#এক্কা_দোক্কা – ২১
#আভা_ইসলাম_রাত্রি
জোহান ক্রমশ কেয়ার কানের কাছে ঝুঁকে এল। কেয়া স্থিরচিত্তে নিজ স্থানে বসে আছে। রুদ্ধশ্বাস অবস্থা! জোহান কেয়ার কানেকানে বললো,
-” রিয়ার তালুকদার ও আপনার মধ্যকার দ্বন্দ্বযুদ্ধের কথা আপনি মুখে বলবেন নাকি আমি আমার ওয়েতে স্বীকার করিয়ে নেবো, মিস কে…য়া? ”
জোহানের টেনে টেনে বলা সম্বোধনে কেয়ার মুখের রং পাংশুটে হয়ে গেল। জিহ্বা দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে বলে উঠলো সে,
-” কি সব আজেবাজে বকছেন? তার সাথে আমার কোনোরূপ বিরোধ নেই। বুঝেছেন? ”
-” ওহ, তাই নাকি? তাহলে আপনাকে একটা গান শোনানো যাক, মিস কেয়া। কি বলেন? ”
কেয়া প্রশ্নবিদ্ধ চোখে তাকাল জোহানের দিকে। জোহান মিহি হাসল। পুলিশের সরকারি ফোন বের করে একটা ফোন কলের রেকর্ড অন করলো। শুনা যাচ্ছে তাতে,
-” রিয়াদ, তুমি এটা করতে পারো না! ”
রিয়াদের গলা,
-” কেন পারিনা! রোজ রোজ একই স্বাদের বিরিয়ানি খেতে কার ভালো লাগে বলো ত! স্বাদ বদলের প্রয়োজন এখন আমার। ”
-” আমি তোমায় ভালোবাসি, রিয়াদ! ”
-” তো আমিও তো বাসি। কিন্তু ভালোবাসলে যে এক দেহেই আটকে থাকতে হবে, তেমন ত কোনো কথা আমাদের মধ্যে হয়নি। ”
-” প্লিজ, রিয়াদ। পায়ে পড়ি তোমার। ওই মেয়েকে তুমি স্পর্শ করো না। আমার গা জ্বলে ওই মেয়েকে দেখলে। আমি তোমার পাশে ওই মেয়েকে মেনে নেব না। কিছুতেই না। ”
-” তো মেনো না। কে বলছে মানতে? তবে হ্যাঁ, বিয়ে আমি তোমাকেই করব। ঘরে পার্মানেন্ট থাকবে তুমি, আর বাইরেরটা আমি জোগাড় করে নেব। চিল, বেবি। ”
-” তুমি যদি ঐ মেয়েকে স্পর্শ করো, আমি তোমায় সত্যি সত্যি খুন করে ফেলব রিয়াদ। ”
কেয়ার তেজপূর্ণ কণ্ঠ।
-” করতে পারলে করে ফেলো। ”
-” আমি সিরিয়াস, রিয়াদ। ”
-” আমিও সিরিয়াস। তুই আমায় খুন করতে আয়, আমি তোর সামনে ওই মেয়েকে আমি স্পর্শ করব। তুই আমার টিকিটারও কিচ্ছুটি করতে পারবি না, শা/লি। ”
টুট..টুট…টুট! ফোন কেটে গেছে। জোহান চেয়ে আছে কেয়ার দিকে। কেয়ার চোখ আগুন হয়ে আছে। চোখের মণি ক্রমশ খয়েরী হয়ে যাচ্ছে। মস্তিষ্কে ঘুর্নিপাক খাচ্ছে প্রতিশোধের কালো ঝড়। মনে পড়ছে জীবনের কিছু দুর্বিষহ স্মৃতি! কেয়া পাগলের মত মাথা নাড়ালো। চিৎকার করে বলল,
-” হ্যাঁ, হ্যাঁ, হ্যাঁ। আমি গিয়েছিলাম ঐ কুকুরের বাচ্চাকে খুন করতে। তার জান আমার এই দুই হাতে কবজ করে ফেলতে চেয়েছিলাম। নিজ হাতে জঘন্যভাবে মারতে চেয়েছিলাম আমি। কিন্তু আমি তাকে মারতে পারিনি। তার আগেই ব্যাটা মরে গেল। কেউ আমার বদলে তাকে খুন করে ফেললো। আমার ইচ্ছা অপূর্ণ থেকে গেল। আফসোস! ”
