#এক_বৃষ্টিস্নাত_সন্ধ্যা (সিজন২)
৪৯.
#WriterঃMousumi_Akter
–বিভোর ভাই এর দেওয়া ফুল আর চিঠি নিয়ে রিয়াকে খুজছি।এইগুলো সহিসালামত এ রিয়ার হাতে তুলে দিতে হবে।এত গুলো মানুষের মাঝে যদি রিয়ার হাতে এই চিঠি তুলে দেই তাহলে সবাই এই চিঠি নিয়ে হাসাহাসি করবে খুব বিশ্রি ভাবে।বিভোর এর আমানত এর এত বড় খেয়ানত করা আমার পক্ষে সম্ভব নয়।আয়রা কে দিয়ে ডাকিয়ে রিয়াকে নিয়ে ছাদের নিচে গেলাম।রিয়ার হাত ধরে জোরে টানতে টানতে দ্রুত পায়ে নিচে নামলাম।
রিয়া মনে হয় রিতীমত ভয় পেয়ে গিয়েছে।রিয়ার চোখ মুখ চুপসে গিয়েছে ভয়ে।ভাবছে কি এমন হলো যে আমি এইভাবে হাত ধরে টানতে টানতে নিচে নিয়ে যচ্ছি।
বিহান ও ব্যাপার টা লক্ষ্য করলো।কিওরিসিটি নিয়ে তাকিয়ে আছে বিহান। নিশ্চয়ই ভাবছে কাহিনী কী।
“রিয়া বেশ চিন্তিত ভাবে বললো,এই দিয়া কি হয়েছে দ্রুত বল।আমার তো ভয় করছে,কিছু হয় নিতো আবার।”
“রিয়ার হাতে ধরিয়ে দিলাম বিভোর ভাই এর দেওয়া এক গুচ্ছ লাল গোলাপ আর একটা লাভ লেটার।দিয়ে বললাম এই নে ধর তোর টেনশন।”
“রিয়া বুকে ফু দিয়ে নিয়ে বললো,দিয়া তুই না আমাকে পুরাই ভয় পাইয়ে দিয়েছিস।আমি ভেবেছি কি না কি হয়েছে।বাট এইগুলা কার দিয়েছে কে?”
“কে দিতে পারে রিয়া।তোমার প্রেমে দিওয়ানা তোমার আশিক দিয়েছে।”
“আশিক আবার কে রে দিয়া।এই নামে তো আশিক চাচাকেই চিনি।উনি আবার এইগুলা দিবে কেনো?”
“আরে এই আশিক সেই আশিক না।প্রেমে দিওয়ানা আশিক।”
“রিয়ার মুখের ভঙ্গি সম্পূর্ণ বদলে গেলো।ঠোঁট কিঞ্চিত ফাঁকা করে বললো,বিভোর। ”
“জ্বী আপনার বিভোর।আমার ভাইটার মাথা কিভাবে খেয়েছিস দেখেছিস।আমার অত সুন্দর হ্যান্ডসাম ভাই সে কিনা সারাক্ষণ রিয়া রিয়া করে চলেছে। ”
রিয়ার মুখে ভীষণ হাসি।হয়তো এমন কিছুর জন্যই অপেক্ষা করছিলো রিয়া।চিঠিটা আমার হাত থেকে দ্রুত গতিতে নিয়ে পড়া শুরু করলো।
“রিয়াপাখি,
কিভাবে শুরু করবো জানিনা।লিখতে বুক কাঁপছে,হাত কাঁপছে যদি ফিরিয়ে দাও আমাকে।কিন্তু কি করবো মন তো কতক্ষণ বুঝিয়ে রাখা যায়।আমার মন আমার অবাধ্য হয়ে গিয়েছে, আমার কন্ট্রোলে নেই।বিকজ দিন দিন এডিক্টেড হয়ে যাচ্ছি আমি তোমার প্রতি।ভীষণ এডিক্টেড।কোনো নেশাক্ত পুরুষ হয়তো দীর্ঘদিনের নেশা ছেড়ে দিতে পারবে এক নিমিষেই কিন্তু আমি কোনদিন তোমাকে ছাড়তে পারবো না।মনের কোনে তোমার জন্য জমানো সুপ্ত ভালবাসার বহিঃপ্রকাশ না করে পারলাম নাহ।ভালবাসা বুঝি এমন ই হয় তাইনা রিয়া।এই দূরন্ত ছেলেটা কেমন গম্ভীর ভাবনার সাগরে ডুব দিয়েছে,যে সাগরে খুজে চলেছে তুমি নামক প্রাপ্তি।একমাত্র তোমার ভালবাসা পারবে আমাকে মহাসমুদ্র থেকে টেনে তুলতে।না হলে ডুবতে ডুবতে অতলে হারিয়ে যাবো,কেউ আর চাইলেও টেনে তুলতে পারবে না।তোমাকে আমি ভালবাসি রিয়া,ভীষণ ভালবাসি।আমাকে বিয়ে করবে তুমি।বাকি জীবন টা তোমার কোলে মাথা রেখে কাটিয়ে দিতে চাই।জানি চাওয়া টা অনেক বড় মাপের হয়ে গিয়েছে। এটা যে আমাকে চাইতেই হতো।জানিনা তোমার পক্ষ থেকে কি উত্তর আসবে।ভাল খারাপ যায় হোক আমি অপেক্ষা করবো তোমার উত্তরের।”
“রিয়াকে বললাম,এক চিঠি আর কতবার পড়বি।পড়েই তো যাচ্ছিস।চিঠি কি মুখস্থ করছিস নাকি।”
“রিয়া আমার হাতে আরেক টা চিঠি ভাজ করে দিয়ে বললো এটা খুলবি না কিন্তু।খুললে বিহান ভাইকে নালিশ দিবো।অন্যর জিনিস দেখতে নেই।”
