রাখি আগলে তোমায় অনুরাগে পর্ব-২০+২১

0
546

#রাখি_আগলে_তোমায়_অনুরাগে💕
#written_by_Liza
#২০তম_পর্ব

পুলিশ কন্সটেবল চারদিকে কুটিরকে ঘিরে ফেললো।
আরাশ কুটিরের দরজা খুলতেই রাগে থর থর করে কাঁপছে। আরাশের চোখগুলো রক্তিম বর্ণ ধারণ করেছে,কুটিরের ভেতর একটা লোক ইন্সিয়ার শরীর থেকে উড়না নিয়ে একে অপরকে ছুড়ে দিচ্ছে। ইন্সিয়া দুহাত দিয়ে নিজেকে আড়াল করে ভয়ে কাঁপছে।
আরাশ এসব দেখে রাগে কাঁপছে থরথর করে,হঠাৎ লোকগুলো আরাশকে দেখে হাসাহাসি বন্ধ করে জিজ্ঞেস করে
“তুই কে রে সালা? তুই কোত্থেকে টপকে এলি বে? যা এখান থেকে ভালোই ভালোই বলছি”

আরাশের পাশে থাকা চেয়ার আরাশ পা দিয়ে ধাক্কা দেয়, সাথে সাথে চেয়ারটা অভিক রয়ের পায়ে গিয়ে পড়ে,অভিক রয় নিজের পা ধরে বসে যায়, আরাশ কপালের রগগুলো ভেসে উঠেছে রাগে। আরাশ হাত মুষ্টিবদ্ধ করে ইন্সিয়ার উড়না নেওয়া ঐ লোকটার নাকে ঘুষি দেয়।

ইন্সিয়া আরাশকে দেখে ভয়ে দৌড়ে আরাশের পেছনে নিজেকে লুকোয়। আরাশ খড়ের উপর থেকে উড়না নিয়ে ইন্সিয়ার দিকে এগিয়ে দেয়, ইন্সিয়া কাঁপা কাঁপা হাতে উড়না জড়িয়ে নেয় গায়ে।
আরাশ ইন্সিয়ার দিকে না তাকিয়ে এক এক করে সবাইকে মেরে হাত পা বেধে রাখে। বাহিরে থাকা কন্সটেবলরা ভেতরে এসে সবাইকে ধরে নিয়ে যায়।

আরেকটা পুলিশ কন্সটেবল এসে ইন্সিয়াকে বলে “আপনার কিছু হয় নি তো? আপনি ঠিক আছেন? কারো সাথে শত্রুতা?”

ইন্সিয়া ভয়ে কথা বলতে পারছেনা। গলায় যেনো কথাগুলো ধলা পাকিয়ে আছে, আরাশ বুঝতে পেরে কন্সটেবলকে বলে, “আমি সবটা জেনে আপনাদের জানাবো। আপনারা এখন আসতে পারেন। ধন্যবাদ আমার সাথে থাকার জন্য”

আরে না না। আপনি না থাকলে এই মেয়েকে কে বাচাঁতো? আমরা তো জানতাম না এতকিছু। ঐ ম্যামের উচিৎ আপনাকে ধন্যবাদ দেওয়া৷ আপনার জন্য সে বেঁচে গেছে (কন্সটেবল)

ইন্সিয়া ভয়চোখে আরাশের দিকে তাকায়,আরাশ ইন্সিয়ার দিকে না তাকিয়ে কন্সটেবলকে বিদায় দেয়। কন্সটেবলরা চলে যায়, ইন্সিয়া খড়ের উপর গুটিশুটি মেরে বসে পড়ে। ইন্সিয়া কাঁদছে,আরাশ বাহিরে গিয়ে পানির বোতল এনে ইন্সিয়াকে দেয় আর বলে “টেক ইট”।

