#প্রণয়ের_আসক্তি
১৯.
#WriterঃMousumi_Akter
–কি বলে যে এই বোকা মেয়েটি,দিলে তো আমার কাজের বারোটা বাজিয়ে।যতক্ষণ না কাজ শেষ হচ্ছে মুখ এভাবেই চেপে ধরে রাখবো।এক মিনিট হওয়ার আগেই নিরব মৃথিলার মুখ থেকে হাত সরিয়ে নিলো।
–মৃথিলা একটু মুড নিয়ে বললো কি করলাম আমি।
–এইযে মন টা কে কৌশল করে কাজের দিক থেকে তোমার দিকে নিয়ে গেলে।তুমি জানোনা তুমি আমার সামনে দিয়ে এভাবে ঘুর ঘুর করলে আমি কোনো দিকে মন দিতে পারি না।কোনো কাজে মন বসে না।মন শুধু তুমি তুমি করে।
-এসব মিষ্টি মিষ্টি কথা বলে আমাকে ভোলানো যাবে না বুঝেছেন।একটু গাল ফুলিয়ে নিরবের দিকে তাকিয়ে বললো মৃথিলা কে উনি?কথাটা বলেই মুখ ঘুরিয়ে অন্যদিকে দিলো।
–নিরব হাত ধরে টেনে নিচে বসালো মৃথিলাকে।একহাতে মৃথিলার হাত চেপে ধরা নিরবের অন্য হাতে দ্রুত ল্যাপটপ ঘচ ঘচ সাউন্ডে চেপেই যাচ্ছে।মিনিট দুয়েক করে ল্যাপটপের সাটার অফ করে বললো এবার অভিযোগ গুলো বলো শুনি।
–উনি কে?
–নিরব ভ্রুযুগল কুচকে বললো,উনি টা কে?
–ওইযে মেয়েটা।
–মেয়েটার নাম তো দেখেছো তুমি।নাম না বলে উনি উনি করছো কেনো?
–আমি পারবো না কারো নাম বলতে।প্রচন্ড রাগ হচ্ছে ছাড়ুন আমাকে।
–নিরব মৃথিলাকে জোর করে জড়িয়ে ধরে বললো,মেয়েরা এমন জেদি কেনো বলতে পারো।বিশেষ করে প্রিয়জনের দিকে একটু বেশী জেলাস।
–কিসের জেলাস বলুন তো!আমি কেনো জেলাস হতে যাবো।
–জেলাস যদি না হবে তাহলে সুপ্তির নাম টা দেখেও উনি উনি করতে না।আর গাল টা এমন এংরি মুডে রাখতে না।যদিও দেখতে অসম্ভব সুন্দর লাগছে বলেই মৃথিলার গাল টেনে দিলো নিরব।
নিরব আবার ও বললো এইযে রাগপরী আমাকে তোমার কি মনে হয় বলোতো দুনিয়ার সব মেয়ে কি আমার এক্স ছিলো।আমি কি শ খানেক প্রেম করেছি।এখনের যুগে প্রেমিকা পুষতে গেলে রাত জেগে প্রেমালাপ করতে হয়।রাত দশ টা থেকে ভোর চার টা পর্যন্ত ফোনে কথা বলতে হয়।সপ্তাহে কম করে হলেও দুই দিন রেস্টুরেন্টে খাওয়াতে হয়।মাসে একদিন অন্তত শপিং করে দিতে হয়।তা না হলে প্রেমিকা টেকানো মুশকিল।আমার কি আর অত টাকা আছে।কতঅ বা বেতন আমার। রেস্টুরেন্টের বিল দেওয়ার ই ক্ষমতা নেই।তারপর আবার আমার যে কাজের চাপ কোনো মেয়েই টিকবে না এত কম সময় দিলে।সবাই কি আর তোমার মতো সারাক্ষণ অপেক্ষা করবে যে কখন ল্যাপটপ রেখে একটু আমাকে সময় দিবে।খাবার বেড়ে অপেক্ষা করবে কখন ফ্রি হবে।তোমার মতো সিমীত চাহিদার মেয়ে কয়টা আছে বলোতো।তোমার তো শুধু আমাকে পাওয়ার চাহিদা।এমন লক্ষি বউ রেখে কোনো পাবনার পাগল ছাড়া অন্য মেয়ের সাথে কথা বলবে।
–তাহলে মেয়েটা কে?