“আচ্ছা তোরা এই বিহানের মাঝে কি পেয়েছিস হ্যাঁ।আমি আর আগের মতো উনাকে ভয় পায় না।ভুলে যাস না এখন আর সে আমার সিনিয়র মামাতো ভাই না ভয় পাবো।মাই হাব্বি।”
“আচ্ছা! এই ব্যাপার।”
“হু এই রিয়া এইবার বলনা বিভোর ভাই কি লিখেছে চিঠিতে।বল না রিয়া প্লিজ।”
“না আমার লজ্জা করবে।”
“কি আমার লজ্জাবতী লতারে।দুনিয়ার সব বলো আর এইটুকু বলতে পারছো না।এতদিন কি বড় বড় কথা বলতিস আমার বাসর ঘরের গল্প বলবো।আর এখন প্রেমালাপ ই বলতে পারছো না কি আশ্চর্য ব্যাপার।”
“তুই যা আগে দিয়ে আয়।পরে বলবো।”
রিয়া গুন গুন করে গান গাইছে লা লালা লা।কি আনন্দে রিয়ার মনে সেটাই ভেবে যাচ্ছি।
বিভোর ভাই কে ছাদের এক কোণায় ডেকে নিয়ে চিঠিটা ধরিয়ে দিলাম।
বিভোর ভাই চিঠিটা খুলে পড়লো।
“এত কিছু বোঝেন আর আমার চোখের ভাষা বোঝেন না তাইনা?আমি রুমে আছি আপনি আসুন।অপেক্ষা করছি আমি।দিয়াকে নিয়ে আসুন।”
বিভোর ভাই চিঠিতে একটা চুমু দিয়ে লাফিয়ে উঠে বললেন,ওহ ইয়েস।
আমি ভাবুক দৃষ্টি নিয়ে তাকিয়ে তাকিয়ে ভাবছি কাহিনী কী দুজনের।দুজনের মনেই লাড্ডু ফুটছে হোয়াট ইজ কাহিনী।বিভোর ভাই আমার হাত টেনে ধরে নিচে নিয়ে গেলেন।
“রিয়া বললো,দিয়া এই দরজায় দাঁড়িয়ে থাকবি কেউ আসলে রুমে প্রবেশ করবি। তাহলে সবাই বুঝবে আমরা তিজনেই আছি।বিভোরের সাথে কথা আছে আমার।খেয়াল রাখিস কেউ যেনো না আসে এদিকে।”
“আমি কি প্রেম ভালবাসার ডাকপিওন আর দারোয়ান হয়েছি নাকি।”
“বিভোর ভাই গাল টেনে বললেন,দিয়া আমার লক্ষী বোন না তুই।”
“আমি শুধু আপনার জন্যই হেল্প করছি।রিয়ার জন্য হলে করতাম নাহ।ও খুব কিপটা আমাকে কিছুই খাওয়ায় না।”
“আমি খাওয়াবো তোকে, পুরা শহরের সব মিষ্টি খাওয়াবো।”
–দুজনে ঘরে বসে গল্প করছে।দরজার পর্দা কিছুটা টেনে দেওয়া।আমি বাইরে ভয়ে এদিক ওদিক করছি কেউ আসলে তো সর্বনাশ।মশার কামড়ে পা ফুলে যাচ্ছে।বার বার নিচু হয়ে মশা মারছি আর মনে মনে ভাবছি হাইরে প্রেম এইদিকে মশা আমার রক্ত খাচ্ছে।প্রেম পরে করিস তোরা।এমন সময় মেহু আপুর হাসির শব্দ পেলাম।যাক ভাবলাম আপুর সাথে গল্প করে সময় কাটানো যাবে।কিন্তু নিমিষেই ভাবনার উল্টা হলো।মেহু আপুর পেছনে আমার ভাইয়া।ভাইয়া এটা কি করছে।মেহু আপুকে দেখে মনে হচ্ছে বেশ লজ্জা পাচ্ছে।ওয়াল হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে, ভাইয়া আপুর নাক ধরে টানছে।হাই আল্লাহ এর থেকে ভয়ানক দৃশ্য দেখার আগে তুলে নাও।আল্লাহ জানে এখন আর কি কি করবে।ভাইয়া আমাকে দেখে ফেললে,ভীষণ লজ্জা পেয়ে যাবে।তাই দ্রুত টেবিলের নিচে চলে গেলাম।কেমন যেনো একটা ভূমিকম্প হয়ে গেলো আমার।ভাইয়া আর মেহু আপু রিলেশন করে চুপিচুপি বুঝতেও পারলাম নাহ।ভীষণ ভাবে ভ্যাবাচেকা খেয়ে অবশ হয়ে গেলো সমস্ত শরীর।চোখ অফ করে বসে আছি টেবিলের নিচে ভাইয়া আর মেহু আপু এক ঘরের বাইরে ভেতরে বিভোর ভাই আর রিয়া, আমি আর আমার উনি কি দোষ করলাম।বিবাহিত কাপল হয়ে এইভাবে প্রেম করতে পারলাম না, কি করলাম এই জীবনে।কিছুক্ষণ পরে ভাইয়া আর মেহু আপু ছাদে চলে গেলো।আমি টেবিলের নিচ থেকে বেরিয়ে এলাম।
ঘরের মাঝে বেশ অনেক্ষণ ধরে রিয়া আর বিভোর ভাই গল্প করেই যাচ্ছে।একটু উঁকি মেরে দেখলাম,
রিয়া হাঁটু গেড়ে বসে নিজের একটা হাত বাড়িয়ে বলছে,
“আই লাভ ইউ বিভোর,
উইল ইউ ম্যারি মি!”
