#Game
#মিমি_মুসকান ( লেখনিতে )
#পর্ব_৩৪ [ #শেষ_পর্বের_প্রথমাংশ ]
কাব্য ক্যাট কে নিয়ে বাসায় আসে, সবাই তাকে দেখে খুব খুশি হয়। অনেক সুন্দর করে সবাই অ্যাপায়ন করে তার। ক্যাট’র এসব কিছু খুব ভালো লাগে। তবে এখানে মেহেরিন’র সাথে তার খুব ভাব জমে। সবার সাথেই খুব সহজে মিশে যেতে থাকে সে। সেদিন ক্যাট আর মেহেরিন দুজন মিলে যায় রান্না করতে। রান্না কিছু না হলেও রান্না ঘরে সেদিন বেশ তুফান উঠেছিল। জিনিসপত্র উড়ে উড়ে বসার ঘরে এসে পড়েছিল। ভয়ে কেউ সেদিন আর রান্না ঘরের দিকে পা বাড়ায় নি।
কাব্য খুব খুশি কারন মেহেরিন’র ক্যাট কে ভালো লেগেছে। এটা নিয়ে খুব চিন্তায় ছিল সে। তবে এদিকে আবার ও মেহেরিন’র হামলা হলো। মেহেরিন গাড়ি ড্রাইভ করছিল তখন হুট করে পেছন সিট থেকে কেউ এসে তার গলা টিপে ধরে। মেহেরিন গাড়ির সামনের আয়নায় তাকে দেখে। তার মুখে মুখোস আর হাতে গ্লাফস। মেহেরিন গাড়ির হ্যান্ডেল টা ধরে গাড়ি ঘোরায়। মেহেরিন’র গলা থেকে তার হাত ছুটে যায়। অতঃপর সে একটা ছুড়ি নিয়ে মেহেরিন’র গলায় দিতে গেলে ভাগ্যের জোরে সেদিন মেহেরিন বেঁচে যায়। তবে তাকে ধরতে পারে নি।
একথা শোনার পর অভ্র’র চিন্তা আবারও বেড়ে গেলো। কে এই নতুন শত্রু তাদের যে এভাবে তাদের পিছনে লেগে আছে। আজ হয়তো মেহেরিন বেঁচে গেছে কিন্তু যদি পরেরবার কিছু হয়ে যায় তখন। এদিকে সেই লোকটা আজ বেশ খুশি। অবশেষে এখন তার মনে হচ্ছে তার প্ল্যান এবার সফল হবে। সে ওয়াইনের বোতল টা হাতে নেবার পর আরেকটা লোক এসে উপস্থিত হলো।
– খুব খুশি মনে হচ্ছে তোমায়।
– এতোদিন পর আমার প্ল্যান সাকসেসফুল হবে, অবশেষে এবার মেহেরিন বর্ষা খানের ইতি হবে। আমি খুশি হবো না।
– প্ল্যান হয়ে গেছে। দু’সপ্তাহ পর খান কোম্পানির একটা মিটিং কনফারেন্স আছে। খান পরিবারের সবাই থাকবে সেখানে। সেদিন মেহেরিন’র গল্পের ইতি হবে। তবে..
– তবে!
– নিহা সেখানে থাকবে না। কোম্পানি’র কাজে ১ সপ্তাহ পর ব্যাংকক আসছে সে।
– তাহলে তার গল্পের ইতি সেখানেই করার প্রস্তুত কর। বাই দ্যা ওয়ে আমি বাংলাদেশ কবে যাচ্ছি!
– আগামীকাল ফ্লাইট তোমার!
সে হেসে বলল..
– মেহেরিন বর্ষা খান ওরফে আদুরী ইউর গেইম ইজ ওভার নাও।
বলেই হাতে থাকা মেহেরিন’র ছবি টাকে মোমবাতি’র আগুনে জ্বালিয়ে দিলো।
.
কয়েকদিন পর..
মেহেরিন, কাব্য, রোদ্দুর, ইহান, নিশি আর ক্যাট শপিং করতে গিয়েছিল। সেখানে মেহেরিন আর ক্যাট একসাথে ছিল। মেহেরিন তখন বলে উঠে..
