Game Part-29+30

0
601

#Game
#মিমি_মুসকান ( লেখনিতে )
#পর্ব_২৯

নীলাশা অবাক হয়ে বলে উঠে…
– আপনি কি বললেন!

– সরি বললাম!

– সত্যি বললেন, বিশ্বাস হচ্ছে না আমার। আবার বলুন তো!

– সরি সরি সরি হয়েছে শান্তি!

– শান্তির কথা বলছেন আমি তো আজ নিজের কান কেই বিশ্বাস করতে পারছি না।

– ভাব নিচ্ছো কেন এতো!

– কি যে বলেন, ভাব নেবো না মানে। আপনি জানেন আপনি কি বললেন!

– আসলেই কাকে কি বললাম!

– কি বললেন আবার!

– এই শোন বেশি ভাব নিও না আদুরী বললো বলো তোমায় সরি বললাম না হলে তোমাকে আমি সরি বলতাম কখনো না।

– হুহ আমার ও কোনো ইচ্ছা নেই আপনার সাথে কথা বলার!

– তাহলে যাও এখান থেকে!

– আগে ছাড়ুন তো আমায়, না হলে কি করে যাবো!

নীল তাকিয়ে দেখল ও এখনো ধরে আছে নীলাশা কে। সে চট করে নীলাশা কে ছেড়ে দূরে গিয়ে দাঁড়াল। নীলাশা মুখ ভেংচি দিয়ে চলে গেল। নীল বলতে লাগল…

– এতো ভাব নিয়ে কিভাবে থাকে এই মেয়ে!
.

ভার্সিটি শেষে নীলাশা বের হতে যাবে তখন ওর সামনে এসে একটা গাড়ি থামল। নীলাশা তাকিয়ে দেখল মেহেরিন!

– মেহেরিন!

– হেই নীল আপু! কেমন আছো?

– খুব ভালো আপু! তুমি?

– এইতো, এসো গাড়িতে বসো।

– কিন্তু তোমার ভাই…

– আরে চিন্তা করো না পিছনে ডেভিল আছে। এসো..

নীলাশা গাড়িতে গিয়ে বসল। মেহেরিন গাড়ি ড্রাইভ করতে শুরু করল।

– ভাইয়া তোমাকে সরি বলেছে!

– হ্যাঁ বলেছে!

– আপু কালকের জন্য তুমি রাগ করো না কিন্তু!

– আরে না সত্যি আমার বলা উচিত ছিলো তোমার ভাই কে। এখানে এসব স্বাভাবিক ব্যাপার।

– তোমাকে নিয়ে আজ আমি বাসায় যাবো। যাবে আমার বাসায়!

– তোমার বাসায়!

– হ্যাঁ আমি দি আর মিষ্টি ভাবী কে বলেছি তোমার কথা, তারা তোমাকে দেখতে চেয়েছে।

– তাই!

– হুম হুম! তাইলে যাই হুম!
.
মেহেরিন নীলাশা কে নিয়ে খান বাড়িতে ঢুকল। নীলাশা এই প্রথম খান বাড়িতে ঢুকল। খান বাড়িতে ঢোকার সাথে সাথে তার শরীর শিউরে উঠলো। বসার ঘরে আনহা আর নিহা বসে ছিলো। মেহেরিন তাদের সাথে নীলাশা’র পরিচয় করিয়ে দিলো। সবাই কিছুক্ষণ গল্প করতে লাগল। এরমধ্যে শান্ত’র কান্না’র আওয়াজ আসলো। আনহা উঠে তার কাছে গেল।নিহা আনহা’র সাথে গেল। মেহেরিন শান্ত কে আনতে যাবে বলে সেও উঠে গেল। মেহেরিন আনহা’র ঘরে গেলে নিহা বলে উঠে…

– তুমি তুমি একেই ভাবী বানাতে চাও!

– হুম! কেন ভালো লাগে নি তোমাদের!

