Ragging To Loving Part-35+36

0
696

😠 Ragging To Loving 😍
Part:: 35
Writer:: Ridhira Noor

আফরান হাসতে হাসতে এক প্রকারে গড়াগড়ি খাচ্ছে। তার হাসিতে বাকিরাও এসে যোগ দিল। রিহান ওয়াসিম আহিল আরিফ ইয়াশ তারাও আফরানের সামনে এসে দাঁড়াল। আফরান হাসতে হাসতে হাত উপরে তুলল রিহান আহিল তার দুই হাত ধরে টেনে তুলল। আফরান মুখ চেপে হাসি বন্ধ করার অযথা চেষ্টা করছে। কোন ভাবে তার হাসি থামছে না।

নূরঃঃ- ঢং ! এত হাসার কি আছে এখানে। লাফিং গ্যাস দিছে না কি? হুহ্ কত সুন্দর পারফর্মেন্স দিলাম।

গাল দুটো ফুলিয়ে ঠোঁট উল্টিয়ে ফেলল। কপালে ভাজ পড়ায় চেহারাটা দেখতে ভীষণ মায়াবী লাগছে। আফরান হেসে গাল দুটো টেনে দিল। নূর ভ্যাবাচেকা খেল। এটা কি হলো?

আফরানঃঃ- ওলে লে লে কিউট পিউট লিটল বেবি। এসব বাচ্চামো চিন্তা শুধু মাত্র তোমার মাথায় আসবে। বার্থডে বেলুন দিয়ে…. (বাকিটা বলতে পারল না জোরে হেসে দিল। নূর রেগে সেদিক থেকে চলে গেল।)

পান্না রাগে জ্বলে পুড়ে হনহনিয়ে বাইরে গেল। তার পিছে পিছে তার বান্ধবী রিতা আর ঝিনুও গেল।

পান্নাঃঃ- হাউ ডেয়ার শী। ওর সাহস কি করে হয় আমাকে এভাবে সবার সামনে অপমান করার। আর আফরান? সেও কম না। নূরের হাসিতে সেও যোগ দিল। তাছাড়া কি আছে ওই সামান্য মিডল ক্লাস মেয়েটার মধ্যে। বারবার কেন তার কাছে ছুটে যায়? কেন সবসময় তার আগে পিছে ঘুরে। যতবার সে নূরের কাছে যেত ততবার কোন না কোন বাহানা দিয়ে তার থেকে দূরে নিয়ে যেতাম। কিন্তু তাও আফরান বারবার বারবার ওর কাছেই ফিরে যেত। কি আছে ওর মধ্যে? তোরা বল কি আছে ওই মেয়ের মধ্যে যা আমার মধ্যে নেই। ওকে দেখ গায়ের রঙ শ্যামলা, না আছে চেহারার শ্রী না আছে কোন ক্লাস। সামান্য মিডল ক্লাস ফ্যামিলির মেয়ে। আর আমাকে দেখ ভার্সিটির সব ছেলের ক্রাশ আমি। সব ছেলে আমার পিছন পিছন ঘুরে। আর আমি কি না আফরানের পিছে ঘুরি আর সে আমার দিকে ফিরেও তাকায় না।

ঝিনুঃঃ- আমি তো সেই আগেই বলে ছিলাম। আফরান যেন তোর হাত থেকে ছুটে না যায়। তুই বলতি কিছু হবে না। তোর মতো সুন্দরী মেয়েকে রেখে আফরান ওই কালো শ্যামলা চেহারার মেয়ের পিছনে যাবে না। এখন তুই নিজেই দেখ আফরান সারাক্ষণ শুধু তার আশেপাশে ঘুরে। আমি তো সেই প্রথম থেকেই ওর চাহনি দেখে বুঝেছিলাম যে নূরের প্রতি তার ফিলিংস আছে। তোকে বলার পরও পাত্তা দিস নি।

পান্নাঃঃ- (রেগে হাতে গায়ে যত গহনা ছিল সব ছুড়ে ফেলে দিল) আমি আফরান আর আমার মধ্যে কাউকে আসতে দিব না। কাউকেই না। নূরকেও রাস্তা থেকে সরিয়ে দিব। সরিয়ে দিব তাকে। যেভাবে সোহেলকে সরিয়েছি।

রিতাঃঃ- মানে?

পান্নাঃঃ- (এক তাচ্ছিল্য হাসি দিল) আফরান আর সোহেল ছোট বেলা থেকে বেস্ট ফ্রেন্ড। এতো বছরের বন্ধুত্ব এইভাবে ভেঙে গেল। এমনি এমনি? নো। আমি ভেঙেছি ওদের বন্ধুত্ব। কারণ সে আমার আর আফরানের মধ্যে আসার দুঃসাহস করেছে।

রিতাঃঃ- মানে? কি বলছিস তুই।
.
.
.
ভার্সিটির লাইফ শুরু হয় আফরানদের বন্ধুদের মজ মাস্তি দুষ্টুমি দিয়ে। সোহেল আর আফরান মিলে পুরো ভার্সিটি মাথায় তুলে রাখত। রিহান ওয়াসিম তারা সবাইও ওদের সাথে ফেসে যেত। ঝামেলা পাকাতো এই দুইজন ফেসে যেত সবাই একসাথে। আর তাদের ভাগের শাস্তি সবাইকে পেতে হতো। কিন্তু তাদের বন্ধুত্ব ছিল এমন যতকিছু হোক কেউ কাউকে দোষারোপ করত না। শাস্তিও সবাই একসাথে মাথা পেতে নিত। মাস খানেক পর ভার্সিটিতে এডমিট হয় পান্না। তার বাবা একজন বড় বিজনেসম্যান। আফরানের বাবাও একজন বড় বিজনেসম্যান সাথে ভার্সিটির ট্রাস্টিও। যার কারণে পান্নার বাবার সাথে আফরানের বাবার খুব ভালো পরিচয়। আফরানের বাবা পান্নাকে আফরানের সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়। যাতে ভার্সিটিতে কোন সমস্যা হলে আফরানকে বলে। এভাবেই পান্না আর আফরানের পরিচয় হয়। পান্না ভীষণ সুন্দরী। ভার্সিটিতে প্রথম দিনেই অনেকের ক্রাশ হয়ে যায়। তার রূপের প্রেমে পড়ে গেল সোহেলও। ভার্সিটিতে প্রথম দেখায় তার প্রেমে পড়ে যায়। কিন্তু ব্যাপারটা সে নিজের মধ্যেই রাখে। কারণ সে আবেগের বশে ছিল। পান্না আফরান ছাড়া কারো সাথে খুব একটা কথা বলত না। রিতা ঝিনু সেই আগে থেকে তার সাথে সাথে ঘুরত। তাই সোহেল চেয়েছিল আফরানের মাধ্যমে পান্নার সাথে বন্ধুত্ব করতে। সোহেল আফরান বেস্ট ফ্রেন্ড ছিল বিধায় সবসময় একে অপরের সাথে থাকত। পান্নাও মাঝে মাঝে আফরানের সাথে দেখা করত সে হিসেবে ধীরে ধীরে সোহেলের সাথেও তার টুকটাক কথা হতো। চারমাস এভাবে টুকিটাকিভাবে কেটে গেল। একদিন আফরান আর তার সব বন্ধুরা ক্যান্টিনে বসে আড্ডার আসর জমালো। খাবার অর্ডার দিচ্ছে এমন সময় সোহেল আর আফরান দুইজনেই বলে উঠল।

সোহেল-আফরানঃঃ- কোল্ড কফি। ঘন দুধ দিয়ে এক চামচ চিনি। সাথে ক্রিস্পি ওয়েফার চিপস।

একসাথে বলায় দুজনে একে অপরের দিকে তাকিয়ে হেসে দিল।

আহিলঃঃ- তোদের মধ্যে সব কিছুই মিল। খাবার থেকে শুরু করে পছন্দ অপছন্দ সব মিল। মাঝে মাঝে চিন্তা করি আফরান আর রিহান ভাই। নাকি আফরান আর সোহেল ভাই।

ওয়াসিমঃঃ- আর আমি চিন্তা করি এদের মধ্যে এত মিল যদি বউও একইজনকে পছন্দ করে তখন কি করবে?

