#Game
#মিমি_মুসকান ( লেখনিতে )
#পর্ব_১৫
খান বাড়ির সবাই নিস্তব্ধ হয়ে বসে আছে, চিরকুট এ মেহেরিন’কে মেরে ফেলার হুমকি দেওয়া হয়েছে। নিহা রেগে ঘরের কিছু জিনিসপত্র ভেঙ্গে ফেলল। আনহা তাকে সামলাচ্ছে তবে সে কিছু শুনতে বাধ্য না। অভ্র উঠে ডেভিল কে বলল গাড়ি বের করার জন্য!
এদিকে..
চেয়ারে হাত পা বাঁধা অবস্থায় বসে আছে মেহেরিন, তার সামনে চেয়ারে বসে আছে একজন লোক। একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে মেহেরিন’র দিকে। তার এতো বছরের রাগ যেন আজ মিটবে মনে হচ্ছে। মেহেরিন’র জ্ঞান ফিরেছে তবে চোখে সব’ই ঝাপসা দেখছে। নেশার ইনজেকশনের কারনে সব কিছুই তার কাছে এখন ধোঁয়াশা। তবে এটা ঠিক’ই বুঝতে পারছে তার সামনে বসে থাকা লোকটা তাকে মারার জন্য সমস্ত প্ল্যান করে রেখেছে। লোকটা একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল, মেহেরিন বলে উঠে…
– দীর্ঘশ্বাস ফেলে কোনো লাভ আছে কি?
– কি বলতে চাইছো তুমি!
– যা আপনি বলতে চান।
– তোমাকে মেরে ফেলবো এটাই বলতে চাই।
– তাহলে এভাবে বসিয়ে রাখার মানে কি?
– কষ্ট পেতে দেখবো। আমার খুব ইচ্ছে জানো তোমাকে আমি কষ্ট পেতে দেখবো
– আমাকে এভাবে বেঁধে রাখলে বুঝি সেই আশা পূরণ হবে।
– হয়তো তুমি কষ্ট পাবে না তবে তোমাকে মরতে দেখে অভ্র, নিহা, নীল, নিশি তোমার বন্ধুরা সবাই কষ্ট পাবে। সেটার চেয়ে আনন্দের আর কি হতে পারে।
– তাহলে শত্রুতা শুধু আমার সাথে না।
– তোমরা ভাই বোনরা কোন কাজ একা করো। তোমাদের জন্য আমি আমার সব হারিয়েছে।
– তবুও নিজেকে লুকানোর এতো প্রচেষ্টা!
– কি বলতে চাও!
– আমার কি মনে হয় জানেন, আপনি আমাকে মারতে পারবেন না।
– কেন?
– যদি মারতে পারতেন তাহলে এভাবে আমাকে বেঁধে রাখতেন না আর না আমাকে ইনজেকশন দিতেন যার কারনে আমি সবকিছু ধোঁয়াশা দেখছি।
– এখন তো তবুও ধোঁয়াশা শিঘ্রই অন্ধকার দেখবে।
– সেটা তো সময় বলবে। আসলে আমার ভাগ্য খুব অদ্ভুত তো তাই!
– সেই জন্যই সবসময় বেঁচে যাও।
– এর মানে আগের অ্যার্টাক গুলো আপনি করিয়েছেন।
– সন্দেহ আছে কোনো!
– না তবে একটা কথা বলতে পারি। প্রতিবারের মতো এবারও হেরে যাবেন।
মেহেরিন’র কথায় লোকটা রেগে মেহেরিন’র গলায় ছুড়ি ধরল। অতঃপর বলল..
– খুব বেশি কথা বলছো না আদুরী!
– সত্যি সবসময়ই অতিরিক্ত লাগে।
– কি ভাবো এবারও বেঁচে ফিরবে।
– বললাম না ভাগ্য!
– তোমাকে এখনো বাঁচিয়ে রেখেছি কেন জানো! তোমাকে চোখের সামনে মরতে দেখে তোমার ভাই বোনদের আমি তিলে তিলে মরতে দেখবো!
– সেই আশা কখনো পূরণ হবে না।
মেহেরিন’র গলায় ছুরি ঘুরিয়ে…
– হবে হবে!
এমন সময় আরেকটা লোক আসে। সে ওই লোকটাকে বলে..
– ওরা চলে এসেছে!
বাঁকা হেসে বলে..
– তাহলে এই Game শুরু করো।
মেহেরিন বাঁকা হেসে বলে…
– শুভকামনা রইল! দেখো জিততে পারো কি না!
