Ragging To Loving Part-43+44

0
771

😠 Ragging To Loving 😍
Part:: 43
Writer:: Ridhira Noor

নূর বাইরে দরজা থেকে উঁকি মেরে দেখছে মায়মুনা আছে কিনা। সবাই নিজ নিজ কাজে লেগে পড়েছে। মায়মুনা হলুদে মাখা মুখ নিয়ে ওয়াশরুমে চলে গেল। এই সুযোগে নূর বিজয়ী হাসি দিয়ে কোমর দুলিয়ে টিড়িং টিড়িং করে ভেতরে এলো। নূর সিড়ি বেয়ে তার রুমে যাচ্ছে হাত ধুতে। মায়মুনাকে হলুদ লাগাতে গিয়ে তার পুরো হাত হলুদে ভরে গেল। নূর হাত ঝেড়ে ঝেড়ে হাটছে। অপর পাশ থেকে সোহেল মোবাইল টিপতে টিপতে হাটছে। দুজনেরই সামনে দিকে খেয়াল নেই। দুজনেই মুখোমুখি হতেই কেউ একজন হেচকা টান দিয়ে নূরকে পাশের রুমে নিয়ে গেল। আচমকা ঘটনায় সোহেলের কিছু একটা অনুভব হলো। সোহেল আশেপাশে তাকিয়ে গোল হয়ে ঘুরলো।

সোহেলঃঃ- কি হলো এইমাত্র? মনে হলো যেন কিছু একটা দ্রুত বেগে সামনে থেকে অতিক্রম করল। কিন্তু আশেপাশে তো কেউ নেই। হয়তো আমারই মনের ভুল। (আবারও ফোন টিপতে টিপতে চলে গেল।)

আচমকা টানে নূর ভয় পেয়ে যায়। যেই না জোরে চিৎকার দিবে সামনের জন তার মুখ চেপে ধরে দেয়ালে ঘেষে ধরল। ভয়ে নূর চোখ বন্ধ করে হাত দিয়ে সামনের জনের জামা খামচে ধরে। জোরে জোরে শ্বাস নিয়ে ফোঁপাতে লাগলো। মনে হচ্ছে যেন এক্ষুনি দম আটকে মরে যাবে। ভয়ে নূর পিটপিট করে চোখ খুলে তাকিয়ে দেখে আফরান। তাদের দুজনের মাঝে দেয়াল হিসেবে শুধু আফরানের হাত আছে। আফরান নূরের চেয়ে লম্বা হওয়ায় নূর মাথা উপুড় হয়ে তাকিয়ে আছে। আফরানের চোখ দুটো অসম্ভব লাল হয়ে আছে। চোখে মুখে রাগের চাপ। গরম নিশ্বাস ছাড়ছে। ঠিক যেন ড্রাগন। ভয়ে নূরের গলা শুকিয়ে গেছে। মুখ চেপে ধরায় শ্বাস নিতে পারছে। ফলে আফরানের শার্ট শক্ত করে আঁকড়ে ধরে। সাদা শার্ট হলুদে ভরে গেল। ঘটনার তৎপরতা বুঝতে পেরে আফরান নূরের মুখ থেকে হাত সরিয়ে নেই। কিন্তু দূরত্ব এখনো কমে নি।

নূরঃঃ- এক মিনিট দাঁড়ান। আমি দা, বটি, ছুরি, তলোয়ার কিছু একটা নিয়ে আসি। পুরো হাতটাই কেটে আপনাকে দিয়ে দিব। তারপর আরাম সে বুকের সাথে বেঁধে রাখেন। (শান্ত হয়ে বলল) শুধু বারবার হাত একটা টেনে নিয়ে যাবে। এতই যদি পছন্দ হয় আমার হাত একেবারে কেটে দিয়ে দেয়। (রেগে)

আফরানঃঃ- চুপ। একদম চুপ। সবসময় শুধু খিটখিট খিটখিট কর। (ধমক দিয়ে)

একে তো আফরান এতটা কাছে তারপর উপর চিল্লিয়ে ধমক দেওয়ায় নূরের শিরা, উপশিরা, ধমনী, নাড়িবুড়ি, হৃৎপিণ্ড, কিডনি সব কেঁপে উঠল। ভয়ে দেয়ালের সাথে একেবারে মিশে গেল। পারছে না দেয়াল ভেঙে পিছন থেকে দৌড় দিতে।

নূরঃঃ- (এই খাচ্চোরের আবার কি হলো? হুদাই ষাড়ের মতো চিল্লাছে কেন? উরিম্মা সাদা চামড়া দেখে কোন ভূত পেত্নী ভর করল না কি? চোখ বড় বড় করে তাকাল। নূর তুই অনেক সাহসী। এসব ভূত টুত তোর কিছু করতে পারবে। তোর কামাল দেখাতে হবে এই ভূতকে।) এক মিনিট। (সিরিয়াস একটা মুড নিল।) পালা নূর। (আফরানের হাত ফাঁকা করে যেই না দৌড় দিল আফরান হাত ধরে টান দিয়ে আবারও দেয়ালের সাথে মিশিয়ে নিল।)