আনহা বলে উঠে…
– হুম অনেক সুন্দর তো দেখতে।

– ইশা আপুর থেকেও ভালো।

– তবে নীল কে জিজ্ঞেস করতে হবে সে রাজী কি না।

– তাহলে করো, ইশা আপু’র সাথে বিয়ে ঠিক হয়েছি হয় নি তো।

– আচ্ছা নীলাশা একা আছে চলো।

– শান্ত কে আমাকে দাও আমি নেবো।

– আচ্ছা নাও!
.
এখানে নীলাশা একটু উঠে আশপাশ দেখতে থাকে। হঠাৎ তার হিচকি শুরু হয়, এদিকে নীল সবে মাত্র বাসায় ঢুকে। কি টেবিলে থাকা পানির গ্লাস টা নিতে ‌যায় নীল। নীলাশাও ওই একই গ্লাস নিতে যায় তবে গ্লাস টা নীল’ই ধরে। দুজন দুজনকে দেখে ভারী অবাক। নীল বলে উঠে…
– তুমি এখানে!

নীলাশা কিছু না বলে পানির গ্লাস টা নিতে যায় কিন্তু নীল তা সরিয়ে ফেলে‌। নীলাশা বলে উঠে…

– দেখুন আমার হেঁচকি থামছে না পানির গ্লাস টা আমায় দিন।

– তার আগে তুমি বলো তুমি আমার বাসায় কি করছো?

– আপনি আগে আমায় পানি খেতে দিন তো!

– দেবো না, আগে সরি বলো।

– কিহ?

– হ্যাঁ বলো।

– কেন বলবো সরি!

– এমন ভাবে বলছো যেনো তুমি আজ অবদি কিছু করো নি। আনিওয়ে সবসময়‌ যে আমার সাথে ঝগড়া করো তাই বলবে!

– কখনো না! বলবো না বলবো না বলবো না।

– দেখলে তোমার হেঁচকি বন্ধ হয়ে গেছে।

নীলাশা খেয়াল করলো আসলেই তার হেঁচকি বন্ধ হয়ে গেছে। নীল বলে উঠে..

– তুমি যে ঝগড়াটে, পানি না খেয়ে বরং তুমি ঝগড়া করো দেখবে চট করে হেঁচকি বন্ধ হয়ে গেছে।

– আপনি আপনি কি বললেন আমায়।

– যা বলেছি একদম ঠিক বলেছি।

– আপনাকে তো আমি!

অতঃপর লেগে যায় তুমুল মারামারি, কেউ ছাড়ে না কাউকে। নীলাশা রেগে পানির জগ টা পুরো নীলের দিকে মারে। নীল রেগে রান্না ঘর থেকে আটা এনে পুরো নীলাশা’র মাথায় ঢেলে দেয়। কুশন দিয়ে মারামারি করতে করতে তুলো বের করে ফেলে। কিন্তু কেউই ছাড়ে না। ঘরের অবস্থা নাজেহাল। আনহা, নিহা আর মেহেরিন তাকিয়ে এসব দেখছে। নিহা বলে উঠে..

– তুই ওদের বিয়ে কিভাবে দিবি আদুরী!

আনহা বলে উঠে..
– এরা যে সাপ আর বেজি, কোনোমতে এদের এক করা সম্ভব না!

মেহেরিন তাকিয়ে তাকিয়ে দেখছে দুজনকে!
.
ইশা এখন’ই বিয়ের শপিং শুরু করে দিয়েছে। এদিকে মেহেরিন ভাবছে কি করে এই বিয়ে ভাঙা যায় তবে ইশা যে রকম মেয়ে কোনোমতে এই বিয়ে ভাঙতে চাইবে না সে। তবুও মেহেরিন ভাবতে থাকে।

