Ragging To Loving Part-31+32

0
674

😠 Ragging To Loving 😍
Part:: 31
Writer:: Ridhira Noor

নিস্তব্ধ পরিবেশ বিরাজ করছে চারপাশে। বলার ভাষা’ই হারিয়ে ফেলেছে সবাই। পুষ্পর হাত ধরে নিরবতা ভেঙে নূর বলল।

নূরঃঃ- তুই চল আমার সাথে। (পুষ্পকে টেনে নিয়ে যেতেই আফরান নূরের হাত ধরে ফেলে)

আফরানঃঃ- কোন চলাচলি না। যা বলার সবার সামনে বলবে। কারণ সবার মনে হাজারো প্রশ্ন ঘুরছে। বিষয়টা সবার কাছে পরিষ্কার করে নেওয়ায় ভালো।

নূর পুষ্পর হাত ছেড়ে মাথা নেড়ে সায় দিল। কিন্তু আফরান এখনও তার হাত ধরে আছে।

আফরানঃঃ- এবার বল কাহিনি কি? আমার সেই আগে থেকে খটকা লাগছিল। যেদিন তুমি ফার্ম হাউসে গিয়েছিলে। রিহানকে ফোন করেছ মানলাম। কিন্তু ফার্ম হাউসের এড্রেস তুমি কিভাবে জানলে? এই নিয়ে অনেক প্রশ্ন ছিল। কিন্তু কখনও সেই পরিস্থিতি আসেনি যে তোমাকে বা রিহানকে জিজ্ঞেস করব।

নূরঃঃ- (উরিম্মা এই দেখি মি. গোয়েন্দা। এতো চিন্তা ভাবনা নিয়ে ঘুমাই কেমনে? আমার তো এই চিন্তায় ঘুম আসে না যে ডোরেমনের পকেটে এতো বড় বড় গেজেট থাকে কিভাবে? আর এই দেখি। বাহ্!) দাঁড়িয়ে থেকে পা ব্যাথা হয়ে গেল। ক্যান্টিনে গিয়ে বসে আরাম সে কথা বলি?

সবাই মত পোষণ করল। নূর যেতে হাতে টান অনুভব করে। পিছন ফিরে দেখে আফরান এখনও হাত ধরে আছে। নূর যাওয়ায় আফরানের হাতেও টান লাগে। দুজনেই হাতের দিকে তাকায়। তড়িঘড়ি আফরান হাত ছেড়ে দিল। তারপর সবাই ক্যান্টিনে গিয়ে বসল।

পুষ্পঃঃ- আমাদের পরিচয় হয়েছিল দুই বছর আগে। ফেসবুকে আমাদের রিলেশন হয়। সরি ফেইক রিলেশন। (মুখটা মলিন করে বলল। ফেইক রিলেশন বলায় রিহানও কিছুটা কষ্ট পেল।)

সাদিকঃঃ- তার জন্য আমি দুঃখিত। আমার গার্লফ্রেন্ড আমাকে ধোকা দিচ্ছিল। সে ফেইক আইডি ইউজ করে আরেকজনের সাথে রিলেশন করছিল। আমি রিহানকে ওর আইডি দেয় যাতে সে ফেইক রিলেশন করে হাতে নাতে প্রমাণ যোগাড় করতে পারে। কিন্তু পরে জানতে পারলাম আইডিটা ওর না তোমার।

রিহানঃঃ- এক সপ্তাহ ফেইক ফ্রেন্ডশিপ করার পরই জানতে পেরেছিলাম ব্যাপারটা। চেয়েছিলাম পুষ্পকে সব বলে দিব। ফেইক ফ্রেন্ডশিপ ফেইক রিলেশন এর কথা। কিন্তু নিজের অজান্তেই ওর মায়ায় জড়িয়ে পড়েছিলাম। ফ্রেন্ডশিপ ফেইক ছিল। কিন্তু ভালবাসাটা রিয়েল ছিল।

পুষ্পঃঃ- কিন্তু তুমি তো বলেছিলে আমার সাথে কথা বলতে তোমার বিরক্ত লাগতো। আমার বকবক গুলো বিরক্ত লাগতো। যখন তুমি তোমার ফার্ম হাউসে উনাদের বলছিলে তখন শুনেছিলাম। (বলে মুখ ফিরিয়ে নিল)

রিহানঃঃ- সেটা যখন প্রথম অজানা ছিল তখন। যখন জানতাম আইডিটা সাদিকের গার্লফ্রেন্ডের তখন। কিন্তু পরে তো সেই বকবক গুলোই আমার অভ্যাসে পরিণত হয়েছিল। (মৃদু হাসলো। পরক্ষণে চেহারা মলিন হয়ে গেল) আমি তো না জেনে ফেইক ফ্রেন্ডশিপ করেছিলাম। ভাল তো সত্যি বেসে ছিলাম। কিন্তু তুমি? তুমি তো জেনে শুনে সব শুরু থেকেই টাইমপাস করেছিলে।

পুষ্পঃঃ- কে বলেছে তোমায় আমি টাইমপাস করেছি। আমি তো সেই শুরু থেকেই তোমাকে ভালবেসে ছিলাম। তোমাকে বিশ্বাস করেছিলাম। কিন্তু যখন তুমি বলেছ সব ফেইক ছিল। মিথ্যা রটনা ছিল আমার সব বিশ্বাস ভেঙে চুরমার হয়ে গিয়েছিল।

রিহানঃঃ- হ্যাঁ বলেছিলাম। কিন্তু তা তো যখন জানতাম না তখন বলেছি।

নূরঃঃ- আয়ায়ায়া স্টপ…… (চিল্লিয়ে উঠল) কে কি বলেছে? কি শুনেছে? কিছুই মাথায় ঢুকছে না। পুষ্প তুই বল তুই কি শুনেছিস?

