সন্ধ্যে নামার আগে পর্ব-২১+২২

0
305

#সন্ধ্যে_নামার_আগে
#লেখিকা_সুমাইয়া_জাহান
#পর্ব_২১

(৪৬)

রাত্রি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে শীতের তীব্রতাও বাড়তে শুরু করেছে চারদিকে। শুভ্রনগর নামক মফস্বল শহরটির বুকে নেমে এসেছে নিকষকালো আঁধার। রোজ সন্ধ্যের পর নিয়ম করে এই ছোট্ট শহরটিতে ইলেক্ট্রিসিটি সংযোগ চলে যায় আর পুরো শহর তলিয়ে যায় রাতের ঘন কালো আঁধারিতে। কুয়াশায় ঘেরা ছোট্ট শহরের দোতলা ঘরের ছোট্ট একটা বারান্দায় চাদর গায়ে জড়িয়ে দাঁড়িয়ে আছে রুমাইসা। আশেপাশে কয়েকটা দোতলা কি তিনতলা বাড়ির দালান ছাড়া তেমন কিছুই তার নজরে এলো না। রুমাইসা গভীর দৃষ্টিতে প্রতিটা বাড়ি খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখছে। বাড়িগুলোর কোনো কোনো ঘরে হারিকেনের আলো জ্বলছে দেখা গেলো যা একমুহূর্তে জন্য জোনাকিপোকা বলে মনে হলো রুমাইসার। যেনো আস্তো একটা জোনাকির শহর তার সমুখে এসে ধরা দিয়েছে এমনি এক অনুভূতি রুমাইসার শরীর মন ছুঁইয়ে দিতে লাগলো। জীবনে প্রথম নিজেকে এতটা স্বাধীন আর মুক্ত বলে মনে হলো তার। নিলুফার বেগমের আক্রোশ থেকে এই প্রথম সে অনেকটা দূরে সরে এসেছে। রুমাইসা জানে না এই মুহূর্তে তার বাড়িতে কি চলছে তবে এতটুকু জানে যে নিলুফার বেগম তাকে কম কথা শুনাচ্ছে না,হয় তো তার মৃত মায়ের নাম ধরেও গালাগাল করছে।

রাতের আধার ধীরেধীরে বাড়তে শুরু করেছে সে সাথে সময়ও পাল্লা দিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে। রুমাইসা বেশ খানিকটা সময় বারান্দায় কাটিয়ে পরে ঘরে এসে টেবিলের একপাশে রাখা হারিকেনের আলো মৃদু বাড়িয়ে বিছানার একপাশ দখল করে বসলো।
স্মরণ সেই দুপুরে কোথাও একটা যাবার কথা বলে বেড়িয়েছিলো রমিজের সাথে তারপর থেকে প্রায় পাঁচ ঘন্টা সময় কেঁটে গেছে অথচ এখনো সে ফিরে আসে নি। রুমাইসার চিন্তিত মন থেকে থেকে অস্থির হয়ে উঠছে। অজানা ভয় বার বার তার অন্তঃকরণে কড়া নাড়ছে। মনের ভেতর কু গাইছে না জানি কোন অজানা বিপদে পড়েছে স্মরণ। যত সময় যেতে লাগলো ততোই রুমাইসার উৎকন্ঠার পরিমাণ বাড়তে শুরু করলো। বুকের ভেতর ডিব ডিব শব্দ করতে লাগলো।

“উনি কোথায় চলে গেলেন। এতটা সময় পেরিয়ে গেলো এখনো কেনো আসছেন না? আচ্ছা কোনো বিপদে পড়েন নি তো তিনি।”
ভয়ে বিছানা ছেড়ে উঠে দাঁড়াল রুমাইসা। দরজা খুলে ঘর থেকে বেড়িয়ে দোতলার সিঁড়িতে এসে দাঁড়িয়ে নিচে তাকিয়ে দেখলো স্মরণ আসছে কিনা কিন্তু না অন্ধকার আর কুয়াশার কারনে নিচে তেমন কিছুই দেখা গেলো না। স্মরণের পথ চেয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে পায়ের পাতা জোড়ায় মৃদু যন্ত্রণা অনুভব করতে লাগলো সে।

