Ragging To Loving Part-37+38

0
631

😠 Ragging To Loving 😍
Part:: 37
Writer:: Ridhira Noor

মায়মুনা ফোন রাখতেই নূর অপর পাশ থেকে বলে উঠল।

নূরঃঃ- শোন শোন শোন।

মায়মুনাঃঃ- বল।

নূরঃঃ- দুই ঘন্টা পর আসতে বলিস। আমার কিছু কাজ আছে।

মায়মুনাঃঃ- আচ্ছা ঠিক আছে।

মায়মুনার সাথে কথা বলে নূর বাকিদের জানিয়ে দিল। আফরান বাইরে ডেকোরেটারস এর সাথে কথা বলছি তখন রিহান দৌড়ে এলো।

রিহানঃঃ- কি রে তোর ফোন বিজি কেন?

আফরানঃঃ- ফোনে কথা বলছিলাম তাই। কি হয়েছে?

রিহানঃঃ- আমাদের কোম্পানির ইনভেস্টার যার সাথে পার্টনারশিপ ছিল উনি তার শেয়ার কোন এক নতুন টেক্সটাইল কোম্পানির কাছে বিক্রি করে দিয়েছে। এস. টি. টেক্সটাইল কোম্পানি। এক্ষুনি তোকে অফিসে যেতে হবে। সেই কোম্পানির মালিক আধ ঘন্টা পর আসছে মিটিং এর জন্য। আর যেই ডিল হচ্ছে সে কোম্পানির সাথে সেটা তুই হ্যান্ডেল করছিস। তাই তোকেই যেতে হবে।

আফরানঃঃ- কিন্তু আজ তো মায়মুনার এনগেজমেন্ট। কত কাজ বাকি রয়েছে। এসব ফেলে কিভাবে যাব?

রিহানঃঃ- কিন্তু এই ডিল উভয় কোম্পানির জন্য অনেক ইম্পর্টেন্ট। না হলে কোম্পানির অনেক বড় লস হবে। আর সেই কোম্পানিরও লস হবে। যার পরিশোধ দিতে গেলে আমাদের কোম্পানিই শেষ হয়ে যাবে। তাই বলছি। আর বেশি সময় লাগবে না। ঘন্টাখানেক সময় লাগবে।

আফরানঃঃ- আচ্ছা ঠিক আছে। তুই তাহলে এদিকটা সামলা। আহিল ওয়াসিম আরিফ ইয়াশ ওরা যেকোনো সময় চলে আসবে এখানে। তাদেরও কাজে লাগিয়ে দিবি।

রিহানঃঃ- ওকে। (হেসে দিল)

১০ মিনিটের মধ্যে আফরান রেডি হয়ে নিল। হোয়াইট শার্ট তার উপর ব্লু ব্লেজার ব্লু প্যান্ট। হাতে ব্রাউন ঘড়ি। চুল হাত দিয়ে সেট করে নিল। ড্রেসিং টেবিল থেকে ফোন নিয়ে বেরিয়ে পড়ল। রুমের বাইরে আসতেই ধাক্কা খেল মায়মুনার সাথে।

মায়মুনাঃঃ- ও মা গো। ভাই দেখে চল। তু… (আফরানের মাথা থেকে পা অবধি দেখল) এসব ফরমাল ড্রেসআপ নিয়ে কোথায় যাচ্ছ?

আফরানঃঃ- অফিসে। কিছু ইম্পর্টেন্ট কাজ আছে তাই।

মায়মুনাঃঃ- আজ আমার জন্য এত গুরুত্বপূর্ণ দিন। আর এই দিনেই কি না তোমার ইম্পর্টেন্ট কাজ?

আফরানঃঃ- মায়ু তুই আমার ছোট বোন। আজ তোর জন্য বিশেষ দিন। কিন্তু এখন যদি অফিসে না যায় কোম্পানির অনেক বড় লস হয়ে যাবে। আর তুই কি সেটা চাস। (মায়মুনা ডানে বামে মাথা নেড়ে না বলল) ভেরি গুড। আর আমি ঘন্টা দেড় ঘন্টার মধ্যে চলে আসব। এখন যায়।

আফরান বিদায় নিয়ে যেই না দু পা বাড়ালো মায়মুনা থামিয়ে দিল।

মায়মুনাঃঃ- ভাই দাঁড়াও। (নূর আসতে দেড় ঘন্টা বাকি। ভাইয়ার আসতেও দেড় ঘন্টা সময় লাগবে। বাসায় আর কাউকেই পাচ্ছি না যে বলব তাদের পিকআপ করতে। ভাইয়াকেই বলি।) ভাইয়া শোন। তুমি আসার সময় তোমাদের ভার্সিটির দিকে এসো। সেখানে নূর আর বাকিরা অপেক্ষা করবে। তাদের নিয়ে এখানে আসবা। ঠিক আছে?

