প্রাণয়ের আসক্তি পর্ব-২১

0
583

#প্রাণয়ের_আসক্তি
২১.
#WriterঃMousumi_Akter

নিরবের বুকে মাথা দিয়ে ঘুমোচ্ছে মৃথিলা।এতক্ষণে ঘুমের দেশে বিচরণ করে ফেলেছে সে।গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন মৃথিলা।এইদিকে নিরবের চোখে ঘুম নেই।নিরব কে খুজে বের করতে হবে সেই ক্রিমিনাল টিম কে।এইবার পাচারের সময় হাতে নাতে ধরতেই হবে তাদের।

নিরবের ফোনে ল্যাপটপে কোথাও নেটওয়ার্ক পাচ্ছে না।এ বাসার ওয়াফাই পাসওয়ার্ড ও সে জানে না।মৃথিলা জানে কিনা জিজ্ঞেস করবে কিন্তু মৃথিলা তো ঘুমোচ্ছে।ডাকলে আবার এক হাজার প্রশ্ন করবে।মৃথিলা ঘুমিয়ে থাকলেই নিরব নিশ্চিন্তে কাজ করতে পারবে।মৃথিলাকে আস্তে করে সুইয়ে রেকে নিরব বাইরে গেলো।গ্রামিন সিমে এ বাসার কোথাও নেটওয়ার্ক পাচ্ছেনা।সার্ভার আজ ডাউন মনে হয়।নিরব বাড়ির নিচে গেলো নেটওয়ার্ক এর জন্য।এই বাড়িটা বেশ বেড় অনেক জায়গা নিয়ে কম করে ১০ টা বাড়ি হবে এত জায়গা নিয়ে করা।চারদিক পাচিল দিয়ে ঘিরে রাখা।বাড়ির সামনে বড় একটা ফল বাগান। বাগান টা মেধাদের ই।এই বাগানে এমন কোনো ফলের গাছ নেই যে তা নেই।বাগানের ভেতর টা নিকশ কালো অন্ধকার।আকাশে ক্ষয় হওয়া চাঁদের এক টুকরো অবশিষ্ট আছে।ঘড়িতে সময় রাত একটা বেজে পনেরো মিনিট।

“বাইরে আসার পর কোনরকম নেটওয়ার্ক পেয়েছে।নিরব রিফাত কে কল করলো।রিফাত কল রিসিভ করেই কয়েক টা গালি দিয়ে বললো,হোয়াট ইজ দিস নিরব।এতক্ষণে তোর প্রেম করা শেষ হলো।আজ কত বড় একটা নিউজ পেয়েছি কিন্তু তোকে বলার ই সুযোগ পাচ্ছি না।”

“নিরব বললো,কুল ভাই।আমিও সেই টেনশনে ছিলাম।কিন্তু মৃথিলা খুব বাচ্চামো করছিলো আজ।আমি যায় করি মৃথিলাকে কষ্ট দিয়ে কিছুই করতে পারি না।তাছাড়া ওকে তো সময় ই দিতে পারি না।আমি যা করি কোনো লুচু মেয়ে হলে এতদিনে পরকিয়া করতো।তাই আজ একটু ওকে সময় দিলাম।”

“আমাদের এই চাকরিতে আসলেই বউদের সাথে অন্যায় করা হয় খুব।ওখানে যে গেলি ভাবি সেভ থাকবে তো নিরব।”

“আমি আছি যেখানে সেখানে মৃথিলার কিছুই হবে না। এবার নিউজ টা বল।”

“শোন সুপ্তি পাচারকারীদের মাঝে একজন কে আজ দেখতে পেয়েছে।তার সম্পূর্ণ ফেস সুপ্তি দেখেছে।সুপ্তি নিজের লাইফ রিস্ক নিয়ে আজ গেছিলো যেখানে ভাবিকে আটকে রাখা হয়েছিলো।সেদিনের পর ওখানে আর কারো যাতায়াত হয় নি।আজ অনেকদিন পর একজন চাপদাঁড়িওয়ালা মানুষ গেছিলো।এবং ওখানে গিয়ে সে ফোনেও কথা বলেছে আগামি মাসে তারা পনেরো টা মেয়ে পাচার করবে তবে অন্য আস্তানায়। আমার মনে হয় এই লোকটাকে ধরতে পারলেই ভাবিসহ যাবতীয় মেয়েদের পাচারকারীদের আমরা ধরতে পারবো।”

“নিরব বললো,ওয়াও!গ্রেট নিউজ।সুপ্তিকে নিয়ে স্কেচ তৈরি কর ওই লোকটার।”

“রিফাত বললো অলরেডি তৈরি করে ফেলেছি আর তোকেও পাঠিয়ে দিয়েছি দেখ।”

