শিশির ভেজা রোদ্দুর পর্ব-৪৬+৪৭

0
735

#শিশির_ভেজা_রোদ্দুর
#Part_46
#Writer_NOVA

গোসল করে ড্রেস পরে নিলাম। হালকা পাতলা সেজে বাইরে বেরিয়ে এলাম। দুপুরের খাবারের বৈঠক বসে গেছে। মেহমানরাও অনেকে এসে পরেছে। আরো আসবে। তায়াং ভাইয়া, এনাজ, সামাদ ভাইয়া, মুহিন আমার এক ফুপাতো ভাই আরো অনেকে খাবারের টেবিলে তদারকি করছে। ভাবীকে পার্লারের মেয়ে সাজাচ্ছে। সাজগোজ প্রায় শেষ পর্যায়। সে ঘর থেকে একটু ঘুরেফিরে বাইরের উঠনো হাঁটতে লাগলাম। খাবারের পর্ব আমাদের বহু আগে শেষ হয়ে গেছে। এখন শুধু আমাদের কাজ পুরো বাড়ি চক্কর মারা।তায়াং ভাইয়া কাজের ফাঁকে আমার সামনে দৌড়ে এসে দুটো মোবাইল দিয়ে বললো,

— শাঁকচুন্নি এই দুটো তোর কাছে রাখ। হারালে কিন্তু তুই জরিমানা দিবি। তাই সাবধানে রাখিস।

— পারবো না আমি। আমার ঠেকা পরে নাই। পকেটে রাখলেই তো হয়। আবার আমার কাছে রাখার কি দরকার?

— রাখতে বলছি রাখবি। এত কথা বলিস কেন?

— আমি পারবো না রাখতে। আমার হাত ব্যাথা করবে। তিনটা মোবাইল নিয়ে ঘুরবো আমি।

ভাইয়া কোন কথা না বলে মোবাইল দুটো জোর করে আমার হাতে দিয়ে প্যান্ডেলের দিকে দৌড়ালো।আমি, নূর আপি ও তন্বী একসাথে সারা বাড়ি কারণ ছাড়াই এদিক সেদিক ঘুরছি। ইভা, অনন্যা,অর্থি বউয়ের সামনে বসে আছে। আমার পরনে আজ এ্যাশ কালারের গাউন। সাথে সেম কালারের হিজাব বেঁধেছি। এনাজের পরনে দেখেছিলাম ডিপ ব্লু কালার শার্ট, কালো প্যান্ট। শার্ট ইন করে পরা। পায়ে সু জুতা। তায়াং ভাইয়াও সেম ড্রেসআপ। শার্টের কালারটা শুধু ভিন্ন,শ্যাওলা কালার।এরা দুই বন্ধু একরকম পরতেই বেশি পছন্দ করে।

আমরা উঠোনের এক কোণে দাঁড়িয়ে আছি। এনাজ জগ ভর্তি পানি নিয়ে আমাদের সাইড কাটিয়ে টেবিলের দিকে চলে গেলো। আমি তার দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে তন্বীকে জিজ্ঞেস করলাম,

— এই তন্বী উনি না একটু আগে ডিপ ব্লু কালার শার্ট পরেছিলো। এখন আবার এ্যাশ কালার কেন?

— সত্যিই তো। আমি তো খেয়াল করিনি নোভাপু।

নূর আপি টিটকারির সুরে তন্বীকে বললো,
— আরে বুঝিস না কেন? তার প্রেয়সীর সাথে ম্যাচ করে শার্ট পরেছে। আগেরটা তো ম্যাচিং ছিলো না তাই পাল্টে ফেলেছে।

তন্বী নূর আপিকে বললো,
— একদম ঠিক বলেছো। দুজনের কি মিল তাতো দেখতেই পাচ্ছি। যাকে বলে ভালুপাসার প্রতিক্রিয়া।

— নোভার মুড কিন্তু সকাল থেকে আজ আমি অনেক খুশি খুশি দেখছি তন্বী। ঘটনা কি রে নোভা? কি চলছে তোর মনে? এনাজ ভাই কি এমন বললো যার জন্য সকাল থেকে তোকে অনেক খুশি দেখাচ্ছে।

আমি শান্ত দৃষ্টিতে নূর আপির দিকে তাকিয়ে বললাম,
— ভাইয়ের বিয়েতে তো মন এমনি খুশি থাকবে। এতে এনাজের কি বলতে হবে? তোমরা যে কি বলো না।

— হইছে, হইছে আর ভাব ধরতে হবে না। এনাজ ভাই যে তোকে কত সুন্দর করে প্রপোজ করেছে তা কিন্তু তন্বী আমাকে সবই বলেছে। তাই আমার সাথে আর ভাব ধরিস না।

— আমি ভাব কোথায় ধরলাম নূর আপি! কি যে বলো না তোমরা। ধ্যাত! থাকবোই না তোমাদের সাথে।