আফরানঃঃ- কোথাও যাবে না তুমি। যেতে দিব না তোমাকে। যে চলে গিয়েছে তাকে আটকাতে পারিনি। এখন আর কেউ যাবে না। আর কাউকে যেতে দিব না। কোথাও যাবে না। যাবে না তুমি। যাবে না। (রেগে অস্থির হয়ে যাচ্ছে। এদিকে ভয়ে নূরের জান পরাণ বেরিয়ে যাচ্ছে। আফরানকে এতটা রাগে কখনো দেখেনি। আফরানের চোখ কেমন যেন হয়ে আছে। চোখ টলমল করছে। মনের কষ্টগুলো চোখে প্রকাশ পাচ্ছে। মনের অজানা ভয় করছে। মূল্যবান কিছু হারিয়ে ফেলার ভয়। যেটা নূর তার চোখে তাকিয়ে বুঝতে পারছে।)

নূরঃঃ- কেন যাব না? কোন অধিকারে যাব না আমি। না গিয়ে তো উপায় নেই। কারণ থাকার অধিকারটা যে আমার নেই। (অভিমানী সূরে)

হঠাৎই আফরানের চোখের কোণে বেয়ে এক ফোঁটা পানি গড়িয়ে পড়ল। আঘাতে তো পাথরও ভেঙে যায়। এটা তো মন। মনের আঘাতে অশ্রু বাঁধা মানে নাকি? আফরানের অশ্রু বিন্দু হয়ে পড়ল নূরের গালে। নূর হচকিয়ে চোখ বন্ধ করে ফেলল। নূর হাত দিয়ে গাল মুছে সামনে তাকিয়ে দেখে কেউ নেই। পুরো রুমে খুঁজে দেখল কিন্তু আফরানকে পেল না।

নূরঃঃ- মাত্রই কি ঘটলো! (অবাক হয়ে হাতের দিকে তাকিয়ে আছে। যে হাতে গাল মুছলো। ভাবনায় ছেদ পড়ল সিমার ডাকে।)

সিমাঃঃ- কিরে তুই স্টোর রুমে কি করছিস?

নূরঃঃ- স্টোর রুম? (অবাক হয়ে চারপাশে তাকিয়ে দেখে আশেপাশে সব ডেকোরেশন সরঞ্জাম।) ও… আমি… মায়মুনার থেকে লুকিয়ে আছি। তুই কি করছিস?

সিমাঃঃ- ফুল নিতে এলাম। ডেকোরেশনে লাগবে তাই। মায়মুনা ওর রুমে এবার তুই চলে আয়। (ফুলের ঝুড়ি নিয়ে বেরিয়ে গেল।)
.
.
আফরান তার রুমে প্রবেশ করে সোজা গেল ওয়াশরুমে। বেসিনের সামনে দাঁড়িয়ে কিছুক্ষণ আয়নায় তাকিয়ে ছিল। পানির কল ছেড়ে মুখে অবিরাম পানির ঝাপটা দিচ্ছে। একসময় ক্লান্ত হয়ে জোরে জোরে নিশ্বাস নিচ্ছে।

আফরানঃঃ- একটু আগে আমি কি করে এলাম? নূরকে ওসব কেন বললাম আমি? কেন নূরকে অন্য কারো সাথে ভাবতে পারছি না? কেন? কেন বারবার শুধু ওকে নিজের কাছে রাখতে চাই? আগলে রাখতে চাই যাতে কেউ নিয়ে না যায়। নূর আর সোহেলকে একসাথে দেখে কেন বুকে ব্যাথা করছিলো? সোহেলের যাওয়াতে যতটা না কষ্ট পেয়েছি তার চেয়ে বেশি কষ্ট হচ্ছে এটা ভেবে যে নূর অন্য কারো সাথে…. আহহহ (নিজের চুল মুটি ধরে টানছে।)

নিজেকে শান্ত করে নিল। আয়নায় তাকিয়ে দেখে তার শার্টে হলদে হয়ে আছে। হাত দিয়ে দেখে হলুদ। একটু আগে নূরের সাথে ঘটনা মনে পড়ে গেল। শার্টের দিকে তাকিয়ে ঠোঁট বাকিয়ে মুচকি হাসলো। পরক্ষণে আবার চিন্তায় পড়ে গেল। কি হচ্ছে এসব তা ভেবে কুল পাচ্ছে না।

সন্ধ্যায় ___________________________
নিহাল হলুদ পাঞ্জাবি সাদা চুড়িদার পরল। পাঞ্জাবির হাতা ভাজ করে কুনুই পর্যন্ত দিল। মায়মুনাকে বাঙালি স্টাইলে হলুদ শাড়ি পরানো হলো। গায়ে আর্টিফিশিয়াল ফুলের গহনা পরল। দুইজনকে পাশাপাশি দুইটা পিরিতে বসানো হলো। নিহালের মা এসে নিহালের গালে, হাতে হলুদ লাগিয়ে দিল। আফরানের মা আর রিহানের মা এসে দুইদিক থেকে মায়মুনাকে হলুদ লাগিয়ে দিল। একে একে সবাই এসে তাদের হলুদ লাগিয়ে দিল।

নূরঃঃ- আমি তো সকালেই হলুদ লাগিয়ে দিয়েছি। এখন আর না লাগালেও চলবে। (হেসে দিল)

মায়মুনাঃঃ- অসভ্য মাইয়া কোথাকার।

নূর হেসে মায়মুনার গালে হলুদ লাগিয়ে দিল। হলুদ লাগিয়ে উঠে যেতেই হুট করে আফরান নূরের সামনে চলে আসে। সকালের ঘটনায় লজ্জা পেয়ে চলে যেতেই আফরান থামিয়ে দেয়।

আফরানঃঃ- নূর? আই এম সরি। সকালে না জানি কেন এমন করলাম। রাগের চোটে কি করি মাথায় থাকে না।

নূরঃঃ- রাগ? কিসের রাগ?

