#বিবর্ণ_নীলাম্বরী
#মম_সাহা
পর্বঃ ছাব্বিশ
সকাল থেকে বাড়ি জমজমাট।বিয়ে দুপুরের দিকে।রান্না বান্না হচ্ছে।সবাই যার যার মতন সাজগোজে ব্যস্ত। নিরুপমাকে পার্লারে পাঠানো হয়েছে। বাকি সবাই যার যার মতন বাসায় সাজছে।
মেহমানে ভরপুর বাড়ি।নীলা বিয়ে ভাঙার ছক রীতিমতো কষে ফেলেছে।এখন শুধু সঠিক ভাবে বাস্তবায়ন করার পালা।নীলা সুযোখ খুঁজছে তার বাবার সাথে কথা বলার।বাবাকে অন্ততঃ কিছুটা জানিয়ে রাখা উচিত। যেমন ভাবনা তেমন কাজ।নীলা ওরনা টা শরীরে জড়িয়ে বাবার ঘরে ছুট লাগায়।
আজিজুর রহমান আলমারি থেকে ইস্ত্রি করা পাঞ্জাবি টা মাত্র শরীরে জড়িয়েছেন তখনই নীলা রুমে ঢুকে।নীলাকে রুমে আসতে দেখেই আজিজুর রহমান একটা সুন্দর হাসি দেয়। নীলা বাবার কাছে এসে পাঞ্জাবীর বোতাম টা লাগাতে লাগতে বলল
-‘বাবা তোমাকে না আজ বেশ সুন্দর লাগছে।’
আজিজুর রহমান সস্নেহে মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে বলল
-‘অন্য সময় সুন্দর লাগে না আম্মা?’
নীলা হেসে বলল
-‘লাগে তো বাবা অনেক সুন্দর লাগে।’
আজিজুর রহমান এবার সুগন্ধি টা গায়ে মাখতে মাখতে বললেন
-‘তুমি কিছু বলতে এসেছো মা তাই না? তো বলে ফেলো।
-‘আসলে বাবা,,,
নীলা কথা সম্পূর্ণ করার আগেই তার দাদী আর ফুপু রুমে চলে আসলো।তাদেরকে রুমে আসতে দেখে নীলা চুপ হয়ে গেলো।দাদী রুমে ঢুকেই বলল
-‘কিরে ছ্যামড়ি তুই এইহানে কি করছ?বিয়া বাড়ি কত কাম একটু হাত লাইগাইলেও তো পারছ।এমনেই রূপ নাই আবার যদি গুণও না থাকে দো তোরে অন্যের বাড়িত পাঠাইবো কেমনে?’
অন্যসময় সব কথা চুপ করে শুনলেও আজ চুপ রইল না।বরং এক দুরন্ত কিশোরীর মতন খিলখিল করে হাসতে হাসতে বলল
-‘আমি কাজ পারি না কিন্তু তুমি তো পারো দাদী তোমাকে সাথে নিয়ে যাবো নে।তখন কেউ কিছু বলবে না।বউয়ের সাথে দাদী ফ্রি।’
আজিজুর রহমান হো হো করে হেসে উঠলো। হবিবা খানম মুখ ভেংচি দিয়ে বলল
-‘ওসব ঢঙের কথাই বলতে পারবি কাজের কাজ কিছুই পারবি না।’
আজিজুর রহমান হাসি থামিয়ে দিলেন। তার মেয়েটা কতদিন পর প্রাণ খুলে খিলখিল করে হাসলো।আর ওনার মা আর বোন কিনা কটুক্তি করছে।আজিজুর রহমান মেয়ের দিকে আহত দৃষ্টিতে তাকিয়ে দেখলো মেয়ে আগের ন্যায় খিলখিল করে হাসছে।
হাবিবা খানম ভ্রু কুঁচকে বলল
-‘কিরে পাগল টাগল হয়েছিস নাকি? এমন হাসছিস কেন?’
নীলা হাসতে হাসতেই বলল
-‘আরে ফুপি আমি তো তোমারই ভাইজি তোমার মতন হয়েছি তাই।’
আজিজুর রহমান মেয়ের কথা শুনে বিষ্ময়ে হা হয়ে যায়। তার মেয়ে জীবনেও এভাবে কথা বলে নি তবে আগে এমন খিল খিল করে হাসতো।
হাবিবা খানম আর দাদীও অবাক হয়ে যায়।দাদী চোখমুখ কুঁচকে বলল
-‘ছ্যামড়ির মনে রঙ লাগছে নাকি? ছোট টারেও বিয়া দেওয়ার ব্যবস্থা কর আজিজ।’
-‘বিয়ে কি আর ওর হবে আম্মা যা রূপের শ্রী।ও তো পারে বিয়ে ভাঙতে।তা নীলু এবারও বিয়া ভাঙার ইচ্ছা আছে নাকি?’
নিজের ফুপুর কথায় কলিজা ধক করে উঠে নীলাম্বরীর।ফুপু কটুক্তি করেও তো ঠিক কথা বলেছে।সে তো বিয়ে ভাঙতেই জানে।এই যে এবারও বিয়ে ভাঙার প্ল্যান করেছে।কিন্তু সব তো তার প্রিয় মানুষদের ভালোর জন্য।
আজিজুর রহমান কিছু বলার আগেই তার আব্বা হামিদ সাহেব রুমে হাজির হন।এসেই নাতনির পাশে দাঁড়িয়ে বললেন
-‘আমার নাতনি সবার সেরা।ও কখনো এসব করতে পারেই না।ও আমার ছোট বউ।ও খারাপ কাজ করবেই না।তাই না বউ?’