তন্বী মুখ টিপে হেসে বললো,
— এখন আমাদের সাথে থাকবে কি করে? এখান থেকে তো এনাজ ভাইয়াকে দেখে যাচ্ছে না।

আমি মুখ বাঁকিয়ে তাদের সামনে থেকে সরে গেলাম। মনে মনে কিন্তু আমি হেব্বি খুশি। সকালে সে ভালোবাসার কথা বলার পর থেকে মনটা খুশি খুশি লাগছে। যেটা তন্বী,নূর আপি ধরে ফেলেছে। এখন তাদের সাথে বেশি সময় থাকলে আমি ধরা পরে যাবো। তাই এখান থেকে কেটে পরাই ভালো।

এনাজ যেই টেবিলে খাবারের তদারকি করছে সেই টেবিলের বরাবরি কোণায় গিয়ে দাঁড়ালাম। হাতে তিনটা মোবাইল। এনাজের মোবাইল ওন করতেই ওয়ালপেপারে আমার শাড়ি পড়া একটা ছবি দেখে থমকে গেলাম। এটা তো পূর্ণমিলনী অনুষ্ঠানের প্রথম দিনে কালো শাড়ি পরার পিক। নিশ্চয়ই তায়াং ভাইয়া দিয়েছে তাকে। হার্ড লক দেওয়া। কিছু সময় ভেবে আমার নাম টাইপ করে দিলাম। কিন্তু লক খুললো না। দুজনের নাম একসাথে মিলিয়ে দিলাম তাও খুললো না। ব্যর্থ হয়ে যখুনি মোবাইল বন্ধ করে রেখে দিলাম তখুনি এনাজ এসে বললো,

— ইংরেজীতে নোভানাজ টাইপ করো তাহলেই লক খুলে যাবে।

আমি চমকে গেলাম। হুটহাট কোথা থেকে এসে এমনভাবে কথা বলে যে আমি চমকে উঠতে বাধ্য হই।সাথে একটু লজ্জাও পেয়েছি। সে দেখে ফেলছে যে আমি তার মোবাইলের লক খোলার চেষ্টা করছিলাম। উনি আমাকে চুপ করে থাকতে দেখে বললেন,

— আমি যেভাবে বলছি সেভাবে টাইপ করো।N বড় হাতের তারপর ছোট হাতের ov লিখে আবার বড় হাতের A অক্ষর এরপরে ছোট হাতের na সবশেষে আবার বড় হাতের J অক্ষর।

তার কথামতো টাইপ করলে পুরো শব্দটা হয় NovAnaJ। সেটা লিখে ওকে দিতেই লক খুলে গেলো।আমি বিস্মিত চোখে তার দিকে তাকাতেই সে মুচকি হেসে বললো,

— আমাদের দুজনের নাম মিলিয়ে এই শব্দটা হয়। আমি মিলিয়ে নামটা বানিয়েছি। “নোভানাজ” নামটা কি সুন্দর তাই না?

আমি ওপর নিচ মাথা নাড়িয়ে তার কথার সায় দিলাম। উনি মুচকি হেসে প্রশ্ন করার ভঙ্গিতে জিজ্ঞেস করলো,
— সকালের উত্তর কিন্তু আমি এখনো পাইনি। আমি রিটার্ন উত্তর চাই। এতো সুন্দর করে আই লাভ ইউ বললাম কিন্তু তোমার কোন উত্তর দেওয়ার তোড়জোড় নেই। এটা কোন কথা হলো?

আমি গানের সুরে মিনমিন করে বললাম,
❝আমার কাছে তুমি অন্যরকম,
ভালোবাসি বেশি প্রকাশ করি কম।❞

উনি আমার দিকে তাকিয়ে বিস্মিত চোখে বললো,
— রিয়েলি?

আমি আবারো তার উত্তর গানের সুরেই দিলাম।
❝সব কথা বলে না হৃদয়,
কিছু কথা বুঝে নিতে হয়।❞

— তাও মুখে স্বীকার করবে না?

আমি তার কথার উত্তর না দিয়ে মাথা নাড়িয়ে না বুঝালাম। তারপর লাজুক হেসে সেখান থেকে সরে গেলাম। ইস, এখনো লজ্জা লাগছে। সে কি ভাবলো কে জানে! পেছন থেকে এনাজ জোরে চেচিয়ে বললো,

— টিডি পোকা, আমার মোবাইলের সব ফাংশনে তুমি যেতে পারবে। কোন সমস্যা নেই।তবে গ্যালারির কোন ছবি তুমি কাটবে না। কাটলে কিন্তু তোমার জন্য সেটা মোটেও ভালো হবে না।

তার কথার আগামাথা কিছুই বুঝলাম না। তার গ্যালারীর ছবি আমি কেন কাটবো? আজব তো! যেহেতু কাটতে মানা করেছে তাহলে নিশ্চয়ই কোন কারণ তো অবশ্যই আছে।