আফরানঃঃ- (কি করে বলব কিসের রাগ। কি করে বলব যে তোমাকে আর সোহেলকে একসাথে দেখে রাগ হয়েছিল। আমি নিজেও জানি না কেন রাগ হলো।) জানা নেই। (বলেই চলে গেল। কারণ নূরের প্রশ্নের উত্তর তার কাছে নেই।)

নূরঃঃ- আজব প্রানী তো। রাগ করেছেন কিন্তু কিসের রাগ জানা নেই। আর রাগ ঝাড়ার জন্য আমাকেই পেয়েছে? (রেগে)
.
.
সিমা আমরিন পুষ্প আলিফা মেহের একে একে সবাই মায়মুনাকে হলুদ লাগিয়ে দিল। মেহের পাশে তাকিয়ে দেখে ইয়াশ একটি মেয়ের ফটো তুলছে। মেয়েটিও ইয়াশের গা ঘেঁষে এসে বারবার ক্যামেরায় ছবি দেখছে। মেহের রেগে উঠে গিয়ে ইয়াশের হাত ধরে টেনে নিয়ে এলো। ইয়াশ হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে আছে। কি হচ্ছে কিছু বুঝতে পারছে না। একপাশে নিয়ে এসে দাঁড় করালো।

মেহেরঃঃ- কি সমস্যা তোমার? মেয়েদের এতো ছবি তুলো কেন? আর ছবি তুললেও এভাবে গা ঘেঁষে দাঁড়ানোর কি আছে? (ইয়াশের কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে)

ইয়াশঃঃ- আরে আজব তো। সে ছবি তুলতে বলল তাই তুললাম। আর আমি কোথায় গা ঘেঁষে দাড়ালাম। সেই তো গা ঘেঁষে দাঁড়াচ্ছিল।

মেহেরঃঃ- সে দাঁড়াচ্ছিল তুমি দূর হতে পারনি?

ইয়াশঃঃ- না পারিনি। আর দাঁড়ালেই বা কি?

মেহেরঃঃ- দাঁড়ালেই বা কি মানে? জানো না কি? কষ্ট হয় আমার যখন অন্য কোন মেয়ে তোমার এতটা কাছে আসে। আমি সহ্য করতে পারি না কোন মেয়ে তোমার আশেপাশে আসুক।

ইয়াশঃঃ- কেন? (অবাক হয়ে)

মেহেরঃঃ- বিকজ আই লাভ ইউ। ভালবাসি তোমায়। তাই ভয় করে তোমাকে হারানোর। (বলে কেঁদে দিল)

ইয়াশঃঃ- (মেহেরকে জড়িয়ে ধরল) আই লাভ ইউ টু। তোমার মুখ থেকে কথাটা বের করানোর জন্য ওই মেয়েটার সাথে এমন করছিলাম।

মেহেরঃঃ- (দিল ইয়াশের পেটে ঘুসি) তার মানে আমাকে কষ্ট দিতে ভালো লাগে তোমার।

ইয়াশঃঃ- না। তোমাকে কাছে পেতে ভালো লাগে। যদি এমন না করতাম তাহলে তুমি নিজ থেকে কনফেস করতে না। (মেহের কেঁদে ইয়াশকে জড়িয়ে ধরল। ইয়াশও আলতো করে জড়িয়ে ধরল)

আলিফা মেহেরকে খুঁজতে গিয়ে ইয়াশ আর মেহেরকে একসাথে দেখে মুচকি হাসলো।

আলিফাঃঃ- (তুই অনেক লাকি রে মেহের। নিজের ভালবাসাকে নিজের করে পেলি। আজীবন যাতে একসাথে থাকিস দোয়া করি।)

আলিফা সামনে তাকিয়ে দেখে অপরপাশ থেকে আরিফও তাদের দেখে মুচকি হাসছে। দুজনের চোখাচোখি হতেই আলিফা চলে গেল। আরিফ হতভাগ হয়ে তার যাওয়ার পানে তাকিয়ে আছে। এটা ঘটনা শুধু এখন না প্রায় কয়েকদিন ধরে এমন করছে আলিফা। আরিফ আসলেই তাকে এড়িয়ে চলে। অনেক সময় এমন হয় সবাই মিলে আড্ডা দিচ্ছে। তাদের মাঝে আরিফ এলে সে কোন না কোন বাহানা দিয়ে সেখান থেকে চলে যায়। কারণ আরিফকে দেখলে তার ভীষণ কষ্ট হয়। ভালবেসে ভালবাসার মানুষটিকে না পাওয়ার কষ্ট। আরিফও মাথা নিচু করে চলে গেল।
.
.
ফোনে কথা বলতে বলতে আফরান বাইরে চলে এলো।

আফরানঃঃ- জ্বি। না না ইটস ওকে। আমার বোনের বিয়ের আয়োজনে ডিলটা আটকে আছে। আর দুইদিন পরই আমরা ফিরে আসব। জ্বি ঠিক আছে।

কথা বলে ফোন রেখে দেয়। যেই না পিছন ফিরে চলে আসবে কান্না সুরে একটি মেয়েলি কণ্ঠ ভেসে এলো। কাছে গিয়ে দেখে পান্নার বান্ধবী রিতা কাঁদছে। আফরানকে দেখে রিতা তড়িঘড়ি ফোন কেটে চোখের পানি মুছে নিল।

আফরানঃঃ- কি হলো কাঁদছ কেন তুমি? (রিতা কিছু বলছে না। চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে) দেখ তুমি চাইলে আমি সাহায্য করতে পারি।

রিতাঃঃ- (কেঁদে দিল) আমি একজনকে ভালবাসি। সেও আমাকে ভালবাসে। আমরা বিয়ে করতে চাই। কিন্তু আমার পরিবার থেকে মেনে নিচ্ছে না। কারণ তার কোন চাকরি নেই। সে অনেক জায়গায় ইন্টারভিউ দিয়েছে কিন্তু তারা ঘুষ ছাড়া চাকরি দিচ্ছে না।

আফরানঃঃ- ডোন্ট ওয়ারি। অপেক্ষা কর। সঠিক সময়ে চাকরি পেয়ে যাবে।

রিতাঃঃ- অপেক্ষাই তো করতে পারব না। সময় যে নেই আমার কাছে।

আফরানঃঃ- মানে?

