টুকরো স্মৃতির অতলে পর্ব-১৩

0
654

#টুকরো_স্মৃতির_অতলে❤️
#পর্ব_১৩
লেখনীতেঃআহানিতা

আমার পরনে সেইদিনের সেই শাড়িটাই যেটা অর্কভাই দিয়েছিলেন।কালো রংয়ের, লাল টকটকে শাড়ি।চুলগুলো খোলা, চোখে হালকা কাজল আর খোলা চুলে বেলিফুলের মালা।হাতভর্তি কাঁচের চুড়ি দিয়েই চুড়ির টুনটাং আওয়াজে আনমনে হেসে উঠলাম আমি।বাসা থেকে বের হওয়ার মুহুর্তে আম্মু আব্বু দুইজনই হঠাৎ আমায় এই সাঁজে দেখেই মুচকি হাসলেন।আমি তাদের হাসির অর্থ না বুঝেই বেরিয়ে আসলাম।রাস্তা থেকে রিক্সা ডেকে নিয়েই উঠে বসলাম বেশ আয়েস করে।মাথার উপরে খা খা রোদ।দুপুর গড়িয়ে বিকেল হতে চলেছে মাত্র।আমি রিক্সা নিয়ে ঠিক অর্কভাইয়ের অফিসের সামনে এসেই পৌঁছালাম।উনাকে কল দিয়েও যখন উনি কল ধরলেন নাহ তখন বিরক্তে চোখ মুখ কুঁচকে নিয়েই উনার অফিসে ডুকতে লাগলেই দাড়োয়ান এসে সামনে দাঁড়াল।আমি হতাশ চাহনিতে তাকাতেই উনি প্রশ্ন ছুড়লেন,

‘ নতুন স্টাফ?’

আমি বিরক্ত নিয়েই বললাম,

‘ না, দেখা করতে এসেছি একজনের সাথে।ভেতরে ডুকতে দেবেন নাহ?’

‘ কার সাথে?’

‘ অর্কভাই।স্যরি স্যরি, আহনাফ মাহমুদ অর্ক।আছেন উনি?’

‘ হু আছেন। যান।’

আমি ভেতরে ডুকতেই রাতুল আঙ্কেলকে এদিকে এগিয়ে আসতে দেখেই মাথা নিচু করে নিলাম।উনি বোধ হয় এক্ষুনিই বেরিয়ে যাবেন।আমি গেইট দিয়ে ডোকার পথেই আমাকে দেখে দাঁড়ালেন উনি।গাড়িতে উঠতে নিয়ে আবার আমার দিকে এগিয়ে এলেন।হেসে বললেন,

‘ তুই মা?এই সাঁজে এখানে?’

আমি চোখ তুলে তাকালাম।কি বলব খুঁজে না পেয়েই বলে উঠলাম,

‘ আপ্ আপনার সাথে দেখা করতে এসেছি আঙ্কেল।’

রাতুল আঙ্কেল ভ্রু কুঁচকে তাকালেন আমার দিকে।কিছু বলতে যাবেন তার আগেই পেছন থেকে দাড়োয়ান ছেলেটা বলে উঠল,

‘ স্যার, আপনি উনাকে চেনেন নাকি?আহনাফ স্যারের সাথে দেখা করতে চাইছিলেন উনি।’

এবার যেন মাথা নিজে নিজেই নিচু হয়ে গেল আমার।রাতুল আঙ্কেল আমার দিকে তাকিয়েই মুচকি হাসলেন।মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন,

‘ আমার মেয়েটা কি পথে এসেছে?’

আমি হতভম্ব চাহনিতে তাকালাম।তারপর কাঁপা কন্ঠে বললাম,

‘ মা্ মানে?’

