😠 Ragging To Loving 😍
Part:: 39
Writer:: Ridhira Noor
মায়মুনা নিহালকে একপাশে সোফায় বসানো হলো। মেহের, পুষ্প, রিহান, আফরান সবাই সেদিকে পাশে দাঁড়িয়ে ছিল। আলিফার ডাকে নূর তাদের কাছে গেল। সবাই বিভিন্ন বিষয় নিয়ে দুষ্টুমি মজা করছে। আলিফা বলে উঠল।
আলিফাঃঃ- আফরান ভাইয়া আজকে আপনাকে ভীষণ হ্যান্ডসাম লাগছে। এমনিতে ফর্সা তার উপর ব্ল্যাক ড্রেসআপ জোস লাগছে (হাতের আঙুল দিয়ে সুন্দর ইশারা করল।)
আলিফার এভাবে আফরানের তারিফ করা কেন জানি আরিফের ভালো লাগলো না।
পান্নার সেই কথা মনে পড়ে গেল।নূর কাশতে লাগলো।
নূরঃঃ- একেই বলে চোখ থাকিতে অন্ধ। আমি জানতাম না তুই রাতকানা হয়ে গেছিস। (আফরানকে খোঁচা মেরে বলল কথাটা। সেটা আফরান বরাবরই বুঝতে পারল।)
আফরানঃঃ- কি বলতে চাইছ তুমি? (ভ্রু কুচকে)
নূরঃঃ- আপনাকে হ্যান্ডসাম বলল ব্যাপারটা হাইস্যকর। এটা জনগণের জন্য হাইস্যকর।
আফরানঃঃ- নিজেকে একবার আয়নায় দেখ। সবুজ জামা তার উপর লাল লিপস্টিক। ঠিক যেন তোতাপাখি।
নূরঃঃ- কি বললেন আপনি? (রেগে গিয়ে) আমি? আমি তোতাপাখি? নিজেকে আগে আয়নায় দেখুন। সাদা শার্ট কালো কোট প্যান্ট। ঠিক যেন পেঙ্গুইন।
আফরানঃঃ- তোতাপাখি।
নূরঃঃ- পেঙ্গুইন।
দুজনেই অনেক্ষণ একে অপরকে এই নামে ডাকতে লাগলো। তাদের থামিয়ে আলিফা জোরে বলে উঠল।
আলিফাঃঃ- এটেনশন প্লিজ। চিড়িয়াখানা থেকে দুইটা প্রাণী পালিয়ে এখানে চলে এসেছে। (আলিফার কথার মানে আফরান বুঝলো না। নূর ঠিকই বুঝল আলিফা তাদের কথা বলছে। বাকিরাও হাসছে তার কথায়।)
নূরঃঃ- ওই কি বললি তুই? আমি চিড়িয়াখানার প্রাণী? তোকে তো আমি…… (নূর তেড়ে আসতেই আলিফা দিল দৌড় তার পিছে নূরও দৌড় দিল। পুরো বাড়িতে মেহমানের মাঝে তারা দৌড়াদৌড়ি করছে। আলিফা কিচেনের দিকে দৌড় দিল তার পিছে নূরও গেল। দৌড়াতে গিয়ে নূর আচমকা কারো সাথে ধাক্কা খেল। সামনে তাকিয়ে দেখে এক ভদ্রমহিলা।) সরি সরি সরি। সরি আন্টি আপনার লাগেনি তো? (তার হাতে জুসের গ্লাস ভরতি ট্রে ছিল। নূর তার মাথা থেকে পা অবধি ভালো করে দেখছে। মহিলাটি আর কেউ না আফরানের মা।)
আফরানের মাঃঃ- আরে মা আমার লাগেনি। তোমার লাগেনি তো? (চিন্তিত হয়ে বলল। নূর মাথা নেড়ে না বলল। তিনি স্বস্তির নিশ্বাস নিলেন। ভালো করে তাকিয়ে দেখে নূরের জামায় জুস পড়ে পুরো জামা নষ্ট হয়ে গেল।) আরে এই কি তোমার জামা তো পুরো নষ্ট হয়ে গেল।
নূরঃঃ- (মাথা নিচু করে দেখে জুসে তার পুরো জামা ভিজে গেল। সে হাত দিয়ে জামা ঝাড়ছে।) ইটস ওকে আন্টি। সমস্যা নেই আমি ধুয়ে পরিষ্কার করে নিব।
আফরানের মাঃঃ- আরে পুরো জামা ভিজে গিয়েছে। এখন এটা পরিষ্কার করা সম্ভব না। তুমি আমার সাথে চল। (ট্রে অন্য সার্ভেন্টের হাতে দিয়ে নূরকে টেনে নিয়ে গেল। নূরও অনেক বারণ করল কিন্তু তিনি শুনছেনই না। নূরকে তার রুমে নিয়ে গেল। নিজের আলমারি থেকে একটা প্যাকেট বের করল। যার মধ্যে একটা শাড়ি।) এই নাও এটা পরে নাও। এটা আমার ছেলে এনেছিল। কিন্তু এটা আমার বয়সের না। তোমাদের মতো মেয়েদেরই মানাবে। পরে নাও এটা। মায়মুনা নিচে বসে আছে নাহলে ওর জামা দিতাম।
নূরঃঃ- (কোন ভাবে শাড়িটা নিতে চাইছে না। ইতস্তত বোধ করছে।) আসলে আন্টি আমি শাড়ি পরতে পারি না।