পুষ্পঃঃ- আমাদের রিলেশনের দুই মাস পূর্ণ হওয়ায় আমরা রিহানের ফার্ম হাউসে ডেইট প্লান করি। আমি ওয়াশরুমে গিয়েছিলাম। এসেই শুনি রিহান তার বন্ধুদের বলছে আমাদের সম্পর্ক মিথ্যা ছিল। সেটা শুনে খুব কষ্ট পেয়েছিলাম তাই আর এক মূহুর্তও অপেক্ষা না করে চলে এলাম।

রিহানঃঃ- হোয়াট? তুমি অর্ধেক কথা শুনেই চলে এলে। আর একটু অপেক্ষা করলে সম্পূর্ণ কথা শুনতে পেতে। আমি বলেছিলাম আমার ফ্রেন্ডশিপ ফেইক ছিল। কিন্তু পরে এটাও বলেছিলাম যে আমি সত্যি তোমাকে ভালবাসি। কিন্তু তুমি সেই অর্ধেকটা শুনে ভুল বুঝলে।

এসব শুনে পুষ্প তো পারছে না নিজেই নিজের খুন করতে। আরেকটু অপেক্ষা করলে হয়তো আজ তারা এই পরিস্থিতিতে থাকত না। এখন নিজেকে দোষী মনে হচ্ছে। লজ্জায় মাথা নিচু করে আছে। কারো চোখে চোখ মিলানোর মতো সাহস এখন তার নেই।

নূরঃঃ- এবার আপনি বলুন। (রিহানকে উদ্দেশ্য করে)

রিহানঃঃ- (দীর্ঘ শ্বাস নিয়ে বলতে শুরু করল) সাদিক আর ফাহাদের সাথে কথা বলার পর তাদের পুষ্পর সাথে পরিচয় করতে চেয়েছিলাম। তাই তাকে খুঁজতে খুঁজতে দেখি বাইরে ফোনে কারো সাথে কথা বলছে। তাই গেলাম তার কাছে। আর তখনই শুনি সে কাউকে বলছে, কিসের রিলেশন কিসের ভালবাসা। মিথ্যা ছিল সব। শুধু টাইমপাস ছিল। ভেবেছিলাম হয়তো আমি ভুল করেছি। তাই তাকে সব বলে দিতে চেয়েছি। কিন্তু বলে আর কি হতো। সবই তো নাটক ছিল।

পুষ্পঃঃ- ওয়েট ওয়েট। তোমাকে কে বলেছে সব নাটক ছিল। টাইমপাস ছিল। আমি সেগুলো তোমার কথা বলছিলাম। আমি যা শুনেছি শুধু তাই রিপিট করেছি।

পুষ্প আর রিহান ছাড়া সবাই একসাথে কপালে হাত দিয়ে দুঃখ প্রকাশ করল।

নূরঃঃ- এই জন্যই বলে অল্প বিদ্যা ভয়ংকর। দুইজনেই অল্প একটু শুনে নিজের মধ্যে কাহিনি তৈরি করে নিল। আরে যদি বিশ্বাসই না থাকে একে অপরের প্রতি তাহলে আবার কিসের ভালবাসা। একটিবার তো একে অপরকে জিজ্ঞেস করতে পারতে।

পুষ্পঃঃ- আমার রাগ সম্পর্কে জানিসই। সেসব শোনার পর প্রচুর রেগে ছিলাম। তাই ফোন সুইচড অফ করে দেয়। কিন্তু রাতে আমি রিহানকে ফোন দিয়েছিলাম। নট রিচএবল ছিল। পর পর তিন দিন ফোন দেয়। তাও ফোন নট রিচএবল। কিন্তু আমি যে না বলে চলে এসেছিলাম ওর কি প্রয়োজন ছিল না আমাকে একটিবার ফোন করার।

সাদিকঃঃ- আরে সেই দিন রিহান তোমাকে খুঁজতে যায়। প্রায় এক ঘন্টা হয়ে গেল কিন্তু রিহান আসেনি। তাকে খুঁজতে গিয়ে দেখি ওয়াশরুমে অজ্ঞান অবস্থায় পড়ে আছে। গায়ে প্রচুর জ্বর। তারপর আমরা তাকে হসপিটালে নিয়ে যায়। চার দিন ধরে জ্বর ছিল।

আফরানঃঃ- রিহান টেনশন করলে ওর জ্বর হয়। তা অনেক দিন স্থায়ী থাকে।

রিহানঃঃ- অজ্ঞান হওয়ার সময় ফোন বাথটাবে পড়ে যায়। তাই ফোন কাজ করছিল না। সুস্থ হওয়ার পর আমি ফোন দিয়েছিলাম। এফবিতেও খুঁজে ছিলাম। কিন্তু আইডি ডিএক্টিভেট করে দেয়।

পুষ্পঃঃ- তিন ধরে অনেক চেষ্টা করেছি যোগাযোগ করার। না হওয়ায় আইডি ডিএক্টিভেট করে দেয় আর সিম ভেঙে ফেলি।

সিমাঃঃ- হ্যালো গাইজ? কেউ কি কিছু বুঝতে পেরেছ? নাকি আমিই আবুল হয়ে বসে আছি যে আগা মাথা কিছুই বুঝল না।