এদিকে এলাকার কিছু ছেলে নীলাশা’কে প্রায় অনেকদিন ধরেই জ্বালাচ্ছে। কিন্তু নীলাশা তাদের কিছু বলে না কারন এতে তার’ই বিপদ হতে পারে। বেশ কিছুদিন পর একদিন নীলাশা’র বাসায় সেই ছেলে গুলো এসে। ছেলে গুলো এলাকার গুন্ডা মাস্তান নামেই বেশ খ্যাত। তারা নীলাশার মা আর বাবা কে ভয় দেখিয়ে নীলাশা’র বিয়ে ঠিক করিয়ে যায়। নীলাশা’র মা আর বাবা নিরুপায় হয়ে তাদের কথা মেনে নেয়। তারা হুমকি দিয়ে চলে যায়। পরদিন থেকেই নীলাশা’র‌ ভার্সিটি যাওয়া বন্ধ হয়ে যায়।

নীলের বিয়ে শুরু হতে আরো ২ সপ্তাহ বাকি, তবে এই কয়েকদিন নীলাশা কে ভার্সিটিতে দেখতে পায় না। এতো তার কোনো ভ্রুপ নেই তবে মেহেরিন রোজ’ই তার কথা জিজ্ঞেস করে। নীল বাসায় এসে বলে নীলাশা হয়তো ছুটি নিয়েছে তাই আসে না ভার্সিটিতে। মেহেরিন আর কিছু বলে না।

বিয়ের ১ সপ্তাহ আগে থেকেই চলতে থাকে বিয়ের আয়োজন। ব্যাচেলর পার্টি, আন্টি বদল, মেহেদী, সঙ্গীত, ইত্যাদি তে মেতে উঠে সবাই। কিন্তু মেহেরিন মোটেও চায় না এই ইশা মেয়েটার সাথে নীলের বিয়ে হোক। একটু ও পছন্দ হয় না তার এই মেয়েটাকে। কিন্তু নীল নিজে মত দিয়েছে এই বিয়েতে তাই তার কিছু্ই করার নেই। নিহা মেহেরিন কে অনেক বুঝিয়েছে!

বিয়ের জন্য পুরো খান বাড়ি খুব সুন্দর করে সাজানো হয়। খান বাড়ির সবাই রওনা দেয় ইশা’র বাসায়। এদিকে নীলাশা’র বিয়ের আয়োজন হয় সেদিন। ঘরে একা বসে বসে কাঁদতে থাকে সে। নীলাশা’র মা লুকিয়ে লুকিয়ে আসে তার কাছে। নীলাশা কাঁদতে কাঁদতে তার মা’কে জরিয়ে ধরে। মা তার মাথায় হাত রেখে বলে…

– তুই পালিয়ে যা মা!

– এসব কি বলছো তুমি মা!

– হ্যাঁ মা তুই পালিয়ে যা তাহলে বেঁচে যাবি। এরকম একটা খারাপ লোকের সাথে আমি তোকে জীবন পার করতে দেবো না।

– কিন্তু তোমাদের রেখে আমি কিভাবে যাবো!

– তুই চিন্তা করিস না তোর বাবা পুলিশকে ডাকতে গেছে কিন্তু আমি জানি ওই ছেলেটা তোকে কিছুতেই ছাড়বে না। তাই তুই এখন থেকে পালিয়ে তোর মামার বাসায় চলে যা। কিছুদিন ওখানে থাক পড়ে আমরা এই এলাকা ছেড়ে দেবো।

– মা…

– আর কথা বাড়াস না তোর বাবা এক্ষুনি চলে আসবে তুই পালিয়ে যা এখনি। জলদি কর।

অতঃপর নীলাশা বিয়ের সাজিয়ে’ই পালিয়ে যায়! দৌড়াতে দৌড়াতে প্রায় অনেকদূর চলে আসে সে। এতো দৌড়াতে দৌড়াতে হয়রান হয়ে যায় সে।‌ একটা চায়ের টং এ কিছুক্ষণ’র বসে সে। এক গ্লাস পানি খেয়ে রাস্তার দিকে তাকাতেই দেখে সেই ছেলে গুলো তাকে খুঁজতে এসেছে। নীলাশা পানির গ্লাস রেখে দৌড়াতে থাকে।

#চলবে….

