স্যার কে বললাম স্যার আমি তো বাড়িতে এসছি। পাশে একটা কাজিনের বিয়ে তাই সাউন্ড আসছে তাছাড়া নেটওয়ার্ক পাচ্ছে না স্যার রুমে তাই গাছের নিচে এসছি।স্যার খানিক টা বিরক্ত হয়ে বললেন ওকে আলোচনায় আসি।এমন সময় পাশ দিয়ে পাশের বাসার দুজন যাচ্ছিলেন হঠাত তাদের মাঝে ঝগড়া লেগেছে।আমার কাছাকাছি এসেই এমন গালি গালাজ শুরু করেছে বলার বাইরে।এর বাচ্চা তার বাচ্চা আরো যত বাজে লেভেল এর গালি আছে সব শুরু করেছে।স্যার দেখি একদম চুপ হয়ে গিয়েছেন।স্যার এর জীবনে হয়তো এমন গালি শোনেন নি।আমি কি করবো মাথায় ঢুকছিলো না ফোন নিয়ে শরীরে যত বল ছিলো তাই নিয়ে দৌড় মেরেছি।এক দৌড়ে অনেক দূরে চলে গিয়েছি যাতে গালি গুলা আর স্যার শুনতে না পান।অনেক খানি দূরে গিয়ে হাঁপাচ্ছি।তাকিয়ে দেখি স্যার কপালের চামড়া ভাজ করে বসে আছেন।আমাকে বলছেন কিহ পাশে কারা তোমার নড়াইল এর ফ্রেন্ড নাকি।মানে লজ্জায় আমি মরে যাচ্ছিলাম।স্যার কে বললাম সরি স্যার প্লিজ সরি।সাডেন তারা ঝগড়া লাগিয়ে এগুলা শুরু করেছে আমাকে মাফ করে দিন।স্যার বললেন নো প্রব্লেম চিল,দৌড় দিয়ে ক্লান্ত তুমি এখন বাসায় যাও পরে কথা হবে।

বুঝতে পারছো রিয়া কি বিশ্রি কাহিনী হয়েছে।

বিহান ভাই এর দৌড় দেওয়ার কথা শুনে আমার হাসি থামছেই না।আমি হেসে গড়াগড়ি যাচ্ছি।আমার জীবনে এর থেকে মজার ঘটনা আর একটাও শুনি নি।

রিয়া বললো হাইরে কপাল তারা আর গালি দেওয়ার সময় পেলো না।

বিভোর ভাই বললেন বিহান তোর সাথে এটাও হতে পারে ভাবা যায়।স্যার না জানি কত কি ভেবেছে দেখ।

শুধু কি ভেবেছে অন্য টিচার দের ও বলবে।মানে ইজ্জত এর কিছুই বাকি নেই আমার।

অটো করে সুলতান এর বাড়ি পৌছে গেলাম।বিভোর ভাই বাদাম কিনেছেন বসে বসে খাচ্ছি।বিহান ভাই বলছেন বিভোর কল দে তো কত লেট হবে সে মেয়ের আসতে।তার জন্য ঝামেলা একটা রেখে একটা যাচ্ছেই না।বিভোর ভাই বললেন,, এইতো চলেই এসছে ৫ মিনিট লাগবে।

৫ মিনিট অপেক্ষার পর দেখি সেই মেয়ের প্রবেশ হলো।আরে এইটা তো পিকনিকের সেই মেয়েটা।সাইমন এর সাথে এসছিলো।মেয়েটা মৃদু হাসি দিতে দিতে প্রবেশ করলো।মেয়েটা এসেই হাই হ্যালো করলো।

মেয়েটার দিকে তাকিয়ে কোমরে দুই হাত বেঁধে বললাম আপনার হাই হ্যালো দেখার সময় নেই আমার।আগে বলুন কোন সাহসে অন্যর জামাই কে চিঠি পাঠান।আপনার নামে মামলা দিবো।

মেয়েটি হেসে উত্তর দিলো উনি অন্যর জামাই না এটা জানি আমি।উনাকে জামাই বানাবো বলেই চিঠি দিয়েছি।।।

লজ্জা করে না পরকিয়া করতে।আমি আপনার নামে ডিপ্রেশন এর মামলা দিব।দেখতে তো খারাপ না তাহলে জামাই কেনো?আমি কিন্তু ছাড়বো না আপনাকে।

বুঝলাম না দিয়া আপনার সমস্যা কোথায়?