‘ সেটা তো তুই ভালো জানিস মা।চল অর্কের সাথে দেখা করিয়ে দি।’

আমি বাঁধ সেজে বললাম,

‘ না, না। আমি তো এমনিই এসেছিলাম আঙ্কেল।’

আঙ্কেল হাসলেন।আমাকে এগোতে বলেই আমার আগে আগে হাঁটলেন।লজ্জ্বায় মাথা নিচু রেখে আমিও হেঁটে চললাম তার পিছু পিছু।তারপর আমাকে একটা রুমে রেখেই উনি বের হলেন।রুমটার চারপাশের দেওয়াল কাঁচের।বাইরেটা খুব স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে।তার ওপাশেই আরেকটা কাঁচের দেওয়াল দেওয়া রুম।ওখানেই অর্কভাই।উনাকে পেছন থেকে দেখেই বেশ করে চিনলাম মুহুর্তেই। সামনের লম্বা টেবিলের চারপাশে ছয়জন লোক বসা।অর্কভাইয়ের ডানদিকের সামনের চেয়ারটাতেই বেশ সুন্দর একটা মেয়ে।গায়ের রং ধবধবে সাদা।বেশ সুন্দর চেহারা।আমি একনজর তাকিয়ে মেয়েটাকে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখলাম।তার অপরপাশে দুই তিন চেয়ার পরে আরো দুইজন সুন্দরী মেয়ে।আমি তাদের দিকে একনজর সরু চাহনিতে তাকালাম ।তারপই মুখ কালো করে অপরপাশে ফিরে চাইলাম।অর্কভাইকে মিটিংয়ে ব্যস্ত দেখেই উঠে দাঁড়ালাম আমি।উনি উল্টো দিকে ঘুরে কিছু বলছেন হাত নেড়ে।রুমগুলো সাউন্ডপ্রুভ হওয়ায় সেসব এই রুমে শোনা যাচ্ছে নাহ।আমি হালকা নিঃশ্বাস ফেলে রুম থেকে বেরিয়ে ওপাশে একবার ফিরে চাইতে আঙ্কেলকে ঐ রুমে ডুকতে দেখলাম।সঙ্গ সঙ্গেই বেরিয়ে আসলাম আমি।আর একমুহুর্তও দাঁড়ানোর ইচ্ছে নেই আমার।কেন নেই জানি নাহ।তবে হুট করেই মনের ভেতর অদ্ভুত খারাপ লাগছে।যার কারণটা হয়তো ঠিক অজানা নয় আমার আবার কারণটাকে কারণ হিসেবে তেমন প্রাধান্য ও দিতে চাইছি নাহ এমন।অর্কভাইয়ের সাথে রোজ কতশত সুন্দরী নারীর পরিচয়, কথা হয়। সেই জায়গায় হয়তো আমি তেমন কোন সৌন্দর্যের অধিকারীই নয়।তাদের সামনে অর্কভাইকে ভালোবাসি বলে লজ্জ্বায় পড়তে হবে নাহ তে?কথাটা ভেবেই হালকা শ্বাস ফেললাম।ওখান থেকে বেরিয়ে এসেই রিক্সা ডেকে উঠে বসলাম দ্রুত।মনের ভেতর এক আকাশ মন খারাপ। নিজেকে ক্ষনিকেই কেমন তুচ্ছ মনে হলো আমার।চোখজোড়া টলমল করে উঠতেই রিক্সাটা হঠাৎ থামল।আমি অবাক হয়ে সামনে তাকাতেই কালো রংয়ের কারটাকে পথ আগলে দাঁড়াতে দেখলাম।জানালার গ্লাসটা নামিয়েই অর্কভাই আমার দিকে চাইলেন।তারপরই নেমে পড়লেন।মৃদু হেসে রিক্সা ভাড়াটা দিয়েই আমার দিকে তাকিয়ে বললেন,

‘ নেমে পড়।’

আমি উনার দিকে একবার তাকিয়েই গম্ভীর কন্ঠে বলে উঠলাম,

‘ বাসায় যাব। ‘

উনি বাঁকা হাসলেন।দুই হাত বুকে গুঁজে দাঁড়িয়েই বললেন,

‘ হ্যাঁ যাবি তো।আমি কি বলেছি তুই বাসায় যাবি না?’

আমি চোখজোড়া সরু করে তাকালাম কেবল।উনি হেসে বললেন,

‘ নামবি না?’