আমরিনঃঃ- আমার তো সব মাথার উপর দিয়ে গেল।

কারো মাথায় কিছু ঢুকছে না। কিন্তু এতটুকু বুঝতে পেরেছে যে তাদের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে। রিহান পুষ্প দুইজনই লজ্জিত।

পুষ্পঃঃ- এসবের শুরু তো মিথ্যা দিয়েই হয়েছে। রিহান যদি আমাকে সত্যিটা বলে দিত তাহলে কি এত কিছু হতো? হ্যাঁ আমি মানছি সে প্রথমে ভুল করেছিল। কিন্তু পরে? পরে কি আমাকে জানাতে পারতো না। যে সম্পর্কের ভিত্তিই ছিল মিথ্যা সেই সম্পর্কই টিকতই বা কিভাবে? (এসব বলতে বলতে চোখের পানি গাল বেয়ে গড়িয়ে পড়ল)

কারো বলার মতো কিছু নেই। রিহানও মনে মনে অনুতপ্ত। চেয়েও কিছু বলতে পারছে না। পুষ্প নিজেকে আর সামলাতে না পেরে উঠে চলে গেল। পুষ্প যাওয়ার পর পরই রিহানও উঠে চলে গেল। বাকিরা ছোট খাট শকড খেয়ে বসে আছে।

সিমাঃঃ- পুষ্পর যা রাগ। বাবা গো বাবা। আমাদের জানা আছে। রাগে কাউকে কিছু বলবে না। কিন্তু নিজেরই ক্ষতি করবে।

আলিফাঃঃ- দুইটাই ঘাড় ত্যাড়া। মেইড ফর ইচ আদার।

আমরিনঃঃ- সেই যায় হোক। ভাল তো অনেক বাসে একে অপরকে। কিন্তু তাদের ইগোর কারণে কেউ কারো কাছে মাথা নত করবে না। পুষ্প তো না ই।

মেহেরঃঃ- দোষ কিন্তু রিহান ভাইয়ার অবশ্যই আছে। যদি পুষ্পকে জানিয়ে দিত তাহলে এমন হতো না।

ইয়াশঃঃ- আহাহা তোমার বান্ধবী ধোয়া তুলসীপাতা।

মেহেরঃঃ- তা নয় কি। রিহান ভাইয়া আগে বলে দিলে এসব ভুল বোঝাবুঝি হতো না।

আফরানঃঃ- প্লিজ স্টপ গাইজ। এখানে পুষ্প রিহানের ঝগড়া মিটানোর জন্য আছি। নতুন ঝগড়া বাঁধানোর জন্য না। সো স্টপ দেস ননসেন্স।

নূরঃঃ- (হো নিজে সেন্স ওয়ালা। ঢং।) আমাদের আগে জানতে হবে তাদের মনে কি চলছে। এখনো কি একে অপরকে ভালবাসে নাকি অভিমান নিয়েই আজীবন দূরে থাকবে।
_______________________________

সময় পেরিয়ে যাচ্ছে। দুই সপ্তাহ কেটে গেল। সাদিক ফাহাদ সেই দিনই ইন্ডিয়া ফিরে গিয়েছিল। পুষ্প তার রাগ নিয়ে রিহান তার অভিমান নিয়েই আছে। ভাল কিন্তু উভয়ই বাসে। কিন্তু তাদের ইগোর কারণে কেউ কারো কাছে যাবে না। এই কয়দিন পুষ্প রিহান যতই একে অপরের সামনে আসতো রাগে অভিমানে দুইজনই মুখ ফিরিয়ে নিত। আবার সবার আড়ালে লুকিয়ে একে অপরকে দেখতো। রিহান পুষ্পকে ছাড়া সবাই একসাথে ক্যান্টিনে গোল মিটিং এ বসল।

নূরঃঃ- এই নাছোড়বান্দা যে ত্যাড়া। এমনি সোজা হবে না। তাদের সাথে ত্যাড়ামি করেই সোজা করতে হবে।

ওয়াসিমঃঃ- খুরাফাতি কুইন নিজের কোন খুরাফাতি আইডিয়া চালাও। এই টেনশন থেকে আমাদের উদ্ধার কর। এসব ঝামেলা আর ভালো লাগছে না। লাইফে একটু চিল চায়।

নূরঃঃ- হুমম…… (গালে আঙুল দিয়ে চিন্তার ভাব নিয়ে ভাবছে।) মেরি খুরাফাতি দিমাগ মে তুফানি আইডিয়া আগেয়া। (চুটকি বাজিয়ে) লাভ ফরমুলা ইউজ করতে হবে।

সবাইঃঃ- লাভ ফরমুলা?

আহিলঃঃ- সেটা আবার কি?

নূরঃঃ- জেলাসি। শোন _________________।

আহিলঃঃ- নট বেড। আইডিয়া কিন্তু ভালোই।

আফরানঃঃ- সব আমার ভাইকে দিয়ে করাবে।

নূরঃঃ- সব হয়েছেও আপনার ভাইয়ের জন্য। যদি আগেই সব ক্লিয়ার করে দিত তাহলে এসব হতো না। তাই বেশি ঢং করবেন না। হুহ্।
.
.
.
ইয়াশঃঃ- আরে আহিল শুনেছি পুষ্পর নাকি বিয়ে ঠিক হয়ে গিয়েছে।

রিহানঃঃ- (অবাক হয়ে তাকাল। হোয়াট? পুষ্পর? বিয়ে? আরে হয়তো ভুল শুনেছে ওরা। আবারও শান্ত হয়ে বসে পড়ল।)