সোহেলঃঃ- কি আর করবে আমি নিয়ে পালিয়ে যাব।

আফরানঃঃ- পালাতে হবে না। আমি নিজেই তাকে তোর হাতে তুলে দিব। যদি সেও তোকে ভালবাসে।

সোহেলঃঃ- ওরে আমার জানে জিগার দোস্ত…. (উঠে আফরানকে জড়িয়ে ধরল)

তাদের এসব কান্ড পান্না দূর থেকে দেখছিল। এসবে তার কিছু যায় আসে না। তাই কোন ভ্রুক্ষেপ না করে চলে গেল। পরের দিন সোহেল লাইব্রেরি থেকে আসছিল তখন দেখা হয় তার দুই বন্ধু ইমন আর রানার সাথে। সোহেল খুব পড়াকু ছেলে৷ প্রায় সময় লাইব্রেরি আসে। ইমন রানা তারাও বেশির ভাগ সময় লাইব্রেরি থাকে। একদিন এভাবেই লাইব্রেরিতে পড়ার চলে বন্ধুত্ব হয়।

ইমনঃঃ- কি রে সোহেল ইদানিং দেখি তুই লাইব্রেরিতে খুব একটা আসিস না।

সোহেলঃঃ- আরে তেমন কিছু না। বন্ধুদের সাথে থাকি তাই।

রানাঃঃ- বন্ধু নাকি বান্ধবী? কি চলে মামা। ইদানিং দেখছি পান্নার পিছনে ঘুরঘুর কর। আমরা তো তোমারই বন্ধু আমাদের বলতে পার। পারলে হেল্প করব।

সোহলঃঃ- (মাথা চুলকালো) আসলে আমি পান্নাকে পছন্দ করি। ভার্সিটির সব ছেলেই তার পিছনে লাট্টু হয়ে ঘুরে তা আমি জানি। কিন্তু আমি একটু বেশিই লাট্টু এই আর কি। (বলে হেসে দিল) আমি কিন্তু এখনো আমার বেস্ট ফ্রেন্ড আফরানকে সহ জানায়নি। কারণ আমি আগে পান্নার সাথে বন্ধুত্ব করতে চেয়েছি। তাকে ভালো ভাবে জানতে চেয়েছি। তার বয়ফ্রেন্ড আছে কিনা? তেমন কিছু নেই। এখন আমি আমার মনের কথা বলে দিব তাকে।

ইমনঃঃ- ও মামা ট্রিট চায় কিন্তু।

সোহেলঃঃ- অবশ্যই দিব। আগে পান্নাকে আমার মনের কথা বলি। যদি সে রাজি হয় তাহলে দিব। আফরানকেও পরে জানাবো। সারপ্রাইজ দিব। আচ্ছা চলি এখন।

সোহেল চলে গেল। পান্না পাশ দিয়ে হেটে যাচ্ছিল সোহেলের মুখে তার নাম শুনে থেমে যায়। এইমাত্র সোহেল যা বলল তা শুনে তার প্রচুর রাগ উঠে যায়।

পান্নাঃঃ- হাউ ডেয়ার হি। ওর সাহস কি করে হয় আমার কথা চিন্তাও করার। এই দুই টাকার কর্মচারীর ছেলে হয়ে আমার মতো একজন বিত্তশালী মেয়ের প্রেমে পড়ল। ওর কি যোগ্যতা আছে আমার সাথে প্রেম করার। প্রেম ভালবাসা নিজ লেভেলের সাথে হয়। যেমনটা আমার আর আফরানের মধ্যে রয়েছে। আমরা হাই ক্লাস ফ্যামিলির আর এই কি না সামান্য মিডল ক্লাস ফ্যামিলির হয়ে আমার সাথে প্রেম করবে? নো। নেভার। আমার ক্লাস শুধু আফরানের সাথে যায়। আর আফরান শুধু আমার হবে। ওকে আমি আমার করেই ছাড়ব। ভালোই হলো সোহেল আফরানকে আমার সম্পর্কে কিছু বলে নি৷ আফরান আমার দিকে তেমন তাকায়ও না। এখন যদি সোহেলের আমার প্রতি ফিলিংসের ব্যাপারে জানতে পারে তাহলে সে আমার কাছ থেকে দূরে চলে যাবে। আর এটা আমি মেনে নিব না। যেই করে হোক আফরান শুধু আমার হবে। ওকে আমি আমার করবই করব। বাই হুক অর বাই ক্রুক। এর জন্য যদি সোহেলকে সরাতে হয় তাই করব। তাদের বন্ধুত্বই ভেঙে দিব। যাতে সোহেল আফরানকে কিছু বলতে না পারে।
_______________________________

সোহেলঃঃ- আজ ভ্যালেন্টাইন্স ডে। আজকে আমি পান্নাকে প্রোপজ করব। (একগুচ্ছ লাল গোলাপ নিয়ে ভার্সিটিতে এলো। আফরানরা যাতে না দেখে তাই সে চুপিচুপি এলো। কারণ সে আগে পান্নাকে তার মনের কথা বলতে চাই। তারপর বাকিদের জানাতে চাই। পান্নাকে সারা ভার্সিটি খুঁজে দেখল। অবশেষে পেয়ে গেল মিউজিক রুমে। দরজার আড়ালে দেখল পান্না ফোনে কথা বলছে। বাইরে থেকে তার দিকে মুচকি হাসলো। হাতের গোলাপগুলো ভালো করে ঝেড়ে নিয়ে নিজেকে পরিপাটি করল। যেই না দরজা খুলে প্রবেশ করবে অমনি পান্নার কথা শুনে থমকে যায়।)

পান্নাঃঃ- কি বলছ আফরান? হাহাহা সত্যি সোহেল তোমার চাকর? আমি তো ভেবেছিলাম তোমার ফ্রেন্ড। কিসের ফ্রেন্ড মানে? কি? সে শুধু কুকুরের মতো করে তোমার আগে পিছে লেজ গুটিয়ে ঘুরে? হাহাহা তুমি না অনেক ফানি। সে তোমার দয়ায় আছে? তোমার দেওয়া ফেলনায় তার জীবন চলে। সত্যি তুমি অনেক দয়াবান। নাহলে সামান্য একজন কর্মচারীর ছেলেকে বন্ধুর মতো করে কে দেখে?

