প্রিয় প্রহর পর্ব-১৩

0
604

#প্রিয়_প্রহর
লেখনীতে: #নুরুন্নাহার_তিথি
#পর্ব-১৩
লুকিয়ে কথা বলা, এভাবে শুরু হয় ধ্রুব-তারার প্রণয় প্রহর। কেটে যায় আড়াই বছর। গাড়ো হয় সবার প্রণয়। শুভ্র জার্মানিতে ইন্টার্নশিপের পর ছয় মাস থেকে ফিরে আসে। এরপর হৃদয় ভাঙ্গা গড়ার কাহিনী!
ফ্ল্যাশব্যাক এন্ড”_________________________________
শুভ্র রাতের দিকে ফিরে আরোহীদের বাসায়। আরোহী আয়ানার সাথে বসে পড়া কম্পলিট করছে। শুভ্র এসেছে সে বুঝতে পারেনি। এক সপ্তাহ পর প্রফ তাই মনোযোগ দিয়ে পড়ছে। বিয়ের কারনে পড়ালেখাতে অনেক গ্যাপ হয়েছে। তাই দুপুরে খাবার পর থেকে টানা পড়ছে। সন্ধ্যায় গ্রীন টি ও স্নেকস খেয়ে পড়তে বসেছে। এখন রাত সাড়ে নয়টা। একটু পর ডিনার করবে সবাই।

মিসেস নূর এসেছেন মেয়েদের রুমে। হাতে তার শরবতের গ্লাস। দুইবোন মায়ের উপস্থিতিতে একবার তাকিয়ে আবার পড়ায় মন দেয়। মিসেস নূর এসে আরোহীকে বলে,
–আরু, যাও মা এই শরবতটা শুভ্রকে দাও গিয়ে। ছেলেটা সেই সকালে বের হয়েছে আর এখন ফিরলো।

আরোহী বই থেকে চোখ সরিয়ে মায়ের দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকায়। সে বলে,
–তুমি গিয়ে দিলেই তো পারো মা। এখানে নিয়ে না এসে সরাসরি ওই রুমে যেয়ে শরবতটা দিয়ে আসতে। আমাকে কেনো যেতে হবে!

মিসেস নূর মেয়ের পাশে বসলেন। এরপর তার চঞ্চল মেয়ের মাথায় হাত রেখে বলেন,

–স্বামী বাসায় এলে স্ত্রীকে তার কি লাগবে না লাগবে তা দেখতে হয়। তাহলে স্বামীর মনে স্ত্রীর জন্য ভালোবাসা-টান তৈরি হয়। তুমি তো পড়ার তালে থেকে খেয়াল করোনি শুভ্র কখন ফিরেছে। আমি দরজা খুলে দিয়েছি ওকে। শুভ্রর সাথে তোমার বিয়েটা যে শুভ্র মানতে পারছে না তা আমি জানি। কিন্তু তাও শুভ্র আমাদের সাথে খারাপ আচরণ করছে না। তার কষ্টটা আমরা শুধু বাহির থেকে দেখতে পারবো যদি সে দেখায়। ভিতরে কি হচ্ছে তা বুঝতে পারবো না। তোমাকে তার মনে জায়গা করে নিতে হবে। হয়তো সময় লাগবে। ছয়মাস, একবছর, দুইবছর এরকম পেরিয়ে যেতে পারে। তোমাকে চেষ্টা করে যেতে হবে।

আরোহী নিজের মায়ের কথা শুনলো মাথা নিচু করে। আয়ানাও শুনলো। আরোহী আপন মনে বিড়বিড়ায়, “আমি তার সামনে না গেলেই সে হয়তো ভালো থাকে! ”
আয়ানা তার বোনের অবনত মস্তকের দিকে তাকিয়ে আছে। আজকে আয়ানা সবকিছু শুনে বুঝেছে এই ট্রাইএঙ্গেল সবকিছু একপাক্ষিক জড়তার কারনে।

মিসেস নূর আবার বলেন,
–তোমাদের বাবার জীবনেও কিন্তু আমি প্রথম ভালোবাসা হয়ে আসিনি। এসেছি তার শেষ ভালোবাসা হয়ে। “কারো প্রথম ভালোবাসা হওয়া ভাগ্যের ব্যাপার তবে শেষ ভালোবাসা হওয়া সৌভাগ্যের।”