#Game
#মিমি_মুসকান ( লেখনিতে )
#পর্ব_৩০

নীলাশা দৌড়াতে থাকে আর এদিকে সেই লোক গুলো তাকে দেখে তার পিছনে ছুটতে থাকে। কিছুক্ষণ পর নীলাশা ভিড়ের মধ্যে মিলিয়ে যায়। সেই লোকগুলো নীলাশা কে আবার খুঁজতে থাকে, তারা দেখে নীলাশা একটা গাড়ির ডিকিতে। অতঃপর তারাও সেই গাড়ির পিছু নেয়। গাড়ি এসে থামে ইশা’র বাড়ির সামনে তবে নীলাশা তা জানত না। নীলাশা গাড়ি’র ডিকি থেকে বের হয়ে দেখে সে লোক গুলো আসছে। সে দেরি না করে ছুটে যায় সেই বাড়িতে!

এদিকে নীল কে স্টেজে বসানো হয়েছে এখন শুধু ইশা কে আনা বাকি। মেহেরিন আর নিশি যায় ইশা কে আনতে। নিশি বলে উঠে…

– মন খারাপ কেন?

– এই ইশা টিসা কে ভালো লাগে না আমার!

– একটু পর তোর ভাবী হবে সে!

মেহেরিন মুখ ভেংচি দিয়ে সামনে তাকিয়ে বলে..
– না ইশা আমার ভাবী হবে না।

– মানে!

মেহেরিন বাঁকা হেসে সামনে তাকায়। নিশিও তাকায় সামনে। দেখে একটা ঘোরাঘুরি করছে কিন্তু খুব ভয় পেয়ে আছে সে। নিশি ভ্রু কুঁচকে তাকায় মেহেরিন’র দিকে, মেহেরিন হেসে বলে
– তোমার ভাবী! নীল আপু!

– নীলাশা আপু!

– ইয়াপ বেবী!

– কিন্তু ও এখানে কি করছে?

– সেটা জানতে‌ হলে তো ওর কাছে যেতে হবে।

– দেখে মনে হচ্ছে খুব ভয় পেয়ে আছে।

– আচ্ছা চলো দেখি!

অতঃপর মেহেরিন আর নিশি এসে নীলাশা’র সামনে দাঁড়ায়। হুট করে সামনে আসায় নীলাশা প্রথমে ঘাবড়ে যায় কিন্তু মেহেরিন কে দেখে হাঁফ ছেড়ে বাঁচে সে। নিশি বলে উঠে..

– তুমি এভাবে এখানে কেন? আর এতো ভয় পেয়ে আছো কেন?

নীলাশা ভয়ের কারনে কিছুই বলতে পারছে না। শুধু ঘামছে। নিশি ব্যাপারটা বুঝতে পেরে নীলাশা কে বসিয়ে দেয়। অতঃপর তাকে পানি খেতে দেয়। নীলাশা ঢকঢক করে এক গ্লাস পানি খেয়ে ফেলে। একটু শান্ত হয়ে সব ঘটনা খুলে বলে সে মেহেরিন কে। নিশি রেগে বলে..

– কি এতো কিছু! তুমি চিন্তা করো না আমি এক্ষুনি দেখছে। সবকটা কে মেরে…

মেহেরিন বলে উঠে..
– আপু শোন, এটা এখন বিয়ে বাড়ি এখানে এখন মারামারি ভালো লাগবে না। আর এভাবেও আমাদের গার্ড এখানে আসে নি তাই এতো রাগিস না। আর আপু’র মা বাবা এখনো ওখানেই আছে ভুলে গেলি।

নিশি অবাক হয়ে মেহেরিন’র দিকে তাকাল। মেহেরিন নিশি কে চোখ টিপ দিলো। নিশি ব্যাপারটা বুঝতে পারল মেহেরিন নীলাশা কে ভয় দেখাচ্ছে। এদিকে মেহেরিন’র কথায় নীলাশা আরো ভয় পেয়ে গেল। মেহেরিন নীলাশা’র হাত ধরে বলে..

