এক বৃষ্টিস্নাত সন্ধ্যা পর্ব-৪০+৪১+৪২

0
1601

#এক_বৃষ্টিস্নাত_সন্ধ্যা(সিজন২)
৪০.
#WriterঃMousumi_Akter

‘বিহান ভাই চোখ মুছে আমার দিকে তাকালেন।’

–উনার চোখে মুখে ভীষণ অসহায়ত্ত্ব,চক্ষুদ্বয় পানিতে ভিজে লাল রক্তবর্ণ ধারণ করে আছে।মনে হচ্ছে দীর্ঘদিনের দেখার তৃষ্ণা উনার চোখে।এক ভাবে পূর্ণ দৃষ্টি নিক্ষেপ করে তাকিয়ে আছেন আমার দিকে।কি অদ্ভুত মায়া উনার চোখে।এত মায়া লুকিয়ে ছিলো উনার মাঝে,যা স্পষ্ট ফুটে উঠেছে উনার চোখের গভীর চাওনিতে।এইভাবে আর কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকলে এই মায়ায় প্রেমের মরণ হবে আমার নিশ্চিত।

‘মামি আমার পাশেই বসা ছিলো,আর বিহান ভাই ফ্লোরে মামির কোলে মাথা দিয়ে বসে ।মামি আমার মাথায় হাত দিয়ে বললো,এখন কেমন লাগছে মা?শরীর ঠিক লাগছে তো।’

‘আমি মুখ ফুটে উত্তর না দিয়ে মাথা নেড়ে বুঝালাম ভাল লাগছে।’

‘আমাদের কত চিন্তা হচ্ছিলো মা।এইভাবে বারবার বমি করছিলে বার বার জ্ঞাণ হারিয়ে ফেলছিলে। আমরা সবাই ভয় পেয়ে গেছিলাম।এত সময় তোমার মা -বাবা কাকা-কাকিরা সবাই ছিলো।কিছুক্ষণ আগেই বাসায় গিয়েছে আমি জোর করে পাঠিয়ে দিয়েছি।সকালে আবার আসবে,তুমি ঘুমোচ্ছিলে বলে আর ডাকে নি।’

–বিহান ভাই ফ্লোরে হাঁটু গেড়ে বসেই রইলেন।উনার দৃষ্টি আমার দিক থেকে কোথাও সরছে না।এত বড় ছেলে কিনা নিজের মায়ের কাছে তার ভালবাসার কথা জানালো।কি নি কি ভাবছেন মামি তার ঠিক আছে।নিজের মায়ের কাছে কেউ এইভাবে ভালবাসা প্রকাশ করতে পারে।উনার মতো মানুষ এর দ্বারা এটা কিভাবে সম্ভব হলো।উনি তো নিজের কোনো কথা কারো সাথে শেয়ার করেন না।আর প্রেম ভালবাসার কথা এইভাবে প্রকাশ করলেন।আসলেই কি এটা বিহান ভাই।আই কান্ট বিলিভ দিস। বিহান ভাই আমাকে ভালবাসেন, উনি আমাকে ভালবাসেন।আমি যা শুনেছি আজ তা কি সত্য ছিলো নাকি আমার ঘুমের ঘরের দুঃস্বপ্ন ছিলো নাকি আমার রোজকার কল্পনা।আমি অবাক দৃষ্টি পানে নির্বিকার তাকিয়ে রইলাম উনার অশ্রুসিক্ত অসহায় চোখের পানে।যে কথাটা শুনবো বলে সেই ছোট বেলা থেকে অপেক্ষা করেছি,বিভিন্ন ভাবে শোনার চেষ্টা করেছি অনেক বার বকা খেয়েছি, অনেক বছর প্রতিক্ষা করেছি,অসংখ্য বার রাগ করেছি,কেঁদেছি,কষ্ট পেয়েছি,উনি অন্য কাউকে ভালবাসে ভেবে গভীর ক্ষত মনে নিয়ে ঘুরেছি। আমার সেই সারাজীবন ভালবেসে যাওয়া মানুষ টা আমাকে মানে আমাকেই ভালবাসতেন।নিমিষেই ঠোঁটের কোনে হাসি ফুটলো আমার।মনের ভেতরে ডানা ঝাপটে মরা পাখিটা নিমিষেই উড়া শুরু করলো ভালবাসার আকাশে ডানা মেলে।উনার ভেতরে এত গভীর ভালবাসা সব আমার জন্য ই ছিলো।কিন্তু উনি আমাকে বুঝতেই দিলেন না।শ্বশুরের মেয়ের নামে বলে যাওয়া গভীর ভালবাসার প্রকাশ সব টায় আমার জন্যই ছিলো।মাঝে মধ্য ভেবেছি সে হয়তো আমি কিন্তু উনার গম্ভীরতায় সিওর হতে পারিনি ভয়ে।কারণ ওই মানুষ টাকে কারো পক্ষে বোঝা সম্ভব নয়।

“মামি কে বললাম,তোমার ছেলের কি হয়েছে মামি।চোখ মুখ এমন দেখাচ্ছে কেনো?”