“বিভোর ভাই বসে পড়লেন,দুই হাতে রিয়ার হাত ধরে বললেন,আমি সম্পূর্ণ স্পিসলেস রিয়া।আমি বোধ হয় সেই ভাগ্যবান পুরুষ যে ভালবাসার মানুষের থেকে এমন সুন্দর সারপ্রাইজ পেয়েছি।আমি কখনো ভাবতেই পারিনি তুমি আমাকে এইভাবে গ্রহন করবে।আমার জীবনের সব থেকে বড় খুশি তুমি আজ আমায় দিয়েছো।আমি তোমার থেকে এইভাবে প্রপোজ পাবো সত্যি ভাবিনি।”
“সব সময় ছেলেরায় প্রপোজ করবে কেনো?..এমন কোনো রুলস আছে নাকি।”
মনে হচ্ছে কাকিমনি আসছে।আমি দ্রুত ঘরের ভেতরে প্রবেশ করে বললাম,বাকি প্রেম পরে করবেন কেউ আসছে।তিনজনে আবার ছাদে ব্যাক করলাম।
–রাত প্রায় এগারোটা বাজে।বাবা আম্মু,কাকিমনিসহ মুরব্বিদের খাবার নিচে পাঠিয়ে দিয়ে আমরা কাজিনরা বসে গেলাম খেতে।মেহু আপু বিহান কে বলছে বিহান ভাই চুপচাপ কেনো আজ?বিহান বললো,সে পাত্তা দিচ্ছে না আমায়।তার কাজিন দের পেয়ে হাব্বি নামক এই কাজিন কে পাত্তাই দিচ্ছেনা।মেহু আপু বললো কি ব্যাপার দিয়া এসব ভারী অন্যায়।আমি ফিস ফিস করে বললাম,আপু কাল স্বপ্ব দেখেছি কে যেনো তোমার নাক টানছে।মেহু আপু সাথে সাথে কেশে দিলো।ব্যাপার টা মস্তিষ্কে নাড়া দিয়েছে সিওর।
রান্না হয়েছে মোরগ পোলাও।আয়রা এত রাত পর্যন্ত জেগে আছে সে লেগপিস খাবে।সবার আগে আয়রাকে লেগপিস দেওয়া হলো।সবাই ই লেগ পিস চাইছে কাকে রেখে কাকে দিবে সেই সমস্যা শুরু হলো।এইদিকে আয়রা এক পিস খেয়ে আরেক পিস খাওয়ার বায়না শুরু করলো।ঘ্যান ঘ্যান কাঁন্না জুড়ে দিলো।
–সবার ভাব ভাল না বুঝে বলে উঠলাম,আমি লেগ পিস চাই কিন্তু।লেগ পিস খাওয়ার আশাতেই আমি রোস্ট এত পছন্দ করি।
–মেহু আপু বলে উঠলো,সর তুই দিয়া।আজ বিহান ভাই লেগ পিস খাবে।তুই পাবিনা।
–তিয়াস ভাই বললো,শুধু বিহান ভাইকে দিলে ভারী অন্যায় হবে।বিহান ভাই এর খারাপ লাগবে।সে তার ব্রাদার্স দের ছাড়া খেতে পারবেনা তাইনা বিহান ভাই।
–বিহান ভাই কপাল কুচকে বললেন,তাহলে তুই কি বলতে চাইছিস।সরাসরি বল।
–মহিলারা লেগপিস পাবেনা।আজ আমাদের বোন রা তাদের ভাইদের লেগ পিস দিবে।
–তোহা আপু বললো,ভাইয়া তুই আমাদের মহিলা বললি কেনো?আমরা ও লেগ পিস চাই।
–বিশাল ঝামেলার পর মেহু আপু বললো,ঠিক আছে ছেলেরাই আজ নিক।আমরা স্যাক্রিফাইস করলাম।শর্তসাপেক্ষ।
–ভাইয়া বললো,কি শর্ত।
–তোহা আপু বললো,আমাদের একটা করে টাইগার আর একটা করে কোনআইসক্রিম খাওয়াতে হবে।
–ভাইয়া বললো ঠিক আছে মেনে নিলাম।
–ভাইয়ার পাশে তিয়াস ভাইয়া তার পাশে বিভোর ভাই তার পাশে বিহান।বিহানের পাশে আমি আমার পাশে তোহা আপু তোহা আপুর পাশে রিয়া আর রিয়ার পাশে মেহু আপু বসেছে।খাচ্ছি এরই মাঝে বিহান ভাই উনার লেগপিস আমার প্লেটে তুলে দিলেন।
–আমি দ্রুত উনার প্লেটে তুলে দিয়ে বললাম আরে কি করছেন?
–উনি আমার মুখের দিকে তাকিয়ে ফোন বের করে মেসেজ করে বললেন, আমি জানি তুমি এটা খুব পছন্দ করো।মানুষের মাঝে আর ছোড়াছুড়ি না করে দ্রুত খেয়ে নাও।
–আপনিও তো পছন্দ করেন?
–তোমার থেকে বেশী না।
–না প্লিজ আপনি খান,আমার খারাপ লাগবে আপনি না খেলে।
–প্লিজ জেদ করো না।আমার এসব আর ভাল লাগে না খেতে।সব সময় তো এগুলোয় খেতে থাকি।
–তাহলে আমার প্লেটের টা দিয়ে দেই।
–না তুমি দুটোই খাও।তুমি অনেক পছন্দ করো রোস্ট খেতে আমি জানি।আমার এত প্রিয় না বুঝলে।
–আপনাকে খেতেই হবে।আপনি না খেলে আমিও খেতে পারবোনা।
–যেটা খেতে চাই সেটা খাওয়ালেই বেশী খুশি হবো।এগুলো অনেক খেয়েছি জীবনে আফসোস নেই খুব একটা খাওয়ার।যেটার স্বাদ কখনো পাই নি সেটার জন্য জিদ ধরলে কি হয় শুনি।
–আমি ফোন রেখে উনার দিকে তাকিয়ে পড়লাম।কি বুঝাতে চাইছেন উনি।
–উনার ঠোঁটে দুষ্টু হাসি।কানের কাছে ফিস ফিস করে বললেন,যেটা চাই দিতে হবে কিন্তু। দ্রুত খেয়ে রুমে চলো।
কি মতলব উনার ভাবসাব তো ভাল মনে হচ্ছেনা।উনি যে মানুষ নিশ্চয়ই জটিল কিছুই বলবেন।
চলবে,,
#এক_বৃষ্টিস্নাত_সন্ধ্যা (সিজন ২)
৫০.