নিরব বললো ভাই আমি তোকে পরে কল দিচ্ছি ওয়েট।হঠাত নিরবের কানে বাগানের ভেতর থেকে কারো গোঙানির আওয়াজ ভেষে আসছে।কেউ কাতরাচ্ছে কষ্টে।আওয়াজ টা যেদিক থেকে আসছে নিরব সেদিকে এগিয়ে যাচ্ছে।নিরব ফোনের টর্চ মেরে দেখে খানিক টা দূরে বাগানের মাঝেই আরেক টা বেশ রাজকীয় বাড়ি।বাড়িটা বেশী বড় নয় ৩-৪ টা রুম হবে।আওয়াজ টা ওখান থেকে আসছে।বাগানের ভেতরে প্রবেশ করতেই চারদিক থেকে ঝিঁঝি পোকার আওয়াজ ভেসে আসছে।আবার মাঝে মাঝে দূর থেকে শেয়ালের ডাক ও ভেষে আসছে।এমন সময় নিরবের মনে হচ্ছে ওর পেছন থেকে কারো পায়ের আওয়াজ।গাছের পাতার মুড়মুড়ে সাউন্ড হচ্ছে।নিরব পেছনে তাকিয়ে দেখে কেউ নেই।নিরব আবার ও সামনে অগ্রসর হয়।বাড়িটার ভেতরে প্রবেশ করবে এমন সময় দেখে ওয়ালে একটা ছায়া দেখা যাচ্ছে।নিরব পেছনে দেখবে সেই সাথে সাথে কেউ একজন নিরবের মাথায় আঘাত করে।নিরব সেন্সলেস হয়ে পড়ে যায়।

__________________________________

পরের দিন ঘড়িতে সকাল ৫ টা বেজে ৩০ মিনিট।মৃথিলা নামাজের জন্য উঠে পড়ে।কিন্তু ঘুম ভাঙতেই মৃথিলা দেখে নিরব তার পাশে নেই।মৃথিলা চট জলদি উঠেই রুমের লাইট অন করে জানালা খুলে দেয়।দেখে ফ্লোরে বালিশ ছাড়া সুয়ে আছে নিরব।মৃথিলার কাছে খুব অবাক লাগলো কাল তারা এক সাথেই ঘুমিয়েছিলো তাহলে নিরব নিচে গেলো কখন।মৃথিলা নিরবের পাশে বসে চুলের মাঝে হাত বুলোতে বুলোতে ডাকছে এই যে শুনছেন।উঠুন,উঠবেন না সকালে হয়ে গিয়েছে।বেশ কয়েক টা ডাক দিতেই নিরবের ঘুম ভেঙে যায়।সারারাত হয়তো অচেতন ভাবেই কেটে গিয়েছে নিরবের।ঘুম ভাঙতেই নিরবের মনে পড়ে গতরাতের কথা।মাথা তুলে উঠতে পারছে না।বেশ ব্যাথা পেয়েছে মাথায়।মৃথিলা বললো,কি ব্যাপার আমাকে রেখে এখানে এসে ঘুমিয়েছেন কখন।নিরব কি বলবে বুঝতে না পেরে বললো,মনে ঘুমের মাঝে বেড থেকে পড়ে গিয়েছিলাম নইলে বেখায়ালে এখানে চলে এসছি বুঝতে পারি নি।মৃথিলা আর বেশী কিছু না বলে বললো উঠুন নামাজ পড়তে হবে।নিরব মাথা চেপে ধরে উঠলো।

“নিরব উঠেই গায়ের গেঞ্জি খুলে ব্যাগ থেকে ব্রাশ নিয়ে ব্রাশ করছে।আর মৃথিলাকে বললো গোসল করবে না তুমি?”

“মৃথিলা বললো,হ্যাঁ আপনি করুন তারপর আমি করছি।”

“নিরব টাওয়াল টা গলায় ঝুলিয়ে বললো একসাথে করলে সমস্যা।”

“না কিন্তু আমার লজ্জা করবে খুব।”

“যদি বেশী লজ্জা পাও গতরাতের কথা বার বার রিপিট করবো।”

“লজ্জায় মৃথিলার চোখ বড় বড় হয়ে গেলো।ইস কি লজ্জা!কাল তো কিছুই বোধ হয় নি কিন্তু আজ তো লজ্জায় মরে যেতে ইচ্ছা করছে। ”

“নিরব মৃথিলাকে একটানে নিয়ে সাওয়ারে ঢুকলো।”

“মৃথিলা বললো,দেখুন আমার দিকে বেশী দেখবেন না কিন্তু।ওই দিকে ঘুরে গোসল করুণ।”

“নিরব হাসতে হাসতে মৃথিলার গায়ের ওড়না টেনে নিলো।মৃথিলা রিতীমত ভড়কে গিয়ে বললো একি আপনি এটা কি করছেন।আমার ওড়না দিন বলছি।”

“নিরব বললো ওড়না যদি নিয়েও নাও তাহলে আর কি করার আমাকে ন গ্ন অবস্থায় গোসল করতে হবে।”

“মৃথিলা বললো,মানে এই কি হয়েছে কি আপনার?”