কেয়ার চিৎকারে সম্পূর্ণ লকাপ তরতর করে কম্পিত হলো যেন। জোহান স্বাভাবিক চোখে কেয়ার দিকে চেয়ে আছে। এমন কেইস জীবনে সে অনেক দেখেছে। ভালোবাসলে, সেই ভালোবাসার পরাজয় হতে সে দেখেছে। আপনকে নিমিষেই পর হয়ে যেতে দেখেছে। আরো কত কি দেখেছে…
কেয়ার দু চোখ বেয়ে জল গড়াচ্ছে। পাগলের মত কাঁদছে সে। হাত পা দড়ি থেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করছে ক্রমাগত! জোহান কেয়াকে সময় দিল। মহিলা কনস্টেবলকে কেয়ার দেখাশোনা করার দায়িত্ব দিয়ে সে পুলিশ স্টেশন থেকে বেরিয়ে গেল। আজ একবার মিতুর সাথে দেখা করা দরকার। দেখা হওয়ার পর মিতুকে একটা পাঁচ টাকার গোলাপ উপহার দিলে কেমন হয়? খুশিতে মেয়েটা পাগল না হয়ে যায়!
__________________________
জুভান স্টুডিওর উদ্দেশ্যে বেরুবে একটু পরই। আজ একটা মিটিং আছে তার। নিজের একটা মিউজিক ব্যান্ড করার খুব ইচ্ছে জুভানের। সে আপাতত সেই অনুযায়ীই এগুচ্ছে। আজকের মিটিংটা মূলত এই নিয়েই।
-” আসবো? ”
দরজার টোকা দিয়ে বললো ঐশী। জুভান বা হাতে ঘড়ি পড়তে পড়তে গলা উঁচু করে বললো,
-” আসো, ঐশী। ”
ঐশী ভেতরে ঢুকলো। বেশভূষা দেখে মনে হচ্ছে ঐশী কোথাও যাচ্ছে। জুভান আয়নার সামনে এসে দাঁড়ালো। চুলে চিরুনি চালিয়ে জিজ্ঞেস করলো,
-” কোথাও যাচ্ছ, ঐশী? ”
ঐশী উত্তর দিল,
-” একটু আশ্রমে যাব। ”
-” ওহ, গ্যারেজে গাড়ি আছে। নিয়ে যেও। ”
ঐশী বাঁধা দিল,
-” না, গাড়ি লাগবে না। আমি একাই যেতে পারব। ”
জুভান তীক্ষ্ণ চোখে আয়নায় ঐশীর প্রতিবিম্বের দিকে তাকালো। ভ্রু নাচিয়ে বলল,
-” তোমাকে আমি জিজ্ঞেস করেছি? ”
ঐশী ভ্রু কুঁচকালো। বললো,
-” মানে? ”
-” আমি তোমায় আমার ফয়সালা শুনাচ্ছি। একা কোথাও যাচ্ছ না তুমি। গাড়ি থাকবে, গাড়ি দিয়ে যাবে, আর গাড়ি দিয়েই ফিরবে। বুঝা গেছে? ”
ঐশী মনেমনে ভালোই বিরক্ত হলো। বললো,
-” আমি কি আগে একা কোথাও যাইনি, নাকি এই প্রথম? ”
জুভান চমৎকার হাসল। ডান গালে সুন্দর একটা টোল পড়লো তাতে। ঐশী হকচকিয়ে গেল। এত সুন্দরও কারো হাসি হয়? ঐশীর বুকের ধুকপুকানি বেড়ে গেল। জুভান চিরুনি রেখে দিল। ঐশীর দিকে এগিয়ে এসে মুখ রাখলো ঐশীর কানের লতিতে। ঐশীর শরীর শিহরিত হল। পা দিয়ে খামচে ধরলো কার্পেট। জুভান ঐশীর শরীরের কাঁপুনি স্পষ্ট বুঝতে পেরে বক্র হাসল। ঐশীর কানের কাছে ফিসফিসিয়ে বললো,