রিতাঃঃ- আ…আমি প্রেগন্যান্ট। তাই যা করার এই মাসের মধ্যেই করতে হবে। আমি বুঝতে পারছি না কি করব।

আফরান কিছুক্ষণ চিন্তা করল।

আফরানঃঃ- আমার অফিসে একটি পোস্ট খালি আছে। চাইলে সে চাকরি করতে পারে। (খুশির ঝলক রিতার চেহারায় ফুটে উঠেছে) কিন্তু… চাকরি তো দিচ্ছি। চাকরিতে ঠিকে থাকার দায়িত্ব তার। তার কাজের উপর ভিত্তি করেই তাকে পার্মানেন্টলি রাখব।

রিতাঃঃ- থ্যাংক ইউ। থ্যাংক ইউ সো মাচ আফরান। আমি তোমার এই উপকারিতা কখনো ভুলতে পারব না।

আফরানঃঃ- ইটস ওকে। (মুচকি হেসে)

রিতাঃঃ- আফরান তোমাকে কিছু বলার আছে। সো….

পান্নাঃঃ- আরে তোমরা এখানে কি করছ?

পান্নাকে দেখে রিতা হচকিয়ে গেল।

রিতাঃঃ- আসলে ভেতরে চেচামেচিতে আমার মাথা ধরে গিয়েছিল তাই বাইরে এলাম। এরই মাঝে আফরান এলো আর আমাকে জিজ্ঞেস করল আমি বাইরে কেন? (আফরানকে ইশারা করল যাতে সে পান্নাকে কিছু না বলে।)

পান্নাঃঃ- ওহ আচ্ছা। তো চল ভেতরে। অনুষ্ঠান তো প্রায় শেষ পর্যায়ে।

তারা ভেতরে গেল। হলুদ অনুষ্ঠান যথাযথ ভাবে সম্পন্ন হলো।

.
.
.

চলবে

😠 Ragging To Loving 😍
Part:: 44
Writer:: Ridhira Noor

সকাল সকাল সবাই নাস্তা করে বসল একসাথে। বড়রা একপাশে বসে গল্প গুজব করছে। আর অন্যদিকে নূর আফরান সহ সবাই বসে আছে। টুকটাক কথা বলছে। নূর এক পা সোফার উপর রেখে অন্য পা ঝুলিয়ে আছে। হাত গালে দিয়ে বাংলা পাঁচের মতো চেহারা বানিয়ে বসে আছে।

নূরঃঃ- ভাল্লল্লল্লায়ায়ায়াগগগএএএএএএ নানানায়ায়ায়ায়ায়া। (চিৎকারে সবাই তার দিকে তাকায়) ধুরর এখানে কি বিয়ে হচ্ছে নাকি শোক পালন করা হচ্ছে। সবাই এত উষ্কখুষ্ক কেন? কোথায় সবাই মিলে মজা করব তা না। কেমন নীরবতা পালন করছে। আর মেহেদী অনুষ্ঠান হবে সন্ধ্যায়। এখন কি বসে বসে ডিম পাড়ব। বোরিং লাগছে ইয়ায়াররর।

পুষ্পঃঃ- হ্যাঁ রে আমারও বোরিং লাগছে। চল সবাই মিলে কিছু একটা করি। কোন গেইম খেলি বা কিছু একটা করি।

আফরানঃঃ- আই হেভ এন আইডিয়া। কেননা ছোট বেলার পুরনো স্মৃতি গুলো আবারও স্মরণ করা যাক। রিসোর্টের পিছনের দিকে অনেক বড় খোলা জায়গা আছে। সবাই মিলে ঘুড়ি উড়ালে কেমন হয়? ঘুড়ি প্রতিযোগিতা হলে অনেক মজা হবে। কি বল সবাই?

আহিলঃঃ- নট এ বেড আইডিয়া। ভালোই হয়।

এভাবে বসে বসে বোর হওয়ার চেয়ে এই আইডিয়া উত্তম মনে করল সবাই। ঘুড়ি, নাটাই অর্ডার দিতেই এক ঘন্টার মধ্যে নিয়ে এলো। সবাই উৎসুক হয়ে গেল রিসোর্টের পিছনের দিকে। আহিল ওয়াসিম রিহান আরিফ ইয়াশ আফরান নিহাল একটা করে ঘুড়ি আর নাটাই নিল। মায়মুনা গিয়ে সোহেলকে বলল সেও যাতে ঘুড়ি উড়ায়। কিন্তু সে না করে দেয়। নূর সিমা আলিফা ওরাও ঘুড়ি নিল। তাদের ঘুড়ি নিতে দেখে ওয়াসিম অবাক হয়ে বলল।

ওয়াসিমঃঃ- তোমরাও ঘুড়ি উড়াবে? পার ঘুড়ি উড়াতে?

