আঁধারিয়া অম্বর পর্ব-৩৫ এবং শেষ পর্ব

0
1901

#আঁধারিয়া_অম্বর
#সুরাইয়া_সাত্তার_ঊর্মি
৩৫।
(শেষাংশের ১ম অংশ)

উত্তপ্ত লোহিত সূর্যের তেজ কমাতে এক ফোঁটা বৃষ্টি শীতল স্পর্শ যেমন অভিমানী কিশোরীর মতো পৃথিবীর বুকে শীতল করে দেয়….! ঠিক তেমনিভাবে ইজহান আর শ্যামার মনের রাগ অভিমান, অভিযোগ ভুলিয়ে মনের কোনোর ঘরের লুকোনো ভালোবাসার অনুভূতি প্রকাশ করতে সক্ষম হচ্ছে। গোটা আট’টা বছর বনবাসে কাঁটানো ইজহানের মন শেষ পর্যন্ত তার শ্যামাকে নিজের করে নিতে পেরেছে।

শরৎকালের বিদেয় দিয়ে নেমে এলো কনকনে ঠান্ডা..। চারিদিকের কুয়াশা মোড়ানো চাদরে
হিমেল হাওয়া গায়ে মেখে একটু রোদে আরাম কেদারা নিয়ে বসার আরামই আলাদা। বিশেষ করে আমাদের মতো গ্রীষ্মপ্রধান দেশে শীত তো অতিথি-মাত্র। ইজহান তাদের বাগানে বসে ল্যাপট্যাপে কাজ করছিলো। জীবনটা এখন এই শীতের মতোই কনকনে ঠান্ডা। এক কাঁপ ধোয়া উঠা গরম গরম চা হলেই যেন ইজহানের মন ভরে যেতে। ঠিক সে সময় এসে হাজির হয় শ্যামা। হাতে গরম চায়ের কাপ। ইজহানের বাচ্চা মন খুশিতে ভরে গেলো। শ্যামাকে কাছে টেনে কোলে বসিয়ে নিলো। ঠান্ডা হাত জোড়া খেলা করতে লাগলো শ্যামার শরীরে। শ্যামার শরীরে আলাদা শিহরণ তুলে দিচ্ছে ইজহান। শ্যামা আর সইতে না পেরে বলল,

” উফ! ঠান্ডা লাগছে, এমন করো না। প্লীজ!”

ইজহান হেসে ফেললো। শ্যামার ঘারে মুখ গুজে দিয়ে বলল,

” শ্যামা..! আম সরি..! ফর এভরিথিং। ”

শ্যামা এবার ইজহানের কোলে বসেই ইজহানের চোখে চোখ রেখে গলায় দুই হাত বেঁধে বলল,

” এভাবে বলো না। আমি হয়তো তোমার জায়গায় থাকলে এমনটি-ই করতাম।”

ইজহান শ্যামার নাকে নাক ঘসে দিয়ে বলল,

” মোটেও না। তুমি আমার জায়গায় থাকলে, এমন কখনো করতে না। বরং মাফ করে দিতে!”

শ্যামা ইজহানের গালে হাত রেখে বলল,

” যা হয়েছে ভুলে যাও ইজহান। আমরা না হয় সব শুরু থেকে শুরু করবো!”

ইজহান মুচকি হাসলো। শ্যামার কোমর চেপে আরো কাছে টেনে নিলো। দুজনের নিশ্বাস এক হয়ে যেতে লাগলো। গভীর হতে লাগলো শ্বাসপ্রশ্বাস। ইজহান মাদক নয়নে নিজের ঠোঁট জোড়া ছুঁয়ে দিলো শ্যামার ঠোঁটে। শ্যামা আবেশে বন্ধ করে ফেললো চোখ। ঠিক সেই সময়, এই রোমিও জুলিয়েটের কোয়ালিটি টাইম নষ্ট করে ফেললো গলা ঝাড়বার শব্দে। শ্যামা হন্তদন্ত হয়ে উঠে দাঁড়ালো। তাকিয়ে দেখলো, আলিয়া দাঁড়িয়ে মিটিমিটি হেসে যাচ্ছে। শ্যামার লজ্জায় কান লাল হয়ে গেলো। আলিয়া হেসে বলল,

” এবার তাহলে নাতি-নাতনীদের মুখ দেখতেই পারবো খুব জলদি!”