#WriterঃMousumi_Akter
–ঘড়িতে রাত বারোটা বাজে। সবাই যার যার রুমে গিয়ে সুয়ে পড়েছে।সারাদিন হই হুল্লোড় করে ক্লান্ত সবাই।আমি মাত্রই রুমে এসে বিছানায় বসলাম।কিন্তু দুঃচিন্তা জেকে বসেছে মাথায়।কি চাইবেন উনি!উনি যখন এমন ঘটা করে বলেছেন চাইবেন তার মানে ভেবে চিন্তে এমন কিছু বলবেন যা আমার কল্পনার বাইরে।কি করা যায়।উনাকে যেকোনো ভাবে আটকে দিতেই হবে।কি করা যায়।কোনো না কোনো ভাবে তো আটকাতেই হবে।একমাত্র কারণ হলো উনাকে রাগিয়ে দেওয়া।আজ যেভাবেই হোক উনাকে ভীষণভাবে রাগিয়ে দিতে হবে।এমন ভাবে রাগিয়ে দিতে হবে উনি রেগে আমার সাথে কথা বলাই অফ করে দিবেন।কিতনি ট্যালেন্ট মে।দ্যা গ্রেট বিহানের বউ এর ব্রেইন ও কম গ্রেইট না।বাট কি করা যায়।ছোট বেলায় উনাকে কপি করলে ভীষণ রেগে যেতেন।উনি যেটা করেন ভ্যাঙানোর জন্য সেটা হুবহু কপি করলে রেগে ভাঙাচুরা শুরু করতেন।কথা বলাও অফ করে দিতেন।আজ ও তাই করবো।এমন ভাবে ভ্যাঙাবো না রেগে দেখা গেলো বাড়িই চলে গেলেন।
–কিছুক্ষণের মাঝেই ঘরের মাঝে প্রবেশ করলেন বিহান।রুমে প্রবেশ করেই দৃষ্টি নিক্ষেপ করলেন আমার দিকে।তারপর নিজের হাতের ঘড়ি খুলতে শুরু করলেন।আমিও সেইম ভাবে নিজের হাতের চুড়ি খুলতে শুরু করলাম।উনি ঘড়ি খুলে ড্রসিন টেবিলের উপর রাখলেন আমিও সেইম ভাবে ড্রেসিন টেবিলের উপর চুড়ি রাখলাম।প্রথমত উনি বিষয় টা খেয়াল করেন নি।
এরপর বিছানায় বসে বললেন, উফফ কি গরম আজ।আমিও বিছানায় বসে বললাম,উফফ কি গরম আজ।উনি এবার ও খেয়াল করেন নি বিষয় টা।এইবার যখন বললেন,দিয়া আজ গরমের তাপমাত্রা খুব বেশী তাইনা?আমিও বললাম,দিয়া আজ গরমের তাপমাত্রা খুব বেশী তাইনা?আমার মুখে উনার মুখের কথা শুনে উনি ভ্রু কুচকে আমার দিকে তাকালেন।আমিও ভ্রু কুচকে উনার দিকেই তাকালাম।উনি এবার কপালের চামড়া কুচকে কিছু একটা ভাবছেন।আমিও কপালের চামড়া কুচকালাম।উনি এবার বুঝতে পারলেন আমি উনাকে নকল করছি।এবার উনি বললেন,কি সমস্যা?আমিও বললাম,কি সমস্যা?উনি আবার বললেন,আমাকে কপি করা হচ্ছে মতলব কী?আমিও বললাম,আমাকে কপি করা হচ্ছে মতলব কী?উনি এবার উঠে দাঁড়ালেন।আমিও উঠে দাঁড়ালাম।এবার উনি বললেন,হাউ ডেয়ার ইউ।আমিও বললাম,হাউ ডেয়ার ইউ।উনি এবার চোয়াল শক্ত করে বললেন,আই সি এই ব্যাপার।আমাকে কপি করে চালিয়ে যেতে পারবে তো!আমিও চোয়াল শক্ত করে বললাম,আই সি এই ব্যাপার।আমাকে কপি করে চালিয়ে যেতে পারবে তো!উনি এবার মাথার চুল হাত চালাতে চালাতে বললেন,গেম খেলতে ভালোই মজা পাও তাইনা?ইন্টারেস্টিং গেমটা আমার পছন্দ হয়েছে।থ্যাংক ইউ সো মাস ইনভাইটিং মি দ্যা ইন্টারেস্টিং গেইম।আমি বেশ অবাক হলাম উনি কি বলতে চাইছেন কি।রাগ টাগ কিচ্ছুই তো নেই।
–উনি এবার শার্টের বোতাম খুলতে শুরু করলেন।শার্টের সব গুলো বোতাম খুলে গায়ের সম্পূর্ণ শার্ট খুলে বিছানার উপর ফেলে দিলেন।অতঃপর গায়ের গেঞ্জি টাও খুলে বিছানায় ফেললেন।আমি বোকা বনে গেলাম নিমিষেই।উনি প্যান্টের পকেটে হাত গুজে আমার দিকে তাকিয়ে বললেন,নাউ ইওর টার্ন মিসেস বিহান খুলো।ফার্স্ট খুলো।আমার চোখে বোকা বোকা ভাব,কি করবো বুঝতে পারছিনা।উনি দুই এক পা করে আমার সামনে এসে দাঁড়িয়েছেন।ভ্রু নাচিয়ে নাচিয়ে বললেন,কি হলো খুলো? সমস্যা হচ্ছে কি খুলতে।তুমি না পারলে বলো আমি তোমাকে হেল্প করছি, আমার কোনো সমস্যা নেই খুলতে।এমন ইন্টারেস্টিং গেম খেলতে বিহান খুব পছন্দ করে পিচ্চি।
“আমি তো তো করে বললাম,আ,,আমার কি শার্ট পরা আছে নাকি যে খুলবো।”
“ওহ রিয়েলি!শার্ট নেই।যা আছে তাই খুললেই হবে।”
“ইম্পসিবল,আমি এসব পারবো না।”
“না পারলে হবে কিভাবে?গেম এর মাঝ পথে চলে যাবে তাতো হবেনা। কম্পিলিট করো গেম।”
“দেখুন আমি পারবো না। আপনি তো ভারী অসভ্য।”
“অসভ্যতা তো এখনো শুরুই করিনি।বউ এর সাথে আবার কিসের অসভ্যতা।যেটাই করবো জায়েজ।তুমি আমার লিগ্যাল ওয়াইফ ভুলে গিয়েছো।”
–আমি কি করবো ভেবে না পেয়ে দ্রুত রুমের লাইট অফ করে দিলাম।
–উনি একটু কঠিন গলাতেই বললেন,লাইট অফ করলে কেনো?
–ঘুমোবেন না।লাইট অন রাখলে কি ঘুমোতে পারবেন।
–ঘুমোবো কে বললো?..
–এটাও কি বলা লাগে।রাতে তো মানুষ ঘুমোয়, ঘটা করে বলার কি আছে।
–রাতে ঘুম বাদেও মানুষ অনেক কিছুই করে।
–কি করে।
–উনি বেশ বিরক্ত কন্ঠে বললেন,আগে লাইট অন করো যাও।
–কেনো কি করবেন?