আমি মাথা নেড়ে না জানালাম ।উনি তারপরও হাসলেন।সামনের রিক্সাচালক লোকটির দিকে তাকিয়েই প্রশ্ন ছুড়লেন,

‘ ভাই,তুমি কি যাবে ও কে নিয়ে? ‘

কথাটা শুনে লোকটা কি বুঝল জানা নেই তবে হাসলেন উনি।আমার দিকে তাকিয়েই হেসে বললেন,

‘ নাইমা পড়েন আপু।রিক্সা আর যাইব না।’

আমি ভ্রু কুঁচকে তাকিয়েই বললাম,

‘ কেন মামা?যাবে নাহ কেন?আমি তো আপনাকে রিক্সায় উঠার সময়ই ঠিকানা বলেছি।তবে?’

উনি হেসে অর্কভাইয়ের দিকে তাকালেন।তারপরই বললেন,

‘ ঝগড়া খুব ভালাই করছেন ভাই দেখতাছি।এহন আপনে সামলান।আমি তো রিক্সা নিয়া যাইতে বাধ্য।কারণ যাত্রীরে তার ঠিকানায় পৌঁছন দেওয়া তো আমার কাম।’

অর্কভাই কথাটা শুনেই হাসলেন।বুঝতে পারলাম রিক্সাচালকটা কোনভাবে হয়তো অর্কভাইয়ের পরিচিতই হবেন।বুঝলাম এই রিক্সায় বেশিক্ষন বসে থাকতে পারব নাহ আমি না তো এই রিক্সাটা সামনে এগোবে।তাই দ্রুত নেমে পড়লাম আমি।পা জোড়া নিয়ে গুঁটি গুঁটি পা ফেলে এক পাশে গিয়ে দাঁড়াতেই অর্কভাই বলে উঠল,

‘ ওদিকে দাঁড়িয়ে আছিস কেন?গাড়িতে উঠ।।’

আমি একনজর উনার দিকে তাকিয়েই গম্ভীর কন্ঠে বলে উঠলাম,

‘ একটা রিক্সাচালক আপনার পরিচিত হতে পারে, একটা রিক্সা আপনি আটকে দিয়েছেন হয়তো গাড়ি দিয়ে, কিংবা একটা রিক্সা থেকে নামিয়ে ফেলতে আপনি সফল হয়েছেন অর্কভাই তার মানে এই নয় যে আমাকে আপনার গাড়িতে উঠতে হবে অর্কভাই।এছাড়াও আমার কাছে আরো অনেক অপশন আছে অর্কভাই।আমি এখান থেকে হেঁটেও বাসায় ফিরতে পারব, দ্বিতীয়ত এমন না যে আমি এইখান থেকে দ্বিতীয় কোন রিক্সা পাব নাহ।’

উনি হাসলেন হয়তো আমার কথা শুনে।আমার কাছাকাছি এসে দাঁড়িয়ে আমার চুলে গেঁথে থাকা বেলিফুলের মালা থেকে একটা বেলিফুল ছিঁড়ে নিয়েই বললেন,

‘ বাহ!পার্ফেক্ট!’

আমি পেছন ফিরে চেয়েই উনার দিকে তাকালাম।উনার মুখের হাসিটার দিকে তাকাতেই উনি ফিসফিসিয়ে বলে উঠলেন,

‘তুই গাড়িতে না উঠলে ডিরেক্ট কোলে তুলেই বসাব গাড়িতে।রাজি?আমি কিন্তু এক পায়ে রাজি মিস মেহুলতা।’

আমি আৎকে তাকালাম।লম্বা শ্বাস ফেলে বিরক্তি নিয়ে বললাম,

‘ গাড়িতে উঠলে আপনার কি লাভ?’

‘বিশেষ কোন লাভ আছে হয়তো।তোকে বলে কি লাভ?’

আমি দৃঢ় কন্ঠে বললাম,

‘ বলুন।’

উনি মৃদু কন্ঠেই বললেন,

‘উঠ আগে।বলব।’

আমি সন্দেহী চোখে তাকিয়ে রইলাম কেবল।উনি আবারও বাঁকা হেসেই চোখ টিপে বললেন,

‘ কোলে তুলব?এমনিতেই তোকে দেখে আজ ফিট খেয়ে যাচ্ছি বারবার।তার উপর কোলে তোলার সুযোগ যদি দিস তো আমার জন্য সুবর্ণ সুযোগ।তুই কি চাস সেই সুযোগ পাই আমি?আমার কিন্তু কোন প্রবলেম নেই।রেডি?’

