এক বৃষ্টিস্নাত সন্ধ্যা ২ পর্ব-২৬+২৭

0
1497

#এক_বৃষ্টিস্নাত_সন্ধ্যা
২৬.
#WriterঃMousumi_Akter

–এটা কি শীতকাল নাকি বর্ষাকাল কিছুই বুঝতে পারছি না আমি।এ অসময়ে তো কখনো ঝড়ো হাওয়া দেখি নি।বাইরে উথাল পাথাল বাতাস উঠেছে।জানালার পর্দা উড়ছে ভীষণ জোরে।পাল্লাগুলো বাড়ি খাচ্ছে।বাইরের ধুলো উড়ে ঘর ভরে যাচ্ছে।বারান্দার সাথে মিশে থাকা শিউলি গাছ টা দোল খাচ্ছে।বেলকনির কাপড় উড়ে নিচে পড়ে যাচ্ছে।হঠাত কেমন উল্টা পালটা বাতাস শুরু হলো।এই ভীষণ আবহাওয়ার মাঝে ডিমের কুসুম ছাড়া কিছুই অবশিষ্ট নেই এটা দেখে বিহান ভাই কি রিয়্যাক্ট করবেন তাই ভাবছি।সাদা অংশ তো সব ই খোসার সাথে চলে গিয়েছে।উনি আবার পই পই করে বলে গিয়েছেন আমি যেনো ভাল ভাবে খোসা ছড়াই।এখন কি করি আমি সেটাই ভেবে যাচ্ছি।

–কিচেনের দরজায় সটান হয়ে বুক টান টান করে এক হাতে ফোন স্ক্রল করে যাচ্ছেন বিহান ভাই।ফোন স্ক্রল করতে করতে বললেন,ডিমের খোসা ছড়ানো কি হয়েছে দিয়া?

–আমি অপরাধী মুখে চুপ আছি।আমাকে নিশ্চুপ দেখে ফোন স্ক্রল করা বন্ধ করে আমার দিকে তাকালেন।আমার দিকে তাকিয়ে উনার দৃষ্টি ডিমের দিকে নিক্ষেপ করে দুই ভ্রু বিস্ময় এর সাথে কুচকে ডিমের দিকে তাকিয়ে রইলেন।নিমিষেই ভীষণ রেগে গেলেন।রেগে ফুসে ফুসে উঠছেন ক্রমশ।অতিশয় বিরক্তি নিয়ে বললেন,হোয়াট দ্যা হেল ডিম কে সোজা জাহান্নামে পাঠিয়ে ছেড়েছিস তো দিয়া দাঁতে দাঁত চেপে বললেন।এটা কি ডিম নাকি ঘোড়ার ডিম কিছুই বুঝছি না।অতিথি আসার সময় হয়ে গিয়েছে ডিমের এটা কি অবস্হা করেছিস ষ্টুপিড।আমার আগেই বোঝা উচিত ছিলো তোর দ্বারা কিছুই হবে না।হবে না মানে না।রাজাকার বংশের মেয়ে খাটি রাজাকার হয়েছে।এই নিরীহ ডিম গুলোর সাথে এমন অত্যাচার করেছিস যে ডিম গুলোর অস্তিত্ব ই খুজে পাওয়া যাচ্ছে না।

–বকছেন কেনো?উঠে গেলে আমি কি করবো?

–চুপ অলস মহিলা।একদম চুপ, একটা কথা বললে তোকে কড়াইতে দিয়ে সিদ্ধ করবো এইবার পোল্ট্রি কোথাকার।আমি জানি তুই ধৈর্য ধরে করিস নি কিছুই। ২ মিনিটে ডিমের সাথে যুদ্ধ করে এই অবস্থা করেছিস।এই মুহুর্তে তুই আবার ডিম সিদ্ধ করবি ফ্রিজ থেকে নিয়ে, তারপর সেই ডিমের খোসা ছড়াবি।এই কিচেন পরিস্কার করবি পুরা ঘর ঝাড়ু দিয়ে দিবি,পুরা ঘর মুছবি,আলনা ঘোছাবি,বাথরুম পরিষ্কার করবি।এগুলো তোর শাস্তি।