– কিন্তু তুমি চিন্তা করো না আমি ডেভিল কে পাঠিয়ে দিচ্ছি তোমার মা বাবা’র কাছে। তারা তোমার মা বাবা কে দেখে রাখবে।

– সত্যি মেহেরিন তুমি করবে!

– তবে তার জন্য তোমাকে একটা কাজ করতে।

– তুমি বলো কি করতে হবে, তুমি যা বলবে আমি সেটাই করবো।

মেহেরিন নিশি’র দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসে।
.
মেহেরিন আর নিশি মিলে কনে কে নিয়ে আসল। তাকে নীলের পাশে বসানো হলো। কিছুক্ষণ গান বাজনা হলো। এতোক্ষণ পর মেহেরিন’কে হাসতে দেখে সবাই খুশি হয়। সবাই ভাবে মেহেরিন হয়তো ইশা কে এবার মেনেই নিয়েছে। অতঃপর বিয়ে শুরু হলো। কাজী এসে কনে’র পাশে বসে। তাকে কবুল বলতে বলল! কিন্তু কনে কিছু’ই বলছে না। সবাই বলতে বলছে কিন্তু তবুও কনে কিছু বলছে না। তখন একজন এসে বলে উঠে…

– কিভাবে কবুল বলবে ও! ও তো আর কনে না!

সবাই তাকিয়ে দেখল ইশা দাঁড়িয়ে আছে। নীল সাথে সাথে দাঁড়িয়ে গেল। যদি ইশা এখানে হয় তাহলে তার পাশে কে। সবাই অবাক! অভ্র, আনহা, নিহা, আহিয়ান, কাব্য, ইহান, রোদ্দুর সবাই। শুধু এক কোনে নিশি দাঁড়িয়ে আছে আর মেহেরিন চকলেট খাওয়ায় ব্যস্ত! নীল কনে’র মুখের ঘোমটা সরিয়ে দিলো। নীল বলে উঠে..

– নীলাশা!

নীলাশা নাম শুনে সবাই তাকায় মেহেরিন’র দিকে। কিন্তু মেহেরিন’র সেদিকে খেয়াল নেই। সে আপন মনে চকলেট খাচ্ছে। ইশা কাঁদো কাঁদো মুখ করে বলে…

– নীল তুই পারলি এটা করতে, শেষ পর্যন্ত এই মেয়েকে বিয়ে করার জন্য আমাকে ছেড়ে দিলি তুই!

নীলাশা চুপচাপ বসে আছে, কোনো কথাই বলছে না। কারন মেহেরিন তাকে কিছু বলতে না করছে। তখনকার শর্ত এটাই ছিলো নীলাশা কে নীল কে বিয়ে করতে হবে। নীলাশা প্রথমে না বললেও পরে হ্যাঁ বলতে বাধ্য হলো । নীল রেগে নীলাশা কে জিজ্ঞেস করছে…

– তুমি এখানে কেন?

– …

– কথা বলছো না কেন?

মেহেরিন বলে উঠে…
– কারন আমি এনেছি হবু ভাবী কে।

– মানে!

– মানে টা খুব সহজ ভাইয়া, তোমার বিয়ে নীলাশা আপু’র সাথেই হবে।

– কিহহ?

– হুম!

ইশা বলে উঠে..
– মেহেরিন তুমি পাগল হয়ে গেছো নাকি। বিয়ে আমার সাথে ঠিক হয়েছে।

– আমি আমার ভাইয়ার সাথে কথা বলছি আপু তুমি মাঝে কথা না বললেই ভালো হয়। আর যদি বলো বিয়ের কথা তবে বিয়ে এখনো হয় নি। কিন্তু এখন হবে ‌তাও নীলাশা’র আপুর সাথে।

নীল বলে উঠে…
– আমি এই মেয়েটা কে কোনোমতে বিয়ে করবো না।

– ভাইয়া…

নীল রেগে চিৎকার করে বলে…
– আদুরী! সবসময় তোমার কথা চলবে না। আমি যখন বলেছি আমি ওকে বিয়ে করবো না মানে করবো না!