সিমাঃঃ- পারব না কেন। অবশ্যই পারি।

ওয়াসিমঃঃ- ওয়াও। নট বেড।

দর্শক হিসেবে আছে মায়মুনা, পুষ্প, আমরিন, মেহের, পান্না, ঝিনু, রিতা, সোহেল আর নিহালের তিনজন কাজিন।
একে একে সবার ঘুড়ি আকাশ ছুঁলো। নীল আকাশের মাঝে রঙিন ঘুড়ি উড়ছে। মনে হচ্ছে যেন রংধনু তার রং আকাশে ছড়িয়ে দিচ্ছে।
আহিল ওয়াসিমের ঘুড়ি কেটে দিল।

ওয়াসিমঃঃ- আব্বে ইয়ার এতো ঘুড়ি থাকতে আমারটাই পেলি কাটতে।

আহিলঃঃ- তোকে দিয়ে শুরু করলাম। তুই তো আমার জানে জিগার দোস্ত। আস্তে আস্তে বাকিদেরও কাটব।

আফরানঃঃ- আহা হা হা কনফিডেন্স তো দেখ। সবার ঘুড়ি কাটবে। আজ পর্যন্ত পেরেছিস আমার ঘুড়ি কাটতে। আসছে হুহ্।

আহিলঃঃ- আগে পারি নি তো কি হয়েছে। আজ পারব। দেখে নিস।

ইয়াশঃঃ- আগে নিজের ঘুড়ি তো সামলা তারপর কাটিস। ইয়ায়ায়া (সুতো টান দিয়ে আহিলের ঘুড়ি কেটে দিল)

আফরানঃঃ- (হেসে দিল) আহারে বেচারা সবার ঘুড়ি কাটতে পারল না।

নূরঃঃ- যেটা কেউ পারেনি সেটা নূর পেরেছে। হিহিহিহি। ইয়ে লো…. (আফরানের ঘুড়ি কেটে দিল)

আফরানঃঃ- দিজ ইজ নট ফেয়ার। আমি কথা বলছিলাম এই ফাঁকে তুমি…..

নূরঃঃ- এভরিথিং ইজ ফেয়ার ইন লাভ এন্ড ওয়ার। এন্ড দিজ ইজ ওয়ার। (চোখ টিপি দিল)

পান্নাঃঃ- (রাইট। এভরিথিং ইজ ফেয়ার ইন লাভ এন্ড ওয়ার। তোমার সাথে আমার ওয়ারই চলছে নূর। আফরানকে পাওয়ার ওয়ার। এন্ড আই উইল ডু এভরিথিং টু মেক আফরান মাইন।)

একে একে সবার ঘুড়ি কেটে যাচ্ছে। আকাশে শুধু নূর আর ইয়াশের ঘুড়ি বাকি। সবাই তাদের উৎসাহ দিচ্ছে। মেয়েরা নূরের নাম ধরে চিয়ার আপ করছে। আর ছেলেরা ইয়াশের নাম ধরে। নূর সুতো টানছে। তা দেখে সোহেল নিজেকে সামলাতে পারল না।

সোহেলঃঃ- নূর ঢিল দাও। সুতো ছাড়। নাহলে তোমার ঘুড়িই কেটে যাবে।

নূরঃঃ- (কিছু বুঝতে পারছে না কি করবে) কিভাবে করব বুঝতে পারছি না।

নূর আর সোহেলের দিকে তাকিয়ে পান্না হাসছে। আড়চোখে আফরানের দিকে তাকাচ্ছে। তাকে দেখেই বোঝা যাচ্ছে সে ইনসিকিউর হচ্ছে।

সোহেলঃঃ- সুতো ছাড়।

সোহেল আর না পেরে নিজে বসা থেকে উঠে গেল। কয়েক কদম এগিয়ে যেই না নূরের কাছে যাবে তার আগেই আফরান গেল। আফরান নূরের ঠিক পিছনে দাঁড়ালো। আফরানের বুকে নূর পিঠ ঠেকালো। নূরকে বুকে আবদ্ধ করে আফরান বাম হাতে নাটাই ধরল ডান হাত নূরের হাতের উপর রেখে সুতো ধরল। আচমকা ঘটনায় নূর আঁতকে উঠল।

আফরানঃঃ- সুতো ছাড় নাটাই থেকে।

নূর নাটাই ঘুরিয়ে সুতো ছাড়ছে আর আফরান সুতো ধরে ঘুড়ি নিয়ন্ত্রণ করছে। সুতো টান দিতেই ইয়াশের ঘুড়ি কেটে যায়। বিজয়ের খুশিতে নূর প্রফুল্ল হয়ে উঠে। খুশির ঠেলায় আচমকা লাফ দিয়ে হুট করে আফরানের গালে কিস করে বসে। হঠাৎ এমন হওয়ায় আফরান নিজেই আঁতকে উঠল। একেবারে বরফের ন্যায় জমে গেল। ঘটনার তৎপরতা বুঝতে পেরে নূর দুই হাত দিয়ে মুখ চেপে ধরে দিল ভৌ দৌড়। আফরান এখনো স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। কোন নড়াচড়া করছে না। রিহান এসে গাঁ ঝাড়া দিতেই তার হুশ ফিরল।

রিহানঃঃ- নূর এভাবে দৌড় দিল কেন? বিজয়ের খুশিতে মনে প্রচার করে ঘুরে বেড়াবে। (হেসে দিল। এদিকে আফরানও উল্টো দৌঁড় দিল।) আরে আজব তো। এখন আবার আফরান দৌড় দিল কেন?