ইন্সিয়া করুণদৃষ্টিতে আরাশের দিকে তাকালেই আরাশ মুখ ফিরিয়ে নেয়। আরাশ রীতিমতো ইন্সিয়াকে ইগনোর করছে। ইন্সিয়া বুঝতে পেরে চুপ করে আছে। আশেপাশে জোড়ালো শেয়ালের আওয়াজ ভেসে আসছে। ইন্সিয়া ভয়ে গুটিশুটি মেরে একপাশে বসে আছে। কুটিরের ভেতর কুপির আলো নিভু নিভু অবস্তা। এদিকে কুটির থেকে বেরিয়ে যাওয়া সেইফ মনে হচ্ছে না। যেকোনো সময় বন্যপ্রাণী হামলা কর‍তে পারে। তাই আরাশ কুটিরের ভেতর ভোর ফোটার অপেক্ষা করছে। ইন্সিয়া ভয়ার্ত কন্ঠে আরাশকে বলে উঠে ” আমি বাড়ি যাবো”

আরাশ পাঞ্জাবির হাতা ফোল্ড করে অন্যদিকে মুখ ফিরিয়ে বলতে থাকে “এখানে কেউ কাউকে সাধে আটকে রাখে নি, এখন বের হওয়া রিস্ক তাই এখানে অপেক্ষা কর‍তে হবে”

ইন্সিয়া তবুও বাড়ি যাওয়ার জন্য চেচাতে শুরু করে, আরাশ বিরক্ত হয়ে কুটিরের ভেতরে থাকা একটা কাপড় দিয়ে ইন্সিয়ার মুখ বেধে দেয় আর বলে “ক্রিমিনাল হতে বাধ্য করবেন না।নয়তো আমার চেয়ে খারাপ আর কেউ হবে না। যেমন বাঁচাতে পারি তেমন মারতেও পারি”

ইন্সিয়ার মুখ বাঁধা কাপড় দিয়ে। আরাশ খড়ের একপাশে বসে মোবাইল টিপছে,আশেপাশে সিগন্যাল পাওয়া যাচ্ছে না। আরাশ অনেকক্ষণ চেষ্টা করার পর ব্যর্থ হয়ে মোবাইল রেখে দেয়। ইন্সিয়ার চোখ বেয়ে পানি ঝড়ছে অনবরত। আরাশ ইন্সিয়ার অবস্তা বুঝতে পেরে মুখের বাঁধন খুলে দেয়। ইন্সিয়া কাশতে শুরু করে। আরাশ পানি এগিয়ে দেয় ইন্সিয়ার দিকে।
ইন্সিয়া পানি খেয়ে চুপচাপ বসে আছে।

আরাশ খেয়াল করে দেখে ইন্সিয়ার হাত কেটে গেছে অনেকটা।আরাশ ইন্সিয়ার কাছ থেকে খানিকটা দুরে গিয়ে বসে আর ইন্সিয়াকে বলে “হাতটা দেখি,”

ইন্সিয়া হাত গুটিয়ে নেয় ভয়ে, আরাশ ধমক দিয়ে বলে “হাত দেখাতে বলেছি ডার্ণ ইট”

আরাশের ধমকে ইন্সিয়া কান্না শুরু করে দেয়, আরাশ বিরক্তি নিয়ে বলে
“এত ন্যাকামি করার কি আছে বুঝলাম না,যখন ঐ বদমাশগুলো আপনাকে ধরে নিয়ে এসেছিলো তখন আপনার রেডিও মাইক টা কোথায় ছিলো?তখন এভাবে ন্যাকা কান্না করতে পারেন নি চিৎকার করে?যত্তসব ন্যাকামি”

ইন্সিয়া আরাশের কথা শুনে ঢোক গিলে কান্না বন্ধ করে দেয়। ইন্সিয়া চোখ মুছে বসে আছে, আরাশ শান্ত গলায় বলে “দেখি হাত টা দিন এদিকে,”

ইন্সিয়া বাধ্য মেয়ের মতো হাত এগিয়ে দেয় আরাশের দিকে,আরাশ ইন্সিয়ার হাতের দিকে তাকিয়ে দেখে অনেকটা কেটে গেছে। রক্ত শুকিয়ে গেছে হাতের।
আরাশ ইন্সিয়াকে জিজ্ঞেস করে “কি করে এতটা কাটলো? আর ঐ লোকগুলোই বা কে? তারা কেন আপনাকে কিডন্যাপ করলো?”