-” আগে তুমি যেমনই থাকো না কেন, আমার তাতে বিদুমাত্র মাথাব্যাথা নেই। কিন্তু এখন তুমি ইজহার জুভান মির্জার লিগ্যাল ওয়াইফ! আর জুভান তার ব্যাক্তিগত মানুষকে যথাযথভাবে আগলে রাখতে জানে, মিস ঐশী! তাছাড়া, সুন্দরী মেয়েদের একা ছাড়ার নিয়ম নেই। পাপ লাগে। ”
জুভান শিস বাজিয়ে জিন্সের পকেটে দুহাত গুঁজে চলে যাচ্ছে। ঐশী এখনো স্থির হয়ে নিজ স্থানে দাড়িয়ে। গা টা কি কাঁপছে তার? ঐশী বুকে হাত রাখল। বুকটা এমন অদ্ভুত ভাবে লাফাচ্ছে কেন? কানে হাত দিল। ওমা, কান এত গরম হয়ে আছে কেন? ঐশী কি লজ্জা পাচ্ছে? না, না এটা হতেই পারে না। ঐশী দ্রুত নিজের অনুভূতিকে সামলে নিল। ঐশী এখন এমন একটা পরিস্থিতিতে দাড়িয়ে আছে, যেখানে কারো জন্যে তার অনুভূতি জন্মানো পাপ সমান! জুভানের থেকে ঐশীকে আরো বেশি সতর্ক থাকতে হবে!
________________________________
জুভানের বলা সত্ত্বেও ঐশী জুভানের গাড়ি নেয়নি। জুভানের কথা মানা মানেই তার দিকে আরো এক কদম এগিয়ে যাওয়া। সেটা ঐশী চায়না। ঐশীর কাজ শেষ হলেই, সে জুভানকে ছেড়ে চলে যাবে। সত্যি বলতে তো সে জুভানকে নিজের স্বার্থের জন্য বিয়ে করেছে। স্বার্থপর সে! খুব বেশী স্বার্থপর!
ঐশী রিকশায় হুড তুলে বসে ছিল। মাস্ক দ্বারা মুখের বেশিরভাগ অংশ ঢাকা। বৌভাতের পর থেকে ঐশীকে বাংলাদেশের সবাই চেনে। তাই একা একা কোথাও বেরুনো মুশকিল হয়ে পড়েছে ওর জন্যে। মনের ভাবনায় বুদ হয়ে থাকতে থাকতে কখন যে ঐশীর চোখ ভিজে এল, সে খেয়াল কেই-বা রাখল?
আশ্রমের সামনে এসে ঐশী রিকশা থেকে নেমে দাঁড়ালো। রিকশা ভাড়া মিটিয়ে সামনে এগিয়ে যেতেই কেউ ঐশীর মুখে গন্ধযুক্ত রুমাল চেপে ধরে। ধস্তাধস্তির এক পর্যায়ে ঐশী চোখ তুলে তাকায়। সঙ্গেসঙ্গে সে চমকে উঠে। জ্ঞান হারানোর এক পর্যায়ে নিভুনিভু কণ্ঠে বলে উঠে,
-” অ..ন..ল ”
#চলবে
#এক্কা_দোক্কা – ২২
#আভা_ইসলাম_রাত্রি
কাঠের চেয়ারে বেঁধে রাখা হয়েছে ঐশীকে। একটু আগে অনবরত ছটফট করছিল যে মেয়ে, সে এখন চুপটি করে বসে আছে। নড়াচড়া অব্দি করছে না। তার ঝাপসা চোখের সামনে ভাসছে, তার করা সেই রাতের ভয়ংকর খুনের দৃশ্য! ঐশী ভেবে পাচ্ছে না, অনল কি করে এসব প্রমাণ জোগাড় করল। যেখানে ঐশীর চালে এ দেশের পুলিশ অব্দি নাস্তানাবুদ। ঐশীর মুখ ধীরেধীরে কঠিন হলো। সোজাসাপ্টা জিজ্ঞেস করলো ঐশী,
-” কি চাই তোমার, অনল? ”
অনল মুচকি হাসল। ঐশীর ঠিক সামনে চেয়ার টেনে বসে গা ছাড়া ভাবে বললো,
-” আপাতত একটাই চাওয়া আমার। ”