আমি বিরক্ত চাহনিতে তাকালাম।একনজর উনার দিকে তাকিয়েই পা ফেলে গাড়ির দিকে এগিয়ে গিয়েই উঠে বসলাম। তার পরপরই উনি এসে বসলেন পাশের সিটে। তারপর আমার দিকে ঝুকে সিট বেল্ট বেঁধে দিতে দিতেই কানের কাছে ফিসফিসিয়ে বলে উঠলেন,

‘ অবশেষে মানলি তো তুই আমায় ভালোবাসিস?যাক! এটা ভেবেই খুশি লাগছে।’

এতক্ষন অদ্ভুত খারাপ লাগা আর বিরক্ত লাগলেও এবার ভয় আর লজ্জ্বায় নেতিয়ে গেলাম আমি।নিজের ভেতরের কথাটা লুকানোর জন্যই অবাক হয়ে চাইলাম।তারপরই কাঁপা কন্ঠে বলে উঠলাম,

‘ ক্ ক্ কি?কি বলছেন আপনি?আমি কিছুই মানিনি। কিছুই নাহ।’

উনি আমার কথাটা সেভাবে নিলেনই নাহ।সিট বেল্টটা বেঁধে দিয়েই সরে বসলেন।গাড়ি চালাতে চালাতেই খালি গলায় গেয়ে উঠলেন উনি,

ভালোবাসি বলে দাও আমায়
বলে দাও হ্যাঁ সব কবুল
তুমি শুধু আমারই হবে
যদি করো মিষ্টি এই ভুল
হাতে হাত রাখতে পারো
সন্ধি আঙ্গুলে আঙ্গুল
ভালোবাসা বাড়াতে আরও
হৃদয় ভীষণ ব্যাকুল

উনি বাকিটা গাওয়ার আগেই আমি কাঁপা কন্ঠে বলে উঠলাম দ্রুত,

‘ গা্ গা্ গাড়ি থামান।আমি নামব।’

অর্কভাই আমার দিকে ফিরেই বাঁকা হাসলেন।তারপরই গাড়ি থামিয়ে আমার দিকে ফিরে চাইলেন।আমি এবার গুঁটিশুঁটি করে নিচের দিকে তাকিয়ে রইলাম।উনার গাওয়া গানে বুকের ভেতর হৃৎপিন্ড ধুকবুক করতে লাগল আমার।হাত পা কাঁপতে লাগল বেশ করে।কাঁপা কাঁপা চাহনিতে উনার দিকে তাকিয়েই আবারও নজর সরালাম আমি।শুকনো ঢোক গিলে নিজের আনন্দের বহিঃপ্রকাশ না ঘটিয়ে বলে উঠলাম,

‘ হা্ হাসছেন কেন আপনি?’

‘ এই যে তোর অস্থিরতা দেখে।ভালোবাসিস বলেই তো এত লজ্জ্বা, ভয়, অস্থিরতা।’

আমি এবার আর এক মুহুর্তও ওখানে বসে থাকার শক্তি পেলাম নাহ।না পেলাম উনার চোখে চোখ রেখে কথা বলার। গাড়ির দরজা খুলে উঠে চলে আসতেই পেছন থেকে ডান হাতটা চেপে ধরলেন অর্কভাই।আমি চোখ জোড়া বন্ধ করে হৃদয়ের ধুকবুক করা শব্দ কানে নিতেই উনি বলে উঠলেন,

‘ বলে যাবি না আজও? ‘

আমি চোখজোড়া আচমকা খুললাম।উনার দিকে একনজর তাকানোরও সাহস পেলাম না।শুকনো ঢোক গিলেই স্থির চাহনিতে সামনে তাকালাম।তারপরই কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বলে উঠলাম,

‘ ভ্ ভা্ ভালোবাসি আপনাকে।’