সমস্যা মাই ফুট উনি আমার এটা বুঝতে পারছেন না।

আপনার জামাই তো বিহান ভাইয়া।বাট আমার হবু জামাই তো উনি বিভোর।আমি উনাকে ভালবাসি।

বিহান ভাই কয়েক টা দীর্ঘঃনিশ্বাস ছেড়ে বললেন,এই আপু নেক্সট চিঠিতে কোথাও এসব বি টি লিখবেন না।পুরা নাম লিখবেন।আপনি জানেন কি পরিমান হেনস্হা হতে হয়েছে।বউ কথা বলা অফ করেছে।

বিভোর ভাই এর দিকে আমি আর রিয়া অবাক করা নয়নে তাকিয়ে রইলাম।রিয়ার মুখের যা অবস্থা দেখার মতো না।

চলবে,,

#এক_বৃষ্টিস্নাত_সন্ধ্যা
৩৯.
#WriterঃMousumi_Akter

যে চিঠি নিয়ে এত বড় একটা ইতিহাস হয়ে গেলো সেই চিঠি আসলে বিহান ভাই নয় বিভোর ভাই এর ছিলো।বিভোর ভাই এর মুখটা ফ্যাকাসে বর্ণ ধারণ করেছে।কারণ বিভোর ভাই ও শতভাগ নিশ্চিত ছিলেন যে ওই চিঠিটা বিহান ভাই এর ই হবে।বিভোর ভাই একবার সানজি আর একবার রিয়ার মুখের দিকে তাকাচ্ছেন, কি একটা অবস্থা উনার।এমনিতেই রিয়ার মনে অনেক সন্দেহ বিভোর ভাই কে নিয়ে তার উপর এমন একটা বাঁশ খেয়ে গেলো।রিয়া অনিচ্ছাকৃত একটা হাসি দিয়ে বললো আরে বিভোর ভাই আপনার চিঠি,আপনি তাহলে ঠিকানা দিছিলেন উনাকে।ইয়ে সানজি আপু উনি পিওর সিঙ্গেল, আপনার সাথে মারাত্মক মানাবে কিন্তু।আপনারা কথা বলুন আমরা আসি।সানজি মেয়েটা লাজুক একটা হাসি দিলো রিয়ার কথা শুনে।

বিভোর ভাই দুঃখি দুঃখি মুখ নিয়ে বললেন,এই চিঠি আমার না কিছুতেই না এটা বিহানের ই।দিয়ার ভয়ে বিহান আমার নামে ফাঁসাচ্ছে।বিহান নিজে বাঁচতে চক্রান্ত করে আমার ঘাড়ে চাপিয়ে দিচ্ছে ব্যাপার টা।আমার সংসার ভাঙলে বিহানের সাংসার ও টিকবে না বলে দিলাম।বিভোর ভাই সানজির দিকে তাকিয়ে বলেন এই চিঠি তো বিহানের, মেয়েরা বিহানের জন্য পাগল,আপনি তো বিহান কে লাইক করেন তাইনা খালা।

“খালা,হোয়াট কাকে খালা বলছো?খালা কথাটা শুনে সানজি মনে হয় মাথা ঘুরে পরে যাওয়ার উপক্রম।”

“আপনাকে বলছি।আপনি আমার খালা।আমার মায়ের বোন।আমি আপনার ভাগনে।মা খালা সব ই সমান আমার কাছ।খালা আপনি আমাকে ফাঁসাবেন না প্লিজ।”

বিহান ভাই সানজিকে বললেন,এই যে আপু বিভোর না আপনাকে বলেছিলো ওর নামে একটা চিঠি লিখতে।বলেছিলো তাইনা? আপনার সাথে বিভোরের ই কথা হয়েছিলো।

সানজি মেয়েটি বলে উঠলো,,বিহান কে ভালবাসার প্রশ্ন ই আসে না বিকজ সে বিবাহিত।আমার চরিত্র এতটাও খারাপ নয় যে একটা বিবাহিত ছেলেকে ভালবাসবো।তাছাড়া বিভোর ও কোনদিকে কম নয়।বিহান আর বিভোর এর চেহারার মিল,গায়ের কালারের মিল,হাইটের মিল আর বিভোর এর হাসিতে অন্য রকম কিছু আছে।তাছাড়া বিভোর নিজেই তো বলেছে সে সিঙ্গেল।বিভোর নিজে আমাকে বলেছে আমার মতো মেয়ে পেলে সে বিয়ে করবে।তার সিঙেল জীবন ভাল লাগে না।