–মেয়েটা আমাদের টিমের ই।রিফাত এর প্রেমিকা সে।আমাদের সাথেই জব করে।তোমার সাথে পরিচয় করাবো একদিন।
–সরি! হঠাত মেয়ে দেখেই বুক চিন চিন করছিলো।এই শুনুন এই সুপ্তি ছাড়া অন্য কোনো মেয়ের সাথে আর কথা বলবেন না।আমার খুব ই খারাপ লাগে।আচ্ছা আমার এমন খারাপ লাগে কেনো বলুন তো।আপনি তো এত ভালো।দেখেছেন আমার মন মাইন্ড কত বাজে হয়ে গিয়েছে।আপনার মতো ভাল মানুষ কে আমি সন্দেহ করছি।
তুমি কি জানো এই সন্দেহে আমি কতটা প্রশান্তি পেয়েছি।আমি ওভার সিওর আমার বউ আমাকে ভীষণ ভালবাসে এটা তার ই লক্ষাণ।ভয় পেও না আমি ভুল বুঝবো না।মেয়েজাতির এই ভীষণ ভালবাসা কে কিছু ছেলে বিরক্তি মনে করে।বাট আমি তো এই সন্দেহের মাঝে সুখ খুজে পাই।আমি বুঝি একটা মেয়ে তার ভালবাসার মানুষ কে কতটা ভালবাসলে তাকে নিয়ে সন্দেহনামক ভাবনা ভাবতে পারে।বাট একটা সত্য কথা কি জানো,নিজের মনে পাপ না থাকলে এই সন্দেহ কে ভালবাসার মানুষের পাগলামি মনে হয়।একটু আদর করে বুঝিয়ে বললেই মেয়ে নামক নরম জাতি ভালবাসার মানুষের জন্য প্রাণ দিতেও দুবার ভাবে না।আসলে নারী না থাকলে পৃথিবী টা ভালবাসাহীন মরুভূমি হয়ে যেতো।
মৃথিলা অবাক হয়ে নিরবের সুন্দর কথাগুলো শুনছে।
ভালবাসার জন্য একটা মানুষ এতটা পারফেক্ট কিভাবে হতে পারে।একটা মানুষের কথার প্রতিটা লাইনেই জড়িয়ে আছে ভালবাসা।
মিসেস শিরিণা মাহমুদ আর আলতাফ মাহমুদ মৃথিলা আর মুনতাহা কে ডেকেছেন নাড়ু পাকানোর জন্য।শিরিনা মাহমুদ নাড়ু বানাচ্ছেন গুড়,চালের গুড়া,নারকেল,তিল,চাল ভাজি করে তার গুড়া মিক্সড করে কড়াইতে নাড়ছেন।মন মাতানো একটা ঘ্রাণ বেরিয়েছে এলাচ এর।শিরিনা মাহমুদ খুন্তি নাড়াচ্ছেন আর বলছেন আমার ছেলে আর বৌমা খুব পছন্দ করতো।আমার বৌমা আমার কাছে বায়না করতো মা আমাকে নাড়ু বানিয়ে দাও আমি তোমাকে সব সাহায্য করবো।তারপর নারকেল ভেঙে নারকেল কোরা নিয়ে আমার হাতে দিয়ে বলতো মা নাড়ু বানাও আর চিতই পিঠার গোলার মাঝে একটু নারকেল কোরা দাও।মেয়েটা কি পাগলি ছিলো।ওরা চলে যাবার পর আমি আর কখনো ভাল কিছু রান্না করি না।কিন্তু ওই মানুষ টাকে বাঁচিয়ে রাখতে আমাকে রান্না করতে হয়।মুনতাহা বললো দাদী, আপনাদের মতো ভাল মানুষের সাথে এমন হলো কেনো আমি ভেবেই পায় না।মৃথিলা বললো ভাবি খারাপ মানুষের সাথে অন্যায় হয়ে দেখেছেন।যা হবার ভাল মানুষের সাথেই হয়।তবে খারাপ মানুষের পতন হবেই ভাবি।
মুনতাহা বললো একদম ঠিক বলেছেন ভাবি।
-মিসেস শিরিনা মৃথিলা কে বললো,তোমরা কি ফিরে যাচ্ছো।
–মৃথিলা একটু মন খারাপ করে বললো,হ্যাঁ দাদী।ওখানে আমার বাবা,আপু ভীষণ মন খারাপ করছে।
–আর তোমার মা।
–মৃথিলা মিথ্যা অভিনয় করে বললো,মা ও মন খারাপ করছে।
–সেদিন তোমার আপু এসছিলো তাইনা?