আফরানের মাঃঃ- (নূরের কথায় তিনি হেসে দিলেন।) আজকালকার মেয়েরা না এমনই। বিয়ের আগে শাড়ি পরা শিখে না যাতে বিয়ের পর স্বামী তাদের শাড়ি পরিয়ে দেয়। (মায়ের বয়সের কারো কাছ থেকে এসব শুনে নূর ভীষণ লজ্জা পেল।) কিছু মনে কর না। আমার কোন মেয়ে নেই। নিজের মেয়ের মতো মনে করেই তোমাকে এসব বলে ফেললাম। সত্যি বলতে আমিও এমন করেছিলাম। বিয়ের দ্বিতীয় দিন উনাকে দিয়ে শাড়ি পরেছিলাম। (নূর হেসে দিল। সাথে আফরানের মাও হেসে দিল) তুমি চিন্তা কর না আমি এখন পরিয়ে দিচ্ছি। বিয়ের পর স্বামীকে দিয়ে পরিও। (লজ্জায় নূর মাথা নিচু করে আছে।)
নূর শাড়ি পেচিয়ে বাথরুম থেকে বের হলো। আফরানের মা সুন্দর করে ভাজে ভাজে শাড়ি পরিয়ে দিতে লাগলো। এবার শাড়ি কুচি করে দিচ্ছে আর বলতে লাগলো।
আফরানের মাঃঃ- আচ্ছা তোমাকে তো চিনলাম না। সেই সকাল থেকে দেখছি অনুষ্ঠানের বিভিন্ন কাজে সাহায্য করেছ। কিন্তু পরিচয় হয়ে উঠে নি।
নূরঃঃ- আমি মায়মুনার ছোটবেলার বান্ধবী। হাই স্কুলে থাকতে সহপাঠী ছিলাম। কিছুদিন আগেই আবার ভার্সিটিতে দেখা হয়েছিল।
আফরানের মাঃঃ- ভার্সিটি? কোন ভার্সিটি?
নূরঃঃ- “____ ভার্সিটি। মায়মুনা সেখানে গিয়েছিল। হঠাৎই দেখা হয়ে যায়।
আফরানের মাঃঃ- “____ভার্সিটি? এখানে তো আমার ছেলে আফরান পড়তো। তাহলে কি তুমি আফরানের ফ্রেন্ড?
আমার ছেলে আফরান কথা শুনে যেন নূর আকাশ থেকে পড়ল। মানে কি উনি আফরানের মা? কেন জানি নূরের মধ্যে অজানা ভয় কাজ করছে। অস্বস্তি লাগছে খুব।
নূরঃঃ- আ…আমি আফরানের ফ্রে…..
আফরানের মাঃঃ- যাক ভালোই হয়েছে। আফরানের ফ্রেন্ডই শাড়িটি পরল। জানো এই শাড়ি নিয়ে কি হয়েছে? প্রায় চার বছর আগে হুট করেই আফরান শাড়িটি নিয়ে এলো। শাড়ি আনেনি অবশ্য একটা শপিং ব্যাগে বাক্স ছিল সেখানেই শাড়িটা ছিল। আমি হাতে বাক্সটা দেখায় ওকে জিজ্ঞেস করি। সে তড়িঘড়ি বলে উঠল সে আমার জন্য শাড়ি কিনেছে। হঠাৎ কোন অনুষ্ঠান বা কারণ ছাড়া আমার জন্য শাড়ি? তাই আমি বাক্সটি খুলে দেখি। তার মধ্যে ছিল এই শাড়িটা। তুমিই বল এটা কি আমার জন্য মানানসই হবে। এত হেভি কাজ করা শাড়ি তোমাদের মতো অল্প বয়সী মেয়েদেরই মানাবে। তাই আমি হেসে আফরানকে বললাম এই শাড়িটা যত্ন করে আমি তার স্ত্রীর জন্য রেখে দিব। বিয়ের পর তার স্ত্রীকে দিব। কিন্তু দেখ ভাগ্যক্রমে আজ শাড়িটি তুমি পরলে। তাও মনের মধ্যে একটু খুত ছিল কিন্তু এখন যখন জানতে পারলাম তুমি আফরানের ফ্রেন্ড মনে এক শান্তি অনুভব করছি।
নূর যেন শকডের উপর শকড খাচ্ছে। জোর কা ঝাটকা হায় জোর সে লাগা। প্রথমত জানতে পারলো ইনি আফরানের মা। দ্বিতীয়ত যে শাড়ি পরল তা আফরানের দেওয়া। তৃতীয়ত তা রাখা হয়েছে তার স্ত্রীর জন্য। এখন যদি সে আফরানের মাকে বলে যে আফরান আর সে ফ্রেন্ড না তাহলে উনার না জানি কেমন লাগবে। তাই সে আর কিছু বলল না। এত সব শকড একসাথে পেয়ে নূর ছোট খাট কোমায় চলে গেল। বলতে গেলে পুরো রোবট হয়ে গেল। এতক্ষণ যে আফরানের মা তাকে সাজিয়ে দিয়েছিল সেই খেয়ালও নেই। আফরানের মায়ের কথায় হুশ ফিরল।
আফরানের মাঃঃ- হয়ে গিয়েছে। এবার দেখ কেমন লাগছে।
নূর ড্রেসিং টেবিলে বসা ছিল। সামনে আয়নায় নিজেকে দেখে অবাক। সত্যি কি এটা নূর?
আফরানের মাঃঃ- ভীষণ সুন্দর লাগছে তোমায়। (চোখের কাজল নিয়ে নূরের কানের পিছে লাগিয়ে দিল) আজীবন আমার আফসোস থেকে যাবে।
নূরঃঃ- কিসের আফসোস?