রাতের দ্বিপ্রহর কেঁটে গেছে অথচ এখনো স্মরণের দেখা নেই। রুমাইসা কখন ঘরে এসে ঘুমিয়ে পড়েছিলো খেয়াল নেই। ঘুম ভেঙে আধো আধো চোখ মেলে যখন চারপাশে অন্ধকার দেখতে পেলো তখনি ধড়পড় করে শোয়া থেকে উঠে বসলো। পুরো ঘর জুড়ে পিনপতন অন্ধকার আর নীরবতা ছেয়ে আছে। কেরোসিন পুড়িয়ে হারিকেন যে কখন নিভে গেছে খেয়াল নেই তার। স্মরণের অনুপস্থিতি রুমাইসার অন্তঃকরনে উৎকন্ঠার পরিমাণ বাড়িয়ে তুলল। এতটা সময় পেড়িয়ে গেছে আর মাত্র ঘন্টা কয়েক পর রাতের শেষ ট্রেন শহর ছাড়বে অথচ স্মরণ? কোথায় গেলো সে? শেষ ট্রেনে করেই তো তাদের শুভ্রনগর ছেড়ে যাবার কথা কিন্তু এখনো কেনো স্মরণ ফিরে এলো না। তাকে একা ফেলে রেখে সে কোথায় চলে গেলো ভাবতে ভাবতে রুমাইসার চোখ অশ্রুসিক্ত হয়ে উঠলো। হৃদপিন্ডের কম্পন যেনো আর থামতে চায় না রুমাইসার। ভয়ে হাত পা শীতল হতে আরো শীতল হয়ে উঠছে। বুকের ভেতর ধুকধুক করছে এই বুঝি কেউ কোনো খারাপ খবর নিয়ে আসে। রুমাইসা আর ভাবার শক্তি পেলো না অজানা শঙ্কা তার হাত পা অসার হয়ে উঠেছে। এমন মনে হচ্ছে যেনো এখনি সে জ্ঞান হারিয়ে অচেতন হয়ে পড়বে।

(৪৭)

রমিজ আর স্মরণ নিশ্চুপে খেতের আইল হাঁটছে। কুয়াশায় ঢাকা ধান খেতের মাঝখানে হাঁটতে বেশ লাগছে স্মরণের। হেমন্তের কোনো এক মধ্যরাতে এই খেতের আইল ধরে প্রথমবারের মতো অলকানন্দপুর গ্রামে পা রেখেছিলো সে। বাতাসে তখন বিন্ন ধানের তীব্র গন্ধ ছড়াছড়ি করছিলো। প্রচন্ড বিরক্তিতে সে নাক চেপে ধরে দ্রুত হেঁটে খেতের আইল শেষ করে পথে উঠেছিলো। আকাশে তখন একফালি চাঁদ আলো বিকিয়ে দিচ্ছিলো ধরনীর বুকে। চাঁদের আলোকে সঙ্গী করে রমিজের সাথে তিন কোশ পথ পাড়ি দিয়ে নিশ্চিন্দপুর মেডিকেল ক্যাম্পে পৌঁছেছিলো স্মরণ। কে জানতো তখন এই গ্রামটা তাকে এতটা আপন করে নিবে, এই গ্রামেরই কোনো এক সহজ সরল ষোড়শীর ভরসার কাঁধ হয়ে উঠবে।

স্মরণ জানে না কেনো সে রুমাইসার জীবনের সাথে নিজেকে এতটা জড়িয়ে নিয়েছে। এমনটা তো হওয়ার কথা ছিলো না তার। কেনোই বা সে প্রথম বারের মতো অদেখা অচেনা কোনো ষোড়শীর একটুকরো চিঠির মাঝে নিজেকে হারিয়ে ফেলেছিলো। কি বা ছিলো সেই চিঠির ভাঁজে, বাবার অসুস্থতার কথা ছাড়া তো কিছুই চোখে পড়ে নি তার তবুও কেনো ওই টানা হাতের লেখা তাকে অনুভূতি শূন্য করে দিয়েছিলো, মাতাল করে তুলেছিলো চিঠির ভাঁজে লেগে থাকা শিউলি ফুলের অবশিষ্ট শেষ গন্ধটুকু।

“ডাক্তার সাহাব এখানের সব কাম তো শেষ এবার কি করবেন।”

রমিজের কথা শ্রাবণ হতে ভাবনার জগত থেকে বেড়িয়ে এলো স্মরণ, দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে বলল,

“গন্তব্য যে দিকে নিয়ে যায় সে দিকেই যাবো রমিজ সাহেব।”

“রুমাইসা একলা রইছে ওইহানে, না জানি কতটা ডরাইতাছে মাইয়াডা।”

” জানি ভয় পাচ্ছেন কিন্তু কি করার আছে বলুন, এদিকে সব ঠিক না করলে ছোট্ট মেয়েটার সর্বনাশ হয়ে যেতো।”

“তা ঠিক কইছেন।”

“আচ্ছা রমিজ সাহেব একটা কথা বলুন তো আমায়।”

” কি কথা ডাক্তার সাহাব।”

“মিস রুমাইসা কেনো এতটা ভরসা করছে আমাকে। হতেও তো পারে আমি মি.শেহ্ওয়ারের চেয়ে অধিক খারাপ একজন।”

“মাইয়া মানুষ যারে তারে ভরসা করে না ডাক্তার সাহাব। আর আপনে কেমন মানুষ হেইডা আমরা হজ্ঞলেই জানি।”

“আমি নিজেকে আড়াল করে রেখেছি তার কাছে, কাঠিন্যতা ধারণ করে আঘাত করে ফিরিয়ে দিয়েছি কতবার তবুও কেনো তিনি বারবার ছুটে এলেন আমার কাছে? কিসের টানে বলতে পারেন।”

“মাইয়া মানষের মন বুঝা দায়। তারা একবার যারে মন থেইকা বিশ্বাস করে তার কাছেই বার বার ছুইটা যায়।”

“আপনি ভালোবাসা বিশ্বাস করেন?”