মিসেস নূর শরবতের গ্লাসটা আরোহীর হাতে দিয়ে রুম থেকে চলে যায়। আয়ানা নিজের বোনকে চোখের ইশারায় আশ্বাস দেয়।
আরোহী যায় শুভ্রর কাছে। শুভ্র ততোক্ষণে শার্ট-প্যান্ট বদলে হাতমুখ ধুয়ে ফ্রেশ হয়ে নিয়েছে। আরোহী দেখে শুভ্র কালো টিশার্ট ও গ্রে টাউজার পরিহিত অবস্থায় ব্যালকনি থেকে তাওয়াল রেখে ফিরছে। ডিসেম্বর মাসের শেষের দিক। এই শীতেও নাকি শুভ্র রাতের বেলা শাওয়ার নিয়েছে! শুভ্রর চুলগুলো ভেজা দেখে আরোহীর নিজেরি শীত লাগছে। শুভ্রকে বিছানায় বসতে দেখে আরোহী দরজা থেকে সরে রুমে এগিয়ে যায় নিঃশব্দে। এরপর শুভ্রকে সালাম দেয়।

শুভ্র সালাম শুনে আরোহীর দিকে তাকায়। এরপর সেও সালামের জবাব দেয়।
আরোহী নিজের হাতের গ্লাসটা শুভ্রকে দেয়। শুভ্র শরবত দেখে নিয়ে নেয়। তার এখন আসলেই তেষ্টা পেয়েছিল। এখুনি পানি খেতো তবে শরবত হওয়ায় ভালো হয়েছে। শুভ্র খালি গ্লাসটা দাড়িঁয়ে থাকা আরোহীর দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বলে,

–ধন্যবাদ। আমার তেষ্টা পেয়েছিল।
আরোহী মুচকি হেসে বলে,
–আপনার শাশুড়িকে ধন্যবাদ দিন। সেই তো শরবত এনে বলল আপনাকে দিতে।
শুভ্র হাসলো। সে জানে তার মামি, যে কিনা এখন তার শাশুড়ি সে অনেকটা কেয়ারিং।

আরোহী শেষে শুভ্রকে মনের খচখচানি থেকে জিঙ্গাসা করেই ফেলল,
–আপনি এই শীতের মধ্যে ঠান্ডা পানি দিয়ে শাওয়ার নিয়েছেন? এই রুমের ওয়াশরুমে তো গ্রিজার নেই। আপনার ঠান্ডা লাগেনি? আমার তো গরম পানি দিয়েও শাওয়ার নিতে ঠান্ডা লাগে।

শুভ্র হেসে ফেলে আরোহীর কথায়। আরোহী শুভ্রকে হাসতে দেখে ভ্রু কুঁচকে বলে,
–হাসছেন কেনো? আমি কি হাসির কথা বলেছি?

শুভ্র হাসি থামিয়ে বলে,
–তোমাদের মেয়েদের বেশি শীত লাগে ছেলেদের তুলনায়। কারণ পূর্ণবয়স্ক মহিলাদের রক্তে প্রতি ঘন মিলিমিটারে গড়ে ৪৫ লাখ লোহিত রক্তকণিকা থাকে আর পূর্ণবয়স্ক পুরুষদের রক্তে প্রতি ঘন মিলিমিটারে গড়ে ৫০ লাখ লোহিত রক্তকণিকা থাকে। এই কারনে ছেলেমেয়েদের মধ্যে তাপমাত্রাতে পার্থক্য দেখা যায়। আর রক্তশূন্যতা থাকলেও শীত বেশি লাগে। রক্তে হিমগ্লোবিন কমে গেলে বেশি শীত লাগে। আরো অন্যান্য অনেক কিছু আছে। বুঝতে পেরেছো?

আরোহী ভেঙ্গচি কেটে বলে,
–শোনেন, আমিও মেডিকেল স্টুডেন্ট। তাই এগুলো আমার বেসিক জানা।
শুভ্র মাথা নুয়িয়ে মুচকি হাসে তারপর বলে,
–হ্যাঁ মেম। আপনি তো আমাদের ভবিষ্যৎ ডাক্তার।

আরোহী একটু ভাব নিয়ে দাঁড়ায়। শুভ্র এবার বলে,
–আপনার হিমগ্লোবিন লেভেল জানি কতো? কালকে ড্রইং রুমে সবাই বলছিলো, আপনি নাকি শীতকালে পানি ছুঁতেই চাননা? আপনার বসবাস নাকি মোটা কম্বলের নিচে হয় সবসময়? ডাক্তার তো আপনি হবেন তাই জানতে চাইলাম। বলেন।