–আমি এসব কিছুই পারবো না। বাথরুম তো মোটেও পারবো না।আপনি আমাকে পোল্ট্রি বলেছেন, আমি কি পোল্ট্রি।

–এগুলা না করলে গ্রামের দীর্ঘদিন অপরিষ্কার বাথরুমে বেধে রাখবো একমাস।
তোর সাথে এটাই হওয়া উচিত।মন চাচ্ছে একটা থাপ্পড় মেরে ফেলে দেই।পোল্ট্রির মতো খাওয়া আর সোয়া ছাড়া কোন কাজ টা পারিস তুই।হুহ!পোল্ট্রি বলাতে উনার সম্মান গিয়েছে।

–আমি একটু রাগি দৃষ্টিতে কপাল কুচকে তাকালাম।।

–উনি বললেন,ঠিক আছে তুই পোল্ট্রি না দেশী মুর মগী হ্যাপি।নাকি তাও রেগে যাবি।ওকে ফাইন মোরগ,এটাই শুনতে চাস তো তুই মোরগ।তাও খাটি খান বংশের অত্যাচারী মোরগ।এমনি এমনি তো আর বলি নি মহিলা আক্তার পুরুষ।

–উনাকে কিছু না বলে ফ্রিজ থেকে ডিম নিয়ে আবার সিদ্ধ করতে দিলাম,রাগে রাগে ৩০ টা ডিম সিদ্ধ করতে দিলাম।সিদ্ধ প্রায় হয়ে এলে উনি এসে দেখেন ৩০ টা ডিম সিদ্ধ করছি।উনি ফোন স্ক্রল করছিলেন সাইডে দাঁড়িয়েই ত্রিশ টা ডিম দেখে চোখ বড় বড় করে আমার দিকে তাকিয়ে ভ্রু উচিয়ে বললেন,ডিম কয়টা?

–ত্রিশ টা।

–আমার কি বিয়ের বৌভাত হচ্ছে যে ত্রিশ টা ডিম সিদ্ধতে দিয়েছিস।

–আপনার মতো একজন বিশিষ্ট ফ্রিল্যান্সার এর বাসায় গেস্ট আসছে তারা একেক জন কম করে হলেও পাঁচটা ডিম খাবে।তা হলে কি আপনার মান সম্মান থাকবে বিহান ভাই।এত কিপ্টা আপনি ভাবাজ যাচ্ছে না।

–তোর বাপ কি আমাকে ডিমের ফ্যাক্তরী যৌতুক দিয়েছে যে এত গুলা ডিম সিদ্ধ দিয়েছিস।৪০ টা ডিম এর ফায়দা উঠাইলি।এই ডিম তোর ই খেতে হবে।

–আমি কোনো কথা না বলে,বিভোর ভাই এর দিকে খোসা ছড়ানো ডিম এগিয়ে দিয়ে বললাম বিভোর ভাই খান আপনি।মানুষ কি আপনাকে বিনা পয়সার চাকর পেয়েছে নাকি।খেতে না দিয়ে অত্যাচারী দের মতো কাজ করাচ্ছে।

–বিভোর ভাই ডিমের কুসুম খেতে লাগলেন একটা করে আর বললেন যাক দিয়া আমার খাওয়ার একটা ব্যবস্থা করে দিলি।আমি কুসুম ভালো খাই,তুই খাবি দিয়া।
বিভোর এর মুখ থেকে এক টুকরো কুসুম পড়ে যেতেই বিভোর ভাই বললেন,কার পরাণে চেয়েছে।ভাই আমার যেনো ডায়রিয়া না হয় যার পরাণে চাইছে সে খা প্লিজ।

–আমি বিহান ভাই দিকে তাকিয়ে বললাম,বিভোর ভাই কার পরাণে চাইছে সেটা তার মুখ দেখেই বোঝা যাচ্ছে।