সোহেলঃঃ- (আফরান এসব বলছে আমার ব্যাপারে? না না আমিই হয়তো ভুল ভাবছি। হাজারো চিন্তা ঘুরছে মাথায়।)

পান্নাঃঃ- (এর দেখি কোন রিয়েকশনই নেই।) আমার না বিশ্বাস হচ্ছে না। (তখনই ফোন লাউডে শব্দ আসে) “” আরে হ্যাঁ সত্যি বলছি।”” (সাথে সাথে পান্না ফোনের আওয়াজ কমিয়ে দেয়) উফফো এই ফোন। হ্যাঁ আফরান বল।

ফোনে আফরানের আওয়াজ শুনে সোহেল মন খারাপ করে দাঁড়িয়ে আছে। এত বছরের বন্ধুত্ব। যাকে আজীবন ভাইয়ের মতো করে দেখে এসেছে সে কিনা সামান্য একজন কর্মচারীর ছেলে মনে করে।

পান্নাঃঃ- আচ্ছা সোহেলের বাবা তোমাদের অফিসে কাজ করে তাই না? হাহাহা কি বলছ? সোহেলের বাবা তোমার বাবার দয়ায় তার পায়ের নিচে থাকে? আর সোহেলও আজীবন তোমার পায়ের নিচে থাকবে। উফফ আফরান তুমিও না। অনেক হাসলাম আজ তোমার কথা শুনে। (আড়চোখে সোহেলের দিকে তাকাল। সোহেলের চেহারায় রাগ স্পষ্ট ফুটে উঠেছে। তার মানে কাজ হয়েছে।)

হাতে থাকা গোলাপগুলো দুমড়ে মুচড়ে নিচে ফেলে পা দিয়ে পিষে দিল।

সোহেলঃঃ- (আমাকে বন্ধু ভেবে হোক চাকর ভেবে হোক যা বলেছিস আমি মেনে নিতাম। হয়তো আজীবন তোর পিছন পিছনই ঘুরতাম। কারণ আমি তোকে বন্ধু ভেবে এসেছি। কিন্তু তুই আমার বাবা সম্বন্ধে যা কিছু বললি তা আমি কখনো মেনে নিব না। আমার বাবা কারো দয়ায় পড়ে নেই। নিজের কাজের যোগ্যতায় তোর বাবার অফিসে কাজ করে। এতদিন যা কিছু আমি বন্ধুত্ব ভেবেছিলাম সেসব তোর কাছে আমার প্রতি দয়া ছিল। আমার তোর দয়ার কোন প্রয়োজন নেই। নেই কোন প্রয়োজন।)

সোহেল রেগে চলে গেল। তার যাওয়ার পানে তাকিয়ে পান্না এক পৈশাচিক হাসি দিল।

পান্নাঃঃ- আমিও জানতাম তুমি এমনি এমনি বিশ্বাস করবে না। তাই কথার ফাঁকে আফরানের আওয়াজ রেকর্ড করে নেই। তারপর এডিট করে তোমাকে শোনায়। এসব শোনার পরও হয়তো বন্ধুত্বের খাতিরে কিছু বলতে না। কিন্তু যদি তোমার বাবা সম্পর্কে কিছু বলে তাহলে নিশ্চয় তোমার গায়ে লাগবে। ওহ পান্না ইউ আর গ্রেট।

তারপর থেকে সোহেল আফরানের প্রতি উখড়ে উখড়ে থাকত। কথায় কথায় খোঁচা দিত। সোহেল তার বাবাকেও অফিস ছাড়ানোর অনেক চেষ্টা করে। কিন্তু তার বাবা কোন ভাবে রাজি হয় না। কারণটা সোহেল তার বাবাকে বলতে পারছে না। বেশ কিছু দিন পরই সোহেল আর আফরানের মধ্যে ঝগড়া হয়। তাদের বন্ধুত্ব ভেঙে যায়।
.
.
.
ঝিনুঃঃ- হোয়াট? এত কিছু হয়ে গেল তুই আমাদের একটু জানালিও না।

পান্নাঃঃ- কারণ দেয়ালেরও কান আছে। তোদের জানালে কথাটা নানাভাবে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আফরানের কাছে পৌঁছাতো। আর সে আমার কাছ থেকে দূর হয়ে যেত। যার জন্য এত কিছু করেছি সেই যদি না থাকে তাহলে কেমনে হবে? এনি ওয়েস। এখন কথা সোহেলের না। এখন কথা নূরের। ওর কিছু একটা করতেই হবে। আর এমনভাবে করতে হবে যাতে কেউ টের না পায়। কারণ আফরান সবসময় নূরের আশেপাশে থাকে। একটু কিছু হলেই আফরান খবর পেয়ে যাবে। নূর… নাও জাস্ট ওয়েট এন্ড ওয়াচ। আফরানকে আমি কাউকে ছিনিয়ে নিতে দিব না। যেই আমাদের মাঝে আসবে তাকে সরিয়ে দিব।
_______________________________

আলিফাঃঃ- বোন রে বোন এত চিন্তা নিয়ে তুই ঘুমাস কেমনে? মাথা ব্যাথা করে না এই গোবর ভরা মাথা নিয়ে থাকতে।

নূরঃঃ- ওই ফকিন্নি কি বললি? আমার মাথা গোবর ভরা?

আলিফাঃঃ- সেটা আবার বলতে হয় নাকি? তা সবাই জানে। (নূরের চেহারার দিকে তাকিয়ে দেখে রাগে লাল হয়ে আছে। বুঝতে পারছে এখন তার উপর দিয়ে সুনামি যাবে তাই আর এক মূহুর্ত না থেকে দিল দৌড়। তাকে দৌড়াতে দেখে নূরও তার পিছে দৌড় দিল।)

নূরঃঃ- তোকে আমিইইই……. ইইইইইই

দৌড়াতে গিয়ে কারো সাথে ধাক্কা খায়। সরি বলতে উপরে থাকি দেখে সোহেল। সোহেল আর নূরের আজ পর্যন্ত সামনাসামনি দেখা হয়নি। এমনি দূর থেকে একে অপরকে দেখত। সোহেলকে দেখে আফরানের বলা সেই কথাগুলো মনে পড়ে গেল।

নূরঃঃ- সরি। খেয়াল করি নি।

সোহেলঃঃ- ইটস ওকে। (মুচকি হাসলো)

নূরঃঃ- (আফরানের ব্যাপারে কিছু জিজ্ঞেস করব?) আপনি আফরানের বন্ধু না?

সোহেলঃঃ- (নূরের কথা শুনে রেগে গেল) ও আমার কেউ না। (বলে রেগে চলে গেল)

নূর পিছন ফিরে দেখে আলিফা ভেঙচি কাটছে। রাগী লুক দিয়ে আবার তার পিছে দৌড় দিল। আলিফা গিয়ে লুকালো আফরানের পিছে। আলিফা হঠাৎ এভাবে আসায় আফরান সামনে তাকিয়ে দেখে নূর দৌড়ে আসছে। কিন্তু ভারি ড্রেসআপের জন্য ভালো করে দৌড়াতেও পারছে না। নূর তেড়ে আসতেই আলিফা পিছন থেকে আফরানকে ধাক্কা দিয়ে দৌড় দিল। আফরান গিয়ে পড়ল নূরের উপর। নূর পড়ে যেতেই আফরান তার কোমর জোড়ে ধরে। নূর চোখ খিছে বন্ধ করে আফরানের শার্ট আঁকড়ে ধরে। হালকা মিটমিট করে চোখ খুলে। আফরান নূরের চোখে তাকিয়ে আছে।

আফরানঃঃ- (না জানি কেন বারবার তোমার চোখে আটকে যায়। এই চোখ জোড়ায় কি এমন আছে যা আমাকে টানে। একবার চোখ পড়লে ফেরাতে ইচ্ছেই করে না। ইচ্ছে করে হারিয়ে যায় এই চোখে। মনে মনে এসব ভাবতে ভাবতে পিছন থেকে আলিফা কাশি দিল।