💖💖💖

এনাজের মোবাইলে আমার দুই বছর আগের পুরনো ছবি দেখে আমি অবাকের ওপর অবাক। এগুলো যে তায়াং ভাইয়া পাঠিয়েছে তাতে আমার বিন্দুমাত্র সন্দেহ নেই।গ্যালারী ভর্তি আমার ছবি দিয়ে। এর জন্য এনাজ সাবধান করে আমাকে বললো কোন ছবি কাটতে না। এতক্ষণে পুরো বিষয় ক্লিয়ার হলো।

— রাই, একটু দাঁড়াও।

সকালের সেই শিশির ভেজা ঘাসের মাঠে যেতে নিলেই কেউ পেছন থেকে ডাকলো। সেখানে গিয়ে ঘাসের ওপর বসে কতগুলো ছবি তুলবো।রাই, শব্দটা শুনে সবার আগে রোশানের কথাটাই মাথায় আসলো। ঘাড় ঘুরিয়ে দেখি রসুন মহাশয়ই। বৌ-ভাতের অনুষ্ঠানে চেয়ারম্যান বাড়ির সবাইকে দাওয়াত করা হয়েছে। সে তো অবশ্যই আসবে। আমি রেগে ফোঁস করে মুখ দিয়ে গরম নিঃশ্বাস ছেড়ে সামনের দিকে এগিয়ে গেলাম। এদিকটায় কোন মানুষ নেই। তবুও আমি অনুষ্ঠানের মাঝে কোন সিনক্রিয়েট করতে চাইছি না। ঘুরে যেতে নিলেই রোশান এগিয়ে এসে আমার হাত ধরে আমাকে আটকে বললো,

— রাই, প্লিজ আমার কথাটা একবার শুনো।

তাকে দেখে এমনি রাগ উঠে গেছে। সে হাত ধরায় যেন রাগটা আরো চড়া হলো। পেছনে ঘুরে ঠাস করে তার গালে এক চড় বসিয়ে দিলাম। রোশান আমার হাত ছেড়ে নিজের গালে ধরে স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো। আমি যে ওকে চড় মারবো সেটা হয়তো বেচারা কল্পনাও করতে পারেনি। তার চোখের দিকে তাকিয়ে রেগে বললাম,

— এই থাপ্পড়টা না আমার আরো আগে মারা উচিত ছিলো। তাহলে আপনি এত সাহস পেতেন না। আর ৩য় বার আমাদের দেখাও হতো না। কোন সাহসে আমার হাত ধরেন আপনি? চেয়ারম্যানের ছেলে হয়েছেন বলে কি পার পেয়ে যাবেন প্রতিবার? ভেবেই নিয়েছেন নোভা আমাকে কিছু বলে না। তাহলে আমি কেন ওর সামনে যাবো না? এই আপনার কি লাজশরম কি কিছু নেই? এত অপমান করি তবুও নির্লজ্জের মতো চেহারা দেখাতে ডেং ডেং করে চলে আসেন। এবারের থাপ্পড়ের কথা যদি মনে থাকে তাহলে আমার সামনে ৪র্থ বার এসেন না। তাহলে আপনার জন্য অনেক খারাপ হয়ে যাবে মিস্টার রোশান দেওয়ান।

কথাগুলো বলে আবার পেছন দিকে ঘুরে গেলাম। রোশান গালে হাত দিয়ে ফুঁসছে। তাতে আমার কিছু যায়-আসে না। মনে মনে আনন্দ লাগছে। আবার আফসোসও লাগছে। প্রথম দিনই যদি ওর গালো ঠাটিয়ে দুটো চড় মারতাম তাহলে এবার দেখা হতো না। পেছন থেকে আবারো রোশান শক্ত করে হাত ধরে টেনে পশ্চিমে নিয়ে যেতে লাগলো। আমার এক দূর সম্পর্কের ফুপির বাসা আমাদের বাসার সাথে। তাদের দালানের পিছু নিয়ে রোশান থামলো। একটু ভয় ভয়ও করছে। ওর মুখটা রাগে লাল হয়ে আছে। ও নিয়ে আসার সময় তায়াং ভাইয়াকে রান্নার জায়গায় দেখেছিলাম। দুইবার ডাক দিয়েও লাভ হয়নি। ভাইয়া শুনেছে কিনা সঠিক বলতে পারছি না। তার আগেই তো রসুন আমাকে এখানে নিয়ে এলো। রোশানের হাত আলগা হতেই আমার হাত আমি ঝাড়া মেরে ছাড়িয়ে নিলাম। তারপর সর্বশক্তি লাগিয়ে রোশানের আরেক গালে আরেকটা থাপ্পড় বসিয়ে দিলাম। এবারের থাপ্পড়টা আগেরটা থেকে বেশি জোরেই লাগছে। অনেক জোরে শব্দ হয়েছে। সাথে আমার হাতও জ্বলছে।আমার হাত ঝাড়া দিতে লাগলাম। মাথা উঠিয়ে রোশানের দিকে তাকাতে আমি ভড়কে গেলাম। চোখ দুটো রক্তবর্ণ হয়ে আছে। গাল দুটো লাল টুকটুকে হয়ে গেছে। সে আচমকা আমার গলা চেপে ধরে বললো,