অনল মুখ এগিয়ে আনলো ঐশীর দিকে। ঐশী তখন স্বাভাবিক চোখে চেয়ে। অনল ফিসফিসিয়ে বললো,
-” তোমার খুনের সাথী হতে চাই। সাহায্য করতে চাই তোমায়, ওদের মেরে ফেলতে। ”
-” এতে তোমার লাভ? ”
-” লাভ তো একটা আছে। তবে এখন বলবো না। সময় যাক, তারপর তুমি নিজেই জেনে যাবে। তো বলো, ডিলে রাজি? ”
ঐশী কিছুক্ষণ ভাবল। রাজি হবে সে। যদি কখনো অনল ওর সাথে বেইমানি করে তবে অনলকেও সে খুন করতে দুবার ভাববে না। ঐশী ভ্রু কুঁচকে বললো,
-” আমি রাজি। ”
-” বাহ, বাহ। এই তো সোজা পথে এলে। দাড়াও তোমায় ছেড়ে দিচ্ছি। বাসায় গিয়ে আরামে একটা ঘুম দাও। কাল দেখা হচ্ছে। ”
অনল ঐশীর দড়ি ছুরি দিয়ে কেটে ফেলল। ঐশী দুবার হাত ঝাড়া দিল। হাতটা বড্ড ব্যথা করছে। দাগ পড়ে গেছে হাতে।
অনল ঐশীকে বাসায় যাওয়ার জন্যে পথ দেখালে ঐশী আটকে যায়। অনলের দিকে চেয়ে রহস্যভরা হাসি হেসে বলে,
-” মানুষের রক্তের ঘ্রাণ শুকবে, অনল? দারুন ঘ্রাণ। স্বাদটা আরো দুর্দান্ত। যাবে নাকি, কারো খুন করতে? ”
ঐশী এমনভাবে কথা বলছে যেন খুন করা ঐশীর নিত্যকার কাজ। অনল প্রথমে কিছুটা অবাক হলো। পরক্ষনেই হেসে বললো,
-” আজ-ই? ”
-” জুভান স্যার বাসায় নেই। বাসায় ফিরতে তার রাত হবে। আর খবর পেয়েছি, সাজ্জাদ হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে হসপিটাকে ভর্তি হয়েছে। তাই এখনি মুক্ষোম চালটা চেলে নিতে হবে। যাবে তুমি? ”
অনল আর একমুহূর্ত ভাবলো না। বললো,
-” অবশ্যই! ”
ঐশী আর অনল একসাথে হেসে উঠল।
_____________________________
-” তুমি সিওর তো ঐশী? এই ফাঁকা সিরিঞ্জ দিয়েই কাজ হয়ে যাবে? ”
ঐশী হাতে গ্লাভস পড়তে পড়তে বললো,
-” ছেলে হয়েও তোমার এত চিন্তা কিসের? দাও, সিরিঞ্জটা দাও হাতে। ”
অনল সিরিঞ্জ হাতে দিল ঐশীর। ঐশীর গায়ে নার্সের পোশাক। মুখে সবুজ মাস্ক। ঐশী মেডিসিনের ট্রে নিয়ে আইসিইউ রুমের দিকে চললো।
আইসিইউ রুমে এই মুহূর্তে প্রচুর ভিড়। সবাই সাজ্জাদকে দেখতে চাইছে। কিন্তু সাজ্জাদের সিকিউরিটির জন্যে শুধুমাত্র ডাক্তার আর নার্স ব্যতীত কাউকেই কক্ষে প্রবেশ করানো হচ্ছে না।
ঐশী মুখের মাস্কটা আরো একটু শক্তপোক্ত করে নিল।
অতঃপর সবার চোখ ফাঁকি দিয়ে ঐশী আইসিইউ রুমে প্রবেশ করলো। সাজ্জাদ হোসেনের সজাগ আছেন। ঐশী তার মাথার কাছে সুন্দর একটা গোলাপ ফুলের তোড়া রাখলো। সাজ্জাদ হোসেনের কানেকানে বললো,
-” তোদের জম এসে গেছে রে সাজ্জাদ। হরিপুর গ্রামের সেই এগারো বছরের মেয়ে এসে গেছে রে। ”