আফরানঃঃ- (কিছু একটা ভেবে তারপর বলল) আচ্ছা ঠিক আছে।

মায়মুনাঃঃ- আচ্ছা আরেকটা কথা। তোমাদের এত বছরের সম্পর্ক। তুমি নূরকে একবারও এখানে আনলে না?

আফরানঃঃ- না। আমাদের সব গেট টুগেদার ফার্ম হাউসেই হতো। তাই আনা হয়নি। (ফোনের দিকে তাকিয়ে বলল কথাগুলো। পরক্ষণে চোখ তুলে মায়মুনার দিকে তাকাল।) আমাদের এত বছরের সম্পর্ক মানে? কিসের সম্পর্ক? কার সম্পর্ক?

মায়মুনাঃঃ- কেন! তোমার আর নূরের সম্পর্ক।

আফরানঃঃ- আ…আমাদের কি…কিসের সম্পর্ক? হ্যাঁ? কে বলল তোকে?

মায়মুনাঃঃ- থাক ঢং একটু কম কর। আমি দুধের শিশু না। এই চোখ এখনো অবধি ভালো আছে। আশেপাশে কি চলে সব দেখি।

আফরানঃঃ- তুই ভুল বুঝছিস। এমন কিছু না। দেখ আমার লেট হয়ে যাচ্ছে। গেলাম আমি। (মায়মুনাকে কিছু বলতে না দিয়ে এক প্রকার দৌড়ে চলে গেল।)

মায়মুনাঃঃ- আ…… আমি ভুল বুঝছি? ধুরর আমার জ্বালায় আমি মরি। এহেএএ আমি কি করব এখন? নূরির বাচ্চা হুরি থুরি মুরি কবে যে আসবে।
_______________________________

অফিসে পৌঁছে আফরান দ্রুত গতিতে প্রবেশ করল। কারণ রিহান বলেছিল ক্লায়েন্ট আধ ঘন্টা পর আসবে। ট্রাফিকেই আধ ঘন্টা কেটে গেল। তাই এক প্রকার দৌড়েই প্রবেশ করল। অফিসে ঢুকতেই স্টাফরা তাকে অভিবাদন জানালো। বিনিময়ে সেও অভিবাদন জানালো। আফরান দ্রুত গতিতে মিটিং রুমে গেল।

আফরানঃঃ- সরি ফর দ্যা লেট। একচুয়ালি ট্রাফিক….. (বাকিটা আর বলতে পারল। সামনে তাকিয়ে থমকে দাঁড়ায়। খুশি হবে কি অবাক হবে তা নিয়ে এক বিভ্রান্তিতে আছে। কারণ তার সামনে বসা আর কেউ না তারই ছোটবেলার বন্ধু তার বেস্ট ফ্রেন্ড সোহেল।) সোহ…..

সোহেলঃঃ- মিস্টার আফরান। আপনি এত সময়নিষ্ঠহীন কিভাবে হবে পারেন। আপনি একজন বিজনেসম্যান। আপনার জানা উচিৎ সময় কতটা মূল্যবান। আপনার কাছে ফ্রি সময় থাকতে পারে কিন্তু আমার কাছে নেই। বিগত ১৫ মিনিট ধরে অপেক্ষা করছি। আপনার জন্য আমার ১৫ মিনিট ওয়েস্ট হলো।

আফরানঃঃ- (বাকরুদ্ধ হয়ে সোহেলের কথা শুনছে। এটাই কি সে সোহেল? যে কি সব কাজে ঘন্টার পর ঘন্টা আমার জন্য অপেক্ষা করত। কখনো বিন্দু পরিমাণ বিরক্ত প্রকাশ করেনি। স্কুল কলেজে লেট হওয়ার জন্য কত কথা শুনত। কিন্তু তাও একবারও আমার দোষ দেয় নি। আর আজ কি না ১৫ মিনিট অপেক্ষা করে তার সময় নষ্ট হয়েছে?)

সোহেলঃঃ- আমার অন্যান্য মিটিংও আছে। সব ছেড়ে তো আর একা আপনার সাথে মিটিং করতে পারব না। কাইন্ডলি লেটস স্টার্ট দ্যা মিটিং।

আফরান আর কিছু বলল না। মিটিং শুরু করল। প্রেজেন্টেশনের ফাঁকে ফাঁকে সোহেলের দিকে তাকাচ্ছে। সোহেল হাতে একটি কলম নিয়ে ঘুরাচ্ছে। আর আফরানের প্রেজেন্টেশনের মধ্যে নানা ধরনের সমস্যা বের করছে। কখনো ডিজাইন ঠিক নেই তো কখনো কাপড় ঠিক নেই। একটা না একটা কমতি বের করছে। কিন্তু আফরান বিন্দু পরিমাণ বিরক্ত প্রকাশ করছে না। সে শুধু ভাবছে সোহেল কিভাবে এতটা বদলে গেল।