আহিলঃঃ- (এর তো কোন রিয়েকশনই নেই) হ্যাঁ শুনেছি। ইনফেক্ট আগামী সপ্তাহ নাকি এনগেজমেন্ট। আমরিন বলেছে।

রিহান এবার একটু আতংকিত হয়ে নড়েচড়ে বসল।

আহিলঃঃ- আরে কাল নাকি ওর ফিওন্সে ভার্সিটি আসবে সবার সাথে দেখা করতে।

রিহান কিছু বলছে না। শুধু রাগে ফুঁসছে।

ওয়াসিমঃঃ- (কাজ হচ্ছে দেখছি। মনে মনে পৈশাচিক হাসি দিল।)

পরের ভার্সিটিতে আসতেই দেখে পুষ্প আর একটা ছেলে অনেকটা কাছাকাছি দাঁড়িয়ে কথা বলছে আর হাসছে। নূর আর বাকিরা দূর থেকে এসব দেখে আনন্দ নিচ্ছে। রিহান মুখ ফিরিয়ে যেতে নিলে দেখে পুষ্প ছেলেটির হাত ধরে আছে। রাগে হাত মুষ্টি বদ্ধ করল। ভালবাসার মানুষটিকে অন্য কারো সাথে দেখলে কারই বা হিংসা হয়না। পুষ্পর চুল মুখে আসায় ছেলেটা আলতো করে কানের পিছে গুজে দিল। রিহান এবার রাগ সামলাতে না পেরে দ্রুত গিয়ে ছেলেটিকে সরিয়ে পুষ্পকে টেনে নিয়ে গেল। বাকিরা দাঁড়িয়ে হাসছে।

নূরঃঃ- ওয়েল ডান মুহিন। (বলে হাই ফাইভ দিল) থ্যাংকস। কালকে বলেছিলাম আর আজই চলে এলে।

মুহিনঃঃ- আরে কি বলছ। পুষ্প আমার বেস্ট ফ্রেন্ড। ওর জন্য এতটুকু করতে পেরে আমি অনেক খুশি। রিহানকে অনেক ভালবাসে কিন্তু এত রাগ যে নিজে কষ্ট পাবে তাও বলবে না।

রিহান জানতো না মুহিন পুষ্পর মামা হয় সম্পর্কে। শুধু জানতো ওর বেস্ট ফ্রেন্ড। তাই তাদের একসাথে দেখে জ্বলছিল। পুষ্পকে টেনে একপাশে নিয়ে এলো।

পুষ্পঃঃ- কি করছ তুমি? সরি আপনি। (অভিমান করে বলল)

রিহানঃঃ- হ্যাঁ। এখন তো আমি আপনি হয়ে গেলাম। আর সেই তোমার আপন হয়ে গেল। (দুই বাহু চেপে ধরল) কেন করছ এমন? আমি মানছি আমি ভুল করেছি। তার শাস্তি দুইটা বছর ধরে পেয়েছি। এখন আর কেন শাস্তি দিচ্ছ?

পুষ্পঃঃ- শাস্তি? আর আমি যে বিনা দোষে পেয়েছি শাস্তি। তার কি হবে? ছাড় আমাকে। আমার যেতে হবে। মুহিন…..

রিহানঃঃ- নাম নিবে না ওর।

পুষ্পঃঃ- কেন নিব না? ওর আমার….

রিহানঃঃ- কেউ না তোমার। তুমি আমার। শুধুই আমার। ভালবাসি তোমায়। প্লিজ আবার আমাকে ছেড়ে যেও না। প্লিজ। (কান্না সুরে বলল) এই দুইটা বছর তিলে তিলে কাটিয়েছি। এবার তুমি চলে গেলে সত্যি মরে যাব।

পুষ্পঃঃ- কি যা তা বলছ। এসব ফালতু কথা বলতে বারণ করেছি না। তুমি না থাকলে আমি কিভাবে থাকব। দুই বছর আমিও তো কম কষ্ট পায়নি। প্রতিটি মুহূর্ত তোমার কথা ভেবেছি। আমিও তো ভালবাসি তোমায়।

রিহানঃঃ- তাহলে বিয়ে কেন করছ?

পুষ্পঃঃ- বিয়ে? কার বিয়ে? কখন বিয়ে? কোথায় বিয়ে?

রিহানঃঃ- কেন তোমার আর মুহিনের।

পুষ্পঃঃ- তোমার মাথা খারাপ? মুহিন আমার মামা হয়।

রিহান ভ্যাবাচেকা খেয়ে গেল। হঠাৎই পাশ থেকে হাসির আওয়াজ আসল। সবাই সেখানে উপস্থিত ছিল। তাদের কান্ড দেখে হেসে দিল।

ওয়াসিমঃঃ- এসব খুরাফাতি কুইনের আইডিয়া ছিল। যাতে তুই নিজে পুষ্পকে তোর মনের কথা বলতে পারিস। কারণ দোষ তোর ছিল। তুই সত্য লুকানোর কারণে এসব হয়েছে। তাই তোকে দিয়েই সব করিয়েছে।

রিহানঃঃ- ওহ গড। এদিকে আমার জান বের হয়ে যাচ্ছিল এটা ভেবে যে পুষ্পকে হারিয়ে ফেলব।

নূরঃঃ- না হারানোর জন্যই এসব প্ল্যান। সময় থাকতে যাতে বুঝতে পারেন। নাহলে অনেক দেরি হয়ে যেত।

পুষ্পঃঃ- নূরিইইই (জড়িয়ে ধরতে আসলে নূর থামিয়ে দেয়)

