তোর নামেই শুরু পর্ব-১০

0
420

#তোর_নামেই_শুরু
#তানজিনা_তিহা (লেখনীতে)
#পর্ব_১০

জ্ঞান ফিরলে চোখ খুলে নিজেকে হাসপাতালে আবিষ্কার করলাম। নিজেকে হাসপাতালে দেখে অনেক অবাক হলাম। আবার এখানে কিভাবে আসলাম? পাশে তাকিয়ে দেখলাম রিশান ভাইয়া! ভাইয়া আমার এক হাত আঁকড়ে ধরে বসে আছেন। তার অবস্থা একেবারে নাজেহাল। নিজের একদম বারোটা বাজিয়েছেন। আর ছোট মা আর চাচি একটু দূরে দাঁড়িয়ে আছেন। আমাকে চোখ খুলতে দেখে রিশান ভাইয়া ডাক্তারকে ডাকা শুরু করে দিলেন। ডাক্তারকে বারবার ডাকছেন তিনি। এরপর আমাকে বললেন,
মেঘপরি! কেমন লাগছে এখন?

আমি আস্তে করে বললাম, ভালো।

ছোট মা আর চাচি এগিয়ে এলেন। আমাকে শোয়ার থেকে বসিয়ে দিলেন। শরীরটা কেমন যেন লাগছে।

ডাক্তার চলে আসলো। আমাকে বললো,

এখন কেমন লাগছে মিস. মেঘা?

ভালো। কিন্তু শরীরটা কেমন যেন লাগছে।

ডাক্তার আমাকে চেকআপ করে বললেন,

ওহ্। ডোন্ট ওয়ারি আমি মেডিসিন দিয়ে দিচ্ছি আস্তে আস্তে ঠিক হয়ে যাবে। মি. রিশান আপনি একটু আমার সাথে বাহিরে আসুন।

রিশান ভাইয়া ডাক্তারের সাথে বাহিরে গেলেন। ফুফু এসে আমাকে জরিয়ে ধরেই কান্না শুরু করে দিলেন।

কি হয়েছে কাঁদছো কেন তুমি?

তুই ঠিক আছিস মা?

হ্যাঁ, ছোট মা এই দেখো আমি একদম ঠিক আছি। আমার কিছু হয় নি। ছোট মা থাকতে আমার কি কিছু হতে পারে?

অনেক কষ্ট হয়েছে তোর তাই না?

না ছোট মা। আমার একটুও কষ্ট হয় নি।

আমার চোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে পড়ছে।

চাচি বললেন, আমাদের সন্দেহ যদি সত্য হয় তাহলে সেই পিশাচ গুলোর রক্ষা নেই। মেঘা তুই দেখলে কাউকে চিনতে পারবি?

না চাচি। সবাই কালো পোশাক পড়ে আসতো।

ওদেরকে পেলে রিশান তো জেন্ত পুঁতে ফেলবে। একটুর জন্য পালিয়ে গেছে শয়তানের দলগুলো। আজ যদি রিশানের হাতে পড়তো তাহলে রক্ষা ছিলো না। (চাচি)

ছেলেটা পাগল হয়ে গেছে রে। জানিস তোকে ছাড়া আমার ছেলেটা এক মুহুর্তও ভালো নেই। তোকে না পেয়ে ও কেমন যেন হয়ে গেছে। খাওয়া নেই পড়া নেই শুধু তোকেই খুঁজেছে। দুদিনে কি হাল করেছে নিজের দেখেছিস। কখন ওর মেঘপরিকে পাবে তার জন্য পাগল হয়ে গেছে ও। পুরো বাড়ি মাথায় তুলে ফেলেছে। সব তন্ন তন্ন করে খুঁজেছে তোকে। ছেলেটা আমার একদম একটা পাগল। (ফুফু)

ফুফুর কথা শুনে আমি অবাক। রিশান ভাইয়া এমন করেছে?

মি. রিশান শুনুন।

জ্বি, বলুন ডাক্তার।

মেঘার শরীরে ড্রাগ দেওয়া হয়েছে। তাও আবার হাই লেভেলের।

কি বলছেন ডাক্তার?

ঘাবড়ানোর কিছু নেই। আমরা ট্রিটমেন্ট করছি ইনশাআল্লাহ সুস্থ হয়ে যাবে। ওর হেলথ কন্ডিশন দেখে ধারণা করছি দুই ডোজ দেওয়া হয়েছে। এই ড্রাগটায় আস্তে আস্তে রোগীর পাগল হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।

ডাক্তার মেঘার কিছু হবে না তো?