হঠাৎ করে নীলের ধমক শুনে মেহেরিন লাফিয়ে উঠে। নিহা রেগে নীল কে বলে…

– নীল! কার সাথে কথা বলছো ভেবে বলো। তোমাকে কে রাইট দিয়েছে তুমি আদুরী’র সাথে উঁচু গলায় কথা বলো।

আহিয়ান নিহা কে সামলিয়ে বলে..
– তুমি শান্ত হও, এই সময় তোমার উত্তেজিত হওয়া ঠিক না।

– আপনি দেখলেন কিভাবে কথা বললো ও।‌

– ও রেগে আছে তাই বলেছে।

– তো কি হয়েছে। ও জানে মেহেরিন কেমন। এসবে অভস্ত তো ও তাই নাহ!

নীলের এতোক্ষণে বোধ হলো ও রাগের মাথায় কি বলেছে। সে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে রইল। অভ্র এসে নীলের ঘাড়ে হাত রেখে বলল…
– শান্ত হও নীল। এভাবে চেঁচিয়ে লাভ নেই। আমার জানা মতে তো তুমি ইশা কে ভালোবাসো না তাহলে এতো রেগে গেলো কেন?

– সরি দা!

নিহা বলে উঠে..
– আদুরী কোথায়? নিশি আদুরী কোথায়!

রোদ্দুর বলে উঠে…
– ও চলে গেছে আমি নিয়ে আসছি।

নীল বলে উঠে..
– আমি যাচ্ছি!
বলেই নীল চলে গেলো। আনহা আর নিশি আসলো নীলাশা’র কাছে। তারা এসে তাকে সান্ত্বনা দিলো। কারন তারা জানে এসব মেহেরিন করছে। এদিকে মেহেরিন রেগে আলমারি’র মধ্যে বসে আছে। নীল ঘরে এসে মেহেরিন কে খুঁজে কোথায় পায় না। অতঃপর দেখে আলমারি থেকে মেহেরিন’র লেহেঙ্গা’র কাপড় দেখা যাচ্ছে। নীলের আলমারি’র কাছে গিয়ে আলমারি’র দরজায় টোকা দেয়। মেহেরিন জানে এটা নীল। সে আরো জোরে আটকনো দরজা আটকানোর চেষ্টা করে। দু হাঁটু’র ওপর হাত রেখে বসে আছে সে।

– আদুরী সরি! ভাইয়া রেগে ছিলাম তাই বলেছি বের হয়ে এসো।

-…..

– ভাইয়া সরি বললাম তো। আর কখনো হবে না এরকম! বাইরে আসো এভাবে ভিতরে বসে থেকো না।

-…..

– ভাইয়া তোমার জন্য অনেক চকলেট এনেছি!

– …..

– আচ্ছা তুমি চাও তো আমি নীলাশা কে বিয়ে করি আমি করবো এই বার তো বের হও।

– তুমি সত্যি বিয়ে করবে তো ‌

– ভাইয়া তোমাকে কথা দিচ্ছি, বিয়ে করবো।

– সত্যি চকলেট এনেছো!

নীল মুচকি হেসে বলে…
– হ্যাঁ এনেছি বের হও!

মেহেরিন দরজা খুলে বলে…
– কোথায় চকলেট!

নীল হেসে মেহেরিন কে কোলে করে নামিয়ে খাটে বসায়। মেহেরিন বলে…
– আমার চকলেট কোথায়!

নীল মেহেরিন হাতে চকলেটের প্যাকেট দিয়ে বলে..
– এই নাও!

মেহেরিন মুখ ভেংচি দিয়ে বস চকলেট নিয়ে নেয়।

– সরি বললাম তো।

– তুমি আমাকে ধমক দিয়েছো।

– রেগে দিয়েছিলাম সরি!
বলেই মেহেরিন’র কপালে চুমু খায়।

– তুমি বলেছিলে বিয়ে করবে!

– হুম করবো তো!

মেহেরিন একলাফ দিয়ে খাট থেকে নেমে বলে..
– চলো!