নূরঃঃ- এক্কেরে থাপরাইয়া মুতাই দিমু। আমার ধারে কাছেও আসবি না। খুব ভালোই নাটক করতে পারিস। বাহ্ আমি তো মুগ্ধ হয়ে গেলাম।

পুষ্পঃঃ- আরে তোরা তো কিছু বল। (বাকি বান্ধবীদের উদ্দেশ্য করে)

সিমাঃঃ- অবশ্যই। আমি লাত্থাইয়া হাগাই দিমু।

আলিফাঃঃ- আমি ঘুসি দিয়া পাদাই দিমু।

আমরিনঃঃ- আমি চিমটি দিয়া বমি করাই দিমু।

মেহেরঃঃ- আমি কামড় দিয়া রক্ত বাইর করে দিমু।

ছেলেরা তাদের কথা শুনে ভ্যাবাচেকা খেয়ে গেল। তারা বান্ধবীরা এসবে অভ্যস্ত। কিন্তু ছেলেরা এই প্রথম শুনে একটু থুক্কু বড় শকড খেল।

.
.
.

চলবে

😠 Ragging To Loving 😍
Part:: 32
Writer:: Ridhira Noor

রিহানকে হা হয়ে থাকতে দেখে পুষ্প বলে উঠল।

পুষ্পঃঃ- মুখ বন্ধ কর। নাহয় মশা ঢুকবে।

রিহানের সাথে সাথে বাকিরাও মুখ বন্ধ করে স্বাভাবিক হয়ে দাঁড়াল।

রিহানঃঃ- এটা কি ছিল? (অবাক হয়ে)

পুষ্পঃঃ- সবার স্পেশাল মন্ত্র। আমি তো শুনতে শুনতে অভ্যস্ত। তোমরা প্রথমবার শুনে শকড খেলে। নূরিইই,, আমুউউ,, সিমুউউ,, আলুউউ,, মেহুউউ শোন না আমার কথা।

মেয়েরাঃঃ- হুহহহ (তারা ভেঙচি কেটে একসাথে হাটা দিল।)

রিহানঃঃ- আফিইই,, ওয়াসিইই,, আহিইই,, ইয়াশিইই,, আরিইই তোরা তো……

ছেলেরাঃঃ- হুহহহ (তারাও ভেঙচি কেটে মেয়েদের মতো কোমর দুলিয়ে তাদের পিছনে হাটা দিল।)

রিহান-পুষ্পঃঃ- (ভ্যাবাচেকা খেয়ে একে অপরের দিকে তাকাল) এএএএএএএএ (নাক একপাশে কুচকে)

বাকিরা ওদিকে হেসে কুটিকুটি হয়ে যাচ্ছে।

মুহিনঃঃ- ওকে গাইজ আমি এখন চলি। যে কাজে এসেছি তা তো হয়ে গেল। আপুর (পুষ্পর মা) সাথে দেখা করে ফিরে যাব। পুষ্পকে জানিয়ে দিও। বাই গাইজ।

সবাই মুহিনকে বিদায় দিল।

নূরঃঃ- দুজনে খুব তো নাটক করল এই কয়দিন। এবার আমরা দেখাব নাটক কাকে বলে? কত প্রকার ও কি কি? নাটক সিনেমা ড্রামা ফিল্ম সব দেখাব। আর হ্যাঁ বাকিরাও কিন্তু কোন কথা বলবে ওদের সাথে। একটু খাটিয়ে নেই ওদের।

তারপর মেয়েরা ক্লাসে গেল। ছেলেরা মাঠের একপাশে গাছের নিচে বসে আড্ডা দিচ্ছে। রিহান তাদের কাছে এলো। কিন্তু সবাই তাকে পাত্তা না দিয়ে নিজেরাই কথা বলছে। যেন রিহানের উপস্থিতি কিছু যায় আসে না। রিহান তাদের সাথে কথা বলার অনচেষ্টা করছে। কিন্তু সবাই তাকে উপেক্ষা করছে। রিহান রেগে হনহনিয়ে চলে গেল। সে যাওয়ার পর সবাই অট্টহাসিতে মেতে উঠল।

আহিলঃঃ- ইয়ার নূরের আইডিয়া অনেক জোস। খুব মজা লাগছে।

আফরানঃঃ- ইয়াহ ইয়াহ এসব ত্যাড়া চিন্তা ভাবনা নিয়েই তো চলে।

ক্লাসে স্যার পড়াচ্ছে এরই মাঝে পুষ্প তাদের সাথে কথা বলার অনেক চেষ্টা করছে। কিন্তু কেউ তার দিকে ফিরেও তাকাচ্ছে না। অনেক সরি বলল। আকুতি মিনতি করল কিন্তু কে শুনে কার কথা। পুষ্প এবার নূরের পেটে খোঁচা দিল। নূর সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে গেল।

নূরঃঃ- স্যার এই মেয়ে ডিস্টার্ব করে। (পুষ্পর দিকে আঙুল করে)

পুষ্প আর স্যারসহ ক্লাসের সবাই অবাক। কারণ তাদের বন্ধুত্ব সম্পর্কে ভার্সিটির সবাই জানে। নূরের এমন বলায় সবাই একটু আশ্চর্য হলো।

স্যারঃঃ- তুমি বেরিয়ে যাও ক্লাস থেকে। (পুষ্পকে)

পুষ্প করুণ চোখে সবার দিকে তাকিয়ে চলে গেল। কেউ তার দিকে ভ্রুক্ষেপ করল না। পুষ্প যাওয়ার পর নূর সিমা সহ সবাই জোরে হেসে দিল।