আলিফাঃঃ- কি হলো জিজ…. ভাইয়া? পারফর্মেন্স তো শেষ। আর এই সিন তো ফিল্মে ছিল না। (বলে মিটমিট করে হাসছে। তার কথা শুনে বাকিরাও হাসছে। আফরান তড়িঘড়ি নূরকে দাঁড় করালো।)

অবশেষে ফেয়ারওয়েল পার্টি শেষ হলো।

সময় পেরিয়ে আট মাস কেটে গেল। তাদের ফাইনাল এক্সাম শেষে সবাই নিজ নিজ ক্যারিয়ারের দিকে অগ্রসর হলো। ইয়াশ আরিফ মিলে একটা আর্ট গ্যালারি খুলল। সেখানে তারা নিজেদের তোলা সব ছবির প্রদর্শন করে। বিভিন্ন নামি দামি মানুষ তাদের বিলাসিতার জন্য সেসব অপরূপ দৃশ্যের ছবি ক্রয় করে। ইয়াশ মেহের ফোনে কথা বলে। কিন্তু বন্ধু হিসেবে। এখনও নিজেদের ফিলিংস একে অপরের কাছে ব্যক্ত করতে পারে নি। বন্ধুত্বের খাতিরে ভালবাসা দাবিয়ে রাখল। আলিফার মনে সেই কষ্টটা রয়ে গেল। দূর থেকে আরিফকে ভালবেসেছে। মনের কথা বলার সাহস যোগাতে পারে নি। মনে এক ভয় ছিল যদি আরিফ না করে দেয়? তাহলে ভীষণ কষ্ট পাবে। তার চেয়ে বরং নিজের মতো করে ভালবেসে যাক। আহিল তার বাবার বিজনেস সামলায়। ওয়াসিম সফটওয়্যার কোম্পানিতে উচ্চ পদে চাকরি করে। রিহান আর আফরান তাদের ফ্যামিলি বিজনেসে জয়েন করে। তাদের টেক্সটাইল কোম্পানিতে। নূর আর তার বান্ধবীরা ফাইনাল এক্সামের প্রস্তুতি নিচ্ছে।

আহিল ওয়াসিমকে ফোন করল।

আহিলঃঃ- কেমন আছিস?

ওয়াসিমঃঃ- ভালো। তুই কেমন আছিস?

আহিলঃঃ- ভালো। (টুকিটাকি কথা বলল বন্ধুর সাথে) আরে ভালো কথা মনে পড়ল। আমার আর আমরিনের রিলেশনের চার বছর হতে চলল।

ওয়াসিমঃঃ- আমার আর সিমারও।

আহিলঃঃ- আব্বে ওই তোর আর আমার রিলেশন একই দিনেই হয়েছিল। ভুলে গেছিস? এখন কথা সেটা না। কথা হলো তাদের সবার সাথে দেখা হয়েছে সেই কবে। আমার বোনটাকেও মিস করছি। ওর খুরাফাতি কাহিনি গুলো মিস করছি। আমি ভাবছিলাম কেননা সবাই মিলে রিহান আফরান ইয়াশ আরিফ তুই আমি সহ সবাই একসাথে ভার্সিটিতে গিয়ে ওদের সারপ্রাইজ দেয়।

ওয়াসিমঃঃ- নট এ বেড আইডিয়া। এমনিতে আমরা বন্ধুরা মাসে একবার অন্তত দেখা করি। কেননা ওই দিন আমরা ভার্সিটি যায়। পুরনো কিছু স্মৃতিও তাজা হয়ে যাবে।

আহিলঃঃ- গ্রেট। তাহলে আগামী সোমবারেই আমরা যাচ্ছি। কারণ সেই দিনই আমাদের রিলেশনের চার বছর পূর্ণ হবে।
.
.
.
আমরিনঃঃ- দেখনা আমাদের রিলেশনের আজ চার বছর হতে চলল। বিগত তিন বছর ধরে এই দিনে আহিলের সাথে ছিলাম। গত বছর শেষ বার এই দিন উদযাপন করেছিলাম। আর এইবার? তারই বা কি দোষ। তখন ভার্সিটিতে ছিল। আর আজ তার বাবার বিজনেস সামলাচ্ছে। সেসব ছেড়ে কি আর এখানে আসবে? (মন খারাপ করে এসব বলল। হঠাৎ মনে হলো কানের কাছে এসে কেউ বলল “” হাই মাই লাভ “”। আমরিন সাথে সাথে কেঁপে উঠল। পিছন ফিরে দেখে আহিল মুচকি হাসছে। আনন্দে আত্মহারা হয়ে আমরিন লাফিয়ে আহিলকে জড়িয়ে ধরল।)

ওয়াসিমঃঃ- এক্সকিউজ মি ম্যাডাম আজ কিন্তু আমাদেরও রিলেশন এনিভার্সারি। (সিমাকে বলল)

সিমাঃঃ- (সেও ঝাপিয়ে পড়ল ওয়াসিমের বুকে) কিভাবে ভুলতে পারি সেটা। কত মিস করছিলাম তোমাকে।

ইয়াশঃঃ- আহারে আমাদের কেউ মিস করে না।

মেহেরঃঃ- এই আমি মিস করছি তোমাকে। (বলেই হালকা জিব বের করে কামড় খেল।)

পুষ্পও রিহানকে জড়িয়ে ধরল। আলিফা আরিফের দিকে এক ধ্যানে তাকিয়ে আছে। তারও খুব ইচ্ছে করছে এভাবে আরিফকে জড়িয়ে ধরতে। কিন্তু পারছে না। হঠাৎ তার খুব কান্না পাচ্ছে। তাই ওয়াশরুমে যাবে বলে চলে গেল। আফরান নূরের দিকে তাকিয়ে দেখে নূর চুপচাপ মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে। একটি বার আফরানের দিকে ফিরেও তাকাচ্ছে না। এমনিতে কত কথা বলত, ঝগড়া করত, দুষ্টুমি করত। আফরান সেগুলো খুব মিস করছিল। আহিলের একবার বলাতেই সে রাজি হয়ে যায়। ফেয়ারওয়েল পার্টির পর থেকে আজ তাদের দেখা হলো। আহিল ওয়াসিম রিহান তারা মাঝে মাঝে ডেইটে যেত। আমরিন সিমা পুষ্পর সাথে দেখা করত। ইয়াশও মাঝে মাঝে ভিডিও কলে মেহেরের সাথে কথা বলত। আরিফ আর আফরানের সাথে তাদের যোগাযোগ সম্পূর্ণ বন্ধ ছিল।

আফরানঃঃ- (খুব ইচ্ছে করছে তোমার আওয়াজ শোনার। কিছু তো একটা বল। প্রতিটি মুহূর্ত শুধু তোমার কথায় ভাবতাম। মাঝে মাঝে অফিসে যাওয়ার সময় সবার আড়াল হয়ে এই পথ দিয়ে যেতাম যাতে একটি বারের জন্য হলেও তোমাকে দেখি। কখনো দেখা হতো কখনো হতো না। কিন্তু তোমার সামনে আসার সাহস হয়নি। সামনে আসলেই বা কি বলতাম। আমি নিজেও জানি না কেন বারবার তোমার কাছে ছুটে আসি। জানি না আমি। সেই প্রশ্নের উত্তর আমার কাছে নেই।)