“বিহান ভাই উঠে দাঁড়িয়ে বললেন,আম্মু তোমার ছেলের বউ কে বলে দাও সে যেনো তার বাবার বাড়ি চলে যায়।তোমার এই জেদী খারাপ ছেলেটার সাথে আর থাকতে হবেনা।ফুপ্পির আদরের মেয়ে না খেয়ে খেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়বে ফুপ্পি সেটা সহ্য করতে পারবে না।আমি চাই না আমার জন্য কেউ অসুস্থ হয়ে পড়ুক।অপরাধী হয়ে বেঁচে থাকতে কষ্ট হচ্ছে,ভীষণ কষ্ট হচ্ছে আম্মু।”

“মামি হালকা হেসে বললেন,দুজন কে আর ঝগড়া করতে হবে না।ঝগড়া অনেক হয়েছে।এখন অনেক রাত হয়েছে।আর দিয়া যদি কখনো দেখেছি না খেয়ে খেয়ে অসুস্থ হয়েছিস না পিটিয়ে সোজা করবো।শোন মা সম্পর্কে মান অভিমান রাগ এগুলো থাকবেই।পানির মতো কোনো সম্পর্ক চলে না মা।মান অভিমান থাকবে তাই বলে কি না খেয়ে থাকতে হবে।বিহান তোর ফুপ্পিকে কল দিয়ে দিয়ার সাথে কথা বলিয়ে দাও।আর এখন আমি যাচ্ছি টেবিলে খাবার রাখা খেয়ে নিও দুজনে।
মামির চোখ মুখে দেখে ক্লিয়ার বুঝলাম যে মামি আমাকে আর বিহান ভাই কে একা ছেড়ে দিলেন।আম্মু বাবা নিশ্চয়ই এইজন্যই বাড়ি ফিরে গিয়েছে আমি আর বিহান ভাই এক সাথে সময় কাটাতে পারি।সবাই আমাদের সম্পর্ক নিয়ে কত ভাবে।বিহান ভাই আম্মুর নাম্বারে কল দিয়ে আমার কানে দিলেন।

‘ওপাস থেকে আম্মু বললো,এখন কেমন লাগছে মা।’

‘আম্মু এখন ভাল লাগছে।’

‘তোমার বাবা আমি আবির সবাই চিন্তায় পাগল হয়ে যাচ্ছি।হঠাত কি হয়েছে মা।’

‘জানিনা আম্মু।হঠাত কি হলো বুঝলাম না।’

‘বিহান কোথায় দিয়া।’

‘আমার পাশেই আছে আম্মু।’

‘বিহানের সাথে ভাল ভাবে কথা বলো মা।তোমার অসুস্হতায় বিহান নিজেকে অপরাধী ভাবছে। আমার হাত ধরে কেঁদেছে বিহান।বিহান তো কাঁদার মতো ছেলে না মা।যা হয়েছে ভুলে যাও মা।এখন ঘুমিয়ে যাও আর রাত জেগো না।’

ফোন টা কেটে দিয়ে বিহান ভাই এর হাতে দিয়ে দিলাম।

–চুপচাপ বসে রয়েছেন বিহান ভাই।কিছুক্ষণ পরে উঠে গিয়ে আস্তে করে রুমের দরজা লাগিয়ে দিলেন।দুজনের কারো মুখে কোনো কথা নেই।উনার মুখে দুঃখী দুঃখী ভাব।উনি চেয়ার টেনে বেডের সাইডে বসলেন।কি বলবো বুঝতে পারছি না,উনিও কিছু বলতে গিয়েও পারছেন না।উনার চোখ দিয়ে দু’ফোটা পানি পড়লো গড়িয়ে।উনার চোখে পানি দেখে আমি ব্যাস্ত হয়ে উঠে বসতে গিয়ে কাত হয়ে পড়তে যেতেই উনি আমাকে ধরে বসলেন।মিহি কন্ঠে বললেন আস্তে দিয়া,পড়ে গেলে ব্যাথা লাগতো এক্ষুনি।

–আমি উনার মুখের দিকে তাকিয়ে বললাম,আপনার চোখে পানি কেনো বিহান ভাই।?

–উনি চোখ মুছে আমাকে বালিশ হেলান দিয়ে বসিয়ে বেডের সাইডে বসলেন।আমার দুই হাত উনার দুই হাতের মধ্য মুষ্টিবদ্ধ ভাবে ধরে আছেন।উনার চোখের পানি আবার ও গড়িয়ে পড়লো। উনি কাঁন্না ভেজা কন্ঠে বললেন,আই এ্যাম স””সরি দিয়া।আমি তোর সাথে মিসবিহেভিয়ার করে ফেলেছি অনেক।আমি খুব খারাপ দিয়া।অনেক খারাপ আমি রাগী,জেদী,। বাট আমি কি করবো বল,আমার রাগ আমি কন্ট্রোল করতে পারিনা।মাঝে মাঝে খুব বেশী রুড বিহ্যাভ করে ফেলি তোর সাথে।পরে ততটায় খারাপ লাগে আবার কিন্তু বোঝাতে পারিনা।আমি কথা বলিনি তোর সাথে কেনো জানিস তোর কাছে আমার গুরুত্ব বুঝতে। আমার কথা না বলায় তোর কষ্ট হয় কিনা বোঝার চেষ্টা করেছি ব্যাস এটুকুই।তুই অসুস্থ হয়ে পড়বি আমি ভাবতেও পারিনি।আমি ইডিয়ট না হলে নিশ্চয়ই বুঝতে পারতাম মিস্টার বিহান এর ইগনোরিং এ মিসেস বিহান কতটা কষ্ট পাবে।

“আমি ভেবেছিলাম আপনি আর কখনো কথা বলবেন না আমার সাথে।আমার ভীষণ কষ্ট হচ্ছিলো বিহান ভাই।আমি ভেবেই পাচ্ছিলাম না পুরা জীবন আমি কিভাবে কাটাবো আপনি কথা না বললে।”