স্যারঃঃ- কি হচ্ছে এখানে? যাও তোমরাও বেরিয়ে যাও।

তারা হেসে হেলেদুলে বেরিয়ে গেল। পুষ্পকে বাইরে দেখে ভেঙচি কেটে চলে গেল। পুষ্প অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে তাদের দিকে।

এমন করতে করতে দুই দিন কেটে গেল। পুষ্প রিহান অনেক চেষ্টা করল তাদের রাগ ভাঙাতে। কিন্তু কেউ পাত্তাই দিচ্ছে না। পরের দিন নূর আফরান আর বাকিরা ভার্সিটিতে এসে গেইট দিয়ে প্রবেশ করতেই দেখে দুইজন মুখে স্যাড ইমোজির মাস্ক পরে আছে। তাদের উপেক্ষা করে যেতেই দুইজনেই কান ধরে হাটু গেড়ে বসে পড়ল।

পুষ্পঃঃ- সরি তো ইয়ার। আমরা এসব লুকিয়েছি কারণ আমরা চাই নি আমাদের জন্য তোদের মধ্যে কোন ঝামেলা হোক। আর কি বা বলতাম বল। আমি চাই নি আমার জন্য তোরা কোন টেনশন নিস।

রিহানঃঃ- এসব বলে তোদের টেনশন দিতে চাই নি।

আফরানঃঃ- টেনশন? সিরিয়াসলি? তুই না বলাতে আরো বেশি টেনশনে ছিলাম। যখন তোর জ্বর হয়েছিল তখন শুধু ভাবতাম কি এমন হয়েছে যে তুই এতটা অসুস্থ হয়ে পড়লি। বলে যতটুকু টেনশন করতাম না বলায় তার চেয়ে বেশি টেনশন করেছি।

পুষ্পঃঃ- সরি তো। আর কখনো এমন হবে। প্রমিজ। (কান্না মিশ্রিত গলায় বলল)

চোখের পানি টলমল করছে। পলক ফেলতেই পানি গাল বেয়ে গড়িয়ে পড়ল। হঠাৎই সবাই খিলখিল করে হেসে উঠল। নূর পুষ্পর সামনে হাটু গেড়ে বসে জড়িয়ে ধরল। সিমা আমরিন মেহের আলিফাও গিয়ে একসাথে জড়িয়ে ধরল। পুষ্প কিছুই বুঝতে পারছে না কি হচ্ছে। আফরান গিয়ে রিহানের মাথায় টোকা দিল। তারপর সেও রিহানকে জড়িয়ে ধরল।

নূরঃঃ- কি হলো? বুঝতে পারছিস না? (বলেই হেসে দিল) কি ভেবেছিস নাটক শুধু তোরাই পারিস। আমরা পারি না বুঝি।

পুষ্পঃঃ- মানে?

আমরিনঃঃ- মানে এসব এতদিন ধরে নাটক চলছিল। যাতে তোর গোবর ভরা মাথাটা পরিষ্কার করতে পারি।

সিমাঃঃ- প্রথমে ভেবেছিলাম হারপিক খাইয়ে দিব। কিন্তু পরে ভাবলাম হারপিক খেলে তো পেটে যাবে। মাথায় যাবে না।

সিমার করা শুনে সবাই হেসে দিল।

আলিফাঃঃ- নূর দ্যা খুরাফাতি কুইন এই তুফানি আইডিয়া বের করল। তোদের শায়েস্তা করতে।

পুষ্পঃঃ- তোরা পারলি আমার সাথে এমনটা করতে? (আহ্লাদী সুরে বলল)

মেহেরঃঃ- ওলে লে বাবু। তুই যেভাবে পারলি করতে আমরাও সেভাবে পারলাম।

ওয়াসিমঃঃ- খুব তো ভালোই নাটক করেছিস। এতদিন আমাদের নাকের নিচে এত কাহিনি চলছিল আর আমরা টেরও পেলাম না। তাই আমরাও বুঝিয়ে দিলাম আমরাও পারি।

রিহানঃঃ- সরি দোস্ত। আর হবে না এমন।

আরিফঃঃ- আর হতেও দিব না।

পুষ্পঃঃ- সত্যি তোরা আর রেগে নেই তো?

নূরঃঃ- কে বলল রেগে নেই? রাগ এখনো আছে। একসাথে তিন তিনটা পার্টি দিবি তারপর রাগ ভাঙবে।

পুষ্পঃঃ- তিন তিনটা পার্টি। তা কেন ম্যাডাম।

নূরঃঃ- প্রথমত রিলেশন পার্টি। তারপর ব্রেকআপ পার্টি। এবার প্যাচআপ পার্টি। হলো তো তিন তিনটা পার্টি।

আলিফাঃঃ- এক্সকিউজ মি পিলিজ। তিন তিনটা না পাঁচ পাঁচটা পার্টি। এই দুই ফকিন্নির ট্রিট এখনো পেলাম না। (সিমা আমরিনকে উদ্দেশ্য করে)

মেহেরঃঃ- ভেরি ইশ্মার্ত আলু।

আলিফা একটু ভাব নিল। সিমা আমরিন আড়চোখে তাকাল। বাকিরা হাসতে হাসতে শেষ।

আহিলঃঃ- আই হেভ এন আইডিয়া। সব যখন ঠিক হয়ে গেল কেননা একটা ছোট গেট টুগেদার করা যাক। কি বল সবাই?