ওয়াসিমঃঃ- আরে বিজয়ী একা নূর হয়েছে নাকি? আফরানও হয়েছে। আফরানের কারণেই তো নূর জিতেছে। তাই হয়তো সেও প্রচার করে ঘুরে বেড়াবে। (বলে হেসে দিল। সাথে বাকিরাও হেসে দিল।)

সবার নজর ঘুড়ির উপর থাকায় কেউ ঘটনাটি খেয়াল করেনি। থুক্কু থুক্কু একজন খেয়াল করেছে। আমাদের পান্না আফা। ধ্যান ঘুড়ির উপর থাকলেও পান্নার নজর ছিল নূর আর আফরানের উপর। তাদের এভাবে কাছাকাছি দেখে জ্বলছিল। এরই মাঝে নূর কামটা সারিয়ে ফেলল। সাথে সাথে দৌড় দেওয়ায় কেউ সেটা খেয়াল করেনি। কিন্তু পান্না ঠিকই খেয়াল করল।

পান্নাঃঃ- ভেবেছিলাম নূর আর সোহেলকে একসাথে দেখে আফরান নূরের কাছ থেকে দূর হয়ে যাবে। কিন্তু এখানে তো ওরা আরও কাছে চলে আসছে। এই সোহেলকে দিয়ে কিছু হবে না। যা করার আমাকেই করতে হবে। (এসব ভেবে হনহনিয়ে চলে গেল।)
.
.
নূর এক দৌড়ে নিজের রুমে গিয়ে দরজা লক করে দিল। রুমে এসে ঠোঁট মুছতে লাগলো। দৌড়ে ওয়াশরুমে গিয়ে পানি দিয়ে ধুতে লাগলো। নিজের উপরই ভীষণ রাগ হচ্ছে তার।

নূরঃঃ- আহহহহ এটা কি করলি তুই নূর? (নিজের চুল টানছে) এখন আফরানের সামনে কিভাবে যাব আমি? ইচ্ছে করছে মাটি ফাঁক করে ডুকে যায়। এমনিতেই কালকের ঘটনায় নিজেকে শক্ত করেছি। আর আজকে এটা। আমি তো আর রুমের বাইরেই যাব না। দরজা লক করে বসে থাকব। ভ্যায়ায়ায়ায়া (কান্না শুরু করে দিল। লজ্জায় পারছে না নিজের খুন করতে।)
.
.
আফরানও তার রুমে গিয়ে দরজা লক করে দিল। আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজের গাল দেখছে। গালে হাত কিছুক্ষণ স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। আবার আয়নার দিকে তাকিয়ে ফিক করে হেসে দিল। হাসতে হাসতে বিছানায় লুটিয়ে পড়ল।

আফরানঃঃ- পুরাই পাগলি একটা। কখন কি করে নিজেরই হুশ থাকে না। (আলতো করে গাল ছুঁয়ে মুচকি হাসলো) এই পাগলামি গুলো আজীবন দেখতে চাই। (আনমনেই বলল।)

বুকের বাপাশে হাত রেখে বিছানায় শুয়ে পড়ল। চোখ বন্ধ করতেই সেই ঘটনা ভেসে উঠছে। এসব ভেবে আফরান ধপাস করে উঠে বসল। বুকে হাত দিয়ে দেখে তার হৃদয়ের স্পন্দন অনেক দ্রুত গতিতে চলছে। যখনই নূরের কথা চিন্তা করে বা নূর আশেপাশে থাকে তখনই তার এমন অনুভব হয়।)

আফরানঃঃ- এসব কি হচ্ছে আমার সাথে। আগে কখনো এমন অনুভব হয়নি। নূর আমার জীবনে আসার পর থেকে কেমন জানি হয়ে গেছি আমি। হাটতে-বসতে, উঠতে-চলতে, খেতে-ঘুমোতে সবসময় শুধু নূরের চিন্তা করি। নূরকে না দেখলে বুকে কেমন যেন ছটফট করে। চোখের আঁড়াল হলেই এক অজানা ভয় করে। মনে যেন সে হারিয়ে যাবে। কিন্তু আমি তাকে হারাতে চাই না। আঁকড়ে ধরে রাখতে চাই। নিজের কাছে আবদ্ধ করে রাখতে চাই। কিন্তু কেন? কেন? কেন? কেন? আমি কি তাহলে নূরকে….. (চিন্তিত হয়ে পড়ল) হ্যাঁ! হ্যাঁ! হ্যাঁ! আমি নূরকে ভালবাসি। আই লাভ নূর। আই লাভ নূর। আই রিয়েলি লাভ হার। (দুই হাত ছড়িয়ে বলল) আই লাভ ইউ নূর। (নিজেই নিজের মাথায় টোকা দিল) চার বছর। চার বছর ধরে নূরকে ভালবাসিস অথচ বুঝতে পারিস নি। ইচ্ছে করছে দেয়ালের সাথে নিজেই নিজের মাথা ফাটিয়ে দেয়। কিন্তু না। এখন যেহেতু বুঝতে পেরেছি আর না।

রুম থেকে বেরিয়ে সব জায়গায় নূরকে খুঁজছে। কিন্তু কোথাও নেই। অবশেষে আফরানের মা এসে আফরানকে কাজে লাগিয়ে দিল। তাই আর খোঁজা হলো না।

সন্ধ্যায়____________________________

সবাই রেডি হয়ে নিচে নেমে এলো। লাল সাদা ফুল দিয়ে পুরো জায়গা সাজানো হয়েছে। বড় একটা চৌকির মতো টেবিলে মায়মুনাকে বসানো হলো। গোলাপি রঙের লেহেঙ্গা পরা, হালকা সাজ, মেসি বান করা অপরূপ লাগছে দেখতে। নিহাল হালকা সবুজ রঙের পাঞ্জাবি পরল। আর বাকিরা সবাই বেগুনি রঙের জামা পরল। মেয়েরা বেগুনি রঙের লেহেঙ্গা, গাউন, থ্রি-পিস পরল। বড়রা শাড়ি পরল। ছেলেরা সবাই বেগুনি রঙের পাঞ্জাবি, শার্ট, কোট পরল।

আফরান সবার মাঝে নূরকে খুঁজছে। আশেপাশে সব জায়গায় খুঁজে দেখল। কিন্তু কোথাও নূর নেই। মায়মুনার কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করল।

আফরানঃঃ- নূর কোথায়?

