#প্রণয়ের_আসক্তি
১৩.
#WriterঃMousumi_Akter
“ভাই এইভাবে সিঙ্গেল দের উপর অত্যাচার না করলেও পারতেন।সকাল সকাল আপনারা খাচ্ছেন আইস ক্রিম আর আমি খেলাম স্যাকা।”
ছেলেটির দরূণ কথা শুনে ভীষণ ভাবে হেসে দিলো মৃথিলা আর মুনতাহা।
“নিরব কৌতুহল নিয়ে জিজ্ঞেস করলো কিভাবে স্যাকা খেলেন ভাই।”
“ছেলেটি বললো এই যে ভাবিকে নাকফুলহীন ভাবে ঘুরাচ্ছেন।এটলিস্ট একটা নাকফুল থাকলে তো বুঝতে পারতাম এটা আমাদের কোনো ভাই ব্রাদার এর বউ হবে।ওদিকে নজর দেওয়া যাবে না।আজ ভাবির নাকফুল নেই বলে মারাত্মক স্যাকা টা আমি খেলাম।”
“নিরব খানিক টা ভাবুক মুডে বললো,ভাই স্যাকা তো আপনি আমাকে দিছেন ইন্দোনেশিয়ান স্যাকা।”
“কিভাবে ভাই?”
“এইযে আমার বউ কে আমার বোন বানিয়ে দিলেন।”
“আরে ভাই আপনাদের চেহারার অনেক মিল দুজনের।ফেসের ও বেশ ভালো মিল।দুজন ই ফর্সা ভাবাটায় স্বাভাবিক।বাট আমি কিন্তু বলি নি আপন বোন স্যাকা না
খেয়ে মনে মনে মামাতো,কাকাতো,জ্যাঠাতো,খালাতো,ফুফাতো,যা কিছু একটা বোন ভেবে নিন তাহলে স্যাকা টা বেশ হালকা লাগবে।”
“নিরব বললো ওয়াও ভাই আপনি তো সেই লেভেলের লিজেন্ড। এনি ওয়ে নিন ভাই আইসক্রিম খান।”
“সবাই মিলে আইসক্রিম খেতে খেতে নিরব বললো ভাই ভাবছি যে আজকাল তো অবিবাহিত মেয়েরাও নাকফুল পরে তাই নাকফুলে ঠিক বুঝে উঠার উপায় নেই।পুরা নাক আর মুখ জুড়ে থাকে এমন একটা নাক ফুল দিবো যেখানে লেখা থাকবে আমি নিরবের বউ।”
“ছেলেটি হাসতে হাসতে বললো ভাই ব্যাপার টা কিন্তু মন্দ হয় না। ”
নিরব একটা আইসক্রিম মুনতাহার হাতে দিয়ে বললো এটা দাদী কে নিয়ে দিন আমি নাকফুল কিনে নিয়ে আসি।আর ভাবি প্লিজ ওকে একটু কেয়ারফুলি দেখেশুনে রাখবেন আমি আসা পর্যন্ত।মুনতাহা মিষ্টি হেসে বললো ভাই আপনি যান তো আমি দেখে রাখবো ভাবিকে।একটুও চিন্তা করবেন না।মৃথিলা রাস্তা ক্রস করা পর্যন্ত নিরব তাকিয়ে আছে মৃথিলার দিকে।নিরব একটা অটো করে চলে গেলো।মুনতাহা দাদীকে আইসক্রিম দিয়ে বললো দাদী নিরব ভাইয়া দিছে খান।দাদী আইসক্রিম টা হাতে নিয়ে বললো আমার কি এখন সে বয়স আছে।মৃথিলা বললো খান না দাদী সব কিছুর কি বয়স লাগে।দাদীর আজ ভীষণ মন খারাপ।দাদা বাড়ির সামনে বসে আছেন।দাদা মানে আলতাফ মাহমুদ এর ও খুব মন খারাপ।মুনতাহা বললো কি হয়েছে দাদী আপনাদের দুজন কেই দেখছি আজ মন খারাপ।শিরিনা মাহমুদ বললেন সামনে শুক্রবার আমার ছেলে বউ এর মৃত্যুদিন।বুকের মাঝে জ্বলে পুড়ে যাচ্ছে।এরই মাঝে নিরব এসে উপস্হিত হয়।নিরব বলে কেনো দাদী আপনার বুকের মাঝে জ্বলছে। দাদী চোখের পানি ফেলে বললো এসো আমাদের ঘরে বলছি।শিরিনা মাহমুদ ঘরের ভেতরে নিয়ে গেলো।নিরব, মৃথিলা আর মুনতাহা সোফায় বসে আছে। শিরিনা মাহমুদ বলছে,