“নিরব ওড়ণা টা কোমরে পেচিয়ে নিয়ে জিন্স টা খুলে ফেললো।মৃথিলার দিকে তাকিয়ে বললো এও ভারী জিন্স পরে এখন গোসল করা সম্ভব নয় বুঝেছেন ম্যাডাম।”

“মৃথিলা বললো আগে বলবেন না আমি কি না কি ভেবেছি।।”

“কি ভেবেছো গতরাতের কথা।”

“ধ্যাত আপনার সাথে কথায় বলা যায় না অসভ্য লোক।”

“আম্মুর এই নিষ্পাপ ছেলেটাকে অসভ্য তো তুমি বানিয়েছো।”

“হ্যাঁ সব দোষ তো আমার ই।”

দুজনে সাওয়ার শেষ করে নামাজ পড়ে হাঁটতে বের হলো।এ বাড়ির বাকিরা কেউ ওঠে নি এখনো।খুব ভোরে প্রকৃতির নির্মল হাওয়া বেশ ভাল লাগছে দুজনের।কিন্তু নিরবের মন অন্য দিকে।গতকাল কি ঘটেছিলো তার সাথে।কি আছে ওই বাগানে। আর কে গোঙড়াচ্ছিলো।নিরব মৃথিলাকে বললো চলো ওই বাগানের দিকে যায় ঘুরে আসি।মৃথিলা বললো চলুন যায়।বাগান দিয়ে দুজনে হাঁটছে।এর ই মাঝে নিরব বললো,আচ্ছা এই বাগানে ওই বাড়িটা কার?মানে কে থাকে ওখানে।

ওখানে রহিম চাচা থাকেন।রহিম চাচা এ বাড়ির কাজ করেন দীর্ঘদিন তাই উনাকে ওই বাড়িটা দেওয়া হয়েছে।আগে আমরা থাকতাম ওই বাড়িটায়।পরে আরেক টা বাড়ি করলে এটা রহিম চাচাকে দেওয়া হয়েছে।নিরবের কাছে খুব অবাক লাগলো ব্যাপার টা।এই বাড়িতে রহিম চাচা থাকেন।কাল রাতে সে যখন ওই বাড়ি থেকে উঠে এসছিলো তখন ওই বাড়ির সবাই ঘুমোচ্ছিলো।তাহলে নিরবের মাথায় আঘাত করলো কে?আর কে বা গোঙড়াচ্ছিলো।কেউ খুব কষ্টে থাকলে যেরকম করে হুবহু সেরকম ই করছিলো।নিরব বললো মৃথিলা চলো রহিম চাচার বাড়ি থেকে ঘুরে আসি।মৃথিলা বললো চলুন।আগে আমি বহুবার এসছি এই বাড়িতে।মা প্রায় এটা সেটা দিয়ে পাঠাতো।

এরই মাঝে রহিম চাচার সাথে দেখা মিলল।রহিম চাচা বাগান পরিষ্কার করছেন।নিরব মৃথিলাকে দেখেই বললো তোমরা এত সকালে এদিকে।মৃথিলা বললো চাচা হাঁটতে বেরিয়েছি।

তাহলে আসো বাড়ির ভেতরে আসো মা।অনেক দিন তোমাকে কিছু খাওয়ায় না আমি।তোমার জন্য চিড়ার মোয়া এনে রেখেছি।

মৃথিলা নিরব কে বললো রহিম চাচা কিন্তু আমাকে ভীষণ ভালবাসেন।বাইরে গেলেই কিছু না কিছু এনে খাওয়াবেন ই।

নিরবের কাছে যেনো সব কিছুই অবাক লাগছে।গভীর রহস্য জড়িয়ে আছে। যে রহস্য নিরব খুজে পাচ্ছে না।রহিম চাচার বাড়ির ভেতরে গিয়ে নিরব কিছুই খুজে পেলো না।কাউকে কিছু বুঝতেও দিলো না।

হতাস হয়ে ফিরে এলো নিরব।কোথাও কিছুই পেলো না।

নিরব এবার ওভার সিওর সেই মানুষ টা আবার ও চিঠি পাঠাবে।আগামি মাসে যে নারী পাচার হবে নিশ্চয়ই মৃথিলাকে আবার ও তারা পাচারের চিন্তা করবে।ঠিক তখন ই সেই মানুষ টা চিঠি পাঠাবে।সে কে তার ই বা কি লাভ এত কিছু করে।তার কাছ থেকে হয়তো অনেক কিছুই জানা যাবে।।

নিরব মৃথিলাকে নিয়ে নিজের বাড়ির দিকে রওনা হলো সবাইকে বিদায় জানিয়ে।।

চলবে,,