আফরানের মাঃঃ- একটি মেয়ে না থাকার আফসোস। খুব ইচ্ছে ছিল একটা মেয়ের। আফরান হওয়ার পর কিছু কমপ্লিকেশন দেখা দেয় তাই আর দ্বিতীয় সন্তানের চিন্তা করিনি। আফরান যখন ছোট ছিল তখন ওকে ফ্রক পরিয়ে দিতাম। মাথায় ঝুটি করে দিতাম। ফটো এলবামে এখনো ছবিগুলো আছে। যখনই সে ছবিগুলো দেখে লজ্জায় পালিয়ে যায়। (বলে হেসে দিল। সাথে নূরও হেসে দিল। তখনই একজন সার্ভেন্ট এসে নিচে যেতে বলল।) এই রে নিচে সবাই অপেক্ষা করছে। আমি যায়। তুমি এসো।
আফরানের মা চলে গেল। তার পিছু পিছু নূরও বের হলো রুম থেকে। অন্যদিকে আলিফার আসার সাথে সাথে সবাই প্রশ্নের ঝুড়ি নিয়ে বসল।
পুষ্পঃঃ- নূর কোথায়? আর ধোলাই কেমন চলল।
আলিফাঃঃ- আরে আমার পিছে পিছে দৌড়াতে গিয়ে নূর এক আন্টির সাথে ধাক্কা খেল। উনার হাতে জুস ছিল যা নূরের জামাতে পড়ায় জামা নষ্ট হয়ে গেল। আমি নূরের কাছে যাওয়ার আগেই আন্টি নূরকে টেনে নিয়ে চলে গেল।
আমরিনঃঃ- নূ…..
মায়মুনাঃঃ- নুরিইইইইই।
মায়মুনার চিৎকারে সবাই তার দিকে তাকাল। মায়মুনা অবাক হয়ে উপরের দিকে তাকিয়ে আছে। সেদিকে লক্ষ্য করে বাকিরাও তাকাল। তারাও তাকিয়ে সেদিকে দেখছে। আফরান তো হা হয়ে তাকিয়ে আছে। কারণ নূর সিড়ি দিয়ে নামছিল। টকটকে লাল রঙের ফুল হাতা ব্লাউজ। হাতে গর্জিয়াছ সাদা আর গোল্ডেন স্টোনের কাজ করা। মাখন সিল্কের সাদা শাড়ির উপর সাদা আর গোল্ডেন স্টোনের কাজ করা। চুল সামনে উঁচু করে পাফ করে কোপা বাঁধা। ঠোঁটে গাঢ় লাল লিপস্টিক। চোখে গাঢ় কাজল দেওয়া। এক কথায় বলতে গেলে নূরকে অসাধারণ লাগছে। সেখানে উপস্থিত প্রায় সবাই তার দিকে তাকিয়ে আছে। আফরান আনমনে বুকের বাপাশে হাত দিয়ে দিল। আর অজান্তে মুখ ফসকে বেরিয়ে গেল “হায়……” বেহায়ার মতো তাকিয়ে আছে নূরের দিকে। সবাই এভাবে তাকিয়ে তাকায় নূর অস্বস্তি বোধ করল। মায়মুনার কথা আফরানের ধ্যান ভাঙল।
মায়মুনাঃঃ- এটা কিন্তু ঠিক না। এএএএ (ন্যাকা কান্না করছে) আজ এনগেজমেন্ট আমার। সবচেয়ে বেশি সুন্দর দেখার কথা আমার। কিন্তু তুই এভাবে সাজলি কেন? সবাই আমাকে ফেলে তোর দিকে তাকিয়ে আছে।
নূর দাঁড়িয়ে রীতিমতো কাঁপছে। বলার মতো কোন শব্দই খুঁজে পাচ্ছে না। একে তো শাড়ি পরল। তার উপর সবার এভাবে তার দিকে তাকিয়ে থাকা তার কাছে লজ্জাজনক ব্যাপার মনে হচ্ছে।
আফরানঃঃ- (নূর এই শাড়ি পেল কোথা থেকে? এটা তো মায়ের কাছে ছিল। অনেক্ষণ যাবত চিন্তিত ছিল। তারপর নিজেই ভাবতে লাগলো। যার জন্য শাড়িটি কেনা তার কাছেই গিয়েছে। এসব ভেবে নিজেই মুচকি হাসছে।)
(শাড়িটি আফরান সেদিন কিনেছিল যেদিন সে নূরের জন্য জামা কিনতে গিয়েছিল। যখন নূর তাদের ফার্ম হাউসে সুইমিংপুলে পড়ে গিয়েছিল। নূরের জন্য জামা কিনতে গিয়ে আফরানের নজর পড়ল একটি পুতুলের গায়ে থাকা এই শাড়ির উপর। তখন তার মনে পড়ল ভার্সিটির প্রোগ্রামে নূরের সাদা ড্রেস পরে পারফর্ম করা। সাদা ড্রেসে নূরকে ভীষণ মানিয়েছিল। এই সাদা শাড়িতেও নূরকে বেশ সুন্দর লাগবে। সেই চিন্তায় কিছু না ভেবে হুট করে শাড়িটি কিনে নেই। কিন্তু কেনার পর নূরকে শাড়িটি দেওয়ার সাহস হয়নি। তাই সে শাড়িটি বাড়িতে নিয়ে আসে। তখনই কোথা থেকে জানি আফরানের মা এসে হাজির হলো। তখন আফরান ঘাবড়ে গিয়ে মুখে যা এলো বলে দিল। আফরানের মাও এতো কিছু চিন্তা না করে শাড়িটি আজ অবধি যত্নসহকারে রেখে দিল।)
আফরান চেয়েও নূরের উপর থেকে চোখ সরাতে পারছে না। নূরকে এতই সুন্দর লাগছে যে বলে বোঝানো যাবে না। তার উপর নূরের সেই কাজল কালো চোখ দুটো আফরানকে আরো আকৃষ্ট করছে।
.