সাজ্জাদ হোসেন চকিতে তাকালেন ঐশীর দিকে। ঐশী মুখের মাস্ক খুলে ফেললো। জুভানের স্ত্রী ঐশীকে চিনতে সাজ্জাদের একটুও বিলম্ব হলো না। সাজ্জাদ হোসেন আঙ্গুল উঁচু করে ঐশীর উদ্দেশ্যে কিছু বলতে চাইলেন। কিন্তু পারলেন না। মুখ দিয়ে গুঙিয়ে যাচ্ছেন। একটুখানি বাঁচার আশায় রুমের বাইরে থাকা নিজের লোকদেরকে ডাকতে চাইলেন। তবে মুখে অক্সিজেন মাস্ক থাকায় পারলেন না। ঐশী সাজ্জাদ হোসেনের এমন ছটফটানি দেখে সুখ পেল খুব। কানের কাছে মুখ এনে বিড়বিড় করে বললো,
-” হ্যাপি জার্নি, সাজ্জাদ হোসেন। ”
সাজ্জাদের ছটফটানি দ্বিগুণ হলো। অতঃপর ঐশী সাজ্জাদের সেলাইন লাগানো সেই ক্যানুলার খুলে নিল। ক্যানুলার জন্যে যে ছিদ্র করা হয়েছিল, সেই জায়গা দিয়ে ফাঁকা সিরিঞ্জের সবটুকু গ্যাস পুশ করে দিল। সাজ্জাদ হোসেন গুঙিয়ে যাচ্ছেন। শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে তার। বুঝতে পারছেন, তার সময় গনিয়ে এসেছে। তার চোখ আস্তে আস্তে নিভে আসছে। কাজ শেষ করে ঐশী পুনরায় মাস্ক পড়ে আইসিইউ থেকে চলে এল।
ঐশী বেরুনোর দশ মিনিট পর আইসিইউ রুমে একপ্রকার হইচই লেগে গেল।সাজ্জাদ হোসেন হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন, মুহূর্তেই খবরটা পুরো দেশে ছড়িয়ে গেল। আমজাদ হোসেনের কানে কথাটা যেতেই তিনি হসপিটালে এসে একপ্রকার যুদ্ধ বাঁধিয়ে দিলেন। সাজ্জাদ হোসেন আমজাদ এর ডান হাত। ডক্টর সাজ্জাদের মৃত্যুকে ন্যাচারাল ডেথ বললেও, তিনি জানেন এটা মোটেও ন্যাচারাল কোনো মৃত্যু না। সে ফিরে এসেছে। ১১ বছর আগে করা সেই অন্যায়ের প্রতিশোধ নিতে সে আবার ফিরে এসেছে!
অনল আর ঐশী এই মুহূর্তে হসপিটালের একটা ফাঁকা স্থানে দাড়িয়ে আছে। সাজ্জাদ হোসেন মরার বিষয়টা এখনো অনলের বোধগম্য হচ্ছে না। অনল মাথা চুলকে জিজ্ঞেস করলো ঐশীকে,
-” কেইসটা কি হলো, ঐশী? ”
-” কি আবার হবে? সাজ্জাদ মারা গেল! আমি মেরে ফেললাম তাকে। ”
-” কিন্তু কিভাবে? তুমি তো গেলে আর আসলে। ”
-” সিম্পল। আমার হাতের যে সিরিঞ্জটা ছিল সেটা ৫ মিমি। একটা ৫ মিমির ফাঁকা বাতাস ভর্তি সিরিঞ্জ আমি সাজ্জাদের রক্তবাহী শিরার মধ্যে দিয়ে প্রবেশ করিয়েছি। সাধারণত শিরা শুধুমাত্র লিকুইড পরিবহন করে হার্ট অব্দি পৌঁছায়। কিন্তু এখানে এক সিরিঞ্জ বাতাস প্রবেশ করানোর ফলে শিরা রক্তের লিকুইড এর পরিবর্তে বাতাস হার্টের আর্টারিতে পরিবহন করেছে। রক্তের অভাবে হার্ট এর আর্টারি বাতাস কর্তৃক ব্লক হয়ে গেছে। তারপর সাজ্জাদ হোসেন খতম! হা হা হা। ”