এবার রমিজ একটু লাজুক হাসি দিলো। স্মরণ এক নজর তাকালো রমিজের দিকে লোকটা সত্যিই সরল আর বোকা প্রকৃতির।

“কি হলো?”

“ভালো না বাসলে কি আর বিবিজান আমার ঘরে পইরা থাকে? এত অভাব অনটন সহ্য করে ক্যান আমার ভিটা কামড়াইয়া পইরা আছে।”

স্মরণ এবার হেসে ফেললো। সত্যিই রমিজ একজন ভালো ও সরল মনের অধিকারী মানুষ। এই এলাকায় তার মতো ভরসা যোগ্য মানুষ হয় তো দ্বিতীয় কেউ নেই। রমিজ না থাকলে সে হয় তো এত কিছু করতে পারতো না। লোকটাকে সে মন থেকে সম্মান করে।

হাঁটতে হাঁটতে বড় রাস্তায় এসে উঠলো দুজন। এবার তাদের বিদায় নেবার পালা।

“রমিজ সাহেব আপনার যখন যে কোনো প্রয়োজন পড়লে আমাকে জানাতে সংকোচ করবেন না, আমি নিজের সবটা দিয়ে চেষ্টা করবো আপনাকে সাহায্য করার। এই গ্রামে আপনিই একমাত্র আপন ব্যাক্তি যে সব সময় বন্ধুর মতো ভাইয়ের মতো আমার পাশে ছিলেন।”

“কি যে কন না ডাক্তার সাহাব। বড়ই লজ্জা দিলেন। আপনার মতো একজন উঁচু মাপের ডাক্তার মানুষ যে আমার মত একজন মাইনষেরে আপন কইরা নিবো হেইডা তো স্বপ্নেও ভাবতে পারি নাই।”

স্মরণ তার অধরযুগল কিঞ্চিত প্রসারিত করে রমিজকে জড়িয়ে ধরল। তারপর তার থেকে বিদায় নিয়ে গন্তব্যের পথে যাত্রা শুরু করলো।

(৪৮)

অন্ধকারে বিছানার একপাশে গুটিসুটি মেরে বসে আছে রুমাইসা। কেঁদে কেঁদে তার চোখ দুটো পদ্মরাগ ফুলের মতোন রঙ ধারণ করেছে। নাকের ডগা রক্তবিন্দুর মত লাল হয়ে উঠেছে সে কখন। এই শীতেও প্রচন্ড ঘামছে সে। স্মরণের অনুপস্থিতি তাকে আর উৎকন্ঠিত করছে না। এবার সে ধরেই নিয়েছে স্মরণ নিশ্চিত কোনো বিপদে পড়েছে, তা নাহলে এতটা সময় তাকে একা রেখে কোথাও গিয়ে বসে থাকার মতো মানুষ স্মরণ নয়। মনে মনে নিজেকে দোষ দিতে লাগলো রুমাইসা। তার জন্যই হয় তো স্মরণ বড় কোনো বিপদে পড়েছে।

“মিস রুমাইসা জেগে আছেন?”
হঠাৎ দরজায় কড়া নাড়ার সাথে সাথে স্মরণের কন্ঠস্বর কানে ভেসে আসতে চমকে উঠলো রুমাইসা। এক মুহূর্তের জন্য নিজেকে স্বপ্নে আবিষ্কার করার মতো অনুভূতি খেলে গেলো মনে।

“মিস রুমাইসা?”

রুমাইসা এবার আর দেরি করলো না অন্ধকার হাতরে দ্রুত দরজার দিকে ছুটে গেলো। স্মরণ দ্বিতীয়বার কড়া নাড়ার সাথে সাথে দরজা খুলে একপাশে নিশ্চুপে এসে দাঁড়াল সে। নিজের ভেতরের উৎকন্ঠা দমিয়ে রেখে নিজেকে শান্ত রাখার বৃথা চেষ্টা করলো। স্মরণ ঘরে প্রবেশ করেই চার দিকে তাকালো। পুরো ঘর অন্ধকারে ছেয়ে আছে। স্মরণ বুঝতে পারলো রুমাইসা ইচ্ছা করেই ঘর অন্ধকার করে রেখেছে। গভীর রাতে মফস্বলটিতে ইলেক্ট্রিসিটি বিভ্রাট খুব একটা বেশি দেখা যায় না। স্মরণ কয়েক পা এগিয়ে এসে হারিকেন জ্বালিয়ে নিলো। রুমাইসা তখনো দরজার পাশে নতমস্তকে দাঁড়িয়ে রইলো। স্মরণকে ইলেক্ট্রিসিটি থাকার সত্ত্বেও হারিকেন জ্বালাতে দেখে কিছুটা অবাক হয়ে তাঁকালো।