ইজহানের কোনো ভাব আবেগ নেই। কিন্তু পিছন থেকে আরমান টস করে বলে দিলো,

” এভাবে হুটহাট অসময়ে চলে এলে কিভাবে নাতি-নাতনীদের মুখ দেখবে দাদীজান?”

আরমানকে দেখে দাদিজানের কলিজা ঠান্ডা হয়ে গেলো। তবুও খানিক রাগ দেখিয়ে বলল,

” বড্ড পেকে গেছিস তুই?”

আরমান আহ্লাদে আটখানা হয়ে বলল,

” কই দাদিজান… মোটেও না! দেখো সেই ছোটটিই আছি আমি!”

আলিয়া কান চেপে ধরে বলল,

” হুম হুম বুঝি সব বুঝি!ডুবে ডুবে যে জল খাচ্ছিস তার খবরোও কিন্তু রাখি আমরা!”

আরমান হাসলো। হাসলো শ্যামা আর ইজহান-ও। তখনি আলিয়া বলল,

” আচ্ছা যা বলতে এসেছিলাম। ইজহান তোর আর শ্যামার বিয়েটা আমরা আবার দিবো। সাথে আরো একটা জুটি এড হবে।”

সকলেই এক সাথে বলল,

” কোন জুটি?”

আলিয়া আরমানের দিক তাকিয়ে বলল,

” গত কয়েক মাস চুটিয়ে প্রেম করছেন আমাদের আদরের ছেলে। তার সাথেই হবে বিয়ে।”

থতমত খেয়ে ফেললো আরমান। শ্যামা উৎসুক কন্ঠ বলল,

” কে সেই ভাগ্যবতী দাদিজান?”

আলিয়া হেসে বলল,

” আমাদের জান্নাত!”

শ্যামা গম্ভীর হয়ে গেলো। ইজহান চেয়ে রইলো শ্যামার দিকে। আলিয়া বলল,

“শ্যামা তুমি কি খুশি নাউ?”

” না না দাদিজান তা নয় তবে… আমি ওর সাথে কথা বলতে চাই।”

দাদিজান মাথা নাড়লো।

———-

শ্যামার মাথায় চিন্তার ভাব। জান্নাত কাচুমাচু করে বসে আছে তার সামনে। শ্যামা বললো,

” তুই কি আরমানকে পছন্দ করিস?”

জান্নাত ভয়ে ভয়ে মাথা নাড়লো। শ্যামার মুখে এবার হাসি ফুঁটে উঠলো। জান্নাতকে জড়িয়ে ধরলো।

ইজহানদের পরিবারে খুশির যেন ঢল নেমে এলো। চারিদিকে হৈ হৈ শুরু। কিন্তু শ্যামা বেকে বসেছে। সে ইজহানকে বিয়ে করবে না। ইজহান এতে রেগে মেগে চেপে ধরে দেয়ালের সাথে।গম্ভীর দাম্ভিকপূর্ণ কন্ঠে বলল,

” তোমার তো সাহস কম না? তুমি বিয়ে করবে না বলছো?”

শ্যামা ভাবলেশহীন ভাবে বলল,

” হ্যাঁ করবো না!”

“তোমার ভয় করছে না? আমাকে না বলা?”

“হুম!”

ইজহান আরো শক্ত করে চেপে ধরলো। শ্যামা হেসে ফেললো। ফিসফিস করে বলল,

” তুমি তো মাকে প্রপোস করোনি বিয়ের জন্য? না ভালোবাসি বলেছো? তো কেন করবো বিয়ে?”

ইজহান তখন কিছু বলবে। তার মাঝে ইজহানের ফোনে কল আসে…

ফোন তুলে ইজহান সিরিয়াস মুডে চলে আসে। শ্যামা তার থমথমে মুখ দেখে জিজ্ঞেস করে,

” কি হয়েছে? ”

ইজহান ফোন কেঁটে বলল,

” আমি এখুনি আসচ্ছি!”

শ্যামা কাঁধ বাকিয়ে মাথা নাড়লো। ইজহান চলে যেতেই কিছুক্ষণ পর আলিয়া তারা দিলো,

” শপিং করতে হবে, কত কাজ বাকি জলদি রেডি হও!”