–ব্যাগ থেকে আমার ট্রাউজার,আর গেঞ্জি বের করো শাওয়ার নিবো।
–এখন।
–তুমি জানোনা,আমি রেগুলার রাতে আর ঘুম থেকে উঠে গোসল করি।
তোমার এই কাজিন এর দল এর অত্যাচারে
মাথা ঝাঁঝা করছে।অত্যাচারে গরম আরো বেশী লাগছে।ঘেমে কি অবস্থা। এই ঘামে ভেজা শরীরে আমার জীবনেও ঘুম হবেনা।আমি ফ্রেশ না হয়ে ঘুমোতে পারি নাহ।ট্রাউজার দাও কুইক।
–লাইট টা অন করে ব্যাগ থেকে ট্রাউজার আর গেঞ্জি বের করে দিলাম উনার হাতে।উনি বিছানা থেকে শার্ট আর গেঞ্জি নিয়ে ওয়াশ রুমে প্রবেশ করলেন।ভেতরে পানি পড়ার শব্দ হচ্ছে টুপ টাপ করে।
কিছুক্ষণ পরে ডাকলেন,
“দিয়া”
আমি দরজার কাছে গিয়ে বললাম,
“কিছু চাইছেন।”
“টাওয়াল টা দাও।”
ব্যাগ থেকে টাওয়াল টা নিয়ে উনার দিকে এগিয়ে দিতেই উনি, এক টানে ভেতরে নিয়ে গেলেন।সাথে সাথে কল ছেড়ে দিলেন।ঝরনার পানি ঝিরঝির করে আমার গায়ে পড়তে শুরু করলো।হঠাত গায়ে পানি পড়াতে শিউরে উঠলাম আমি।উনার সমস্ত শরীরে সাবানের সাদা ফেনা।পরণে টাওয়াল।চুল ভিজে কপালে বেয়ে পড়েছে।উনি আমার দিকে তাকিয়ে মুগ্ধ নয়নে হাসছেন।আমি বেশ খানিক টা ভিজে গেলাম।উনার দিকে একবার তাকিয়ে দেখলাম হাসলে কতটা সুন্দর লাগে উনাকে।এই সাওয়ার নেওয়া সাদা ফেনার শরীরে বেশ অন্যরকম লাগছে উনাকে দেখতে।
–উনাকে বললাম,কি করছেন ছাড়ুন আমি ভিজে গেলাম।
–ভিজতেই তো নিয়ে এসছি।
–আমি গোসল করবো না, ছাড়ুন আমায়।
–উনি হাসছেন,আমার হাত আলতো স্পর্শ করে ধরে বললেন,মনে আছে কিছু চাইবো বলেছিলাম।
এই বন্ধ ওয়াশরুমে, মধ্যরাতে কি চাওয়ার কথা বলছেন উনি।
–আমি বললাম,কি চাইবেন বলুন।
–আমাকে আস্তে করে ওয়ালের সাথে চেপে ধরলেন।গায়ের সাদা ফেনা নিয়ে আমার গালে লাগিয়ে দিলেন।আমি চোখ বন্ধ করে আছি। উনি আমার দিকে ঝুঁকে বললেন,এক হাজার চুমু চাই বউ।
–আমি সাথে সাথে চোখ খুলে তাকালাম,আমায় বউ ডাকলেন উনি।উনার মুখে বউ ডাক শুনে কী ভীষণ লজ্জা পেলাম।এই ঝরণার পানিতে ডুবে যেতে ইচ্ছা করছে।এক্ষণি ফ্লোর ফেটে ফাঁকা হয়ে যাক আর আমি ঢুকে পড়ি।লজ্জায় একটুও তাকাতে পারছি না।বার বার কানে বাজছে বউ কথাটা।শেষ মেষ বউ বলেও ডাকলেন আমায়।
–উনি আবার ও কানের সাথে ঠোঁট মিশিয়ে বললেন,এত লজ্জা পাচ্ছো কেনো?কথা দিয়েছিলে, এখন কথা রাখার পালা।
আমি কোনদিন উনাকে চুমু দেই নি।এইভাবে হুট করে কিভাবে দিবো।তাও আবার একহাজার চুমু।এইভাবে বলে কয়ে তো আরো লজ্জা লাগবে।কাউকে কি বলে কয়ে জীবনের প্রথম চুমু দেওয়া যায়।
–উনি বললেন,কি হলো দাও বলেই আমার গালে চুমু দিলেন।শিউরে উঠলাম আমি।
–দেখুন,অন্য কিছু বলুন।আমি এটা পারবো না।
–তোমাকে যে এটাই পারতে হবে।
–আমি এখন কিছুতেই পারবো না।
–কি সমস্যা বলো।
–আমার লজ্জা লাগছে।
–লজ্জামিশ্রিত চুমুর লোভ সামলাতে পারছি না।কুইক শ্যামাপাখি।
–লজ্জায় নুইয়ে যাচ্ছি আমি,ঝরণার পানি পড়ে ভিজে একাকার হয়ে গেছি,উনার সামনে ভেজা শরীরে আরো লজ্জা পাচ্ছি।এটাই হওয়ার ছিলো বুঝি আজ।উনি নাছড়বান্দা কিছুতেই ছাড়বেন না।
এভাবে কেটে গেলো আধাঘন্টা।উনি রিকুয়েষ্ট করেই যাচ্ছেন কিন্তু আমি লজ্জায় এটা কোনভাবেই পারছিনা।
–আমাকে চুপ থাকতে দেখে বললেন,আমার শর্ত মেনে না নিলে কিন্তু আমি কাল সবার সামনে তোমাকে চুমু দিবো।বুঝেছি দিবে না তাইতো?ওকে ফাইন।আগামিকাল,আবির,মেহু,বিভোর,রিয়া,তিয়াস,তোহা সবার সামনে লিপ কিস করবো আমি মাইন্ড ইট।
–উনার কি মাথা খারাপ হয়ে গিয়েছে।কি বলছেন এসব।উনার দ্বারা অসম্ভব তো কিছুই নয়।কি হবে আমার কাল।উনি গোসল শেষ করে আমাকে ওয়াশরুমে বন্দি রেখে রুমে গিয়ে চেঞ্জ করে নিলেন।আমাকে বললেন,চেঞ্জ করে নাও।আজ আর চিন্তা করার প্রয়োজন নেই যা হবার তা আগামিকাল ই হবে।
চেঞ্জ করে ওয়াশ রুম থেকে বের হলাম।উনি আমার দিকে তোয়ালে ছুড়ে মেরে বললেন এটা মাথাও পেচিয়ে নাও।
উনাকে বললাম,
“রিয়ার কাছ থেকে হেয়ারড্রায়ার নিয়ে আসি।আমার টা তো ও বাড়িতে।”
দরজার দিকে পা বাড়াতেই,
“উনি আমার হাত টেনে ধরে বললেন,মাথা ঠিক আছে তো তোমার দিয়া?”
