#Game
#মিমি_মুসকান ( লেখনিতে )
#পর্ব_৩৩
৬ মাস পর…
কাব্য আজ দেশে ফিরছে, প্রায় কয়েক মাস আগে কিছূ কাজের জন্য তাকে কানাডা পাঠানো হয়েছিল। সেখান থেকে আজ ফিরছে সে। এই নিয়ে বাড়ির সবাই বেশ উত্তেজিত। তার আসার কারনে সকাল সকাল উঠে আনহা তার জন্য রান্না করছে। নিহা, নীল তৈরি হচ্ছে রিসিভ করতে যাবে। সবাই বেশ খুশি, কিছু না কিছু করবে বলে কিন্তু এখানে মেহেরিন…
সে যে কাল রাতে ঘুমিয়েছে এখন পর্যন্ত উঠে নি সে যেখানে শান্ত আর অরনি দুজনেই তার বিছানায় এসে তাকে ডাকছে। সে বলছে আর দু’মিনিট আর দু’মিনিট এভাবে করতে করতে প্রায় এখন দু’ঘন্টা হতে চলল কিন্তু মেহেরিন’র দু’মিনিট আর শেষ হলো না। শান্ত শেষমেষ অরনি কে নিয়ে বাইরে চলে এলো।
নীলাশা প্রেগন্যান্ট আজ ৩ মাস, অরনি এখন ভালো করেই ভূতনি বলতে পারে। কিন্তু এখানে সব পরিশ্রম আহিয়ানের। বেচারি নিহা এখন অবদি মা ডাকটা শুনতে পেলো না। এদিকে ভার্সিটিতে একটা নতুন বন্ধু হয়েছিল মেহেরিন’র। মেহেরিন ও তার সাথে অনেকটা ফ্রি হয়ে গেল। তবে এই বন্ধুত্ব বেশি দিন টিকল না। মেহেরিন সেই রাগে এখন কারো সাথে’ই বন্ধুত্ব করতে চায় না।
কাব্য’র ফ্লাইট ল্যান্ড করেছে।আহিয়ান, নিহা, নীল, রোদ্দুর তাকে রিসিভ করতে গেছে। সবাইকে এখানে দেখে কাব্য অনেক খুশি তবে মেহেরিন যে আসবে না সেটা হয়তো সে জানতো। মেহেরিন এখনো মরার মতো পড়ে ঘুমাচ্ছে। দুপুর ১২ টা বাজে এখন, কাব্য মেহেরিন’র ঘরে আলো। বিছানার কাছে এসে ঘুমন্ত মেহেরিন কে খানিকক্ষণ দাঁড়িয়ে দেখে নিলো অতঃপর মেহেরিন কে খুব জোরে একটা চিমটি দিলো। মেহেরিন লাফিয়ে উঠলো। চোখ ঢলতে ঢলতে বলে..
– কোন কচ্ছপের বাচ্চা আমার ঘুমটা নষ্ট করল!
– এই আমি!
মেহেরিন ঘুম ঘুম চোখে সামনে তাকিয়ে দেখল কাব্য। তাকে দেখে মেহেরিন এক গাল হেসে তাকে জড়িয়ে ধরল।
– এসে পড়েছিস!
– হুম!
– কেমন কাটলো এতো দিন তোর।
– খুব ভালো। তুই বল…
– হুম ভালো। তুই অনেক দূর থেকে এসেছিস অনেক টায়ার্ড তুই যা ফ্রেশ হয়ে নে ঠিক আছে। গুড নাইট!
বলেই মেহেরিন আবারও শুয়ে পড়ল। আর শুয়ে পড়ার সাথে সাথেই ঘুম। কাব্য এটাই আশা করেছিল তার কাছ থেকে। এদিকে সবাই দরজার সামনে দাঁড়িয়ে ছিল, তারা মেহেরিন’র এমন কান্ড দেখে হেসে উঠলো।
.
রাতে….