সকলে তাই জলদি জলদি তৈরি হয়ে নিলো। আয়ানাও সাথে আছে আজ।

কিছুক্ষণ পর যখন তারা শপিংমলে পৌঁছে গেলো। তখনি ইজহান ফোন করলো শ্যামাকে। বিচলিত হয়ে জিজ্ঞেস করলো,

” শ্যামা তোমরা কই?”

শ্যামা শপিংমলের সোরগোলে কিছু শুনতে পাচ্ছিলো না। তাই একটু সাইড হয়ে বলল,

” আমরা শপিংমল এসেছি!’

ইজহানের মাথায় যেন আকাশ ভেঙ্গে পড়লো। সে চেচিয়ে বলল,

” ওখানে বোম রাখা হয়েছে।”

চলবে,

#আঁধারিয়া_অম্বর
#সুরাইয়া_সাত্তার_ঊর্মি
৩৫।
(শেষাংশের শেষ অংশ)

চারিদিকে হইচই। পুলিশের হুইসলার শোনা যাচ্ছে। এদিক সেদিক ছুটোছুটি করছে প্রতিটি মানুষ। কোনো কোনো বাচ্চা বাবা-মা হারিয়ে মাটিতে বসে গড়াগড়ি খাচ্ছে। আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে রমারমা পরিবেশর বদলে। শপিং বেশি মানুষ ছিলো না। আর কম-ও ছিলো না। বোমের খবর শুন্তেই হুড়মুড় করে দৌড়াতে লাগলো তাড়া। শো- রুমে টিভি চলছিলো। খবরের মাঝে জানা গেলো, জঙ্গীরা রেলস্টেশন আর বাসস্ট্যান্ডে সহ অনেক জায়গায় বোমা লাগিয়েছে। তার মাঝে এই শোরুম একটি।

একটা সময় মানুষের জীবন আক্ষেপ আসে। ইজহানের এই মুহূর্তে বড্ড আক্ষেপ হচ্ছে। কাউকে হারিয়ে ফেলার আক্ষেপ।

ঘন্টা খানিক পর…
ভয়ংকর পরিবেশের গুমাটো ভাব কেঁটে গেছে। চারিদিক জনশূন্য হয়ে গেছে। পুরো শহর খোলা মাঠ। খবরটি ছিলো গুজব। কোনো জঙ্গীই ছিলো না। পুলিশদের ঘোল খাওয়ানো হয়েছে। এরি মাঝে ইজহান জানতে পাড়লো শ্যামা নিখোঁজ। বাসার সকলেই ফিরে এলেও… শ্যামাকে পাওয়া যায় নি। ইজহানের মাথায় যেন আকাশ ভেঙ্গে পড়লো। তার লোকেদের নিয়ে সেই শপিং মল খুঁজলো। আনাচে-কানাচে কোথাও শ্যামার ছায়া পেলো না তারা। ইজহানের বুকে ঝড় বইছে। এই গুজবে হুড়োহুড়ি মাঝে আহত হয়েছে অনেক, কিন্তু নিহত হয়নি, না স্বজন হারিয়েছে। তাহলে ভরা পরিবেশ থেকে শ্যামা কিভাবে উধাও হলো? ইজহান শ্যামার ফোনে ট্রাই করেও পায় নি। ট্রেস করার পর লাস্ট লোকেসোন শপিংমলেই দেখিয়েছে তারপর ফোনটা বন্ধ। ইজহানের বুক চিঁড়ে দীর্ঘ শ্বাস বেড়িয়ে এলো। অজানা ভয় শরীরের শিরা-উপশিরায় ঠান্ডা করে দিলো।

মুঠোফোনের বিরক্তিকর আওয়াজে ইজহানের ধ্যান ভেঙে গেলো। একটা আনানো নাম্বার থেকে কল এলো। ইজহান কিছু একটা ভেবে ফোন তুললো। যদি শ্যামা তাকে ফোন করে?

“হ্যালো!”

ওপাশ থেকে থমথমে কন্ঠ ভেসে এলো,

” তোর শ্যামা আমার হাতের মুঠোয়!”

ইজহানের কঁপালের রগ দাঁড়িয়ে গেলো। জোর গলায় চেচিয়ে বলল,

” রিদ….! শ্যামার কিছু হলে তোকে ছাড়বো না আমি।”

রিদ হাসলো। বলল,

” তোর শ্যামা এখন আমার সামনে। নিথর দেহ নিয়ে পরে আছে। আর আধ ঘন্টার মাঝে, শ্যামাকে নিয়ে উড়াল দিবো। এবার খুঁজতে থাকো তোমার শ্যামাকে!”