— অনেক সাহস হয়ে গেছে তাইনা? আমাকে থাপ্পড় মারিস তুই? এর ফল কতটা ভয়ানক হবে তা জানিস তুই? তোর পুরো পরিবার পথে বসানোর মতো পাওয়ার আমাদের আছে।

আমি তাচ্ছিল্যের হাসি হেসে মুখটাকে বাঁকিয়ে নিচুস্বরে বললাম,

— ঐসব বড় বড় ডায়লগ অন্য কোথায় দিস আমাদের এখানে নয়। বাড়িতে অনুষ্ঠান বলে কোন সিনক্রিয়েট করতে চাইছি না। কিন্তু আমার ভাইয়ারা জানলে তুই চিপা মাইর অবশ্যই খাবি। আর ঐসব দুই টাকার ডয়লগ আমাকে না দিয়ে অন্যকে দে। তোদের এত পাওয়ার হয় নাই যে আমাদের পরিবার পথে বসাবি। আমাদের বংশ তোদের থেকেও বড় আছে। আমরা যদি রাগি তাহলে তোর বাপের যে চেয়ারম্যানি পাওয়ার দেখাস না সেটা আর থাকবে না। আর কি মান-সম্মান নষ্ট করবি তুই? কিছু করতে পারলে না নষ্ট হবে। আগেরবার শুধু আমার ভুলের কারণে এত কাহিনি ঘটতে পেরেছে। এবার তো আমি সেই ভুল করার চান্স রাখবো না।

— মুখে বুলি ফুটছে দেখছি।এতবার বলছি আমার কথাটা একটু শোন কিন্তু তুই নাছোড়বান্দা। আমার কথা শুনতেই চাচ্ছিস না।এখন মনে হচ্ছে একদম ঠিক করেছি আমি। তোর মতো মেয়ের সাথে এমনি হওয়া উচিত। আবার আফসোসও হচ্ছে। আরো বেশি কেন করলাম না?

রোশান হঠাৎ করে এতো প্রতিশোধ পারায়ণ কেন হয়ে গেলো তাই বুঝতে পারছি না। ওর মধ্যে এখন আমি বিন্দুমাত্র অনুশোচনাবোধ দেখতে পাচ্ছি না। মানুষ প্রতিশোধপরায়ণ হলে তার মধ্যে সামান্যতম বোধশক্তি থাকে না। ভালো কিছু চিন্তাধারাও লোপ পায়। রোশান এখন সেইরকম আছে। ওর চোখে স্পষ্ট ক্রোধ দেখা যাচ্ছে।আমি দুই হাত দিয়ে আমার গলা থেকে ওর হাত সরাতে চাইলে রোশান আগের থেকে আরো জোরে গলা চেপে বললো,

— গলার আওয়াজ অনেক বড় হয়ে গেছি দেখছি। ঐ ছেলের আশকারা পেয়ে এতো সাহস? ঐ যে সেদিন কফি হাউসে আমার হাত থেকে যে তোকে বাঁচালো। তোর ঐ নাগরের কথা বলছি আমি।

ওর কথা শুনে ইচ্ছে করছিলো আরো দুটো থাপ্পড় কষিয়ে দিতে। কিন্তু গলা চেপে ধরায় সেই শক্তি নেই। আমি চোখ মুখে অন্ধকার দেখতে লাগলাম। চোখ উল্টে আসছে।মনে হচ্ছে এই বুঝি প্রাণ পাখিটা আমার ছেড়ে চলে যাবে। মনে মনে একবার কালিমাটা আওড়ালাম। আমার এই অবস্থা দেখেও রোশানের কোন ভাবান্তর নেই। সে গলায় হাত চেপে ধরে দাঁড়িয়ে আছে। হঠাৎ করে একটা ঘুষি এসে পরলো রোশানের নাক বরাবরি। রোশান ছিটকে দূরে পরে গেল। আমি চমকে সেদিকে তাকাতেই…….

#চলবে।

#শিশির_ভেজা_রোদ্দুর
#Part_47
#Writer_NOVA

হঠাৎ করে একটা ঘুষি এসে পরলো রোশানের নাক বরাবরি। রোশান ছিটকে দূরে পরে গেল। আমি চমকে সেদিকে তাকাতেই দেখতে পেলাম। এনাজ ও তায়াং ভাইয়া দুজনে আগ্নি দৃষ্টিতে রোশানের দিকে তাকিয়ে আছে। মনে হচ্ছে আজ ওকে ভস্ম করে দিবে। ঘুষিটা সঠিক কে মেরেছে তা আমি জানি না। আমি নিচে মাটিতে বসে জোরে শ্বাস নিতে লাগলাম।এনাজ আমার দিকে এগিয়ে এলো। আর তায়াং ভাইয়া রোশানের দিকে।

— তুমি ঠিক আছো টিডি পোকা?