“কেনো?”
“এখন যাবে হেয়ার ড্রায়ার আনতে।রিয়ার পাশে মেহু সুয়ে আছে।ওরা দুজনে কি ভাববে এই মধ্যরাতে তুমি গোসল করেছো।”
“সত্যি তো করেছি ভাববার কি আছে?”
“বাট ওরা কি ভাববে, ওরা ভাববে অন্য কিছু।এখন আর হেয়ার ড্রায়ার এর দরকার নেই তোয়ালে পেচিয়ে নাও।”
“সত্যি তো এটা তো ভেবে দেখনি।ওরা তো হাবিজাবি ভাবতে পারে।তোয়ালে মাথায় পেচিয়ে নিলাম।”
“ড্রেসিন টেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে ভেবেই যাচ্ছি কি করবো এখন।
এমন সময় উনি আমার জামার ফিতা বেঁধে দিলেন।পেছনে জামার ফিতা বাঁধতে ভুলেই গেছি।উনি তোয়ালে দিয়ে ভাল ভাবে মাথা মুছে দিতে দিতে বললেন,পিচ্চি কি আর এমনি বলি চুলগুলো ও সামলাতে পারো না।আমায় সামলাবে কিভাবে শুনি।”
“আপনি কি ছোট মানুষ যে আপনাকে সামলাবো।আপনি বরং আমায় সামলাবেন।”
“তাইতো সামলাচ্ছি।”
“ড্রেসিন টেবিলের আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে আছি,উনি আমার পেছনে দাঁড়িয়ে আছেন।সুন্দর ভাবে চুল মুছে আঁচড়ে দিচ্ছেন।ভালবাসার এই দৃশ্য ছবির থেকেও সুন্দর। আমার কাধে থুতনি রেখে কোমর জড়িয়ে ধরে বললেন,এখনো সময় আছে ভেবে দেখো কিন্তু।নাহলে কাল আমার দোষ দিতে পারবে না কিন্তু।”
লজ্জারাঙা চোখে আয়নার মাঝে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষ টাকে দেখছি।ঠোঁটের মাঝে কিঞ্চিত ফাঁকা।উনিও আমায় দেখছেন।মানুষ টার চোখে মুখে অন্য রকম চাহনি।অন্য রকম অনুভূতি দেখা যাচ্ছে যা আগে দেখিনি।নেশাক্ত কোনো চাহনি ঘ্রাস করেছে উনার মাঝে।ঘাড়ের ভেজা চুল সরিয়ে আলতো ভাবে ওষ্ট ছুইয়ে দিলেন।আস্তে করে বললেন,দেরি করছো কেনো?
–কিভাবে এমন লজ্জার কাজ করবো আমি।হাত পা সমস্ত শরীর যেনো ক্রমশ হয়ে আসছে উনার স্পর্শে। উনার দিকে ঘুরে দাঁড়িয়ে হাত দিয়ে উনার দুই চোখ অফ করে দিয়ে উনার কপালে ওষ্ট ছুইয়ে যেনো পৃথিবীর সব কিছু লন্ডভন্ড শুরু হলো আমার।জীবনে প্রথম করা চুমুর অনুভূতি অনুভব করলাম আমি।উনি আস্তে করে চোখ খুললেন।উনার চোখে ভালবাসার ক্ষুদা,না বললেও বুঝতে পারলাম আমি।একটা চুমু দিয়েই কোথায় হারিয়ে গেলাম জানিনা,এক হাজার দিতে গেলে শরীরের রক্ত চলাচল হয়তো এইবার বন্ধ হয়েই যাবে।উনি আমাকে টেনে নিয়ে খানিক টা উনার কাছে নিলেন।ক্রমশ এগিয়ে আসছেন ওষ্টদ্বয় নিয়ে আমার দিকে,নিথর হয়ে রইলাম আমি। সম্পূর্ণ কাছে আসতেই ভালবাসার পরম অনুভূতিতে নিমিষেই চোখ অফ হয়ে গেলো আমার।গালে মুখে ছড়িয়ে দিলেন ওষ্টের ছোয়া।অজানা এক ভাললাগার শিহরণ শরীরের রন্ধে রন্ধে ছড়িয়ে গেলো।ভালবাসআ খেলা করছে তুফানের মতো।শরীরের সমস্ত ভার ছেড়ে দিলাম উনার উপর।উনার প্রতিটা ভালবাসাময় স্পর্শতে কেঁপে উঠছি আমি।ভালবাসার পরশ শরীর, মন উভয়ে ছড়িয়ে পড়লো নতুন অনুভূতিতে।মধুচন্দ্রিমাময় রাতে শুরু হলো ছন্দে,অনন্দে ভালবাসার নতুন সুর।
চলবে,,
#এক_বৃষ্টিস্নাত_সন্ধ্যা
৫১.