সোহেলঃঃ- (কি আফরান? বলেছিলি না আমি তোর চাকর। আজীবন কুকুরের মতো লেজ গুটিয়ে তোর আগে পিছে ঘুরব। তোর পায়ের নিচে পড়ে থাকব। এখন দেখ আমি আর তুই এখন একই পজিশনে। কি বলেছিলি আমার বাবা একজন সামান্য কর্মচারী। তোর বাবার দয়ায় ছিল। আর আমিও তোর দয়ায় থাকব আজীবন। নো মিস্টার আফরান। নো। এখন দেখ এই কর্মচারীর ছেলে এখন তোর বরাবরে দাঁড়িয়েছে। দীর্ঘ পরিশ্রমের বিনিময়ে এই কোম্পানি তৈরি করেছি। রাত দিন এক করে এই সাম্রাজ্য তৈরি করেছি। যেসময় পড়ালেখার ফাঁকে ফাঁকে মজায় কাটানোর কথা ছিল সেসময় আমি রাত দিন কেটে কাটিয়েছি। শুধু তোকে দেখিয়ে দিব বলে। আর কথা হলো পান্নাকে নিয়ে। সে তো শুধু এক আবেগ ছিল। যা অল্প সময়ে কেটে গেল। কিন্তু তুই তাকে পাওয়ার জন্য আমাকে আর আমার বাবাকে যে অপমান করেছিস তা কাটিয়ে উঠতে পারিনি। সেসব কথা আমার বুকে তীরের মতো গেথেঁ আছে।)

(আফরানের পিএ) মাসুদঃঃ- মিস্টার সোহেল আপনি যদি সবকিছুতে এভাবে সমস্যা বের করেন তাহলে ডিল কমপ্লিট হবে কি করে?

সোহেলঃঃ- সেটা আমি কি করে বলব। আমি তো শুধু ইনভেস্টার। আমি টাকা ইনভেস্ট করব আর আমার জিনিস যাতে ভালো হয় আমার মুনাফা সেটা দেখব। ডিল আপনারা কিভাবে কমপ্লিট করবেন সেটা আপনারা দেখুন।

আফরানঃঃ- এই ডিল যদি ঠিক মতো না হয় তাহলে দুই কোম্পানির অনেক বড় লস হবে। তাই পারসোনাল মেটার সাইডে রেখে প্রোফেশনালি চিন্তা করলে ভালো হয়।

সোহেলঃঃ- (দাঁতে কটমট করে বলল) পারসোনাল কোন মেটার না। আমি প্রোফেশনালি চাই আমার যাতে কোন লস না হয়।

আফরানঃঃ- ডোন্ট ওয়ারি দুইদিন পর মিটিং রাখি।আর আমাদেরও কিছু প্রস্তুতি নিই। তারপর নাহয় দেখবেন।

সোহেলঃঃ- ইয়াহ শিওর।

মিটিং শেষে হাত মিলানোর জন্য আফরান হাত বাড়ালে সোহেল সেটা উপেক্ষা করে চলে যায়। আফরান তার বাড়ানো হাতের দিকে তাকিয়ে আছে।

আফরানঃঃ- (যে বন্ধু সবসময় বুকে আগলে রাখত সে বন্ধু আজ এত বছর পর হাতও মিলালো না। জানি না কেন তুই সব এভাবে ভেঙে দিলি। আমাদের এত বছরের বন্ধুত্ব নিমিষেই শেষ করে দিলি। আর আজ। আজকের কথা আর না ই বা বললাম। এমন ভাব নিলি যেন আমরা অচেনা অপরিচিত ব্যক্তি।)

সবাই মিটিং রুম থেকে বেরিয়ে গেল। আফরান একা একা দাঁড়িয়ে এসব ভাবছিল। এক গভীর নিশ্বাস ছেড়ে মাথা নিচু করে আছে। টেবিলের উপর ভর করে নিচে তাকিয়ে আছে। সোহেলের সাথে কাটানো সব স্মৃতি তার চোখের সামনে ভাসছে। মাথা তুলে হাতে ঘড়ির দিকে তাকাল।

আফরানঃঃ- ওহ শিট। নূর অপেক্ষা করছে। আর ১০ মিনিট বাকি। আবারও যদি ট্রাফিকে আটকে যায় এই মেয়ে নতুন ঝামেলা পাকাবে। (ফোন হাতে নিয়ে দৌড় দিল। অফিসের সবাই তার যাওয়ার পানে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে।)