বিভোর ভাই মাথায় হাত চাপড়াতে চাপড়াতে বললেন তাই বলে আপনি ওসব সত্যি ভাববেন।ওগুলো আমি একজন কে জেলাস ফিল করানোর জন্য বলেছিলাম।জেলাস তো হলোই না উলটা আরো ভুল বুঝে গেলো।

বিহান ভাই আমার কানে কানে ফিস ফিস করে বললেন,, অযথা আমাকে সন্দেহ করে আমার জীবনের সর্বশ্রেষ্ট প্যারা দেওয়ার মজা বোঝাবো।

আমিও আস্তে আস্তে বললাম, আমি কিভাবে জানবো যে উনি আপনাকে দেয় নি চিঠি।আপনার নামের লেটার দেখে ৯০ডিগ্রি কোণে জ্বলছিলাম আমি।

রিয়া একভাবে তাকিয়ে আছে বিভোর ভাই এর দিকে।

“সানজি বিভোর ভাই কে বললো,বিভোর ওরা যাক তাহলে আমরা নিজেদের মতো করে সময় পার করি সেটাই ভালো হবে।তুমি হয়তো এদের মাঝে লজ্জা পেয়ে ভুলভাল বলছো।”

“বিভোর ভাই বললেন মাফ চাই খালা।”

“কি সমস্যা বিভোর তুমি না বলেছিলে কেউ তোমাকে পাত্তা দেয় না কখনো।কেউ তার প্রেমের আঙিনায় ডাকলে তুমি তাকে ফেরাবে না।”

“ওইটা আমার কথা না চিত্র নায়ক বাপ্পারাজ এর নিউ মুভি স্ক্রিপ্ট। আমি ওটা মুখস্থ করছিলাম।”

“কেনো?..”

“কেনো কেনো ও হ্যাঁ বাপ্পারাজ আমার ফেভারিট হিরো তাই।”

“বিভোর ভাই রিয়ার দিকে তাকিয়ে দুই কান ধরে বললেন সরি রিয়া তুমি যেমন ভাবছো তেমন না।বিলিভ মি রিয়া।”

আমি আর বিহান ভাই হাসছি।আমাকে জোরে হাসতে দেখে মেয়েটি বললো সব ই ঠিক আছে দিয়া তুমি আমাকে অযথা বকা ঝকা দিলে কেনো?ঠিক বুঝলাম না।বিভোর কে চিঠি দিয়েছি নট বিহান।আর তোমার রিয়াকশন দেখে বুঝতে বাকি নেই বিহানের সাথে কুচ কুচ হোতা হে তোমার।

“বিহান ভাই ব্যাপার টা সামলাতে বললেন,আপু ওর মাথায় গ্যাস্ট্রিক আছে।ভীষণ গ্যাস্ট্রিক।ভুল ভাল বলে যখন মাথার সমস্যা বেড়ে যায়।”

“মেয়েটি আশ্চর্যজনক ভাবে বলে উঠলো কিহ! আমি এতক্ষণ একটা পাগলের সাথে কথা বলছিলাম।ওহ মাই গড।”

“আমি রেগে গিয়ে বললাম,এই আপনি ভদ্র ভাবে কথা বলুন কে পাগল হ্যাঁ। আমি পাগল, আপনার চৌদ্দ গুষ্টি পাগল।ছ্যাচড়া মেয়ে কোথাকার বলা নেই কওয়া নেই আমার ই মামাতো ভাইকে চিঠি দেওয়া।প্রেম তোর এই জীবনে হবে না।জিন্দেগীতে হবে না। দেখি কিভাবে প্রেম করিস।আমাকে পাগল বলে আমার ভাই এর সাথে প্রেম করবি।।”

“মেয়েটি বিহান ভাই কে ইশারা করলো, মানে বোঝালো কাহিনী কি?”