চলবে
😠 Ragging To Loving 😍
Part:: 40
Writer:: Ridhira Noor
আফরানকে এভাবে হা হয়ে থাকতে দেখে ওয়াসিম গুটিসুটি পায়ে আফরানের কাছে এসে দাঁড়াল। কানে কানে ফিসফিস করে বলতে লাগলো।
ওয়াসিমঃঃ- মুখ বন্ধ কর। না হলে মশা ঢুকবে। (সাথে সাথে আফরান বুকের বাপাশ থেকে হাত নামিয়ে সোজা হয়ে দাঁড়াল। ওয়াসিমের কথায় আফরান কিছুটা লজ্জা পেল।)
মায়মুনাঃঃ- বাই দ্যা ওয়ে তোর নাকি জামা নষ্ট হয়ে গিয়েছিল। তুই এই শাড়ি পেলি কোথায়?
আলিফাঃঃ- হয়তো ওই আন্টিটা দিয়েছে। যে নূরকে নিয়ে গিয়েছিল। ওই…. ওই যে আন্টিটা। (আফরানের মা মেহমানদের সাথে কথা বলছিল। আলিফা ইশারায় সবাইকে দেখালো।)
মায়মুনাঃঃ- মামুনি? (নূরের কানে ফিসফিস করে বলল) বাহ্। তুই তো দেখি অনেক স্মার্ট এন্ড ইন্টেলিজেন্ট। আসার রাস্তা ক্লিয়ার করার জন্য সবার আগে মামুনিকেই পটিয়ে নিলি।
নূরঃঃ- কি? (হতভম্ব হয়ে)
কিছু বলার আগেই রিহানের মা এসে মায়মুনাকে নিয়ে গেল আংটি বদলের অনুষ্ঠানের জন্য। নিহাল আর মায়মুনা একে অপরকে আংটি পরিয়ে দিল। একে একে সবাই এসে তাদের নতুন জীবনের শুভকামনা জানালো।
পান্না আশেপাশে তাকিয়ে সোহেলকে খুঁজছে। তার মাথায় না জানি কি অকান্ড পাকানোর চিন্তা ঘুরছে। সোহেলকে না দেখতে পেয়ে তার ভীষণ রাগ হচ্ছে। পিছন ফিরে আসতেই কারো সাথে ধাক্কা লাগে।
পান্নাঃঃ- হোয়াট দ্যা…. (ভালো করে তাকিয়ে দেখে সোহেল। সোহেল পান্নাকে দেখে যেতে নিলে পান্না থামিয়ে দেয়) সোহেল। কেমন আছ?
সোহেলঃঃ- ভালো।
পান্নাঃঃ- শুনেছি তুমি নাকি নতুন কোম্পানি তৈরি করেছ।
সোহেলঃঃ- হুমম।
সোহেল কোন পাল্টা প্রশ্ন করছে না। কারণ সে মনে করে পান্না আর আফরান রিলেশনে আছে। এতে তার কোন কষ্ট নেই। কারণ পান্নার প্রতি তার ছিল আবেগ। যা মাত্র দুই দিনে সেই আবেগের মোহ কেটে গেল। কিন্তু আফরানের প্রতি তার বন্ধুত্ব ছিল গভীর ভালবাসার। তার বলা প্রত্যেকটা কথা তীরের মতো ছুবে আছে বুকে।
পান্নাঃঃ- (ওহ গড। আগে আমার পিছে পিছে কত ঘুরাঘুরি করত। আর এখন দেখ চোখ তুলেও তাকাচ্ছে না। ভেবেছিলাম তার দুর্বলতাকে কাজে লাগিয়ে নূরের বিরুদ্ধে ব্যবহার করব। কিন্তু এই দেখি সব মাটি করে দিল।) আব…. সোহেল তুমি দেখছি আমাকে ভুলেই গিয়েছ। আমার কোন খোঁজ খবর নাও না। না আমি তোমার খোঁজ খবর পেলাম।
সোহেলঃঃ- যার খোঁজ নেওয়ার কথা তার খোঁজ নাও। (বলে চলে গেল)
পান্নাঃঃ- হোয়াট এভার। যার খোঁজ নেওয়ার তার খোঁজ তো নিবই। (বাঁকা হাসি দিল। পাশে তাকিয়ে দেখে নূর আফরান আর তাদের পুরো ফ্রেন্ড সার্কেল একসাথে আড্ডা দিচ্ছে। কিন্তু আফরান নূরের দিকে তাকিয়ে আছে। আফরানের চাহনি দেখেই বোঝা যাচ্ছে সে নূরের প্রতি দুর্বল। নূরের প্রতি তার ফিলিংস তার চোখেই প্রকাশ পাচ্ছে।) নো নো। আমি সোহেলের চিন্তায় আফরানকেই ভুলে গেলাম। আফরানকে আমার নূরের কাছ থেকে দূরে রাখতে হবে। এখন হয়তো সে তার মনের অনুভূতি বুঝতে পারছে না। কিন্তু যখন বুঝতে পারবে তখন সোজা নূরের কাছে চলে যাবে। তা আমি হতে দিতে পারব না। নেভার।
সবাই কথা বলছিল তার মাঝে হুট করেই পান্না আফরানকে টেনে নিয়ে গেল। সবাই অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। আফরান ইশারা দিয়ে বলল সে আসছে। তাই সবাই আবারও আগের মতো আড্ডায় জমে গেল।
আফরানঃঃ- কি হয়েছে পান্না? এভাবে সবার সামনে টেনে নিয়ে এলে কেন? ইটস সো ইমবেরেসিং।
পান্নাঃঃ- (হুট করে কিছু চিন্তা না করেই নিয়ে এলাম এখন কি বলব?) ও…. আসলে…. আমি…. সোহেল। সোহেলের কথা বলতে নিয়ে এসেছি।
আফরানঃঃ- কি কথা?