– আচ্ছা মিয়াও ভাবী, কাব্য’র কি তোমার বেশি ভালো লেগেছিল।
– কেন ওর মধ্যে ভালো কি নেই বলো।
– আরে আমি কখন বললাম নেই তবে থাকলেও সেটা আমার চোখে পড়ে না।
– তুমি ওর বন্ধু তো তাই!
– কেন বন্ধু বলে কেন।
– কেন তুমি জানো হার এক দোস্ত কামিনা হতা হে!
– তুমি আমি খুব সুইট!
ক্যাট মেহেরিন’র গাল টেনে বলে..
– একদম রসগোল্লা’র মতো!
মেহেরিন হেসে উঠে। কিন্তু হঠাৎ করেই ক্যাট মেহেরিন কে খুব জোরে ধাক্কা মারে। মেহেরিন সামলাতে না পেরে ধপাস করে পরে যায়। অতঃপর অনেক মানুষের গোলমালের আওয়াজ পাওয়া যায়। এখানে নাকি গুলি চলেছে। মেহেরিন একবার ওপাশে তাকায়। মানুষজন দৌড়াদৌড়ি করছে, ভিড়ের মধ্যে থেকে কাব্য , রোদ্দুর,ইহান আর নিশি দৌড়ে এদিক আসছে। মেহেরিন ক্যাট এর দিকে তাকাল। ক্যাট এপাশে তাকিয়ে আছে। মেহেরিন ও এপাশে তাকাল। কিছু লোক তাদের দিকে এগিয়ে আসছে। তাদের মুখেও ওই একই মুখোস যেটা সেদিন গাড়িতে লোকটা পড়ে এসেছিল। তাদের একেকজনের হাতের গান।
কাব্য ছুটে এসে মেহেরিন’র কাছে আসল। নিচ থেকে মেহেরিন তুলল। এদিকে লোক গুলো গান তাক করে একের পর এক গুলির শব্দ পাওয়া গেল। তবে সেটা লোকগুলো চালাই নি, চালিয়েছে ডেভিল আর গার্ড গুলো। ডেভিল গুলি চালাতে লাগল আর একে একে সবাই নিয়ে বের হয়ে গেল।
.
রাতে মেহেরিন ক্যাট’র ঘরে নক করল! ক্যাট বিছানায় বসে ল্যাপটপ টিপছিল। মেহেরিন কে দেখে হেসে তাকে ভেতরে আসতে বলল..
– ঠিক আছো।
– আমার আবার কি হবে, তোমাকে থ্যাংকু দিতে আসলাম
– কেন?
– এই যা ভুলে গেলে, তুমি তো দেখি আমার থেকেও মন ভোলা। কিন্তু মেহেরিন আর যাই ভুলুক কারো ফেভার কখনো ভুলে না। আমাকে তান বাঁচানোর জন্য!
– এটা আমার দায়িত্ব ছিল, তবে এটা কখনো ভেবে না আজ যে বাঁচিয়েছে কাল ও সে বাঁচাবে।
– কেন সে’ই আবার মারার প্ল্যান করবে নাকি।
ক্যাট মুচকি হেসে বলল..
– কাল সে না ও থাকতে পারে!
– ওহ আচ্ছা।
অতঃপর দুজনেই খানিকক্ষণ গল্প করলো। এবার মেহেরিন ঘরে গেলো। ঘরে আসতে না আসতেই ডেভিল দৌড়ে আসল।
– ম্যাম!
– ডেভিল এতো রাতে, এভরিথিং ইজ ফাইন!
– নো ম্যাম!
– কি হয়েছে?
– ম্যাম সেখানে.. সেখানে কাউকে দেখা গেছে।
– হোয়াট,কি বলছো!
বলেই মেহেরিন ঘর থেকে বের হলো তার সাথে সাথে ডেভিল ও আসতে লাগল!
– ম্যাম সিসি টিভি ক্যামেরায় দেখা গেছে তবে কে সেটা জানা যায় নি।
– সে কোথায়?
– ম্যাম সেখানেই আছে, তাকে নিয়ে যেতে পারি নি।
মেহেরিন ডেভিলের দিকে তাকিয়ে বলল..
– তার মানে তাকে দেখেছে!
ডেভিল মাথা নিচু করে রইল। মেহেরিন দু’হাত ঘসে তার রাগ কন্ট্রোল করার চেষ্টা করল , অতঃপর দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল..
