#Game
#মিমি_মুসকান ( লেখনিতে )
#পর্ব_১৪
– এই যে মিস ভূতনি!
নিহা চমকে উঠে বলল..
– আপনি!
আহিয়ান মুচকি হেসে বলে…
– ওহ্ আচ্ছা তাহলে মনে রেখেছো আমায়!
– ..
– এভাবে তাকিও না!
– কেন?
– আমার দিল এ লাগে!
– ভালো ছিল কিন্তু কাজ হলো না!
– তোমাকে ইমপ্রেস করার কথা বলছো।
– হুম যেটা করার চেষ্টা করছেন সেটাই।
– তা এতো দিন কোথায় ছিলে? ভার্সিটিতে গেলে না যে।
– আপনাকে কেন বলবো? বাই দ্যা ওয়ে আপনি ফলো করছিলেন আমায়!
– না মানে খোঁজছিলাম!
– কেন?
আহিয়ান দাঁত বের করে হেসে বলে..
– ইমপ্রেস করার জন্য!
– সেটা সম্ভব না!
বলেই বাস থেকে নেমে যায় নিহা। নিহার পিছু পিছু আহিয়ান ও নেমে যায়। নেমেই ডাকতে থাকে…
– নিহা! এই যে মিস নিহা!
নিহা না শোনার ভান করে চলে যেতে নেয়! হঠাৎ করেই আহিয়ান বলে উঠে..
– এই ভূতনি!
নিহা সাথে সাথে দাঁড়িয়ে যায়। অতঃপর পিছনে ফিরে দেখে আহিয়ান দু’হাত পকেটে দিয়ে দাঁত বের করে হেসে তার দিকে তাকিয়ে আছে। নিহা দাঁতে দাঁত চেপে আহিয়ান’র সামনে গিয়ে বলে..
– কিসব বলে ডাকছেন আপনি!
– কি করবো বলো নাহলে তুমি সাড়া দেও না!
– আমার থেকে সাড়া পাওয়ার আশা করিয়েন না!
– না সুযোগ চাই ইমপ্রেস করার!
নিহা ভ্রু কুঁচকে বলে…
– সুযোগ দিলেই বুঝি ইমপ্রেস করতে পারবেন।
– তুমি চান্স দিয়ে তো দেখো আমার প্রেমে পড়ে যাবে।
নিহা হেসে বলে..
– এই তো বলছিলেন ইমপ্রেস করবেন আর এখন সোজা প্রেমে করতে বলছেন।
আহি নিহা’র কানে ফিসফিসিয়ে বলে..
– ইমপ্রেস হলে প্রেমে পড়তে বাধ্য তুমি!
– এতো কনফিডেন্স!
নিহা’র কথায় আহি মৃদু হাসে। নিহা বলে উঠে..
– আচ্ছা দিলাম চান্স পারলে আমাকে ইমপ্রেস করে দেখান!
– চ্যালেঞ্জ অ্যাকসেপ্টেড!
– হুম ডান!
– তাহলে দিন গুনতে শুরু করো কারন কিছুদিন পর’ই তুমি মিস ভূতনি থেকে মিসেস ভূতনি হতে যাচ্ছো!
নিহা হেসে বলে..
– সেটা তো সময় বলবে মিঃ আহিয়ান চৌধুরী!
– সময় এখন আমার সাধ দিচ্ছে!
জবাবে নিহা কিঞ্চিত হাসে!
.