ইন্সিয়া এবার এক এক করে সব বলে অভিক রয়ের ঘটনা,আরাশ চুপ করে সব শুনছে। ইন্সিয়া কথাগুলো বলে চুপ হয়ে যায়। আরাশ পানির বোতল এগিয়ে দেয়, ইন্সিয়া পানি খেয়ে আবারো বলতে শুরু করে “ঐ অভিক রয় আমাকে লোক দিয়ে ধরে এনেছিলো। অভিক রয় চেয়েছিলো আমাকে শাস্তি দিতে। কিন্তু তা আর হয়ে উঠে নি। আমাকে এখানে নিয়া আসা মাত্রই আটকে রাখা হয় দড়ি দিয়ে। আমি বের হওয়ার আপ্রাণ চেষ্টা করেছি। পারিনি। তাই হাতে একটু কেটেছে”

আরাশ দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে দিয়ে বসা থেকে উঠে দাড়ায়, চারদিকে আজান দিচ্ছে ফজরের। ভোর ফুটতে শুরু করেছে। আরাশ ইন্সিয়াকে বলছে “চলুন আমার সাথে। আপনি আজ আর বাসায় যাবেন না।”

তাহলে কোথায় যাবো আমি? (ইন্সিয়া)

আরাশ অন্যদিকে মুখ ঘুরিয়ে বলে “এখন আপনি আপনার বাড়ি গেলে নানান প্রশ্নের মুখোমুখি হবেন। আর লোকে কথা রটাবে। সো আপনি ইহানের বাড়িতে যাবেন উষ্মীর কাছে থাকবেন। তাহলে আপনার ফ্যামিলি বুঝবে আপনি উষ্মীর সাথে কাল রাত এসেছেন ওখানে, ইজ দ্যাট ক্লিয়ার?”

ইন্সিয়া মাথা নাড়িয়ে সম্মতি দেয়, আরাশ ইন্সিয়াকে নিয়ে বেরিয়ে পড়ে। ঝোপ বেরিয়ে রাস্তায় আসার পর নেটওয়ার্ক সিগ্ন্যাল পায় আরাশ। আরাশ ইহানকে ফোন দিয়ে বিস্তারিত সব ঘটনা বলে, ইহান সবাই ঘুম অবস্তায় গিয়ে গেইট খুলে দেয়। ইহান গেইটের সামনে গিয়ে দাড়িয়ে অপেক্ষা করছে ইন্সিয়ার জন্য৷

আরাশ ইন্সিয়াকে ইহানের কাছে পৌছে দিয়ে সব বুঝিয়ে দিয়ে বাড়ি চলে যায়। ইহান ইন্সিয়াকে উষ্মীর কাছে নিয়ে যায়। উষ্মী ইন্সিয়াকে দেখে জড়িয়ে ধরে কেঁদে দেয়। ইহান উষ্মীকে বলে “এখন আওয়াজ করবেন না আপনারা।বাড়ির সবাই জানতে পারলে উল্টো বুঝবে।আপনি ইন্সিয়াকে নিয়ে এই রুমে ঘুমিয়ে পড়ুন। সকালে কথা হবে এই ব্যপারে”

উষ্মী ও ইন্সিয়াকে ঘুমিয়ে যেতে বলে ইহান এরপর আরাশের কাছে ফোন দেয়।

কাল অরীন আপুকে নিয়ে সবাই আসবি,কাল দাওয়াত আছে দোস্ত, (ইহান)

ঘুমাতে দে, কালকের টা কাল বুঝবো, টায়ার্ড আমি (আরাশ)

সবাই ঘুমে বিভোর। সকাল দশটায় সবাই ব্রেকফাস্ট টেবিলে বসে আছে। সবাই ইন্সিয়াকে দেখে অবাক হয়ে আছে। ইহানের আম্মু ইন্সিয়াকে আস্ক করে
“তোমাকে তো কাল দেখিনি কই ছিলে?”