– এই জায়গা দ্রুত চেঞ্জ করো, যেভাবেই হোক জানার চেষ্টা করো কে ছিল। আর গার্ড আরো বাড়িয়ে দাও। কোনোমতে যেন কেউ জানতে না পারে। ওকে!
– ইয়েস ম্যাম!
অতঃপর মেহেরিন গাড়িতে গিয়ে উঠলো। কিছুক্ষণ পর একটা বাড়িতে আসল মেহেরিন। দাঁড়িয়ে চোখ বোলাতে থাকল বাড়িটার দিকে। ছোটবেলার সব স্মৃতি জুড়ে আছে তার এখানে। তার মা’র সাথে তার খেলা করা, সারাদিন ছোটাছুটি করা সব কিছু। মেহেরিন হেটে বাড়িটার পিছনে গেলো। এখনো সেই দোলনা টা আগের মতোই আছে। সেই আম গাছ’টা এখানো আছে সেখানে। কতোই না মনে পড়ে এই দোলনায় বসে মা সাথে কতো খেলেছে সে। বাগানের ফুলগাছ গুলো এখন আর আগের মতো করে কেউ যত্ন নেয় না। আফসোস লাগছে মা থাকলে কখনো গাছ গুলোর এই হাল হতো না। রাতের আঁধারে যেখানে সব অন্ধকার থাকার কথা সেখানে এই বাড়িটা পুরো আলোয় আলোকিত। কারন তার মা’র অন্ধকার ভালো লাগে না। তাই তাদের বাগানের এই দিক টাও বিভিন্ন রকমের লাইটিং দিয়ে সাজানো।
মেহেরিন জোরে জোরে ডেভিল কে ডাক দিলো। ডেভিল এসে উপস্থিত হলো।
– জ্বি ম্যাম।
– কাদের রাখছো কাজে, এই ফুল গুলোর যত্ন নেয় না কেন।
– আমি দেখছি ম্যাম।
– হুম দেখো ফুল গুলোর যত্ন যাতে ঠিক ভাবে নেওয়া হয়।
.
মেহেরিন এসে দাঁড়ালো সদর দরজার মুখে। দরজার ঝুলে থাকা তালা টায় ধুলো জমে গেছে। ডেভিল এসে তালা টা খুলল। মেহেরিন বাড়িতে পা রাখল, আজ প্রায় ৮ বছর পর। এই ৮ বছর আগে তার মা মারা যাবার পর আর কখনো এই বাড়িতে আসে নি। ঘরের ভেতর টুকু পরিষ্কার লাগছে, কয়েকদিন পর পর সার্ভেন্ট এসে পরিষ্কার করে যায় তাই এমন লাগছে। মেহেরিন হাঁটতে হাঁটতে গেলো তার মায়ের ঘরে। দেওয়ালে থাকা তার আর তার মায়ের ছবিটা এখনো আগের মতোই আছে। তার মুখের সেই স্নিগ্ধ হাসি দেখতে পাচ্ছে সে দূর থেকেই। মেহেরিন খেয়াল করল তার চোখ ঝাপসা হয়ে যাচ্ছে। সে আর দেরি না করে চট করে চলে এলো।
নিচে আসা মাত্রই গাড়ির আওয়াজ আসল। ডেভিল বলে উঠে..
– সে এসে পড়েছে!
– স্টোর রুমে আটকে রাখো তাকে, তার মুখ টাও দেখতে চাই না আমি। আর হ্যাঁ আগে যেভাবে আদর যত্ন করতে এখনো সেই ভাবেই করবে। মরনযন্ত্রণা দেবে ওকে। আর হ্যাঁ খেয়াল রাখবে এটার খবর যেন কেউ না পায়। আগের মতো ভুল এবার যাতে না হয়!
– জ্বি ম্যাম।
মেহেরিন বাইরে বের হয়ে আসল। দেখল সেই লোকটা দাঁড়িয়ে রাখা হয়েছে। মুখে কালো কাপড় দেওয়া। মেহেরিন তার থেকে চোখ সরিয়ে সানগ্লাস টা মুখে দিয়ে গাড়ি নিয়ে চলে এলো।
#চলবে….