আমার একমাত্র ছেলে আহনাফ মাহমুদ ছিলো। আমাদের ছেলে ছোট বেলা থেকেই ছিলো খুব বিচক্ষণ আর বুদ্ধিমান।ওর বুদ্ধির সাথে যে কারো পেরে ওঠা সম্ভব ছিলো না।নিজের যোগ্যতায় পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগে চাকরি হয়।সেখান থেকে গোয়েন্দা অফিসার হয়।তোমরা এখনো পুরণো পত্রিকা দেখতে পারো।২০০০ সালের আগে অনেক পত্রিকায় আমার ছেলেকে নিয়ে অনেক লেখা বেরোতো।দূর্নিতী চাঁদা বাজ,পাচারকারীদের কাছে এক আতঙ্কের নাম ছিলো আহনাফ।মা বাবা বলতে পাগল ছিলো আমার ছেলে।আমরা আমার ছেলের চোখের মনি ছিলাম।তখন অনেক শত্রু ছিলো আমার ছেলের।আমার ছেলেকে আমরা পছন্দ করেই বিয়ে দেই।আমার বৌমা ছিলো আমার মেয়ে।অনেক সুখের সংসার ছিলো আমাদের।তারপর আমার ছেলের ফুটফুটে একটা মেয়ে হয়।আমাদের পরিবারের মধ্যমনি ছিলো আমার নাতনি।ওরা ঢাকা থেকে নড়াইল আসছিলো ট্রেনে করেই।তখন ট্রেনের সামনে একটা গাড়ি চলে আসে।ঘটে যায় একটা এক্সিডেন্ট অনেক মানুষের মাঝে মারা যায় আমার ছেলে, বৌমা আর নাতনি।আমার তিন টুকরো ভালবাসা সেখানেই শেষ হয়ে যায়।কিন্তু ওদের লাশ পায় নি আমরা।আজ এই বয়সে নাতি নাতনি নিয়ে জীবন কাটবে সেখানে একাকি জীবন আমাদের।ছেলের মুখ টা ভেষে উঠলে আজ ও ঘুমোতে পারি নাহ।মনে হয় এই বুঝি ফিরে এসে মা বলে ডাক দিবে।চারদিকে নাতনির হাসির খলখল শব্দ শুনতে পায় এখনো।মনে হয় বিছানায় সুয়ে হাত পা ছুড়াছুড়ি করে খল খল করে হাসছে।তখন নিউজ বেরিয়েছিলো অফিসার আহনাফ কে মারতেই সেদিন ইচ্ছাকৃত এক্সিডেন্ট টা ঘটানো হয়েছিলো।আবার কেউ বলেছিলো ওটা সত্যি এক্সিডেন্ট ছিলো।আজ ও জানিনা আসলে কি হয়েছিলো।শুধু মনে হয় আমার ভালবাসা গুলো যদি ফিরে আসতো তাহলে বুকে আগলে রাখতাম।মিসেস শিরিনা ভীষণ ভাবে কাঁদছেন।একটা পরিবারের এমন করুণ পরিণতির কথা শুনে মৃথিলা আর মুনতাহার চোখ দিয়ে পানি পড়ছে তারা মিসেস শিরিনা কে কিভাবে বুঝাবে সেটাই ভেবে পাচ্ছে না।
নিরব কে বেশ চিন্তিত দেখাচ্ছে।নিরব নিচের ঠোঁট কামড়ে কিছু ভেবে যচ্ছে।মিসেস শিরিনা শান্ত হলে নিরব বললো,দাদী কিছু মনে না করলে আমি কি আপনার ছেলেকে দেখতে পারি।মিসেস শিরিনা তার ছেলের ছবি বের করা দেখালে নিরব বেশ অবাক হয়ে গেলো।নিরবের এই অবাক হওয়ার কারণ কেউ বুঝতেও পারলো না।নিরব কৌশলে একটা ছবি ও তুলে নিলো।হঠাত নিরব ভীষণ চিন্তিত হয়ে পড়লো।মৃথিলাকে রেখেই নিজের রুমে চলে আসলো।রুমে এসেই ল্যাপটপ নিয়ে বসলো।ভীষণ মনোযোগ দিয়ে ল্যাপটপ চেপে যাচ্ছে নিরব।
কিছুক্ষণ পর মৃথিলা ও রুমে চলে আসলো।মৃথিলার নিরব কে দেখেই মনে হলো নিরব কিছু নিয়ে ভীষণ চিন্তিত।মৃথিলা বললো আপনি ওভাবে দ্রুত চলে এলেন যে।নিরব ল্যাপটপে মনোযোগ দিয়ে বললো একটা ইমপরটেন্ট কাজ ছিলো তাই।মৃথিলা বললো সারাদিন এই ল্যাপটপের মাঝে কি করেন আপনি।শুধু বলেন ইমপরটেন্ট কাজ।আমার ও আপনার সাথে ইমপরটেন্ট কথা আছে। ল্যাপটপ অফ করুন।নিরব ল্যাপটপে মনোযোগ দিয়ে বললো পরে শুনছি প্লিজ।