পান্নাঃঃ- কি কথা….? হ্যাঁ! মানে সোহেল কত বছর পর এলো। তোমার সাথে দেখা হলো। তোমাদের ঝগড়া এখনো মিটে নি? (চিন্তার নাটক করে বলল)
আফরানঃঃ- না। (পাশে তাকাতেই নজর পড়ল নূরের উপর। তার সেই খিলখিল হাসি। চোখ মুখের ভঙ্গি দেখে হারিয়ে গেল নূরের মধ্যে। অজান্তেই তার দিকে হাসছে।)
সোহেল অন্যপাশে বসে জুস পান করছিল। পান্না আর আফরানকে একসাথে দেখে আফরানের সেই কথাগুলো মনে পড়ে গেল। কিন্তু আফরান পান্নাকে ছেড়ে অন্য দিকে তাকিয়ে আছে। সোহেল তাকে লক্ষ্য করে সেদিকে তাকাল। দেখল আফরান নূরের দিকে সেভাবে তাকিয়ে আছে।
সোহেলঃঃ- ইউ আর জাস্ট ডিসগাস্টিং আফরান। পান্নাকে পাওয়ার জন্য আমার এবং আমার বাবার সম্বন্ধে কত কিছু বলেছিলি। আর এখন পান্নাকে পাশে রেখে অন্য মেয়ের দিকে তাকিয়ে আছিস। তুই তো এমন ছিলি না। হয়তো এমনই ছিলি। আমিই বুঝতে পারিনি। (জুসের গ্লাস জোরে চাপ দিতেই গ্লাস ভেঙে হাত কেটে গেল। সোহেল রেগে চলে গেল অনুষ্ঠান ছেড়ে।)
আফরানকে এভাবে নূরের দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে পান্নার খুব রাগ হচ্ছে। রাগে নিজের জামা খামচে ধরল।
আফরানঃঃ- পান্না আমি যায়। ওরা আমার জন্য অপেক্ষা করছে। (বলে চলে গেল)
পান্নাঃঃ- (ওরা নাকি নূর? কেন আফরান? কেন? কেন বারবার তুমি ওর দিকে ছুটে চলেছ। কি আছে ওর মধ্যে। এত বছর ধরে যে আমি তোমার সামনে আছি কই আমার দিকে তো একটি বার তাকালেও না। আজ আমি যে তোমার জন্য সেজে এসেছি তারিফ করা তো দূরে থাক একটি বার ভালো করে তাকালে না। আর ওই নূর। যে কি না তোমাকে পাত্তা দেয় না। বারবার তোমাকে সবার সামনে ছোট করে। তুমি তার কাছেই ফিরে যাও।)
আফরান চলে গেল তাদের কাছে। মায়মুনা নিহালকে তাদের মাঝে নিয়ে এলো সবার সাথে পরিচয় করিয়ে দিতে।
মায়মুনাঃঃ- নিহাল এরা সবাই হলো…..
নিহালঃঃ- চিনি সবাইকে।
মায়মুনাঃঃ- চিনেন কিন্তু ভার্সিটির স্টুডেন্ট হিসেবে। এখন চিনবেন আমার জ্ঞাতি সম্পর্কে। এরা হলো আমার ফ্রেন্ডস (মেয়েরা)। আর এই নূর হলো আমার বেস্ট ফ্রেন্ড। আর এই হলো আফরান ভাই, রিহান ভাই। দুজনেই আমার মামাতো ভাই। আর ওরাও আমার ভাই। আফরান ভাই আর রিহান ভাইয়ার বন্ধুরা। সেটা তো জানেনই।
নূরঃঃ- এক্সকিউজ মি পিলিজ। (এক হাত উপরে উঠিয়ে) নিহাল স্যার আপনাকে স্যার ডাকতে কেমন জানি ভার্সিটি ভার্সিটি ফিল হচ্ছে। আপনাকে জিজু ডাকলে আপত্তি নেই তো?
নিহালঃঃ- না আপত্তি নেই। কিন্তু ভার্সিটিতে অনলি স্যার। নো জিজু।
নূরঃঃ- উক্কি। (দাঁত বের করে দিল ভেটকাইয়া) তাহলে আপনি আমার জিজু আমি আপনার শালিকা। আর জিজু শালিকার মধ্যে অনেক দুষ্টুমি হবে। তখন কিন্তু রাগ করতে পারবেন না।
নিহালঃঃ- ওকে ডান।
মেহেরঃঃ- আমরা বাদ যাব কেন? আমরাও আপনাকে জিজু ডাকব। হিহিহি।
নিহাল মুচকি হাসলো।
আফরানঃঃ- বয়সে বড় হলেও সম্পর্কে কিন্তু আপনি আমাদের ছোট। কারণ মায়মুনা আমার ছোট বোন। সে হিসেবে সম্পর্কে আপনিও ছোট হবেন। তাই আপনাকে জিজু না ভাই বলে ডাকব। আপনার আপত্তি নেই তো?