নীল মেহেরিন’র এক হাত ধরে স্টেজে নিয়ে আসে। মেহেরিন এক হাত নীল ধরে আছে অন্য হাত দিয়ে সে চকলেট খাচ্ছে। নিহা মেহেরিন কে দেখে তার কাছে গিয়ে কপালে চুমু খেয়ে বলে..

– ঠিক আছো তুমি!

– হামম হামম জানো ভাইয়া বলেছে সে নীল আপু কে বিয়ে করবে। অবশেষে নীল আপু আমার নীল ভাবী হবে।

– তাই!

নিহা হেসে নীলের দিকে তাকায়। নীল মুচকি হেসে স্টেজে চলে যায়। কাজী কে বলে বিয়ে শুরু করতে। এসব দেখে ইশা বলে উঠে…

– এসব কি নীল! তুমি বলেছো তুমি আমাকে ভালোবাসো! তুমি আমাকে বিয়ে করবে। এখন তুমি মত পাল্টে ফেলছো।

নীল একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে…
– তোমাকে আমি বলেছিলাম ইশা আমার বোন এই বিয়েতে খুশি না হলে আমি তোমাকে বিয়ে করবো না। তুমি আমার কাছে ৩ মাস সময় ও চাইলে কিন্তু কিছু কি করতে পারলে। যখন আমার বোন কে খুশি করতে পারলে না তখন এই বিয়েটাও হবে না।

ইশা রেগে কিছু বলতে যাবে তখন নিশি ইশা’র ঘাড়ে হাত রেখে বলে..
– থ্রেড দেওয়ায় কথা ভুলে ও ভেবো না আর মরতে চাইলে আমাকে বলো ঠিক আছে..!

ইশা রেগে সেখান থেকে চলে যায়। ইশা’র মা বাবাও তার পিছু পিছু চলে যায়। অবশেষে নীল আর নীলাশা’র বিয়ে হয়। এখন খান বাড়িতে যাবার সময়। মেহেরিন হাত ধরে নীলাশা কে গাড়িতে উঠানোর সময় বলে…

– তোমার মা বাবা এখন ঠিক আছে আপু ‌

নীলাশা এই কথা শুনে কৃতজ্ঞতা ভরা চোখে মেহেরিন’র দিকে তাকায়। মেহেরিন জবাবে মুচকি হাসে।
.
সবার মতোই নীল কেও কোলে নিতে হয় নীলাশা কে। অতঃপর দুজনকে ঘরে পাঠানো হয়। কাব্য, নিশি সবাই মিলে ঘরের দরজা পিছন থেকে বন্ধ করে দেয়। ঘরে আসার পর’ই নীলাশা কোল থেকে নেমে যায়। নীল হুট করে নীলাশা’র দুই বাহু চেপে ধরে দেওয়ালে’র সাথে মিশিয়ে বলে…

– এটা কিভাবে করতে পারো তুমি, এতোটা নিচে কিভাবে নামতে পারো। শেষ অবদি আমার বিয়ে টা ভেঙে নিজে বিয়ের আসরে বসে পড়লে। এটাই কি তোমার মা বাবা তোমাকে শিখিয়েছে!

নীলাশা এবার রেগে গিয়ে নীল ধাক্কা মারে। নীল কিছুটা দূরে চলে যায়। নীলাশা বলে উঠে…
– আমার কোনো শখ ছিলো না আপনাকে বিয়ে করার। আমি নিরুপায় ছিলাম বলেই এই বিয়েটা আমায় করতে হলো। না হলে আপনাকে বিয়ে কখনো করতাম না।

– বিয়ে তুমি অলরেডি করে ফেলেছো। আচ্ছা বলোতো আমার বোন কে কি করেছো তুমি!

– এটা এখন আমি কি করে বলবো। আপনার বোন আমায় কেন এতো ভালোবাসে এটা আমি জানবো কি করে।

– সেদিন ওর সামনেই আসা উচিত ছিল না তোমার। সব নষ্টের মূল তুমি।

– আর আপনি সব নষ্টের ফল!