–বিভোর ভাই বললেন,বিহান পরাণে চাইলে খেয়ে নে বলেই ডিমের কুসুম বিহান ভাই এর দিকে ধরলেন বিভোর ভাই।

–বিহান ভাই একটা কুসুম হাতে নিয়ে দাঁতে দাঁত চেপে বললেন,ভাই বোন মিলে আমাকে ফকির বানিয়ে ছাড়বি।
উনি আমার দিকে তাকিয়ে বললেন একটু এদিকে আয় তো দিয়া।বিছানার চাঁদর টা চেঞ্জ করতে হবে।

–আমি আপনার সাথে যাবো না কোথাও যাবো না।

–বিভোর ফোন চাই তোর?

–প্লিজ ভাই ফোন টা দে।

–আমার রুমে টেবিলের ডয়ার টা খুলে দেখ আছে।

বিভোর ভাই খুশি মনে ফোনের সন্ধানে গেলেন।

–উনি ভ্রু উচিয়ে তাকিয়ে আছেন আমার দিকে।

–আমি দুই ভ্রু কুচকে তাকিয়ে ভাবছি কি করতে চাইছেন কি উনি।

–আমার দিকে এক’পা দু’পা করে এগিয়ে আসছেন প্যান্টের পকেটে দুই হাত গুজে।এগোতে এগোতে বললেন,আমি ডাকলে যাওয়া হলো না কেনো?..

–আমি কাঁপতে কাঁপতে বললাম ভ,,ভয়ে।

–ভয় করে তাইনা দিয়া?খুব ভয়!

–হুম!মাথা নেড়ে ইশারা করলাম।

–এখন ভয় করছে না দিয়া।

চোখে মুখে ভয় আমার,উনি কিছুতো করতে চলেছেন কিন্তু কি করতে চলেছেন।কি করতে চান উনি।

আমি কিচেনের ওয়ালে পিঠ ঠেসে দাঁড়িয়ে আছি।উনি এসে কিচেনের ওয়ালে দুই হাত দিয়ে আমাকে উনার দুই হাতের মাঝে রেখে ঝুকে দাঁড়ালেন আমার দিকে।উনার মতলব টা ঠিক ভাবে বুঝে উঠতে পারলাম না।আমি ড্যাব ড্যাব করে উনার দিকে তাকিয়ে রইলাম।

মুহুর্তের মাঝেই এমন ঘটনা ঘটে গেলো যার জন্য আমি এতটুকুও প্রস্তুত ছিলাম না।উনি আমার মাথার পিছনে হাত দিয়ে আরেক হাত দিয়ে আমার হাত ধরে উনার মুখের ডিমের কুসুম সম্পূর্ণ ওষ্ট আমার মুখে দিয়ে ডিমের কুসুম আমার মুখে দিয়ে দিলেন।অতঃপর বললেন,আমার পরাণে চাইছিলো তাইনা?আমার সাথে জিদ করে এত্ত গুলা ডিম নষ্ট করার শাস্তি দিলাম।যদিও আমি জানি এমন মিষ্টি শাস্তি পেতে সবার ই ভালো লাগে।তোর ও ভাল লেগেছে তাইনা দিয়া।

আমি রান্না ঘর থেকে দৌড়ে বাইরে এসে বেলকনিতে দাঁড়িয়ে ওয়াক ওয়াক করছি।চোখে পানি টলমল করছে।কি যে ঘেন্না লাগছে বলার বাইরে।এক্ষুণি মনে চাইছে ঠোঁট গাল সব কেটে ফেলি।ইয়াক থু,ইয়াক থু।বার বার ওয়াক ওয়াক করেই যাচ্ছি।পানি দিয়ে কুলি করেই যাচ্ছি।উনি আমার পাশে ঝুঁকে দাঁড়ালেন বেলকনিতে।

–আমার দিকে তাকিয়ে বললেন,”ওহে বালিকা আপনি কি বাবুর আম্মু হতে চলেছেন।বাট হাউ”