“খেয়েছেন রাতে?”
স্মরণ চেয়ার টেনে বসতে বসতে জিজ্ঞাস করলো।
রুমাইসা কিছু না বলে চুপচাপ জায়গায় দাঁড়িয়ে রইলো। রুমাইসার জবাব না পেয়ে স্মরণ দ্বিতীয়বার একি কথা জিজ্ঞাস করতে গিয়ে লক্ষ্য করলো টেবিলের একপাশে খাবারের প্লেট অবহেলায় পড়ে আছে।

“খান নি কেনো?”

রুমাইসা এবারো কোনো উত্তর করলো না শুধু ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠলো। স্মরণ চেয়ার ছেড়ে উঠে দরজার পাশে রুমাইসার সামনে গিয়ে বাহুতে হাত গুঁজে দাঁড়াল। নির্লিপ্ত চাহনিতে রুমাইসার দিকে খানিকটা সময় তাকিয়ে থেকে বলল,

“ঠিক এই কারণে ইলেক্ট্রিসিটি থাকার সত্ত্বেও ঘরে লাইট না জ্বালিয়ে হারিকেন জ্বালিয়েছি। অনেক রাত হয়েছে চলুন খাবেন।”

“কোথায় ছিলেন আপনি? রমিজ ভাই আপনাকে কোথায় নিয়ে গিয়েছিলো।”

“সেটা আপনার না জানলেও চলবে। এখন আসুন খেয়ে নিন।”

“আমি খাবো না আপনার ইচ্ছে হলে আপনি খেয়ে নিন।” বলে রুমাইসা সরে বিছানায় গিয়ে কম্বল মুড়িয়ে শুয়ে পড়লো। স্মরণ একিভাবে জায়গায় দাঁড়িয়ে দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো। রুমাইসার হঠাৎ রেগে যাওয়া দেখে প্রথম দিনের কথা মনে পড়ে গেলো, যেদিন রুমাইসা তার ধারালো চোখের চাহনিতে তাকে প্রথমবারের মতো খুন করেছিলো।

“মিস রুমাইসা আপনাকে বলছি, উঠে খেয়ে নিন অযথা রাগ দেখানোর মতো কিছু করি নি আমি। আর আপনাকে সব কথা বলার মতো ছেলেও আমি নই, তাই এতটা আশা করবেন না যে আমি কোথাও গেলে সেটা আপনাকে জানিয়ে যাবো। তবে হ্যাঁ এটা আমার অন্যায় হয়েছে যে এখানে আপনাকে একা রেখে এতটা সময় কাজে আঁটকে ছিলাম।”

রুমাইসা এবার শোয়া থেকে উঠে বসলো। সরাসরি স্মরণের দিকে তাকিয়ে বলল,

“আপনি নিষ্ঠুর জানতাম তবে এতখানি নিষ্ঠুর হবেন তা জানা ছিলো না।”
স্মরণ তার জবাবে আর কিছু বলল না। শুধু একটা চিঠির খাম বের করে রুমাইসার হাতে ধরিয়ে দিয়ে ঘর থেকে বেড়িয়ে গেলো।

চিঠির ভাঁজ খুলে রুমাইসা তার বাবার হাতে লিখা দেখতে পেলো। বাবার চিঠি হাতে পেয়ে রুমাইসার ভেতরটা হুহু করে উঠলো। চোখের কোণে ভিজে উঠলো।

মা রুমাইসা,
আমি জানি তুই কোথায় আছিস যদিও আমি সিউর নয় তবে আন্দাজ করতে পারছি তুই ডাক্তার স্মরণের কাছেই আছিস। এইদিকের অবস্থা খুব একটা ভালো নয় জানি না কি হতে চলেছে। তবে ভাবিস না যে আমি কষ্ট পেয়েছি তুই চলে যাওয়ায় বরং খুশিই হয়েছি এই ভাবে যে এই নরক থেকে বেড়িয়ে নতুন পৃথিবীর সন্ধানে পা বাড়িয়েছিস। আমার দোয়া সব সময় তোর সাথেই থাকবে। তুই আমার জন্য চিন্তা করিস না, মন দিয়ে পড়াশুনা করিস।
ইতি,
তোর বাবা।

“ভোরের ট্রেনে আমরা শহরের উদ্দেশ্যে যাত্রা করছি মিস রুমাইসা। আপনি আপনার জিনিসপত্র ঘুছিয়ে নিন।”

চিঠি ভাঁজ করে বালিশের তলায় রেখে রুমাইসা বিছানা ছেড়ে স্মরণের সামনে এসে দাঁড়াল। তারপর মাথা নিচু করে বলল,

“আপনি অলকানন্দপুর গিয়েছিলেন?”