— হুম। আরেকটু হলে ও আমায় মেরেই ফেলতো। আমি চোখ, মুখে অন্ধকার দেখছিলাম।

তায়াং ভাইয়া রোশানকে নিচ থেকে উঠিয়ে মুখে কয়েকটা পাঞ্চ মারলো। তারপর জোরে চেচিয়ে বললো,

— একবার আমার বোনের জীবন নষ্ট করে তোর কি সুখ হয়নি? আবার কেন এসেছিস?

রোশান কোন উত্তর দিলো না। জোরে জোরে পাগলের মতো হাসতে লাগলো। ওর হাসিতে এনাজ, তায়াং দুজনেই চটে গেল। এনাজ আমাকে ছেড়ে রোশানের দিকে এগিয়ে গিয়ে ওর কলার ধরে বললো,

— তোর সাহস কি করে হয় ওর গলা চেপে ধরার? তোকে জ্যান্ত পুঁতে ফেলবো আমি। তুই ওর গায়ে হাত তুলেছিস কোন সাহসে?

এনাজ মারার জন্য হাত উঠাতে নিলেই আমি দৌড়ে গিয়ে ওর হাত ধরে বললাম,
— প্লিজ আপনারা এখানে কোন ঝামেলা করেন না। এখন ঝামেলা হলে পুরো বিয়ের অনুষ্ঠানটা নষ্ট হয়ে যাবে। এতে আমাদের বাড়ির মান-সম্মান নষ্ট হবে। ওকে আজকের মতো ছেড়ে দিন। পরে একদিন ওকে উদোম কেলানি দিয়েন। তায়াং ভাইয়া প্লিজ কোন ঝামেলা পাকাস না। ওকে আপতত ছেড়ে দে।

তায়াং ভাইয়া হুংকার দিয়ে বললো,
— তুই ওকে ছেড়ে দিতে বলছিস। তুই কি পাগল হইছিস? ও আবার তোর ক্ষতি করতে আসবে।

— সেই চান্স তোরা না দিলেই তো হয়। এখন তোরা মারামারি করলে ওর বাবা শুধু শুধু ঝামেলা পাকাবে। তখন বৌ-ভাতের অনুষ্ঠানটাই মাটি। সব দোষ হবে তোদের, আমার। তাই আজকের মতো ছেড়ে দে। ভালোই ভালোই অনুষ্ঠান শেষ হোক তারপর একদিন চিপা গলিতে নিয়ে চিপা মাইর দিস।

এনাজ রোশানের কলার ছেড়ে বললো,
— হ্যাঁ তায়াং, নোভা ভুল বলেনি। এখন আপাতত ছেড়ে দে। ঢাকায় ওকে যদি পাই তাহলে মেরে হসপিটালে ভর্তি করবো।

তায়াং ভাইয়া ওকে ছেড়ে শাসিয়ে বললো,
— ভাগ্যক্রমে আজ বেঁচে গেলি। কিন্তু পরেরবার বাচতে পারিস কিনা তাতে সন্দেহ আছে।

রোশান এতগুলো মার খেলো তবুও শিক্ষা হলো না। বেহায়ার মতো হেসে কোর্ট ঠিক করে ঝাড়তে ঝাড়তে বললো,
— তোর বোনকে আমার হাত থেকে বাচিয়ে রাখিস। ও আজ আমার গালে দুটো থাপ্পড় মেরেছে। এর শোধ আমি অবশ্যই তুলবো। আমিও দেখবো ওকে আমার হাত থেকে কি করে বাঁচাস তোরা।

এনাজ ওর সামনে এসে বললো,
— একদম ঠিক করেছে। তোকে দুইটার বদলে চারটা কেন মারলো না।

আমি তায়াং ভাইয়া ও এনাজকে টেনে দালানের পেছন দিক থেকে নিয়ে অনুষ্ঠানের প্যান্ডেলে নিয়ে এলাম। দুজনেই রাগে ফুঁসছে। আমি আজ না আটকালে এতক্ষণে বিয়ে বাড়ি বিচারের সালিশ বসে যেতো। গলাটা এখনো ব্যাথা করছে। হারামজাদাকে যদি কষিয়ে আরো দুটো মারতে পারতাম। এখন আফসোস লাগছে। কেন যে আরো দুটো বেশি মারিনি। নিজের ওপর রাগও হচ্ছে। এই অমানুষটাকে ভালোবাসতাম আমি। এর জন্য নিজের ক্ষতি করেছি। ছিঃ ধিক্কার জানাই নিজেকে। মনে মনে প্রতিজ্ঞা করলাম,লজ্জা থাকলে আমি এর কথা জীবনে আর মনে করবো না। এই ঘটনা আমরা তিনজন কাউকে বললাম না। জানলে অসুবিধা হবে। তায়াং ভাইয়া বিশাল এক ধমক দিয়ে আমায় ঘরে পাঠিয়ে দিলো। আর বললো বাইরে যেন না দেখে আমায়। মেয়ে পক্ষের মানুষ আসতেই তারা দুজন খাবারের তদারকি করতে লেগে পরলো। আমি রুমে চলে গেলাম।

💖💖💖

পরেরদিন……..