ভয়ের কারণ নেই। ঠিক মতো ট্রিটমেন্ট নিলে সুস্থ হয়ে যাবে। বেশি বেশি খেয়াল রাখতে হবে।

আল্লাহর কাছে হাজারো শুকরিয়া আমরা আমাদের মেয়েকে ফিরে পেয়েছি। (চাচি)

হুম। আমার মামণিটা। আর কিছু হবে না তোর। (ফুফু)

আমি ছোট মায়ের কোলে মাথা রাখলাম। আবিদ ভাইয়া, লিসা ফুফা আর চাচা চলে এলেন।

তুমি ঠিক আছো প্রিন্সেস?

হুম আঙ্কেল আমি ঠিক আছি।

আর টেনশন করো না প্রিন্সেস তোমার কিছু হবে না।

হুম।

লিসা এসে আমার কাছে বসলো। আমাকে জরিয়ে ধরে বললো, মেঘা আপু ।

আমি ঠিক আছি তো রে।

আবিদ ভাইয়া বললেন, আঙ্কেল রিশান কোথায়?

চাচি বললেন, ডাক্তারের সাথে কথা বলছে।

আবিদ ভাইয়া বললেন, আঙ্কেল এখন থানায় যাবেন?

হুম। আমি আর তোমার বাবা যাবো।

আমিই যাচ্ছি তোমাদের কারো যাওয়া লাগবে না।
বলতে বলতে রিশান ভাইয়া চলে এলেন। ভাইয়ার মুখটা একদম ফ্যাকাশে হয়ে গেছে। কেমন যেন শুকিয়ে গেছেন উনি। চোখদুটো লাল হয়ে আছে। ভাইয়া আমার দিকে এক দৃষ্টে চেয়ে আছেন। আমিও তার পানে চেয়ে। নিজের কি হাল করেছেন তিনি। এমন কেউ করে?

ছোট মা বললেন, তোরা কথা বল আমরা বাহিরে যাচ্ছি।

তার কথা শুনে হা হয়ে গেলাম। আবার বেশ লজ্জা লাগছে। আবিদ ভাইয়া বললেন, হুম তাই।

লিসা আমার কানে কানে বললো, এবার তোমার পাগলকে সামাল দাও। নাহলে পাগলা গারদে পাঠাতে হবে। বেচারা,,

সবাই মিটিমিটি হাসছে আর প্রস্থান করছে। সবাই চলে গেলে রিশান ভাইয়া এসে আমার পাশে বসলেন।

এখন কেমন লাগছে?

ভালো কিন্তু মাথাটা ঝিমঝিম করছে।

দেখি।

ভাইয়া আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছেন। তার কোমল হাতের স্পর্শে মনে এক প্রকার শিহরণ জাগছে। এ কেমন অনুভূতি! তিনি পাশে থাকলে এতো ভালো লাগে কেন? তাকে কি ভালোবেসে ফেলেছি?

ভাইয়া ওরা কারা ছিলো?

জানি না।

আমাকে কেন কিডনাপ করেছে? আমার সাথে কি শত্রুতা তাদের?

ভাইয়া এবার আমার মাথা থেকে হাত সরিয়ে নিলেন। আমার দুগালে হাত রেখে কপালে চুমু খেলেন। তার আকস্মিক কান্ডে আমি হতবাক। এরপর বললেন,

জানি না তারা কি চায়। তবে এতটুকু জানি আমার মেঘপরিকে আমার কাছ থেকে নেওয়া অসম্ভব। আমি বেঁচে থাকতে আমার মেঘপরির কিছু হবে না আর আমি হতেও দিবো না। সে যেই হোক আমার হাতে পড়বেই। আমার কলিজায় হাত দিয়েছে এতো সহজে কি তাদের ছেড়ে দেই আমি? এখন চুপচাপ বিশ্রাম নে। কোন চিন্তা করবি না। আর একটা কথাও না।

ভাইয়ার কথা শুনে আমি হা হয়ে গেলাম। ভাইয়া কি আমাকে সত্যিই ভালোবাসেন? আমি তো তাকে ভালোবেসে ফেলেছি। রিশান ভাইয়াকে ছাড়া আমার থাকা অসম্ভব এটা খুব ভালো করেই বুঝতে পারছি।
আমরা দুজনেই নিরব কেউ কোন কথা বলছি না। হঠাৎ সে আমার হাতটা ধরলো। এরপর বললো,

মেঘপরি!