“তা তো বুঝতেই পারলেন এখন।”

“তখন কেনো বলেন নি?”

“প্রয়োজন মনে করি নি।”

“রিমা?”

“বিয়েটা আঁটকানো গেছে।”

“মেনে নিয়েছে মা?”

“উনি মেনে নেয়ার পাত্রী বলে মনে হয় আপনার।”

“শেহ্ওয়ার ভাই কিছু বললেন না?”

“তার মতো কাপুরুষের কিছু বলা অনর্থক সেটার প্রমাণ পেয়েছিলেন বলেই আজ আপনি এখানে।”

“আপনি এমন কঠিন কঠিন কথা বলেন কেনো?”

স্মরণ কিঞ্চিৎ অধরযুগল প্রসারিত করলো। তারপর বলল,

“বাবার চিঠি পড়া শেষ হয়েছে।”

“হু।”

“তবে তৈরী হয়ে নিন, আধঘণ্টা পর বের হচ্ছি।”

“কোথায় যাচ্ছি আমরা?”

“গেলেই দেখতে পাবেন।”

বলেই নিজের ব্যাগ নিয়ে ঘর থেকে বেড়িয়ে গেলো স্মরণ। রুমাইসা স্মরণের চলে যাবার দিকে ক্ষণকাল তাকিয়ে থেকে দীর্ঘশ্বাস ফেললো। এই মানুষটাকে সে বুঝতে পারে না। কখনো তাকে সহজ সরল বলে মনে হয় তো কখনো পাষাণ হৃদয়ের অধিকারী একজন। প্রথম দেখায় সে যেমনটা ভেবেছিলো তার ঠিক বিপরীতে অবস্থান করছে স্মরণ। সহজ সরল মনের মানুষটা যে ব্যাক্তি জীবনে কতটা গম্ভীর আর কঠোর প্রকৃতির তা প্রথমে বুঝতে না পারলেও এখন ঠিক বুঝতে পারছে রুমাইসা।

চলবে,,,।

#সন্ধ্যে_নামার_আগে
#লেখিকা_সুমাইয়া_জাহান
#পর্ব_২২

(৪৯)

গাড়ি থেকে নেমে স্মরণের পিছু পিছু একটা বড় দোতলা বাড়ির সামনে এসে দাঁড়াল রুমাইসা। পড়নে কালো আর খয়েরী মিশেল সেলোয়ার কামিজ, মাথা আধগোমটা টেনে নতমস্তকে দাঁড়িয়ে আছে স্মরণের ঠিক দুইহাত পেছনে। ভয় আর লজ্জা মিশ্রিত অনুভূতি তার চেহারায় খেলা করছে। সে জানে না স্মরণ তাকে কোথায় নিয়ে এসেছে তবুও তার অন্তঃকরণে অজানা উৎকন্ঠা মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে বার বার। বুক ধুক ধুক করছে। হাত পা শীতল থেকে আরো শীতলা ধারণ করছে। কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমেছে, দেখেই বুঝা যাচ্ছে খুব ঘাবড়ে আছে সে।
স্মরণ দরজায় কলিংবেল চেপে ফিরে রুমাইসার দিকে তাকালো। মেয়েটা যে সত্যি খুব ঘাবড়ে আছে এই ব্যাপারে তার কোনো সন্দেহ নেই।

“মিস রুমাইসা আপনি কি ভয় পাচ্ছেন?”

স্মরণের কথায় মাথা তুলে তাকালো রুমাইসা। বেকুল চাহনিতে যেনো সে তারই উত্তর দিতে চাইলো সে খুবই ভয় পাচ্ছে। রুমাইসার চাহনি দেখে বুঝতে ভুল হলো না স্মরণের তাই কিছুটা পরিহাস্য করে বলল,

“ভয় পাবার কিছু নেই, এটা আমারই বাড়ি। কোনো যমালয়ে নিয়ে আসি নি যে এই শীতেও ঘামতে হবে।”

রুমাইসা এবার কিছুটা আশ্বস্ত হলো। ইতিউতি করে পুরো বাড়িটায় একবার চোখ বুলিয়ে নিলো তারপর স্মরণের উদ্দেশ্যে বলল,

“আপনি পরিবারকে না জানিয়ে একটা মেয়েকে বাড়ি এনে তুলেছেন দেখলে আপনার পরিবার নিশ্চই রাগ করবে?”

“সে নিয়ে আপনাকে ভাবতে হবে না। আপনি আপনার লক্ষ্যে ঠিক থাকুন, মন দিয়ে পড়াশুনাটা করুন। এমনিতেই নানান ঝামেলায় পড়ে পড়ার অনেক ক্ষতি হতেছে তাই এখানে এসে আর কোনো কিছুতে সময় নষ্ট করবেন না।”

“এই পুরো বাড়িটা আপনাদের?”