তাজপুরের নিরিবিলি রাস্তায় হাঁটছি আমরা। আমি ও এনাজ আগে আর অনন্যা, অর্থি, ইভা,তন্বী, নূর আপি, তায়াং ভাইয়া পেছনে। সবাই অটো দিয়ে চলে এসেছি।কেউ বাইক আনিনি। উপজেলার মোড় থেকে তায়াং ভাইয়া সবাইকে চকবার আইসক্রিম কিনে দিয়েছে। সবাই মনোযোগ দিয়ে সেটা খাচ্ছে। এনাজের দিকে তাকাতে দেখতে পেলাম সে খাওয়া রেখে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। আমি ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করলাম,

— কিছু বলবেন?

— উহু, তুমি খাও।

— কেউ এভাবে হা করে তাকিয়ে থাকলে কি খাওয়া যায়? নজর দিয়েন না কিন্তু আবার। আমার যদি পেট ব্যাথা করে তাহলে আপনার দোষ।

— একটু তাকাতেই এতকিছু। তোমার খাওয়া দেখতে ভালো লাগছিলো তাই তাকিয়ে ছিলাম।

— নিজেরটা রেখে অন্যেরটার দিকে তাকিয়ে থাকলে তো ভাববোই নজর দিচ্ছেন।

— হইছে আর তাকাবো না। খাও তুমি।

আমি কোন কথা না বলে খাওয়ায় মনোযোগ দিলাম। উনি আইসক্রিমে কামড় দিয়ে এদিক সেদিক দেখতে লাগলো। আজকে সকালে তায়াং ভাইয়া ও এনাজ দুজনেই ঢাকা যাওয়ার জন্য তোড়জোড় শুরু করছিলো। বাসার সবাই জোর করে রেখেছে। সামাদ ভাইয়া শ্বশুরবাড়ি। তার সাথে গতকাল আশা ও ঐশী গিয়েছে। অনন্যা,অর্থি, ইভাকে যেতে বলেছিলো। কিন্তু ওরা আমাদের জন্য যায়নি। আগামীকাল ভাবীদের বাড়িতে জামাই বাজার। সেই উপলক্ষে আমাদের জোর করে রেখে দিয়েছে। আগামীকাল গিয়ে সামাদ ভাইয়া ও ভাবীকে এই বাড়ি থেকে ২৫ জন গিয়ে নিয়ে আসবো। আজকের দিনে তাই ঘরে বসে না থেকে বিকেলবেলায় তাজপুর ঘুরতে চলে এলাম। আমার পছন্দের রাস্তায় প্রিয় মানুষটার পাশাপাশি হাঁটছি। আইসক্রিম খাওয়া শেষ হতেই পেছনে ঘুরে ভাইয়াকে জিজ্ঞেস করলাম,

— তায়াং ভাইয়া সামনে দুটো মঠ আছে। দেখতে যাবি? হাঁটতে হাঁটতে ঐদিক থেকে ঘুরে আসি।

তায়াং ভাইয়া বললো,
— কতটুকু সময় লাগবে? বেশি সময় লাগলে যাবো না। খালামণি, আম্মু বাকি সবাই বারবার বলেছে সন্ধ্যা করতে না। সন্ধ্যার আগে ফিরে যেতে হবে।

— বেশি সময় লাগবে না। এই ইটের রাস্তা শেষ মাঠেই কাঁচা রাস্তা গিয়েছে দক্ষিণ দিকে। সেই রাস্তা অল্প একটু হাঁটলেই মঠ।

— আচ্ছা চল তাহলে।

— আমরা হাঁটতে থাকি। তোরা আমাদের পেছনে আয়।

ভাইয়ার উত্তরের আশা না করে আমরা সামনের দিকে হাঁটতে লাগলাম। এদিকে গাড়ি খুবই কম চলে। কিছু সময় পর পর দু-একটা রিকশার দেখা পাওয়া যায়। ইটের রাস্তা হওয়ায় কিছু সময় পর আঁকাবাঁকা ইটে আমি কয়েকবার জুতা বেজে পরে যেতে নিয়ে বেঁচেছি। দুইপাশে সারি সারি ইয়া মোটা কড়ই গাছ। রোদের মধ্যেও এই রাস্তা ঠান্ডা থাকে। এনাজ গলা ঝেড়ে আমায় বললো,

— এখানে তুমি আগে কতবার এসেছো?