নূরঃঃ- (ফোনে কথা বলছে) ওই আর কতক্ষণ লাগবে। এই কবে থেকে রোদে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করতে করতে কাহিল হয়ে গেলাম। ওই ফকিন্নি সব আমাকে মাঝ রাস্তায় দাঁড় করিয়ে ক্যান্টিনে বসে আছে। বলল কেউ আসলে কাউকে না পেয়ে চলে যাবে। তাই তারা চালাকি করে আমাকে রেখে দৌড় দিল। আর কত অপেক্ষা করব? (চিল্লিয়ে উঠলো)

মায়মুনাঃঃ- (ফোন লাউডে না দিয়েই দূর ফোন ধরে আছে। কারণ নূর এত চিল্লিয়ে কথা বলছে যে ফোন লাউডে দেওয়ার প্রয়োজন নেই।) আহহ থাম মা গো মা শ্বাস নে। হয়তো এতক্ষণে পৌঁছে যাবে।

নূরঃঃ- কোন হালায় উগান্ডা থেকে আইতাছে যে এত দেরি হচ্ছে। কাকে পাঠিয়েছিস আমাদের পিকআপ করতে।

মায়মুনাঃঃ- (এই রে খায়ছে রে) ওই আসলে আফরান ভাইয়া অফিসে গিয়েছিল। আর সেই ফেরার পথেই তোদের নিয়ে আসবে। মিটিং এ হয়তো লেট হয়েছে তাই আসতে দেরি হচ্ছে।

নূরঃঃ- আর কাউকে পেলি না ওই পান্ডা খাচ্চোর বিলাতি বক ছাড়া। না জানি আরো কতক্ষণ এভাবে দাঁড়িয়ে থাকব।

.
.
.

চলবে

😠 Ragging To Loving 😍
Part:: 38
Writer:: Ridhira Noor

অপেক্ষা করতে করতে অবশেষে আফরান এলো। নূর শুধু রাগী দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে তার দিকে। মুখ দিয়ে কোন কথা বের হচ্ছে না। খালি রাগে ফুঁসছে। নূরের চেহারা দেখে আফরান ভয়ে ঢোক গিলল। জোর পূর্বক হাসি দেওয়ার অযথা চেষ্টা করছে। কিন্তু মুখ দিয়ে হাসি বের হচ্ছে না। দুজনেই নিরব হয়ে একে অপরের দিকে তাকিয়ে আছে। কিছু সময় পর সিমারাও এলো। নূর কিছু বলল না তাদের দিকেও রাগী দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। তারা ভয়ে ধাক্কাধাক্কি করে আফরানের গাড়ির পিছনের সিটে বসে পড়ল। অথচ জায়গা হচ্ছে না। তবুও তারা পাঁচজন গাদাগাদি করে একে অপরের কোলে বসল।

আফরানঃঃ- চ…চ…চ… (তোতলাচ্ছে। ভয়ে মুখ দিয়ে কথা বেরুচ্ছে না)

নূরঃঃ- চচচচ কি? (রেগে বলল)

আফরানঃঃ- চ…চল। মা…মা…মায়মুনা অপেক্ষা করছে।

নূরঃঃ- তা আপনার এখন জানা হলো? মায়মুনা অপেক্ষা করছে। আমি যে এতক্ষণ ধরে রোদে পুড়ে অপেক্ষা করছি সেই খেয়াল কি কারো নেই?

গাড়ির জানালা দিয়ে উঁকি মেরে তারা বলতে লাগলো। “সরি নূর।”
রাগে নূর কিছু বলল না। গিয়ে সামনের সিটে বসল। আফরানও দীর্ঘ নিশ্বাস ছেড়ে ড্রাইভিং সিটে বসল। নূর দুই মুড়িয়ে গাল ফুলিয়ে বাইরে তাকিয়ে আছে। আফরান নূরের দিকে তাকিয়ে আবার আয়নায় পিছনে থাকা পুষ্পদের দিকে তাকাল। তারাও অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আফরানের দিকে। কিছু সময় পর তারা পৌঁছে গেল আফরানের বাড়িতে। আফরানের বাড়ি বিশাল বড়। গেইট দিয়ে ঢুকতে লম্বা সরু রাস্তা। দুইপাশে ছোট ছোট ফুলের গাছ। রাস্তার দুইপাশে বাড়ির সামনে বড় খোলা জায়গা। চারপাশে সাজানো হচ্ছে। বাড়ির মুখোমুখি বড় একটি ঝর্ণা। আফরান তাদের নিয়ে বাড়ির ভেতরে প্রবেশ করল। চারপাশে সেই কি হৈচৈ। সবাই কাজে ব্যস্ত। কেউ এদিক দৌড়াচ্ছে তো কেউ ওদিক। তাদের দেখে রিহান ওয়াসিম আহিল আরিফ ইয়াশ এগিয়ে এলো। তাদের কথার মাঝেই মায়মুনা দৌড়ে এসে নূরকে টেনে নিয়ে গেল। তার পিছে মেয়েরাও গেল।