“কোনো সন্দেহ আছে?”

“উঁহু।”

“তবে এত প্রশ্ন কেনো?”

রুমাইসা আর কোনো কথা বলল না। নিশ্চুপে মাথানত করে নিলো। স্মরণ কয়েক মুহূর্ত তাকিয়ে দেখলো রুমাইসাকে আর মনে মনে ভাবলো এই কি সে মেয়ে যার একটুকরো চিঠির প্রেমে সে পড়েছিলো। যার অগ্নিস্ফুলিঙ্গের ন্যায় চোখের চাহনি তাকে প্রথমবারের মতো ঘায়েল করেছিলো, হৃদয়ে অসারত্ব অনুভব করিয়েছিলো প্রতিনিয়ত। শরৎের কোনো এক কুয়াশা ঝড়া আঁধার রাত্রিতে যখন চারপাশ গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন তখন জেগেছিলো শুধু গুটিকয়েক রাত জাগা পাখি আর শিউলি ফুলের মাধকতা ছড়ানো সুবাস। চারদিকের নিস্তব্ধতা আর নিশুতি রাতের আঁধার যখন মিলেমিশে এক হয়ে উঠেছিলো ঠিক তখনই পাড়াগাঁয়ের এক ছোট্ট বাড়ির পাশে গাছ আর ঝোঁপের আড়াল থেকে হারিকেনের আলোয় কিশোরীর সজলনেত্র দেখে দম আটকে যাবার মতো অনুভূতি হয়েছিলো স্মরণের। প্রথম প্রেমের অনুভূতি কাকে বলে তা তার জানা নেই তবে রুমাইসার জল টলমল চোখ তাকে দিশেহারা করে তুলেছিলো অন্তঃকরণে চাপা কষ্টের অনুভূতি সৃষ্টি করেছিলো।

হঠাৎ খট করে দরজা খোলার শব্দে ঘোর ভেঙে গেলো স্মরণের। অর্শা দরজা খুলেই হতবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো তাদের দিকে তারপর কিছুটা ইতস্ততভাবে বলল,

“ভাইয়া তুমি? আসবে যে তো বলো নি।”

“আমার বাড়িতে আমি আসবো সেটা এত জানিয়ে আসার কি হলো?”

” না আসলে,,,। ”
বলেই রুমাইসার দিকে তাকালো। রুমাইসা ভীত চাহনিতে অর্শার দিকে একবার তাকিয়ে তাড়াতাড়ি চোখ সরিয়ে নিলো। স্মরণ অর্শার চোখের ভাষা বুঝতে পেরে বলল,

“ও রুমাইসা আজ থেকে এখানেই থাকবে, তোদের পরে সব কিছু খুলে বলছি এখন তো ভেতরে যেতে দে। অনেক ক্লান্ত একটা লম্বা ঘুমের প্রয়োজন।”

“আচ্ছা এসো। বাবা বাসায় নেই দাদু আর মা আছে তুমি যাও আমি রুমাইসাকে নিয়ে আসছি।”

“তুই ওকে নিতে হবে না ওর পা আছে একাই যেতে পারবে। আপনি অর্শার সাথেই আসুন।”

রুমাইসা মাথা নাড়লে স্মরণ ভেতরে চলে যায়। অর্শা রুমাইসার দিকে তাকিয়ে স্মিত হাসলো তারপর বলল,

“আরে তুমি এত ভয় পাচ্ছো কেনো চলো আমার সাথে। আর শুনো আমাকে এত লজ্জা করতে হবে না এখন এসো আর দাঁড়িয়ে থাকলে ভাইয়া রেগে যাবে।”

অর্শার কথায় কিছুটা হালকা হলো রুমাইসা। তারপর ঠোঁটে কিঞ্চিৎ হাসি ফুটিয়ে অর্শার সাথে করে বাড়ির ভেতরে প্রবেশ করলো।

(৫০)

কপালে হাত ঠেকিয়ে নির্লিপ্তভাবে পুকুর ঘাটে বসে আছে শেহ্ওয়ার। মাথায় হাজারটা ভাবনা। রুমাইসার চলে গেছে আজ পাঁচ দিন হলো আর এই পাঁচদিনে সে এতটুকু শান্তি কোথাও খুঁজে পায় নি। যে দিকে যায় আর যে দিকেই তাকায় রুমাইসার স্মৃতি ছাড়া কিছুই সে খুঁজে পায় না। আজকাল অন্তঃকরণে বড্ড বেশি যন্ত্রণা অনুভব করে। নিজের জেদ টিকিয়ে রাখতে গিয়ে নিজের সবচেয়ে কাছের, ভালোবাসার মানুষটাকেই সে হারিয়ে ফেলেছে। কি বা হতো আর কয়টা মাস অপেক্ষা করলে, নিজের সিদ্ধান্তগুলো রুমাইসার উপর চাপিয়ে না দিলে হয় তো মেয়েটা এতবড় একটা কাজ করতে পারতো না ভাবতে ভাবতে তার চোখ দুটো সিক্ত হয়ে উঠলো।