নূরঃঃ- (কেন এসেছেন উনি? ঢং করতে? এতদিন তো আসেনি। এখন আসছেন ঢং দেখাতে।)

নূরের মনে হাজারো অভিমান জমে আছে। কিন্তু কেন এত অভিমান? কোন অধিকারে এই অভিমান খাটাচ্ছে। শুনেছি অভিমান শুধু আপন মানুষের সাথেই হয়। তাহলে নূর কেন আফরানের উপর অভিমান করে আছে। কিসের অধিকারে? তা অজানা নূরের কাছে।

নূর মাথা নিচু দাঁড়িয়ে আছে। হঠাৎ কেউ একজন দৌড়ে এসে নূরকে জড়িয়ে ধরল। তাল সামলাতে না পেরে দু পা পিছিয়ে যায়। মেয়েটি তাকে জড়িয়ে ধরে এদিক ওদিক হেলছে।

—নূরিইইইই। কতদিন পর পেলাম তোকে। কত্তো মিস করেছি তোকে।

হঠাৎ এসে জড়িয়ে ধরায় কেউ তার চেহারা দেখতে পেল না। নূরকে ছেড়ে দিল।

—এভাবে তাকিয়ে আছিস কেন? ভুলে গিয়েছিস আমাকে? হাই স্কুলে একসাথে পড়েছিলাম। আরে আমি মায়মুনা।

নূরঃঃ- মায়মুনা? যে আমার সাথে সবসময় ঝগড়া করত। বেঞ্চ নিয়ে।

মায়মুনাঃঃ- হ্যাঁ! ফ্যানের নিচে বসার জন্য দুজনে কত ঝগড়া করেছিলাম। অবশেষে একদিন আমাদের বন্ধুত্ব হয়েছিল।

আফরানঃঃ- (অবাক হয়ে তাদের কান্ড দেখছিল) মায়মুনা? তুই এখানে কি করছিস?

মায়মুনাঃঃ- আফরান ভাই? তুমি?

নূরঃঃ- আপনারা একে অপরকে চেনেন?

আফরানঃঃ- মায়মুনা আমার ফুফাতো বোন। সাত বছর আগে আমেরিকায় পড়াশোনার জন্য গিয়েছিল। আর আজ দেখলাম। কিন্তু তুই এখানে কিভাবে? তোর না এক মাস পর এনগেজমেন্ট।

মায়মুনাঃঃ- ও আসলে আমি তার সাথে দেখা করতে এসেছি।

আফরানঃঃ- কার সাথে?

মায়মুনাঃঃ- যার সাথে আমার বাগদান হবে।

.
.
.

চলবে

😠 Ragging To Loving 😍
Part:: 36
Writer:: Ridhira Noor

আফরানঃঃ- কার সাথে তোর বাগদান?

মায়মুনাঃঃ- যার সাথে আমার বিয়ে।

আফরানঃঃ- উফফ মায়মুনা। তোর কথা পেঁচানোর অভ্যাস গেল না। আগে তো আমাকে কত ভয় পেতি। কিন্তু আমেরিকায় যাওয়ার আগে পুরো বদলে গেলি৷ কেমন যেন ঝগড়াটে হয়ে গেলি। সব কথার উল্টো জবাব দিতি।

মায়মুনাঃঃ- সাব নূর কি কামাল হে। আগে আমিও ভীতু ছিলাম। নূরও আমার সাথে প্রচুর ঝগড়া করত। আমি কিছু বলতে পারতাম না। পরে যখন বন্ধুত্ব হয় তখন সেই আমাকে বলেছিল। যদি কেউ এক কথা বলে তাকে দশ কথা বলতে। সবসময় ত্যাড়া উত্তর দিতে। তাহলে আর কেউ ধমিয়ে রাখতে পারবে না। আফরান ভাই আমাকে প্রচুর প্যারা দিত। পরে নূরের আইডিয়া কাজে লাগাই। এর পর থেকে ভাইয়া আমার সাথে ঝগড়ায় পারে না। হিহিহি।

আফরানঃঃ- হায় রে (কপালে হাত মারল) যখন তুই বলেছিস তুই নূরকে চিনিস তখনই আমার বোঝা উচিৎ ছিল। এসব ত্যাড়ামি শুধু সেই পারে শিখাতে। এমনি এমনি কি মিস খিটখিট ডাকতাম? যেমন ঝগড়াটে খালি খিটখিট করে।

নূরঃঃ- হ্যাঁ আমি তো ঝগড়াটে। সবসময় ঝগড়া করি। তাই তো আমার থেকে অতিষ্ঠ হয়ে একেবারে চলে গিয়েছেন। চিরতরে মুক্তি পেয়েছেন আমার কাছ থেকে। কেউ তো আর নেই যে শুধু শুধু ঝগড়া করবে। মুক্তি পেয়ে গেছেন এই খিটখিট থেকে। (হঠাৎই কণ্ঠস্বর ভেঙে গেল। কাঁপা কাঁপা গলায় বলল কথাগুলো। চোখের পানিও টলমল করছে। রেগে চলে গেল।)

আফরান ভ্যাবাচেকা খেয়ে দাঁড়িয়ে আছে। এইমাত্র কি হলো তা সব তার মাথার উপর দিয়ে গেল। নূর কখনো এমন করে না। সবসময় নিজে গায়ে পড়ে ঝগড়া করত। তার সাথে ঝগড়ায় না পেরে আফরানই চলে যেত। কিন্তু আজ নূর নিজেই চলে গেল। আফরান বাকরুদ্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।

মায়মুনাঃঃ- আফরান ভাই তুমিও না। কতদিন পর নূরকে পেলাম। ভেবেছিলাম পুরনো স্মৃতি স্মরণ করব। এখন সে রেগে চলে গেল। তোমাকে….. থাক আর কিছু বললাম না। নুরিইইইই দাঁড়া। (নূরের পিছনে দৌড় দিল।)

আফরানঃঃ- আমি তো এমনি বলেছি। নূর এভাবে রেগে গেল কেন?

পুষ্পঃঃ- ওটা রাগ নয় অভিমান।

আফরানঃঃ- কিসের অভিমান?

পুষ্পঃঃ- (আপনাদের আর শুধরানো যাবে না। আপনাদের মধ্যে ভালবাসা সবাই দেখছে। শুধু আপনারাই দেখছেন না। আর অভিমান হবেই না বা কেন? আট মাস ধরে না কোন দেখা। না কোন যোগাযোগ। ভালবাসার মানুষ যখন দূরে থাকে তার কষ্ট কেমন হয় তা আমি খুব ভালো করে বুঝি। সেই কষ্টই অভিমান হয়ে জমে আছে হৃদয়ের মাঝে। কিন্তু অন্য কারো বলার আগে আপনাদের নিজেদের বুঝতে হবে।) না মানে ঝগড়াটে বলছেন তো তাই।

আফরানঃঃ- সে তো আমি আগেও বলতাম। তখন তো এমন করে নি। হঠাৎ কি হলো আবার।

রিহানঃঃ- কেন? নূরের অভিমান করাই কষ্ট হচ্ছে বুঝি?