–আমি ক্ষীপ্ত নয়নে উনার দিকে তাকিয়ে বললাম অসভ্য লোক একটা,আমাকে থু থু খাইয়ে দিয়েছেন।

–এই টুকুতেই যদি প্রেগন্যান্ট হয়ে যান,বাকি টুকুতে কি হতো আই ডোন্ট নো।এই মুহুর্তে শ্বশুরের মেয়ে যদি প্রেগন্যান্ট হয় মানুষ ভাববে দিয়ার আম্মুর জামাই নিশ্চিত কিছু করেছে।আম্মুর এই নিষ্পাপ ছেলেটার হবে যত দোষ।

–আমি রেগে মেগে তাকিয়ে বললাম,আর একটা কথা ও বললে আপনার গায়ে বমি করবো।যদি মামিকে না বলেছি তো কি বলেছি দেইখেন আপনি।

–উনি আমার দিকে টিস্যু এগিয়ে দিয়ে বললেন, ওহে বিবাহিত অসভ্য বেয়াদপ প্রেগন্যান্ট মহিলা এই নিন টিস্যু। আপনার নাকের পানি চোখের পানি মুছে ফেলুন।না হলে প্লাবিত হবে এ ভুবন।

আমি টিস্যু নিয়ে উনার বুকে ধাক্কা মেরে রুমের মাঝে চলে গেলাম।

চলবে,,

#এক_বৃষ্টিস্নাত_সন্ধ্যা(সিজন ২)
২৭.
#WriterঃMousumi_Akter

–এই অবেলায় মেঘ কেনো,বৃষ্টি কেনো,এখন তো বৃষ্টির কোনো সিজন ই নয়।প্রকৃতি ও তো বৃষ্টির অভাবে খা খা করছে না তারাও তো উত্তপ্ত নয় তাহলে কেনো এই বৃষ্টি। শুনেছি মানুষ আর প্রকৃতি হাঁপিয়ে উঠলে তাদের প্রার্থনায় তাদের তৃষ্ণা মেটাতে মেঘ বৃষ্টি হয়ে ঝরে পড়ে প্রকৃতির বুকে।হুমায়ুন আহমেদ এর বৃষ্টিবিলাস বই টা হাতে নিয়ে কম্বলের ভেতরে পা দিয়ে বসলাম আমি।সেদিন রিয়া দিয়েছিলো আমার জন্মদিনে।আমি যে ভীষণ বৃষ্টিবিলাসী রিয়া সেটা জানে।আমার সাথে বৃষ্টির ভীষণ ভাব।এই কিশোরী মনে বৃষ্টি ভীষণ দোলা দেয়,তাদের সাথে ভিজে নিজেকে প্রাণবন্ত করে তুলেছি অসংখ্যবার।বাইরের ঝড়ো বাতাসে জানালার পর্দা উড়ছে এলোমেলো ভাবে,বই হাতে নিয়ে তাকিয়ে আছি পর্দার বাইরে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষ টার দিকে।বেলকনিতে দুই হাত ঝুঁকে দাঁড়িয়ে আছেন বিহান ভাই।উনি তো আমি ভিজলে বকা দেন, এখন নিজেই ভিজছেন কেনো?পানির ছেচ লাগছে না উনার গায়ে। নাকি কি বুঝতেই তো পারছি না।আমি জোরে ডাকলাম বিহান ভাই ওখানে দাঁড়িয়ে আছেন কেনো?ভিজে যাবেন তো।আমার কোনো কথার ই উত্তর দিলেন না উনি।