ইজহান চিৎকার করে উঠলো,

” তোকে আমি খুন করে ফেলবো!”

রিদ হাসলো আবারো,

” আগে ধরে তো দেখা… আধঘন্টা সময় আছে হাতে তোর!”

বলেই খট করে কেঁটে দিলো ফোনটি। ইজহান চট জলদি একজন অফিসারকে বললো,

” ট্রেস করো নাম্বার টা!”

সঙ্গে সঙ্গে লোকটি নাম্বারটি চেক করে তারা অবাক হয়ে গেলো। তা দেখে ইজহান ভ্রু কুচকে বলল,

” হোয়াট হ্যাপেন্ড?”

লোকটি বলল,

” স্যার এই নাম্বার তো দেশের বাহিরের লোকেশন দেখাচ্ছে। ”

ইজহানের কঁপালে চিন্তার ভাজ পড়লো। সকলে উদ্দেশ্য বলল,

” শহর থেকে বের হওয়ার সব রাস্তা ব্লক করে দাও। এবং বিমানবন্দরে খোঁজ লাগাও। ”

অফিসাররা তাই করলো। কোনো লাভ হলো না। এদিকে ঘন্টা আধঘন্টা পেরিয়ে যেতেই ইজহানের ফোনে একটা টেক্স এলো,

” যত পাহারাই বসাস না কেন তুই… ভুলে যাস না.. আমি মাফিয়ার লিডার! বাই দ্যা হয়ে ভালো থাকিস দোস্ত!”

এইটুকুন পড়েই ইজহান তার ফোন স্ব জড়ো বাড়ি বসালো। সামনের চেয়ারে লাথি মেরে ফেলে দিলো। কাঁচের টেবিল এক ঘুশিতে বসাতেই টুকরো টুকরো হয়ে গেলো। হাত কেঁটে গড়িয়ে পড়লো রক্তের বিন্দু বিন্দু ফোঁটা..!

কিন্তু সে ভেঙে পড়ে নি। শ্যামাকে যে তার চাই। রাত দিন এক করে খুঁজ শুরু করলো শ্যামার। দেশ-বিদেশে কোথাও নেই। এই দিকে দুটো দিন কেঁটে গেলো। ইজহান পাগল পাগল প্রায়…. মাথার চুলের মুঠি শক্ত ধরে বলল,

” কোথায় তুমি! কোথায়?”

তিন দিন পর….

একটা বন্ধ ঘরে শ্যামা হাত পা বাঁধা অবস্থায় শুয়ে আছে। ঘরের মাঝে টিমটিম করে ঝলছে আলো। যখন তার চোখ খুললো… মাথায় তীব্র ব্যথা অনুভব করলো। চারিদিকে তাকিয়ে প্রচন্ড ভয় পেলো সে। কোথায় সে? যতটুকু মনে পড়ে! সেই শপিং মলে ইজহানের সাথে কথা বলছিলো সে। ঠিক তার পিছন থেকে কেউ হেচকা টান মারে। এর পরেই মাথা ভাড়ী ভাড়ী মনে হয়। এবং ঢলে পরে মাটিতে। তারপর আর কিছু মনে নেই। শ্যামা এবার উঠে দাঁড়াতে চাইলো। হাত – পা বাঁধা অবস্থা পাড়লো না। কিন্তু একজন রিপোর্টার হিসেবে সে এসব বাঁধন থেকে মুক্ত করে নিতে পারে নিজেকে। তার এসবের কলাকৌশল ভালো করে জানা। শ্যামা যখন হাত – পা খুলে বের হলো। তখনি ভেসে এলো কারো টুকরো কথা….

” রিদ স্যার বাহিরে গেছেন। যে কোনো সময় চলে আসবে, তোরা আর ঘুমোস না। মেয়েটা জ্ঞান যে কোনো মুহূর্তে-ই চলে আসবে!”