ইয়াশঃঃ- নট বেড। ভালোই আইডিয়া। এতদিন প্যারায় ছিলাম। এখন একটু চিল করব।

নূরঃঃ- ওয়েএএএটটটট………. আগে বল। আর কারো মধ্যে কি কোন অজানা ঝামেলা আছে? (সবাই মাথা নেড়ে না বলল) যদি পরে জানা এমন কিছু জানা যায় তাহলে তাকে হারপিক দিয়ে ওয়াশিং মেশিনে একেবারে ধুয়ে ফেলব।

সবাই হেসে উঠল।

রিহানঃঃ- এখন যেহেতু ঝামেলা নেই তাহলে চল সবাই একসাথে চিল করি। এত খুশিতে ক্লাস করা হবে না। তো কেননা সবাই ফার্ম হাউসে গিয়ে আড্ডা দেয়।

ওয়াসিমঃঃ- গ্রেট। তাহলে চল সবাই।

সবাই একমত হয়ে রওনা দিল ফার্ম হাউসের উদ্দেশ্যে। গার্ডেনের পাশেই বড় হল রুম। মাদুর বিছিয়ে সবাই গোল হয়ে বসল। মেয়েরা একত্রিত হয়ে একপাশে আর ছেলেরা তাদের সামনাসামনি বসল। আফরান রিহান আর জাফর চাচা মিলে সবার জন্য কোল্ড ড্রিংকস আর হালকা নাশতার আয়োজন করল। সবাই একসাথে বসে আড্ডা দিতে লাগলো।

নূরঃঃ- এভাবে অনেক বোর হয়ে যাব। কেননা সবাই মিলে গেইম খেলি।

ওয়াসিমঃঃ- ওয়াও মিস খুরাফাতি কুইন নতুন কোন খুরাফাতি গেইম খেলবে।

নূরঃঃ- খুরাফাতি? আমি? হুহ্ আমি অনেক নম্র ভদ্র শান্তশিষ্ট লাজুক মেয়ে। আমি এসব করি না। এসব তো আমার মাথায় আসেই না।

আলিফাঃঃ- কেউ বিষ খা আমি মরে যায়। এই টর্চার আমি সহ্য করতে পারব না।

নূর আড়চোখে আলিফার দিকে তাকাল। আর বাকিরা হাসতে হাসতে গড়াগড়ি খাচ্ছে।

ওয়াসিমঃঃ- আরে আমার বোনটাকে এমন বল না।

নূরঃঃ- বোন? (চোখের কোণে পানি চলে এলো। সবাই তাকে এভাবে দেখে অবাক হলো।) জানেন আমার না ভাই নেই। কিন্তু একটা বড় ভাইয়ের অভাব অনুভব করি। ভাই মানে বোনের ঢাল। যে বোনকে সব বিপদ থেকে আগলে রাখে। ভাই বোনকে অনেক মারে, প্যারা দেয়, শাসন করে। কিন্তু বিপদে তারাই সবার আগে পাশে নয় সামনে থাকে। যাতে সেই বিপদটা বোনকে ছুতে না পারে। নিজে সব কিছুতে বাঁধা দেয়। কিন্তু বোনের খুশির জন্য নিজে সব বাঁধা উপেক্ষা করে। আমার ভাই ছিল না। কিন্তু ভাইয়ের মতো বোন ছিল। যে আমাকে আর তন্বিকে সব কিছু থেকে বাঁচিয়ে রাখত। অর…… (চোখের কোণে জমে থাকা পানি বাঁধা পেরিয়ে গড়িয়ে পড়ল।)

নূরের কথায় সবাই আবেগী হয়ে উঠল। তার বান্ধবী আর আফরান ছাড়া তারা এই প্রথম নূরকে ইমোশনাল হতে দেখল।

ওয়াসিমঃঃ- আই এম সরি।

নূরঃঃ- না প্লিজ। ইনফেক্ট আমি খুশি একটা ভাই পেয়ে।

আহিলঃঃ- একটা? আমিও আছি।

ইয়াশঃঃ- আমিও।

আরিফঃঃ- আমি কেন বাদ যাব। তাই আমিও

নূরঃঃ- আচ্ছা আপনারা সবাই………..

ওয়াসিম আহিল আরিফ ইয়াশ জোরে চিল্লিয়ে উঠল। নায়ায়ায়ায়ায়ায়ায়ায়া। তাদের চিল্লানোতে সবাই কেঁপে উঠল। তারা চারজন ফিসফিস করতে লাগলো।

ওয়াসিমঃঃ- আমরা চারজনই ঠিক আছি। রিহানকে ভাই বানালে আফরানও অটোমেটিকলি….. বুঝতে পারছিস তো। তাহলে সব সেটিংই গড়বড় হয়ে যাবে।

আহিলঃঃ- আমরা চারজনই ঠিক আছি। আর কাউকে ভাই বানাতে হবে না।

রিহানঃঃ- আমি কি দোষ করেছি।

আরিফঃঃ- চুপ কর বেশি বকবক করবি না। নূর শুধু আমরা চারজনের বোন। আর কারো না।

ইয়াশঃঃ- সব সেটিংই গড়বড় হয়ে যাবে তো।

সবাইঃঃ- সেটিং ?

ইয়াশঃঃ- (এই রে মুখ ফসকে বেরিয়ে গেল) আরে এসব বাদ দে। নূর বল কি গেইম খেলবে?