“তুই কবে বোঝা শিখবি দিয়া আর বড় হবি বা কবে।কবে বুঝবি যে বিহানের সেই ক্ষমতা নেই তোর সাথে সারাজীবন কথা না বলে থাকে।রাত নেই দুপুর নেই ঢাকা থেকে ছুটে এসেছি কেনো এসেছি দিয়া।এই শহর আমাকে চুম্বক এর মতো টেনেছে।এই শহরের সেই চুম্বক টায় তুই।যার টানে আমি ঢাকা ছেড়ে আসতে বাধ্য হয়েছি।জানিস দিয়া মাঝে মাঝে মধ্য রাতে অস্হিরতা বিরাজ করেছে আমার মাঝে।হঠাত ঘুম ভাঙতেই মনে পড়তো তোর কথা।তোকে দেখতে ভীষণ ইচ্ছা করতো।মনে পড়ার মতো অনেক কিছুই ছিলো তবুও আমার মনে পড়তো তোর কথা।সেই মধ্যরাতে কফির মগ হাতে নিয়ে ভাবতাম কেনো ওই পুচকির কথা মনে পড়ে বার বার।বিষাক্ত তিতো কফি খেয়ে হজম করে ফেলতাম তোর ভাবনায় বুঝতেই পারতাম না কি খাচ্ছি।খাওয়ার মধ্য মনে পড়েছে তোর কথা, খাবারে পানি দিয়ে উঠে গিয়েছি।আর ভেবে চলেছি ওই পুচকি আমার মস্তিষ্কে কি প্রভাব ফেলে দিয়েছে সব কিছুতে ওর কথায় মনে পড়ে।ছুটে এসেছি ঢাকা থেকে উস্কো খুসকো ভাবে।তোকে ভেবে ঘুমহীন কয়েক টি রাত পার করার পর অস্হির হয়ে ছুটে এসেছি, তোকে দেখার পর নড়াইল এসে শান্তিতে ঘুমিয়েছি।এত কিছুর পরেও বুঝিস নি তুই আমার মানসিক শান্তি।তোকে ভুলে থাকা সম্ভব নয়।”

“সরি বিহান ভাই,।আমি আর কখনো মিথ্যা বলবো না।ক্ষমা করে দিন আমায়।সব ভুল আমার।আমি অনেক বড় অপরাধ করে ফেলেছি।এক আকাশ আবেগ নিয়ে কেঁদে কথা গুলো বললাম উনাকে।”

ক্ষমা করবো এক্ষুণি খাবার খেতে হবে।দু’দিনের মাঝে সুস্থ হয়ে আগের মতো কিচির মিচির করতে হবে।

চলবে,,

#এক_বৃষ্টিস্নাত_সন্ধ্যা(সিজন২)
৪১.
#WriterঃMousumi_Akter

মেঘের ভীষণ গর্জনে ঘুম ভেঙে গেলো আমার।ঘুম ভাঙতেই দেখি বিহান ভাই এর হাতের উপর সুয়ে আছি আমি।উনার এক হাতের উপর আমার মাথা রাখা অন্য হাত আমার পেট উপর দিয়ে আবদ্ধ করে রেখেছেন।নিশ্চিন্তে ঘুমোচ্ছেন আমাকে আগলে ধরে।আমার পাশে পৃথবীর শ্রেষ্ঠ মানুষ টা সুয়ে আছে আর পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ ভালো অনুভূতি এখন আমার মনের মাঝে বয়ে চলেছে।উনার নাকের ধীর গতির নিঃশ্বাস আচড়ে পড়ছে আমার নাকে মুখে,উষ্ণ এই নিঃশ্বাসে আমি উনাকে অনুভব করে চলেছি।হঠাত লোড শোডিং হয়েছে,বাইরে ঝোড়ো হাওয়া।বাইরে প্রচন্ড মেঘ তবুও যেনো গরমের উত্তাপ কমছে না।সাইড থেকে পাখা নিয়ে হালকা বাতাস করছি উনার মুখে যেনো গরমে ঘুম না ভেঙে যায় উনার।কেননা উনি একটুও গরম সহ্য করতে পারেন না।ওয়ালের দিকে নজর দিলাম ঘড়িতে সকাল সাত টা বাজে।বাইরে কেমন গুমট হয়ে আছে, এত সকালেই মেঘের কালো ছায়া ছেয়ে গিয়েছে নীল আকাশ।।থমথমে আকাশ কালো মেঘে আনাগোনা।প্রায় আধাঘন্টা ধরে সুয়েই আছি। বাইরে ঝোড়ো বাতাস শুরু হয়েছে লন্ডভন্ড করে তুলেছে সব।।ঘরের পশ্চিমপাশের জানালা খোলা বাইরে থেকে ধুলা বালি আসছে ঘরে।আমি আস্তে করে উঠতে গেলাম বিহান ভাই এর হাত টা নিচে রাখলাম।উঠতে গিয়েই দেখি উনার ঘড়িতে আমার গলার চেইন আটকে গিয়েছে।অনেক ক্ষণ ধরে চেষ্টা করছি কিন্তু ছড়াতে পারছি না।জোরে টানলে উনার ঘুম ভেঙে যেতে পারে।এরই মাঝে উনার ঘুম ভেঙে গেলো।বাইরে যেনো তুফান উঠেছে, জানালার পর্দা এলোমেলো ভাবে উড়ছে,জানালার পাল্লা খুব জোরে বাড়ি দিচ্ছে মনে হচ্ছে এখুনি ভেঙে যাবে।জানালার পাশেই বেড রাখা যার জন্য সম্পূর্ণ বাতাস আমাদের শরীরের লাগছে আর বেডে পড়ছে।বিহান ভাই চোখ মেলে তাকালেন আমার মুখের দিকে তাকিয়ে উনার ঘড়ির দিকে তাকালেন।