নিহালঃঃ- না। আমার কোন আপত্তি নেই।
এভাবেই সবাই নিহালের সাথে কুশল বিনিময় করল। একে অপরের সম্পর্কে জেনে নিল।
পুষ্পঃঃ- আচ্ছা পার্টি চলছে কিন্তু পার্টির মজা নেই। আজ নিহাল জিজু আর মায়মুনা এনগেজমেন্ট হলো। অথচ কোন নাচ গান হলো না। এটা তো চলবে না। অন্তত একটা কাপল ডান্স তো অবশ্যই হওয়া উচিৎ।
মায়মুনাঃঃ- তাই তো। আমার কত ইচ্ছা, কত শখ আছে। আমি নাচব ঠিকই কিন্তু একা না। তোদেরও ডান্স করতে হবে। সব কাপল একসাথে অন দ্যা ফ্লোর ডান্স করবে। ওকে?
নিহাল এক হাত বাড়িয়ে দিল মায়মুনা সেই হাতের উপর হাত দিয়ে মাঝ বরাবর গেল। ওয়াসিম-সিমা, আহিল-আমরিন, রিহান-পুষ্প তারাও গেল। ইয়াশ মেহেরের কাঁধে ধাক্কা দিল। মেহের ইশারা দিয়ে কি জিজ্ঞেস করায় ইয়াশ হাত বাড়িয়ে দিল। মেহের মুচকি হেসে তার হাতে হাত রাখল। আলিফা আড়চোখে আরিফের দিকে তাকিয়ে আবার তাদের নাচে মনযোগ দিল। মায়মুনা আশেপাশে তাকিয়ে নূরকে খুঁজছে। তাকিয়ে দেখে নূর আফরান দুইজন দুই দিকে দাঁড়িয়ে আছে। মায়মুনা দুজনের হাত ধরে টেনে মাঝখানে নিয়ে এলো। তারপর তাদের একে অপরের হাতে হাত তুলে দিল। আবার দেখল আরিফ আর আলিফারও একই অবস্থা। তাদেরও নিয়ে এলো।
মায়মুনা-নিহাল মাঝ বরাবর দাঁড়াল। আর বাকি ছয় কাপল তাদের চারপাশে গোল করে দাঁড়াল। মায়মুনা ইশারা করায় লাইটস অফ করে শুধু কাপলদের উপর লাইম লাইট দিল। একটি রোমেন্টিক সং দিল।
♪♪♪♪
Tere hathon ki taraf
Mere hathon ka safar
Rozana, rozana..
(সব ছেলেরা মেয়েদের এক হাত তাদের হাতের মধ্যে মুষ্টিবদ্ধ করল। অন্য হাত কোমরে দিয়ে নাচ শুরু করল)
পুষ্পঃঃ- Teri aankhon se kahe
Kuch toh meri nazar
Rozana, rozana..
(রিহানের চোখে চোখ রেখে)
আমরিনঃঃ- Rozana main sochun yehi
Kahan aaj kal main hoon lapata
Tujhe dekh toh hansne lage
Mere dard bhi kyun khamakhan
(আহিলের দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসলো)
মেহেরঃঃ- Hawaon ki tarah
Mujhe chhu ke tu guzar
Rozana, rozana..
(ইয়াশের গালের এক সাইডে স্লাইড করল)
Tere hathon ki taraf
Mere hathon ka safar
Rozana, rozana..
নূর আর আফরান গানের তালে নাচছে। নূর বলে উঠল।
নূরঃঃ- সরি।
আফরানঃঃ- কেন?
নূরঃঃ- আপনার দেওয়া শাড়ি আপনার মা যত্ন করে রেখেছিল আপনার স্ত্রীর জন্য। কিন্তু পরে নিলাম।
আফরানঃঃ- যার জন্য শাড়িটি কেনা সেই পড়ল।
নূরঃঃ- মানে?
আফরানঃঃ- মানে শাড়িটি তোমার জন্য কিনেছিলাম। মনে আছে তোমার যখন প্রথমবার ফার্ম হাউসে গিয়েছিলে সেখানে সুইমিংপুলে পড়ে গেলে। তোমার জন্য জামা কিনতে শপে যায়। সেখানে এই শাড়িটা দেখেছিলাম। সাদা রঙে তোমাকে ভীষণ মানায়। তাই এই শাড়িটা কিনেছিলাম। কিন্তু দেওয়ার সাহস হয়নি।
নূর অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে আফরানের দিকে। বিনিময়ে আফরান মুচকি হাসলো।
নূরঃঃ- Inn aankhon se ye bata
Kitna main dekhu tujhe
Reh jaati hai kuch kami
Jitna bhi dekhu tujhe
(অপলক ভাবে তাকিয়ে আছে আফরানের চোখে। আফরানও যেন হারিয়ে যেতে চাই এই চোখ জোড়ায়।)
আলিফাঃঃ- Rozana main sochun yehi
Ke jee lungi main be-saans bhi
Aise tu mujhe milta rahe agar
Rozana, rozana..
(আরিফের দিকে তাকিয়ে আছে এক ধ্যানে। যেন নিজের ভালবাসার পিপাসা মেটাচ্ছে। আজ প্রথম আরিফকে এতটা কাছে পেল। আর পাবে কি না জানা নেই। তাই এই মূহুর্তটা প্রতিনিয়ত বাঁচতে চাই। এই মূহুর্তকে নিজের মতো করে নিতে চাই। তার চোখের পানি টলমল করছে। সেটা আরিফের চোখে এড়ায় নি। কিন্তু সে তার কারণ বুঝতে পারছে না।)
Tere hathon ki taraf
Mere hathon ka safar
Rozana, rozana..
মায়মুনাঃঃ- Yun aa mila tu mujhe
Jaise tu mera hi hai
Aaram dil ko jo de
Woh zikr tera hi hai
(নিহালের বুকে মাথা রাখল। নিহালও আলতো জড়িয়ে ধরল মায়মুনাকে।)
সিমাঃঃ- Rozana main sochun yehi
Ke chalti rahe baatein teri
Aate jaate yunhi mere liye thehar
Rozana, rozana..