এবার হাত ছেড়ে দিলেন উনি।আমি লজ্জ্বায় নেতিয়ে পড়লাম নিজেকে নিয়ে। তার পরই দ্রুত পা বাড়ালাম বড় বড় পা ফেলে।শাড়ির আঁচলটা ঠিক করে দ্রুত পায়ে পা ফেলে চলতে লাগলাম আমি। মাথা ঘুরিয়ে আড়চোখে একবার উনার দিকে তাকাতেই উনাকে মুখে হাত দিয়ে বাঁকা হাসতে দেখলাম।দৃষ্টি আমার দিকেই স্থির উনার।চোখাচোখি হতেই ডান চোখ টিপে একইভাবে হেসে মুখ থেকে হাত সরিয়ে বসলেন উনি।আমি আরেক ধাপ লজ্জ্বায় লাল হয়ে সোজা হাঁটতে লাগলাম।নিঃশ্বাস যেন বন্ধ হওয়ার উপক্রম।ভালোবাসায় নিজের সম্মতি জানাতে নিজেকে এতটা অস্বস্তিতে পড়তে হয়?লজ্জ্বা পেতে হয়?উহ!কি এক দমবন্ধকর পরিস্থিতি আমার।

.

আমি চটফট বাসায় ডুকেই চেঞ্জ করে বেলকনিতে গিয়ে দাঁড়ালাম।বিকালে রায়হান আর আহিকে বোঝাতে হবে।ওদের সম্পর্কের মাঝে আহির স্বীকারোক্তিটা আনতেই হচ্ছে। নয়তো রায়হান বেচারা দিনের পর দিন কষ্টই পেতে থাকবে।কিছুক্ষন পর ওড়নাটা গলায় জড়িয়ে বাসা থেকে বের হয়েই আহিকে দেওয়া ঠিকানায় পৌঁছালাম।আহি আগেই এসে পৌঁছেছে।আহিকে এক পাশে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখেই আমি পা বাড়ালাম।ওর সামনে গিয়েই নিঃশ্বাস ছেড়ে বললাম,

‘ কেমন আছিস আহি?’

আহি আমার দিকে তাকিয়েই হালকা হাসল। তারপর বলল,

‘ ভালোই আপু, তুমি?’

‘ হু ভালো।তোর সাথে কিছু কথা ছিল আহি।’

আহি হালকা হেসেই বলল,

‘ বলো আপু।’

আমি ছোট্ট শ্বাস ফেললাম।তারপরই বললাম,

‘ তুই রায়হানকে ভালোবাসিস তা আমি জানি।বিষয়টা হলো ও এতবার তোকে ভালোবাসি বলল, এতবার তোর সামনে নিজেকে ছোট বানাচ্ছে, তুই তারপরও ওর মনের অবস্থাটা কি বুঝে উঠতে পারছিস না?নাকি বুঝতে চাইছিস না? বলছিস নাহ কেন ওকে তুইও ওকে ভালোবাসিস?’

আহি আমার দিকে তাকিয়েই বলল,

‘ বলব তো।আজই বলব।’

আমি অবাক হয়ে তাকালাম।আজ?আজই কেন বলবে?এতদিন বলল না কেন তবে?আমি চোখজোড়া সরু করেই বললাম,

‘ এতদিন বললি না কেন?’

‘ এতদিন তো তুমিও বলোনি ভাইয়াকে তুমি যে ভাইয়াকে ভালোবাসো।বলো নি কেন?’

আমি অবাক হয়ে তাকালাম আবারও।বিস্ময় নিয়ে বলে উঠলাম আমি,

‘ মানে?’

আহি শান্ত কন্ঠে বলল এবার,

‘ ভাইয়া প্রথম বার তোমায় নিজের থেকেই বিয়ে করেনি।কাজের অযুহাত দিয়ে বিয়ে করেনি তোমায়।তখন হয়তো ভাইয়া তোমায় ভালোবাসেনি আপু, কিন্তু তার ঠিক কয়েক মাস পরই অদ্ভুত পাগলামো শুরু করল ভাইয়া।আমরা সবাই তখন থেকে বুঝতে পারলাম ভাইয়া তোমায় ভালোবাসে প্রতিদিন নিত্যনতুন কাজ করে বসত।কখনো আম্মুকে বলেই বসত, তোমায় বিয়ে করবে।কিন্তু তার পরপরই তোমায় বিয়েতে ফিরিয়ে দেওয়ার অপরাধের কথা মনে করে আর সামনে আসত নাহ।নিজের অন্যায়ের জন্য কখনো সখনো নিজের চুল টেনে নিজেই রাগ মেটাত।তোমায় নিশ্চুপে আড়ালে দেখত কেবল।এর বছর দুই পর হঠাৎ ঐ অদ্ভুত পাগলামো ভাইয়ার।তার তোমাকে চাই চাই এমন পাগলামো।হন্তদন্ত হয়ে আব্বু আম্মুও বিয়েতে সম্মতি জানাল। সবই ঠিক ছিল কিন্তু তুমিই শেষে বিয়েতে না করে দিলে আপু।ভাইয়া সেইবার কিছু বলেনি।কিছুই নাহ।আমরা, মানে আব্বু, আম্মু, আর আমি তোমার আর ভাইয়ার সবই জানি আপু। তুমি যে ভাইয়াকে ভালোবাসতে তাও, ভাইয়া যে তোমায় ভালোবাসে তাও।সবটাই জানি।তাই এভাবে অবাক না হয়ে স্বাভাবিক হও।কেমন?’