“মিষ্টি হেসে বললেন,গুড মর্নিং মিসেস বিহান।এখন কেমন লাগছে।”

“গুড মর্নিং বিহান ভা,,”

“উনি আমার মুখে আঙুল ঠেকিয়ে বললেন, নো ভাই মিসেস বিহান।জাস্ট বিহান তোমার মুখে কত বেশী কিউট লাগে তুমি জানো?ভুল করেও তো বলতে পারো,নাম ধরে ডাকতে পারো।”

কি হয়ে গিয়েছে বিহান ভাই এর।কি আজিব কথা উনার মুখে।কোনো রাগ নেই, আমাকে তুমি বলছেন।অনেক এমাজিং লাগছে আজ উনার কথা গুলো।আমি বিলিভ করতে পারছি না উনি এইভাবে কথা বলছেন।কাল রাতে আমাকে নিজ হাতে খাইয়ে দিয়েছেন,মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়েছেন অনেক বুঝিয়েছেন।তাছাড়া আমি জানি ভাই বলাটা খারাপ দেখায় বাট অভ্যাস হয়ে গিয়েছে। এত বছরের অভ্যাস এত সহযে কিভাবে চেঞ্জ করবো।বাট আই ট্রাই টু মাই বেষ্ট,খুব জলদী বিহান ভাই থেকে শুধু বিহান হয়ে যাবে উনি।

“কি দেখছেন এইভাবে উনি?চোখের পলক তো পড়ছেই না উনার।উনি আমার খোপা করা চুল গুলো খুলে দিলেন।এলোমেলো বাতাসে উড়ছে চুল।চুল উড়ে উনার চোখে মুখে আচড়ে পড়ছে।আমার মুখে পড়া চুল গুলো আঙুল দিয়ে সরিয়ে বললেন,আমি তোমাকে কিছু বলতে চাই আজ দিয়া।সারাজীবন ধরে না বলা কথা জমিয়ে রেখেছি।অল রেডি অনেক দেরি করে ফেলেছি।আরো দেরী করলে এই ছোট্ট জীবন থেকে অনেক গুলো ভাল সময় হারিয়ে যাবে।তোমাকে সারাজীবন ইডিয়ট বলি আসল ইডিয়ট তো আমি। ”

উনার এই না বলা কথা গুলো শোনার জন্য বহুকাল ধরে অপেক্ষা করছি আমি।বুকের মাঝে ধুকপুক শুরু হয়েছে তুফানের মতো।কাঁপা ঠোঁটে বললাম,

“কি কথা বলুন না।”

“উহু এখন না!এই ভাবে বললে তুমি কিছুই ফিল করতে পারবে না মিসেস বিহান।আজ সন্ধ্যায় বলবো।আমার জীবনের বিশেষ মানুষ টাকে বলা কথা গুলো বিশেষ স্পেশাল করে তুলতে চাই আমি।একটা শাড়ী পড়বা, দু’হাতে কাঁচের চুড়ি পরবা,খোলা চুলে এক গাল হাসি নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকবা।উফফ কল্পনায় ভাবা হয়ে গিয়েছে এই পিচ্চিকে শাড়িতে কত সুন্দর লাগবে।”

“উনার এহেম কথা শুনে শোনার আগ্রহ আরো বেড়ে গেলো আমার।উত্তেজিত হয়ে বললাম এখন একটু তো বলুন।”

“এখন কিভাবে বলবো মিসেস বিহান।পিচ্চির চুল এলো মেলো বাতাসে উড়ছে,পিচ্চির চোখ বেয়ে চুল পড়েছে মনে হচ্ছে ভুবন ভোলানো এক অপরুপ নারী আমার সামনে বসে।এখন আমাকে এই সৌন্দর্য উপভোগ করতে হবে,দারূণ ভাবে উপভোগ করতে হবে।ইউ নো হোয়াট দিয়া খোলা চুলে ন্যাচারাল লুকে নারীকে যতটা সুন্দর লাগে পৃথিবীর কোনো সাজেই এত সুন্দর লাগে।ন্যাচারাল লুকে একটা নারী একটা পুরুষ কে পিওর ভাবে আসক্ত করতে পারে।একজন পুরুষ সব সময় নারীর ন্যাচারাল লুকে অসাধারণত্ব খুজে বার করে।সেই ছোট বেলা থেকেই এই অসাধারণ রুপ দেখে দেখে মুগ্ধ আমি। তাইতো কোনো কৃত্তিম সাজ আর ঢাকা শহর আমাকে আটকে রাখতে পারে নি দিয়া।একজন প্রকৃত পুরুষ যদি একবার কারো মায়ায় আটকে যায় আর কখনো সে মায়া থেকে বের হতে পারে না।মায়া ভীষণ খারাপ দিয়া,ভয়ানক রকমের খারাপ।কারো রুপের প্রেমে পড়লে মোহ একসময় কাটবেই কিন্তু মায়ায় জড়ালে তা আর কাটিয়ে ওঠা যায় না।”