মৃথিলা কথা বলেই যাচ্ছে অথচ নিরব লক্ষ্য করছে না সেদিকে।অতপরঃমৃথিলা রাগ করে রান্না ঘরে প্রবেশ করলো দুপুরে রান্নার জন্য।কোমরে ওড়না বেঁধে দাঁড়িয়ে রান্না করছে আর ফুলছে মৃথিলা রাগে।আমার কথার কি কোনো দাম নেই।কতবার করে বললাম আপনার সাথে কথা আছে শুনুন না। তাও শুনলো না।শুনবে কেনো আমি কি তার কিছু হই নাকি।তার সব কিছুই তো ওই ল্যাপটপ। আমি বা রাগ করতে যাচ্ছি কেনো উনি বা আমার কে হন।নেহাত বিপদে পড়ে থাকছি এখানে।মনে মনে মৃথিলা ঝগড়া করেই যাচ্ছে।প্রায় এক ঘন্টা পরে নিরব এসে মৃথিলাকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে।মৃথিলা নিরবের হাত ছড়ানোর চেষ্টা করে বলে ছাড়ুন বলছি আমাকে।আপনি এভাবে এসে আমাকে ধরবেন না।নিরব আরো শক্ত ভাবে জড়িয়ে ধরে বললো আচ্ছা আরো জোরে ধরলাম এইবার বলো কি ইমপর্টেন্ট কথা ছিলো তখন।
–কোনো কথা ছিলো না ছাড়ুন আমাকে।
–ছাড়বো আগে কি কথা সেটা বলো না হলে ছাড়বো না।
–আমার কথা শোনার সময় কই আপনার কাছে।আপনি যান না আপনার ওই ল্যাপটপের কাছে।ল্যাপটপ গিয়ে জড়িয়ে ধরুন আপনার ভাল লাগবে।
–নিরব মৃথিলার অভিমান ভাঙাতে গিয়ে কড়াইতে স্যাকা লেগে হাত খানিক টা পুড়ে গেলো।
–মৃথিলা এক্সসাইটেড হয়ে বললো আপনি কি হ্যাঁ একবার হাত কাটেন একবার হাত পোড়ান কি সমস্যা আপনার।নিজের ই খেয়াল রাখতে পারেন না আবার আমার কেয়ারিং এর জন্য নিয়ে এসছেন।মৃথিলার মাঝে তেজস্রী ভাব দেখে নিরব সারপ্রাইজড হলো খুব।
–নিরব বললো কেউ ব্যাথা পেলে বকতে হয় বুঝি?
–তাহলে কি আদর করতে হয় নাকি।
–ইয়েস আদর করতে হয়।ভালবাসতে হয়।ভালবাসা ব্যাথার ভীষণ ভালো মেডিসিন হিসাবে কাজ করে থাকে।তুমি জানো না বুঝি।
–না আমি এসব কিছুই জানিনা সাবধানে থাকবেন।কেনো নিজের দিকে খেয়াল নেই আপনার।সব সময় আমার দিকে খেয়াল আমাকে নিয়ে ভাবেন তাহলে নিজেকে নিয়ে কখন ভাববেন আপনি?
–আমাকে নিয়ে তো ভাবার জন্য তুমি আছোই মৃথিলা।
–আমি ভাবিনা আপনাকে নিয়ে কখনো।
–এই যে ভাবছো।আমার কিছু হলে উত্তেজিত হয়ে যাচ্ছো এগুলো কি মিসেস মৃথিলা।
–জানিনা এগুলো কি?আপনি আমার থেকে যদি আপনার খেয়াক বেশী রাখেন তাহলে আমার বেশী ভাল লাগবে।বুঝেছেন আপনি।
–এইবার বলো কি সেই ইমপরটেন্ট কথা।
–ওইযে আহনাফ সাহেব উনি কিন্ত এই গোয়েন্দা অফিসার থেকেই ফ্যামিলি সহ মারা গিয়েছেন।তখন আমার খুব বুকে ব্যাথা করছিলো।আপনিও এই একই চাকরি করেন।যদি আপনার কিছু হয়।এইসব চাকরি আপনার করতে হবে না।আমার তখন থেকে খুব অস্হির লাগছে।
–কেনো এই অস্হিরতা তোমার মৃথিলা।
–আমি জানিনা।তবে আহনাফ সাহেব কে নিয়ে ভেবে খুব খারাপ লাগছে আমার।দাদী কে যদি উনার ছেলে কে ফিরিয়ে দিতে পারতাম।।
–ভাগ্য চাইলে আর তিনি বেঁচে থাকলে অবশ্যই কোন না কোনো ভাবে ফিরে আসবেন সে।সো এটা নিয়ে আর ভেবো না।
চলবে,,