আফরানঃঃ- না মানে। অনেক দিন পর দেখা হলো। ভাবলাম দুষ্টুমি করব কিন্তু সে রেগে গেল তাই আর কি।

পুষ্পঃঃ- এখন রেগে যখন গেল তাহলে রাগ ভাঙান। জানেনই তো নূরের রাগ ভাঙানো সহজ না।

আফরানঃঃ- তুমি বোধ হয় ভুলে যাচ্ছ আমি কিন্তু আগেও নুরের রাগ ভেঙেছি।

সবাই একসাথে চিল্লিয়ে উঠলো “কখন?”

পুষ্পঃঃ- মনে আছে নূর একবার আমার উপর ভীষণ রেগে ছিল। তখন সরি কার্ড আর সাদা গোলাপ পেয়ে সব ভুলে গিয়েছিল। ওই কার্ড আর সাদা গোলাপ আফরান ভাইয়া নূরকে দিয়েছিল। কারণ নূর সেদিন আফরান ভাইয়ার উপরও কোন এক কারণে রেগে ছিল।

ওয়াসিমঃঃ- সিরিয়াসলি! আফরান এসব করেছে?

আফরানঃঃ- এতে এতো লাফানোর কি আছে। হুহ্ ঢং।

সবাই হেসে দিল।

ওয়াসিমঃঃ- তুই কিন্তু আস্তে আস্তে নূরের মতো হয়ে যাচ্ছিস। এখন যে বললি হুহ্ ঢং। এটা কিন্তু নূর বলে।

আফরানঃঃ- তো… তো… নূর বলে তাই আর কেউ কি বলতে পারবে না? এখন বল নূরের অভিমান কিভাবে ভাঙাবো?

মেহেরঃঃ- আপনি না আগেও নূরের রাগ ভাঙিয়েছেন। এখন আপনিই কিছু একটা চিন্তা করেন। কারণ আমাদের দ্বারা সেসব চিন্তা হবে না।

আফরান গভীর চিন্তায় পড়ে গেল।
_______________________________

মায়মুনাঃঃ- নূর শোন…. আহহহ (পা মচকে পড়ে যেতে কেউ একজন ধরে ফেলে। ভয়ে চোখ বন্ধ করে ফেলে। যখন বুঝতে পারল পড়েনি তখন পিটপিট করে চোখ খুলল। সামনে তাকিয়ে এক গাল হেসে দিল।) নিহাল….

নিহাল স্যারঃঃ- মায়মুনা তুমি? তুমি এখানে কি করছ?

মায়মুনাঃঃ- আগে আমাকে দাঁড় করান। সবাই দেখছে আমাদের। (নিহাল তাকে দাঁড় করালো) আপনাকে দেখতে এসেছি।

নিহালঃঃ- সেটা পরে। আগে বল আমেরিকা থেকে কবে ফিরেছ।

মায়মুনাঃঃ- আজকে। ফিরা মাত্রই লাগেজ মামার বাসায় পৌঁছে দিয়ে এখানে এলাম।

নিহালঃঃ- কিন্তু তুমি তো এখানকার কিছু চেনো না। কিভাবে এসেছ ভার্সিটিতে।

মায়মুনাঃঃ- উফফ ইন্টারোগেশন বন্ধ করুন। টিচার হয়েছেন বলে কি সবসময় প্রশ্ন করবেন নাকি? সবসময় খালি এক গাদা প্রশ্ন নিয়ে ঘুরেন। আমি এখানকার কিছু চিনি না। ড্রাইভার তো চিনে। উনাকে ভার্সিটির নাম বলেছি। উনি পৌঁছে দিলেন।

নিহালঃঃ- ওহ আচ্ছা। আমি ক্লাসে যায়।

মায়মুনাঃঃ- ক্লাসে যায় মানে? আমি এত দূর থেকে এলাম আপনার সাথে দেখা করতে আর আপনি কি না আমাকে ছেড়ে ক্লাসে যাবেন?

নিহালঃঃ- তুমি জানোই আমি একজন শিক্ষক। আর আমি আমার দায়িত্ব ছাড়তে পারব না।

মায়মুনাঃঃ- হ্যাঁ দেখছি আমেরিকায় আপনার দায়িত্ব। আমাকে শিখাতে হবে না।

নিহালঃঃ- এখনো সেটা নিয়ে পড়ে আছ? আর এমনিতেই এক মাস পর এনগেজমেন্ট হবে। তার দুই সপ্তাহ পর বিয়ে। তখন না সময় দিব।

মায়মুনাঃঃ- আচ্ছা। (মুখ লটকিয়ে ফেলল)

নিহাল চলে গেল ক্লাসে। মায়মুনা আশে পাশে তাকিয়ে নূরকে খুঁজছে। নূরের মাঠের একপাশে বড় পাথরের ব্লকে বসে আছে। মায়মুনা দৌড়ে তার কাছে গেল।

মায়মুনাঃঃ- নূর। কি হয়েছে তোর? এভাবে রেগে চলে এলি কেন?

নূরঃঃ- (সত্যি তো আমি শুধু শুধু রেগে গেলাম কেন? আফরান তো আমাকে আগেও এসব বলত। তখন তো এভাবে রেগে যায় নি। না হঠাৎ খুব ইচ্ছে হলো মনের সব রাগ তার উপর ঝাড়তে। ভালোই হয়েছে এত দিন আসেনি। এখন এসেছে ঢং করতে। উনাকে না জ্বালিয়েছি না তাহলে আমার নামও নূর না। হুহ্।)

মায়মুনাঃঃ- কি হলো বল।

নূর কিছু বলার আগেই আফরান গিটারের সুর তুলতে তুলতে তাদের দিকে এগিয়ে এলো। নূর ভেঙচি কেটে মুখ ফিরিয়ে নিল। আফরান শিষ বাজাতে বাজাতে নূরের চারপাশে ঘুরলো।

♪♪♪♪
মে কোয়ি এইসা গীত গাও……. কি আরজু জাগাও…….
“””””মে কোয়ি এইসা গীত গাও কি আরজু জাগাও আগার তুম কাহো……(২) “”””””
তুমকো বুলাও ইয়ে পালকে বিছাও কাদাম তুম যাহা যাহা রাখো……
জামি কো আসমান বানাও সিতারো সে সাজাও আগার তুম কাহো……
“””””” ঐ “”””””

(((নূর তো গাল ফুলিয়ে বসে আছে। আফরান বেবি ফেইস বানিয়ে ঠোঁট উল্টিয়ে করুণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। নূর কোন পাত্তাই দিচ্ছে না। কিন্তু মনে মনে ঠিকই হাসছে।)))

♪♪♪♪
মে তিতলিও কে পিছে ভাগু… মে জুগনুও কে পিছে জাগু…
ইয়ে রাং হে ও রোশনি হে তোমহারে পাস দোনো লাও….