উষ্মী দৌড়ে এসে বলে “আম্মু ও তো কাল আমার সাথেই এসেছে,শরীর টা খারাপ ছিলো তাই রুম থেকে বেরোয় নি”

ওহ আচ্ছা। আসো ইন্সিয়া এদিকে বসো আমাদের সাথে খেতে। উষ্মী মা এদিকে বসো। (ইহানের আম্মু)

আন্টি আপনারা বসুন।আমি উষ্মীর সাথে পরে বসবো (ইন্সিয়া)

ইন্সিয়ার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে ইহানের আম্মু বলে “ভারী লক্ষী মেয়ে। আচ্ছা। উষ্মী তোমরা খেয়ে নিও। আমার একটু বেরোতে হবে তাড়া আছে।”

জ্বী আম্মু,আপনি খেয়ে নিন। আমরা একটু পর খেতে বসবো, ইহান আসুক (উষ্মী)

ইহানের আম্মু নাস্তা করে কেনাকাটা করতে চলে গেলো,ইহান এসে উষ্মী ইন্সিয়া ও কাজিনদের নিয়ে খেতে বসলো। খাওয়াদাওয়া শেষ ইন্সিয়া রুমে এসে উষ্মীর কাছ থেকে ড্রেস নিয়ে চেঞ্জ করে আসলো।
উষ্মী ইন্সিয়ার হাতে ব্যান্ডেজ করে দিলো। একটু পর অরীন এসে রুমে দরজায় দাড়িয়ে নক করে আর বলে “ম্যাম আসতে পারি?”

অরীনকে দেখে উষ্মী গিয়ে জড়িয়ে ধরে আর বলে “আরে আপু আসেন।কি যে বলেন না আপনি। কখন এলেন?”

এইতো মাত্র এলাম (অরীন)

আরাশ ভাইয়া কই? দেখছি না যে? রাজু কই? আরশি ও আরিয়া বাচ্ছাগুলো কাদের কাছে? (উষ্মী)

আস্তে আস্তে, একসাথে এত প্রশ্ন বাবা, আরাশ আসতেছে, বাচ্ছা ইহানের কাছে,আরেকটা রাজুর কাছে। (অরীন)

চলবে…

#রাখি_আগলে_তোমায়_অনুরাগে💕
#written_by_Liza
#২১তম_পর্ব (ভালোবাসা দিবস স্পেশাল)❤

আস্তে আস্তে, একসাথে এত প্রশ্ন বাবা, আরাশ আসতেছে, বাচ্ছা ইহানের কাছে,আরেকটা রাজুর কাছে। (অরীন)

ইন্সিয়া ব্যান্ডেজ লাগিয়ে বিছানায় বসে আছে। অরীন ইন্সিয়ার পাশে বসে ইন্সিয়ার হাতটুকু টেনে দেখছে আর বলছে “ইসস এভাবে এতটা কাটলো কি করে? দেখো তো পুরো কি হয়েছে”

ইন্সিয়ার হাতে ফু দিয়ে অরীন কথাগুলো বলছে,ইন্সিয়া মুগ্ধ দৃষ্টিতে অরীনের দিকে তাকিয়ে গভীর শ্বাস নেয়,অরীন ইন্সিয়াকে ঝাকিয়ে বলে
“বলো এটা হলো কি করে”

প্রমিস আপু কেউকে বলবেন না তো? কথাটি বলে ইন্সিয়া অরীনের হাত ধরে ফেলে,অরীন মুচকি হেসে বলে “পাক্কা প্রমিস,এবার বলো। হয়েছেটা কি?”