অবাক হয়ে উনার কথা শুনছি আমি।উনি চেইন টা ছাড়িয়ে আস্তে করে ছাড়িয়ে দিলেন।আমি বিছানা ছেড়ে উঠতেই উনি বললেন,তোমার হাত পাখার বাতাসে যতটা শীতলতা পেয়েছি পৃথিবীর কোনো যান্ত্রিক বস্তুর বাতাস আমাকে এতটা শীতল করতে পারেনি।আমি উনার কথার কোনো উত্তর দিলাম না শুধু হাসলাম।
আজ ঘুম থেকে উঠে ভীষণ সুস্থ লাগছে।কাল যে অসুস্থ ছিলাম তার কিছুই মনে হচ্ছেনা আমার।একদম ই ঠিক লাগছে শরীর।মন অসুস্থ থাকলে শরীর অসুস্থ হয়ে পড়ে যা বুঝলাম।আজকের সকালের জন্মের পরে পাওয়া সব সকালের থেকে উত্তম মনে হচ্ছে।
তুমুল বাতাসে মেঘ কেটে গিয়েছে।বাইরে পরিষ্কার হয়ে গিয়েছে।আকাশ আবার নীল হয়ে গিয়েছে।সকাল আটটা বাজতেই আম্মু বাবা ভাইয়া রিয়া, তোহা আপু, তিহান ভাইয়া,মেহু আপু, আয়রা সবাই চলে এসছে।বিহান ভাই এর মামি নানী ও এসছে কালিয়া থেকে।আমার এক অসুস্থতার বাহানায় বাড়িতে এক বিয়ে বাড়ি সমান উৎসব শুরু হয়েছে।কাজিন রা সব এক জায়গা হয়েছে, চাঁদের হাট শুরু হয়েছে।আম্মু আর মামি দুজনে রান্না করছে।আমাকে সুস্থ দেখে সবাই অনেক খুশী।ছাদে বসে সবাই ভীষণ আড্ডা জুড়ে দিয়েছে।আমি রিয়াকে ডেকে বললাম আমি অসুস্থ হলে বিহান ভাই কিভাবে পৌছালো।

রিয়া বললো,দিয়া তুই অসুস্থ হতেই আমি ঘাবড়ে গেছিলাম।তাকিয়ে দেখি পেছনে বিহান ভাই।বিহান ভাই বললাম দিয়া অসুস্থ কিভাবে বুঝলেন বিহান ভাই।বিহান ভাই বললেন,দিয়াকে কেমন অসুস্থ দেখাচ্ছিলো আর বলেছিলো ও আর ফিরবে না।তাই আমি ভয় পেয়ে ওর পিছ পিছ এসছিলাম।যদি রাগ করে কোথাও চলে যায়।দিয়া বিহান ভাই তোকে ওইভাবে দেখে কি যে করছিলো তুই না দেখলে বিশ্বাস করতে পারবি না।আমি তো তোকে না দেখে বিহান ভাইকে দেখছিলাম।কি পাগলামো টায় না করছিলো বিহান ভাই।কে বলে আমাদের বিহান ভাই এর মনে ভালবাসা নেই।নিজ চোখে দেখেছি বিহান ভাই ভালবাসা।

–সকালের রান্না শেষ হলে ডায়নিং এ ছয়জন বসলাম আর কয়েকজন ফ্লোরে পাটি বিছিয়ে। খাওয়ার মধ্য অনেক রকম গল্প চলছে।গল্প চলাকালীন সময়ে
এক ঘর লোকের সামনে বিহান ভাই এর নানী বললেন,কি ডাক্তার বাবু এত ডাক্তারী পড়লে এটা বুঝলে না বউ এর কি হয়েছে।

–বিহান ভাই সবার সামনে এমন প্রশ্নে বেশ খানিক টা অপ্রস্তুত হয়েই বললেন,কি বুঝবো নানু।

–কিছুই বুঝছো না তাইনা দাদা ভাই।

–নাতো নানু।একটু বুঝিয়ে বলো।

–দিয়া মা হতে চলেছে।দিয়াকে দেখেই বোঝা যাচ্ছে।আমি একবার দেখেই বুঝলাম আর তুমি বুঝলে না।

–বিহান ভাই জোরে কেশে উঠলেন।নাকে ঝাল উঠেছে উনার।বিভোর ভাই শয়তানি একটা হাসি দিয়ে উহুম শব্দ করে বিহান ভাই এর দিকে পানির গ্লাস এগিয়ে দিলো।

ঘরভর্তি লোক সবাই আমার দিকে তাকিয়ে আছে।আমার কাজিন রা সবাই দল বেঁধে কনগ্রাচুলেশন জানাচ্ছে।আমি যেনো উঁচু এক পাহাড় থেকে পড়ে ধাক্কা খেলাম।বাবা আর মামারা এখনো খেতে আসে নি ভাজ্ঞিস।ভাইয়া এসব কথা শুনেও কান না দিয়ে মাথা নিচু করে খেয়ে যাচ্ছে।ছোট বোনের এসব ব্যাপারে কথা হচ্ছে ভাইয়ার খুব অস্বস্তি ফিল হচ্ছে।আম্মু আর দুই মামি আমার দিকে তাকিয়ে হেসে নিলো।ব্যাপার টা এখানে থেমে গেলেই ভাল হতো।কিন্তু নানী আবার ও কথা তুললেন,দিয়া এ সময়ে বমি বমি ভাব হয় দু ‘তিন মাস এমন হবে আস্তে আস্তে ঠিক হয়ে যাবে।

–ভাইয়া খাবারের প্লেট হাতে নিয়ে উঠে গেলো।আমি আমি ভাইয়ার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রইলাম।কি লজ্জার কথা ছিঃ

–নানী আবার বললেন,বিহান ও দাদা ভাই কয়মাস হলো।

–বিহান ভাই লজ্জায় যেনো স্টোক করবেন এমন অবস্থা। কোনো কথা না বলে ফোন কানে দিয়ে কল এসছে এমন ভাব করে উঠে গেলেন।