লোকটা রেগে সেখান থেকে চলে গেল। হঠাৎ মেহেরিন বুঝতে পারল তার সাথে বোম রাখা হয়েছে। কারন বোম ব্লাস্টের কাউন্টডাউন শুরু হয়ে গেছে। এরমধ্যে অনেক গুলি’র আওয়াজও আসতে লাগল। মেহেরিন হঠাৎ করেই রোদ্দুর, ইহান আর কাব্য’র ডাক শুনতে পেলো। বুঝতে বাকি নেই তারা এসে পরেছে। তারা দৌড়ে মেহেরিন’র কাছে আসল। বোম ডিফিউজ করার চেষ্টা করছে তবে এটা তাদের দ্বারা সম্ভব হচ্ছে না। এখানে ফোনে ও কাউকে পাচ্ছে না। কাকে ডাক দিবে তারা?
রোদ্দুর নীল কে ডাকার জন্য যেতে যাবে তখন মেহেরিন বলে উঠে..
– রোদ্দুর একা না ইহান, কাব্য তোরাও যা।
– পাগল হলি নাকি আমরা কোথায় যাবো?
– আরে শোন তোরা কি আসতে আসতে যদি বোম ব্লাস্ট হয়ে যায় তখন আমার সাথে সাথে তোরাও মরবি। এর চেয়ে ভালো আমি একাই মরি।
– কে বললো তুই মরে যাবি। শোন তুই থাকবি আর আমাদের সাথে থাকবি।
– ভাগ্য যদি না চায় তখন!
– ঠিক আছে তাহলে আমরাও এখানে থাকবো। ব্লাস্ট হলে সবাই একসাথে’ই মরবো।
– মরে গিয়েও আমাকে শান্তি দিবি না তোরা!
– না দেবো না।
– তোর সাথেই মরবো।
– তুই না থাকলে আমরা থেকে কি করবো।
– তোদের সাথে নিয়ে মরলে আমি সোজা জাহান্নামে যাবো। যা এখান থেকে!
– তোর কথা শুনতে বাধ্য নই!
এরমধ্যে নীল চলে এলো। সে দৌড়ে মেহেরিন’র কাছে আসল। নীল কে দেখে যেনো সবাই হাঁফ ছেড়ে বাঁচলো কারন বোম ডিফিউজ নীল করতে পারে। তাই সে সময় নষ্ট না করে বোম ডিফিউজ করতে লাগলো। এরমধ্যে নিশি এলো। পুরো শরীর রক্তে রাঙানো তার! মেহেরিন’র হাত দুটো শক্ত করে চেপে রেখেছে। এই হাত ছাড়ার কারনে বোধহয় আজ মেহেরিন’র এই অবস্থা!
বোম ডিফিউজ হয়ে গেল, কিন্তু মেহেরিন ঠিক ভাবে দাঁড়াতেও পারছে না। ইনজেকশনের কারনে সব কিছুই ধোঁয়াশা তার কাছে তবে সবার কথা ঠিকই শুনছে সে। অভ্র, নিহা আর ডেভিল একসাথে আসছে দৌড়ে। নিহা এসে ধরল মেহেরিন কে। অভ্র মেহেরিনর কপালে আলতো করে চুমু খেয়ে কোলে তুলে নিল।
এদিকে সেই লোক দু’টির কথোপকথন..
– এটা কি হলো? ওরা এবারও কিভাবে জিতে গেল।
– ভুলটা তোমার’ই ছিল। আমি তো বলেছিলাম তোমায় তুমি এতো সহজে পেরে উঠবে না। মেহেরিন এভাবে এভাবে মাফিয়া দলের লিডার হয় নি। সাহস ওর থাকবে না তো আর কার থাকবে। এছাড়া অভ্র আর নিহা’র বুদ্ধির সাথে তুমি পারবে না তার সাথে নিশি চালাকি আর নীলের বোকা বানানোতে।
– তুমি কি ওদের প্রশংসা করছো!
– হুম এটাই বলতে পারো তবে শত্রুর প্রশংসা করা মন্দ না। এখানে তার সম্পর্কে আরো ভালো ভাবে জানা যায়। এছাড়া মেহেরিন’র একটা বড় শক্তি তার বন্ধুত্ব। এটা থাকতে তুমি ওর কিছুই করতে পারবে না এতো দিনে এটাও বুঝলে না। আমাদের আরো প্রস্তুতি নিতে হবে। একটা পরিপূর্ণ প্ল্যান নিয়ে আসতে হবে। এমন একটা চোরাবালি যেখানে মেহেরিন বর্ষা খান নিজ থেকেই পড়বে কিন্তু নিজ ইচ্ছায় উঠতে পারবে না।
– ওর বন্ধুত্ব! এটা কেন নয়! অনেক গর্ব করে আদুরী তার বন্ধুত্ব নিয়ে!