দুদিন পর…
অনেক রাত হয়েছে, নিহা নিজের ঘরে ল্যাপটবে বসে কাজ করছিল। হঠাৎ করেই কিছু’র শব্দ পেলো সে। শব্দটা কোথা থেকে আসল, খুঁজতে লাগলো। মনে হলো শব্দটা বেলকনি থেকে আসছে। নিহা উঠে টেবিল থেকে গান টা নিলো। অতঃপর ধীরে ধীরে হাঁটতে হাঁটতে বেলকনির কাছে গেল। কিন্তু কাউকে দেখতে পেলো না। মনের ভুল ভেবে চলে আসতে নিলো। হুট করেই কেউ তার কোমর ধরে নিজের কাছে টানল। নিহা থমতম খেয়ে গেল। তাকিয়ে দেখে আহিয়ান! চাঁদের আলোতে তাকিয়ে আছে দুজন দুজনের দিকে। রাতের ঠান্ডা বাতাসে নিহা’র চুল গুলো উড়ে আসছিল। আহি চুল গুলো তার কানে গুঁজে দিল। নিহা’র ধ্যান ভাঙল। সে বলে উঠে..
– কি হচ্ছে কি ছাড়ুন আমায়!
– ইমপ্রেস করার চেষ্টা করছি তোমায়।
– এইসব করে!
– আরে না আর দুমিনিট পর…
– দুমিনিট পর মানে!
আহিয়ান কিছু বলতে যাবে তার আগে ঘরের দরজায় মেহেরিন কড়া নাড়তে লাগল। সে দি দি বলে চেঁচাচ্ছে আর দরজা বাড়ি দিচ্ছে। নিহা তাড়াতাড়ি করে আহিয়ান থেকে সরে ভাবতে লাগল কি করা যায়। কারন মেহেরিন আহি কে দেখলেই এক গাদা প্রশ্ন করবে তখন কি বলবে। এদিকে আহিয়ান একটু অবাক এরকম দেখে। নিহা আহিয়ান কে বলে..
– বের হয়ে যান এখান থেকে ফার্স্ট!
– আরে কিভাবে যাবো! আমি তো তোমাকে…
নিহা কর আহিয়ান কে কথা বলার সুযোগ দেয় না। এদিকে মেহেরিন আরো জোরে জোরে ডাকতে থাকে। নিহা আহিয়ান কে ধরে আলমারি’তে ঢুকতে বলে। আহিয়ান ঢুকতে না চাইলেও নিহা তাকে জোর করে ঢুকিয়ে দেয়। অতঃপর তাড়াতাড়ি করে দরজার সামনে দাঁড়িয়ে দীর্ঘশ্বাস নেয়। এদিকে আহিয়ান উঁকি দিয়ে দেখার চেষ্টা করছে নিহা কি করছে। নিহা ধীরে দরজা খুলে তাকিয়ে দেখে মেহেরিন দাঁড়িয়ে আছে মুখ ফুলিয়ে। পুরো শরীরে আটায় ভরপুর। নিহা মেহেরিন কে ঘরে এনে জিজ্ঞেস করে..
– কি হয়েছে তোমার? এরকম অবস্থা কেন?
– দরজা খুলতে এতোক্ষণ লাগলো কেন?
– ঘুমিয়ে ছিলাম তাই! আচ্ছা তুমি দু’মিনিট বসো আমি তোয়ালে এনে তোমাকে পরিষ্কার করে দিচ্ছি!
– আরে আপু শোন তো!
– হুম বলো!
এরমধ্যে ১২ টা ঘন্টা বেজে গেলো। ঘন্টার আওয়াজ বাজতে শুরু করলো। নিহা ভ্রু কুঁচকে মেহেরিন’র দিকে তাকিয়ে আছে। মেহেরিন আটা লাগা হাতে নিহা’র দুই গালে লাগিয়ে দিয়ে বলল..
– Happy birthday di! অনেক অনেক উম্মাহ তোমাকে!
বলেই নিহা’র কপালে চুমু খেল। নিহা হেসে মেহেরিন’র কপালে চুমু খেয়ে বলল..
– অনেক অনেক ধন্যবাদ তোমায়!
– এখন চলো চলো কেক কাটবে। দা এতোক্ষণে ভাইয়া কে ডেকে নিয়ে এসেছে।
বলেই নিহা’র হাত ধরে টানতে টানতে তাকে নিয়ে গেল। নিহা বের হবার পর আহিয়ান আলমারি থেকে বের হলো। কিছুক্ষণ নিহা’র রুম ঘোরাঘুরি করল। অতঃপর বিছানায় গিয়ে বসে নিহা’র অপেক্ষা করতে লাগল।
এদিকে..