অনল বিস্মিত! এই থিওরিটা সে বইয়ে পড়েছে। কিন্তু কখনো ভাবেনি এই থিওরি দিয়ে কাউকে খুন করা যায়। অনল জিজ্ঞেস করলো
-” কেউ যদি তোমায় সাজ্জাদের খুনের মামলায় ধরে ফেলে, তখন? ”
-” পারবে না। কারণ সাজ্জাদ আগে থেকেই হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে হসপিটাল ভর্তি হয়েছে। তাই এখন সবাই এই খুনকে ন্যাচারাল ডেথ হিসেবেই নেবে। ”
অনল ঠোঁট উল্টে বললো,
-” তুমি খুব বুদ্ধিমান, ঐশী। ”
ঐশী হাসলো, তথাপি কিছু বললো না।
_______________________________
বাসায় এসে গোসল করে ঐশী এখন বেশ শান্তি অনুভব করছে। দুপুরের ঔষুধ এখনো খাওয়া হয়নি। ঐশী ড্রয়ার খুলে ঔষুধ বের করলো। ঐশীর খাওয়া সিরাপের পাশে আরো একটা সিরাপ ছিল। সিরাপের গায়ে সুন্দর করে লেখা, ব্যথানাশক সিরাপ। ঐশীর মাথাটা খুব ধরেছিল। তাই ঐশী কোনোরূপ বিচার না করে সিরাপটা দু চামচ খেয়ে নিল।
প্রতিবার খুন করে আসার পর ঐশী নামাজ আদায় করে। তাই এবারও নামাজ পড়তে বসল। মাগরিবের নামাজ শেষ করতেই ঐশীর মাথাটা কেমন যেন করে উঠল। ঐশী দুহাতে মাথাটা চেপে ধরে কিছুক্ষণ জায়নামাজে বসে রইল। মনের মধ্যে কিছু নিষিদ্ধ অনুভূতি কাজ করছে। ঐশী খুব বিচক্ষণ থাকায় চট করে বুঝে ফেললে,তার শরীর ঠিক লাগছে না। ভেতরের নিষিদ্ধ ইচ্ছাগুলো ক্রমশ বাড়ছে। ঐশীর মন এখন, একটা পুরুষকে খুঁজে চলছে। ঐশী বুঝতে পারছে, তার দ্বারা আজ একটা অঘটন তো ঘটবেই নিশ্চিত। তার আগেই ঐশীকে ঘুমিয়ে পড়া উচিৎ। ঐশী বিছানায় গা এলাতেই বোধ হল, সে আর নিজের মধ্যে নেই। এই মুহূর্তে একটা পুরুষ তার চাই। কি করবে, ভেবে পেল না ঐশী। কান্না এল চোখের কোল চাপিয়ে। নিজের মধ্যে অস্থিরতা অনুভব করতে লাগলো।
-“ঐশী, চলো আজ একসাথে চা খেতে খেতে গল্প করি। ”
জুভান কথা বলতে বলতে ঐশীর রুমে এল। তার হাতে চায়ের দু কাপ। জুভান ঐশীকে মাথা চেপে বসে থাকতে দেখে চায়ের কাপ দুটো টেবিলে রেখে হন্তদন্ত হয়ে ঐশীর পাশে এসে বসলো। ঐশীর কাধে হাত রেখে জিজ্ঞেস করল,
-” কি হয়েছে, ঐশী? আর ইউ ওকে? এমন করছ কেন, তুমি? ”
ঐশীর দু চোখে কামনা। ঐশী ধাক্কা দিয়ে জুভানকে নিজের থেকে সরিয়ে ফেলল। জুভান মাটিতে পড়ে গেল। পায়ে হালকা ব্যথা পেল। তবে সেই ব্যথাটুকু এড়িয়ে গিয়ে সে বিস্ময় নিয়ে বললো,
-” হোয়াট দ্য হেল, ধাক্কা দিলে কেন?কি হয়েছে তোমার, ঐশী? ”
ঐশী চিৎকার করে বলল,
-” সরে যান আমার থেকে। আমি ঠিক নেই এখন। চলে যান, রুম থেকে। চলে যান বলছি। ”