— বেশি আসা হয়নি। বিজয় দিবস, স্বাধীনতা দিবসে স্কুল থেকে প্রতিবার উপজেলা মাঠে আসতাম। তখন এই দিকে হাঁটতে চলে আসতাম। কখনো বা উপজেলা পরিষদের সামনে যে বিশাল বড় পুকুর দেখলেন সেই পুকুরের পাকা সিঁড়ি ঘাটলায় বসে সময় পার করতাম। পারফরম্যান্স দেখার থেকে এদিক সেদিক ঘুরতে বেশি পছন্দ করতাম আমি।

— মঠ দেখোনি?

— মঠ দুটোকে খুব ছোটবেলায় একবার দেখেছিলাম। এক বান্ধবীর সাথে তাজপুর স্কুলে এসেছিলাম। তখন দেখেছিলাম। তারপর আর দেখা হয়নি। এদিকে আসলে দূর থেকে তার মাথা দেখা যেতো। মঠ দুটো অযত্নে, অবহেলায় এখন ধ্বংসপ্রায়। আমাদের বিক্রমপুরে অনেক ঐতিহাসিক, পুরনো ঐতিহ্য আছে। যত্নের অভাবে যা কালের গর্ভে ধ্বংসস্তূপে পরিণত হচ্ছে।

— বিজ্ঞানী জগদীশ চন্দ্র বসুর বাড়িও তো তোমাদের মুন্সিগঞ্জে।

— হ্যাঁ, শ্রীনগরের রাঢ়ীখালে।

— তুমি দেখতে গিয়েছো?

— না, নিয়ে যাওয়ার মানুষ নেই। কে নিয়ে যাবে?

— সময় করে একদিন আমি নিয়ে যাবোনি।

— ওকে। আড়িয়াল খাঁ বিলও কিন্তু মনোমুগ্ধকর। বিলে নৌকা দিয়ে ঘুরলে আপনার মন নিমিষেই ভালো হয়ে যাবে। তারপর জনশন রোড। এই রোডটা অনেক সুন্দর। আপনার মনে হবে কোন সবুজ বনের ভেতর দিয়ে আপনি যাচ্ছেন।আমি নামে বিক্রমপুরের মেয়ে। কোন জায়গায় আজ অব্দি ঘুরিনি। শুধু অন্যের মুখ থেকে শুনে আফসোস করেছি।

— মুন্সীগঞ্জ আলুর জন্য বিখ্যাত।

— হ্যাঁ আলুর জন্য। তাছাড়া ভাগ্যকুলের মিষ্টিও আছে। রামপালের কলা, মাওয়ার ইলিশ, সিরাজদিখানের পাতক্ষীর,শীতল পাটি আরো বহু কিছু আছে। এগুলো ততটা জনপ্রিয় না হলেও বেশ কদর আছে।

— তোমাদের মুন্সিগঞ্জ আমার ছোট মনে হয়।

আমি কপাল কুঁচকে চোখ দুটো ছোট ছোট করে তার দিক তাকিয়ে বললাম,

—কোন দিক দিয়ে ছোট মনে হয়? আমাদের মুন্সিগঞ্জ বড় আছে। আমাদের জেলার ছয়টা উপজেলা। তার মধ্যে আমাদের উপজেলা সবচেয়ে বড়। ১১৪ টা গ্রাম ও ১৩ টা ইউনিয়ন পরিষদ নিয়ে আমাদের উপজেলা গঠিত। ১১৪টা গ্রাম কি কম কথা? একেকটা গ্রামও কম বড় নয়।

— তাহলে তো ভালোই বড়। তা মাওয়া কি তোমাদের উপজেলায়?

— না, লৌহজং উপজেলায় পরেছে। কুচিয়ামোড়া ব্রিজ বলে না সেটা আমাদের উপজেলায় পরেছে। মাওয়ার আগে যে বাসের কন্ডাক্টর নিমতলা, নিমতলা বলে চেঁচায় সেটাও আমাদের উপজেলায়।

— মুন্সিগঞ্জের নামই কি বিক্রমপুর?

— হ্যাঁ, বিক্রমপুর নামটা আগে ছিলো। পরে পাল্টিয়ে মুন্সিগঞ্জ রাখা হয়। এখনো অনেক জায়গায় মুন্সিগঞ্জ বললে চিনে না। যদি বলি বিক্রমপুর তাহলে চিনবে। তায়াং ভাইয়াদের মাদারীপুরের মানুষ তো আমাদেরকে বিক্রমপুরের মানুষ হিসেবে চিনে। মুন্সিগঞ্জ বললে বলবে এটা কোন জায়গা।

— তোমাদের এদিকে নদী নেই? দেখলাম না তো। তাই জিজ্ঞেস করলাম।

— আমাদের হাই স্কুলের যে রাস্তা দিয়ে আসলেন সেটার উত্তর পাশে আছে। ইছামতী নদী। আগে বিশাল বড় ছিলো। লঞ্চ চলাচল করতো। কিন্তু এখন চড় পরে নদী মৃত নদীতে পরিণত হয়েছে। বর্ষা এলে যাও একটু প্রসারিত হয়। গ্রীষ্মে পুরো শুকিয়ে খালে পরিণত হয়। আগের মতো মাছও নেই। আগে স্কুলে থাকতে টিফিন পিরিয়ডে নদীর পাড়ে গিয়ে বসে থাকতাম। এখন নদীর দুই পাশের জমিগুলো বালি দিয়ে ভরাট করে নদীটাকে আরো সংকীর্ণ করে দিয়েছে। মুন্সিগঞ্জ সদরে আছে ধলেশ্বরী নদী। সেটা মোটামুটি ভালো অবস্থায় আছে।