–আমি বই টা রেখে জানালা দিয়ে বাইরে তাকালাম।রাস্তায় রোড লাইটের আলোতে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে ঝুম বৃষ্টি শুরু হয়েছে।মানুষ জন ছাতা হাতে রাস্তার এপাস ওপাস করছে।দোকানের ছাউনির নিচে দাঁড়িয়ে বৃষ্টি থেকে রক্ষা করছে নিজেকে মানুষ জন।এও অসময়ে এমন বৃষ্টি কেউ আশা করে নি।বৃষ্টির জন্য ঠান্ডা কমে গিয়েছে অনেক টা।বোঝায় যাচ্ছে না এটা শীতকাল।উনার নিশ্চয়ই কফি লাগবে কিন্তু বলতে পারছেন না।উনি কি চিন্তিত উনার সেউ গেস্টদের জন্য তারা আসতে পারবে কিনা সেটা নিয়ে।আমি পানি গরম করতে দিয়ে চিনির কৌটা খুজে চলেছি।পানি ফুটে গেলে কফি দিয়ে দিলাম মনে হচ্ছে কফির পরিমান অনেক বেশী দেওয়া হয়ে গিয়েছে।এটা তো অনেক বেশী তিতো হয়ে যাবে।এইজন্য চিনি একটু বেশী ই দিলাম।এই প্র‍থমবার উনি না চাইলেও নিজে থেকে উনাকে ভেবে কিছু একটা করছি।উনি কি খাবেন নাকি বকে ঝকে বলবেন আমি কি কফি চেয়েছি তোর কাছে দিয়া।আর এটা কি কফি বানিয়েছিস তুই,এটা তো মুখেও দেওয়া যাচ্ছে না।দেখা গেলো কফির মগ টাও ভেঙে ফেললো।মানুষ টা অনেক অদ্ভুত, উনাকে বোঝা অতটাও সহজ নয়।জীবনে প্রথম এত যত্ন আর ভাল করে কফি বানাচ্ছি শুধু একটু উনার প্রাংসা পাওয়ার জন্য।কবে যে উনি সম্পূর্ণভাবে আমায় বুঝবেন বুঝাবেন উনার মনের কথা।সেই জন্মদিনের রাতের রাত টা ই কি স্মৃতি হয়ে আজীবন থাকবে আমার জীবনে।আমার উপর কি শুধুই করুণা করেছিলেন উনি।কি ভেবে নিবো আমি।তারপর আর একটা দিন ও উনি আমার কাছে উনার কোনো অনুভূতি প্রকাশ করেন নি।উনি কি মজা পান এমন করে।উনি কি এটা বোঝার চেষ্টা করেন যে দেখি দিয়া কি করে।

–কফির মগ টা নিয়ে উনার পাশে গিয়ে দাঁড়িয়ে কফির মগ টা উনার দিকে এগিয়ে দিয়ে বললাম এটা মিস করছিলেন তাইনা?

–উনি আমার দিকে খুব আশ্চর্যজনক ভাবে ফিরে তাকালেন।যেনো কোনো ভাবনায় বিভোর ছিলেন।ঠোঁটের কোনে মিষ্টি হাসি এনে বললেন,থ্যাংক ইউ সো মাস পিচ্চি।

আবার এই পিচ্চি ডাক।কি আছে এই পিচ্চি ডাকে।উনি অনেক কিছু বলেই ডাকেন আমায়।কিন্তু বিশেষ কিছু আছে এই পিচ্চির মাঝে।যে ডাক শুনলেই বুকের মাঝে শুরু হয় ধুকপুকনি আর প্রেমবর্ষন।

— উনার পাশে দাঁড়িয়ে বললাম,এই অবেলায় বৃষ্টি কেনো বলুন তো?

–কফির মগে চুমুক দিতে দিতে বললেন,কারণ বৃষ্টি কারো ভীষণ প্রিয় তাই।প্রার্থনা করেছিলাম মেঘের কাছে তার আঙিনায় বৃষ্টি আসুক,ঝুম বৃষ্টি সে বৃষ্টি দেখে হাসুক,হাতের তালুতে কয়েক ফোঁটা বৃষ্টি নিয়ে আমায় ভাবুক।

–তখন আমি বেলকনিতে হাত বাড়িয়ে হাতের তালুতে বৃষ্টির ফোঁটা নিয়ে তাকেই ভাবছিলাম।কি আশ্চর্য আর অদ্ভুত তাইনা?আমি যা ভাবছি উনিও তাই বলছেন।
একজনের জন্য বৃষ্টিকে আসতে হলো কেনো বলুন তো।এখন তো আর প্রকৃতি তৃষ্ণার্ত নয়।তারা কি হাঁপিয়ে উঠেছে যে বৃষ্টি লাগবে।