–হ্যাঁ এদিকে একটা কাজে এসছিলো তাই দেখা করতে এসছিলো।
চলে যাবা ভেবে খুব কষ্ট লাগছে।এ কদিনে অনেক মায়ায় জড়িয়েছো।আমাদের ভুলে যেও ন যেনো।
–আপনাদের ভুলবো না কখনো দাদী।মাঝে মাঝে এসে দেখে যাবো।
–মুনতাহা বললো,কখন বেরোবেন ভাবি।
–কাল সকালেই বেরোবো।
–খুব মায়ায় জড়ালেন ভাবি।এখন আপনাকে ছাড়া কিভাবে থাকবো।
–আমি কি বিদেশ যাচ্ছি নাকি।আবার ও আসবো,এই শহর টার মায়ায় পড়ে গিয়েছি।
গল্প করতে করতে তিনজনে মিলে গোল গোল নাড়ু পাকিয়ে ফেললো।মৃথিলা আর মুনতাহা কয়েক টা নাড়ু খেয়ে ফেললো।আর মিসেস শিরিনা বয়্যাম ভরে নাড়ু দিলো দুজন কে।আর বললো এই বুড়ির কথা ভেবো খাওয়ার সময়।
পরের দিন সকাল ছয়টায় রওনা হয়েছে নিরব মৃথিলা নড়াইল টু ঢাকা যাত্রী বাসে।খুব ভোরে সবাইকে বিদায় দিয়ে এসে মৃথিলার মনটা বড্ড খারাপ।এতদিনে তাদের সাথে থেকে ভীষণ মায়ায় জড়িয়েছে সে।খুব ভোরে দুজনে চলেছে তাদের নিজ শহরে।মৃথিলার বাবা,মেধা সবাই মিলে অনেকবার ক্ষমা চেয়েছে।তারা ভীষণভাবে মাথানত করছে।তাদের সাথে যোগাযোগ রাখার জন্য ভীষণ ভাবে অনুরোধ করেছে।নিরব আজ মৃথিলাকে নিয়ে মেধাদের বাড়িতেই যাচ্ছে।পারিবারিক যে রহস্য ছিলো তার উদঘাটন হওয়ার পর নিরব স্বাভাবিক ভাবেই নিয়েছে সব কিছু।মেধাকে জাস্ট ফ্রেন্ড হিসাবেই নিয়েছে।সকাল গড়িয়ে দুপুর দুইটায় নিরব মৃথিলা ঢাকা পৌছালো।অনেক দিন পর এই বাড়িতে পা রাখলো মৃথিলা।রহিম চাচা বাগান পরিষ্কার করছেন।মৃথিলাকে দেখেই বললো কেমন আছো মা।মৃথিলা আজ অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে রহিম চাচার দিকে।খুব অদ্ভুত লাগছে মৃথিলার কাছে।একটা মানুষ এত চেঞ্জ কিভাবে হলো।
চলবে,,