#WriterঃMousumi_Akter
কেটে গেছে একটা বছর।বিহানের ইন্টার্নশীপ শেষ হয়ে গিয়েছে।আমার ও এইস.এস.সি পরীক্ষা শেষ হয়ে রেজাল্ট বেরিয়েছে।রিয়া আর আমি দুজনেই জিপিএ ফাইভ পেয়েছি।মেডিকেল কোচিং চলছে দুজনের।বিভোর ভাই এর একটা ব্যাংকে জব হয়েছে।বিভোর ভাই ও এখন ঢাকায় থাকেন।বিহান আর বিভোর ভাই ঢাকায় এক ই ফ্ল্যাটে থাকে।আবির ভাইয়ার এখনো জব হয় নি,তবে চেষ্ঠা চালিয়ে যাচ্ছে।ভাইয়ার ইচ্ছা সে ইউরোপ কান্ট্রিতে যাবে।তবে আম্মুর আপত্তির জন্য যেতে পারছে না,আম্মু বলেছে আমার অনেক টাকা লাগবে না।একটা ছেলে আমার চোখের সামনে থাকুক।একটা মেয়ে বিয়ে দিয়েছি আর যা আছে আমার ছেলের ভালোই চলবে।মেহু আপু তোহা আপু অনার্স সেকেন্ড ইয়ারে লেখাপড়া করছে।তিয়াস ভাইয়া ফাইনাল ইয়ারে পড়ে।এরই মাঝে রুশা আপুর একটা ছেলে ও হয়েছে।বিভা আপুও প্রেগন্যান্ট।বিভা আপুকে শ্বশুর বাড়িতে আনতে যেতে হবে।বিভা আপুর বিয়ের পর এখনো কেউ বিভা আপুর শ্বশুর বাড়িতে কেউ যায় নি।শুধু মাত্র বাবা আর দুই মামা আর বিহান, বিভোর ভাই,আর ভাইয়া গিয়েছে।এবার তারা দাওয়াত দিয়েছে সবাইকেই যেতে হবে।বিহান আসলে তবেই যাওয়া হবে।বিহান আসছে আমাকে আর রিয়াকে ঢাকায় নিয়ে যেতে।আমাদের এডমিশন পরীক্ষা সামনেই।
গত তিন মাস বিহান নড়াইলে আসে নি।গত এক বছরে অনেক ব্যাস্ততায় কেটেছে বিহানের।তবুও ব্যাস্ততার মাঝে আমাকে গাইড করে গিয়েছে ঠিকভাবে।আমার লেখাপড়ার সম্পূর্ণ খেয়াল রেখেছে।বিহানের জন্যই মনে হয় আমার লেখাপড়ার এতটা উন্নতি হয়েছে।দিনে দিনে বিহানের সাথে সম্পর্ক আমার এমন হয়েছে বিহান ছাড়া সব কিছুই অচল আমার।আমার যাবতীয় সব কাজ বিহান ই করে দেয়।এডমিশনের সব ফরম বিহান ই পূরণ করেছে।প্রতিটা পদে পদে বিহান কে অনুভব করি এখন,সব জায়গা বিহান কে প্রয়োজন আমার।বই এর মলাট,খাতা বেঁধে দেওয়া, ডজন ডজন পেন কিনে ঘরে রাখা সব কিছুই বিহানের খেয়াল থাকে।আমার যে ড্রেস পরতে ভাল লাগে সেটাই পরতে বলবে। আমার গায়ের রং উজ্জল না তাই অনেক সময় হয়তো সব কালারে আমাকে মানায় না কিন্তু বিহান আমার খারাপ হওয়া মন ভালো করেছে আমাকে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ নারী বলে।বিহানের চোখে আমিই শ্রেষ্ঠ সুন্দর নারী,আমাকে সব কালারেই ভালো লাগে তার কাছে।আমি নিজেও বুঝি আমাকে অনেক সময় মানাচ্ছে না কিন্তু সে আমায় বুঝাবে আমি তার চোখে এতটায় সুন্দর খারাপ কিছু তার কল্পনাতেও আসে না।শুধু একটায় সমস্যা আমি কোনো ছেলের সাথে কথা বলতে পারবো না,পারবো না মানে না।এই জিনিস টা সে মেনে নিতে পারে নাহ।এমন কিছু হলেই বেরিয়ে আসে তার ভয়ংকর রুপ।আমার ও পৃথিবীর কারো সাথে কথা বলে মানসিক শান্তি আসেনা।দুজন দুজনের জন্য ভীষণ পরিপূরক আমরা।আমার অবস্থা এখন এমন হয়েছে বিহান আমার সাথে ঠিকভাবে কথা না বললে আমার দম বন্ধ হয়ে যায়।ফোন ওয়েটিং দেখলে বুক কাঁপে,অনেক টাইম কথা না হলে মাথা ঘুরায় খাওয়া অফ হয়ে যায়।আর বিহান সেই আগের মতোই আছে।এই আমাকে রাগাচ্ছে, ক্ষেপাচ্ছে ধমক দিচ্ছে আবার কাছে টেনে নিচ্ছে।
বিহানের ছবির দিকে তাকিয়ে ভেবে যাচ্ছি ওর কথা।আমি ওর ফোনে ফোন দিচ্ছি কিন্তু এক ঘন্টা ধরে ওয়েটিং ওর ফোন।এত সময় তো ওর ফোন ওয়েটিং থাকে না খুব একটা।কোনো পেশেন্ট কি কল দিয়েছে,কেউ কি ইমারজেন্সি সমস্যার কথা জানিয়ে ফোন দিয়েছে।
এরই মাঝে আমার নাম্বারে আননাউন নাম্বার থেকে ফোন এসছে।ফোন টা তুলতেই ফোনের ওপাশে কোনো মেয়ের কন্ঠ ভেষে এলো।আমি নম্রতার সাথে সালাম দিলাম।
ওপাশ থেকে বিষন্ন কোনো কন্ঠস্বর বললো “দিয়া”
“জ্বী! বাট আপনাকে তো ঠিক চিনলাম না।”
“বিহান তোমার কি হয়?”
আপনি কে আপু?
“আমার উত্তর টা প্লিজ।”
“আমি মিসেস বিহান।”
“ইম্পসিবল! এটা হতে পারেনা।তুমি মিথ্যা বলছো।”
“আপনাকে মিথ্যা বলে আমার লাভ কী?আপনি হয়তো জানেন না তাই।”
“বিহান তো কখনো বলেনি ও বিবাহিত।”
“উনিতো নিজে থেকে কাউকে কিছু বলেনা তেমন।কেউ জানতে চাইলে বলে না চাইলে বলেনা।”
“আমি সিওর তুমি মিথ্যা বলছো।বিহানের সাথে মাত্রই ফোনে কথা হলো আমার,সব সময় কথা হয়,মেসেজ হয়,সরাসরি দেখা হয় আমাকে তো কোনদিন বলেনি তোমার কথা।”
“কেনো বলে নি জানিনা?আপনি উনার কাছেই জিজ্ঞেস করুন কেনো বলেনি।উনি বলে নি তাহলে আপনি কিভাবে জেনেছেন আমার কথা।”
“যে যাকে ভালবাসে তার সব খবর ই সে রাখে দিয়া।”
“ভালবাসেন কাকে বিহান কে?”