– তবে আর কি? এটাকেই হাতিয়ার করো!
– কিন্তু আমি আজ আবারও হেরে গেলাম।
– যাই হোক একবার কেন বার বার হারো। বুঝতে শিখো কি আছে এমন ওর মধ্যে যা তোমাকে জিততে দেয় না।
– কি করবো আমি বলো, তুমিই বলো কি করবো। ওর দুর্বলতা কিসে? কি ওর দুর্বলতা! ওর বাবা! যাকে আজ পর্যন্ত আমি পাবো বলে মনে হয় না।
– তো কি! অন্য দুর্বলতা খোঁজে! কোনো মানুষের একটা দুর্বলতা থাকে না। আরেকটা নিশ্চিত পাবে কিন্তু তার আগে ওকে বুঝতে শিখতে হবে তোমায়! বোঝার চেষ্টা করো কে এই মেহেরিন বর্ষা খান। এতো শক্তি কোথায় সে। কি আছে এমন ওর মধ্যে! খুঁজতে থাকো পেয়ে যাবে।
.
মেহেরিন বাঁকা হেসে বলতে থাকে..
– আমাকে বুঝবে? মেহেরিন বর্ষা খান’কে। অধরা খানের মেয়ে আমি! এতো সহজ না আমাকে বোঝা। আমি একটা গোলক ধাঁধা! যাকে বুঝতে বুঝতে যুগ পেরিয়ে যাবে!
অভ্র বলে উঠে..
– আরেকটু’র জন্য ধরতে পারলাম না ওকে!
নিহা বলে উঠে..
– ধরা প্রায় পড়ে যেত কিন্তু তখন’ই কোখান থেকে একটা হেলিকপ্টার এসে নিয়ে গেল। না হলে আজ’ই জেনে নিতাম কে আমাদের এই নতুন শত্রু!
মেহেরিন বলে উঠে..
– নতুন না অনেক পুরোনো শত্রু। অনেক ক্ষোভ তার আমার প্রতি। তার প্রতিটা নিঃশ্বাস জুড়ে আমাকে ঘৃণা করে সে।
– যাই হোক তুই আমার বোন! এতো সহজে তোর কিছু হতে দেবো না আমি। খুব তাড়াতাড়ি শেষ করবো এই নতুন শত্রু কে!
– হুম!
.
কয়েকমাস পর…
মেহেরিন কে কলেজে ভর্তি করানো হয়েছে আজ প্রায় ১ সপ্তাহ তবে এখন পর্যন্ত তাকে কলেজে পাঠানো যায় নি। এদিকে নিহা নিত্যদিন আহিয়ানের সব পাগলামি সহ্য করছে কিন্তু এখন পর্যন্ত আহিয়ান নিহাকে ইমপ্রেস করতে পারে নি।
নিশি, ইহান, কাব্য আর রোদ্দুর আজ একসাথে ভার্সিটি যাচ্ছে। প্রথম দিন আজ ভার্সিটির। সবচেয়ে বেশি আগ্রহ আজ নিশি’র। নতুন ভার্সিটিতে এসে তার কৌতুহল অনেক। নিশি একা একা’ই পুরো ভার্সিট ঘুরে দেখতে লাগল।
এদিকে ক্যাম্পাসে নিশান আর তার বন্ধুরা সবাই মিলে আড্ডা দিচ্ছে। হঠাৎ করেই নিশানের এক ফ্রেন্ড বলে উঠে..
– চল ট্রুথ আর ডেয়ার খেলি!
– আচ্ছা প্রথমে নিশান! তুই বল..
– নিশান ট্রুথ নে, ডেয়ারের সাহস তোর নেই।
নিশান চোখের সানগ্লাসটা খুলে বলল…
– ডেয়ার নিলাম বল কি করতে হবে।
– আজ তুমি ফাঁসবে চান্দু।
– হুম দেখা যাক।
– আচ্ছা ঠিক আছে বেশি কিছু না ছোট একটা কাজ করতে হবে।
– কি?
– ওই যে ওই মেয়েটাকে দেখছিস তাকে সবার সামনে জরিয়ে ধরতে হবে!
– কিহহহহহ?
– জ্বি হ্যাঁ এখন করে দেখান।
– নিশান কখনো মেয়ের পিছনে ঘুরে না মেয়েরা ঘুরে আর সে কিনা একটা মেয়েকে জরিয়ে ধরবে!