– তোমার সাথে কথা বলাই বেকার! একদম আমার কাছে আসবে না তুমি! আর না কথা বলবে আমার সাথে!

বলেই নীল ওয়াসরুম এ চলে গেল। নীলাশা রেগে গিয়ে বিছানায় বসে। অনেক ক্লান্ত সে! নীল ফ্রেশ হয়ে এসে দেখে নীলাশা বিছানায়। নীল বলে উঠে..

– তুমি আমার বিছানায় কি করছো।

– ভুলে যাবেন না এই ঘরের সব কিছুর মাঝে আমাদের সমান সমান অধিকার।

– তার মানে তুমি এখানে ঘুমাবে।

– অবশ্যই! নিচে আমি কখনো ঘুমাতে পারবো না। আপনার সমস্যা না থাকলে আমার পাশে ঘুমাতে পারেন। আমি বলে বলছি না হলে অন্য কেউ হলে কখনো বলতো না।

নীল রেগে বিছানা থেকে একটা বালিশ নিয়ে সোফায় গিয়ে বসে আর বলে..
– তুমি নিজেই একটা সমস্যা। এখন লাইট অফ করো ঘুমাবো আমি।

নীলাশা কিছু না বলে মুখ ভেংচি দিয়ে লাইট অফ করে শুয়ে পড়ে। এভাবেই একজন বিছানায় আরেকজন সোফায় নিজেদের প্রথম রাত পার করে।
.
মেহেরিন খুশিতে দৌড়ে এসে অভ্র’র গালে চুমু খায়। অতঃপর তাকে নিয়ে ঘুরতে থাকে। অভ্র মেহেরিন’র এমন কান্ড দেখে হাসতে থাকে।

– সত্যি বলছি দা তুমি না থাকলে এই বিয়েটা কখনোই হতো। থ্যাংকু থ্যাংকু থ্যাংকু সো মাচ তোমাকে!

– আমি তো শুধু নীলাশা কে বিয়ের আসরে আনলাম বাকি টা তো তুমি করলে!

– তাও তুমি এনে তো দিয়েছো। যাই বলো আমাদের প্ল্যান সাকসেসফুল!

মেহেরিন আর অভ্র’র কথা শুনে আনহা দরজার সামনে দাঁড়িয়ে বলে…
– তার মানে এসব তোমাদের দু’ভাই বোন দের প্ল্যান। আমিও ভাবছি এতোটা কাকতালীয় বিষয় কিভাবে হতে পারে। দুজনের’ই একসাথে বিয়ে।

– আরে মিষ্টি ভাবী আস্তে বলো কেউ শুনে ফেললে সর্বনাশ ধুরি সাড়ে সর্বনাশ হয়ে যাবে।

– অভ্র আপনি ও!

– কেন মিষ্টি ভাবী নীল ভাবী কে তোমার পছন্দ না।

– হ্যাঁ পছন্দ তো কিন্তু এভাবে..

– দেখলে তো সেদিন দুজন কিভাবে ঝগড়া করছিলো। তাই এভাবে বিয়েটা দিতে হলো। আমার ভাই আমার জন্য কোনো পথ খোলা রাখে নি।

– কিন্তু কিভাবে কি? নীলাশা কে যারা জোর করে বিয়ে করতে চাইছিলো!

অভ্র বলে উঠে..
– ওগুলো আমার লোক ছিল। পুরোটাই প্ল্যান ছিলো নীলাশা কে বিয়ের আসরে আনার। নীলাশা’র পালিয়ে যাওয়া, গাড়িতে উঠে এখানে আসা সব! আর বাকিটা সবাই জানে..

– এতো সব!

– আমার বোন চেয়েছে তো করতেই হবে।

– ইয়াপ দা। চলো আমরা এই খুশিতে একটু ডান্স করি।

– বানরের কথায় বিড়াল নাচে!

– হি হি হি এই ধিনাক ধিনাক এই ধিনাক..
বলে নাচতে নাচতে মেহেরিন চলে যায়। আনহা তাকিয়ে থাকে অভ্র’র দিকে!

#চলবে….