সবাই মনোযোগ দিল।

নূরঃঃ- তাহলে শোন। জীবনের একটি হাস্যকর ঘটনা কি ঘটেছে বলতে হবে। আমার ডানপাশ থেকে শুরু করি। পর পর সবাইকে বলতে হবে। (সবাই রাজি হলো। এই সুযোগে বিনোদনও পাবে।)

আলিফাঃঃ- ছোট বেলা থেকেই আমি আর মেহের একসাথে বড় হয়েছি। সমবয়সী হওয়ায় আমরা একই রকমের জামা পড়তাম। ক্লাস টু তে থাকতে। আমি একটা মেয়ের চুলে চুইংগাম লাগিয়ে লুকিয়ে পড়ি। মেয়েটি তার মাকে নিয়ে আমাদের ঘরে নালিশ করে। মেহের আর আমি একই জামা পরাই মেয়েটা কনফিউজ হয়ে যায়। আর সব দোষ এসে পড়ে মেহেরের ঘাড়ে। সেই কি খেলানি খাইছিল ওই দিন।

সবাই হাসছে। মেহের রেগে আলিফাকে কয়েকটা লাগিয়ে দিল মাইর।

মেহেরঃঃ- আমি তো জানতাম এই কান্ড আলিফার। তাই আমার খেলানির প্রতিশোধ নিতে রাতে গিয়ে কাচি দিয়ে ওর চুল গুলো কেটে ছোট ছোট করে দেয়। তারপর ওকে বলি মিথ্যা বলায় ইঁদুর ওর চুল খেয়ে নিয়েছে। তার পরের দিন সে সবাইকে সত্যি বলে দেয়। এরপর নিজে খেলানি খায়।

আলিফাঃঃ- তার মানে তুই করেছিস সব। (তারপর আলিফা উল্টো খেলানি দিল মেহেরকে। সবার হাসতে হাসতে পেট ব্যাথা হয়ে গেল।)

আমরিনঃঃ- ক্লাস নাইনে থাকতে একবার আম্মুকে বলি আজ রান্না আমি করব। একটা ভিডিও দেখে নতুন রেসিপি শিখলাম। যাতে ডিস্টার্ব না হয় আম্মুকে কিচেনের বাইরে পাঠিয়ে দেয়। আমি রেসিপি অনুযায়ী সব করি। খাবারের রূপ রং দেখতে ভীষণ সুন্দর হয়েছে। এক ঘন্টা পর খাবার নিয়ে সবাইকে সার্ভ করি।

আহিলঃঃ- এখানে হাস্যকর কি হলো?

আমরিনঃঃ- হাস্যকর? (মুখ লটকিয়ে ফেলল) চুলা জ্বালাতেই ভুলে গিয়েছিলাম। খাবার মুখে দেওয়ার পর সবার বমি শুরু হয়ে গিয়েছিল।

আহিলঃঃ- ও মা গো…….. (হাসতে হাসতে ওয়াসিমের গায়ে ঢলে পড়ল)

ওয়াসিমঃঃ- হাসা বন্ধ কর। বিয়ের পর সব রেসিপি তোকেই খাওয়াবে।

মূহুর্তে আহিলের হাসি উড়ে গেল। বাকিরা হাসতে হাসতে লুটিয়ে পড়লো।

আরিফঃঃ- আমি আর ইয়াশ স্কুল থেকে আসছিলাম। ছোট বেলায় আমরা রিকশার পিছনে ছড়ে যেতাম। তো একদিন হলো কি (আরিফ হেসে কুটিকুটি হয়ে যাচ্ছে) আমি আর ইয়াশ উঠে গেলাম রিকশার পিছনে। কিছু দূর গিয়ে আমি নেমে পড়ি। ইয়াশ বেচারা নামতে পারল না। রিকশা খুব দ্রুত চলছিল। নামার সুযোগও নেই। তো ইয়াশ আটকা পড়ল। নামতে না পেরে সে কি কান্না। কিন্তু রিকশা থেকে নামলো না। রিকশায় ঝুলে ছিল। তার কান্নার আওয়াজে রিকশা থামায়। থামার সাথে সাথে সে ভৌ দৌঁড়। অলিম্পিক রেসের মতো।

(সবাই পেট ধরে হাসতে লাগলো। ইয়াশ বেচারা লজ্জায় শেষ।)

মেহেরঃঃ- ওরেএএএএএ থাম এবার প্লিজ। হাসতে হাসতে আমার পেট ব্যাথা হয়ে গেল। আমি আর পারছি না।

সিমাঃঃ- আর তো হাসতে হাসতে নিশ্বাস বন্ধ হয়ে আসছে।

ইয়াশঃঃ- আমারটা বললি এবার তোরটা আমি বলি। স্কুল ছুটিতে গ্রামে ফুফির বাসায় গেলাম ছুটি কাটাতে। আমি আরিফ রাতুল ভাইয়া। গ্রামে ঘুরছিলাম। ঘুরে ফিরে বাসায় এসে দেখি ফুফা গরুর দুধ ধোয়াচ্ছে। আরিফ দ্যা গ্রেটের শখ উঠলো। সেও দুধ ধোয়াবে। ফুফা অনেক বারণ করল। কিন্তু সে জেদ ধরে বসে আছে। করবে মানে করবে। তাই ফুফা হার মেনে তাকে দিল। সাবধানে কাজ করতে বলল। যেই না গরুর পাশে গেল পিছন থেকে এক লাত্থি দিল। বেচারা গিয়ে পড়ল গোবরের উপর। মুখ তো একেবারে গোবরে লেপ্টে গেল।

আলিফাঃঃ- ওরেএএ তাই বলি এত ফর্সা কেন। ছোট বেলায় যে ফেসিয়াল করেছে তারই কামাল এটা।

হাসতে হাসতে কাইত হয়ে গেল সবাই।

.
.
.

চলবে.