অভ্র নীল কে নিয়ে এসেছে আর মেহেরিন নিহা কে। মেহেরিন নিজের হাতে তাঁদের জন্য কেক বানিয়েছে। কাব্য বলে উঠে..
– জান নিজে কেক বানিয়েছে, তাই তার অবস্থা মারাত্মক।
ইহান বলে উঠে…
– রান্না ঘরের কথা না বললেই বোধহয় ভালো হয়!
সবাই হেসে উঠে। মেহেরিন ফুল ফুলিয়ে বলে..
– সরো সবাই সামনে থেকে!
বলেই নীলের সামনে দাঁড়ায়। অতঃপর হাতের থাকা আটা দিয়ে নিহা’র মতো করে তাকেই উইস করে। সবাই হাসতে হাসতে শেষ। অতঃপর সবাই মিলে উইস করে কেক কাটে। প্রায় অনেকক্ষণ ধরেই সবাই মিলে আড্ডা দেয়। এসবের এক সময় নিহা আহিয়ান’র কথা ভুলেই যায়। অভ্র সবাইকে জোর করে রুমে পাঠায় ঘুমানোর জন্য। তখন প্রায় রাত ১.৩০ টা বাজে। নিহা হাসতে হাসতে ঘরে ঢোকে। দেখে তার বিছানায় কেউ শুয়ে আছে। নিহা ভ্রু কুঁচকে সামনে যায়। গিয়ে দেখে আহিয়ান ঘুমিয়ে আছে তার বিছানায়। নিহা চমকে উঠে। আহিয়ান’র কথা তো সে ভুলেই গেছিলো। নিহা আহিয়ান কে ডাকতে গিয়েও কেন জানি ডাকতে পারে না। তার ইচ্ছে করছিলো না তার ঘুম ভাঙাতে। ঘুম শান্ত ভাবেই ঘুমিয়ে আছে আহিয়ান। নিহা খানিকক্ষণ দাঁড়িয়ে আহিয়ান কে দেখতে থাকে। অতঃপর কি মনে করে আহিয়ান’র ওপর বালিশ দিয়ে মারতে থাকে। হুট করেই এমন’টা হওয়াই আহিয়ান লাফ দিয়ে উঠে পড়ে ঘুম থেকে। চোখ ঢলতে ঢলতে দেখে তার সামনে নিহা কোমরে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
আহিয়ান হাই তুলতে তুলতে বলে..
– হেই ভূতনি!
– রাখুন আপনার ভূতনি, কি করছেন এখানে?
– আরে তোমার জন্য অনেকক্ষণ ধরে অপেক্ষা করছিলাম! কখন ঘুমিয়ে পড়েছি মনে নেই। আর তোমার আসার সময় এখন হলো!
– হ্যাঁ হলো! আমার ফ্যামিলি আমার কাছে আগে।
– হুম জানি। কিন্তু যাই হোক আমি অনেকক্ষন ধরে অপেক্ষা করছিলাম তোমার জন্য। ভেবেছিলাম আমি তোমাকে আগে উইস করবো কিন্তু..
– আমার বোন আগে করেছে!
– হুম তোমার ছোট বোন আদুরী! বলতে হবে অনেক কিউট সে!
নিহা একগাল হেসে বলে..
– হুম অনেক কিউট অনেক সিউট!
আহিয়ান হুট করেই নিহা’র হাত ধরে নিজের কাছে টেনে নিয়ে আসে। অতঃপর বলে উঠে..
– তুমি ও কম না। যাই হোক আমি জানি আজ তুমি ইমপ্রেস হয়েছো!