মায়মুনাঃঃ- সে কবে থেকে অপেক্ষা করছি। আমার মাথায় কিছুই আসছে না। তোরা হেল্প কর আমাকে। (তাদের নিজের রুমে নিয়ে গেল। রুমে যেতেই সবার চোখ কপালে। পুরো রুমের এদিক সেদিক জামা কাপড় ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে।) কোন জামাটা পড়ব সিলেক্ট করে দে।

তারা একেকজন একেকটা জামা নিল। সব জামা বেশ সুন্দর। তারা নিজেরাই কনফিউজড হয়ে গেল।

সিমাঃঃ- লাল জামাটা পর।

মায়মুনাঃঃ- লাল? না আমার লাল পছন্দ না।

আমরিনঃঃ- গোল্ডেনটা নে।

মায়মুনাঃঃ- (আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে দেখল) এএএ আমাকে কেমন যেন মোটা মোটা লাগছে। এটা না।

মেহেরঃঃ- বেগুনিটা নে। এটা ভালো লাগবে।

মায়মুনাঃঃ- আমাকে বেগুন বেগুন লাগবে।

পুষ্পঃঃ- তাহলে করবি কি তুই? এক কাজ কর যেমনে আছিস তেমনই বসে যা। এই ছাড়া কোন উপায় দেখছি না।

মায়মুনাঃঃ- ধুরর। এমনিতে প্রচুর টেনশনে আছি। (ধপ করে বেডে বসে গেল। একটু পরই দরজায় নক করল। মায়মুনা উঠে গিয়ে দরজা খুলল।) কি হলো মামুনি?

আফরানের মাঃঃ- (একটা বড় বাক্স হাতে দিল) এই নে। নিহালের বাড়ি থেকে তোর জন্য জামা আর কিছু গয়না পাঠিয়েছে। সন্ধ্যায় এগুলো পরবি। (বলে চলে গেল।)

মায়মুনা খুশিতে আত্মহারা হয়ে পিছনে ফিরতে দেখে সবাই কোমরে হাত দিয়ে রাগী লুক দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।

নূরঃঃ- অসভ্য অভদ্র বেয়াদব নির্লজ্জ বেহায়া ফকিন্নি। এতক্ষণ আমাদের মাথা খেয়েছিস। সকাল থেকে জ্বালিয়েছিস। আমাকে রোদে দাঁড় করিয়েছিস। আর এখন সব সমস্যায় সমাধান হয়ে গেল।

মায়মুনাঃঃ- আমি কি জানতাম এমন হবে।

অবশেষে বাক্স খুলে দেখতে লাগলো। গোলাপি রঙের বারবি গাউন। বেশ সুন্দর গাউনটা। মায়মুনা গাউনটা জড়িয়ে ধরে কিছুক্ষণ ঘুরল।

সন্ধ্যায়_____________________________
পুরো বাড়ি বেশ সুন্দর করে সাজিয়েছে। অর্কিড ফুল দিয়ে চারপাশে সাজানো হয়েছে। তার সাথে চারপাশে হালকা গোল্ডেন কালারে পর্দা ঝুলানো। মাঝ বরাবর বড় ঝাড় বাতি ঝুলানো। ধীরে ধীরে মেহমান আসতে শুরু করল। সব ছেলেরা ফরমাল ড্রেসআপ নিয়ে তৈরি হয়েছে। আর মেয়েরা গাউন পরেছে। নূর চারপাশে ঘুরে দেখছিল হঠাৎ তার চোখ পড়ে সামনে। আফরান সাদা শার্ট, ব্লাক কোট, ব্লাক প্যান্ট পরা। এক হাত পকেটে দিয়ে অন্য হাতে ফোন নিয়ে কথা বলছে। চুল স্পাইক করা। এমনিতে সাদা চামড়া তার উপর ব্লাক গেটআপে অনেক হ্যান্ডসাম লাগছে। আর যেই স্টাইলে ফোনে কথা বলছে যে কেউ ফিদা হয়ে যাবে। তার উপর ঠোঁটের কোণে হাসি হায়…. মেয়েরা ক্রাশ না খেয়ে যাবে কই। নূর শুধু এক ধ্যানে তাকিয়ে আছে আফরানের দিকে। আশেপাশের কোন খেয়ালই নেই। চোখের পলকও ফেলছে না। বেহায়ার মতো তাকিয়ে আছে তার দিকে। আফরান ফোনে কথা বলতে বলতে হঠাৎ চোখ পড়ল নূরের দিকে। নূর সাথে সাথে চোখ ফিরিয়ে নিল। একটু অপ্রস্তুত হয়ে এদিক সেদিক তাকাতে লাগলো। নিজের এমন কান্ডে নিজেই লজ্জিত হলো। আফরান কথা বলতে বলতে নূরের চোখ পড়ল। সেও বেহায়ার মতো তাকিয়ে আছে নূরের দিকে। নূর পরনে হালকা ফিরোজা রঙের লং গাউন। মাঝখানে সিঁথি করে চুল ছেড়ে দেওয়া। ঠোঁটে গাঢ় লাল লিপস্টিক চোখে গাঢ় কাজল দেওয়া। এরই মধ্যে অসাধারণ লাগছে দেখতে। আফরান কানে ফোন দিয়ে অপলক ভাবে তাকিয়ে আছে। ফোনের অপর পাশ থেকে হ্যালো হ্যালো করছে সেদিকে তার ধ্যান নেই। হঠাৎ ঝাকুনিতে তার ধ্যান ভাঙে। পাশে তাকিয়ে দেখে পান্না।