নীলা কি বলবে ভেবে পাচ্ছে না।সে তো সত্যি বিয়ে ভাঙবে।কিন্তু সে খারাপের জন্য তো কিছু করবে না।আপাইয়ের ভালোর জন্যই সব করবে।
আজিজুর রহমান গলা পরিষ্কার করে বলল
-‘নীলামা তুই বরং তোর রুমে যা আমি পরে কথা বলবো।’
নীলু মাথা নাড়িয়ে বের হয়ে আসলো।যাক দাদার প্রশ্নের অন্তত উত্তর দেওয়া লাগে নি।
নীলা হাঁটছে আর ভাবছে কি করবে সে।নাকি বিয়েটা হতে দিবে?দোটানায় রইল নীলা।এর মাঝেই আনমনে কিসের উপর পা পড়তেই নীলা আৎকে উঠলো।
নীলার চিৎকারে মোটামুটি ড্রয়িং রুমে সবাই ছুটে আসলো।বর্ণ ফোনে কথা বলছিলো।তার প্রিয়তমার চিৎকারে ফিরে তাকালো।
নীলার পা মনে হচ্ছে ছিঁড়ে যাচ্ছে।কেউ একজন তাকে দ্রুত বসালো আর পা’টা নিজের হাঁটুর উপর রাখলো।নীলা চোখটা মেলে তাকালো।সামনে রাহাতকে বসে থাকতে দেখে অবাক হলো।কিন্তু ব্যাথায় কিছু বলার মতন শক্তি পাচ্ছে না।মোটা একটা কাঁচ অনেক খানি পায়ে ঢুকে গেছে।
বর্ণ কাছে এসে দেখে রাহাত নীলার পা থেকে এত বড় একটা কাঁচ বের করছে।বর্ণের প্রথমত নীলার ব্যাথা আবার সামনে রাহাতকে দেখে মাথা গরম হয়ে গেছে। তাড়াতাড়ি সে রাহাতের হাত থেকে নীলার পা’টা নিয়ে নিজের কোলের উপর রাখলো।সাথে সাথে তার সাদা শার্ট টা রক্তে মাখামাখি।
নীলার চাচী মানে রাহাতের মা দ্রুত ফাস্ট-এইড বক্স টা এনে দিলো বর্ণ রক্ত গুলো পরিষ্কার করে ব্যান্ডেজ করে দিলো।নীলা সবটা সময় চোখ বন্ধ করে ছিলো।বন্ধ চোখের ভিতর থেকে টপটপ করে জল পরছে।
কারো চোখের ইশারায় রাহাত সেখান থেকে সরে গেলো।সেই চোখে জেনো অগ্নি বর্ষিত হচ্ছে।সে চোখ জেনো বলছে রাহাতকে এত দরদ দেখাতে না।রাহাত চোখের ইশারা পেয়ে আর দাঁড়ায় নি।শুধু মাত্র এই চোখের অধিকারী ব্যাক্তির জন্য সে আজ এতটা বিশৃঙ্খলায় আবদ্দ হয়ে গেছে।
নীলার পা বেন্ডেজ করার পর নীলার মা কতক্ষণ চোখ রাঙিয়ে সড়ে গেলেন।তার ভাষ্যমতে নীলা সাবধানে চলা ফেরা করতে পারে না।
নীলার মা চলে যেতেই তিমার বর মাসুদ নীলার পাশে এসে বসে কৌতুক হাসি দিয়ে বলল
-‘তা বর্ণ মানে তৃণের ছোট বাবা ব্যাথা টা কমেছে একটু?’
মাসুদের কথায় বর্ণ ভ্রু কুঁচকে তাকায়। নীলাও বুঝতে না পেরে বলল
-‘ব্যাথা আমি পেলাম তুমি ওনাকে জিজ্ঞেস করছো?’
মাসুদ হেসে বলল
-‘আসলে ছোট গিন্নি তৃণের ছোটবাবার তখনকার মুখ ভঙ্গি দেখে মনে হয়েছিলো ব্যাথা তুমি না সে পেয়েছে।’
নীলা লজ্জায় মাথা নিচু করে ফেলল।বর্ণও বেশ অস্বস্তিতে পড়লো।তাড়াতাড়ি উঠে চলে গেলো।মাসুদ হা হা করে হেসে বলল
-‘তৃণের ছোটবাবা হিসেবে বর্ণকে আমার হেব্বি লেগেছে নীলা।তুমি কি বলো?’
নীলা ধ্যাত বলে মুখ ঘুরিয়ে নিলো।
________
বাহিরে সব রেডি। বিয়ের আয়োজন শেষ।এখন শুধু বিয়ে পড়ানো হবে।ছেলেমেয়ে বসে আছে।নীলা তার রুমে।কি করবে সে ভেবে পাচ্ছে না।একটু আগেও আগন্তুক তাকে আরেকটা চিরকুট দিয়েছে। যেখানে লিখা ছিলো
” আজ তুমি নতুন করে সবার ভাগ্য লিখবে।তুমি কেমন লিখতে চাও সেটার দায়িত্ব তোমার।”
চিরকুট টা দেখে মুচকি হাসলো নীলা।কারণ সে জেনে গেছে আগন্তুক কে।অবশ্য আগুন্তকে সে জানতে দেয় নি সে যে সবটা জেনে গেছে।
বাহির থেকে নীলার ডাক পরলো।বিয়ে শুরু হতে যাচ্ছে।নীলা তাড়াতাড়ি কল দিচ্ছে কাউকে।ফোনটা রিসিভ হতেই নীলা বলে উঠল
-‘কোথায় আছেন?এখানে বিয়ে যে শুরু হয়ে যাচ্ছে।’
মোবাইলের অপর পাশের ব্যাক্তি কিছু একটা বলল।নীলা দ্রুত ড্রয়িং রুমের দিকে গেলো।বিয়েটা না হয়ে যায় আবার।
#চলবে