সবাই বসে আড্ডা মারছে। মেহেরিন শান্ত কে কোলে নিয়েছে, শান্ত নিয়েছে অরনি কে আর অরনি কোলে নিয়েছে বিড়াল বাচ্চা কে। তবে সেই বিড়াল বাচ্চা এখন আর বিড়ার বাচ্চা নেই অনেক বড় হয়েছে তবে মেহেরিন তাকে সেই বিড়াল বাচ্চা বলেই ডাকে। মেহেরিন’র দেখাদেখি শান্ত আর অরনি দুজনেই সেই নামে ডাকে।
সবাই অনেক ধরনের গল্প গুজব করছে। অনেক দিন পর সবাই আজ একসাথে। পুরো জমজমাট একটা পরিবেশ। তখন নিশি বলে উঠে..
– তা কাব্য শুধু কি কাজ’ই কমপ্লিট করলি নাকি গফ টফ কিছু পেলি!
নিশি’র কথায় কাব্য কেমন চুপ হয়ে গেল। সবাই তাকিয়ে আছে তার সাথে। গোলামাল লাগছে ব্যাপারটা কিছু তো একটা হয়েছে! রোদ্দুর বলে উঠে..
– নিশি তো খালি আকাশে ঢিল ছুঁড়লো কিন্তু এখন তো মনে হচ্ছে ঢিল টা নিশানায় লেগেছে।
ইহান বলে উঠে..
– কাব্য সত্যি আমরা কি তাহলে এইবার ভাবী ডাকতে পারবো।
কাব্য হেসে মাথা নিচু করে নিল। অতঃপর ধীরে ধীরে বলল..
– ১ মাস হলো তার সাথে পরিচয় খুব ভালো মেয়ে!
মেহেরিন চট করে বলে উঠে..
– কি, কে, কখন, কোথায়, কিভাবে, কার সাথে !
– একটু দম নে!
– তুই বলবি!
– আচ্ছা গাইস মেয়েটার নাম ক্যাট.. ক্যাট মেহেনজা!
আনহা বলে উঠে..
– ক্যাট ইউ মীন বিড়াল!
সবাই হেসে উঠে। কাব্য বলে..
– আসলে ভাবী জন্মসূত্রে সে ক্যানাডার নাগরিক তাই এমন নাম।
– ওহ্ আচ্ছা তাই বল।
নীলাশা বলে উঠে..
– ফ্যামিলি তে কে কে আছে?
– ভাবী ক্যাট অনাথ!
সবাই চুপ হয়ে যায়। কাব্য বলে উঠে..
– কার এক্সিডেন্ট এ মা বাবা মারা যায়। অতঃপর অনাথ আশ্রমে বড় হয় সে। তবে দেখতে খুব মিষ্টি! তোমাদের অনেক ভালো লাগবে ওকে। আমার সাথে প্রথম একটা ক্যাফে তে দেখা হয় ওর!
ইহান বলে উঠে..
– আমাদের কাব্য ভাই দেখি প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছে!
নিহা বলে উঠে..
– আচ্ছা বেচারা এভাবেই পারে না লজ্জায় মরে যায় তোরা আর প্লিজ পিন্চ মারিস না!
আহিয়ান বলে উঠে..
– তোমার সাথে নিয়ে আসতে তাকে!
– আনতে চেয়েছিলাম জিজু তবে তার একটু কাজ আছে আর তার অফিস থেকেও ছুটি নিতে হবে। তবে কয়েকদিন পর’ই আসবে সে। আমাকে জানিয়েছে..
নিশি, রোদ্দুর, ইহান একসাথে বলে..
– ওহ্ আচ্ছা!
– গাইস প্লিজ!
নীল বলে উঠে..
– মেয়ে বাংলা জানে!
– হ্যাঁ জানে ওর মা বাঙালি ছিল। তাই খুব ভালো বাংলা কথা বলতে পারে।
– তার মানে বেশ ভালো ভাবে পটিয়েছিস!
– ভাইয়া তুমি ও!
নীলাশা নীল কে গুঁতো মেরে বলে..
– আপনিও না চুপ করুন!