– কি করলেন যে ইমপ্রেস হবো।
– এতো কষ্ট করে তোমার বাসায় আসলাম তাও রাতে, জানো কতো কষ্ট হয়েছে তোমার। তোমাদের বাসার গার্ড গুলা যে কি চালাক কি বলবো।
– চোরের মতো এসেছেন, ভাগ্যিস চোখে পড়েন নি তাহলে আপনার অবস্থা দেখে নিতেন।
– আসার সময় তো পড়ে নি কিন্তু যাবার সময় তো..
– নির্ঘাত পড়বেন। আপনার এখানে আসা’টাই ব্যর্থ হলো। এলেন তো এতো কষ্ট করে তার পর আমি আবার ইমপ্রেস হলাম না। প্রোজেক্ট শুরু হবার আগেই লস হয়ে গেল!
– প্রোজেক্ট জিতে কি হবে যদি না তোমার মন জিততে পারি!
নিহা নিজেকে আহিয়ান’র থেকে সরিয়ে বাঁকা হেসে বলে..
– দেখা যাক!
আহিয়ান আবারও নিহা’র হাত ধরে নিজের কাছে টেনে বলে..
– পালিয়ে যাচ্ছো কেন? আচ্ছা যাই হোক হ্যাপি বার্থডে মিস ভূতনি! আশা করি পরের বার আমি তোমাকে মিসেস ভূতনি মানে আমার ভূতনি বউ বলে উইস করবো!
নিহা আহি’র কথা শুনে মুচকি হেসে বলে..
– কনফিডেন্স দেখে আমি অবাক হচ্ছি!
আহিয়ান নিহা’র কানে ফিসফিসিয়ে বলে..
– এটা কনফিডেন্স না ভালোবাসা!
.
কয়েকদিন পর..
নিশি, রোদ্দুর , ইহান আর মেহেরিন এসেছে শপিং করতে। রোদ্দুর আর ইহান অন্য দোকানে গেছে এদিকে নিশি আর মেহেরিন অন্য দোকানে। নিশি কিছু জিনিস কিনতে থাকে তখন হুট করেই মেহেরিন আইসক্রিম খাওয়ার বায়না করে। কারন ওর ঠিক সামনে’ই কিছু দূরে একজন আইসক্রিম ওয়ালা আইসক্রিম নিয়ে বসে আছে। নিশি মেহেরিন কে দু’মিনিট দাঁড়াতে বলে কিন্তু মেহেরিন কথা না শুনেই দৌড় দিয়ে চলে যায় আইসক্রিম কিনতে। মেহেরিন দোকানের সামনে দাঁড়িয়ে বলে একটা চকলেট ফ্লেভার আইসক্রিম দিতে! লোকটাকে দেখে তেমন বয়স্ক লাগছিলো না তবে তার অনেক সাদা দাড়ি ছিল। মেহেরিন অবাক চোখেই সেগুলো দেখছে। হুট করেই পেছন থেকে কেউ মেহেরিন’র ঘাড়ে ইনজেকশন পুশ করে। মেহেরিন’র চোখের সামনে সব অন্ধকার হয়ে যাচ্ছিল। কিন্তু চোখ বোঝার আগে ঝাপসা ঝাপসা চোখে সে ওই আইসক্রিম ওয়ালা কে হাসতে দেখল। এরপর আর কিছু মনে নেই তার!.
কিছুক্ষণ পর’ই নিশি এলো সেখানে, সেখানের আইসক্রিম’র দোকান তো ছিল কিন্তু কেউ ছিল না। নিশি অস্থির হয়ে আশপাশ দেখতে থাকে। ফোন বের করে কল করতে শুরু করে কিন্তু কল বেজে কেটে যাচ্ছে। কেউ তুলছে না। নিশি ঘামতে শুরু করে, হাত কাঁপছে তার। কাঁপা কাঁপা হাত দিয়ে বার বার কপালের ঘাম মুছতে থাকে। হঠাৎ করেই দোকানের পাশে একটা চিরকুট দেখতে পায় নিশি। নিশি ভ্রু কুঁচকে চিরকুট টা হাতে নেয়। অতঃপর চিরকুট পড়ে নিশি নিস্তব্ধ হয়ে যায়!
#চলবে….