((( আফরানের হাতের মুটোই কিছু রং ছিল। সেগুলো ফুহ দিয়ে নূর উপর মারল।)))

জিতনে খুশবুয়ে… বাগোও মে মিলে… (২)
মে লাও কে লাও তুম হো জাহা……

(((অনেক গুলো সাদা গোলাপ নূরের হাতে দিল)))

জাহাপে এক পাল ভি টেহরো মে গুলসিতা বানাও আগার তুম কাহো
“””” মে কোয়ি এইসা গীত গাও কি আরজু জাগাও আগার তুম কাহো………

নূর গোলাপ গুলো পেয়ে সব ভুলে গেল। এক গাল হেসে দিল। তার হাসি দেখে আফরানও হেসে দিল। নূর আবারও মুখের হাসি উধাও করে আফরানের দিকে তাকাল।

নূরঃঃ- (কেন এসব করছেন আমার জন্য? আমি রেগে গেলেই বা আপনার কি যায় আসে। এসবে তো আমার কোন অধিকার নেই। আর আমি বা কেন শুধু শুধু আপনার সাথে ঝগড়া করি। কেন চাই যে আপনি আমার রাগ ভাঙান। এসব তো অন্য কারো অধিকার।)

আফরানঃঃ- এত দিন পর দেখা হলো। এসব ঝগড়াঝাটি বাদ দিয়ে সেই পুরনো স্মৃতি মনে করি। দেখ সবাই একসাথে আছি অনেক দিন পর। আমাদের জন্য তাদের কেন ভুগতে হবে। সেই আগের মতো করে আবারও নতুন স্মৃতি তৈরি করি।

নূরঃঃ- (আসলেই তো। শুধু শুধু আমার জন্য কেন বাকিরা কষ্ট পাবে।) ঠিক আছে। এত করে যখন সরি বলছেন ইটস ওকে।

আফরানঃঃ- আমি কবে সরি বললাম?

নূরঃঃ- বলেননি? তাহলে বলুন সরি। আপনি আমাকে ঝগড়াটে ডাকছেন। আমি কি ঝগড়া করি?

আফরানঃঃ- (না ঝগড়া কোথায়? মুখ দিয়ে তো খই ফুটে।) আরে না। তুমি কোথায় ঝগড়া কর। ঝগড়া তো আমি করি। সরি ম্যাডাম জি। (হাত জোর করে)

নূরঃঃ- ইটস ওকে। আপনিও কি মনে রাখবেন কোন দয়ালুর পাল্লায় পড়ছেন। হুহ্। (ভাব নিয়ে চুল উড়ালো)

আহিলঃঃ- এই তো। এখন মনে হচ্ছে পুরনো নূরকে ফিরে পেলাম।

আলিফাঃঃ- কি হচ্ছে এখানে?

নূরঃঃ- আকাশ থেকে ৩ কি.মি. বেগে রসগোল্লা পড়ছে। সবাই হা হয়ে উপর দিকে তাকিয়ে আছি। যাতে রসগোল্লা সোজা মুখে পড়ে।

আলিফা রেগে আড়চোখে নূরের দিকে তাকাল। বাকিরা হাসছে।

সিমাঃঃ- তুই এত সময় ধরে কোথায় ছিলি।

আলিফাঃঃ- ওয়াশরুমে গিয়েছিলাম।

সবাই মিলে ভার্সিটির মিউজিক রুমে বসে আড্ডা জমালো। সবার একসাথে কাটানো পুরনো দিন গুলোর কাহিনি বলতে লাগলো। মায়মুনা তাদের একেকটার কাহিনি শুনে হাসছে।

মায়মুনাঃঃ- নূর যে এমন দুষ্টু তা আমি খুব ভালো করে জানি। কিন্তু তোমরা বাকিরাও যে এত দুষ্টু তা জানা ছিল না।

রিহানঃঃ- নূরের সাথে তোর পরিচয় কিভাবে হলো?

মায়মুনাঃঃ- ক্লাস টেনে থাকতে আমি নূর আর তার বান্ধবীরা একই সেকশনে ছিলাম। নূর আর তার বান্ধবীরা পুরো ক্লাস মাথায় তুলে রাখত। আর আমি ছিলাম শান্ত শিষ্ট। চেচামেচি পছন্দ করতাম না। যার কারণে নূরকেও খুব একটা পছন্দ করতাম না। তাদের সিট ছিল ফিক্সড। ক্লাসের শেষ তিনটা বেঞ্চে তারা সবসময় বসত। আমি ছিলাম ফার্স্ট বেঞ্চার। কিন্তু একদিন ফার্স্ট বেঞ্চের ফ্যান নষ্ট হয়ে যায়। আর গরম আমি সহ্য করতে পারি না। তাই পিছনে ফ্যানের নিচে বেঞ্চে বসলাম। আর সেই সিট ছিল নূরের। সেই কি তুমুল ঝগড়া বাঁধল আমাদের মধ্যে। অবশেষে আমাকে উঠতেই হলো। এরপর থেকে নূরকে আরো বেশি অপছন্দ করতাম। তার কিছু দিন পর আমাদের টেস্ট পরিক্ষা শুরু হয়। আমার পিছনের জন নকল নিয়ে এসেছিল। স্যার যখন সবার তালাশি নিচ্ছিল সে আস্তে করে তার নকল আমার ব্যাগে ঢুকিয়ে দিল। সেটা নূর দেখল তারপর সে স্যারকে বলে দিল। নূর যদি সেদিন না থাকত তাহলে আমার পুরো এক বছর শেষ হয়ে যেত। তাই নূরকে ধন্যবাদ জানিয়ে তার সাথে ফ্রেন্ডশিপ করি। খুব অল্প সময়ে নূর আমার বেস্ট ফ্রেন্ড হয়ে গেল। তার বান্ধবীদের সাথে খুব একটা কথা হতো না। কিন্তু নূরের সাথে নিজ থেকে সবসময় কথা বলতাম। অল্প সময়ে যেন চিরচেনা হয়ে গেলাম। মাধ্যমিক পরিক্ষা পর আমেরিকা চলে যায়। এরপর সব যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়। অবশেষে ভাগ্যের জোরে আজ পেয়ে গেলাম। নূর হয়তো আমাকে ভুলে গিয়েছে। কিন্তু আমি সবসময় ওর কথা মনে করতাম। আমাদের বিদায় অনুষ্ঠানের সব ছবি আজও যত্ন করে রেখে দিয়েছি। দিনে একবার হলেও সেগুলো দেখি।

নূরঃঃ- এখনো সেই ছবিগুলো আছে? আমি তো সব হারিয়ে ফেলেছি।

রিহানঃঃ- বাই দ্যা ওয়ে মায়মুনা তুই যে বললি তোর ফিওন্সের সাথে দেখা করতে এসেছিস। কে সে?

মায়মুনাঃঃ- তোমাদের ভার্সিটির টিচার। নিহাল।

কিইইইই????? সবাই একসাথে বলে উঠল।

আলিফাঃঃ- সিরিয়াসলি? নিহাল স্যার? কেমনে কি বোন। তুমি ছিলে আমেরিকায় আর স্যার ছিল বাংলাদেশে। কেমনে কি হলো।

মায়মুনাঃঃ- সে এক লম্বা কাহিনি।
.
.
.
মায়মুনা একজন মেডিকেল স্টুডেন্ট। আমেরিকার এক নামকরা “”কলেজ এন্ড হসপিটালে”” তার মেডিকেল প্রাকটিস করে। মায়মুনা হার্ট স্পেশালিষ্ট সেকশনের স্টুডেন্ট। গত বছর নিহাল তার বাবার হার্ট সার্জারির জন্য আমেরিকায় গিয়েছিল। সে একই হসপিটালে তার বাবাকে এডমিট করা হয় যে হসপিটালে মায়মুনা আছে। নিহালের বাবার সব দায় দায়িত্ব পড়ে মায়মুনার উপর। সেও খুব যত্ন সহকারে উনার খেয়াল রাখে। হঠাৎ নিহালের মায়ের বিপি বেড়ে যাওয়ায় নিহাল তার বাবাকে রেখে তার মাকে নিয়ে অন্য ডাক্তারের কাছে যায়। তার মায়ের যথাযথ চিকিৎসা করিয়ে তার বাবার কাছে আসে। তার কেবিনে প্রবেশ করেই সে থমকে যায়। নার্স, ডাক্তার সবাই এদিক সেদিক দৌড়াদৌড়ি করছে। তার বাবা ঘনঘন নিশ্বাস ফেলছে। নিহাল দৌড়ে তার বাবার কাছে গেল।

নিহালঃঃ- বাবা। বাবা কি হয়েছে তোমার? এমন করছ কেন?