ইন্সিয়া এক এক করে কাল রাতে ঘটে যাওয়া সব কাহিনি বলতে লাগলো অরীনকে,অরীন ইন্সিয়ার কথা শুনে ইন্সিয়ার গালে হাত ছুঁইয়ে দিয়ে বলে “ভাগ্যিস আমার ভাইটা ছিলো। নাহলে কি যে হত।ভাবতেই লোম দাড়িয়ে যাচ্ছে ভয়ে। আচ্ছা ইন্সিয়া তুমি বাড়ি যেও না। একেবারে উষ্মীর সাথে বাড়ি যাবা।”

না আপু তা হয় না। এভাবে থাকাটা মোটেও ঠিক না ইন্সিয়া বলছে, ওপাশ থেকে ইহান এসে বলে “কে বলেছে ঠিক না? উষ্মী আপনার বোন হলে আপনি থাকতেন না? এটা তো রিচুয়্যালের মধ্যেই পড়ে থাকাটা। আপনিও সেইফ রিচুয়্যাল ও পালন হচ্ছে একসাথে”

ইকজেক্টলি এটা রিচুয়্যাল আছে বাপের বাড়ি থেকে ছোট বোন থাকলে,বোনের সাথে থাকতে আসে ,তুমিও উষ্মীর জন্য আসলে থাকতে। সমান সমান (অরীন)

ইহান আর অরীনের কথায় ইন্সিয়া চুপসে যায়।

রাজু এসে অরীনকে ডাকতে শুরু করে “অরীন আপু আরাশ ভাইয়া আসছে নিচে আপনাকে ডাকতেছে,”

রাজুর মুখে আরাশের কথা শুনে ইন্সিয়ার হৃদ স্পন্দন বাড়তে লাগলো ক্রমশ, অরীন ইন্সিয়াকে বসিয়ে চলে যায় নিচে।এদিকে ইহান উষ্মীর পিছু পিছু ঘুরছে। উষ্মী মেহমানদের দেখাশোনা করছে, টুকটাক হেল্প করছে বাকিদের।

ইন্সিয়া মনে মনে ভাবছে “আমার একটা ধন্যবাদ দেওয়া দরকার তাকে। সাথে একটা সর‍্যি বলে দেওয়া উচিৎ”

আরাশ অরীনকে বলে সব একপাশে নিয়ে গিয়ে “ইন্সিয়ার পেছনে কলেজের স্যার লেগেছে, ঐ লোকের পেশা হলো মেয়েদের সতীত্ব ছেদ করা। তেমনি ইন্সিয়া তার খপ্পরে পড়েছিলো,কারণ সে সেবটা দেখে ফেলেছিলো স্যারের। ইন্সিয়া স্যারের আসল সত্য জেনে ফেলাতে।ইন্সিয়াকে এখন ভুগতে হচ্ছে।আমাদের ইহানের ওয়াইফ উষ্মী ইন্সিয়াকে বাঁচিয়ে ওদের কলেজের স্যারকে ধরিয়ে দেয়। স্যারের নাম অভিক রয়। সে জেল থেকে পালিয়ে গেছে কিছুদিন আগে। কলেজের দারোয়ানকে হাত করে স্টুডেন্ট ইনফরমেশন থেকে উষ্মীর আর ইন্সিয়ার বাড়ির ঠিকানা কালেক্ট করেছে। কাল সুযোগ বুঝে ওৎ পেতে ছিলো ইন্সিয়াকে ধরার জন্য,এক পর্যায়ে ধরেই ফেলে কিন্তু ভাগ্যক্রমে আমার চোখে পড়ে সেই ব্যাপারটা। আমি তাদের পিছু নিয়ে ধরে ফেলি। ইন্সিয়াকে কিছু করতে পারেনি সে। তবুও আমি চাই ইন্সিয়া উষ্মীর কাছে থাকুক৷ তাহলে নিশ্চিত হতে পারবো”

হুম বুঝলাম সব, আমাকে ইন্সিয়া একটু আগে বলেছে, আমিও একই কথা বলেছি সে যেনো এখানে থাকে, (অরীন)

আচ্ছা এসব কথা এখানে আলোচনা করার দরকার নেই,(আরাশ)

ইহান এসে আরাশকে বলে “বন্ধু এসেছিস?ঐ ব্যাটার কি খবর?”