– ডেয়ার ইজ ডেয়ার!
নিশান মুখ ভেংচি দিয়ে মেয়েটাকে দেখার চেষ্টা করে। মেয়েটা কে দেখেই নিশান হা হয়ে যায়। ওর সব বন্ধুরা হাসতে শুরু করে। নিশান বলে ওঠে..
– এতো নিশান নিশি খান! ওকে জরিয়ে ধরবো!
– হ্যাঁ হ্যাঁ!
– পাগল হলি নাকি, যদি জানতে পারে নিহারিকা নিহা খান’র বোন জানতে পারে তার বোনকে তুই জরিয়ে ধরেছিস তাহলে আর আস্ত রাখবে না।
– আমি কি জানি! কিন্তু নিশান যদি না পারে তাহলে তাকে হার মানতে বল!
নিশান ভ্রু কুঁচকে বলে উঠে..
– নিশান কখনো হার মানে না। দেখ তোর ডেয়ার কিভাবে পূরণ করি!
বলেই নিশান নিশি’র কাছে গেল। নিশি দাঁড়িয়ে ছিল,নিশান পেছন থেকে “জান পাখি” বলে উঠে নিশি কে জরিয়ে ধরল। অতঃপর তাকে নিয়ে ঘুরতে লাগল। নিশি তো চমকে উঠলো এদিকে রোদ্দুর পানি খাচ্ছিল এরকম দেখে তার মুখ থেকে পানি পড়ে গেল। ইহান আর কাব্য হা হয়ে তাকিয়ে আছে। নিশি চেঁচানো শুরু করলে নিশান তাকে নামিয়ে দিলো। নিশি রেগে পেছনে ফিরে কিছু বলতে যাবে তার আগে নিশান চেঁচিয়ে উঠলো। বলল..
– আ…প..নি! আপনি কে?
– আমার মনে হয় এটা আমার ডায়লগ!
– সরি আপু আসলে আমি আমার জান পাখি ধুরি গফ কে ভেবেছিলাম। সে পিছন থেকে দেখতে পুরো আপনার মতো।
– নিজের গফ কে চিনেন না আপনি!
– আসলে পেছন থেকে দেখতে তো পুরো একই লাগছিলো কিন্তু এখন তো দেখি এখানে ভিন্ন ভিন্ন লাগছে!
– আপনি আপনাকে তো আমি!
– সরি ভুল হয়ে গেছে!
নিশি ভেবো পেলো না কি বলবে। রাগে গজগজ করতে করতে চলে এলো। নিশি যাবা’র পর’ই নিশান নাচতে শুরু করলো। নাচতে নাচতে নিজের ফ্রেন্ডদের কাছে গেল।
– দেখলি কিভাবে ডেয়ার পূরন করলাম!
– নিশি খান তোকে চড় মারল না।
– আমার মতো হ্যান্ডসাম ছেলেকে চড় কখনো না।
– কিস ও তো করলো না!
– চুপ থাক না তুই!
– আচ্ছা কি এমন বললি যার কারনে কিছুই হলো না।
অতঃপর নিশান শুরু থেকে শেষ বলতে লাগলো। নিশানের কথা শুনে সবাই হাসতে লাগলো। হঠাৎ সবার হাসি থেমে গেল। নিশান অবাক হয়ে গেল। একজন ইশারা করে তাকে পিছনে তাকাতে বলল! নিশান কপাল কুঁচকে পিছনে তাকাল। মারাত্মক চমকে উঠলো সে কারন পিছনে নিশি দাঁড়ানো। তার সাথে রোদ্দুর,ইহান আর কাব্য! নিশান ভেবে নিলো আজ তাকে হসপিটালে যেতেই হবে। এদিকে নিশি শান্ত ভাবে ওর কাছে আসতে লাগলো। নিশান শুকানো ঢোক গিলে কিছু বলার চেষ্টা করল কিন্তু মুখ দিয়ে কিছুই বেরুচ্ছে না। নিশি হাত তুললে নিশান চোখ বন্ধ করে নিলো। নিশি হাত দিয়ে নিশানের গাল চেপে ধরে তার গালে হালকা ভাবে কিস করলো। উপস্থিত সবাই রীতিমতো অবাক! রোদ্দুর,ইহান আর কাব্য তো এখন আগের থেকেও বেশি অবাক। সবচেয়ে বেশি অবাক তো নিশান নিজে। কি ভাবলো আর কি হলো। সে চোখ বড় বড় করে নিশি’র দিকে তাকিয়ে আছে। নিশি মুচকি হেসে বলল..
– সরি মিস্টেক!
#চলবে….