একে একে সবার কথা শেষ হলে এবার মেহেরিন বলার জন্য প্রস্তুত নেয়। সে উঠে কাব্য’র কাছে গিয়ে দাঁড়ায়। অতঃপর কাব্য’র গাল ধরে মুখটা একবার এদিক একবার ওদিক করে বলে..
– মেয়েটা তোর কি দেখে প্রেমে পড়ল বল তো!
– আদুরী!
– আমি সিরিয়াসলি বলছি, তোর কোন গুন দেখে মেয়েটা তোর প্রেমে পড়ল এটা জানতে চাওয়া আমার মন।
আনহা বলে..
– তোমার মন তো তাই জানার কোনো শেষ নেই!
আহিয়ান বলে..
– পৃথিবীতে যত অযুক্তি কথা আছে তা জানতে চাওয়া আমাদের মেহেরিন’র মন।
মেহেরিন একটু ইনোসেন্ট ফেস করে তাকাল। অতঃপর সবাই একসাথে হেসে উঠে।
.
১ সপ্তাহ পর…
কাব্য আজ খুব খুশি কারন আজ ক্যাট আসছে। মেহেরিন কিছুক্ষণ পর পর কাব্য কে দেখছে। সত্যি সে অনেক খুশি আর খুব এক্সাইটেড! রোদ্দুর, কাব্য আর মেহেরিন এই ৩ জন এসেছে ক্যাট কে রিসিভ করতে। ফ্লাইট ল্যান্ড করেছে কিছুক্ষণ আগে। একে একে চেকিং করে সবাই বের হচ্ছে। মেহেরিন অধীর আগ্রহে তাকিয়ে আছে ক্যাট কে দেখার জন্য। কারন এই ১ সপ্তাহে কাব্য ক্যাটের কথা বলে বলে তার মাথা খেয়ে ফেলেছে তাই তাকে দেখবার আগ্রহ তার বেড়ে গেছে।
হঠাৎ কাব্য মেহেরিন’র ঘাড়ে হাত রেখে সামনে তাকাল, মেহেরিন ও সাথে সাথে তাকাল। একটা মেয়ে আসছে, চুল গুলো ব্রাউন রঙের স্লিকি চুল তবে বেশি বড়ো না, পড়নে কালো রঙের একটা ওয়েস্টন ড্রেস, চোখে কালো রঙের সানগ্লাস। মেয়েটা কে দেখে ক্যাট’ই মনে হচ্ছে।
মেয়েটি এসেই কাব্য কে জরিয়ে ধরল। কাব্য ও তাকে জড়িয়ে ধরল। মেহেরিন এখন ফুলফিল সিউর।
– কেমন আছো বেবী!
– ভালো তুমি!
– হুম ভালো।
– আসতে কোনো সমস্যা হয় নি তো!
– না কোনো সমস্যা হয় নি!
– এখানে আসো, ( মেহেরিন কে উদ্দেশ্য করে ) মিট মাই জান আদুরী!
– মেহেরিন বর্ষা খান রাইট!
– ইয়াপ!
ক্যাট এসে মেহেরিন কে এসে জরিয়ে ধরে। মেহেরিন ও তাকে জরিয়ে ধরে। অতঃপর কাব্য রোদ্দুর কে পরিচয় করিয়ে দেয়। ক্যাট তার সাথে হাত মিলায়। ক্যাট মেহেরিন কে উদ্দেশ্য করে বলে..
– তোমার দেখার অনেক আগ্রহ ছিলো আমার জানো!
– আমার ও। বাই দ্যা ওয়ে তুমি দেখতে খুব কিউট!
– কিন্তু তুমি আমার চেয়ে বেশি কিউট, একদম কিউটি কিউটি!
– থ্যাংকু, তোমাকে আমি আজ থেকে মিয়াও ভাবী বলে ডাকতে পারি।
– মিয়াও ভাবী!
– এভাবেও তুমি আমার ভাবী হবে আর তোমার নাম তো ক্যাট মানে বিড়াল এজন্য নামটা রাখলাম ভালো না
– বেস্ট নাম দিলে আমায়!
কাব্য বলে উঠে..
– শেষমেষ মিয়াও ভাবী!
#চলবে….