উওম মধ্যম চলেছে,মামলার উপর মামলা দেওয়া হয়েছে। মনে হয় না সে আর বেরোতে পারবে এই জীবনে (আরাশ)

ইহান আরাশ দুজনেই হাসছে মিটমিট করে।আরাশ উপরে উঠে উষ্মীর রুমে যায় উষ্মীর সাথে কথা বলার জন্য,গিয়ে দেখে উষ্মী নেয় রুমে, ইন্সিয়া দাড়িয়ে আছে বেলকনিতে,রুমে পায়ের শব্দ পেয়ে ইন্সিয়া পেছন ফিরে দেখে আরাশ দাড়িয়ে আছে সামনে। আরাশকে দেখা মাত্র ইন্সিয়ার অদ্ভুত অনুভুতি হচ্ছে। আরাশের দিকে হা করে তাকিয়ে আছে ইন্সিয়া।আরাশের পরণে কালো শার্ট,শার্টের হাতা ফোল্ড করা। আরাশ ইন্সিয়ার দিকে একটিবারের জন্য ও তাকায় নি, অন্যদিকে তাকিয়ে ইন্সিয়াকে বলে
“হাতের অবস্তা কেমন? ব্যাথা কমেছে?”

ইন্সিয়া গম্ভীর স্বরে বলে,”তাকিয়ে জিজ্ঞেস করতে পারলে করবেন, নয়তো জিজ্ঞেস করার কোনো দরকার নেই। এমনিতেই হাতের ক্ষত সেরে যাবে”

আরাশ কথা না বাড়িয়ে ইন্সিয়াকে ইগনোর করে নিচে চলে গেলো, ইন্সিয়ার এতে খুব খারাপ লাগলো। ইন্সিয়া মনে মনে বলতে লাগলো “কি এমন করেছি আমি? প্রতিনিয়ত আমাকে অবহেলা ইগনোর পেতে হয়। উনি আমাকে দয়া দেখিয়েই চলেছে। আমি কারো দয়ার পাত্রী হতে চাই না।আমি আর উনার সামনে যাবো না। উষ্মী ঠিকই বলেছে আমি পস্তাবো একদিন।ঠিক আজ পস্তাচ্ছি সব কিছুর জন্য”।

দুপুরে সবাই খাওয়াদাওয়া করতে টেবিলে বসেছে,ইন্সিয়া খাবার সামনে থাকা স্বত্তেও খেতে পারছে না। কারণ ইন্সিয়ার হাতে ব্যথা। ইহান উষ্মীকে বলছে ” ইন্সুকে খাইয়ে দাও ওর হাতে ব্যাথা”

ইন্সিয়া ইহানের কথা শুনে বলে “না জিজু আমার খুদা নেই পরে খাবো,এখন হাত ব্যথা করছে খাওয়া পসিবল না”

ইন্সিয়া কথাগুলো বলে রুমে চলে এলো।আরাশ আড়চোখে ইন্সিয়ার যাওয়ার পানে তাকিয়ে আছে,ইহান আরাশের দিকে তাকিয়ে ইশারা দিয়ে বলে “প্লেট নিয়ে যা, খেতে বল”

অন্যদিকে ইন্সিয়া রুমে এসে বিড়বিড় করে বলছে “মিস্টার আরাশ আমি চাইনা আমার জন্য আপনার থাকাটা কষ্টকর হয়ে পড়ুক। তাই আমি আপনার সামনে থেকে সরে এসেছি।আমি আর আপনার সামনে আসবো না।এড়িয়ে যাচ্ছেন যান,আমিও কম না”

অরীন খাবার শেষ করে ইন্সিয়ার জন্য খাবার বেড়ে রুমে আসতেই আরাশ অরীনকে ডেকে বলে “বাচ্ছা কাঁদছে আপু,জলদি যা”

অরীন বাচ্ছার কথা শুনে খাবারের প্লেট আরাশকে দিয়ে চলে গেলো। আরাশ খাবার নিয়ে রুমে গেলো। ইন্সিয়া হাত পা গুটিয়ে একপাশে বসে আছে, আরাশ গলাঝাড়ি দিয়ে ইন্সিয়ার মনোযোগ পেতে চাইলো। ইন্সিয়া বুঝতে পেরেছে ওটা আরাশের কন্ঠস্বর তাই ইন্সিয়া বিছানায় ওপাশ ফিরে শুয়ে পড়ে গায়ে কাথা দিয়ে।