শ্যামা সম্পূর্ণ কথাটি শুনলো। কিন্তু তার বুকে থক করে উঠলো রিদ নামটি শুনে। মনের কোনে এক রাশ ঘৃণা সৃষ্টি হলো রিদের জন্য।

শ্যামা ধীরে পায়ে এগিয়ে এলো। টিমটিম আলোয় যতটুকুন বুঝলো, এটি একটি ক্রিমিনাল রাখার লকার টাইপ কিছু। আর এক পাশে রয়েছে টেবিল। তার উপর কাঁটা ছেঁড়ার সকল যন্ত্র। একটি চেয়ার যেখানে আছে হাত-পা বাঁধার কিছু আধুনিক বেল্ট। দু’টি ধাড়ালো চাবুক। শ্যামার এসব দেখে গায়ের লোম দাঁড়িয়ে গেলো। জিনিস গুলো যেন খুব পুরোনো। যেন ৫০/৬০ বছর আগে মানুষের উপর নির্যাতন চালাতো এসব দিয়ে। শ্যামা নিজেকে শান্ত করলো। ভালো থেকে একটি ছুরি নিয়ে কোমরে লুকালো সে। তারপর আবার এগিয়ে গেলো স্যামনের ঘরটির দিকে। তখন আবারো ভেসে এলো কিছু কথা।

“পুলিশ শালা এই ব্ল্যাক হোল সম্পর্কে তো জানেই না। তাই-তো আজ তিন দিন যাবৎ মেয়েটির খোঁজ পায়নি!”

আরেকজন বলল,

” বেকুব নেতা, দেশ- বিদেশ ঘুরছে। অথচ আমরা যে তারই শহরের মাটির নিচে আছি, খুব কাছে। তা কখনো জানতে পারবে না।”

বলেই হাসাহাসি শুরু করলো তারা। শ্যামা শুকনো ঢুক গিললো। তার অবচেতনে রিদ তাকে তুলে এনেছে বুঝতে পেরে আরো রাগ বেড়ে গেলো। সামনের লোকেদের পরখ করে নিলো। তিনজন বসে আছে সামনে। তার উপরেই এখান থেকে বের হয়ে যাওয়ার রাস্তা। শ্যামা তার সাংবাদিক মাথা নাড়লো। পর পর ছোট ছোট তিনটি ছুরি এনে ছুঁড়ে মারলো পড় পড় তাদের উদ্দেশ্যে। তিনজনেই মাটিতে লুটিয়ে পড়লো। কেউ কিছু বুঝে উঠার আগেই প্রাণ পাখি চলে গেলো। শ্যামার খারাপ লাগলো কিছুটা.. তিনটা মানুষ সে খুন করে ফেলেছে? হাউ।

শ্যামা এবার উপরে উঠতে লাগলো। ব্ল্যাক হোল বাহির থেকে লাগানো। শ্যামা কি করবে ভাবলো কিছুক্ষণ। মৃতু মানুষদের সাথে থাকতেও গা ছমছম করছে তার। তবু-ও সাহস সঞ্চয় করে বসে রইলো চুপটি করে। অপেক্ষার প্রহর দীর্ঘ হলো না। দরজা খুলে গেলো। ভিতরে ঢুকেই রক্তাক্ত অবস্থায় তার লোকদের দেখেই কঁপালের রগ দাঁড়িয়ে গেলো। কন্ঠ খাদে নামিয়ে ” শ্যামা” নামটি উচ্চারণ করলো। তারপর দৌঁড়ে গেলো পাশের ঘরটিতে। সেই সুযোগেই শ্যামা পালিয়ে যেতে লাগলো। লাষ্ট সিঁড়িতে পা রাখতেই রিদ ওর পায়ে ধরে ফেললো। শ্যামা হাতে রাখা ছুরিটা দিয়ে দুটো কুপ বসিয়ে দিলো। একটি হাতে আর একটি চোখে। রিদের সুন্দর মুখ মুহূর্তেই ভয়ানক কোনো পশুর মতো হয়ে গেলো। আহ্ আহ্ করে চিৎকার করতে করতে ছেড়ে দিলো পা। উপরে উঠে ব্ল্যাক হোলের ঢাকনা লাগিয়ে তার উপর বড় পাথর দিয়ে আটাকে দিলো সে। তারপর প্রাণ পণ ছুটে চলে গেলো।