ঐশী কান্না করছে দেখে জুভান আগের ন্যায় বসলো ঐশীর পাশে। এবারেও ঐশী জুভানকে ধাক্কা দিতে চাইলে, জুভান ঐশীর দু হাত পেছনে নিয়ে আটকে দিল। ছটফটে ঐশীর চোখে চোখ রেখে নরম কণ্ঠে বলল,
-“একদম নড়াচড়া করবে না। যা জিজ্ঞেস করছি, তার উত্তর দাও। তোমার কি হয়েছে, ঐশী? আমায় বলো। তুমি অসুস্থ বোধ করছ? ”
জুভানের নরম কণ্ঠে ঐশী হার মানলো। আচমকা জুভানের গলার দিকে ঝুঁকে এসে ঠোঁট বসালো জুভানের কণ্ঠনালির বাহিরের ত্বকে। জুভানের সম্পূর্ণ দেহ যেন মুহূর্তেই কাপুনি দিয়ে উঠল। হতবম্ব চোখে তাকালো সে ঐশীর দিকে। দুহাতে ঐশীকে দূরে সরাতে চাইল। সে চায়না, অসুস্থতার রেশ ধরে ঐশী কোনো ভুল করে বসুক। জুভানের জন্যে ঐশী কখনো পস্তাক, সেটা জুভান কখন চাইবে না।
ঐশীকে সরিয়ে দিতেই, জুভানের আরো কাছে ঘেঁষে এল ঐশী। জুভানের গলায় মুখ গুঁজে বললো,
-” আপনাকে আমার চাই এখন, এই মুহূর্তে। দেবেন না আমায়? দিয়ে দিন না এই ‘আপনি’ টাকে। প্লিজ? ”
ঐশীর কণ্ঠে কাতর। জুভান যা বোঝার বুঝে ফেলল। ঐশী যৌন উত্তেজক সিরাপ খেয়েছে। কিন্তু, সেই সিরাপ ঐশীর হাতে এল কিভাবে? জুভান মাথায় হাত দিল। এখন কি হবে? আজ রাতে ঐশীকে সামলানো জুভানের পক্ষে মুশকিল হয়ে যাবে। ঐশীর এবার জুভানের গলায় কামড় বসালো। আচমকা আক্রমনে জুভান ব্যথায় অস্ফুটসুরে গুঙিয়ে উঠলো। হুট করে সে তার সমস্ত নিয়ন্ত্রন হারিয়ে ফেললো। মনের কাছে হেরে গেল কঠিন বিবেক। জুভান ঐশীর চেপে ধরলো নিজের সাথে। ঐশীর কাতর চোখে চোখ রেখে বললো,
-” ঘুমন্ত বাঘকে জাগিয়ে দিয়েছ। এখন জীবন্ত বাঘকে সামলাতে পারবে তো, ঐশী? ”
ঐশীর জুভানের কথা শোনার ইচ্ছে নেই। সে দুহাতে গলা জড়িয়ে ধরলো জুভানের। অবশেষে জুভান দীর্ঘশ্বাস ফেলে ঐশীকে আলতো হাতে শুইয়ে দিল বিছানায়।
কাছে আসার এক পর্যায়ে জুভান ফিসফিসিয়ে বললো,
-” তোমায় আমি ভালোবাসি, ঐশী। আজ আমাদের এই কাছে আসা তোমার কাছে নিছক ভুল হলেও, আমার কাছে আজকের এই রাত সারাজীবন স্মরণীয় থাকবে। তুমি আমাকে ছেড়ে চলে যেতে চাইলেও আমি আজকের পর কখনো তোমায় নিজের থেকে আলাদা হতে দেবো না। আজকের পর তুমি আমার অস্তিত্বের সাথে মিশে গেছ। আর জুভান কখনো তার ব্যক্তিগত মানুষকে নিজের হাত ছাড়া করে না! ”
সুখের রাজ্যের ঘুরে বেড়ানো ক্লান্ত ঐশীও তখন মিনমিনিয়ে মনের মধ্যে চেপে থাকা কথাটা বলেই ফেলল,
-” আমিও ভালোবাসি আপনাকে, রকস্টার সাহেব। ”
জুভান রাজ্যজয় করা হাসি হাসলো। অতঃপর পুনরায় মত্ত হয়ে গেল প্রিয়তমাতে। জুভান জানে ঐশী সব ভুলে যাবে! কিন্তু জুভান কি আদৌ আজকের রাতটা কখনো ভুলতে পারবে?
#চলবে।