–মামি বললো,মা বয়স হচ্ছে আর পাগল হয়ে যাচ্ছো ছেলে মেয়েদের সামনে এসব কি বলছো।বিভোর আছে, তিয়াস আছে।

–নানী বললো দাদা তোরা কিছু শুনেছিস।

–বিভোর ভাই বললেন না সুইটহার্ট কিছুই শুনিনি।তুমি চলিয়ে যাও।এর এখান থেকে একটা মেয়ে দেখে আমার বিয়ে দাও।আমি কয়মাস, কয় সেকেন্ড সব জানিয়ে দিবো।

সবাই যার যার মতো আড্ডায় ব্যাস্ত আছে।

–সবার খাওয়া শেষ হলে বার বার আমি টাইম দেখছি কখন সন্ধ্যা হবে।আজ সন্ধ্যা যেনো অনেক দেরিতে আসছে।ভেতরে অস্হিরতা ক্রমশ বেড়ে চলেছে।

চলবে,,

#এক_বৃষ্টিস্নাত_সন্ধ্যা(সিজন২)
৪২.
#WriterঃMousumi_Akter

“দিয়া নানু কি বললো?আর ইউ প্রেগন্যান্ট সিওর!”

পুরুষালী কন্ঠে কথাটা শুনে চমকে উঠে পেছনে ঘুরে তাকালাম।বিহান ভাই দুই ভ্রু উঁচিয়ে ভাবুক দৃষ্টি নিয়ে তাকিয়ে আছেন আমার দিকে।

বেলকনিতে টি -টেবিলে ল্যাপটপ রেখে টুলে বসে বিহান ভাই ল্যাপটপে কিছু করছেন।বেলকনিতে আমার কাপড় নেড়ে দেওয়া ছিলো তুলতে গিয়ে দেখি উনি বসে আছেন।আমার আগমন হতেই উনি এমন একটা কথা বলে উঠলেন।এই মানুষ টার কি আমাকে দেখে কিছু বলতেই হবে।জানে৷ আমি লজ্জা পাবো তবুও ইচ্ছা করেই বলতে হলো উনাকে।

‘উনার কথার জাল থেকে বাঁচতে বললাম,প্রেগন্যান্ট আবার কি বিহান ভাই আমি তো জানিনা।চোখে মুখে কিছুই না জানা না বোঝার ভান আমার।’

‘উনি ল্যাপটপ এ মনোযোগ দিয়ে কিছু করছিলেন।দুই হাত দিয়েই ল্যাপটপ এর কিবোর্ড চাপছিলেন।ভীষণ ব্যাস্তভাবে এন্টার বাটনে খুব জোরে চেপে বলে উঠলেন,ওহ শীট!বলেই কপালে হাত দিলেন।’

আমি মনে করেছি আমার কথার উত্তর দিয়েছেন বিরক্ত আমার উপর হয়েছেন।আমি দ্রুত জায়গা পরিবর্তন এর চেষ্টা করতেই উনি আমার হাত টেনে ধরে ধরলেন পেছন থেকে।চমকে উঠলাম আমি,উনার স্পর্শ শরীর শিউরে উঠলো।শরীরের পশম দাঁড়িয়ে গেলো,বুকে ধুকপুক শুরু হলো।

‘আমি পেছনে না তাকিয়েই বললাম,ছাড়ুন প্লিজ।চোখে মুখে ভীষণ লজ্জা আমার।’

উনিও বুঝতে পারলেন আমি লজ্জা পাচ্ছি।

‘উনি ল্যাপটপের সাটার অফ করে বললেন,কেনো ছাড়বো?’

‘ধরেছেন ই বা কেনো শুনি?’

‘তুমি প্রেগন্যান্ট মানে বুঝো না।ইজ ইট রাইট মিসেস বিহান।’

‘ডোন্ট কেয়ার ভাবে বললাম না এটা আবার কি?’

‘কন্ঠে বেশ মাধুর্য এনেই বললেন,ইন্টারেস্টিং! ভেরি ইন্টারেস্টিং।’

একটা মানুষের মুখের প্রতিটা স্পিলিং এতটা ইমপ্রেসিং কিভাবে হতে পারে বুঝিনা।কথা বলার এটিটিউড ধরণ সব কিছুই আলাদা।নাকি আমার কাছেই উনার সব কিছু এমন স্পেশাল লাগে।

‘লাজুকতা সম্পূর্ণ রুপ চোখে মুখে আমার।মিহি কন্ঠে বললাম,কিসের ইন্টারেস্টিং।’

‘উনি হাত জোরে টান দিলেন আমি নিমিষেই উনার কাছে আটকে গেলাম।উনার এক টানে মাথা গিয়ে উনার বুকে বিধলো।উনি কোমর জড়িয়ে ধরে সম্পূর্ণ উনার কাছে টেনে নিয়ে বললেন,বউ প্রেগন্যান্ট মানে বোঝে না।বিহানের বউ এতটা অবুঝ থাকবে আর বিহান সেটা কিভাবে মেনে নিবে।এখন বুঝাবো প্রেগন্যান্ট মানে কি?জায়গা জায়গা এমন অবুঝ হলে লাভ টা আমার ই পিচ্চি।আমি সারপ্রাইজড হয়ে যায়, ভীষণ সারপ্রাইজড।এমন অবুঝতার ভান দেখলে বোঝাতে বড্ড ভাল লাগে।’

‘কি করতে চাইছেন কি আপনি?’