মায়মুনাঃঃ- বাহ্ বোন সামনে আছি কিন্তু বোনের কোন খবর নেই। আর এদিকে নূরকে খুঁজছে।

আফরানঃঃ- কথা না পেচিয়ে বল কোথায়? সেই সকাল থেকে দেখছি না। দুপুরেও খেতে আসেনি।

মায়মুনাঃঃ- ওর নাকি মাথা ব্যাথা করছিল তাই দুপুরে খেতে আসেনি। ওর খাবার রুমে দেওয়া হয়েছে। ঔষধ খেতে বলেছি। বলল ঘুমালে ঠিক হয়ে যাবে। এখন অবধি দেখিনি। তুমি একটু গিয়ে দেখ না নূর কোথায়?

আফরানঃঃ- আমি জানলে কি আর তোকে জিজ্ঞেস করতাম। (চলে গেল। অন্যপাশে গিয়ে দাঁড়াল।) মনে হয় সকালের ঘটনায় লজ্জা পেয়ে আমার সামনে আসছে না।

নূর বেগুনি রঙের গাউন পরা। ওড়না ঠিক করতে করতে আসছিল আফরানকে দেখে পাশে লুকিয়ে পড়ে। দেয়ালের সাথে পিঠ ঠেকিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। আস্তে করে মাথা বের করে উঁকি মেরে দেখে আফরান আছে কিনা। তাকিয়ে দেখে আফরান নেই। আশেপাশেও উঁকি মেরে দেখে নেই। স্বস্তির নিশ্বাস ফেলল। পিছন থেকে কেউ তার কাঁধে চাপড়া দিয়ে ডাকছে। পিছন ফিরে দেখে আফরান।

আফরানঃঃ- কি করছ এখানে?

নূরঃঃ- ও… দেখছিলাম।

আফরানঃঃ- কি দেখছিলে? (ভ্রু কুচকে)

নূরঃঃ- দেখছিলাম এই… দেয়ালটা। কত সুন্দর না? আচ্ছা এটা কিনতে কত টাকা নিবে?

আফরানঃঃ- কি???

নূরঃঃ- ওটা কি?

আঙুল দিয়ে পিছনে ইশারা করে। আফরান পিছন ফিরতে নূর দৌড় দিল। তার দৌড় দেখে হাসতে হাসতে আফরানের অবস্থা খারাপ। নূর দৌড়ে গিয়ে মায়মুনার পাশে বসল। মেহেদীর কোণ নিয়ে মায়মুনার হাতে মেহেদী আল্পনা এঁকে দিচ্ছে।

♪♪♪
ওওওওও……
মেহেদী লাগাকে রাখনা, ডোলি সাজাকে রাখনা….. (২)
লে তুঝে ও গরি আয়েগি তেরে সাজনা
♪♪♪
আফরানরা সব বন্ধু মিলে গানে নাচলো। মায়মুনা জোর করাই সোহেলও পারফর্ম করল।

♪♪♪
মেহেন্দী হে রাচনে ওয়ালি হাতো মে গেহরি লালি
কাহে সাকিয়া আব কালিয়া হাতো মে খিলনে ওয়ালি হে
তেরে মান কো জীবান কো নেয়ি খুশিয়া মিলনে ওয়ালি হে
♪♪♪
নূর তার বান্ধবীরা গানে নাচলো।
তারা সবাই মিলে আরও বিভিন্ন গানে নাচলো। নেচে সবাই ক্লান্ত হয়ে বসল।

পান্না একজন ওয়েটারকে ডেকে নিল। তাকে কিছু টাকা দিল। দুইটা জুসের গ্লাসে কিছু পাউডার দিল। ইশারা দিলে নূর আর সোহেলকে দেখিয়ে দিল।

পান্নাঃঃ- এই জুস গুলো ওদের দিবে।

ওয়েটার গিয়ে তাদের জুস দিল।

নূরঃঃ- জুসের টেস্টটা কেমন যেন অন্যরকম তাই না?