আরাশ বিছানায় বসে কাথা টান দিয়ে ফেলে দেয়। ইন্সিয়া ঠান্ডায় গুটিশুটি মেরে শুয়ে আছে। আরাশ ইন্সিয়াকে উদ্দেশ্য করে বলে
“আমি যাকে ইগ্নোর করবো সে আমাকে ইগ্নোর করতে আসে কোন সাহসে? খাবার এনেছি,তাড়াতাড়ি যেনো ফিনিশ হয় সবটা। আরাশ ইগনোর কর‍তে পারবে কিন্তু আরাশকে ইগনোর করার দুঃসাহস ও যেনো কারো না হয়”

ইন্সিয়া বিড়বিড় করে বলছে “ভ্যা ভ্যা আসছে এটিটিউড দেখাতে ভাইরাস একটা,”

বিড় বিড় না করে তাকে উঠতে বলা হচ্ছে, না উঠলে অন্য রাস্তা দেখতে হবে আমার (আরাশ)

ইন্সিয়া ঘাপটি মেরে শুয়ে আছে, আরাশ গিয়ে রেগে ইন্সিয়ার হাত ধরে টান দেয়, ইন্সিয়া উঠে বসে ভয়ে। আরাশ খাবারের প্লেট ইন্সিয়ার সামনে দিকে বলে “ফিনিশ করুন”

ইন্সিয়া মাথা নিচু করে বলে “এভাবে ষাড়ের মতো চেচালে কার খাওয়া হয়?”

হোয়াট? কি বললেন? (আরাশ)

ইন্সিয়া চোখ বন্ধ করে দাঁতমুখ ভয়ে খিচিয়ে বলে “কিছু না,কিছু না,হাতে ব্যথা খেতে পারবো না”

আরাশ ইন্সিয়ার সামনে বসে চামচ দিয়ে খাবারগুলো মুখে তুলে দেয় ইন্সিয়ার,ইন্সিয়া এক চোখ খুলে দেখে, আরাশ খাবার মুখে ধরে আছে ইন্সিয়ার। ইন্সিয়া আস্তে আস্তে চোখ খুলে খাবার মুখে দেয়।

অরীন উষ্মী ইহান দরজার আড়ালে সবটা দেখছে আর একে অপরের সাথে হাই ফাইভ করছে, উষ্মী বলছে অরীনকে “অরীন আপু কাজ হয়ে গেছে। আরাশ ইন্সিয়া এবার প্রেমের সুতোয় বাধা পরবে”

সবাই হাসছে আরাশ ইন্সিয়ার কান্ড দেখে। এদিকে আরাশ ইন্সিয়াকে তুলে খাইয়ে দিচ্ছে৷ ইন্সিয়া আরাশের ভয়ে সব খাবার কম্পলিট করে।

সবাই রুফ টপে গিয়ে জমিয়ে আড্ডা দিচ্ছে,এদিকে ইন্সিয়ার কাল রাতে ঘুম হয় নি ভালো করে তাই বেডরুমে ঘুমোচ্ছে। ইহান উষ্মী অরীন বাড়ির সকলে রুফ টপে নিজেদের মতো আড্ডা দিচ্ছে।

ইন্সিয়া রুমে বেঘোরে ঘুম,সারা বাড়ি নিস্তব্ধ নিরব। জানালার সাদা পর্দা দুলছে বাতাসে। স্নিগ্ধতা বিরাজ করছে রুমের মধ্যে।

বাড়িতে কেউ নেই সবাই রুফ টপে, কে যেনো ইন্সিয়ার রুমে প্রবেশ করে, ইন্সিয়া ব্যথাযুক্ত হাত টা বালিশের উপর রেখে ঘুমোচ্ছে। ইন্সিয়াকে কে যেনো খুব তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে দেখছে। ইন্সিয়ার মুখের উপর উড়ে আসা চুলগুলো সরিয়ে দিয়ে ইন্সিয়ার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে, ইন্সিয়া নড়েচড়ে আরাম পেয়ে ঘুমিয়ে পড়ে। প্রতিটি ছোঁয়া যেনো মাদকের নেশার চেয়ে তীব্রতর। ইন্সিয়ার বেশ ভালো লাগছে হাত বুলিয়ে দেওয়া ব্যপারটা। ইন্সিয়া ভেবেছে উষ্মীর কাজ৷ ইন্সিয়া চোখবন্ধ করা অবস্তা ঘুমস্বরে বলে “উফফ বন্ধ করে দিলি কেন?দে না”