“আপনি এখানে বসে আছেন যে, মামা আপনাকে ডাকছে।”
রিমার কন্ঠস্বর কানে একে নিজেকে ধাতস্থ করে নেয় শেহওয়ার। ঘাটের একেবারে উপরের সিঁড়িটায় দাঁড়িয়ে আছে রিমা। শেহওয়ার ঘাড় ঘুরিয়ে রিমাকে দেখলো একবার, মেয়েটার দিকে তাকানোর মতো মুখ নেই তার। সে জানে না তার বাবা আর নিলুফার কি করে তার অনুপস্থিতিতে রিমার সাথে বিয়ে ঠিক করতে পারে। এই ছোট্ট বাচ্চা মেয়েটার কতই আর বয়স সে তো এখনো বিয়ে কি জিনিস সেটাই জানে না ভালো করে অথচ তার মা কিনা তাকে এখনি বিয়ে দেয়ার জন্য উঠে পড়ে লেগেছিলো। ভাগ্যিস সে সময় স্মরণ গ্রামের চেয়ারম্যানকে নিয়ে হাজির হয়েছিলো নয় তো কি কান্ডটাই না ঘটে যেতো। কিন্তু বাবা আর নিলুফার বেগমকে বা সে দোষ দেয় কি করে ওই অবস্থায় দাঁড়িয়ে রিমাকে বিয়ে করার ব্যাপারটা তো সে নিজেও এড়িয়ে যেতে পারে নি। কাপুরুষের মত নিজেও তাদের কথায় রাজী হয়ে গিয়েছিলো।

“আপনারে মামা ডাকতাছে।”
আবারো বলল রিমা। এবার শেহওয়ার নড়েচড়ে বসল তারপর বলল

“বাবাকে গিয়ে বলো আমি তার কথা শুনতে যেতে পারবো না, উনার যা খুশি তা করতে বলে দিও।”

“মামা শহরে চইলা যাইতাছে আপনারে একবার দেখা করতে কইছে।”

“উনার যেখানে খুশি যাক কিন্তু আমি উনার সাথে দেখা করতে চাইছি না বলে দিও।”

রিমা কিছু না বলে চুপচাপ খানিকটা সময় দাঁড়িয়ে রইলো শেহওয়ারের পরবর্তী জবাবের আশায় কিন্তু না শেহওয়ার আর কোনো উত্তর দিলো না পুকুরের জলে দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বসে রইলো।

রিমা অপেক্ষা করেও যখন কোনো জবাব পেলো না, তখন সে বাড়ির দিকে চলে যাবার জন্য অগ্রসর হতে লাগে আর ঠি সে সময় শেহওয়ার তাকে দাঁড়াতে বলে নিজে বসা থেকে উঠে দাঁড়ায়।

“রিমা তোমার সাথে আমার কিছু কথা আছে।”

কয়েক সিঁড়ি এগিয়ে রিমার সামনে এসে বাহুতে হাত গুঁজে প্রশস্ত শ্বাস ছেড়ে বলল,

“রুসাকে চলে যেতে সেদিন তুমিই সাহায্য করেছিলে তাই না?”

শেহওয়ারের কথায় রিমা এতটুকু অবাক হলো না বরং স্বাভাবিক ভাবে জবাব দিয়ে বলল,

“আপনের কি তাই মনে অয়?”

“রিমা কথা ঠিক করে বলো। আঞ্চলিকতা ছেড়ে একটু শুদ্ধ করেও তো কথা বলতে পারো।”

“আমার শুদ্ধ কথা দিয়া আপনের কি লাভ?”

“তুমিই সাহায্য করেছিলে তাই না?”

“যদি কই আমিই আপারে কইছিলাম চইলা যাইতে তাইলে কি করবেন?”

“কেনো করেছিলে এমন?”

“আপনের বিদেশে একটা বউ থাকতে ক্যান আমার আপারে বিয়া করতে চাইছেন?”

“এ কথা তোমাকে কে বলল।”

“আপনে অস্বীকার করতে পারবেন আপনে বিদেশে বিয়ে করেন নাই?”

“আমি বাধ্য হয়েছিলাম বিয়েটা করতে।”

“তবে ক্যান আবার আমার আপারে বিয়া কইরা তার জীবন নিষ্ট করতে চাইছিলেন, আইচ্ছা আপনের উদ্দেশ্যটা কি?”