ঠোঁট ভরা দুষ্টু হাসি উনার।চোখে মুখে দুষ্টুমির ছড়াছড়ি।মতলব যে খুব একটা ভাল লাগছে না সেটা বোঝাই যাচ্ছে।এখন যে কেউ এদিকে চলে আসতে পারে আর উনি ধরেই রেখেছেন আমাকে।এত বড় ফাজিল কেউ দেখবে বলে বেলকনিতে মেলে দেওয়া কাপড় দিয়ে আড়াল করলেন আমাদের দুজনকে।অপলক দৃষ্টিহীন মায়াবী চোখে তাকিয়ে আছেন আমার দিকে।
হাত পা ক্রমশ ভারী হয়ে আসছে আমার।

‘নার্ভাস কন্ঠে বললাম,কি করতে চাইছেন? ‘

‘উনি আমার রাবার লাগানো চুল খুলে দিলেন।সাথে সাথে চুল ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়লো চোখে মুখে।উনি ফু দিয়ে আমার মুখ থেকে চুল সরিয়ে দিতে দিতে বললেন,যতবার আমার সামনে আসবে খোলা চুলে আসবে।খোলা চুলে তোমাকে কেমন লাগে জানো শ্যামাপাখি।’

শ্যামাপাখি উনার মুখে শুনে ভেতর কেঁপে উঠলো আনন্দে।শরীরের রন্ধে রন্ধে ছড়িয়ে পড়লো আনন্দের ঢেউ।কেননা উনি হাজার বার প্রেমের কবিতা লিখেছেন উনার শ্যামাপাখির নামে।আর আমাকে দিয়ে সে কবিতা পড়িয়ে বলতেন দেখতো দিয়া বানান ভুল আছে কিনা।আমি রেগে রেগে বলতাম পারবো না আপনার প্রেমকাব্যর রিভাইজ দিতে।উনি বাকা হেসে বলতেন জেলাস ফিল হয় নাকি দিয়া।আমি আরো রেগে বলতাম খেয়ে কাজ নেই আমার তাইনা?হাজার হাজার চিরকুট পড়াতেন আমাকে দিয়ে।আর আমি জানতে চাইতাম কে আপনার শ্যামাপাখি বিহান ভাই।উনি ভ্রু কুচকে বলতেন, শ্বশুরের মেয়েই শ্যামাপাখি।আমি তখন আরো রেগে যেতাম আমাকে কি চোখে যায় না।নাকি আমি অনেক সুন্দরী না বলে শ্যামাপাখি হতে পারবোনা।খুব হিংসা হতো আমার।এত সুন্দর চিরকুট উনি কিনা শ্যামাপাখির জন্য লিখেন।

‘একদিন মজা করে বলেছিলাম আপনার শ্যামাপাখি কি আমার চেয়ে কালো বিহান ভাই যে শ্যামাপাখি বলে ডাকেন।নিশ্চয়ই পেত্নী দেখতে। এই আপনার চয়েজ।

‘উনি হেসে বললেন,শ্যাম বর্ণের মেয়েরা হলো মায়াবতী দিয়া।’

‘কালো মেয়ের সাথে প্রেম করে এখন নিজের মন কে শন্তনা দিচ্ছেন মায়াবতী বলে।’

‘বাহ বুদ্ধিমতী মহিলা।তোর ব্রেইন তো ট্যালেন্ট এর ম্যাগনেট।’

‘আমাকে সারাজীবন আজেবাজে অনেক কথা বলেছেন আর এখন কিনা আমার থেকে কালো মেয়ে দেখে প্রেম করছেন।আবার তাকে ইমপ্রেস করতে কত কি করেন?আমাকে বাজে কথা বলেন এইজন্য কপালে কালো জুটেছে বুঝেছেন।’

‘আমার বউ কালো আমার সমস্যা নেই তোর এত সমস্যা কেনো ক্ষেপী।চিঠি পড় মন দিয়ে,পরে ঝগড়া করিস।’

‘ঝগড়া তো করবোই।আর মামিকে বলবো তোমার ছেলে ইয়া কালো মোটা মহিলার সাথে প্রেম করছে জানেন মামি।’

‘অনেক উপকার হবে দিয়া।প্লিজ হেল্প মি।’

‘সত্যি কি আমার থেকে কালো বিহান ভাই।’

‘উনি এক গোছা চুল টেনে ধরে বলেছিলেন,তুই তো পেত্নী আর শ্যামাপাখি তো শ্যামাপাখি ই আমার মনের রাজ্য।ও কালো নাকি ফরসা আজ ও ওসব ভাবিনি।আমি ওকে নিয়ে কিছুই ভাবি না জাস্ট ভাবতেও পারিনা।নেক্সট কখনো শ্যামাপাখিকে কালো বলবিনা।তোর খবর খুব খারাপ হবে সেদিন।’

আনমনে হেসে দিলাম সেই দিন গুলোর কথা ভেবে।কত ভাবে বিহান ভাই আমার গুনগান করেছেন।আর আমি বুঝেই উঠতে পারিনি।

‘আমাকে এতদিন বলেন কি কেনো?কাউকে বুঝতে দেন নি কেনো?’

‘বললে তো আমার কথা বিশ্বাস করতে না।তাছাড়া দামী জিনিস বেশী মানুষ দেখাতে নেই।তাহলে নজর লেগে যায় মানুষের বুঝলে। ‘

‘এখন ছাড়ুন আপনি আমায়।’

‘ছাড়বো বাট..’

‘কি বাট।?’