–উনি আবার আমার দিকে তাকালেন,কফিতে চুমুক লাগিয়ে বললেন,প্রেমিক হৃদয় যে তৃষ্ণার্ত।প্রকৃতির তৃষ্ণার থেকে প্রেমিক হৃদয়ের তৃষ্ণা বড় ভয়াবহ তৃষ্ণা পিচ্চি।এ তৃষ্ণায় বুক ফাটে প্রতিনিয়ত কিন্তু প্রকাশ করা যায় না।কেবল মাত্র তার প্রেয়সীর ভালবাসা পারে এই তৃষ্ণা থেকে অব্যহতি দিতে।

আমি মৌন রইলাম উনার কথা শুনে।

–উনি আবার বললেন,তুমি বৃষ্টিবিলাসী তাইনা?বৃষ্টি অনেক প্রিয় তোমার।

–অনেক প্রিয়।

উনি আমায় তুমি ডাকলেন কেনো?কেঁপে উঠলো শরীর আমার,বুকের মাঝে দুরুম করে আওয়াজ হলো।উনি এতটা কোমল তার সাথেও কথা বলতে পারেন।উনার তুমি সম্মোধন এ এত নমনীয়তা।এই ভীষণ বৃষ্টি,হুডির হাতা গোটানো,হাতের কফির মগ নিয়ে কেউ জিজ্ঞেস করছে বৃষ্টিবিলাসী তুমি।আমার বৃষ্টিবিলাসী মনে শুরু হলো ভীষণ তুফান।

–তাহলে ধরে নাও এই বৃষ্টি তোমার জন্য।

–ভিজছেন কেনো এইভাবে বিহান ভাই?

–তুমিও তো ভিজছো?

–কারণ আমি বৃষ্টিবিলাসী।

–সে বৃষ্টিবিলাসী তাই বৃষ্টি আমার ও ভীষণ প্রিয়।

–আপনার ঠান্ডা লেগে যাবে,আর কয়েক দিন পরে আপনার এক্সাম কিন্তু।

–তার ও ঠান্ডা লাগবে,?

–এই যে তার তার করছেন কে সে?

–শ্বশুরের মেয়ে।

–সে কে?

–যার মেয়েকে বিয়ে করেছি।

–কি অদ্ভুত উত্তর তার।হাত ধরে টেনে এনে উনার গায়ের পানি ঝেড়ে দিতে শুরু করলাম।উনি অবাক হয়ে তাকালেন আমার দিকে।

–আমি ভ্রু নাচিয়ে বললাম কি?

–এত বৃষ্টির মাঝেও আমার মন মেঘলা গুমট কেনো বলতে পারো দিয়া।

–কেনো গুমট বিহান ভাই।কফিটা কি ভালো হয় নি?আমি অনেক যত্ন করেই বানিয়েছি আপনার জন্য।

–এই কফি ছিলো আমার লাইফে খাওয়া বেষ্ট কফি।উনি আমার হাত ধরে বললেন এই হাতের ছোয়া যে কফিতে সে কফি কি কখনো খারাপ হতে পারে?এটার টেস্ট বেষ্ট ছিলো।অতি আনন্দ আর লাজুকতায় মৌন রইলাম আমি।

–উনি আমার দিকে তাকিয়ে আবার ও বললেন,মিনারের একটা গান মনে পড়লো শুনবে?আমি কখনো গান গাইতে পারিনা।তবে তুমি শুনলে এক কলি শুনাতে পারি।

আমি বেশ অবাক হলাম এই মানুষ টা গান ও গাইতে পারেন।আমার মুখের দিকে তাকিয়ে উনি বুঝে গেলেন উনার গান শুনতে আমি কত বেশী আগ্রহী।