ইন্সিয়ার কথা শুনে হাত বুলিয়ে দেয় ইন্সিয়াকে, ইন্সিয়ার হাতের উপর আলতো করে ছুঁয়ে দিয়ে ফু দিচ্ছে হাতে। ইন্সিয়া ঘুমের ভেতর অজানায় শিউরে উঠে। ইন্সিয়া ঘুম ঘুম চোখে হাতটা ধরে গালের নিচে চেপে ধরে,
ইন্সিয়ার গাল ছুঁইয়ে দিয়ে ইন্সিয়ার ঠোঁটগুলোতে হাল্কা স্লাইড করতে লাগলো।ইন্সিয়ার কপালে ঠোঁট ছুঁইয়ে দেয় অমনি ইন্সিয়া উঠে বসে পড়ে, ইন্সিয়া চোখ মেলে দেখার পর চিৎকার দিয়ে উঠতেই ইন্সিয়ার মুখ চেপে ধরে সে,

ইন্সিয়া চোখ বড় বড় তাঁর দিকে তাকিয়ে আছে। ইন্সিয়ার মুখ থেকে হাত সরিয়ে ফেলে সে, ইন্সিয়া কাঁপা কাঁপা স্বরে বলে “মিস্টার আ আ আরাশ আপনি?”

আরাশ ইন্সিয়ার চোখের দিকে তাকিয়ে আছে,ইন্সিয়া আরাশের দিকে কোনো কথা না বলে হা করে তাকিয়ে আছে। এবার আরাশ স্বেচ্ছায় ইন্সিয়ার দিকে তাকিয়ে আছে। ইন্সিয়া কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বলে উঠে “আপনি এখানে কি করছেন? আপনি যান নি?”

আরাশ ইন্সিয়ার ঠোঁটে আঙ্গুল দিয়ে বলে “হুসসসসস কোনো কথা নয়৷ বেশি কথা আমি পছন্দ করিনা।ঘুমান”

আরাশ উঠে চলে যেতে চাইলেই ইন্সিয়া পেছন থেকে বলে “কেন আসলেন? সেটা বলুন।এখন কেন পালিয়ে যাচ্ছেন? আপনি আমাকে সহ্য কর‍তে পারেন না। তবে কেন চুপিসারে আমায় দেখেন? আমায় বাঁচান আমার উপর নজর রাখেন। আমি না খেলে খাওয়াতে আসেন। কেন মিস্টার আরাশ? কেন? উওর দিন। আমি আপনাকে আদো চিনতে পারছিনা। একেক সময় একেক রুপ আপনার। আপনার মনে আসলে কি ঘুরপাক খাচ্ছে বলুন”

আরাশ ইন্সিয়াকে ধাক্কা দিয়ে বিছানায় শুইয়ে দেয়, ইন্সিয়ার ভয়ে হৃদ স্পন্দন বেড়ে যায়। ইন্সিয়া ঢোক গিলছে। ইন্সিয়ার ঠোঁট কাঁপছে। আরাশ দু হাত ইন্সিয়ার দু পাশে রেখে ইন্সিয়ার দিকে তাকিয়ে বলে “ডোন্ট টক নো মোর। আমাকে বুঝতে আসবেন না। আপনি নিজেই হারিয়ে যাবেন।”

আরাশ আর এক মুহুর্ত দাড়ালো না সেখানে,রুম থেকে বেরিয়ে গেলো। ইন্সিয়ার কপাল বেয়ে ঘাম ঝড়ছে, ইন্সিয়া বুঝতে পারছে না এই লোকটা আদো কি চায়!

চলবে