এনাজ আমার কথা শুনে দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললো,
—মাঝে মাঝে ভাবি আমরা যতটা প্রাকৃতিক পরিবেশে বড় হয়েছে তা আমাদের ভবিষ্যত প্রজন্ম চোখেও দেখবে না। ওদের কাছে এগুলো রুপকথার গল্পের মতো লাগবে। এসব নষ্ট কিন্তু আমরাই করছি। ভবিষ্যত প্রজন্মকে হুমকির মুখে সম্মুখীন আমরাই করছি।

আমি তার কথার সাথে তাল মিলিয়ে বললাম,
— ঠিক বলেছেন। হাই স্কুলের পেছনে দেখেছেন বিশাল বড় এক মাঠ। কিন্তু কোন ছেলে সেখানে খেলছে না। তারা মাঠের কোণে গোল করে বসে হয় ফেসবুক চালাচ্ছে কিংবা কারো সাথে চ্যাটিং করছে। কিন্তু ছোট বেলায় এই মাঠে খেললে তার হৈচৈ আমাদের বাসায় শুনতে পেতাম। বিশাল বড় মাঠ আছে কিন্তু খেলার মানুষ নেই। পৃথিবীর মানুষগুলো যান্ত্রিক হয়ে যাচ্ছে।

— আমরা বোধহয় চলে এসেছি। ঐ যে মঠ দেখা যাচ্ছে। ভেতরে ঢোকা যাবে?

— না, বড় মঠটার সদর দরজা মাটির নিচে ঢাকা পরে গেছে। ছোটটার অর্ধেক আছে আর বাকি অর্ধেক মাটির নিচে। সেটায় বড় তালা মেরে রাখা হয়। বাইরে থেকে দেখে আসতে পারবো। অনন্যাদের গ্রামে একটা মঠ আছে।সেখানে অনেক টিয়ে পাখি বাসা করে থাকে। ভেতরে কেউ যায় না।

— কেউ পাখি ধরে না?

— না, কেউ ধরে না। উপরের দিকে ছোট ছোট ছিদ্র আছে।ওরা সেখানে ওদের মতো মঠে বাসা বানিয়ে থাকে। সেটার দরজায়ও বহু বছর আগের বড় তালা ঝুলানো। লোকমুখে শোনা যায় ভেতরে সাপের বসবাস। একেকটা ঐতিহ্য নিয়ে নানা কাহিনি আছে। আদোও সেগুলো সত্যি কিনা তা নিয়ে সন্দেহ আছে। আমার রামপাল যাওয়ার ভীষণ ইচ্ছে। সেখানে এক বিশাল দীঘি আছে। যেটার নাম রামপালের দীঘি।ঐ দিঘী নিয়ে লোকমুখে একটা গল্প আছে। দীঘিটা বিশাল বড়। সেটাকে কখনোই মেশিন দিয়ে সেঁচে পানিশূন্য করতে পারে না।

— দীঘি কি?

—দীঘি পুকুরের মতোই। তবে তার থেকে বড় ও অনেক বেশি গভীর।

— রামপাল দীঘির গল্পটা বলো।

— আজ নয় আরেকদিন। সব আজ বলে দিলে আকর্ষণ থাকবে না। এখানে দাঁড়ান। ওরা আসুক তারপর একসাথে যাবো।

— মুন্সিগঞ্জ সম্পর্কে অনেক কিছু জানতে পারলাম।

— এই সামান্য কিছু জেনে বলছেন অনেক কিছু। পুরোটা জানলে তো মাথা এলোমেলো হয়ে যাবে। আরো বহুকিছু আছে। সময় করে আরো অনেক কিছু বলবোনে।

— ওকে।

আমরা কাঁচা রাস্তার সামনে দাঁড়িয়ে রইলাম। সবাই একসাথে হয়ে মঠের সামনে গেলাম। লাল মঠের অনেক জায়গা ভেঙে ভেঙে নিচে পরে রয়েছে। একসময় এখানে পূজো হতো। কি পূজো তা আমি জানি না। অবহেলায়,অযত্নে এগুলো এখন কোনরূপ দাঁড়িয়ে আছে। কোনদিন জানি ভেঙে নিচে পরে যাবে।অথচ এদের যত্ন নিলে যুগ যুগ ধরে এভাবেই দাঁড়িয়ে থাকতো। পরবর্তী প্রজন্মের কাছে আর রূপকথার গল্প হতো না।

#চলবে