ক্রমশ ওষ্ঠদ্বয়ে দুষ্টু হাসি নিয়ে আমার গালের দিকে এগিয়ে আসছেন উনি।ওদিকে নানী ও ক্রমশ এগিয়ে আসছে।

‘ধাক্কা মেরে সরিয়ে দিয়ে বললাম নানী এসছে।’

‘বয়স্ক মানুষ চোখে সমস্যা অত কিছু বুঝবেন না।’

‘আপনার নানী কানে কম শোনেন কিন্ত চোখে ঠিক ই দেখেন বুঝেছেন আপনি।’

এমন সময়ে নানী চলে এসেছেন।বিহান ভাই টুল এগিয়ে বললেন,নানু বসো।

নানী আমাদের দুজনের দিকে তাকিয়ে বললেন,এ সময়ে এসব বেশী করো না।

দুজনের ই হেচকি উঠে গেলো নানীর কথা শুনে।কি বলতে চাইছে কি নানি।

–বিহান ভাই শুকনো কাশি দিয়ে বললেন,কি করবো না নানু।ফিস ফিস করে বললেন স্টারটিং এই তো তুমি ডিস্টার্ব করলে।কথাটা বলেই আমার দিকে তাকিয়ে চোখ টিপে দিলেন।আমি লজ্জায় অন্যদিকে তাকালাম।

–নানী বললো,কি দাদা আইটে বলো আমি কানে শুনি না।

–আমি অবাক হয়ে বললাম,আইটে কি বিহান ভাই।

–বিহান ভাই হেসে বললেন,জোরে বলতে বলে।

আমি এক গাল হেসে দিলাম।

নানী একটা তাবিজ আমার হাতে দিয়ে বললো,

“এই তাবিজ টা গলায় পর দিয়া,কোন কিছুর নজর লাগবে না।বাচ্চা পেটে আসলে অনেক খারাপ জিনিসের নজর লাগে।”

বিহান ভাই হালকা হেসে বেলকনি ত্যাগ করলেন।এমন সময় দুই মামি আম্মু আমার কাছে এলো।সবাই কিছু বলতে চাইছে মুখ দেখেই বোঝা যাচ্ছে।বাট কি বলবে।বিভোর ভাই এর আম্মু বললেন,দিয়া মা সত্যি কি প্রেগন্যান্ট তুই।

–আমার মাথায় যেনো আকাশ ভেঙে পড়লো।আমি চত জলদী বললাম,না না মামি এসব কিছুই না।

–কতদিন আগে পিরিয়ড হয়েছে।

–এই কথা ও শুনতে হচ্ছে আজ আমাকে।লজ্জায় মাথা কাটা যাচ্ছে আমার।

–উপায় না পেয়ে উত্তর দিলাম ২৯ দিন।

–মামি বললো কাল সকালে ইউরিণ টেস্ট করে দেখাবি আমাকে।

–আমি ভ্যাবাচেকা খেয়ে গেলাম।এক বমির জন্য কত কি শুনতে হচ্ছে আমাকে।

–ছাদের উপর বড় আমগাছের ছায়ায় বসে লুডু খেলা চলছে।বিহান ভাই আর আবির ভাইয়া দাবা খেলছে মনোযোগ দিয়ে।

তিয়াশ ভাইয়া ফোনে গেইম খেলছে।

রিয়া,মেহু আপু,তোহা আপু আর বিভোর ভাই বসে লুডু খেলছেন।আমি সাইডে বসে খেলা দেখছি।বিভোর ভাই গুটি চুরি করছেন শুধু আর চারজনে মারামারি শুরু করছে।

তাদের ঝগড়ার সমাধান করতে আবির ভাইয়া আর বিহান ভাই উঠে এলেন।ভাইয়া ফোন বের করে দিলো, ফোনে লুডু খেলা হবে।বিভোর ভাই বললেন,একটা বেড হয়ে যাক আমি জিতলে যা চাইবো দিতে হবে।

–বিহান ভাই বললেন,মহিলাদের গেইমে এটেন্ট করতে লজ্জা লাগছে না বিভোর।

–বিভোর ভাই বললেন,মহিলাদের সাথে গেইম খেলেও তো একটা মহিলা পটাতে পারছি না।

–তোর কপালে মহিলা ই আছে,রিয়ার মতো কিউট মেয়ে নেই বুঝলি।

–বিহান তোর এই সুন্দরী শালী আমার ই বউ হবে। না হলে বিয়েই করবো না।বেড হলো রিয়া হেরে গেলে আমি প্রপোজ করবো আর রিয়া এক্সেপ্ট করবে।

–আর তুই হারলে।

–হারলেও রিয়া আমার জিতলেও রিয়া আমার এই হলো আমার বেড।

–বিভোর ভাই এর কথা শুনে সবাই উচ্চস্বরে হেসে উঠলো।

–বিভোর ভাই যখন হেরে যাচ্ছিলেন,রিয়ার গুটি নিজে চালিয়ে দিলেন।বিভোর ভাই এর এমন কান্ড দেখে রিয়া ফোন নিয়ে খানিক দূরে দৌড়ে গিয়ে ইচ্ছামতো গুটি চালিয়ে এসে ফোন দেখালো বিভোর ভাই হেরে গিয়েছে।

–কাজিন দের এই খুনসুটি চলতেই থাকলো।

–আমি বিহান ভাই কে বললাম,সন্ধ্যা হতে কত দেরী বিহান ভাই?

–বিহান ভাই ঘড়ি দেখে আমার দিকে তাকিয়ে হেসে দিলেন।আর সবাইকে আড়াল করএ ফ্লায়িং কিস ছুড়ে দিলেন।এই কিস যেনো আমার হার্টে এসে তীরের মতো বিঁধলো।এটা ছিলো স্পর্শহীন প্রথম চুম্বন।

চলবে,,