(ওয়াসিমের গাল টেনে দিল। ওয়াসিমও সিমার গাল টেনে দিল। দুজনেই হেসে উঠল।)
Tere hathon ki taraf
Mere hathon ka safar
Rozana, rozana..
Rozana, rozana…
(মেয়েরা ছেলেদের এক হাত মুড়িয়ে ঘুরে কাছে এলো। ছেলেরা তাদের সেই হাতে কোমর আকড়ে ধরে পিছন থেকে ঝুঁকিয়ে দিল। সব জুটি একে অপরের দিকে তাকিয়ে আছে।
♪♪♪♪
গান শেষে সবাই হাত তালি দিল। পুরো গানে সবাই একে অপরের মধ্যে হারিয়ে ছিল। তালির আওয়াজে সবার ধ্যান ভাঙল। আলিফা এক দৌড়ে চলে গেল। এক কোণায় দাঁড়িয়ে মুখ চেপে ধরে কাঁদছে।
আলিফাঃঃ- কেন আমার এতো কষ্ট হচ্ছে? কেন? আরিফ তো আমাকে ভালবাসে না। আমি জানি। কিন্তু তাও ভালবাসার বিনিময়ে ভালবাসা না পেলে ভীষণ কষ্ট হয়। এক তরফা ভালবাসা শুধু কষ্টই দেয়। কষ্ট ছাড়া আর কিছুই না। (আলিফা চোখ মুছে নিজেকে স্বাভাবিক করে নিল। কৃত্রিম হাসি দিয়ে নিজের কষ্ট আড়াল করার চেষ্টা করছে। তাও সবার মাঝে স্বাভাবিক হয়ে গেল। আরিফ তার সামনে দাঁড়িয়ে আছে। কিন্তু একটি বারও তার দিকে তাকাচ্ছে না। আরিফ এক ধ্যানে তার দিকে তাকিয়ে আছে। বোঝার চেষ্টা করছে কি হয়েছে?)
বাগদানের অনুষ্ঠান যথাযথ ভাবে সম্পন্ন হলো। সবাই নিজ নিজ বাড়ি পৌঁছে গেল।
পরের দিন সকালে______________________
তোয়ালে দিয়ে চুল মুছতে মুছতে নূর রুমে এলো। জানালার পাশে গিয়ে দাঁড়াল। চোখ বন্ধ করে এক দীর্ঘ নিশ্বাস নিল। সকালে শীতল বাতাস আলতো করে ছুঁয়ে দিল। বাতাসে খোলা ভেজা চুল উড়ছে। চোখ খুলে পাশে তোয়ালে রাখতে গিয়ে চোখ পড়ে আফরানের সেই শাড়ির উপর। পাশে তোয়ালে রেখে শাড়িটি হাতে নিল। অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে শাড়িটির দিকে। অজান্তে ঠোঁটের কোণে হাসির রেখা ফুটে উঠল। লজ্জায় গাল দুটোও লাল হয়ে গেল। আনমনে চোখ বন্ধ করে শাড়িটি জড়িয়ে ধরল। আর হুদাই মুচকি হাসছে। পরক্ষণে কানে বেজে উঠল পান্নার কথাগুলো। মূহুর্তে তার হাসি উধাও হয়ে গেল। এতক্ষণ খুশিতে যে চোখ দুটো চকচক করছিল এখন পানিতে টলমল করছে। শাড়িটি পাশে রেখে দৌড়ে চলে গেল।
.
.
ট্রাউজার আর হুডি পরে সকাল সকাল আফরান বাইরে থেকে এলো।
আফরানের মাঃঃ- হলো তোর জগিং? এবার ফ্রেশ হয়ে তাড়াতাড়ি আয়।
আফরান তার মায়ের আওয়াজ শুনে সাথে সাথে হাত হুডির পকেটে লুকিয়ে ফেলল।
আফরানঃঃ- মা আমার কিছু কাজ আছে অফিসের। একটু দেরি হবে।
আফরানের মাঃঃ- আচ্ছা ঠিক আছে। কিন্তু তাড়াতাড়ি আসবি। (বলে কিচেনে চলে গেল।)
আফরানও সিড়ি দিয়ে দৌড়ে উঠে রুমে গেল। আশেপাশে খুঁজে ল্যাপটপ নিয়ে বসল জানলার ধারে। হুডির পকেট থেকে পেনড্রাইভ বের করে ল্যাপটপে দিল। ল্যাপটপের স্ক্রিনে ভেসে উঠল গতকালকের অনুষ্ঠানের ছবি। আফরান সব ছবি দেখতে লাগলো। দেখতে দেখতে হঠাৎ একটি ছবিতে তার চোখ আটকে যায়। ছবিতে আর কেউ না নূর। সেই শাড়ি পরা ছবি। মুখে হাসি। ছবি দেখতে দেখতে একটা ছবি সামনে এলো। সেটা দেখে ফিক করে হেসে দিল। কারণ ছবিটিতে নূর আর আফরানের জামা নিয়ে একে অপরকে পেঙ্গুইন-তোতাপাখি বলছিল সেই ঝগড়ার ছবি। যেখানে নূর নাক কুচকে, ঠোঁট উল্টিয়ে আছে। গাল দুটো ফুলিয়ে আছে। দেখতে পুরাই বাচ্চার মতো লাগছে। আফরান নূরের সব ছবি অন্য ফোল্ডারে সেভ করে রাখল। ফোল্ডারের নাম দিল #আনন্দিতা”।
আফরান সারারাত ঘুমাতে পারেনি। চোখ বন্ধ করলেই ভেসে উঠছে নূরের চেহারা। শাড়িতে তাকে অপরূপ লাগছিল। তাই সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠেই ফোন দিল সেই ফটোগ্রাফারকে। যে অনুষ্ঠানের ছবি তুলেছিল। তার কাছে গিয়ে সব ছবি আর্জেন্টলি পেনড্রাইভে নিয়ে নিল। কেউ যাতে সন্দেহ না করে তাই পুরো অনুষ্ঠানের ছবি নিয়ে নিল।
.