আমি মাথা নাড়িয়ে বললাম,

‘ হুম’

‘ এবারও আমরা সবাই কেবল অপেক্ষার প্রহরই গুনতে লাগলাম, কিন্তু তুমি তো অনেক চাপা মেয়ে। স্বীকারই করতে চাইলে না নিজের মনের কথাটা।প্রতি মুহুর্তে অপেক্ষায় থাকতাম, কবে তুমি স্বীকার করবে আর কবে তোমাদের বিয়ে হচ্ছে।যাক ফাইনালি সব ঠিক হলো আপু।এবার তোমার প্রশ্নে আসি? মিঃ রায়হানকে উনার আগে আমিই ভালোবেসেছি।উনি যখন আমায় কেবল একজন ফ্রেন্ড হিসেবে দেখা শুরু করেছেন তার আগে থেকেই ভালোবাসতে শুরু করেছি।ভাইয়া কিভাবে যেন সবটা বুঝে গিয়েছিল।ভাইয়ার কাছ থেকেই শুনেছিলাম উনি আগে তোমায় পছন্দ করতেন।আর এতদিন স্বীকার না করার বিষয়টাতেও ভাইয়াই জড়িত।আমি তো সে কবেই বলে দিতাম। জাস্ট ভাইয়া বলেছিল যতদিন তুমি স্বীকার করছো ততদিন যাতে আমিও স্বীকার না করি।মোটামুটি আমরা দুই পক্ষ হয়ে গিয়েছি বলতে পারো।আমি আর ভাইয়া, তুমি আর মিস্টার রায়হান।’

আমি হেসে উঠলাম ওর কথা শুনে।খিলখিলিয়ে হেসেই বলে উঠলাম,

‘ ওয়েট। রায়হানকে কল দিচ্ছি।ও আশেপাশেই আছে।আমি যখন বলে দিয়েছি তখন তুই ও বলে দিবি।দেরি কেন? ‘

ও মৃদু হাসল।আমি তৎক্ষনাৎ কল দিলাম রায়হানকে।ওকে আসতে বলার কিছুটা সময় পরই ও এসে হাজির হলো।আমার সামনে এসে দাঁড়িয়েই চুল উশখুশ করে ফিসফিসিয়ে বলল,

‘ কি বলল ও?রাজি হয়েছে?’

তখনই পেছন থেকে আহি হেসে উঠল।রায়হানের ফিসফিসানো কন্ঠে কথাগুলো শুনেই হাসলাম আমিও।আহি তৎক্ষনাৎ খিলখিলিয়ে হেসে বলে উঠল,

‘ ভালোবাসি মিঃ রায়হান।অনেকখানি ভালোবাসি আপনাকে যতটা না আপনি আমায় বাসেন। আপনার অনেক আগে থেকেই আমি আপনাকে ভালোবাসি।ভালোবাসবেন আমায় মিঃ ছ্যাঁকাখোর?’

রায়হান চকচকে চোখে ফিরে চাইল।আমার দিকে একবার আর আহির দিকে একবার তাকিয়েই আমার হাতে চিমটি কাঁটল।আমি সঙ্গে সঙ্গেই অস্ফুট স্বরে বলে উঠলাম,

‘ আহ!’

রায়হান অবাক চাহনি নিয়েই বলে উঠল,

‘ এটা সত্যি?ও আমায় ভালোবাসে?’

#চলবে…..