আরোহী থতমত খেয়ে যায়। আরোহীর হিমগ্লোবিন লেভেল কম। এডাল্ট ফিমেইলে ১২-১৬ g/dl নরমাল রেঞ্জ আর এডাল্ট মেইলে ১৪-১৮ g/dl নরমাল রেঞ্জ। কিন্তু আরোহীর মাত্র ৯ g/dl। আরোহীর শীত সবার থেকে বেশি। আয়ানার তাও কিছুটা ভালো ১০.৫ g/dl।

আরোহী কথা কাটানোর জন্য বলে,
–আরে আপনি কি নিযে পরে আছেন! একটু পর ডিনারের জন্য ডাক আসবে। আমার এক সপ্তাহ পর প্রফ। আমি যাই একটু পড়ি। কতো পড়া বাকি আল্লাহ। যাই। বায় বায়।

আরোহী জলদি করে কেটে পরে। শুভ্র আরোহীর কথাগুলোতে নিঃশব্দে হেসে ফেলে। আরোহী চলে গেছে। হাসতে হাসতেই একটু পর শুভ্রর মুখে বিষাদের ছায়া ভর করে।
না। সে নিজের মনকে কন্ট্রোল করার চেষ্টা করবে। তার নিষিদ্ধ অনুভূতি গুলোকে নিজের মনে রাখার চেষ্টা করবে। কালকে শিলার কথামতো, সময়ের বহতায় নিজেকে সামলে নিবে। এখন সেই সময়টা কতোটা দীর্ঘায়িত হবে তা জানা নেই।

______
পরেরদিন সকালেই শুভ্র ও আরোহী শুভ্রদের বাসায় যায়। বিয়ের অন্য আচার-অনুষ্ঠান পরে করা হবে। আরোহীদের পরিক্ষার পরে। শুভ্র আরোহীকে বাড়িতে নামিয়ে দিয়ে সেখান থেকেই হসপিটালে চলে যায়। গাড়িতে দুজনের কারোই কথা হয়নি। আরোহী কাল থেকে নিজের ক্লাসে যাবে। পরিক্ষার আগের ইম্পরট্যান্ট ক্লাস গুলো করবে।

এদিকে নীড় ও মেঘ দুই ভাই তো একসাথে ভার্সিটিতে যায় যেহেতু দুজনেই একই ভার্সিটির শিক্ষক। ভার্সিটিতে দুজনেই নিজেদের ডিপার্টমেন্ট ছাড়াও অন্য ডিপার্টমেন্টের স্টুডেন্টদের কাছেও তারা প্রসিদ্ধ। দুই ভাই একসাথে ভার্সিটিতে ঢুকলো। গ্রাউন্ডের করিডর দিয়ে যাওয়ার সময় তো মেয়েরা অনেকে তাকিয়ে আছে।সাদিয়া ও সাবিলা দুজনেই তখন করিডরে ছিলো।

সাদিয়া ফার্মেসিতে মাস্টার্সে আর সাবিলা অনার্স থার্ড ইয়ারে ফার্মেসিতেই। দুজনেরই আজকে এই সেমিস্টার ফাইনাল ছিলো। সাদিয়ার আর একটা সেমিস্টার পর মাস্টার্স শেষ হবে। সাবিলা ফোর্থ ইয়ারে উঠবে।

নীড় ও মেঘ করিডর থেকে লিফ্টে উঠে যাওয়ার পর মেয়েরা একে অপরের সাথে তাদের নিয়ে চর্চা করছে। তারা সবাই এই দুই ভাইয়ের উপর ক্রাশিত। হবে নাই বা কেনো! দুই ভাই ফর্সা ও সুঠাম শারীরিক গঠনের। তাদের দুই ভাইকে চিনতে অসুবিধে হয় কিন্তু তাতে কি! ভার্সিটিতে তারা সবার প্রিয়।
নীড় আজকে ব্লু শার্ট ও কালো প্যান্ট আর মেঘ আজকে কফি কালার শার্ট ও কালো প্যান্ট পড়েছে।
মেযেগুলোর ওদের নিয়ে এতো রোমান্টিক আলোচোনা সাদিয়া ও সাবিলার কারোই পছন্দ হচ্ছে না।

চলবে ইনশাআল্লাহ,
ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। কার্টেসি ছাড়া দয়া করে কপি করবেন না। রিচেক করা হয়নি।