“বিহান ভাই বললেন মাথায় সমস্যা বেড়েছে আপু।এক্ষুণি কামড় দিয়ে দিবে।প্লিন যান আপু।”

মেয়েটি যত দ্রুত সম্ভব পালালো।আর বলে গেলো বিভোর ফোনে কথা হবে।এই পাগলের জন্য আজ কিছুই হলো না।

আমি অগ্নি চোখে বিহান ভাই এর দিকে তাকিয়ে ফুশছি।রাগে বেরিয়ে এলাম রাস্তায়।আমার পিছ পিছ ওরাও এলো।

বিহান ভাই বললেন সব দোষ এই বিভোরের।এই বিভোরের প্রেমের চক্করে আজ দিয়া রাগ করেছে আমার উপরে।

রিয়া বললো একদম ঠিক বলেছেন বিহান ভাই সব এই বিভোরের বাচ্চার দোষ। পরশু রাতে আমাকে মেসেজ করেছে রিয়া তোমাকে সত্যি খুব পছন্দ করি আমি।আমি ভেবেছি সত্যি।বিভোর ভাই যে এত্ত বড় ফ্লার্টবাজ তা আগে জানতাম না।আমাকে মেসেজ করে আবার অন্য দিকে মেয়ে পটিয়ে বেড়ায়।

বিভোর ভাই বললেন,রিয়া প্লিজ যা ভাবছো তা নয়।

যা ভাবছি তা নয় তাইনা।বলেই বিভোর ভাই কে জোরে ধাক্কা মেরে দিলো।বিভোর ভাই গোবরের গাদায় পড়ে গেলো।একটা গরুর খামারের পাশ দিয়ে হাঁটছিলাম আমরা।বিভোর ভাই এর পিঠের দিক খানিক গোবরে ডুবে গেলো।কি বিশ্রি গন্ধ ইয়াক থু।বিভোর ভাই এর হোয়াইট কালারের শার্ট এখন গোবর কালার।বিহান ভাই চটাচট কয়েক টা পিক তুলে নিলেন।মনে হয় বিভোর ভাই এর জন্মদিনে এই পিকচার দিয়ে উইশ করবেন।বিভোর ভাই লুঙ্গি পরে ঘুমোলে বিহান ভাই পিকচার উঠাবেই।আর জন্মদিনে সেইসব ভয়ানক পিকচার দিয়ে উইশ করবেন।

বিহান ভাই কে বললাম বিভোর ভাই কে টেনে উঠান।রিয়াকে বললাম এটা কি করলি বোন তুই।বিভোর ভাই কে এমন বিশ্রি গোবরে ফেলে দিলি। রিয়া এখনো চটে আছে রিয়া বললো এতেও আমার রাগ কমে নি।উনার পুরাটা গোবরে ডুবাতে পারলে খুশি হতাম।নেক্সট আমার সাথে ফ্লার্টিং করতে আসলে মানুষের মল মূত্রে ফেলে দিবো উনাকে।

“বিভোর ভাই কোনমতে উঠে এসে বললেন সব দোষ বিহানের। ও জানে আমি নির্দোষ।তাও আমার রিয়া সোনা কে চেতিয়ে দিয়েছে।রিয়া হাগ মি প্লিজ বাবু।”

“রিয়া রেগে তাকিয়ে বললো, বাবু।”

“না শিশু।শিশু রিয়া আই লাইভ ইউ।প্লিজ হাগ মি শিশু।”

“শিশু মানে?”

“বেবির আপডেট শিশু।সবাই বেবি ডাকে আমি শিশু ডাকছি।”

“আমি কি আপনার পেট থেকে ডাউনলোড হয়েছি যে আমি আপনার বাচ্চা হতে যাবো।বেবি তো বাচ্চা কাচ্চাদের বলে।”

“আমার পেট থেকে কেনো হতে যাবে তোমার পেট থেকে আমার বাচ্চা ডাউনলোড হবে।”

“দিবা স্বপ্ন দেখেন।”

“তুমি চাইলে এই দিনেই হবে।”

‘বিহান ভাই বলে উঠলেন লুচ্চামি কম করে কর। রিয়াকে আমি তোর ফাঁদে পা দিতে দিবো না।’

‘লুচ্চামি কবে করলাম।তুই ইচ্ছা করে রিয়াকে চেতিয়ে দিচ্ছিস। ‘

‘একটু আগে লুচ্চামি ধরা পড়াতে গোবরে নিক্ষেপ করা হয়েছে তোকে।’

‘দিয়া আমি কিন্তু রিয়ার প্রতি সিরিয়াস বিহান কি চুপ করবে?বিভোর ভাই কে বললাম উনাকে খাইয়ে দিন গোবর।’

বিহান ভাই ভ্রু কুঁচকে আমার দিকে তাকিয়ে বললেন কি সাহস ভাবা যায়।

পাশের দোকান থেকে একটা ডেটল সাবান আর প্যাকের শ্যাম্পু কিনে বাঁধা ঘাটে গেলাম।বিভোর ভাই সাবান আর শ্যাম্পু দিয়ে গোসল করছেন।