“এত আশ্চর্য হচ্ছো ক্যানো দিয়া।”
“না মানে আপু কি বলবো বুঝতে পারছি না।”
“তোমাদের কি লাভ ম্যারেজ নাকি এরেঞ্জ ম্যারেজ।”
“এরেঞ্জ ম্যারেজ।তবে লাভ,,,”
“থাক আর বলতে হবেনা বুঝেছি তোমার মা ইমোশনাল ব্লাকমেইল করে নিজের মেয়েকে ভাতিজার ঘাড়ে উঠিয়ে দিয়েছে।”
“এসব কি বলছেন আপনি,আমি বুঝতে পারছি এক তরফা ভালবাসায় কষ্ট হয়।আমি আপনার কষ্ট টা বুঝতে পারছি। কিন্তু আম্মুকে নিয়ে কিছু বলবেন না প্লিজ।”
“এক তরফা নয় দিয়া।তোমার এখন আবেগের বয়স।না চাইতেই নিজের যোগ্যতার থেকে ভাল কাউকে পেয়ে গিয়েছো।ভালবাসার কি বুঝো তুমি।তুমি আমাকে আর যায় হোক ভালবাসা নিয়ে বুঝাতে এসো না।”
“ভালবাসা যতটুকু বুঝি বিহানের জন্য এনাফ।ভালবাসায় এত যোগ্যতা দিয়ে কি হবে। ”
“ভালবাসা বুঝো,কখনো রাতের পর রাত কাউকে ভালবেসে অবহেলা পেয়েছো।কাউকে ভালবেসে পাগলের মতো তার পিছে ছুটেছো।প্রিয়জন কে অন্যর হতে দেখেছো।তুমি তো না চেয়েই পেয়ে গিয়েছো বিহান কে।যা তুমি ডিজার্ভ ই করোনা।”
“আমি বুঝছি না,আপনি এত খারাপ ব্যবহার করছেন কেনো?”
“কারণ তুমি আমার ভাল থাকার জীবনে বাঁধা হয়ে এসেছো।আজ তুমি না থাকলে আমার জীবন টা হয়তো অনেক সুন্দর হতো।ছয়টা বছর পাগলের মতো ভালবেসেছি বিহান কে।বিহান আমাকে ভালবাসতো শুধু মাত্র তোমার জন্য তোমাদের ইমোশনাল ব্লাক মেইলের জন্য বিহান বিয়ে করতে বাধ্য হয়েছে তোমাকে।না হলে আমার সাথেই আজ বিহানের বিয়ে হতো।আমার জীবনে সব হাসি আনন্দ ফিরে আসতো।”
“দেখুন আপু আপনি কিন্তু বাজে কথা বলছেন।নেক্সট টাইম আমাকে প্লিজ আর কল করবেন না।বিহান আমাকে বকবে আপনার সাথে কথা বলেছি জানলে।”
“আমার নাম প্রেয়সী,তোমার মতো মেয়েকে কল দিয়েছি এটাই তোমার ভাগ্যর ব্যাপার।তুমি আমার স্টাটাস জানোনা তাই।বিহানের থেকে জেনে নিও।আমাকে ভাল কথা আর বাজে কথা শিখাচ্ছো,হাউ ডেয়ার ইউ।লজ্জা করে না তোমার, বিহানের যোগ্যতার পাশে কি আদেও মানায় তোমায়।দুদিন পর সবাই যখন তোমাকে নিয়ে হাসাহাসি করবে বিহান নিজেই ছেড়ে দিবে তোমায়।তার থেকে বেটার তুমি বিহান কে ছেড়ে দাও।আমি পৃথিবীতে সব সহ্য করতে পারি শুধু বিহানের পাশে অন্য কাউকে সহ্য করতে পারি না।আমি অভিশাপ দিচ্ছি তোমায় ধ্বংস হয়ে যাও তুমি।মরে যাও,বিহানের জীবন থেকে দূর হয়ে যাও প্লিজ।”
“ওহ! আপনি সেই প্রেয়সী।”
“আমাকে চিনো নাকি।”
“আপনার নাম অনেক বার দেখেছি,অসংখ্য কল মেসেজ দেখেছি কেননা বিহান বাড়িতে থাকলে ওর ফোন আমার কাছেই থাকে।বিহান আমাকে সব কিছু শেয়ার করে।ভুলে যাবেন না আমি ওর ওয়াইফ।বিবাহিত জীবনে কোনো তৃতীয় পক্ষের ঢোকা উচিত নয় বলে মনে করি।শুনেছি আপনি খারাপ তবে কতটুকু খারাপ আজ বুঝলাম।”
রাগে দুঃখে ফোন কেটে দিলাম আমি।রাগে সমস্ত শরীর জ্বলে পুড়ে যাচ্ছে আমার।কষ্টে কাঁন্না পাচ্ছে।বিহান এক ঘন্টা প্রেয়সীর সাথে কথা বলছিলো ফোনে।বিবাহিত এটা মানুষ কে বলে না।বাহ! এই হলো আপনার চরিত্র।বিহান ফোনের উপর ফোন দিয়েই যাচ্ছে আমি কেটে দিচ্ছি।একবার ও ফোন রিসিভ করিনি।ফোন রিসিভ করছি না কেনো?কার সাথে কথা বলছি জানার জন্য মেসেজ করেই যাচ্ছে।আমি রুমে সুয়ে সুয়ে কেঁদে যাচ্ছি।একটা মেয়ে আরেক টা মেয়েকে এত খারাপ কথা কিভাবে বলতে পারে।যে মেয়ে বিহান কে পছন্দ করে তার সাথে এক ঘন্টা ফোনে কি কথা বলেছে বিহান।সারাদিন গড়িয়ে সন্ধ্যা পার হলো।দুপুর থেকে বিহানের কয়েক ‘শ বার মেসেজ আর কল এসছে।একটা বার ও কল ধরিনি আমি।কেনো ধরবো ওর কল।একটা মেসেজ করে দিয়েছি আমাকে আর কোনদিন কল না দিলেই খুশী হবো।যার সাথে ফোনে বিজি ছিলেন তার সাথে বাকি জীবন কাটান, দোয়া করি সুখি হন।তারপর আর কল আসেনি বিহানের।মামি আর আমি রাতে বসে দুজনে টিভি দেখছি।কিন্তু আমার মন ভীষণ বিষন্ন।টিভিতে মন নেই।রাত আটটার দিকে ভীষণ অবাক হয়ে গেলাম আমি।সেই ঢাকা থেকে বাইক চালিয়ে বিহান বাড়িতে চলে এসেছে সাথে বিভোর ভাই ও আছে।কিন্তু এখন উনি কেনো?উনার তো আসার কথা নয়।উনার না আগামিকাল আসার কথা।এখন না বলে কয়ে চলে এলো যে।
চলবে,,