পান্নাঃঃ- কি হলো তোমার সেই কবে ডাকছি শুনছ না। কানে মোবাইল দিয়ে অন্যদিকে তাকিয়ে আছ। কি দেখছ এভাবে?

আফরানঃঃ- (তড়িঘড়ি কানে মোবাইল দিল) হ্যা…হ্যালো। সরি একটু বেখেয়ালি হয়ে গিয়েছিলাম। জ্বি। জ্বি। আচ্ছা ঠিক আছে। বাই। (ফোন পকেটে রেখে দিল। তারপর পান্নার উদ্দেশ্যে বলল) ওই আসলে একটু ডেকোরেশন দেখছিলাম তাই ধ্যান ছিল না। তা কি বলছিলে তুমি?

পান্নাঃঃ- তেমন কিছু না। জাস্ট এমনি। বাই দ্যা ওয়ে আজ তোমাকে ভীষণ ড্যাশিং লাগছে।

আফরানঃঃ- থ্যাংকস। তোমাকেও বেশ সুন্দর লাগছে।

নূর কেন জানি পান্না আর আফরানকে একসাথে দেখে মন খারাপ করে আছে। পান্না আফরানের তারিফ করায় সে রেগে গেল।

নূরঃঃ- ড্যাশিং না ছাই। পেঙ্গুইনের মতো লাগছে মাথা থেকে পা অবধি সাদা কালো পরে আছে। হুহ্। (ভেঙচি কেটে চলে গেল।)

মায়মুনা সারা রুমে এদিক ওদিক পায়চারি করছে। আর কাউকে বারবার ফোন দিচ্ছে। ফোন রিসিভ না করায় বিরক্ত হচ্ছে। অবশেষে ফোন রিসিভ করল।

মায়মুনাঃঃ- তুমি এখনো আস নি কেন? প্রায় সব মেহমান চলে এসেছে।
————————-
মানে কি? কেন আসবে না? আমি এতো কিছু জানি না। তুমি আসবে মানে আসবে। না আমি কিছু শুনব না। আস……. হ্যালো? হ্যালো? ফোন কেটে দিল। (রেগে মোবাইল বেডের উপর ছুড়ে মারল। রেগে বাইরে গেল। সবার চোখের আড়াল হয়ে বাইরে বেরিয়ে গেল। গাড়ির চাবি নিয়ে দরজা খুলতেই কেউ তার হাত ধরে ফেলে। মায়মুনা মাথা উঠিয়ে দেখে রিহান।)

রিহানঃঃ- কোথায় যাচ্ছিস তুই?

মায়মুনাঃঃ- কিছু জরুরি কাজ আছে।

রিহানঃঃ- জরুরি কাজ মানে? কি জরুরি কাজ? ঘর ভরতি মেহমান। আর একটু পরই নিহাল স্যার আর তার পরিবার চলে আসবে। কি এমন জরুরি কাজ আমাকে বল আমি করে দিচ্ছি।
_______________________________

নিজের রুমের বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছে সোহেল। এক ধ্যানে আকাশের পানে তাকিয়ে আছে। মেঘমুক্ত কালো আকাশ ঝিকিমিকি তারা। আকাশের পানে তাকিয়ে দীর্ঘ নিশ্বাস ফেলল।