এদিকে রিদ কাতরাতে লাগলো। টিমটিম আলো নিভে গেলো। ভুতুড়ে পরিবেশ। আশেপাশে মরা লাশ। তার উপর ফোনের নেটওয়ার্ক নেই। শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে এবার। বড় বড় শ্বাস ফেলে যাচ্ছে। যেন গলা কাঁটা মুরগী। এক পর্যায় প্রাণ হারায় তার।

এদিকে শহর থেকে কিছুটা দূরেই ছিলো শ্যামা। ইজহানের কানে যখন খবর গেলো, শ্যামাকে পাওয়া গেছে! এক দৌড়ে চলে গেল সেখানে। শ্যামা একটি চায়ের দোকানে বসে হাপাচ্ছিলো। ইজহানের ফোন বন্ধ পেয়ে অধিরাজকে কল করলো সে। তার লোকেশনের কথা জানা নোর পর আর এক ফোঁটা দেড়ি করেনি ইজহান। টং দোকানে বসে ছিলো শ্যামা। হাত পায়ে কাঁটা ছেড়ার দাগ। এই দোকানের লোকের কাছ থেকে ফোন করেছিলো শ্যামা। ১০/১৫ মিনিটের মাঝেই ইজহানের গাড়ি এসে থামলো। ইজহান গাড়ি থেকে বের হতেই শ্যামা শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো। যেন একটা বিড়ালের বাচ্চা লুকিয়ে পড়তে চাইছে তার বুকে। শ্যামার কান্নার বাঁধ ভাঙ্গলো। জল গড়িয়ে পড়লো ইজহানের ও। ইজহান নিজকে শান্ত করে, শ্যামাকে-ও শান্ত করালো। তার জিজ্ঞেস করলো,

” কই ছিলে?”

“ব্ল্যাক হোল!”
ঘোরে মাঝে উত্তর দিলো শ্যামা। ইজহান আবার বলল,

” কি বলছো? ”

“ঠিক বলছি।”

” রিদ কই?”

“মেরে ফেলেছি!”

থম মেরে গেলো সব। ইজহান আবার বলল,

” আচ্ছা তুমি শান্ত হও!”

শ্যামা কাঁদতে কাঁদতে বলল,

” তুমি আমাকে প্রোপোস করলে না এখনো!”

ইজহান এবার হেসে দিলো। টং দোকান থেকে এক কাপ চা ধোয়া উঠা গরম চা নিয়ে মাটিতে বসে বলল,

” এক কাপ চায়ের সঙ্গী হিসবে তোমাকে চাই! হবে কি?”

শ্যামা সঙ্গে সঙ্গে মাথা নাড়লো,

“হ্যাঁ হবো। একশ এক বার হবো। আমি হবো #অাঁধারিয়া অম্বরের এক ফালি চাঁদ!’

ইজহান এসব শোনে আরো শক্ত করে ধরলো। বুকের সাথে মিশিয়ে ফেলেছে যেন। সর্ব শেষ দুজনের ভালোবাসার পূর্নতা পেলো। খারাপ মানুষ আর খারাপ নজর কেঁটে গেলো। বিয়ের এক বছরের মাথায় শ্যামার ফুটফুটে একটি ছেলে হলো। সুখে শান্তির ঘর করতে লাগলো তারা। কিন্তু এত কিছুর মাঝে এখনো মাথায় ঘুরে একটি কথা….

“, ব্ল্যাক হোলটা কি? কোথায় এটা? কি হয় সেখানে!”

যদিও শ্যামা তার এসব প্রশ্নের উত্তর সব সময় এরিয়ে চলে যায়। তবে ইজহান তার খোঁজ লাগাচ্ছে এখনো।

সমাপ্ত।

বিঃদ্রঃ শুরুতেই দুঃখীত বলে নিচ্ছি। অনেক লেট করে ফেললাম। সকালেই গল্প দিতাম। তবে আমার বান্ধবীর মা মারা যাওয়াতে সব ফেলে সেখানে যেতে হয়। তাই আর সময় পাইনি লিখতে বা দিতে। সবাই আন্টির জন্য দোয়া করবেন। আশা করছি লাষ্ট পর্বে সবাই সাড়া দিবেন। আর অসংখ্য ধন্যবাদ আমার গল্পের সাথে থাকার জন্য। ভালোবাসা ❤️

বিঃদ্রঃ ২…
ব্ল্যাক হোলের কাহিনি বের হবে অন্তর্দহন প্রণয় ২ গল্পটিতে☺️