নড়াইলে নাম করা জায়গা এই বাঁধাঘাট।যেখানে চিত্রা নদীর পাড়ে সিনেমার কিছু অংশ শুটিং হয়েছিলো।এই ঘাট টা নদীর পাড়ে বড় বড় পিলার দিয়ে বাঁধানো।উপর থেকে নদীর ভিতরে পর্যন্ত অনেক গুলা সিঁড়ি বিশিষ্ট।অনেক বড় আর সুন্দর করে করা এই সিঁড়ি গুলা।উপরে আবার ছাদের ছাউনি দেওয়া।সকাল বিকাল অনেক মানুষ এখানে এসে বসে থাকে প্রাকৃতিক মনোরম দৃশ্য উপভোগ করে।এই নদির ঘাটেই বিভোর ভাই গোসল করছেন।

মনে মনে খুব রাগ হচ্ছে আমাকে পাগল বানালো মানুষের মাঝে।একা একা রওনা দিলাম কাউকে কিছু না বলে।বিহান ভাই ও আমার পেছনে পেছনে এলেন।

“পেছন থেকে ডাক দিলেন,কি সমস্যা চিঠি টা তো আমার না তাহলে কথা বলা হচ্ছে না কেনো?আবার কি করলাম।”

“আমাকে পাগল বলেছেন।যখন ই মেয়ে কেস থাকে তাদের সামনে আমাকে পাগল বলেন আপনি।মানুষের মাঝে আমাকে অপমান করেন ছোট করেন।আমি আর কথাই বলবো না আপনার সাথে।”

“উফফ সরি পিচ্চি।একচুয়ালি মেয়েটাকে তাড়াতে পারছিলাম না।মেয়েটার যে ভাব ছিলো ও তো বিভোরের বাসায় চলে যাবে।তাই তোর ভয় দেখিয়ে বিদায় করলাম।”

“আপনি আমাকে এখন অজুহাত দিচ্ছেন।আপনি আমাকে মেন্টাল ই ভাবেন।এর আগে অনেক বার বলেছেন।আপনার সাথে কথা বলার একবিন্দু ইচ্ছা নেই।বলেই হাঁটা দিলাম।”

“বিহান ভাই কে দেখলাম দোকানে গেলেন।পারুটি আর সস কিনলেন।উনাকে তো পারুটি খেতে দেখা যায় না।আজব পারুটি আর সস খাবেন।”

“আমার পেছনে হাঁটছেন আর বলছেন মিসেস বিহান কথা বলবেন না তাইতো।”

“না বললাম তো ইচ্ছা নেই।”

“এটা আপনার ফেভারিট ড্রেস তাইনা মিসেস বিহান।ড্রেস টা নষ্ট করে দিলে ভাল লাগবে আপনার।কথা না বললে কিন্তু তাই করবো।”

আমি জানি বলছেন কিন্তু উনি এমন কিছুই করবেন না।পাত্তা না দিয়ে হেঁটে যাচ্ছি।আমি জাস্ট ভাবতে পারিনি উনি এমন করবেন।টমেটো সস জামার পেছনে লাগিয়ে দিলেন।তাও অনেক খানি জায়গা লাগিয়ে দিলেন।সাদা গাউনের যে অবস্থা করলেন আমি জাস্ট ভাবতে পারছি না।উনি তো এমন কাজ করেন না।মুখে বললেও এ ধরনের কাজ করেন না কখনো।আমি জাস্ট অবাক।রাগে দুঃখে কেঁদেই দিলাম।ভ্যা ভ্যা করে কেঁদে দিলাম।এখন মানুষের ভেতর দিয়ে কিভাবে যাবো।এই গাউন টা অনেক প্রিয় আমার।জামা ঘুরিয়ে দেখি পুরা জামায় সস লাগিয়ে দিয়েছেন।কেঁদে দিয়ে বললাম আপনি কোন ধরনের মানুষ একটু বলবেন।আমার লজ্জা থাকলে আর জীবনে আপনার সাথে কোথাও যাবো না।আপনার সাথে যদি আর কথা বলি আমার নাম দিয়া নয়।

উনি এক চোখ টিপে দিয়ে বললেন বাসায় গিয়েই তো ফোন দিবে।মেসেজ দিবে সিন না করলে নাম্বারে ফোন দিবে। নাম চেঞ্জ করবা ওকে এবারের নাম টা জরিনা ভানু দিও।

কি বিরক্তিকর মানুষ ভাবা যায়।

চলবে,,