সোহেলঃঃ- কেন এত কষ্ট হচ্ছে আমার? কেন? এত দিন পর দেখা হলো একটু ভালো মন্দ কিছুই বলা হলো না। সত্যিই কি তুই একবারও আমাকে তোর বন্ধু ভাবিস নি? আমার কথা নাহয় বাদ দিলাম। কিন্তু আমার বাবা মা তো তোকে আমার চেয়েও বেশি ভালবেসে ছিল। এখনো বাসে। তাদের দিকে তাকিয়ে একটি বার বলতে পারলাম না তারা যাকে নিজের ছেলের মতো করে ভালবাসে সে শুধু তাদের সামান্য কর্মচারী ছাড়া কিছু ভাবে না। তোকে নিয়ে বাবা আমাকে কত কথা শুনালো। কিন্তু তোর বিরুদ্ধে একটা কথা শুনতেও তিনি নারাজ। তুই আমাকে পান্নার কাছে ছোট করার জন্য ওসব বলেছিস। তুই যদি একটি বার বলতি আমি নিজ থেকে সরে যেতাম। আমি সব সহ্য করতে পারি কিন্তু আমার বাবা মার অপমান কখনো না। আমি একাই মাথার ঘাম পায়ে ফেলে নিজের পরিশ্রমে এই কোম্পানি তৈরি করেছি। তিন বছরের মধ্যে এই কোম্পানি এত বড় করেছি। তোর বাবার কোম্পানির বরাবরে দাঁড়িয়েছি। যাতে তুই বলতে না পারিস তোর আর তোর বাবার দয়ায় আমি আর আমার পরিবার বেঁচে আছে। তিন বছর কম না। পড়াশোনার পাশাপাশি রাত জেগে পরিশ্রম করেছি। নিজ যোগ্যতায় নিজের পরিচয় তৈরি করেছি। তোর মতো বাবার সম্পদ আহরণ করিনি। ইসহাক খানকে দ্বিগুণ টাকা দিয়ে তোর কোম্পানির পার্টনারশিপ কিনেছি। যাতে তোর কাছে প্রমাণ করতে পারি আমার যোগ্যতা। চেয়েছিলাম তোর কোম্পানি মার্কেটে ডুবিয়ে দিতে কিন্তু না। তা আমি পারব না। হাজার হোক শরীফ আংকেল দীর্ঘ পরিশ্রম করে এই কোম্পানি তৈরি করেছে। আমার বাবাও এই কোম্পানিতে চাকরি করেছে। কিন্তু তার মানে এই নয় যে আমি সব ভুলে যাব। কখনো না। তোর দেওয়া সব দয়া আমি তোকে ফিরিয়ে দিব।

সোহেল চোখ বন্ধ করে জোরে জোরে নিশ্বাস ছাড়ছে। হঠাৎ গাড়ির হর্ণের আওয়াজে চোখ খুলে তাকাল। গেইটের বাইরে গাড়ি থেকে একটি মেয়ে নামলো। দেখে মনে হচ্ছে গাড়িতে থাকা কাউকে ধমক দিচ্ছে। কিছুক্ষণ পর সে গাড়ি নিয়ে চলে গেল। আর মেয়েটি ভেতরে এলো। আবছা অন্ধকারে তাকে দেখা যাচ্ছে না। বাতির আলো তার উপর পড়তেই তার চেহারা দেখা গেল। সোহেল এক মূহুর্ত অপেক্ষা না করে দৌড়ে নিচে নেমে এলো। মেয়েটির সামনে এসে দাঁড়াল। তার চোখের পানি ছলছল করছে।

সোহেলঃঃ- মায়মুনা তুই এখানে কি করছিস? তোর আজ এনগেজমেন্ট। তুই ওসব ছেড়ে এখানে চলে এলি।

মায়মুনাঃঃ- তুমি এলে না কেন?

সোহেলঃঃ- তোকে আমি আগেও বলেছি তার কারণ। আমি পারব না যেতে।

মায়মুনাঃঃ- বাবা মা নেই। মামা মামনিদের কাছেই মানুষ হয়েছি। আপনজন বলতে তোমরাই আছ। আমি তো কখনো তোমাকে রিহান ভাই আর আফরান ভাই থেকে কম ভালবাসি নি। তারা যেমন আমার ভাই তোমাকেও ছোট থেকে ভাই ভেবে এসেছি। ছোট থেকে আমার কোন কষ্ট হলে তুমি তাদের আগে এগিয়ে আসতে। আর আজ? ওহ আমি তো তোমার আপন বোন না তাই হয়তো….