মায়মুনাঃঃ- আপনি এত দায়িত্বহীন কিভাবে হতে পারেন। আপনি জানেন না উনার শরীর কতটা খারাপ। উনার সার্জারি করতে হবে। প্রতিনিয়ত উনার খেয়াল রাখা খুবই প্রয়োজন। স্যালাইনের খালি বাতাস উনার দেহে প্রবেশ করেছে। আমি আসতে যদি আর এক সেকেন্ড দেরি হতো তাহলে উনাকে বাঁচানো যেত না।

নিহালঃঃ- আই এম সরি বাবা। আমি বুঝতে পারিনি। (নিহাল তার বাবা মার একমাত্র সন্তান। তার কাছে তার বাবা মা-ই সব। তাদের বিন্দু পরিমাণ কষ্ট সে সহ্য করতে পারে না। তাই তো বাবার অপারেশনের জন্য দূরবর্তী দেশ আমেরিকায় পর্যন্ত চলে এসেছে।)

মায়মুনাঃঃ- আপনি বাইরে যান আমি দেখছি৷

দীর্ঘ তিন সপ্তাহ নিহালের বাবা হসপিটালে ছিলেন। উনার সার্জারিও যথাযথ ভাবে সম্পন্ন হলো। মায়মুনা হসপিটালের হোস্টেলে থাকে। এখানে সবাই তার অপরিচিত। দুই এক জনের সাথেই তার বন্ধুত্ব। কিন্তু নিহালের বাবা মার সাথে তার খুব খাতির জমে যায়। জমবে নাই বা কেন। দীর্ঘ সময় পর আপন দেশের মানুষদের পেল। মায়মুনাও নিহালের বাবার পাশাপাশি তার মায়েরও খেয়াল রাখে। নিহালের পরিবারের প্রতি মায়মুনার আন্তরিকতা দেখে নিহালও ধীরে ধীরে মায়মুনার প্রতি দুর্বল হয়ে পড়ে। মায়মুনার ক্ষেত্রেও ব্যতিক্রম নয়। কথায় কথায় নিহালকে খোঁচা দিত যে সে দায়িত্ব পালন করে না। এরই মাঝে সেও নিহালের প্রতি দুর্বল হয়ে পড়ে। তাদের মধ্যে এই দুর্বলতা নিহালের বাবা মা লক্ষ্য করে। তারপর মায়মুনার মামা অর্থাৎ আফরানের বাবার সাথে কথা বলে। ছোটবেলায় মায়মুনার বাবা মা মৃত্যু বরণ করে। আফরানের পরিবারই তার দায় দায়িত্ব নেই। মায়মুনার মেডিকেল প্রাকটিস শেষে আজ দেশে ফিরে। আর আগামী মাসেই তাদের বাগদান অনুষ্ঠানের তারিখ ঠিক করা হয়।
.
.
.
মায়মুনাঃঃ- এই ছিল কাহিনি। বাংলাদেশ টু আমেরিকা।

রিহানঃঃ- তলে তলে টেম্পু চালিয়ে এত দূর চলে গেলি। তোর যে দুইটা বড় ভাই আছে তাদের জানানো উচিৎ ছিল না?

মায়মুনাঃঃ- আমার বড় দুই ভাই যে হাইওয়েতে বাস আর ট্রাক চালাচ্ছে আমাকে তো বলে নি।

আফরানঃঃ- আমি আবার কি করলাম। রিহান না হয় বাস চালাচ্ছে।

মায়মুনাঃঃ- থাক আর ঢং করতে হবে না। আমরা শিশু না। কোথায় কি চলে তা আমরা দেখি। (নূরের দিকে তাকিয়ে বলল কথাগুলো)

আফরান একটু নড়েচড়ে বসল। নূরও এদিক সেদিক তাকাচ্ছে।

মায়মুনাঃঃ- এখন মূল বিষয়ে আসি। আগামী মাসের ২০ তারিখ আমার এনগেজমেন্ট। আপনজন বলতে মামা মামনিরাই আছে। বন্ধু বান্ধবও খুব একটা ছিল না। দুই একজন যা ছিল আমেরিকায়। এখানে নূর আছে। সিমা আমরিন জানি তোমাদের সাথে তেমন পরিচয় নেই। কিন্তু বান্ধবী হিসেবে আমার জীবনের এই গুরুত্বপূর্ণ সময়ে তোমাদের চাই। থাকবে কি?

সিমাঃঃ- অবশ্যই থাকব।

আমরিনঃঃ- মায়মুনা তুমি এগিয়ে চল। আমরা আছি তোমার পাশে। (স্লোগান দিয়ে বলল)

সবাই হেসে উঠল।
_______________________________

বেডের উপর অনেকগুলো জামা পড়ে আছে। মায়মুনা এক হাত কোমরে দিয়ে অন্য হাতের নখ কামড়াচ্ছে। একেকবার একেকটা জামা নিয়ে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে দেখছে। অবশেষে না পেরে ফোন দিল নূরকে।

মায়মুনাঃঃ- নূরিইই। ভ্যায়ায়া (ন্যাকা কান্না করছে) সন্ধ্যায় নাকি আমার এনগেজমেন্ট। আমি এখনো জামা বাছাই করতে পারি নি। বিকালে পার্লার থেকে মেকআপ আর্টিস্ট আসবে। কিন্তু আমি কিছুই ঠিক করিনি। তোরা এখন আয় না প্লিজ। আমার কান্না পাচ্ছে।

নূরঃঃ- থাম মা আমার। নাটক করতে হবে না। তোর আশেপাশে কেউ নেই? কারো থেকে জিজ্ঞেস কর। নিহাল স্যারকে জিজ্ঞেস কর।

মায়মুনাঃঃ- উনার জন্যই তো সাজব। সারপ্রাইজ দিব। উনাকে জিজ্ঞেস করলে আর কি সারপ্রাইজ দিব। আর কথা হলো বাকিদের। সবাই আয়োজনে ব্যস্ত। বড় মামনি ছোট মামনি রান্নার কাজে ব্যস্ত। আফরান ভাই আর রিহান ভাই ডেকোরেশন কাজে ব্যস্ত। আর কেউ নেই যে জিজ্ঞেস করব। আমি একা রুমে বসে আছি। এই সময় বন্ধু বান্ধবীরা পাশে থাকে। কিন্তু আমার কাছে কেউ নেই। (মন খারাপ করে বলল)

নূরঃঃ- থাক আর ইমোশনাল ব্ল্যাকমেইল করতে হবে না। আমরা যে আসব এড্রেস তো জানি না।

মায়মুনাঃঃ- আফরান ভাইয়ার বাড়িতে অনুষ্ঠান হবে।

নূরঃঃ- তো চিনি না কি?

মায়মুনাঃঃ- কি বলিস! এত বছরে ভাইয়া একবারও তোকে বাসায় আনলো না? আচ্ছা সেসব পরে। তোরা ভার্সিটির সামনে আয় আমি কাউকে পাঠাচ্ছি তোদের পিকআপ করতে।

নূরঃঃ- ওকে।

.
.
.

চলবে