.
.
মায়মুনাঃঃ- বিয়ের আর মাত্র দশ দিন বাকি। এখনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি কোন রিসোর্টে ওয়েডিং প্লান করা হবে। কখন কি হবে আমার কিছুই মাথায় আসছে না।
আফরানঃঃ- তোকে এত চিন্তা কে করতে বলছে? আমরা আছি কি করতে? সব আয়োজন করা হয়েছে। দুই দিন পরই সবাই রওনা দিব রিসোর্টের উদ্দেশ্যে।
মায়মুনাঃঃ- হুমম।
আফরানঃঃ- তুই কি ভাবছিস? ফুফা ফুফি নেই বলে আমরা তোর বিয়ে এমনিই দিয়ে দিব।
মায়মুনাঃঃ- ভাই কি বলছ এসব। আমি মোটেও এমন চিন্তা করিনি। (কান্না সুরে বলল)
আফরানঃঃ- আরে পাগলি কান্না করছিস কেন? মুখ ফসকে বেরিয়ে গেল। আচ্ছা বাবা সরি। (কান ধরে। তাও কান্না থামছে না। কি করা যায়?) আচ্ছা চল তোকে ফুচকা খাওয়াতে নিয়ে চলি তোকে।
মায়মুনাঃঃ- সত্যি! (লাফিয়ে উঠল) ঘুষ দিচ্ছ? (ভ্রু কুচকে) ঘুষ হলে ঘুষ। ফুচকার জন্য সব মাফ। চল। (মায়মুনার কান্ড দেখে আফরান ফিক করে হেসে দিল।)
আফরান ড্রাইভ করছে। গাড়ি এসে থামল ভার্সিটির সামনে।
আফরানঃঃ- আমাদের ভার্সিটির ফুচকা নাকি অনেক মজা। আমি তো কখনো খেয়ে দেখিনি। নূর আর তার বান্ধবীরা বলত। চল তোকে সেখানে নিয়ে যায়।
গাড়ি থেকে নেমে দুজনে গেল ফুচকার দোকানের সামনে। উরিম্মা তারা গিয়ে যে দৃশ্য দেখল তার জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিল না। দুজনেই থমকে দাঁড়িয়ে আছে। হা হয়ে একে অপরের দিকে তাকিয়ে আবার সামনে তাকাল। নূর একটা ছেলেকে ইচ্ছে মতো ধোলাই দিচ্ছে।
নূরঃঃ- (দিল ছেলেটার পেটে ঘুসি) ঠিক মতো কর। (ছেলেটা মুখে আঙুল দিয়ে ফুহ্ দিচ্ছে) কি করছিস কি? ঠিক ভাবে কর। নয়লে তোর চাটনি বানামু আজ।
ছেলেটাঃঃ- হচ্ছে না তো। (কাঁদো কাঁদো গলায় বলল)
নূরঃঃ- এই দেখ এভাবে কর। (মুখে আঙুল জোরে শিষ বাজালো। তার শিষের আওয়াজে আশেপাশের সবাই তার দিকে তাকিয়ে আছে। কিন্তু নূর এতে কোন ভ্রুক্ষেপ করল না) বাজাও।
আফরানঃঃ- তুমি শিষ বাজাতে পার? (অবাক হয়ে বলল)
নূরঃঃ- আপনি আবার কোথা থেকে এলেন? (বিস্মিত হয়ে)
এই সুযোগে ছেলেটা দৌড়ে পালালো।
নূরঃঃ- ওই….. আপনার জন্য সে পালিয়ে গেল। (বলে দিল তার পিছে দৌড়) দাঁড়া হারামজাদা। পালাইতেছিস কই। (জুতা খুলে ফ্লাইং জুতা ছুড়ে মারল ছেলেটার দিকে। জুতাও এই সেই জুতা না। শক্ত চামড়ার জুতা। যার উপর পড়বে সেই একেবারেই উপরে চলে যাবে। জুতা উড়ে গিয়ে পড়ল ছেলেটার পিটে।)
ছেলেটাঃঃ- ও মা গো (ব্যাথায় চিৎকার করে উঠল। নূর দৌড়ে গিয়ে পিছন থেকে তার কলার ধরল।)
নূরঃঃ- যাস কই? শিষ বাজা।
ছেলেটাঃঃ- সরি আপু। আর জীবনেও শিষ বাজাবো না। এই কান ধরে উঠবস করছি।
নূরঃঃ- আমাকে না ওই মেয়েটাকে বল সরি।
ছেলেটা কান ধরে উঠবস করে ফুচকার দোকানের পাশে দাঁড়িয়ে থাকা মেয়েকে সরি বলল। মেয়েটি মাথা নিচু করে আছে।
মেয়েটিঃঃ- ইটস ওকে। বাট নেক্সট টাইম যাতে অন্য কারো সাথে এমন না করেন।
ছেলেটাঃঃ- জ্বি। সরি আপু। আপু আপনাকেও সরি। (নূরকে উদ্দেশ্য করে)
নূরঃঃ- হুমম ইটস ওকে। এখন ভাগগগ।
ছেলেটা দৌড়ে পালালো। আফরান আর মায়মুনা কিছু বুঝতে পারছে না। সব তাদের মাথার উপর দিয়ে গেল।
.
চলবে