সোহেলঃঃ- মায়মুনা তুই ভালো করেই জানিস আমিও তোকে আপন বোনের চেয়ে বেশি ভালবাসি।

মায়মুনাঃঃ- তাই আমাকে এভাবে একা করে দিলে।

সোহেলঃঃ- একা কোথায়? সেখানে সবাই আছে।

মায়মুনাঃঃ- তুমি তো নেই।

সোহেলঃঃ- দেখ জেদ করিস না। চলে যা তুই। সবাই তোর অপেক্ষা করছে।

মায়মুনাঃঃ- জেদ? আমার জেদ তো আমি এখনো করিনি। এবার আমিও জেদ ধরে আছি। যাব না আমি। তুমিই আমাকে নিয়ে যাবে নাহলে আমি এখানেই থাকব। হবে না কোন এনগেজমেন্ট। ক্যান্সেল করে দিব সব। আর আমার জেদ সম্পর্কে তুমি জানোই।

মায়মুনার চোখ লাল বর্ণ ধারণ করে আছে। সোহেল অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। কারণ সে জানে মায়মুনা কতটা জেদি। যা একবার বলবে তা করেই ছাড়বে।
_______________________________

মেহমানদের কিছু বুঝতে না দিয়ে সবাই মিলে মায়মুনাকে সারা বাড়ি খুঁজছে। নিহাল তার পরিবারকে নিয়ে চলে এলো। সবাই বারবার মায়মুনার কথা জিজ্ঞেস করছে তারা কোন না কোন বাহানা দিয়ে এড়িয়ে চলছে। তখনই আফরান দেখল রিহান বাইরে থেকে আসছে। সে রিহানের কাছে গেল।

আফরানঃঃ- তুই আবার কোথায় গিয়েছিলি? আচ্ছা সেসব পরে মায়মুনাকে দেখেছিস? সবাই সে কখন থেকে তাকে খুঁজছে।

রিহানঃঃ- মায়মুনা….. সোহেলের কাছে গিয়েছে। তাকে আনতে। আমি নিজেই এখন তাকে সোহেলের বাসায় দিয়ে আসলাম। আর সে বলল আমাকে চলে আসতে সে সোহেলের সাথে আসবে।

আফরানঃঃ- কি? কিন্তু…. সোহেল তো আসবে না। সে….. (আর কিছু বলতে পারল না। এক ধ্যানে বাইরে তাকিয়ে আছে। আফরানকে এভাবে দেখে রিহানও পিছন ফিরে দেখে সোহেল আর মায়মুনা আসছে।)

মায়মুনা ভেতরে আসতেই সবাই তাকে ঘিরে ধরল। সে কোথায় গিয়েছিল? কেন গিয়েছিল? নানান প্রশ্ন করতে লাগলো। সে চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে। সোহেলকে দেখে আফরানের মা এগিয়ে এলো।

আফরানের মাঃঃ- সোহেল। (তার মাথায় হাত বুলিয়ে দিল) সে কবে ছেড়ে চলে গিয়েছিলি আমাকে। এত বছরে একবারও আমার কথা মনে হলো না তোর? একটি বার দেখতেও এলি না। (সোহেল কিছু বলছে না। নিরবে দাঁড়িয়ে আছে।) আচ্ছা এতদিন পর যখন এসেছিস তাই অনেক।

সোহেলঃঃ- (কি করব বল? আমার তো আর এত ধৈর্য্য ছিল না যে এত কিছুর পরও এইখানে আসব। আজ মায়মুনার জেদের কারণে আসতে হলো। এই ঘরে এক শুধু তুমিই আমাকে নিঃস্বার্থ ভাবে ভালবেসেছ। আমি এত বছর তোমার কাছে না আসায় তুমি নিজে আমাদের বাড়ি যেতে। আর তোমাকে দেখে আমি আড়ালে চলে যেতাম। কারণ তোমাকে দেখলে আমি নিজেকে শক্ত রাখতে পারতাম না। পারতাম না নিজেকে প্রমাণ করতে। ক্ষমা কর আমাকে।)

তারা ভেতরে গেল। মায়মুনাকে নিহালের পাশে বসানো হলো। বাকিরাও তাদের সাথে বসলো। সবাই মিলে দুষ্টুমি করছে। সোহেল চারপাশে ঘুরে দেখছে। অনেক দিন পর এলো এখানে। কত স্মৃতি জড়িয়ে আছে এই ঘরে। আফরানের সাথে খেলা করা, খাওয়া-দাওয়া, দুষ্টুমি। অতীতে এতই হারিয়ে গেল যে বর্তমানের খেয়াল নেই। না দেখে হাটাই খেল এক ধাক্কা। ধাক্কা খেয়ে মাথা ঢলছে। সামনে তাকিয়ে দেখে নূর। সেও না দেখে হাটছিল। যার কারণে দুজনেই একসাথে সরি বলল। আলিফার ডাকে নূর সেদিকে গেল। সোহেল আবারও চারপাশে দেখছে। তাদের এসব দূর থেকে লক্ষ্য করছিল পান্না। সোহেলকে দেখে আতংকিত হয়ে পড়ল।

পান্নাঃঃ- সোহেল এখানে কি করছে? সে যদি আফরানকে সব বলে দেয়। না না না। ওয়েট এ মিনিট সোহেল আর নূর? (কিছু একটা ভেবে ডায়নি মার্কা হাসি দিল।)

.
.
.

চলবে