আমরিনঃঃ- হুম অনেক টেস্টি।

নূর আর কিছু বলল না। ওয়েটার জুস নিয়ে আফরানদের দিল। পাশে সোহেল বসে ছিল তাকেও দিল। আরিফ সোহেলের পাশে বসা ছিল। সামনে তাকিয়ে দেখে আলিফার সাথে ছেলে একটা অযথা কথা বলার চেষ্টা করছে। আলিফাও হেসে উত্তর দিচ্ছে। রাগে আরিফ সোহেলের হাত থেকে জুসের গ্লাস নিয়ে গটগট করে খেয়ে ফেলে। সোহেল হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে আছে আরিফের দিকে। আরিফ উঠে চলে গেল।

একটা পিচ্ছি এসে নূরকে বলল মায়মুনা তাকে ছাদে যেতে বলেছে। পিচ্ছিটা সোহেলকেও একই কথা বলে।

পান্নাঃঃ- এখন শুরু হবে খেলা। জুস খেয়ে একটু পর দুজনের নেশা ছড়ে যাবে। নূর আর সোহেল যখন ছাদে যাবে ঠিক তখনই কোন এক উপায়ে আফরানকে পাঠিয়ে দিব। তাদের একসাথে দেখলে আমার আর কিছু করতে হবে না। যা করার আফরান নিজেই করবে।
.
.
আলিফাঃঃ- (আব্বে ইয়ার। এই খাচ্চোর পিছু ছাড়ে না কেন? আইডিয়া!) আহহহহহহহ তেলাপোকাকায়ায়ায়ায়ায়ায়া।

ছেলেটাঃঃ- আহহ কোথায় কোথায় তেলাপোকা? (সেদিকেই নাচানাচি শুরু করে দিল। এই সুযোগে আলিফা দিল এক দৌড়।)

আলিফাঃঃ- যাক বাবা বেঁচে গেলাম। ওরে তো আমিইইইইই… (পিছন ফিরে দেখছিল ছেলেটা আসছে কিনা। দৌড়াতে গিয়ে খেল এক ধাক্কা।) ওহ সরিইইই… (সামনে তাকিয়ে দেখে আরিফ। মাথা নিচু করে পাশ কাটিয়ে যেতে নিলে আরিফ হাত ধরে ফেলে।)

আরিফঃঃ- কোথায় যাচ্ছ? ইদানিং দেখছি আমার কাছ থেকে পালিয়ে বেড়াচ্ছ। আর এখন ওই ছেলের সাথে কথা বলছ। কেন? এখন কি আমায় আর ভালবাসো না? ওই ছেলেকে বাসো? (শান্ত হয়ে কাঁপা কাঁপা গলায় বলল)

আলিফাঃঃ- (অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে) আপনি কি করে জানেন আমি আপনাকে ভালবাসি।

আরিফঃঃ- (বাঁকা হাসি দিল) জানব না কেন? তোমার চোখের দিকে তাকিয়ে আমি তোমার মনের কথা বুঝতে পারি। এই যেমন এখন তোমার চোখে তাকিয়ে বুঝতে পারছি তুমি কি ভাবছ। তুমি এখন ভাবছ আমি কি করে বুঝতে পারছি। তাই না? (আলিফা মাথা উপর নিচে করল) কারণ আমিও যে তোমায় ভালবাসি। এখন থেকে না সেই চার বছর ধরে। (ঢুলছে)

আলিফাঃঃ- তাহলে এতদিন আমাকে কষ্ট দিয়েছেন কেন?

আরিফঃঃ- কষ্ট তোমাকে না নিজেকে দিয়েছি। যাতে সারা জীবনের কষ্ট থেকে বাঁচাতে পারি। জানো ইয়াশ আর আমি ছোট বেলা থেকেই একসাথে বড় হয়েছি। সব কিছু একই পেয়েছি। এমনকি আমাদের পেশাও। ফটোগ্রাফির। শুধু বাবা একই পেলাম না। (চোখের পানি টলমল করছে) চাচু যতটা সহজ সরল বাবা ততটাই কঠিন। ফটোগ্রাফার হওয়ায় চাচু ইয়াশকে অনেক উৎসাহিত করেছে। সেখানে বাবা আমার বিরুদ্ধে ছিল। কারণ তিনি চেয়েছিলেন আমি যাতে তার মতোই বিজনেস করি। তার বিরুদ্ধে গিয়ে ফটোগ্রাফি করাই তিনি নারাজ। যদি তোমাকে নিজের করে নিতাম তাহলে সেই কষ্টের ভাগিদার তোমাকেও হতে হতো। আজীবন আমার মতোই তুমিও কষ্ট পেতে। তা আমি চাই নি। তাই নিজেকে তোমার কাছ থেকে ছাড়িয়ে নেওয়ার চেষ্টায় আছি। চার বছর ধরে চেষ্টা করছি। কিন্তু আজ তোমাকে অন্য কারো সাথে দেখে সহ্য করতে পারলাম না। ভীষণ কষ্ট হয়েছিল আমার। ভীষণ। ভীষণ। (ঢলে পড়ে যেতেই আলিফা ধরে ফেলে।)

আলিফাঃঃ- ভালবেসে সব কষ্ট ভাগ করে নেওয়ার মধ্যেও অন্যরকম সুখ রয়েছে। আর আপনি আমাকে এতো যে কষ্ট দিয়েছেন তা আমি এখন আপনাকে বোঝাব।

আলিফা সবার আড়ালে লুকিয়ে আরিফকে তার রুমে নিয়ে গেল। বিছানায় শুয়ে দিয়ে পায়ের জুতো খুলে দিল। ঘুমন্ত অবস্থায় কত নিষ্পাপ লাগছে। চাদর উড়িয়ে দিয়ে দরজা বন্ধ করে চলে এলো।
.
.
ওইদিকে নূরের মাথা কেমন যেন ঘুরন্তি দিচ্ছে। মাথা চেপে ধরে ছাদে গেল। পুরো ছাদ আবছা অন্ধকার লাগছে। সব কেমন যেন ঝাপসা হয়ে আছে।

নূরঃঃ- মুনা ডার্লিং। ওওও মুনা ডার্লিং। কই তুমি। (মুখে আঙুল একটা দিয়ে এদিক সেদিক তাকাচ্ছে।)

.
.
.

চলবে