“উদ্দেশ্য কিছু নয় রিমা, আমি রুসাকে বড্ড বেশি ভালোবেসেছি।”

“যদি তাই হইতো তাইলে ওইদিন আপনের বাবা আর আমার মায়ের কথা ধইরা আমারে বিয়ে করতে রাজী হইতেন না।”

“আমি উপরিস্থিতির স্বীকার।”
শেহওয়ারের কথায় উচ্চস্বরে হেসে উঠলো রিমা। তারপর বলল,

“কোন পরিস্থিতির কথা কইতাছেন? আপনে পরিস্থিতির স্বীকার হইলে আমার পরিস্থিতিরে কি কইবে লোকে?”

“পরিহাস করছো।”

“তার মতো কথা কইলে যে কেউই পরিহাস করবো।”

“রুসা কোথায় গেছে?”

“হেইডা আমি কেমনে কমু।”

“তুমি সব জানো আমি জানি।”

“জানলেই কি আপনারে কন লাগবো।”

“রিমা তুমি বড্ড বাড়াবাড়ি করছো মনে হচ্ছে না?”

“আপনে কি কম করতাছেন, অন্য দেশে বউ রাইখা দেশে আইসা আমার আপারে বিয়া করতে চাইছেন আপনে কি মনে করেন আপনাগো চক্রান্ত কেউ ধরতে পারবো না? আপনি আসলে আমার আপারে কোনো দিন ভালোবাসেন নাই যদি বাসতেন তবে তার লগে এমন বেইমানী করতেন না।”
বলে গট গট করে হেঁটে রিমা সেখান থেকে চলে গেলো। শেহওয়ার রিমার চলে যাবার দিকে তাকিয়ে থেকে দীর্ঘশ্বাস ফেললো।

(৫১)

ছাদের কার্ণিশ ভর দিয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে স্মরণ। আকাশে গুটিকতক তারার মাঝে একফালি চাঁদ মেঘের আড়ালে লুকোচুরি খেলছে। চারদিকে উত্তরী সমীরণ বইছে। খোলা ছাদের কার্ণিশে ভর দিয়ে স্মরণ বিগত কয়েক দিনের কথা মনে নাড়াচাড়া করে যাচ্ছে। একটু দূরে দাঁড়িয়ে ফায়াজ ফোনে কথা বলছিলো, স্মরণকে আনমনা হয়ে কিছু ভাবতে দেখে সে ফোন রেখে স্মরণের পাশে এসে দাঁড়াল।

“কি ভাবছিস এতো?”

“কিছু না তো।”

“মেয়েটাকে শেষ পর্যন্ত নিয়েই এলি।”

“হু।”

“যাকে উপেক্ষা করার শক্তি তোর নেই তাকে শুধু শুধু কেনো এত কষ্ট দিতে গিয়েছিলি।”

“তার ভালো চেয়েছিলাম বলে।”

“আচ্ছা একটা কথা বলতো, তুই কি রুমাইসাকে ভালোবাসিস।”

“ভালোবাসা বলে জগতে কিছু আছে?”

“যদি নাই থাকে তাহলে তোর কি দায় পড়েছিলো পাড়াগাঁয়ের একটা সহজ সরল মেয়ে যে তোর কেউ হয় না,যার সাথে তোর কোনো সম্পর্কই তার জন্য এতটুকু করার। এমনকি তার জন্য তোর মত এত বড় মাফের একজন ডাক্তার সে কিনা শুভ্রনগরের মতো ছোট্ট মফস্বলের ছোট হাসপাতালে,,,,,।”

“আর গভীরে যাস না।”

“সত্যি বেড়িয়ে আসবে তাই তো।”

“যদি বলি তাই।”

“এত লুকোচুরি কিসের আমি বুঝতে পারছি না। আমার তো মনে রুমাইসাও তোকে।”

“বার বার এক কথা কেনো বলছিস বলতো?”

“মানে কি স্মরণ?”

“সে অনেক ছোট। মাত্র মেট্রিক পরীক্ষা দিবে আর আমার বয়স কত জানিস?”

“এটাই বুঝি আসল কারণ?”

“তুই বুঝবি না। অনেক রাত হয়েছে চল যাই।”

“সত্যি করে একটা কথা বলতো স্মরণ তুই ঠিক কি চাইছিস?”

“আমি চাই সে খুব বড় ডাক্তার হোক। নিজের স্বপ্ন পূরণ করুক। আমি সব সময় তার পাশে আছি আর থাকবো এর চেয়ে বেশি কিছু না।”

বলে দ্রুত হেঁটে ছাদ থেকে নেমে গেলো স্মরণ। ফায়াজ ক্ষণকাল দাঁড়িয়ে থেকে দীর্ঘশ্বাস ফেললো। তার কাছে স্মরণকে পাথর বলে মনে হয় মাঝে মাঝে, যার বুকে হাজারটা আছড় কাটলেও তাতে এতটুকু দাগ পড়ে না।

চলবে,,,।