হাতের মুঠোয় পানি নিয়ে আমার মুখে ছিটিয়ে দিয়ে গান শুরু করলেন,

“তোর কাছে যেতে চাই হৃদয় মানে না বারণ
বৃষ্টির শহরে মেঘলা আমার এ মন
তুই কি আমার মতো ভাবিস আমায়
ভালবাসা খুজে নিস জলের ছোয়ায়।
তোকে ছাড়া হয়নাতো কোনো উৎসব
তুইতো আমার সব।”

গান শেষ করে বললেন,’এই গানের মানে যদি তুমি খুজতে চাও তাহলে অনেক কিছু পেয়ে যাবে।বলেই উনি রুমের ভেতরে চলে এলেন আমার গালে আদরের সাথে হাত ছুইয়ে।’

যদি বলি খুব অবাক হয়েছি তাহলে বিরাট বড় ভুল হবে।আমি ভীষণ অবাক হয়েছি।মানুষ টা নতুন নতুন ভাবে আমাকে উনার প্রতি মুগ্ধ করতে পারেন কিভাবে।এই ট্যালেন্ট টা এই পৃথিবীতে উনি ছাড়া আর কারোর ই নেই।

–যাওয়ার সময় কফির মগ আমার হাতে দিয়ে গেলেন উনি।উনার কফির মগ আমার হাতে।এতটা তৃপ্তি করে উনি কফি খেয়েছেন কফি কি সত্যি এতটা সুন্দর হয়েছিলো।এক চুমুক কফি অবশিষ্ট ছিলো।আমি উনার ওষ্ট স্পর্শ করা জায়গা মুখ দিয়ে কফি অবশিষ্ট কফিটুকু নিজের মুখে নিতেই মুখ থেকে কফি ছুড়ে ফেলি।এতটা লবন,এত বাজে ভাবে লবন হয়েছে এই কফিতে।এই লবনাক্ত কফি উনি কিভাবে খেলেন।এটা তো মুখেও দেওয়া যাচ্ছে না।উনি এতটা বাজে খাবার তো সহ্য করার মতো মানুষ উনি নন।উনি এই অতিরিক্ত লবনযুক্ত কফি কিভাবে খেলেন।তাও আবার বললেন,এটা বেষ্ট ছিলো।

আমি দ্রুত রান্না ঘরে গিয়ে দেখি লবনের কৌটায় চিনির মুখ লাগানো।নিশ্চয়ই বিভোর ভাই উল্টা পালটা করেছেন।

–রুমের ভেতরে গিয়ে দেখি বিহান ভাই গায়ের আধভেজা কাপড় চেঞ্জ করে নিয়ে ফোন স্ক্রল করছেন।আমি উনার কাছে গিয়ে বললাম আত্মীয় আসবে কিভাবে এই বৃষ্টিতে।

–ওরা আসবে না,বলে দিয়েছে।এই বৃষ্টিতে ওরা আসতে পারবে না।

–তাহলে এই খাবার এর কি হবে?

–কি আর হবে নিজেরা খেতে হবে।

–কফি কি সত্যি ভাল ছিলো।

–হুম অনেক সুন্দর ছিলো।

–এত চিনি ছিলো কিভাবে খেলেন।

–ইচ্ছা করে চিনি দিয়েছিলে বুঝি।

–এম্মা না না,বুঝি নি চিনি নাকি লবন ছিলো।

–আমি জানি তুমি বুঝতে পারো নি,তাইতো কিছু বলিনি।তবে তোমার এত যত্নে বানানো কফি সত্যি অসাধারণ ছিলো দিয়া।যদি বলতাম লবন ছিলো মন খারাপ করতে।তাই খেয়ে নিয়েছি।

–আমি খুব অবাকের সাথেই উনার দিকে তাকিয়ে রইলাম।উনি ফোন স্ক্রল করেই যাচ্ছেন।আমার দিকে তাকিয়ে বললেন, খেয়ে সুয়ে পড়ো, হ্যাঁ কাপর চেঞ্জ করে নাও।আমার এসাইনমেন্ট করতে হবে।

চলবে,,,,,