আমি বললাম, হুম।

আমি আমার দায়িত্ব পালন করতে পারলাম না।

হঠাৎ ভাইয়ার এই কথা আমার বোধগম্য হলো না। কি বলতে চাচ্ছে উনি?

মানে ভাইয়া কি বলছো?

আমি তোকে রক্ষা করতে পারলাম না। আমি তো মামণিকে (আমার মা) কথা দিয়েছিলাম তোর উপর কারো আঁচড়ও পড়তে দিবো না। কিন্তু আমি আমার কথা রাখতে পারলাম না। আমার জন্য তোর সাথে এমন হলো। আমি যদি আরো কেয়ারফুল হতাম তাহলে কখনোই তোর কিছু হতো না রে।

ভাইয়া কি বলছে এগুলো? দায়িত্ব? ভাইয়া তার দায়িত্ববোধ থেকে করছে এগুলো? তবে কি আমার ধারণা মিথ্যা ভাইয়া আমাকে ভালোবাসে না? আমি তার দায়িত্ববোধ!

___________________

হাসপাতাল থেকে এসেছি এক সপ্তাহ হয়ে গেছে। এখন আমি পুরোপুরি সুস্থ। রিশান ভাইয়া পুরোটা সময় আমার সাথে ছিলো। এক মূহুর্তের জন্যও চোখের আড়াল করেন নি আমাকে। প্রতিটি ক্ষণেই আমার সাথে ছিলেন। বাড়িতে সিকিউরিটি বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। আমার একা কোথাও যাওয়া তো একেবারেই নিষেধ। ভাইয়া স্পষ্ট বলে দিয়েছেন বাড়ি থেকে বের হলে পা ভেঙে দিবেন। ভাইয়ার প্রতিটি কাজই আমাকে অবাক করে। রিশান ভাইয়া আমার প্রতি অনেক বেশি কেয়ারফুল হয়ে গেছেন। সামনে ভাইয়ার ফাইনাল পরীক্ষা কিন্তু তাতে তার কোন মনোযোগ নেই। আমাকে নিয়েই ব্যস্ত তিনি। আমার প্রতি এতো ব্যস্ত কেন উনি? এটা ভালোবাসা নাকি তার সেই দায়িত্ববোধ? না আর ভালো লাগছে না।আজ ভাইয়াকে উত্তর দিতেই হবে। তিনি কি আমাকে ভালোবাসেন?

রিশান ভাইয়া আমি তোমাকে ভালোবাসি। সত্যি আমি তোমাকে ভালোবাসি। অনেক বেশি ভালোবাসি। তোমাকে ছাড়া থাকা আমার পক্ষে অসম্ভব। আমি তোমাকে ভালোবাসি রিশান ভাইয়া। তুমি আমায় ভালবাসো? ধুর হচ্ছে না কখন থেকে ট্রাই করছি বাট একটা বারও হচ্ছে না। ভাইয়াকে আজ বলে দিবোই।

ভাইয়ার ঘরের সামনে ঘুরঘুর করছি। ভাইয়া কি ঘরে আছেন? আস্তে আস্তে সামনে এগিয়ে ভিতরে উঁকি দিয়ে দেখছি। কিন্তু তাকে দেখতে পাচ্ছি না। হঠাৎ নিচের কোমরে কারো স্পর্শ টের পেয়ে পিছন ফিরে তাকালাম। রিশান ভাইয়া!

কি দেখছিলি? কাকে খুঁজছিস?

আমি যেন কথা বলতে পারছি না। ভাইয়া আমার একদম নিকটে আমার কোমরে হাত রেখে দাঁড়িয়ে আছেন। আমার উত্তর না পেয়ে তিনি বললেন, কি রে বলছিস না?
আমি তো জমে বরফ। ভাইয়া মিটিমিটি হাসছে। আমার কানের কাছে ফিসফিসিয়ে বললেন,

কি রে কিছু তো বল। কি বলতে চাইছিলি যেন? আবার বল তো।

তবে কি ভাইয়া আমার কথাগুলো শুনছিলেন। আমি বিস্ফোরিত নয়নে চেয়ে আছি তার পানে। সে তা দেখে হাসছে।

আমি কিছু বলতে নিবো এর আগেই শুনতে পেলাম, রিশান!! হোয়াট আর ইউ ডুয়িং?

চলবে…….